তোর মনের অরন্যে পর্ব-১১

0
799

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১১.
ইউনিভার্সিটি আসার পর সোহার সাথে আকেশ এর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। আকেশ সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি ছুড়ে দিলে আজ বিপরীতে সোহা নিজেও হাসি দিয়েছে। এতেই আকেশ এর আনন্দ এর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সে নিজের মনে তার প্ল্যান এর দিকে আরও এক ভাগ এগিয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে তার শিকার তার জালে ধরা দিয়েছে।

সোহা আজ তার ক্লাস এর পুরোটা সময়ে রাজ রনি নিশা রিনি ওদের খেয়াল রেখে গেছে। তার মন পড়ানো তে থাকলেও তীক্ষ্ণ নজরে পুরোটা সময়ে পর্যবেক্ষণ করে গেছে ওদের। এদিকে রনি রাজ নিশা রিনি সোহা কে অপমান করার প্ল্যান করে থাকলেও সেটা কার্যকর করতে পারছে না আকেশ এর জন্য সে সোহার থেকে তাদেরকে দূরে থাকতে বলেছে তাই শুধু হিংস্র চোখে তাকানো ছাড়া আর কিছু করার নেই তবে রিনি শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে।

ক্লাস শেষে রুম থেকে বেরোতে সোহাগ দেখে সামনেই আকেশ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বের হতে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সোহা সেটা লক্ষ করে ও না দেখার ভান করে এগিয়ে যায়।

-“হে মিস সোহা। আকেশ সোহা ডেকে ওঠে।

-” আরে মিস্টার রাঠোর কেমন আছেন? এখন আপনি ঠিক আছেন তো। মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে সোহা।

-“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি এখন । আকেশ তার মাথার চোট এর উপর হাত রেখে বলে ওঠে।

-” কাল কি যে হলো বলুন তো। আপনি একটু সাবধানে চলাচল করবেন বলা যায় না আবার কখন আঘাত পেয়ে যান। সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে আকেশ এর তো লটারি জেতার মত অবস্থা। তার জন্য কেয়ার করছে তার আঘাত পাওয়ার ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে এটা ভেবেই মনে মনে আকেশ খুশি হয়ে যাচ্ছে। এত সহজে শিকার তার কাছে ধরা দেবে সে ভাবতে পারিনি। সে ভেবে ছিলো হয়তো অনেক কাঠ খড় পড়াতে হবে এই মেয়ে কে বাগে আনতে কিন্তু এত সহজ হবে ভাবেনি আকেশ। প্রথম দিনেই সোহা কে আর তার অ্যাটিটিউড দেখে তার মনে হয়েছিলো। সেদিন যখন মেয়েটি কে থাপ্পড় দিয়েছিলো তার পর ভাবেনি এই মেয়ে এত সহজ ধরা দেবে

-“না না ঠিক আছে। হয়তো ভুল করে কারোর থেকে লেগে গেছে। আকেশ বলে ওঠে।

-“হুম হতেও পারে।সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

-“মিস সোহা আপনি কি এখন ফ্রি আছেন তাহলে এক কাপ কফি খাওয়া যেতে পারে আমার সাথে? আকেশ আরো এক ধাপ প্ল্যান এগিয়ে বলে ওঠে।

সোহা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে আকেশ এর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একবার ভালো করে তার মনোভাব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে নেয়। তারপরেই হঠাৎ মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে সোহার মুখে।

-“হ্যাঁ যাওয়া যেতে পারে। সোহা বলে ওঠে।

আকেশ সোহার কথা শুনে এক গাল হেসে সোহা কে ইশারা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আকেশ তার আরো এক ধাপ প্ল্যান এগিয়ে যেতে খুশি হয়ে যায়।

এদিকে রাজ রনি নিশা আর রিনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এই দৃশ্য দেখে। আকেশ এর সাথে কথা বলতে দেখে রাজ রনি নিশা শয়তানি হাসি দেয় আর রিনি রাগে ফেটে পড়ে। তার রিক কে সোহার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে তার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। মনে মনে শুধু সে প্ল্যান করেই যাচ্ছে শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষা।

