দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব ৩৪

0
511

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩৪

নিস্তব্ধ কক্ষে হৈমন্তী ঘুমে বিভোর। দেয়াল ঘড়িতে সময় ভোর চারটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ফোনের শব্দে আবিরের ঘুম ভেঙে গেলো। এলাম সেট করা ছিল বন্ধ করা হয়নি। আবির চোখ বন্ধ করেই বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে চোখের সামনে ধরলো। হৈমন্তী ওর বুকের কাছে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আবির সামান্য আলোতে ওকে ভালো করে দেখে নিলো।।মেয়েটার শাড়ির অর্ধেক অংশ ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে বাকীটা পিঠের নিচে। হৈমন্তীর চোখে আলো পড়তেই ওর নড়াচড়া করে আবিরের দিকে আরও এগিয়ে আসলো। চোখমুখ কুচকে ফেলল। ঘুমের মধ্যে মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে। আবির মলিন হেসে হৈমন্তীর কপালে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো।তারপর ফোনটা পাশে রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু ঘুম আসছে না। হৈমন্তীকে ছেড়ে ও উঠে বসলো। কফি খেতে মন চাইছে। কিছু কাজ ছিল করতে হবে। ভাবলো কফি খেতে খেতে কাজটা করলে মন্দ হবে না। কথাগুলো ভেবে ও দ্রুত বিছানা থেকে নেমে পড়লো। কম্বলটা হৈমন্তীর গায়ে টেনে দিয়ে শাড়িটা ওর বালিশের পাশে গুছিয়ে রাখলো। মেয়েটা শাড়ি সামলাতে পারেনা আবার পরার জন্য লাফালাফি করে। আবির আগে কখনও হৈমন্তীকে এতোটা মুগ্ধ হয়ে দেখেনি। হঠাৎ কি জানি হয়েছে মেয়েটা যেটাই পরে বা করে আবির মুগ্ধ হয়ে যায়। লক্ষণ বেশি ভালো না। এমনে চললে লোকে বউ পাগল উপাধি দিতে সময় নিবে না। কথাগুলো ভেবে ও চুপচাপ রুম থেকে বের হলো। ডাইনিং রুমে আবছা আলোতে সোফার দিকে তাঁকিয়ে আবিরের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। রোহান লামিমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটাও সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। কি দৃশ্য?রোহান গতকাল বিয়ে করবে না বলে কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দিতেছিল। কিন্তু ঘর ছেড়ে এরা বাইরে কি করছে ও বুঝতে পারলো না। চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে তিন কাফ ফফি তৈরী করে নিলো। এক কাফ কফি মগে ঢেলে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে বেরিয়ে আসলো। সোফায় বসে আয়েশ করে কফির মগে মুখ ঢুবিয়ে রোহান বলে ডাক দিলো। প্রথম ডাকে সাড়াশব্দ না দিলেও দ্বিতীয় ডাকে দুজনই হুড়মুড় করে উঠে বসলো। রোহান বুকে হাত রেখে বলল,
>কি কি হয়েছে?
আবিরের বেশ মজা লাগলো। তবুও হাসলো না। কোনোক্রমে হাসি চাপিয়ে বলল,
> বাসর ঘর পছন্দ হয়নি? বললেই পারতে নতুন করে সাজাতাম।
রোহান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> অভ‍্যাস নেই।
লামিমা হতভম্ব হয়ে রোহানকে দেখছে। আবির ভ্রু নাচিয়ে বলল,
>বিয়ের আগে বাসরের অভ‍্যাস সবার থাকে না গাঁধা। বিয়ের পরে হয়। তুমি কি আগেই অভ‍্যাস করতে চেয়েছিলে?
রোহান বিরক্তি নিয়ে বলল,
> আপনি শুধু নেগেটিভ চিন্তা করেন কেনো? ওসব ফুলফলের মধ্যে আমার ঘুম আসছিল না। মেজাজ খারাপ লাগছিল। বাসর টাসর আমার লাগবে না।

> ও আচ্ছা। যাইহোক লামিমা তুমি এখানে কেনো?
লামিমা হাফ ইংরেজি হাফ বাংলাতে উত্তর দিলো,
> ওকে ছাড়া একা ঘুম আসছিল না। এখানে বসতেই ও আমার পায়ের উপরে ঘুমিয়ে গেলো উঠতে দিলো না।
> বাহ দারুণ। এভাবে ওর পেছনে পেছনে চিপকে থাকলেই হবে। আজেবাজে দিকে নজর দিয়ে সময় নষ্ট করবে না বুঝলে?
