#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৮
হতভম্ব হয়ে সোফায় পা তুলে বসে আছে হৈমন্তী। গতকাল আবির ওর জন্য টকটকে লাল রঙের একটা জামদানি শাড়ি কিনে দিয়েছে। শাড়ির রঙটা একটু বেশিই কটকটে টাইপের। ভেবেছিল ভাইয়ের বিয়ের দিন পরবে কিন্তু রঙ দেখে আর ইচ্ছে করছে না। আমেনা বেগম বোনকে নিয়ে কাজকর্ম করছেন। ছোঁয়া মুখটা মলিন করে হৈমন্তীর থেকে একটু দূরে বসে আছে। মেয়েটার মন খারাপ। হৈমন্তী বুঝতে পারে কিন্তু কিছু করার নেই।তবুও কিছু একটা ভেবে হৈমী ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলল,
> আপু তোমার জীবনেও কেউ আসবে দেখো।তোমাকে আগলে নিবে মন খারাপ করোনা। উপর থেকে সব ঠিক করা এখানে তুমি আমি কি করতে পারি বলো? ভাইয়াকে ভূলে যাও। বিয়েটা উপভোগ করো ভালো লাগবে।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাঁকালো হৈমন্তীর দিকে। কিছু মানুষের ভাগ্য দেখলে হিংসা এমনি এমনিই হয় হৈমন্তীও তেমনি একজন মানুষ। সব কিছু কিভাবে জানি না চাইতেই পেয়ে যায়। ছোঁয়ার ভালো লাগে না। ভয়ানক খারাপ লাগে হৈমন্তীকে দেখলে। ভেতর থেকে রাগ হয়। ছোঁয়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তবুও মুঠো শক্ত করে বলল,
> তোকে কেউ কখনও প্রপোজ করেছে? তুই কাউকে পছন্দ করেছিস জীবনে?
হৈমন্তী অবাক হয়ে কিছু একটা ভাবলো। আসলেই ওকে কেউ কখনও প্রপোজ করেনি। ওতো দেখতে খারাপ না। মোটামুটি ভালো সুন্দরী বলা যায় তবুও কেউ ওকে কখনও ভালোবাসেনি কেনো? হৈমন্তীকে ভাবতে দেখে ছোঁয়া বলল,
> করেনি তো? অথচ আমার পেছনে ছেলেদের লাইন লেগে থাকে। আমি কাউকে পাত্তা দিই না। তোঁর ভাইকে চেয়েছিলাম ও আমার মর্ম বুঝতে পারেনি। এটা ওর ব্যর্থতা আমার না।
ছোঁয়া খুব গর্ব করে কথা গুলো বলে থামলো। হৈমন্তীর গায়ে লেগেছে কথাটা। ওকে কেউ পছন্দ করে না বিষয়টা কেমন জানি লাগলো। হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> ভালোবাসা বুঝি এমন? চেহারা দেখে যদি ভালোবাসা হতো তাহলে এতদিনে তুমি আমার ভাবি হতে।
> তোর ভাই আমার উপযুক্ত না। যে যেমন তাঁর জীবনসঙ্গী তেমনই হবে। আমার জন্য তোর ভাইয়ের থেকেও বেটার কেউ অপেক্ষা করছে।
হৈমন্তী মলিন হেসে বলল,
> নিশ্চয়ই কেনো না? তবে আমার এই মূহুর্তে একটা কথা বলতে খুব মন চাইছে। কথায় বলে,আঙুর ফল টক। আসছি আমি।
হৈমন্তী এক মূহুর্তেও অপেক্ষা করলো না। দ্রুতগতিতে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করলো। ছোঁয়া রাগে ফুলছে। হৈমন্তী রুমে এসে কানে হাত দিয়ে বিড়বিড় করলো জীবনে আর এই মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে যাবে না। অহংকারী মেয়ে একটা। কিছুতেই ছোট হবে না। এই মেয়েটা যদি ভাবি হয়ে আসতো হৈমন্তী গৃহত্যাগ করতো। কথাটা ভেবে ও ঠাস করে বিছানায় বসে পড়লো।
☆☆
চুপচাপ জানালায় চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। আরাফাতের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা একদম ঠিক নেই।। ছেলেটা ওর ভয়ে বাড়িতে আসা কমিয়ে দিয়েছে। সারাদিন কাজকর্ম করছে।অনেক রাতে এসে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়। অরিন কষ্ট পাচ্ছে। লোকটাকে পেয়েছে না পাওয়ায়। এমন পাওয়ার খুব কি দরকার ছিল? অরিন ফুপিয়ে উঠলো। হৈমন্তী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মেয়টা খেয়াল করেনি। ওর শরীর মৃদু মৃদু কাপছে। হৈমন্তী গিয়ে অরিনের কাঁধে হাত দিতেই মেয়েটা চমকে উঠে পিছিয়ে গেলো। হৈমন্তী ব্যস্ত হয়ে বলল,
> ভাবি আমি। তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো?
