তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 8

0
1581

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৮

বাগানের একপাশে জ্বলতে থাকা বড়বড় চুলো দুটোর উপর ডেকচিদুটোর একটাতে চামচ নাড়াচ্ছেন শুদ্ধ ভাইয়া।অত্যন্ত তীক্ষ্ম চোখে ওটা পর্যবেক্ষন করে করে চামচ দিয়ে উল্টেপাল্টে দিয়ে রাধুনী মামার হাতে চামচটা ধরিয়ে দিলেন আবারো।ক্রিম কালারের শার্টার নেমে আসা ডান হাতাটা বা হাতে গুটাচ্ছেন উনি।তামিম ভাইয়া কয়েকটা ছিলানো মুরগী দুহাতে নিয়ে এগিয়ে এসে বললো,

-শুদ্ধ রে!তুই এদিকে?ওইদিকে গিয়ে দেখ!মেয়েপার্টি স্টেজ ডেকোরেশনের সবটা ঘেটে দিচ্ছে!একদম বাজে হচ্ছে ওদের সাজানো।ওরা স্টেজ সাজালে শেহনাজ মন্জিলের নাক কাটা যাবে বলে দিলাম!

-আরে ইয়ার!কয়দিক যাবো বলতো?ওদিকে গেইটের ওখানটা সবে সেরে আসলাম।রিফাত তো গাছের নিচে দাড়িয়ে বেশ আরামে দেখলাম কোকাকোলা খাচ্ছে।এদিকে ইরমোজ ভাইয়াও নেই।সকাল থেকেই লাপাত্তা!

-তোহ?যতো কাজ সবই তো আমিই করলাম।তুই ওমন ভাব নিচ্ছিস কেনো?

হলুদের গুড়ো লেগে থাকা হাতেই তামিম ভাইয়ার মাথায় চাটি মারলেন শুদ্ধ ভাইয়া।ওর গেন্জিটার কলার টেনে বললেন,

-কাজগুলো কে করেছে?

-ইয়ে মানে,তুই আর তোর ডানহাত আমি।এই এই!আমার চুল!শালা!আমার জামাটাও নষ্ট করে দিলি!

শুদ্ধ ভাইয়া ছেড়ে দিলেন ওকে।হাত ঝেড়ে বললেন,

-বোন নাই আমার কোনো!আবে শালা তো তুই হবি আমার!

-হি হি!তাপসী আপুর বিয়ে হয়ে গেছে ব্রো!

-তোকে একবারও বলেছি তাপসী আপুর কথা?

-তাহলে?

-বুঝবি না।আগে বড় হ!

-তোর আঠারো মাসের বড় আমি শুদ্ধ!

-তাও ঘটে ধরবে না তোর!

-ঘট?এই ভাষা কোথায় শিখলি তুই শুদ্ধ?

ওর কথাকে পাত্তা না দিয়ে শুদ্ধ ভাইয়া হাক ছেড়ে বললেন,

-ওই রিফাত?ইমরোজ ভাইয়া কই রে?

রিফাত ভাইয়া কান চুলকাতে চুলকাতে বললো,

-সাউন্ড সিস্টেমের মালিককে খুজতে গেছে।

-ইশান ভাইয়া?

-ও বরাবরের মতোই বউয়ের আঁচলের তলায়।দেখ গিয়ে স্টেজের ওইখানে।তায়্যিবকে কোলে নিয়ে বসে আছে,তাপসী আপু কোমড় বেধে কাজ করছে হয়তোবা।

একসাথে হেসে দিলো তিনজনই।
স্টেজের সামনে চেয়ারে বসে চোখ মন দুটোই মোবাইলে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম।পারছি না।নিজের উপর অসম্ভব রাগ হচ্ছেও এতে।একটা জোরে শ্বাস নিয়ে হাসির শব্দ অনুসরন করতেই শুদ্ধ ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।

দুপুরের কড়া রোদ্দুর।সূয্যিমামা প্রকান্ড তেজ দেখাতে ব্যস্ত।ভ্যাপসা গরমে আধসিদ্ধ জনজীবন তবুও ছুটে চলেছে নিজেদের মতো করে।এতোটুকু বাতাসের অস্তিত্ব নেই কোথাও কোনোখানেই।গাছের পাতাগুলো যেনো স্ট্যাচু মোডে আছে।ওদের মুভ বলার মতো বাতাসের ফিসফিসানি নেই একটুও।তাই তারাও স্থির।নড়াচড়া নেই কোনো।শার্টটা ঘামে ভিজে উঠেছে শুদ্ধ ভাইয়ার।সে ভ্রু নাচিয়ে বুঝালো কি।কি বলবো?আবার ফোনেই মনোনিবেশ করলাম।

-ইনসু?