> একদম।
আবির ফ্লাক্সের কফিটা লামিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
> তোমাদের জন্য।
আবির উত্তরের আশা করলো না দ্রুত রুমে ফিরে আসলো। ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে ল‍্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো সোফায়। এখানে এসেছে দুদিন গত হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। ওর ক্লিনিক খোলা হয়েছে। আপাতত রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। কাছের কিছু বন্ধু আর সিনিয়রদের অনুরোধ করে টাকা দিয়ে রোগী দেখার ব‍্যবস্থা করেছে। যতদিন এখানে থাকবে আরাফাত সবটা সামলে নিবে। তবুও ওর কিছু কাজ থেকেই যায়। এখানে থাকা অবস্থায় ক্লিনিক থেকে ইনকামের আশা ও ছেড়ে দিয়েছে। যা হবে বাইরের ডাক্তারদের জন্য লেগে যাবে। আবিরের অনেক স্বপ্ন ছিল ক্লিনিকটা নিয়ে। যতদিন সাধ‍্য থাকবে তাঁর উন্নতির জন্য প্রাণপনে কাজ করবে। আবিরের কাজ শেষ করতে করতে সকাল হয়ে গেলো। চার‍দিকে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। হৈমন্তী আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলো। চোখ বন্ধ করে হামি ছেড়ে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো আবির মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। হৈমন্তী ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
> শুপ্রভাত ডাক্তার।
আবির ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল,
> আর প্রভাত উঠলে তো দুপুরে। বর একা একা বসে আছে। বাসর শেষ না হতেই অবহেলা শুরু করলে? প্রয়োজন শেষ?
হৈমন্তী নাকমুখ কুচকে বলল,
> আবারও আজেবাজে কথা বলছেন? আপনি প্রচণ্ড রকমের খারাপ মানুষ। ডাকলেন না কেনো?
> ভাবলাম বউটা আমার ঘুমিয়ে আছে নাইবা বিরক্ত করি। ফ্রেস হয়ে আসো আমি বাইরে থেকে আসছি।
আবির ল‍্যাপটপ বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লো। হৈমন্তী ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখলো আবির ওর খাবার নিয়ে হাজির। ফলের জুস আর বিখ্যাত ওমলেট। সবাই ঘুমিয়ে আছে। এরা সকালে তেমন ঘুম থেকে ওঠে না। এখনো এক ঘন্টা পরে উঠবে। আবির খাবার রেখে বলল,
> আমি এইটুকুই পারি। শিখেছিলাম কোনরকম। ইনশাআল্লাহ সময় পেলে সব শিখে ফেলবো।

হৈমন্তী আবিরের পাশে বসতে বসতে বলল,

> আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেনো? আমি নিজেই যেতাম। তাছাড়া রান্না মেয়েদের কাজ,ছেলেদের না।
> কোথায় লেখা আছে রান্না মেয়েদের কাজ? অনেক ছেলে আছে রান্না করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাছাড়া এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আর্ট। বাঁচতে হলে দরকার হয়। এতদিন গুরুত্বটা বুঝতে পারিনি। এখন বুঝতে পারছি বউকে পটানোর জন্য এটার গুরুত্ব কতখানি।
> আমি এমনিতেই পটে আছি নতুন করে পটানোর কিছু দেখছি না। আচ্ছা আপনাদের বংশের ডাকাতের ইতিহাসটা কি আপনার জানা আছে?
> এটা তোমার ভাইয়ের বানোয়াট কথা। আমাদের বংশে কেউ ডাকাত ছিল না। আমার বাবার দাদা ছিলেন জমিদার। এতো এতো জমি আছে এসব উনার থেকেই প্রাপ্ত। তবে আমি ডাকাতি শুরু করবো ভাবছি।
হৈমন্তী চোখ বড়বড় করে বিস্মিত হয়ে বলল,
> কেনো?