অরিন পেছন তাকিয়ে হৈমন্তীকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো পা। শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল,
> তোমার ভাইয়ের জীবনে আমি অযাচিতভাবে চলে এসেছি। ও আমাকে ভালোবাসে না হৈমী। আমি কষ্ট পাচ্ছি। ভাইয়াকে বলবে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> বিনা যুদ্ধে হারমানবে? আমার কথামতো চলবে দেখবে ভাই তোমাকে চোখে হারাচ্ছে। শুনবে আমার কথা?
অরিন আশার আলো দেখতে পেলো। চোখ মুছে ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
> তুমি আমাকে সাহায্য করবে?
> নিশ্চয়ই করবো। তোমার ভাবি আমি। তোমাদের বাড়িতে দুদিন পরে সংসার করতে যাবো। ছোট হতে পারি দায়িত্বটা কি ছোট নাকি?
অরিন ওষ্ঠে হাসি নিয়ে বলল,
> বলো তোমার বুদ্ধি।
অরিন ফিসফিস করে ওর কানে কানে কয়েকটা কথা বলে দিলো। অরিন মুখটা কালো করে ফেলল। এসব ওকে দিয়ে হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা করতে হবে। বরকে নিজের আচলে বাঁধতে স্ত্রীরা সব করতে পারে। তাঁর কাছে এটাতো সামান্য। হৈমন্তী ওর সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে বেরিয়ে আসলো।
☆☆☆
কাজীদের বাড়িতে ভয়ানক এক কাণ্ড ঘটে গেছে। মহিত নিখোঁজ। রাসেলকে আনতে থানায় গিয়েছিল তারপর থেকে নিখোঁজ হয়েছে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। দেলোয়ার কাজী রফিকের থেকে সবটা শুনেছে তারপর আর থানায় যাওয়ার সাহস পাইনি। মেয়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠেছিলেন সেটা নতুন করে আবারও আঘাত করেছে। গোলনাহার বানু নাতনিকে খুব ভালোবাসতেন। ওর মৃত্যু উনি মেনে নিতে পারেননি তাই হৈমন্তীকে মারার জন্য উনি মুখিয়ে ছিলেন। এখন সবটা জানার পরে উনি চুপচাপ বসে আছেন। মেয়েকে উনার কালসাপ মনে হচ্ছে। সারাজীবন উনার কানে বিষ ঢেলে গেছে। বিনিময়ে উনি লক্ষ লক্ষ টাকা মেয়ের পেছন খরচ করেছেন। সেই মেয়ের ছেলের দ্বারা নিজের নাতনির অসম্মান হয়েছে বিষয়টা কতটা জঘণ্য উনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা অনুভব হচ্ছে। মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়েছিল সে আল্লাহ্ ভালো জানে। উনারা আশেপাশে ছিলেন তবুও কিছু করতে পারেননি। মনে হলেই রাসেলকে খুন করতে মন চাইছে। উনি থম মেরে বসে আছেন। জুলেখা কাজী মায়ের হাতটা ধরে ছলছল চোখে বললেন,
> মা তুমি বিশ্বাস করো রাসেল এমন জঘন্য কাজটা করতে পারে? ওরা মিথ্যা বলছে। আমার ছেলে এমন কাজ করতেই পারে না।
গোলনাহার বানু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
> মিথ্যা হলে আমার চাইতে খুশি কেউ হতো না। তুই এবার বাড়িতে ফিরে যা। শশুর বাড়িতে গিয়ে ভালো করে সংসার কর। ভাইদের কাছে অনেক তো থাকলি। বিনিময়ে ভাইদের কলিজা ধরে টান দিয়েছিস। সবটা জানতি তুই তাইনা?
