তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 11

0
1458

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১১

ঘুমের মধ্যে কারো উষ্ণ নিশ্বাস চোখেমুখে পরলো যেনো।ঘুমঘুম চোখে অতিকষ্টে তাকালাম।কেউ নেই।তবে ভোরের আলো ফুটেছে।জানালা দিয়ে আসা একফালি রোদ্দুর সোজা টেবিলের উপর ছবির ফ্রেমটায় প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগছে।বুঝলাম বেলা গরিয়েছে অনেকটাই।উঠে বসলাম।পাশে না ইরাম আছে,না যীনাত আপু।সকালে উঠে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ হলো কাকের বাসা হয়ে থাকা চুলগুলো গোছানো।যেভাবেই ঘুমোই না কেনো,ওগুলো নিজেদের মতো ঠিকই এলোমেলো হয়ে যাবে।তাই গোছানোর কাজটা করতে হাত দিলাম চুলে।কিছুটা চমকে উঠলাম।কপালের বেবি হেয়ারগুলো কোনো দুটো ছোট ক্লিপে আটকানো।কিন্তু আমি তো কোনো ক্লিপ‌ লাগাই নি চুলে।পরখ করতে ওটা খুলে হাতে নিতেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার।

দু আঙুলের ডগায় ধরবে এতোটাই ছোট ওটা।কিন্তু হাজারগুন বড় তার প্রতি ভালোলাগা তৈরী হয়ে গেছে আমার।দেখতে ঠিক হিজলের ফুল।যেটা বরাবরই আমার সবচেয়ে পছন্দের।ক্লিপদুটো হাতে নিয়ে আনমনেই হেসে দিলাম।কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরলো,কোথায় থেকে আসলো এটা?হাসি থেমে গেলো।আশেপাশে তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিলটায় বড়বড় করে লেখা চিরকুট চোখে পরলো।বড় করে লেখা,গুড মর্নিং।ছোট ছোট কিছু লেখা আছে মনে হচ্ছে।বিছানা ছেড়ে নেমে এগোলাম সেদিকে।ওটা হাতে নিতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।ওখানে লেখা,

“খুব তাড়াতাড়ি এই কথাটা প্রতিদিন সকালে তোমার কপালে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে বলবো।লজ্জায় যখন ওই চঞ্চল চোখজোড়া নামিয়ে নেবে,তোমার রক্তিম চেহারার মোহে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো প্রতিবার।খুব তাড়াতাড়িই কপালের ওই বেবি হেয়ারগুলো কানে গুজে দেওয়ার পর প্রানভরে দেখবো তোমার ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা,কিছুটা সময় নিয়ে বলে উঠবে,আপনি একটা পাগল!বিশ্বাস করো,খুব তাড়াতাড়িই এই পাগলামিগুলোকে তোমার উঠোনে ভরিয়ে দেবো আমি।

আলসেমী করে ভেজা চুল এতোটুকো না মুছে যখন আমার সামনে আসবে,প্রতিবার,বিশ্বাস করো,প্রতিবার তাতে নাক ডুবিয়ে নিজের নেশাকে তোমার চোখেও এটে দেবো।তোমায় জরিয়ে রেখে দাড়ানো অবস্থায় একেকটা বৃষ্টির ফোটা যখন আমার ব্যালকনিতে আছড়ে পরবে,দুজনকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য মাতামাতি করবে,বিশ্বাস করো,সার্থক হবে আমার এতোদিনের অপেক্ষার রোদ্দুর।আর সেটা খুব তাড়াতাড়িই হবে প্রিয়!খুব তাড়াতাড়ি!”

কাগজটা পরে গেলো আমার হাত থেকে।শ্বাসটাও থেমে গেছো।এগুলো কি ছিলো?রুমে কে এসেছিলো?এতো সকালে বাইরের কেউ?বাসার কেউ হলে কে?কার জন্য ছিলো এগুলো?পরেছে তো আমার হাতেই।কিন্তু এরকম কেই বা করবে?কার জন্য?আমি বা ইরাম তো নইই!তবে কি যীনাত আপুর???

-ইনসু?

লাফিয়ে উঠে নিচে পরে থাকা কাগজটা তুলে ওড়নার মোড়ালাম।যীনাত আপু রুমে ঢুকে বললো,

-আজ তুই চল!আজ আর রক্ষে নেই তোর!

-আমি আবার কি করলাম?

-কটা বাজে দেখেছিস?ডাইনিংয়ে নানুমনি রাগারাগী করছে এই বলে যে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসতে এতো স‌ময় লাগবে কেনো।চল আজ!নির্ঘাত শাস্তি দেবে তোকে!

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার চোখ কপালে।সত্যিই তো!এতো দেরি হয়ে গেলো?সত্যিই আজ তবে কথা শুনতে হবে অনেক।এমনিতেও দীদুন তো শাস্তি দেয় সবাইকে,আমাকে শাস্তি না দিলেও কথা শোনাবে নির্ঘাত!

-খুব ক্ষেপেছে?

-হু!বুড়িয়া আজ রনচন্ডী!গিয়ে দেখবি চল!তবেই বুঝবি!

-ডাকোনি কেনো আমাকে?

-ডাকলে উঠিস তুই?উল্টোপাশ ঘুরে কানে বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পরিস আবারো!আয় জলদি!কি যে বলবে নানুমনি কে জানে?

