পদ্মরাগ পর্ব- ০২

0
439

পর্ব- ০২
#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী

পরী ইজ্বাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।বিকৃত কন্ঠে বলে,
পরী- আপনি এখানে?
ইজ্বা পরীকে এতক্ষণ দেখতে পায়নি। পরীকে দেখে চমকে উঠে। বলে,
ইজ্বা-ইউ! এখানেও।

পরী- আমি আগে উঠেছি লিপ্টে,আপনি নেমে যান। আপনাকে দেখে আমার গা রিরি করছে। গেট আউট।
ইজ্বা রেগে গজগজ করে।

পরী – কি হলো বেরিয়ে যান। উফফ

মনে মনে ইজ্বা নিজের ওপর রাগ দেখাল। কেন সে এ শহরে আসল? অন্য কোথাও যেতে পারত। তাহলে হয়তো এই পেতনী গুলোর থেকে বাঁচতে পারত।
কিন্তু পেতনী শব্দটা ইজ্বা রাগের মাথায় জুড়ে উচ্চারণ করে ফেলে।

পরী -কি আমি পেতনী?

এই বলে যেই পরী ইজ্বার দিকে রেগে দেয়ে আসছিল। তখনই ইজ্বা পরীর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে পায়ে ল্যাং মেরে ওকে ২য় তলার ফ্লোরে রেখে পরীর দিকে চেয়ে বিলেন হাসি দিয়ে লিপ্ট চালিয়ে চলে যায় পাঁচ তলায়। ইজ্বা তখন হাফ ছেড়ে বলে।

ইজ্বা- যাক এট লাস্ট এই মেয়েটার বকবক থেকে বাঁচলাম।

পরী- এত সাহস স্যারের তুরি স্যার হতে যাবেন কোন সখে। একটা আস্ত এনাকন্ডা। নাহ! তারচেয়েও ভয়ংকর। কিন্তু এনাকন্ডাটা আমাদের ফ্ল্যাটে কেন গেল পাঁচ নাম্বারে তো আমরা থাকি। আব্বুকে কি বিচার দিতে এসেছে, কলেজে যে থাকে হেনস্তা করেছিলাম তাই। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ……..
আব্বু আমাকে আর আস্থা রাখবেন না।

ইজ্বারর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে পরী সিড়ি দিয়ে হেঁটে যায় তাদের ফ্ল্যাটে।

সুমিতা আরা তার বান্ধবী মিসেস হান্নার কাছে এসেছেন সেই বেলা ২টায় এখন প্রায় পাঁচটা বাজে কিন্তু দুজনের গল্প শেষ হচ্ছে না। জারা রুমে বসে জানালা দিয়ে বারবার উঁকি মেরে দেখছে তাদের বিয়ে নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে কিনা?

সুমিতা আরা- আজ আসি তাহলেরে,

মিসেস হান্না- শোন, ইজ্বা কি আর বেক করবে না লন্ডনে?

সুমিতা আরা- নারে, ছেলেটা একদম দেশের জন্য পাগল কি করব বল? ওইখানে আবার একটা ইউনিভার্সিটিতে ল্যাকচারাল হয়ে ঢুকেছে।

মিসেস হান্না- তাহলে ইজ্বা আর জারার বিয়ে?
জারা দুজনের কথা শুনছে। আর মনে মনে বলছে,

জারা- প্লিজ গড হেল্প মি। এ বিয়েটা ভেঙ্গে দাও প্লিজজ।।

সুমিতা আরা – জারা যদি বাংলাদেশে সেটেল হতে চায় তাহলেতো আর কোনো ভাবনা নেই। দুজনেই ওখানে থাকবে। সেরকম হলে আমরাও বাংলাদেশে সেটেল হয়ে যাব।

মিসেস হান্না- হুম। সেটাই ভালো।
কলিং বেল বাজাতেই রুশনে আরা দরজা খুলে দিয়েই একটা হাসি দেন।
পরী সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে
পরী- মা হাসছো কেন?
আচ্ছা তোমার হাসির কারণ জেনে লাভ নেই, বল আমাদের বাসায় কেউ কি এসেছে?

