তোর মনের অরন্যে পর্ব-১২

0
808

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১২.
অন্ধকার রুমে হাত চেয়ারে পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে একজন ব্যাক্তি। এই মুহূর্তে সে বেঁচে আছে কি মরে গেছে সেটা বোঝার উপায়। তার শরীর পুরো নিশাড় হয়ে পড়ে আছে। বন্ধ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে আসে কয়েকজন। ভিতরে অল্প আলোর ছিট এসে প্রবেশ করে রুমের মধ্যে বাইরের থেকে। তারপরেই রুমের আলো ও জ্বলে ওঠে।

সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে পড়ে থাকা লোকটার দিকে যাকে বেঁধে রাখা হয়েছে চেয়ার এর সাথে। শরীরে আঘাত এর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট হয়ে। সোহার পাশে আরও পাঁচ জন আছে আকাশ সানি নীহার অ্যাস ও আমন। তারা ও সোহার মত সামনে তাকিয়ে আছে। বেঁধে রাখা লোকটির কোনো নাড়া চড়া না করতে দেখে সোহা বলে ওঠে।

-“ওকে মরা থেকে বাঁচিয়ে তোল।

বলেই সোহা পাশে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। আর সানি আর আকাশ চলে যায় রুমে বাইরে। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা ফিরে আসে তবে খালি হাতে নয়। হাতে একটা বড় পানির পাত্র নিয়ে। তবে পানি টা কোনো নরমাল পানি নয় গরম পানি। ওরা রুমে এসে একবার সোহার দিকে তাকায়। সোহা ইশারা দিতে ওরা এগিয়ে গিয়ে পানির পাত্র টা ওই লোকটির গায়ের উপর উল্টে দেয়। কিছু সেকেন্ডের মধ্যে রুমে চিৎকারে ভরে যায়। এতক্ষণ নিশাড় হয়ে পড়ে থাকা লোকটি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে চিৎকার কমে আসতে সোহা এগিয়ে যায় তার দিকে।

-“এবার কিছু মনে পড়েছে? নাকি এখনও তোর কিছু মনে পড়েনি? তবে চিন্তা আজকে কিছু মনে না পড়লে ও মনে করানোর উপায় রাখা আছে। সোহা তার তেজি আওয়াজে বলে ওঠে।

সোহা এবার এগিয়ে গিয়ে লোকটির সামনে বসে তার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। লোকটি এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

-“আকাশ সানি এর এখনও কিছু মনে পড়েনি। যা একে মনে করানোর জন্য জিনিস গুলো নিয়ে আয়। সোহা আকাশ সানি কে বলে ওঠে।

সানি আর আকাশ রুমের বাইরে চলে যায়। আর এদিকে লোকটি যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সোহার কথা শুনে আকাশ আর সানির চলে যাওয়া দেখছে। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ আছে। আর সোহা বসে বসে এক দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে আছে লোকটির মুখের দিকে। রুমের এক কোণে আমন নীহার অ্যাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।

সোহা আমন সেই পন্ডিচেরি প্রোমেনেড বিচ থেকে চলে আসার সময় যে আওয়াজ আর কয়েকজন লোক কে দেখে ছিলো ড্রাগস নিয়ে কথা বলতে তার মধ্যে মাথা এই লোক। ওই সময়ে আমন সোহা ওখানে গিয়ে বাকি লোক গুলো চলে গেলে ওদের লিডার কে তুলে নিয়ে আসে। এই লোকটি কে সার্চ করে তার ফোন ও ড্রাগস এর প্যাকেট পাওয়া যায় সাথে কিছু রিসিট। সেদিন ওকে তুলে নিয়ে এসে ড্রাগস এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে কোনো মুখ খোলে না তখন প্রাথমিক তাকে টর্চার করা হয়। তাকে সার্চ করা ওই সব গুলো পাওয়া যায়। ওই ফোন এর কল লিস্টে প্রথমেই রাঠোর নামে সেভ করা থেকে কল ছিল। রাঠোর নাম দেখেই সোহা আর আমন এর ভ্রু কুঁচকে যায় । প্রথমেই তার মাথায় আসে আকেশ রাঠোর এর নাম। সোহা তার কাছে থাকা ইউনিভার্সিটির সমস্ত প্রফেসর ম্যাডামদের ইনফরমেশন থেকে আকেশ রাঠোর এর নাম্বার দেখতে মিলে যায় নাম্বার আর তারপরেই ইউনিভার্সিটি গিয়ে সোহা আকেশ এর সাথে ভালো ব্যবহার করে তার কাজ সফল করে। সোহা কৌশলে আকেশ এর ফোন ফুল সিস্টেম ট্র্যাক করে। যাতে আকেশ এর ফোনের সমস্ত ইনফরমেশন কল সব কিছুই জানতে পারবে।

