তোর মনের অরন্যে পর্ব-১৩

0
769

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৩.
-” এস.আর রবিন কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গতকাল পন্ডিচেরী প্রোমেনেড বিচে কয়েকটা কাজ করেছে আর তারপর ভোর থেকে উধাও হয়ে গেছে।

-” হোয়াট? কি বলছো এইসব উধাও হয়ে গেছে মানে কি? ওর খোঁজ লাগাও। দেখো হয়তো কোথাও পড়ে আছে।

-“না না এস.আর ওর সব গুলো ডেরা খোঁজ করা হয়ে গেছে কোথাও ওকে পাওয়া যায়নি।
তার উপর আমাদের যে অর্ডার গুলো সাপ্লাই দেওয়ার কথা ছিল সেগুলো ও হয়নি। আর আজকের কাজ টাও ওর কথা ছিল।

-” আজকের কাজ টা তুমি হ্যান্ডেল করে নাও রাত দুটোই কিন্তু গাড়ি ঢুকছে তুমি বাকি সবাই কে নিয়ে ডেলিভেরি নিয়ে নিও। ওখানে কিন্তু কোটি টাকার জিনিষ আছে তাই সাবধান। আর হ্যাঁ রবিন এর খোঁজ লাগাও। রাখছি আমি কাজ হয়ে গেলে ফোন করবে তার আগে নয়।

-” ওকে এস.আর।

ফোন ডিসকানেক্ট হয়ে যেতে সোহা কানের থেকে সরিয়ে নেয়। তার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। আর বাকিরা ও থমকে গেছে। এই ভাবে গুটি তাদের হাতে এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে বুঝতে পারিনি তারা এতক্ষণ তারাও সব টুকু শুনলো। তারা কোনো কথা না বলে সোহার দিকে ফোকাস করে। সোহার চোখ আবারো কঠিন হয়ে গেছে। হাতের ছুরি টা নিয়ে এবার সামনে বসা রবিন এর মুখের চারিদিকে বুলিয়ে যাচ্ছে ।একটু এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলে কেটে যাবে। আর রবিন ভীতু হয়ে আছে।

-“সব প্রশ্নের ঠিক ঠিক উত্তর দিলে তুই প্রাণে বেঁচে গেলেও যেতে পারিস। সোহা কঠিন আওয়াজে বলে ওঠে।

-” কে এই এস.আর?

-” রাঠোর শুধু এটাই জানি আমি তার নামের। আর কিছু জানি না। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে রবিন।

রবিন এর কথা শুনে সোহার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। সে নিজের ফোন নিয়ে রবিন এর সামনে ধরতে কেঁপে ওঠে তার চোখ জোড়া অস্থির হয়ে ওঠে। সে একবার সোহার দিকে তো একবার ফোনের দিকে তাকায়।

-“দেখতো একে চেনে যায় কিনা?

-” এ এএস.আর। ফোনে ভেসে থাকা ছবি টা কে দেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে।

সোহার মুখের বাঁকা হাসি টা আরো প্রশস্ত হয়। সে অনুমান করেছিলো তবে এটা যে একেবারে সঠিক জায়গায় এসে লেগে গেছে। ফোনে আকেশ এর ছবি স্ক্রিন এর উপরে ভেসে আছে। সোহা এবার নিজের ফোনটা বাকিদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে তারা এক মিনিট থমকে যায়। এই আকেশ তাহলে এস.আর তারা ভাবতে থাকে।

-“আজকে কি কাজ আছে? রাত দুটোই কোন জিনিষ ডেলিভেরির কথা আছে? সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে রবিন চমকে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। এই খবর টা ও জানে তার সামনে বসা মেয়েটা। কিন্তু কি করে জানলো? যতো ডেলিভেরি রিসিভ এর কাজ সব তো সে আর তার লোকেরা করে মাঝে মাঝে সেকেন্ড বস ও থাকে। আর তারপরে জিনিষ গুলো সঠিক জায়গায় রাখার পর বিগ বস ও এস.আর থেকে নিয়ে সে সাপ্লাই করে। চোয়ালে আঘাত পেতেই তার ভাবনা ছেড়ে চিৎকার করে রবিন। তার মুখের বুলানো ছুরি দিয়ে তার মুখে এক টান দিয়েছে। মুখ থেকে রক্ত পড়ছে।

-“দেখ তোর হাতে বেশি সময় নয় তুই তাড়াতাড়ি জবাব দিবি আর নাহলে উপরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিবি। চিবিয়ে চিবিয়ে কথা গুলো বলে ওঠে সোহা।

-” আজ রাত দুটোই মাদক দ্রব্য ও ওয়েপেনস এর গাড়ি আসবে সেগুলো নিয়ে এস.আর এর গোডাউনে রাখা হবে। রবিন বলে ওঠে।

সোহা রবিন এর কাছে থেকে সমস্ত তথ্য নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সোহা ইশারা করতে সানি এসে রবিন এর ক্ষত জায়গায় ফার্স্ট এড করে দেয়। আবারও ওকে ওই অবস্থায় বেঁধে রেখে সব রুম থেকে বেরিয়ে মিটিং রুমে চলে যায়।

————–

রাত দুটো শহরের এক প্রান্তে বেশ ফাঁকা একটা জায়গায় কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর তাদের দিকে দুটো বড় বড় ট্রাক এগিয়ে আসে। ওদের কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তেই তাদের চারদিকে ঘিরে ফেলে পুলিশ ফোর্স। কেউ টু শব্দ ও করারও সময় পায়না ওখানে থাকা লোক গুলো কে পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে যায় সাথে ট্রাক দুটো ও।