মায়ের কথা শুনে জুলেখা কাজি কেঁপে উঠলেন। সত্যিই উনি জানতেন তবে আগে না। ঘটনার পরে সবটা জেনেছেন তখন হাতের বাইরে সব। কিভাবে সবাইকে বলতেন উনার ছেলের দ্বারা উনার ভাইজির সম্ভ্রমহানি হয়েছে। লজ্জা সেই সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধবোধে উনি জর্জরিত। না উনি পারতেন না। উনাকে চুপচাপ দেখে গোলনাহার বানু ফিসফিস করে বললেন,
> গতকাল রাতেও মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখলাম। কি পবিত্র ওর মুখটা। তোরা অপবিত্র করে দিলি? আমার সব টাকা পয়সা জমিগুলো নিয়েও যদি ওকে ছেড়ে দিতি। কেনো করলি এমন? এইটুকু ছিল,আমি এই দুহাতে মানুষ করেছিলাম। বড় হয়েও আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারতো না। দাদিজানের হাতে খেতে ভালোবাসতো। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার হাতে খাওয়া বন্ধ করে দিলো। আমি তো বুঝতে পারিনি। যেই মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ছাড়া ঘুমাতে পারতো না সেই হঠাৎ আমার ছোঁয়া সহ্য করতে পারছিল না। ভয় পেতো বলতো ওকে না ধরতে। দূরে দূরে থাকতো। আমি ভাবলাম খারাপ জ্বীনের দৃষ্টি পড়েছে তাই এমন করছে। সত্যিই নজর পড়েছিল। কেনো করল তোর ছেলে এমন? ফিরিয়ে দে আমার মেয়েটাকে।
খোলনাহার বানুর প্রতিটা কথায় জুলেখা কাজী কেঁপে কেঁপে উঠলো। কথার উত্তর দিতে ভূলে গেলেন। কিভাবে এই বাড়িতে থাকবেন বুঝতে পারছেন না। লজ্জা আর অপরাধবোধ উনাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। ছেলেকে হাতে পেলে খুন করে ফেলতেন। নিজের সঙ্গে মায়ের মুখটা পুড়িয়ে দিলো। ছেলেমেয়ে ভালো কাজ করলে বাবা মায়ের অহংকার হয়। আবার খারাপ কাজ করলে হয় লজ্জা। এই লজ্জা উনি কোথায় লুকাবেন বুঝতেই পারলেন না। জীবনে প্রথমবার মনে হচ্ছে যদি বাজা হতেন। ছেলেমেয়ে না থাকতো কতো ভালোই না হতো। গোলনাহার বানুর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তবুও চিৎকার করতে পারছেন না। এক সন্তানের জন্য আরেক সন্তানের দুঃখ উনি কিভাবে মানবেন বুঝতে পারছেন না। উনি বেশিক্ষণ চুপচাপ থাকতে পারলেন না। হাত পা থরথর করে কেঁপে বিছানায় লুটিয়ে পড়ছেন। মায়ের এমন অবস্থা দেখে জুলেখা কাজী চিৎকার দিয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে সবাই চলে আসলো। আবির খাবার টেবিলে বসে ছিল। ও দ্রুত গিয়ে দাদিকে কোলে তুলে নিলো। বাইরে বের করতে বেশ বেগ পেতে হলো কিন্তু ও থামলো না। একবারে গাড়িতে গিয়ে উঠালো। ফোন করে হাসপাতালে বলে দিল ওষুধ রেডি করতে। দাদিজানের হার্ট এটাক হয়েছে। বাড়ির লোকজন ছুটলো মায়ের পিছু পিছু। মির্জা বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছে। আগামীকাল থেকে গায়ে হলুদ হবে। রফিক ওই বাড়িতে গিয়ে উঠেছে ফিরছে না। ছেলেটা আনন্দপ্রিয় মানুষ। গান বাজনা হৈচৈ পেয়ে বাড়ির কথা ভূলে গেছে। তাছাড়া আরাফাতের সঙ্গে ওর চমৎকার একটা সম্পর্ক হয়েছে। গলাই গলাই ভাব।
☆☆
সারারাত জমে মানুষে টানাটানির পরে শেষ রাতে গোলনাহার বানুর শরীর ঠিক হলো। সারারাত আবির দাদিজানের পাশে বসে আছে। বাইরে বাড়ির বড়রা এসেছে। সবার চোখে পানি।। এতদিন মির্জাদের উপরে দোষারোপ করে আসছে কখনও ভাবতে পারেনি ওদের মধ্যেই শয়তান লুকিয়ে আছে। পরের দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নেওয়া গেলেও আপনজনের দ্বারা ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। দেলোয়ার কাজী বাকশূন্য হয়ে বসে আছে। আনোয়ার কাজী ভাইয়ের পাশে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আসমা বেগম অরিনের মায়ের সঙ্গে আছেন। মোটামুটি কাউকে একা রাখা হচ্ছে না। বিপদের সময় সঙ্গ না দিলে এমন আত্মীয় থাকার চাইতে না থাকাই ভালো। হৈমন্তী অনেকবার আবিরকে ফোন করেছিল কিন্তু ছেলেটা ফোন উঠানোর সময় পেলে না। হৈমন্তী রাগ করেছে। তবুও বেশ টেনশন হচ্ছে। গতকালের ঘটনা নিয়ে এখনো চুড়ান্ত কিছু শুনতে পেলো না। ও রফিকেকে কিছু বলবে কিন্তু লজ্জা পাচ্ছে ছেলেটার সঙ্গে কথা বলতে। হাজার হোক এক সময় ছেলেটার সঙ্গে ওর বিয়ের কথা চলছিল। হঠাৎ গায়েব না হলে হয়তো বিয়েও হতো। তাছাড়া হৈমন্তীর কখনও বাইরের লোকজনের সঙ্গে তেমন মেলামেশা হয়নি। আমেনা বেগম মেয়েকে পুতুলের মতো গড়ে তুলেছেন। পুরুষ মানুষের আশেপাশে ঘেঁষতেও দেননি। মেয়েও মায়ের ভয়ে এসব এড়িয়ে চলেছে। ছোঁয়া যেমন বলেছিল তেমন না।