আকাশ সানি রুমে আসতেই লোকটি ভয়ে চমকে ওঠে। আকাশ আর সানি একটা ট্রলি টেবিল ঠেলে রুমে নিয়ে আসে যাতে অনেক রকমের অস্ত্র রাখা আছে সবার উপরে আছে জ্বলন্ত দু’টো শিক যার থেকে এখনও আগুনের তাপ বের হচ্ছে। তারপরেই রাখা আছে ছোটো বড় নানা ধরণের ছুরি। আর পরে আছে গান। এগুলো দেখেই তার হাড় হিম হয়ে আসছে।

আমন কোণে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে দেখে যাচ্ছে সেও কিছুটা অবাক হয়েছে এই সব দেখে তার এটা সোহার সাথে প্রথম কাজ তাই সে জানে না সোহার টর্চার পদ্ধতি তাই সে অবাক হয়ে আছে। পাশে দাঁড়ানো অ্যাস তার ভাই এর এমন অবাক হতে যাওয়া মুখ দেখেই মুচকি হাসে। এটাই স্বাভাবিক যারা প্রথম সোহা কে দেখবে এমন ভাবে তারাই অবাক হবে কেউ কেউ আবার ভয়ে জ্ঞান হারাতে ও পারে।

-“এই মেয়ে একজন অফিসার নাকি সাইকো কিলার। আমন মৃদু স্বরে বলে ওঠে।

-” উম অফিসার হলে ও বলতে পারো একজন সাইকো কিলার। অপরাধীদের মারার সময় ওর মনে কোনো মায়া দয়া কাজ করে না তখন ওকে ভয়ংকর হিংস্র মনে হবে। অ্যাস বলে ওঠে।

আমন অবাক হয়ে তাকাতেই অ্যাস তার ভাই এর মুখে দিকে তাকাতেই ইশারায় সোহার মুখের দিকে দেখায়। আসতে আসতে সোহার মুখের এতক্ষণ এর স্বাভাবিক শান্ত সৃষ্ট ভাবটা কেটে গিয়ে কঠিন হয়ে উঠছে।

-“এখন তো তুই আমাদের সাথে কাজ করছিস তাই তুই ও দেখতে পাবি সোহার হিংস্র রূপ। অ্যাস বলে ওঠে।

ওরা সবাই এবার সামনের দিকে তাকায়। আকাশ সানি ওগুলো রেখে আবারো এক সাইট হয়ে গেছে। সোহা এবার উঠে দাঁড়িয়ে এক এক করে অস্ত্র গুলো হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। আর লোকটি ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে সোহা কে এমন করতে দেখে ।

-“তো এখনও কিছু মনে পড়েনি তাহলে তাইতো তোর? তুই কে? কার হয়ে কাজ করিস কিছু মনে নেই তোর তাই না? সোহা হাতে একটা ছোটো ছুরি নিয়ে লোকটির দিকে ঝুঁকে গিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

লোকটাকে কোনো কথা না বলে কাঁপতে দেখে সোহা এক হাত দিয়ে মাথায় রাব করে হাতে থাকা ছুরি টা বসিয়ে দেয় লোকটার এক হাতের মাঝে সাথে সাথে গগন বিদারি চিৎকারে ভরে যায় পুরো রুম। আচমকা এমন আক্রমণ ওখানে সবাই কে চমকে দেয়। আকাশ সানি অ্যাস নীহার ওরা এমন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হলেও তারাও চমকে যায় মাঝে মাঝে সোহার কাজে