একটু চমকে উঠে পেছন ফিরলাম।তাপসী আপু।ইশান ভাইয়াও আছে পিছনে।দুজনে অবশ্যই তখনকার কথার জন্য সরি বলতে এসেছে।ঠোটে হাসি টেনে উঠে দাঢ়ালাম।

-হ্যাঁ আপু?কিছু বলবে?

-ইনসু…রাতে…

-ওসব থাক আপু।

-বোন,আমি….

-উফ্!তুমিও না।ওই কথা নিয়েই পরে আছো!

আপু বিস্ময়ে বললো,

-ইনসু?তুই…সরি বোন।আমরা তো
..

-সরি?এই ইশান ভাইয়া?তোমার বউটাকে বোঝাও তো,এতো ফরমালিটিজ ভালো লাগে না আমার।কেদে দিবো কিন্তু!

ওরা অবাক হয়েই তাকিয়ে।ইশান ভাইয়া অপরাধের স্বরে বললো,

-ইনসিয়া…আমি কিন্তু ওভাবে কিছু মিন করিনি।আসলে…

-ধ্যাৎ!আচ্ছা তাপসী আপু?ইশান ভাইয়া না হয় এ বাসার জামাই,তুমি তো এ বাসার মেয়ে।তুমিও চিনলে না আমাকে?

আপু আমার দুগালে হাত রেখে বললো,

-ইনসু রে!আমি জানতাম তুই রাগ করিস নি।তুই তোর তাপসী আপুর উপর রাগ করতেই পারিস না।জানিসতো,তামিম বললো,আপু তুই গিয়ে ইনসুকে সরি বল।ও রাগ করেছে।আমি কিন্তু মনেমনে বিশ্বাস করতাম,করি,তুই রাগ করতেই পারিস না।

-ঠিক বুঝেছো!

-তারমানে এই পরের ছেলেটার উপরই রেগে আছো তাইনা ইনসিয়া?

ইশান ভাইয়ার আদুরে গলা শুনে হেসে দিলাম।কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম,

-হুম।অন্নেক।সবাই এখানে কাজ করছে,না তোমরা কিছু করছো,না আমাকে কোনো দায়িত্ব দিলে।ইজ ইট ফেয়ার?যীনাত আপু তো বলে গেলো কাজ বিগড়াতে আসিস না ইনসু!

ওরা দুজনেই ফিক করে হেসে দিলো।ইশান ভাইয়া বললো,

-আচ্ছা বেশ!বাগানের গাছগুলোতে পানি দেওয়ার গুরুদায়িত্ব তোমার!চলবে?

-আরে।চলবে মানে?একদম মিলখা সিং এর মতো দৌড়াবে!

-ওকে দেন।চলো শালিকা!কাজে হাত লাগাই?

চলে আসছিলাম।তাপসী আপু হাত ধরে আটকে দিয়ে আবারো বললো,

-তুই সত্যি রাগ করিসনি তো ইনসু?

মুচকি হেসে বললাম,

-তোমাদের উপর রাগ করলে আমি কি নিয়ে বাচবো আপু?অভিমান হয়,রাগ হয়না।আর এখন এভাবে বলছো?আমার তো আদর পাচ্ছে।

তাপসী আপু হেসে আমার কপালে চুমো দিয়ে বললো,

-আমারও চুমো পাচ্ছিলো।

এরমধ্যে শুদ্ধ ভাইয়া হাজির।স্টেজের দিকটায় এখন কাজ করবে হয়তো।আমি তাড়াতাড়ি গাছগুলোর দিকে এগোলাম।ভালো লাগছে।শান্তি লাগছে খুব তাপসী আপুদের সাথে কথা বলে।পাইপ ধরে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলাম।একটুপরই ইরাম এসে দাত কেলিয়ে বললো,

-আহা!পানির কাজ!কি শান্তির কাজ!