রুশেন আরা- হুম এসেছেতো, সেটাই তো তোকে বলতে চেয়েছিলাম, দেখ তোর আব্বুর সাথে ডয়িং রুমে আলাপ করছে।
রুশনে আরা এই বলে সদরদরজা নক করে চলে গেলেন রান্নাঘরে।

পরী- ওহোরে খেলো হয়ে গেলো। এখন আমি কি করব। এনাকন্ডাটা স্যার যদি বলে দেয় আমি কলেজে শয়তানি করি। এই বলে পরী আবার নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে বলে, পরী তুই ভুলে গেছিস কি? এনাকন্ডাটা তোকে চিটিং করেছে গাট্টা দিয়ে।
পরী ডয়িং রুমে এসে উঁকি মেরে ইজ্বা আর মাহমুদ সাহেবকে দেখে। মাহমুদ সাহেবের মুখে কোন আক্রোশ নেই। পরী মনোযোগ সহকারে ওদের দেখছিল। কিন্তু কোন কথা শুনতে পাচ্ছিলনা। তার আব্বুর মুখে কোন রাগের ছাপ নেই দেখে পরী মুচকি হেসে বলল নিশ্চয়ই এনাকন্ডা স্যারটা আমার নামে কিছু বলেনি। বললে নিশ্চয় আব্বুর মুখ রাগে লাল হয়ে যেত। নালিশ দিতে যদি এনাকন্ডা স্যার না আসে তবে কেন এসেছে আবার দেখ কেমন দাঁত বের করে করে হাসছে।
পরী ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে ভীড়ভীড় করে বলতে থাকে
পরী- কাল থেকে আমি আর কলেজে যাব না। প্রতিদিন ওই এনাকন্ডাটার মুখ দেখতে পারব না
এসব ভেবে পরী যখন আনমনে হেটে আসছিল তখনই মেঝেতে হুচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরী আবিষ্কার করল ও পড়েনি। ভয় মাখা চোখ দুটি খোলে দেখে ও সত্যি পড়েনি ওকে কেউ ওরে আছে। হাতটা ছাড়িয়ে পিছন ঘুরে দেখল ইজ্বা। ইজ্বাকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে পরী বলে,

পরী- আপনার তো সাহস কম না। আমার রুমে চলে এসেছেন। এখানে আসার পার্রমিশন কে দিল আপনাকে। কারো ঘরে ঢুকতে হলে যে পারমিশন নিতে হয় সেটাও জানেন না। এইটুকু ভদ্রতাও নেই আপনার। ইজ্বা ফিক করে হেসে বলল,
ইজ্বা- এত রেগে যাচ্ছো কেন পেতনী,আজ থেকে তো এ ঘর আমার।

পরী- আপনি কে?আমাদের বাসায় এসেছেন প্রথমে এখন আবার আমার রুমেও, মা মা উনি কেন আমার ঘরে ও মা শুনছো?

রুশেন আরা হন্তদন্ত হয়ে কিচেন থেকে এসে বললেন, রুশেন আরা-কি হয়েছে,অমন করে চিৎকার করছিস কেন?

পরী উচ্চস্বরে বলে,
পরী- মা ওনি কেন আমার রুমে, হোয়াই?

রুশেন আরা- শান্ত হ নিতু। তুই কি……

রুশেন আরা অন্যকিছু বলার আগেই পরী আবার বলে,
পরী- জানো মা আমাকে উনি কলেজে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন, এখন মনে হচ্ছে উনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করি। তুমি কি করে এলাও করছ ওনাকে আমার রুমে। আবার বলছ শান্ত হতে।
ইজ্বা ফিক করে হেসে বলল
ইজ্বা- পরী তুই আমাকে চিনলি না?

পরী- আমাকে তুই বলছেন! এই শুনেন বসগিরি কলেজে করবেন আমার বাড়িতে নয়। কানে গেল ক……
রুশেন আরা পরীকে থামিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে বলেন
রুশেন আরা- থাম পরী, তুই বীরকে চিনতে পারলি না। এই বলে রুশেন আরা আবার গড়াগড়ি খেতে লাগলেন।

পরী – কি বলছ মা। এ আমাদের বীর। একদমই না। উনিতো আমাদের কলেজের নতুন টিচার।

রুশেন আরা- হ্যাঁ রে তোদের কলেজের নতুন টিচারই বীর।……
পরী গোলগোল চোখ করে ইজ্বার দিকে চেয়ে আছে। পরীর চাওনি দেখে রুশেন আরা হেসে আবার বলেন,
রুশেন আরা- তোকে বলেছিলাম না তোর মেঝ খালার ছেলে বীর আসছে। হঠাৎ তুই কলেজে যাওয়ার পর বীর ফোন করে বলে, ও আসছে। এমনকি তোদের কলেজের ল্যাকচারাল হয়ে আসছে। আমি তো অনেক খুশি। এবার তোর শয়তানি আর ট্যাংট্যাং কিছু হলেও কমবে। কলেজে গিয়ে লোকের পিছনে আর লাগতি পারবি না। এবার আমি নিশ্চিন্ত।
এই বলে রুশেন আরা হাসতে হাসতে রুম থেকে চলে গেলেন।

রুশেন আরা যেতেই পরী রাগী লুক নিয়ে ইজ্বারর দিকে তাকাল।

পরী ধীরে ধীরে পরীর কাছে এগিয়ে যেতে লাগল পরীও এক পা এক পা করে পিছনে সরে যায়। পরী এভাবে সরে যেতে যেতে যখন দেয়ালে আটকে গেল তখন পরী আর ইজ্বা একে ওপরের নিশ্বাস শুনতে পাচ্ছে। পরীর হার্টবিট বেড়েগেছে। ও চোখ বুজে আছে।এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর
ইজ্বা পরীর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
ইজ্বা- কি রে ভীতুর রানি কাঁপছিস কেন?

