তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 12

0
1522

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১২

ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে গলার লাল দাগটার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছি।এই এইটার জন্য আজ শুদ্ধ ভাইয়া আবারো কাছে এসেছিলেন আমার।কিন্তু আমি তো মানা করেছিলাম তাকে।নিজের খেয়াল রাখতে জানি আমি।কে বলেছিলো তাকে হাত লাগাতে?কে বলেছিলো ওভাবে স্পর্শ করতে আমাকে?কে বলেছিলো?নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।পাগল পাগল লাগছে আমার।কয়েকবার ডললাম জায়গাটায়,আরো জ্বলছে এবার।একের পর এক চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়েই যাচ্ছি।যীনাত আপু বাইরে থেকে দরজা ধাক্কিয়ে বললো,

-ইনসু?দরজা খোল!ওভাবে দৌড়ে রুমে ঢুকলি কেনো তুই?

আমি থামলাম।মুখ মুছে কলারের কাছের বোতামদুটো লাগিয়ে নিলাম।নিজেকে সামলে বেরিয়ে এলাম বাইরে।নিচদিক তাকিয়ে বেডের দিকে এগোচ্ছিলাম।যীনাত আপু হাত টেনে ধরে সামনে দাড় করালো আমাকে।থুতনি ধরে মাথা উচু করে বললো,

-দেখি দেখি?চোখমুখ এমন লাগছে কেনো তোর?

-কিছু না আপু,আমি….

-ওয়েট!

ও কলার ধরলো আমার।বিস্ময়ে তাকালাম ওর দিকে।বোতামদুটো খুলে আলতোভাবে কিছু লাগিয়ে দিলো জ্বালা করছিলো যেখানে।তারপর গালে হাত রেখে বললো,

-কবে বড় হবি তুই?একটুও নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না!

তারমানে ও জানে গলায় কিছু কামড়েছে আমার।আমি তো বলি নি।তবে কি শুদ্ধ ভাইয়া বলেছেন?শক্ত গলায় বললাম,

-তোমাকে কে বললো আমার গলায় লেগেছে?

ও কিছুটা হচকিয়ে গেলো।তারপর জোরপুর্বক হাসি টেনে বললো,

-তুই তো গলা ধরেই রুমে দৌড় লাগালি।আমি জানতাম তো,রোদে,ফুলের কাজ,র্ ্যাশ হবে তোর।তাই অয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছি।

শান্ত হলাম কিছুটা।আর ভালো লাগছে না আমার এইসব।ওর হাত ছাড়িয়ে বিছানায় এসে বসলাম।যীনাত আপুও পাশে বসলো আমার।কাধে হাত রেখে বললো,

-ইনসু?কষ্ট পাচ্ছিস কোনো বিষয়ে তুই?

অতিকষ্টে কান্না আটকালাম।গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলাম ওর কোলে।আপু বললো,

-কাল সীমা ভাবিদের নিয়ে আসলেই আমিসহ সবাই চলে যাবে শেহনাজ মন্জিল থেকে।আচ্ছা ইনসু?তোর কষ্ট হবে না?মিস করবি না সবাইকে?

আর পারলাম না থাকতে।হুহু করে কেদে দিলাম ওর কোমড় জরিয়ে ধরে।কেনো কাদছি নিজেও জানি না।তবে কিছু কথা মন মস্তিষ্ক থেকে সরাতে পারছি না।এই কয়দিনে শুদ্ধ ভাইয়া আমার জীবনে এসে অনেককিছুই বদলে দিয়ে আবারো চলে যাবেন।যে বদলগুলো আমি চাই নি।যা শুধুমাত্র একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে আমার ভুলে যাওয়ার কথা।ভুলে যাওয়ার কথা!