-দেখ ইরু!ভালো মুডে আছি আমি।একদম উল্টাপাল্টা বলে মুড খারাপ করতে আসবি না।

-হা হা হা!হাসালে!তোমার আবার মুড!মুড মানে বোঝো?একটা স্থিতিশীল দশা।যে দশায় একজনকে দেখলে বোঝা যায় সে এক্সাক্টলি খুশি নাকি দুঃখী নাকি অন্যকোনো ভাবে আছে।আরে ভাই,তুমি তো অলওয়েজ উরাধুরা মেজাজ।এখনই মাদার তেরেসা,পরক্ষনেই ঝাসির রানী,তো তারপরেই ইন্ডিয়ান কমেডিয়ান ভারতী।তো…

-থামবি তুই?চাপড়ে গাল লাল করে দেবো একদম!

-হু।সহজ কাজ করেতেছো,গায়ে জোরটা এখন বেশি।তাইতো করবা।

-কে বলেছে তোকে?ঘামে ভিজে উঠেছি,উনি বলতে এসেছেন সহজ কাজ!

-তাই নাকি?আচ্ছা বেশ!এই কষ্টের কাজটা আমি করছি।তুমি ওদিকে স্টেজের ওখানে যাও।ফুলটুল সাজাতে সাজেশন চাচ্ছে তোমার সবাই।

-আমার সাজেশন কেনো লাগবে?স্বয়ং শুদ্ধ যেখানে আছেন সেখানে…

-তোকেও লাগবে!

চমকে উঠে পিছনে তাকালাম।ওনার নাম নিতে নিতেই উনি হাজির।ইরাম ছো মেরে পাইপটা কেড়ে নিলো আমার থেকে।বিরক্তি নিয়ে বললাম,

-পারবো না।এখানেই থাকবো আমি।

-সরি?

-আমি এই কাজই করবো।যাবো না ওখানে!

এরমধ্যেই সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজতে শুরু করেছে।শুদ্ধ ভাইয়া একদম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বোঝালেন শুনতে পাননি উনি আমার কথা।রাগ নিয়ে ইরামের দিকে তাকালাম আমি।ও হাতের পাইপটা ধরে উকিঝুকি দিচ্ছে।পানি আসছে না।নির্ঘাত কেউ পা রেখে আটকে দিয়েছে কোথাও।আবারো শুদ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকাতে যাবো উনি হেচকা টানে আমাকে পেছনে নিয়ে সামনে দাড়ালেন আমার।চোখ খিচে বন্ধ করে থেকেও চোখেমুখে পানির ছিটেফোটা অনুভব করলাম।

পিটপিটিয়ে তাকাতেই সামনে শুদ্ধ ভাইয়ার ভেজা পিঠ চোখে পরলো আমার।ভিজলেন কেনো এভাবে উনি?এই কাঠফাটা রোদে পানি আসলো কোথা থেকে?আমার গায়েও লাগছে!একটু উকি দিয়ে দেখলাম ইরামের হাতের পাইপ সোজা আমাদের দিকেই তাক করা।ওই‌ গাধী যেদিকে গান বাজছে সেদিক তাকিয়ে হেলছে দুলছে।হুট করেই শুদ্ধ ভাইয়া আমার দিক ফিরলেন।আমি একপা পিছিয়ে চেচিয়ে বললাম,

-স্টপ ইট ইরাম!পাইপটা সরা!