কিছুটা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে যাচ্ছিলো সোহা আমন অ্যাস নীহার সানি আকাশ ।সোহা পুরো পুলিশ ফোর্স তৈরী করে রেখেছিলো আর ওদের কোনো অ্যাকশন নেওয়ার আগেই পুলিশ তার কাজ করে দিয়েছে।

-“অ্যাস এবার থানার ব্যাপার টা তোকে হ্যান্ডেল করতে হবে আমি স্যার থেকে পারমিশন করিয়ে নিয়েছি। এখানের থানার অফিসারদের মধ্যে কিছু ঘাপলা আছে তাই যাতে সহজে ওই মন্ত্রীর ছেলে বেঁচে যেতে না পারে সেটাই তোকে দেখতে হবে। সোহা বলে ওঠে।

-” তুই চিন্তা করিস না আমি সব হ্যান্ডেল করে নেবো কাল সকালেই আমি থানায় যাবো তারপর দেখব ঘাপলা টা ঠিক কোথায় আছে। অ্যাস বলে ওঠে।

-” মিস্টার চৌধুরী আপনার এখন একটাই কাজ এই এস.আর এর উপরের বড় মাথার সমস্ত ইনফরমেশন বের করে আনা। সোহা বলে ওঠে।

-“ওকে । এবার যাওয়া যাক। আমন বলে ওঠে।

এরপরেই সব একে একে নিজেদের বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়। সোহা বাইকে বসতেই আবারো আমন তার পিছে চেপে বসে দু হাত বাড়িয়ে সোহার কোমর জড়িয়ে নেয় । সোহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কারণ এই বাঁকা লোক কে বলা ও যা আর না বলাও তাই।

————-

মিটিং রুমে বসে নিজেদের প্ল্যান মত সব কাজ করে যাচ্ছে। আমন এক দৃষ্টিতে ল্যাপটপ স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে দু হাত দিয়ে কিবোর্ড এর উপর দ্রুত চালিয়ে যাচ্ছে। সোহা তার সমস্ত কাজের আপডেট রেডি করে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আজ সারারাত তাদের সমস্ত টা গুছিয়ে নিতে হইবে। আর সকাল থেকে শুরু হবে তাদের মিশন এর পর্ব। সোহা সবার জন্য কফি তৈরী করে আনে এখন এটাই তাদের প্রয়োজন। সবাই সবার কাজ করছে। সে একে একে সবাই কে এগিয়ে দেয়। আমন এর কাছে এসে কফি টেবিল এর উপর রাখলেও দেখে আমন এর তাতে কোনো খেয়াল নেই সে এক মনে তার কাজ করে যাচ্ছে তার এখন একটাই ধ্যান জ্ঞান দেখা যাচ্ছে। সোহা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমন কে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। চোখের পলক না ফেলে দ্রুত থেকে দ্রুতই কাজ করে যাচ্ছে।

-“উম যতো টা ফাঁকি বাজ ভেবেছিলাম তা দেখছি একদমই নয়। বেশ কাজের আছে, উম বেশ নয় পুরোটাই কাজের দেখা যাচ্ছে। ইম্প্রেসিভ। সোহা নিজের মনে বলে ওঠে।

সোহা আমন কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে যাচ্ছে। এই প্রথম সে আমন কে ভালো ভাবে লক্ষ করছে। এর আগে সে কখনোই আমন কে এই ভাবে পর্যবেক্ষণ করিনি। সোহা নিজের মনেই আমন কে দেখছে সে যেনো নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আমন কে দেখা থেকে ।

-“উম ততটা ও খারাপ নয়। প্রত্যেক নারীর প্রেমিক পুরুষ হওয়ার যোগ্য দেখছি এই ছেলে। সোহা আবারো নিজের মনে বলে ওঠে।

হঠাৎ করে আবারো তাদের সবার ফোনের সিগন্যাল বেজে উঠতে সোহা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। ফোন কানেক্ট করতেই ওপারের কথোপকথন ভেসে আসে। তবে কথার থেকে চিৎকার টাই বেশি আসছে।

-“স্যার ট্রাক আর আমাদের লোকদের কে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওরা সবাই ধরা খেয়ে গেছে।

-” কোন শালা হারামি পুলিশ এর এত বড় সাহস হলো যে এস.আর এর কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আর ইনফরমেশন কোথায় থেকে পেলো? আমার ট্রাক আটক করে। আকেশ চিৎকার বলে ওঠে।

-“স্যার দিল্লী থেকে কোন নতুন পুলিশ অফিসার এসেছে। আর সে এসেই রেড করেছে।

-“ওই অফিসার এর পুরো হিস্ট্রি বের কর। আমি ও দেখতে চাই কোন অফিসার এর এত বড় বুকের পাটা যে এস.আর এর কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আকেশ বলে ওঠে।

-“ওকে স্যার।

ফোন ডিসকানেক্ট হতে সোহা টেবিলের হাত রেখে ঝুঁকে যায়। তার মুখে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। সোহা বলে ওঠে।

-“খেলা তো সবে শুরু হয়েছে মিস্টার এস.আর আগে আগে দেখো আরো কি কি হয়। এত তাড়াতাড়ি এত হাইপার হয়ে গেলে হবে আরো অনেক বড় ঝটকা অপেক্ষা করে আছে।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here