_____________

আজ সীমা ভাবিকে আনতে যাবে সবাই।সবাই মানে সবাই।আমি বিয়েতে যাইনি,তাই আমিও যাবো।যেতে হবে।দীদুন কড়াভাবে বলে‌ দিয়েছে।আমিও যাবো বলে নিজেকে বুঝিয়েছি।কাল ওসব ঘটনার পর রুম থেকেই সেভাবে বেরোইনি।খাবার টেবিল,আর দু একবার সবার তলব করায় দেখা করতে।শুদ্ধ ভাইয়ার মুখোমুখিও হয়নি।হতে চাইও নি।উনি ছিলেন হয়তো বা সবার মাঝে,পাঁচবছর আগের মতো কাল থেকেও আমি তাকে না দেখার দলে ফেলেছি।কারনের ভিন্নতা আছে।তখন হয়তো জেলাসি আর রাগ ছিলো।কিন্তু এখন?এখনকার অনুভুতিগুলোর নামটাও দিতে পারছি না।অজানা।পুরোটাই অজানা।যা জানার জন্য বিন্দুমাত্র সাহস নেই আমার!

তবে হ্যাঁ,শান্তনা একটাই।আজকের দিনটা কেটে গেলেই আবার সবটা আগের মতো হয়ে যাবে।না কেউ থাকবে,না কারো কথায়,কাজে দুর্বল হবো আমি।আবারো আমি সেই স্ট্রং ইনসিয়া সারাহ্!ইরাম রেডি হয়ে বেরিয়েছে রুম থেকে।যীনাত আপুকে সবে ফুপি ডাক লাগিয়েছে,ওউ বেরিয়ে গেলো।

গোল্ডেন কালারের একটা লেহেঙ্গা পরেছি।কোমড় অবদি আর বড় হাতা ফতুয়া,কালো মোটা বর্ডারের স্কার্টটা।খুব একটা গর্জিয়াস না ওটা।তবে ঘেরটা অনেক।ওড়নাটা শাড়ির আচলের মতো তুলে‌ দিলাম।ঠোটে লিপস্টিক,ছাড়া চুল,কপাল ভরাট হয়ে থাকা টিকলি,নাকে ইয়া বড় সিম্পল নথ।কেনো যেনো ইচ্ছা করলো আরো সাজার।বা হাত ভর্তি করে সোনালী-কালোর মিক্সড্ চুড়ি পরলাম,যেটা জীবনেও পরি না আমি।গলায় নেকলেসও পরেছি।আয়নার সামনে থাকা লেন্সের বক্সটা দেখে চোয়াল শক্ত করে ওটাও হাতে নিলাম।এটাও পরবো আমি আজ!হাতে‌ নিয়ে বা চোখে লাগালাম একটা লেন্স।

দরজা লক হওয়ার শব্দ পেলাম।লেন্স পরে চোখ চুলকাচ্ছে আমার।চোখ ডলতে ডলতেই বললাম,

-যীনাত আপু,এই লেন্সে তো চোখ চুলকাচ্ছে আমার!এটা তো….

পিছন থেকে ঘাড়ের সবগুলো চুল সামনে দিয়ে দিলো কেউ।চোখ ধরেই পিছনে ফিরতে যাবো,সে মানুষটা আমার নেকলেস খুলে দিয়ে বলে উঠলো,

-গলাটা ঠিক হয়নি এখনো,এসব ফালতু অর্নামেন্টস্ কে পরতে বলেছে তোকে?

শুদ্ধ ভাইয়ার গলা শুনে চমকে উঠলাম।পিছন ফিরতে যাবো,সে হেচকা টানে দেয়ালে চেপে ধরলো আমাকে।ঝাপসা একচোখে দেখলাম কালো পান্জাবী পরা সেই অতিরিক্ত ফর্সা চেহারায় রাগ নিয়ে তাকানো মানুষটাকে।কপালের ভাজ স্পষ্ট।রাগ নিয়ে বললাম,

-আপনি এই রুমে ক্….

সে একহাতে দুহাত মুঠো করে মাথার উপরের দেয়ালে চেপে ধরলো আমার।ব্যথায় চোখ‌ খিচে বন্ধ করে নিলাম।পরপরই আবারো তাকালাম কোনোমতে।লেন্সটার জন্য পানি বেরোচ্ছে চোখ‌ দিয়ে।উনি তার আরেকহাত আলতোভাবে লেন্সটা খুলে দিলেন আমার চোখ থেকে।

-দেখুন,আপনি….

-এতো সাজের কি খুব দরকার?