কানে যায়নি ওর।ওভাবেই নাচছে।শুদ্ধ ভাইয়ার দিকে এখন তাকাতে পারবো না আমি।নিচে দুলতে থাকা ফর্সা হাতের লোমগুলো ভেজা,ঘড়িটাও ভিজে গেছে।ঝাকি দিয়ে উঠলো শরীর আমার। তাড়াতাড়ি সাইড দিয়ে এসে মাথায় চাটি মেরে পাইপটা ছাড়িয়ে‌ নিলাম ইরামের হাত থেকে।ও আহম্মকের মতো মাথায় হাত বুলিয়ে একবার আমার দিক,তারপর সামনে তাকালো।

পুরো ভিজে গেছেন শুদ্ধ ভাইয়া।চুলগুলো কপালে আর ক্রিম কালারের শার্টটা গায়ে লেপ্টে গেছে একদম।ধবধবে ফর্সা বুকটা দৃশ্যমান।চাপ দাড়িগুলো ভিজে আরো প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে যেনো।মুখের ভেতরের পানি ফেলে,কপালের পানি ঝারলেন উনি।কোমড়ে হাত দিয়ে তীব্র হতাশার চোখে ইরামের দিকে তাকিয়ে সে।ইরাম কাদোকাদোভাবে বললো,

-গান শুনছিলাম,পাইপ‌ অন হয়েছে সেটা টের পেয়েছি।সামনের গাছগুলোতেই গিয়ে পরছে হয়তো এ ভেবে গানের সাথে তাল মেলাচ্ছিলাম ওইদিক তাকিয়ে।আমি কি করে জানবো ভাইয়া তুমি সামনে?

শুদ্ধ ভাইয়া কিছু বলতে যাচ্ছিলেন।আমার দিকে তাকিয়েই থেমে গেলেন উনি।আধভেজা চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।কিছুটা ইরামের পেছনে গিয়ে দাড়িয়েছি।আড়চোখে দেখলাম উনি একটু চুপ থেকে ঠোট কামড়ে ধরে হেসে তার মাথার ভেজা চুলগুলো উল্টে দিলেন।ওভাবে কেনো হাসলেন উনি?ইতস্তত লাগছে।বিরবিরিয়ে বললাম,

-এটা কি হলো?বাচানোর হলে সাইডে ঠেলে দিয়ে নিজেও সাইডে সরে দাড়াতে পারতেন।এভাবে সামনে দাড়ানোর কি দরকার ছিলো?ভেজা তো কারোরই বাকি রইলো না!

-মেমোরি রিক্রিয়েট বুঝিস?

আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম।শুদ্ধ ভাইয়া কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন,

-মাথায় গোবরপোড়া থাকলে যা হয়!যা!চেন্জ করে আয়!

এটুক বলেই উনি কলারটা উচু করে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বাসার দিকে চলে গেলেন।ভুলটা কি বললাম আমি?এ নাকি ব্রিলিয়ান্ট!মাথামোটা!কোনো বুদ্ধি নেই মাথায়।উল্টো আমাকেই বললেন আমার মাথায়?গোবর পোড়া?তবে মেমোরি রিক্রিয়েট কথাটা কেনো বললেন উনি?আমারই বা এমন কেনো মনে হলো ঘটনাটা আগেও ঘটেছে।কবে?মনে পরছে না।নাকি পুরোটাই আমার মনের ভুল?রাগে দ্বিতীয়বারের মতো ইরামকে চাটি মেরে বাসার দিকে পা বাড়ালাম আমিও।

চেন্জ করে হালকা ভেজা চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আবারো বাইরে আসছিলাম।সামনে কারো উপস্থিতি বুঝে থেমে গেলাম আমি।চোখ উঠিয়ে দেখি শুদ্ধ ভাইয়া দাড়িয়ে।উপরে মইয়ের উপর দাড়ানো রিফাত ভাইয়াকে আঙুল উচিয়ে কিছু দেখিয়ে দিচ্ছিলেন হয়তো।এখন মনে হচ্ছে পজ বাটন অন করে দিয়ে গেছে কেউ।ওভাবেই আঙুল উচিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে উনি।

শুদ্ধ ভাইয়া চেন্জ করে এবার হালকা নীল পান্জাবি পরেছেন।রঙটাতে আরো বেশি ফ্রেশ লাগছে ওনাকে।আকাশের উজ্জ্বল রোদ্দুরে সাদা মেঘের ভেলাগুলোর ফাকে ফাকে যেই নীলটা নজর কাড়ে,ঠিক সেভাবেই সবার মাঝে চোখে পরবে তাকে।তাতে কি?আমার কিছুই না!তাছাড়া আমাকে কিছুক্ষন আগে অপমান করেছেন উনি।আমার মাথায় নাকি গোবরপোড়া!চোখ সরিয়ে অন্যদিক তাকালাম।

-কিরে?চেন্জ করলি কেনো তুই ইনসু?শুদ্ধ?তুইও?