————–

সোহা আর আকেশ ক্যান্টিন এসে বসতেই কয়েকজন তাদের দিকে দেখে তবে আকেশ কে তাকাতে দেখে সব যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সোহা তার ফোন ঘাটলে ও আকেশ এর দিকে তার পুরো নজর আছে। আকেশ দুটো কফির অর্ডার দিয়ে তার ফোন নিয়ে কিছু একটা করেই টেবিল এর উপর রাখে। সোহা তাকাতেই তার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

-“তো সোহা এমনি ডাকছি বরাবর মিস বলতে কেমন একটা লাগছে? আকেশ নিজের মত করে বলে ওঠে।

সোহা কোনো কথা না বলে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে । সোহার হাসি দেখে সম্মতির লক্ষণ ভেবে নেয় আকেশ।

-” সোহা আপনি এই প্রফেসর লাইনে এলেন এটা কি আপনার লক্ষ ছিল না মানে আপনার মতো এমন একজন পার্সোনালিটির মেয়ে শিক্ষিকতা প্রফেশনে তাই আর কি জিজ্ঞেস করছি। আকেশ বলে ওঠে।

সোহা আকেশের কথা শুনেই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে বুঝতে পারে তাকে জানার কৌতুহল জেগেছে এই ছেলের মনে। সোহা এবার ফোন টেবিলে রেখে বলে ওঠে।

-“আসলে আমি একটু অন্য রকম। কখন কোন প্রফেসনে থাকি সেটা বলা মুস্কিল।

-” মানে? আকেশ অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-“আমার প্রফেশনে এর কোনো ঠিক নেই সেটাই বললাম আজ প্রফেসর আছি কাল হয়তো দেখবেন স্টুডেন্ট হয়ে গেলাম তারপরে আবার দেখবেন কোথাও চাকরি করছি। আমি কখন কোন প্রফেশনে থাকি সেটা তার ঠিক থাকে না। আমার কোনো ঠিক নেই যখন যেমন আমি তেমন। সোহা একবার আকেশ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“বাহ ইন্টারেস্টিং তো আপনি। আকেশ বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ সেটা তো আমি। সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

সোহা এতক্ষণ নিজের সম্পর্কে সত্যি কথা গুলো বললে ও আকেশ তা ধরতে পারেনি। সোহার কেস এর জন্য তাকে বিভিন্ন রকম প্রফেশনে কাজ করতে হয়। আর সেটাই এখন সে আকেশ কে বললো তবে সেটা একটু ঘুরিয়ে। সোহা লক্ষ করে তাদের টেবিলের দিকে কফি নিয়ে এগিয়ে আসছে। সে এবার আকেশ কে দেখে নিয়েই আবার ও লক্ষ করে প্রায় তাদের টেবিলের কাছাকাছি চলে এসেছে। সোহা এবার সামনের দিকে পা টা বাড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে তার পায়ের সাথে পা বেঁধে ওয়েটার এর হাত থেকে কফির ট্রে টা উল্টে আকেশ এর গায়ের উপর পড়ে যায়। সোহা এবার ঠিক হয়ে বসে যায়। এদিকে আকেশ গায়ের উপর কফির কাপ উল্টে পড়ে তার শার্ট অনেকটাই ভিজিয়ে দিয়েছে। সে কটমট করে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে সোহা বলে ওঠে।

-“আরে মিস্টার রাঠোর ঠিক আছেন আপনি?