একদম আকুল স্বরে বললেন উনি।কিছুক্ষনের জন্য আটকে যাচ্ছিলাম।একটা শুকনো ঢোক গিলে জোরে শ্বাস নিয়ে বললাম,

-নিতান্তই আমার ব্যাপার।আর….

-তোর ব্যাপার?নিতান্তই তোর?যদি এটাই‌ মনে করিস তবে আমার কি হবে?

-আপনার কোনোদিনই কিছু ছিলো না।আর আপনার কি হবে মানে?এসব কথা বলে কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি?এভাবে ছুয়ে আছেন কেনো আমাকে?কালও আপনি….যাই হোক,রুম থেকে বেরোন!

-আমার অধিকার আছে এই সবগুলো কাজ করার।কিন্তু তোর একদমই অধিকার নেই আমাকে এটা বলার!

-অধিকার?আগেও বলেছি,নিজের সীমার মধ্যে থাকুন!ছাড়ুন!ছাড়ুন আমাকে!

-এভাবে কেনো বলছিস তুই সিয়া?কাল থেকে একটাবার তাকাস নি আমার দিকে।খুব বড় অপরাধ করে ফেলেছি তোকে ছুয়ে?আমার কি….

-অনেক বলেছেন,আর শুনতে চাইনা।বুঝতে পারেন না আপনি?আপনার সান্নিধ্য চাইনা আমার।ছাড়ুন আমাকে আর এখ্খনি বেরিয়ে যান এই ঘর থেকে!

শুদ্ধ ভাইয়া হাত ছেড়ে দুগাল ধরে কপালে কপাল ঠেকালেন আমার।চোখ‌ বন্ধ করে নিলাম।তবে গালে ওনার হাত সরানোর চেষ্টায় আছি।উনি অস্থিরভাবে বললেন,

-এতো অভিমান করিস না সিয়া!এতোটা ইগ্নোর করিস না!সহ্য হয় না আমার!জ্বালিয়ে দেয় একদম এগুলো আমাকে!আমার দোষ ছিলো না বিশ্বাস কর!তাইতো পাঁচবছর পর এভাবে ছুটে এসেছি এই শেহনাজ মন্জিলে।বারন সত্ত্বেও!জানাতে এসেছি তোকে সবটা!এমন…

-ইনসু….

বাইরে থেকে যীনাত আপুর ডাক।একবার দরজায় তাকিয়ে আবারো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম শুদ্ধ ভাইয়াকে।এই কথাগুলোর কোনো মুল্য নেই আমার কাছে।কেউ কোনোদিন আমার কোনো কথার মুল্য দেয়নি।আমাকে মুল্য দেয়নি।উনিই বা কেনো বলছেন এভাবে?ওনারও তো বলার কথা না!কাউকে ভালোবাসেন উনি।তবে কেনো এসব বলে আমাতে দুর্বলতা গুজে দিতে চাচ্ছেন উনি?

-সিয়া,আমি…

একদন্ড না দাড়িয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।যীনাত আপু দরজায়ই দাড়িয়ে ছিলো।তাকায়নি ওর দিকেও।সবার সাথে বেরিয়ে এলাম।গাড়িতে পিছনে আমি,যীনাত আপু,ইরাম,দীদুন।ইমরোজ ভাইয়া আর শুদ্ধ ভাইয়া সামনে।শুদ্ধ ভাইয়া বাদে বাকিসব কথা বলছে।জানালার বাইরে তাকিয়ে কোনো অন্য দুনিয়াতে আমি।চারপাশটা বিষাক্ত লাগছে একদম।

সীমা ভাবিদের বাসায় পৌছালাম।খাবারপর্ব শেষে সবাই ঘুরছে যার যার মতো।তাপসী আপু,যীনাত আপু দুজনেই ডেকেছে।যাইনি।সবটা সময় আম্মুর সাথেই ছিলাম আমি।একসময় ইরাম ডাক লাগালো আম্মুকে।কোন আন্টি নাকি কথা বলতে চায়।আম্মু চলে গেলো।আমি একটু একা পরে গেলাম।মোবাইলটা সবে বের করেছি,একটা ছেলে এসে সামনে দাড়িয়ে বললো,

-হ্যালো মিস!