কি বলবো যীনাত আপুকে?হাত কচলাতে কচলাতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম শুধু।গেইটের দিকে তাকাতেই লাফিয়ে উঠলাম একপ্রকার।মৌনতা এসেছে।ওদেরকে পাশ কাটিয়ে একছুটে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম ওকে।

-মনুউউউউউউ!

ও আমাকে ছাড়াতে ছাড়াতে বিরক্তি নিয়ে বললো,

-ছাড়!ছাড় আমাকে!

-কি হলো?

-দাওয়াতে এসেছি,দম বন্ধ হয়ে মার্ডার হতে না।এভাবে জরিয়ে ধরছিস কেনো?

কাদোকাদোভাবে বললাম,

-কতোদিন পরে দেখা!আর তুই এভাবে বলছিস?রাগ করেছো মনু?

-তো কিভাবে বলবো?রাগ করবো না তো কি করবো বলতে পারিস?এতোগুলো দিনে একবারও খোজ নিয়েছিস কেমন আছি আমি?এখন ওর বাসায় এসেছি,এসেছে জরিয়ে ধরে আদিক্ষেতা দেখাতে!ভালোবাসিস না একদমই আমাকে তুই।তারথেকে অন্য কোথাও অন্য বেস্টু খুজলেও লাভ হতো।অন্তত সময় তো দিতো!তোর এতো সময়ের অভাব যে বাসায় না গিয়ে শুধু ফোনে বললি রিসেপশনে চলে আয়।আমিও বেচারী ইমোশনাল ফুল।চলে আসলাম।

এতোগুলো কথা একদমে বললো ও।চুপ রইলাম।রাগটা জায়েজ ওর।বলে হালকা হোক।এতমধ্যেই কেউ পিছন থেকে মাথায় মারলো আমার।

-ডিহ্!কিউ!

এই নামে একজনই ডাকবে আমাকে।তার কাছে আমি নাকি সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ড্রামাকুইন।শর্টফর্মে,ডিকিউ!স্কুল কলেজের সবচাইতে ফাজলামি করা ছেলেটা,আর আমার পোড়াকপালের একমাত্র ছেলেফ্রেন্ড!আলিফ!একটা জোরে শ্বাস নিয়ে পিছন ফিরে বললাম,

-তুই কেনো এসেছিস এখানে?তোকে তো দাওয়াত করি নি!

-উম্মা!ফোনের মধ্যে ডুইক্কা যে হাতেপায়ে ধরলি তুই আমারে এইহানে আওনের লাইগা,মনে নাই তর?

-বাজে বকবি না।তুই নিতান্তই রিফাত ভাইয়ার ভাই সিফাত ভাইয়ার রিসেপশনে এসেছিস!রিফাত ভাইয়া তো আবার তোর জিগরি দোস্ত লাগে কিনা!

-হ!লাগে!তাতে তর কি?

-কিছুইনা।এসেছিস,সভ্যভাবে থাক!আজ এখানে অন্তত ঠিকভাবে কথা বল আলিফ।আর গেস্টদের মাঝে এভাবে….

-উরি!হুন ডিকিউ,আলিফ আলিফই!পারতাম না তগো মতো ঢংয়ের কতা কইতে।ওর ভাষায় যার যার চুলকানি,হেই দুরে থাউক!

-আমি অলরেডি পক্ত আলিফ!মাফ চাই।আজ এখানে কোনো ঝামেলা করিস না।আর ইনসিয়া বলে ডাকবি!