-” হ্যাঁ আমি ঠিক আছি । দাঁতে দাঁত চেপে রেখে মুচকি হেসে বলে ওঠে আকেশ।

-“সরি স্যার বুঝতে পারিনি কিভাবে যে পড়ে গেলো। ভয়ে ওয়েটার টা বলে ওঠে।

সোহা সামনে থাকায় সে আর ওয়েটার টা কে কিছু বলতে পারে না। রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে সে। সোহার সামনে নিজের খারাপ চেহারা টা না দেখিয়ে ভালো সাজার ভান করে বলে ওঠে।

-” আরে ভাই একটু দেখা কাজ কর। আর যা গিয়ে আবার নিয়ে আয়।

ওয়েটার টা ভয়ে ভয়ে ওখান থেকে কেটে পড়ে। তারা সবাই আকেশ কে চেনে। সোহা একবার ভালো ভাবে দেখে নেয় তার মুখে ফুটে আছে বাঁকা হাসি।

-” সোহা আপনি একটু বসুন আমি আসছি। আকেশ বলে ওঠে।

সোহা কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়া দেয়। আকেশ চলে যেতে সোহা ঝটপট তার কাজে লেগে পড়ে। টেবিলে থাকা আকেশ এর ফোন টা তার হাতে তুলে নেয়। কিছুক্ষণ পরই তার কাজ শেষ করেই ফোন টা আবার তার জায়গায় রেখে দেয়। সোহার কাজ হয়ে গেছে। আজ যার জন্য সে এসে থেকে এই আকেশ কে সহ্য করে যাচ্ছে সেই কাজ সে হাসিল করে নিয়েছে। এখন থেকে আকেশ এর ফোন এর সমস্ত ডিটেইলস তারা পেয়ে যাবে। সোহা এবার তার হাত তুলে ডান এর মত করে ইশারা করে। সাথে পাশের টেবিল থেকে আমন উঠে দাঁড়িয়ে একবার সোহার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে তাড়াতাড়ি কেটে পড়তে বলে সে বেরিয়ে যায়। আমন প্রথম থেকে এখানে তাদের সাথে বসে ছিল। আকেশ এর কথা গুলো শুনছিল আর রেগে ফায়ার হয়ে যাচ্ছিলো তবে শেষে তাকে আর কিছু করতে হলো না যা করার সোহা করে দিলো গরম কফি গায়ে ফেলে আকেশ কে ছ্যাকা খাইয়ে দিলো। আর আমন এর এমন মুখ ভঙ্গি দেখে সোহার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

কিছুক্ষণ পরেই আকেশ এসে বসে সে ওয়াশরুমে গেছিলো গরম কফি গায়ে পড়তে পুড়ে গেছে। সেটা নিয়ে কিছু মিনিট বসে থাকলেও সে উঠে গেছিলো ফ্রেশ হতে। সোহা আকেশ কে একবার দেখে নিয়ে বলে ওঠে।

-“মিস্টার রাঠোর আমাকে এখন যেতে হবে। অনেকটাই লেট হয়ে গেছে। আর দেরি করা যাবেনা।

-” কিন্তু কফি টা..

-“অন্য একদিন খাওয়া যাবে জমিয়ে। আপনি ও আছেন আমি ও আছি খাওয়া টা তোলা রইলো। আর এবার এর খাওয়া টা আমি দেবো ।সোহা আকেশ কে আর বলতে না দিয়েই রহস্যময় হেসে বলে ওঠে।

সোহা বেরিয়ে যেতেই আকেশ এর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার কাজে সে সফল হয়েছে। তার কাছে খাওয়া তো শুধু বাহানা সে তো এই ভাবে আসতে আসতে সোহার কাছে আসতে চায়। তবে আজকের পর তার মনে হয় সে তার প্ল্যানে এগিয়ে গেছে। তার শিকার প্রায় রেডি হয়ে এসেছে এবার শুধু ঠিক সময়ে শিকার করার অপেক্ষা। কিন্তু সত্যি কি তাই? সে তার প্ল্যান মত এগিয়ে গেছে নাকি সেই উল্টে জালে জড়িয়ে পড়ছে? সেই কারোর শিকার হতে চলেছে? সেটা সময়ে বোঝা যাবে কে কার শিকার আর কে কাকে শিকার করে।

চলবে…. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here