কথা বলার নুন্যতম ইচ্ছা নেই।তবুও সৌজন্যতা দেখাতে একটু হাসি টেনে বললাম,

-জ্বী বলুন?

-আপনি সীমা আপুর ননদ ইনসিয়া রাইট?

-জ্বী।

-হলুদের দিন দেখেছিলাম আপনাকে।বিয়েতে আসেননি কেনো?

-এমনি।আসলে….

-ব্যাপার না।আমার পরিচয়টা দেই।আমি অন্তিম।সীমা আপুর….

-তুই শেষ!

শুদ্ধ ভাইয়ার গলা শুনে বড়বড় চোখ করে পাশে তাকালাম।উনি হাত মুঠো করে দাড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন।রেগে আছেন বোঝাই যাচ্ছে।ঝামেলা এড়াতে চলে আসছিলাম।শুদ্ধ ভাইয়া হাত ধরে আটকে দিলেন আমাকে।রাগ নিয়ে ঝাড়া মারলাম,লাভ হয়নি।অন্তিম হাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।একটু জোর করে হেসে বললো,

-আ্ আপনিও বরপক্ষ থেকে এসেছেন তাইনা?ইনসিয়ার ভাইয়া হন?

-আমি ওর…

-হ্ হ্যাঁ আমার ভ্…

শুদ্ধ ভাইয়া রক্তচক্ষু করে তাকালেন আমার দিকে।একটা শুকনো ঢোক গিললাম।ভয় করছে।গলায় কথা আটকে যাচ্ছে।উনি চেচিয়ে বললেন,

-তোকে বলেছিলাম না?এরপর আমার ইন্ট্রো আমি নিজেই দেবো!তুই টু শব্দটাও করবি না!আরেকটা কথা বললে আমি সব শেষ করে দেবো সিয়া!

অন্তিম কিছুটা রাগ নিয়ে বললো,

-আশ্চর্য!ওভাবে কথা বলছেন কেনো ওর সাথে?

-তোর কাছ থেকে শিখতে হবে আমি কার সাথে কিভাবে কথা বলবো?

-দেখুন,আপনি আমাকে তুই তুকারি করে বলতে পারেন না!

-একশবার পারি!হাজারবার পারি!কে তুই?তোকে তুই তুকারি করে বলা যাবে না যে!কে?

-বলতে পারেন,আমি ইনসিয়ার উডবি।আমার আম্মু ওর আম্মুর সাথে আমাদের ব্যাপারে কথা বলছে ওদিকে।

আকাশ থেকে পরলাম আমি।দুরে তাকিয়ে দেখলাম আম্মু বেশ ভালোভাবেই কথা বলছে একজন মহিলার সাথে।একপলক শুদ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।সে রেগে আছে বোঝা যাচ্ছে।জানিনা কেনো,এখানে একদন্ড দাড়ানোর সাহস হচ্ছে না আমার।হয়তো কান্না দেখে নেবে সব এই ভয়ে,নয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যাবে এই ভয়ে।হাত ছাড়ানোর জন্য মুচড়াচ্ছি।শুদ্ধ ভাইয়া একটানে আমাকে তার বুকের সাথে লাগিয়ে নিলেন।অন্তিম কপাল কুচকে বললো,

-এসব কি?ওকে ওভাবে…

শুদ্ধ ভাইয়া অন্তিমের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন,

-আমার বউ হয় ও!আমি ওর বর!

পাথর হয়ে গেলাম আমি।শ্বাস যেনো থেমে গেছে।কি বললেন উনি এটা?অন্তিমও বিস্ময়ে তাকিয়ে।কিছুটা সময় পর আবারো জোর করে হেসে বললো,

-আ্ আরেহ!কি যে বলেন না!আমি কি এতোটাই বোকা,যে যার সাথে সম্বন্ধের কথা বলবো,সে ম্যারিড কি না খোজ নেবো না?ইনসিয়া আনম্যারিড!এটা জানি আমি।আপনি তো ওর ভাই হন,এমন মজা কেনো করছেন?