-“ব ব বলছি বলছি । লোকটি চিৎকার করে বলে ওঠে।

সোহা বাঁকা হেসে চেয়ারে বসে পড়ে হাতে তুলে নেয় একটা ছুরি সেটা নিয়ে নিজের মাথায় রাব করতে থাকে। আর লোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলতে থাকে।

-“আম আম আমার নাম রবিন। আমি ড্রাগস সাপ্লাই করি। সাথে আরো অনেক রকম বেআইনি কাজ বিভিন্ন রকমের অস্ত্র মাদক দ্রব্য। চাইল্ড ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত আছি। আমার কাজ এগুলো ঠিক ভাবে সাপ্লাই করা বিগ বস ও এস.আর থেকে ফাইনাল হওয়ার পর সেকেন্ড বস এর থেকে হ্যান্ড ওভার হয়ে এগুলো আমার কাছে আসে তারপরে আমি আমার লোক দিয়ে এগুলো বিভিন্ন জায়গা তে সাপ্লাই করা হয়। আর সেকেন্ড বস ইউনিভার্সিটি এর মধ্যে এই ড্রাগস এর কাজ চালায় ।

-“এর সাথে আর কে কে জড়িত? আর এই বিগ বস ও এস.আর ও সেকেন্ড বস কে? সোহা বলে ওঠে।

-” বিগ বস কে কখনো দেখিনি তবে সেকেন্ড বস ও এস.আর কে চিনি নামে পরিচিত।

রবিন এর কথা শুনেই সোহা চমকে ওঠে না চাইতে ও। প্রথমে সে নাম গুলো ঠিক মনে করতে পারিনি কিন্তু এখন তার মাথায় শুধু ঘুরতে থাকে বিগ বস এর এস.আর এই দু’টো শব্দ। সোহার মত ওখানে থাকা আকাশ সানি অ্যাস নীহার তারা ও চমকে ওঠে ওরা ও একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। আমন সবাই কে এমন চমকে যেতে দেখেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে।

-“কি ব্যাপার তোরা এমন চমকে গেলি কেনো? আর কেউ এই বিগ বস এর এস.আর ও এই সেকেন্ড বস কে তোরা চিনিস নাকি? আমন জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” ভাই এখানে আসার আগেই আমরা দিল্লী তে একটা কেস হ্যান্ডেল করেছি পুলিশ কমিশনার রাজীব রায় এর মেয়ে কে কিডন্যাপ করা হয় সাথে তাকে টর্চার করে ভিডিও ভাইরাল ও হয়েছিলো এই কেস এর তদন্ত করতে এই নাম দু’টো উঠে এসেছিল বিগ বস ও এস.আর। কিন্তু এই সেকেন্ড বস এর কথা জানি না। অ্যাস বলে ওঠে।

-” হোয়াট! তার মানে এই কেস এর সাথে ও ওই একই লোক যুক্ত। আমন বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ সেটাই তো দেখা যাচ্ছে। সানি বলে ওঠে।

তারা আবারো নিজেদের আলোচনা ছেড়ে সামনের দিকে তাকায় দেখে সোহা নিজের মাথায় রাব করে যাচ্ছে আর লোকটি ভয়ে তাকিয়ে আছে।

-“কে এই এস.আর? আর সেকেন্ড বস টা বা কে? সোহা নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই জিজ্ঞেস করে ওঠে।

কিন্তু রবিন কিছু বলার আগেই তাদের সবার ফোনে একটা করে সিগন্যাল বেজে ওঠে একসাথে । সবাই চমকে গিয়ে ফোন হাতে নেয়। রুমের মধ্যে থাকা সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। সোহা ফোন চেক করে সবার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে। সাথে সাথে তাদের মুখের ভাব পাল্টে যায়।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here