হৈমন্তীকে কেউ প্রেম নিবেদনের সুযোগ পাইনি তাই করেনি। তাছাড়া মির্জা বাড়ির বড়বড় তিনটা ছেলে থাকতে তাদের বোনকে প্রেম নিবেদন করবে এমন সাহস মফস্বলে কারো ছিল না। পুতুলের মতো মেয়েটা সকলের স্নেহের। তার দিকে বাজে নজর আসবেই কিভাবে। আমেনা বেগমের বাড়াবাড়ি রকমের ভাবসাব আত্মীয়স্বজনের জানা আছে। কেউ ইচ্ছে করলেও অন্দরমহলে যেতে চাইতোও না। ফলাফল হিসেবে হৈমন্তী ঘরকুনো টাইপের হয়ে গেছে।
_______________
মির্জা বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবির। দাদিজানের শরীর মোটামুটি ঠিক হতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। একটু ঘুমের দরকার ছিল কিন্তু বাড়িতে যেতে মন চাইছে না। হৈমন্তীকে খুব করে দেখতে মন চাইছে। ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখা যেতো কিন্তু রাখতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া মেয়েটা বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। হয়তো রাগ করে আছে। আবির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার ফোন দিলো কিন্তু মেয়েটা ফোন তুললো না। আটবারের মাথায় ঘুমঘুম কন্ঠে হৈমী ফোন তুলল। আবির ভনিতা ছাড়াই বলে উঠলো,
> হৈমী ভীষণ ক্লান্ত আমি। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি দ্রুত নিচে আসো। বউয়ের মুখ দেখে ফিরবো।
হৈমন্তী দ্রুত বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ও আর অপেক্ষা করলো না ফোনটা রেখে পা বাড়ালো বাইরের দিকে। ডাইনিং রুমে লাল নীল আলো জ্বলছে। কেউ জেগে নেই। ঘুমিয়ে আছে। হৈমন্তী পা টিপে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। গেটের কাছে দারোয়ান চাচা ঘুমিয়ে আছে। হৈমন্তী সোজা আবিরের সামনে দাঁড়াতেই আবির ওকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে নিজেও গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। হৈমন্তী চোখ বড়বড় করে বলল,
> কোথায় যাচ্ছি আমরা?
আবির ড্রাইভিং করতে করতে বলল,
> প্রেম করতে।
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> মজা করছেন তাই না? কতবার ফোন করেছি ধরলেন না কেনো? জানেন কতটা টেনশনে ছিলাম?
> দাদিজান অসুস্থ হৈমী। সারারাত উনার সঙ্গে ছিলাম। যাবে একবার দেখতে? অরিনকে নিতে চাইছি না। হঠাৎ ওকে দেখলে আবার উত্তেজিত হয়ে পড়বে। ভয় পাচ্ছি অনেক।
হৈমন্তী আবিরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। লোকটা ডাক্তার তবুও ভয় পাচ্ছে শুনে কেমন জানি লাগলো। ধরা গলাই বলল,
> বাঁচবেন তো?
আবির গাড়ি থামিয়ে বলল,
> বুঝতে পারছি না। রিপোর্ট সকালে পাওয়া যাবে। অরুনীকে দাদিজান খুব ভালোবাসতেন হৈমী। উনি মানতে পারছেন না। চাচা চাচির মুখের দিকে তাঁকানো যাচ্ছে না। আমার ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যেতে। কারো জন্য কিছু করতে পারছি না। কি যে যন্ত্রণা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। খুব করে ঘুমানোর দরকার তবুও তোমাকে নিয়ে চলে আসছি। জানিনা কোথায় যাচ্ছি।
হৈমন্তী কিছু ভেবে নিয়ে বলল,
> গাড়ি ঘুরান আর বাড়িতে চলুন। সকালবেলায় আপনার সঙ্গে হাসপাতালে যাবো। আপনার ঘুমানোর দরকার।
আবির যেতে চাইলো না কিন্তু হৈমন্তী শুনলো না। নাছোড়বান্দা হয়ে ওকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো। ওকে নিজের রুমে রেখে রান্নাঘরে গিয়ে খাবার গরম করে রুমে এনে ওকে খেতে দিলো। আবির চুপচাপ খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। হৈমন্তী থালাবাসন রেখে এসে দেখলো আবির ঘুমিয়ে বিভোর। তাই ওকে আর ডাকলো না। চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
চলবে