শুদ্ধ ভাইয়া ফুসে উঠে আমাকে ছেড়ে একহাতে আমার হাত,আরেকহাতে অন্তিমের কলার ধরলেন।চেচিয়ে বললেন,

-ইয়ার লাগিস তুই আমার?মজা করবো তোর সাথে আমি?

তারপর অন্তিমের কলার ঝাকি মেরে ছেড়ে দিলেন শুদ্ধ ভাইয়া।তার একটাএকটা কাজে শুধু কেপে কেপে উঠছি আমি।উনি আমার বা হাত অন্তিমের সামনে তুলে ধরে বললেন,

-এটা দেখ!দু বছর আগেই এনগেইজমেন্ট হয়ে গেছে আমাদের।এই ইনসিয়া সারাহ্ আমার বউ!গট ইট?আমার বউ হয় ও!কথাটা মাথায় ভালোমতোন বসিয়ে নে আর এই মুহুর্তে গিয়ে তোর আম্মুর মাথাতেও সিল মেরে বসিয়ে দিয়ে আয়!চল যা!

অন্তিম আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।আমি নিচদিক তাকিয়ে কাদছি শুধু।শুদ্ধ ভাইয়া আবারো আমাকে বুকে টেনে নিয়ে কপালে ঠোট ছুইয়ে বললেন,

-কাদিস না সিয়া!প্লিজ কাদিস না!

-শুদ্ধ!

আব্বুর গলা শুনে আতকে উঠলাম আমি।শুদ্ধ ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পিছন ফিরলাম।শেহনাজ মন্জিলের সবাই দাড়িয়ে।হু হু করে কেদে দিয়ে ছুট লাগালাম আব্বুর দিকে।কিন্তু শুদ্ধ ভাইয়া হাত ধরে ফেললেন আমার।ঘাড় ঘুরিয়ে হাত মুচড়াতে লাগলাম।শুদ্ধ ভাইয়া শান্ত দৃষ্টিতে আব্বুর দিকে তাকিয়ে।আর আমার চোখে শুধু একটাই আকুতি,ছেড়ে দিন আমাকে।শুদ্ধ ভাইয়া সবার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলাতেই বললেন,

-যা শুনেছো একদম ঠিক শুনেছো তোমরা।সত্যিটাই শুনেছো।বরং সত্যিটা আরো বিস্তৃত!দু বছর আগে আমার আর সিয়ার এনগেইজমেন্ট হয়ে গেছে।আমি…

-শুদ্ধ…

দীদুন থামিয়ে দিলো আব্বুকে।সেজোকাকু বললেন,

-এখন এসব ক্…

দীদুন আবারো তাকেও থামিয়ে দিলো।বললো,

-হ্যাঁ।এখনই আসাদ।আর আজ শুদ্ধই বলবে।তোমরা নও!

ওনারা থেমে গেলেন।আমি কান্না থামিয়ে বিস্ময়ে তাকালাম আব্বুর দিকে।সেজোকাকু এসে তার কাধে হাত রাখলেন।শুদ্ধ ভাইয়া আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে উঠলেন,

-আজ তোর নামের এই পড়ন্ত বিকেলের,শ্রান্ত,আভা ছড়ানো রোদ্দুর আমার নামে হবে সিয়া!আমার নামে! দিবি না আমাকে?তোর নামের দু মুঠো রোদ্দুর?যা জ্বালাবে না,ঝলসাবে না,শুধুই সত্যিটার চাদরে মুড়িয়ে নেবে আমাদের।একান্তই সত্যিটার সাক্ষী হবে আজ এই শেষ বিকেলের রোদ্দুর সিয়া!ডুবতে থাকা সূর্যের শেষ আলোটুকোর সাথে সমস্ত আড়ালকে আজ বিদায় জানাবো আমরা দুজন মিলে।চল আমার সাথে!

শুদ্ধ ভাইয়া হাত টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে আসলেন আমাকে।শুধু শেহনাজ মন্জিলের সবার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম আমি।শুদ্ধ ভাইয়া গাড়ির ফ্রন্টসিটে বসিয়ে দিলেন আমাকে।তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়িটা স্টার্ট দিলেন।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here