-খাইতে দে।চুপচাপ থাকুমনে।

মৌনতা বললো,

-ছাড় ইনসু!ও তো ওমনই।বাদ দে।কেউ কিছু বললে বলবি পাবনার কোনো পাগল ফ্রিতে খাওয়া পেয়ে খেতে চলে আসছে।তুই চিনিসই না ওকে।

-হু হু।কইয়া দেহিস তুই ডিকিউ!তর ভবিষ্যৎ জামাইর কাছে বিয়ার আগে তর নামে এমন বদনাম রটামু,বিয়া ভাইঙ্গা যাইবো তর।আর মনু?তুই সাবধানে থাকিস।একবার খালি প্রমানটা পাই তর রিলেশন চলে,উঠতি সংসার চুরমার কইরা দিমু।নইলে আমিও জুনান্টি থুরি আলিফ না!

আমি মৌনতা দুজনেই হেসে দিলাম।ওদের নিয়েই স্টেজের দিকে এগোলাম।মৌনতা আমাদের সাথেই একাজ ওকাজে হাত লাগিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো।আলিফকে দেখলাম দুহাতে দুটো গ্লাস নিয়ে একেকবার একেকটার স্ট্র তে চুমোক দিচ্ছে আর এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো সবটার তদারকি ওই করছে।

স্টেজ সাজাচ্ছিলো তামিম ভাইয়া আর ইশান ভাইয়া।বাকিরা সবাই ভেতরে গেছে রেস্ট নিতে।ওদের নাকি তেষ্টা পেয়েছিলো,তাই দু গ্লাস পানি দিয়ে আসলাম।হঠাৎই কানে গোজা চুলগুলো স্ট্যান্ডফ্যানের বাতাসে সামনে চলে এসেছে।অসহ্য লাগছে একদম।তাড়াতাড়ি ট্রে টা নিয়ে টেবিলের দিকেই এগোচ্ছিলাম।
আলিফ এসে সামনে দাড়ালো।ওর হাতের গ্লাসদুটো রেখে ট্রে থেকে আরো দুটো গ্লাস নিয়ে বললো,

-ওই রহিমা!শরবতে চিনি কম দিছোত ক্যান?

আমি মরছি আমার জ্বালায়,ও এসে আরো পচাচ্ছে।খিচে উঠে বললাম,

-সামনে থেকে সর।কাজ আছে।

-সরতাম না।তুই এমনেই খাড়া।ভাল্লাগতাছে তরে এইডা হাতে দেখতে।রহিমা খালা!

কথাটা বলে দাত কেলালো ও।ধমকে বললাম,

-হারামি!পরে গিল!আগে তো হেল্প কর!

-কি হইছে?

-এটা ধর!

-ক্যান?তর কাম আমি করমু ক্যান?

-আরে ধর না ইয়ার!

-হইছে ডা কি?কইবি তো!

-সামনে থেকে সর!নইলে এটা ধর!একটা কাজ কর যেকোনো?

-ঠেকা পরেনাই আমার!খাইতাছি।জ্বালাইস না একদম কইলাম!

-আরেহ্!দেখনা,এই চুলগুলো…

-ও আচ্ছা!খাড়া তুই।আমি….

আলিফ সবে হাত উঠিয়েছে চুলগুলো সরিয়ে দেবে বলে,আমার ঠিক পিছন থেকে কোনো হাত ধরে ফেললো ওর হাত।পাশে তাকাতেই চমকে উঠলাম।শুদ্ধ ভাইয়া বা হাতে আলিফের হাত ধরে আছেন।চেহারা দেখে বুঝতে পারছি না ঠিক কি মেজাজ তার।তবে একদম শান্তশিষ্ট চাওনি।আলিফের হাতের দিকে তাকিয়েই ডানহাতে আমার চুলগুলো কানে গুজে দিলেন উনি।মৃদ্যু কেপে উঠে আমি একবার তার দিকে,একবার আলিফের দিকে,আর একবার আলিফের হাত ধরে রাখা শুদ্ধ ভাইয়ার হাতের দিকে তাকালাম।চোখজোড়া চঞ্চলভাবে খুজে চলেছে একটাই প্রশ্নের উত্তর।এবার কি?

#চলবে…

[ব্যস্ততায় কাল গল্প দেইনি,আজ বড় করে দিলাম।ভুলত্রুটি মাফ করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here