> মনের আনন্দের জন্য। তোমার উপরেই ডাকাতিটা করবো,যেকোন সময়। দ্রুত খাওয়া শেষ করো আমার কাজ আছে। তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ যাওয়া ঠিক হবে না। ইনশাআল্লাহ বাড়িতে থাকো আগামীকাল যাবো।

আবির অপেক্ষা করলো না। হৈমন্তীকে খাওয়ানোর পরে বেরিয়ে পড়লো। নিকটবর্তী একটা ইউনিভার্সিটি আছে হৈমন্তীর এডমিশনের ব‍্যবস্থা করেছে। সেখানে দরকারি কাগজপত্র সাবমিট করার আছে। তাছাড়া তিনমাস এখানে ওর থাকা হবে না। ফিরতে হবে। নিজের বিপদটা ও আরাফাতের উপরে চাপিয়ে দিতে পারবে না। যা করবে ও নিজেই করবে। হৈমন্তীকে এখানে রেখে যাবে। দরকার হলে মাঝেমাঝে আসবে। মেয়েটা সেভ থাকবে পড়াশোনা করবে। দেশের পরিস্থিতি ভালো না।
______________________
আমেনা বেগম তিন পুত্রবধুর উপরে বিরক্ত। তিনটা মিলে সিনেমা দেখতে বসেছে। কমেডি মুভি চলছে। হাসাহাসি করে সব একে অন‍্যর উপরে গড়িয়ে পড়ছে। উনি এত করে ধমক দিচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কেউ শুনছে না। ধমক শুনে চুপচাপ থেকে আবারও গগনবিদারী হাসিতে ডাইনিং রুম কাপিয়ে দিচ্ছে। একজন হাসলে বাকীদের থামার নাম নেই। চয়নিকা চুপচাপ থাকার চেষ্টা করলেও অরিন বা রুনির জন্য হচ্ছে না। কি একটা বিরক্তিকর অবস্থা। আমেনা বেগম সমানে বকে চলেছে। বিরক্ত হয়ে ভাবছেন যেমন দেবা তার তেমনি দেবী। ছেলেগুলা যেমন মহা ফাজিল বউগুলোও কেউ কারো থেকে কম না। ভেবেছিলেন নিজের পছন্দসই বউ আনবেন কিন্তু একটা ছেলেও উনার সেই ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূরণ করেনি। যার যাকে পছন্দ হয়েছে ধরে এনেছে। না মেনে উপাই ছিল না। আরাফাতের উপরে উনি সব সময় রুষ্ট থাকলেও আপাতত এখন আর নেই। বড় মেয়েটা জামাইয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম থাকে। বছরে একবারও বাবার বাড়িতে আসার সময় হয়না। ফোনে টুকটাক কথা হয়ে। মেয়েটা ভালো আছে ভেবেই উনি খুশী। হঠাৎ হাসির শব্দে উনার ধ‍্যান ভাঙলো। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
> থামবে তোমরা? দুপুর হতে চলেছে রান্নার খোঁজ নেই। ছেলেগুলা কি না খেয়ে থাকবে?
রুনি হাসি থামিয়ে জবাব দিলো,
> আজ রান্নাঘরে তালা ঝুলিয়েছি মা। আপনার ছেলেরা আজ আমাদের সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে। সঙ্গে আপনি আর বাবাও যাচ্ছেন।
আমেনা বেগম অবাক হলেন। এই বাড়ি থেকে কখনও বাইরে খেতে যাওয়া হয়না। চয়নিকা যা রান্না করে তাই খাওয়া হয়। খুব দরকার হলে হোম ডেলিভারীর জন্য অর্ডার করা হয়। ছেলেদের কর্মব্যস্ততা দিনদিন বাড়ছে। তাছাড়া রাজীব গার্ড নিয়ে ঘোরে। খেতে গেলে রেস্টুরেন্টের সামনে সব দাঁড়িয়ে থাকবে বিষয়টা বিরক্তিকর। উনি বা চয়নিকা পছন্দ করেন না। এদের মাথায় কী চলছে জানার জন্য বললেন,
> অনলাইনে অর্ডার দিলেও পারতে বউমা। শুধু শুধু ঝামেলা না করে। রান্না করতে মন না চাইলে জরি আছে ওকে বলো।
রুনি দ্রুত বলল,
> আপনার ছেলেরা সারাদিন বাইরে বাইরে মেইল ট্রেনের মতো ঘুরছে। এদিকে আমাদের ঘরে বন্দি করে। আজ আমরা অনশনে নেমেছি। তিনভাই বাড়িতে ফিরে আমাদের সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে। না নিয়ে গেলে ঘরে জায়গা দিচ্ছি না। তালা ঝুলিয়ে তিনজন এক রুমে গিয়ে ঘুমাবো।