পরী- আআমা কে তুমমি ছাছালো। নইইলে কিননতু মাকে ডাকবব।
পরী ভয় পেলে এরকমই তোতলিয়ে কথা বলে।

ইজ্বা ফিক করে হেসে বলে,
ইজ্বা- সেই পুরানো অভ্যাস ভয় পেয়ে তোতলিয়ে কথা বলা শুরু হয়েগেছে। আমাকে ভয় পাচ্ছিস কেন? এসব বাদ দে, সবচেয়ে বড় কথা তুই আমাকে চিনতে পারলি না। এটা কি করে সম্ভব?

পরী ইজ্বার হাতের ফাঁক দিয়ে খপ করে বেরিয়ে যায়। আর রাগি লুক নিয়ে ইজ্বার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি কি করে চিনব তোমাকে?আটবছর আগে তো তুমি ছিলে একটা আরশোলার মতো হ্যাংলা। আর এখন হয়েগেছ ভয়ংকর এনাকন্ডা। তো আমি কি করে চিনবো?
ইজ্বা দাঁতগুলো কটমটে বলে,
ইজ্বা- কি আমি আরশোলা ছিলাম আর এখন এনাকন্ডা। তুই কিরে একটা আস্ত পেতনী, ভীতুররানী।
পরী মুখ ভেংচি দিয়ে গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
রাতের খাবারের পর পরী ঘুমানোর আয়োজন করছে নিজের রুমে। তখনই ইজ্বা এসে বলে,
ইজ্বা- ওই পেতনী এই রুম থেকে হটে পর। আমি শুব এখানে।

পরী- কি? আমার রুমে তুমি শুবে আর আমি বেরিয়ে যাব। এটা কি আপনার কলেজে পেয়েছেন নাকি, যখন ইচ্ছে তখন বের করে দিবেন?
এই বলে ইজ্বা পরীকে গাট্টা মারে মাথায়। পরীও কম যায় না ইজ্বাকে বালিশ দিয়ে আঘাত করতে থাকে। ইজ্বা পরীকে শক্ত করে ধরে আলতো হাতে পরীর মুখের উপর পড়া অবাধ্য চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,

ইজ্বা- পাগলি একটা, চুলগুলোও সামলে রাখতে পারেনা।

পরী- ছালো আমালে।
ইজ্বা মুচকি হেসে বলে,
ইজ্বা- আবার তুতলিয়ে কথা বলছিস? কি হলো?
পরী- আমার রে এভাবে ধরবে ননন না, ছাড়ড়ড়ো।

ইজ্বা- ওকে ছেড়ে দিলাম। চলে যা এ ঘর থেকে,গো।

পরী- না আমি আমার রুম থেকে যাব না। অন্যদিকে ফারাবি জারাকে অনেক ক্ষণ ধরে কল করে যাচ্ছে কিন্তু জারা কল ধরছে না। ফারাবি চোখেমুখে দুশ্চিন্তা।
মেসেজ পাঠিয়েছে অনেক গুলো, জারা সিন করেছে কিন্তু রিপ্লাই দেয়নি। ফারাবি নিরাশ হয়ে পড়ে এই বুঝি তার ভবিষ্যৎ হারিয়ে ফেলল। কিন্তু না এট লাস্ট জারা ফারাবির ফোন ধরে।

ফারাবি – কি হয়েছে জারু, আমার ফোন ধরছিলে না কেন? জানো আমার কত টেনশন হচ্ছিলো?

জারা- কিছু না

ফারাবি- তুমি এরকম কখনো করোনা। আজ হঠাৎ। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।
জারা হোহোহো করে কেঁদে উঠে,
বলে

জারা- আমি তোমার থেকে একটা সত্যি হাইড করেছি।

ফারাবি- আর তুমি কাঁদছো কেন? আর আমার থেকে কি লুকিয়েছো?

জারা- ফারাবি মম আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন উনার ফ্রেন্ডের ছেলের সঙ্গে।

ফারাবি- কি বলছো? কবে? কখন?

ভালো লাগলে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল ? আনু ইসলাম রেনী Anu Islam Rainy এই পেইজে দেওয়া হবে। ভালো থাকবেন, আপন জনদের ভালো রাখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here