আমেনা বেগম বুঝলেন এরা যুক্তি করে একসঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে। উনার বলাতে কাজ হবে না। এদের মধ্যে না ঢুকাই ভালো। যা মন চাই করুক। উনি কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বসলেন।

দুপুরে সত্যি সত্যি রান্না হলো না। তিন ভাইকে টেক্সট পাঠিয়ে ফোন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফোন খোলা থাকলে অসুবিধা আছে। চয়নিকার দরদি শরীর। রাজীব ইনিয়ে নিবিয়ে কিছু বললেই মেয়েটার মন গলে যাবে। এটা হতে দুপুরে মাসুদ আর রাজীব বাড়িতে ফিরলেও আরাফাত ফিরতে পারলো না। অরিন বাধ্য হয়ে ফোন আন করে ফোন দিলো। কিন্তু বন্ধ বলছে। ওর বেশ টেনশন হচ্ছে। খেতে যাওয়া হলো না। ভাবলো রাতে যাবে। চয়নিকা সামান্য কিছু রান্না করে সবাইকে খেতে দিলো। কিন্তু অরিনের খাওয়া হলো না। রাজীব ভাইকে খোঁজার জন্য লোক পাঠালো। ছেলেটা আবিরের ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে কোথায় গেছে কেউ জানেনা। ওর কাজকর্ম গুলো সব উল্টোপাল্টা টাইপের। সকলের চিন্তার অবসান ঘটিয়ে সন্ধ্যার পরে আরাফাত বাড়িতে ফিরলো। হাত পায়ে জখম নিয়ে। ঠোঁটে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। রাজীব ওকে ধরে রুমে দিয়ে গেলো। অরিন বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। আরাফাত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে ইশারা করতেই অরিন ওকে জড়িয়ে ওরে হু হু শব্দ করে কেঁদে উঠলো। আরাফাতকে শক্ত করে ধরতেই ছেলেটা বলে উঠলো,
> আরে আস্তে ধরো আমি সিনেমার নায়ক না গায়ে ব‍্যাথা আছে। কান্নাকাটি বন্ধ করো। আমি ঠিক আছি।
অরিন ওকে খপ করে ছেড়ে দিলো কিন্তু আরাফাতের পছন্দ হলো না। ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,
> ছেড়ে দিতে বলেছি নাকি? শুনো তোমার ফুপা ধরা পড়েছে। পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিলাম তুলতে। শহর ছেড়ে গ্রামে পালিয়েছিল। তুমি জানো যেইনা আমাদের দেখলো অমনি দৌড়। তারপর মুরগি ঘরের নিচে ঢুকে গেলো। আমি পা ধরে টানাটানি করলেও ব‍্যাটা বের হয় না। কি একটা অবস্থা।
> আপনি কেনো গিয়েছিলেন? পুলিশের কাজ পুলিশ করতো।
> এসব পুলিশ টুলিশে আরাফাতের বিশ্বাস নেই। টাকা ছড়ালে আসামি আর ভিকটিম গুলিয়ে দিতে এদের সময় লাগে না। যতদিন পযর্ন্ত বিচার না হচ্ছে আমার শান্তি নেই। আমাকে তো চিনে না। প্রিয়জনের জন্য আমি সব করতে পারি।
অরিন ঠোঁট উল্টে বলল,
> হিরো
> হীরো না তোমার বর। যাও এখন বরের সেবা করো। রেডি হয়ে আসো রাতের ডিনারের ব‍্যবস্থা করেছি। টেক্সট পেয়েছি ঝামেলা শেষ করে ফোন অন করলাম সেই সময়। তখনই টেবিল বুক করেছি। বউয়ের চাওয়া অপূর্ণ রাখতে চাই না। ভাবিদের বলে এসেছি।
অরিনের ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো। লোকটা যে ওকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। ভালোবাসার প্রথমধাপে পা দিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু সামনে এগোনোর দিন
☆☆☆
থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে হৈমন্তী। আবির কিছুক্ষণ আগে ফিরে এসেছে। আবিরের কাছে থাকা কাগজপত্র দেখে ওর ভয়ানক মন খারাপ। ভেবেছিল দুজনে এক সঙ্গে ফিরবে কিন্তু আবির সেটা করছে না। ওর এখানে রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে কিন্তু কেনো? হৈমন্তীর মতে ওর পড়াশোনার কোনো দরকার নেই। বাপ ভাই বা শশুরের টাকা পয়সার অভাব নেই। ও যেখানেই থাকবে না খেয়ে থাকতে হবে না।তাহলে ও কেনো পড়াশোনার জন্য সংসার করতে পারবে না? আবির কড়াকড়ি ভাবে বলেছে, মেয়েদের পড়াশোনার দরকার আছে। অবস্থা পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। কোনো এক সময় আবির নাও থাকতে পারে। হঠাৎ যদি মারা যায় তবে সবকিছু হৈমন্তীকেই দেখতে হবে তাই ওর পড়াশোনা শেখার দরকার আছে। এখানে থাকলে পড়াশোনা ভালো হবে। জ্ঞান বাড়বে। চাকরি করতে হবে না তবুও জ্ঞানের দরকার আছে। এটা শুনে হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হয়েছে। চুপচাপ বসে আছে আবিরের সঙ্গে কথা বলছে না। আবির অসহায় ভাবে ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কিভাবে বোঝাবে মাথায় আসছে না। আবির চুপচাপ উঠে গিয়ে হৈমন্তীর গা ঘেঁষে বসে ওকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> তোমার ভালো চাইতে পারবো না আমি?
> এটা কেমন ভালো? আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। বাচ্চা কাচ্চা হবে মন দিয়ে সংসার করতে চাই। আমি চাইনা পড়াশোনা শিখে বিদ‍্যান হতে।
আবির হাসলো। মেয়েটা ফাঁকিবাজ বুঝতে সময় লাগলো না। তবুও বলল,
> ফেল করার ভয়ে পড়াশোনা ছাড়বে হেমী? বিয়েও তো করেছিলে এই জন্য?
হৈমন্তী থমথমে মুখে আবিরের কথা ইগনোর করে বলল,
> পাশের বাসার ভাবির বাবু হবে। আমি চাই আমারও হোক। তারপর গুছিয়ে সংসার করবো। আপনার জন্য রান্না করবো। শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে ভাব জমাবো কত মজা হবে।
> কপাল আমার। মায়ের সঙ্গে তোমার ভাব কম ছিল কবে শুনি? আর বেবি তুমি সামলাতে পারবে না। আগে নিজেকে সামলাতে শিখো। মাথায় শুধু বদ বুদ্ধি। বইখাতা রবিনকে বলেছি ও পাঠিয়ে দিবে। প্রজেক্টরে ক্লাস হবে তুমি ল‍্যাপটপ ব‍্যবহার করতে পারবে। আমি কয়েকদিনে আছি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবো।
হৈমন্তী আবিরের হাত কামড়ে দিয়ে বলল,
> পারবো না আমি। এখানে কেনো পড়তে হবে? দেশে স্কুল কলেজ নেই? দরকার হলে আগে যেমন ছিলাম তেমনি পড়বো।
> সুযোগ বারবার আসে না হৈমী। তুমি মন্ত্রীর বোন আর একজন ভালো ডাক্তারের বউ বলে সুযোগটা পেয়েছো। দেশের অসংখ্য প্রতিভা আছে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে সুযোগের অভাবে। সুযোগ কাজে লাগাও আশাকরি আমার কথা তুমি একদিন বুঝবে। আমরা কাছে না থাকলেও পর হবো না। ইন্টারনেটের যুগ। হাজার মাইল দূরে থাকলেও অদৃশ্য ভাবে কাছে থাকবো। দেশে রাজনৈতিক হাঙ্গামা চলতেই থাকবে। রাজীব ভাইয়ার নির্বাচনের বেশিদিন নেই। ওসব ঝামেলা টেনশনে তোমার পড়াশোনা হবে না। বডি গার্ড নিয়ে কলেজে যাওয়া ঝামেলা। এখানে তুমি নিরাপদে থাকবে।
আবির একদম কথাগুলো বলে থামলো। হৈমন্তী ওর বুকের মধ্যে ফ‍্যাচ ফ‍্যাচ করে নাক টেনে কাঁদছে। আবির ওর মুখটা তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে কাপলে চুমু দিয়ে বলল,
> আচ্ছা জোর করবো না। তুমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নাও। এখন কান্না থামাও।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here