ও বেরিয়ে গেলো।আমি চিরকুটটা একপলক দেখে বইয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলাম তাড়াতাড়ি।কি জানি দীদুনের নতুন কি নাটক দেখতে হয় আবার!খাবার টেবিলে এসে দেখি মোটামুটি সবাই হাজির।খাওয়াও‌ মোটামুটি শেষ সবার।আরেকবার চোখ বুলিয়ে‌ বুঝলাম শুদ্ধ ভাইয়া আসেননি এখনো।চেয়ার টেনে বসতেই দীদুন গম্ভীরভাবে বললো,

-দেরি করলি কেনো এতো?

-শখের বসে।

-মানে?আমি কি মজা করছি তোর সাথে?

-আসলে দীদুন,নামাজটা সেরে আবারো ঘুমিয়ে গেছিলাম,উঠতে দেরি হয়ে গেছে।

-তাই বলে তোর জন্য টেবিলে সবাই কেনো ওয়েট করবে?

-ওয়েট করেছে?কই?সবার তো খাওয়া শেষ দেখছি।

-গুড মর্নিং শেহনাজ মন্জিল!

শুদ্ধ ভাইয়ার গলা।পিছন ফিরে দেখি নবাব ভাব নিয়ে টেবিলের দিকেই এগুচ্ছে।এ এখনো খায়নি?না খেলো।তাতে কার কি?খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।ইরাম কোথথেকে এসে হুট করে আমার ক্লিপটা খুলে দিতে যাচ্ছিলো।শুদ্ধ ভাইয়াই ওকে আটকে দিয়ে বললেন,

-সব জিনিসে হাত দিতে নেই ইরাম।

আড়চোখে তাকালাম তারদিক।ইরাম অস্থিরভাবে বললো,

-আরে ভাইয়া,ক্লিপটা জোশ!ভাল্লাগছে আমার।আমি তো….

যীনাত আপু এসে বললো,

-ইরু?চলতো এখান থেকে।খাওয়া তো শেষ,রুমে চল!কাজ আছে।তোর হলুদ জামাটায় দেখলাম রঙ লেগে আছে কিসের যেনো!

একছুটে চলে গেলো ও।শুদ্ধ ভাইয়া আমার সামনের চেয়ারটায় বসলেন।এরমধ্যে রিফাত ভাইয়াও চোরের মতো মুখ লুকিয়ে এসে চুপচাপ বসে পরলো চেয়ারে।দীদুন বললো,

-আজকের রান্নাটা ছেলেরা করবে।আর মেয়েপার্টি আজ কিটিপার্টি করবে।একটা কাজেও হাত লাগাবে না কেউ।

আব্বু বলে উঠলেন,

-আমি যাচ্ছি।কাজ পরে গেছে আমার।

মেজোকাকুও বললেন,

-হুম।চল।আমিও বেরোবো তোর সাথে।একটা পান্জাবী কেনা দরকার।

আম্মুসহ বাকি সবাই ঠোট টিপে হাসছে।দীদুন জোর গলায় বললো,

-কোনো কাজ নেই আজ কারো।যাও রান্নাঘরে।একটাদিন অন্তত শান্তি দাও বৌমাদের।যাও!

আব্বু,মেজোকাকু দুজনেই‌ চুপ।বড়কাকু,সেজোকাকু আগে থেকেই চুপ মেরে ছিলেন।জানতেন,দীদুন বলেছে,কথা শেষ।করতেই হবে তাদের।মেজোমা বললো,

-খাবারের লিস্টটা বানিয়ে দিচ্ছি কেমন?

মুখ কালো করে সবাই তাকালো তার দিকে।তারপর গটগট করে কিচেনের দিকে এগোলো সবাই।মেজোমা,আম্মুও রান্নাঘরে ঢুকলো।কিছুটা গুছিয়ে দেবে হয়তো।ইশান ভাইয়া বললো,

-আহ্!শশুড়,চাচাশশুড়দের হাতের রান্না!আমি বরই লাকি!

দীদুন ইনোসেন্ট একটা হাসি দিয়ে বললো,

-তুমি কি ছেলেদের দলে পরো‌ না নাতজামাই?যাও ওদিকে!

থতমত খেয়ে উঠে চলে গেলো ও।আমি জোরেসোরে হেসে দিলাম।দীদুনের দিকে চোখ পরতেই চুপ মেরে গেলাম।কিভাবে তাকিয়ে আছে যেনো।আমার কেনো জানি না মনে হচ্ছে দীদুন আজ সাজা দেবেই আমাকে।একটু জোর করে হেসে বললাম,

-দীদুন,শরীরটা না কেমন যেনো ম্যাচম্যাচ করছে।কাল সারাদিন যা ধকল গেছে।আমি….

আমাকে শেষ করতে না দিয়েই‌ দীদুন বললো,

-বাগানের সাজগুলো দেখেশুনে খুলে ফেলার দায়িত্ব আজ তোর!এটাই দেরিতে খেতে আসার শাস্তি।

মনটা খারাপ হয়ে গেলো।গাল ফুলিয়ে বললাম,

-সব মেয়েরা মজা করবে আর আমি বাগানে কাজ করবো?

-দেরিতে আসার সময় মনে ছিলো না?

আর কি‌ বলবো?দীদুন রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

-রিফাত?কয়টায় এসেছো?

-ইয়ে মানে দীদুন…

-তুমি আগে পায়ে হেটে বাজারে যাবে,বাজার করবে,বাসায় এসে আবারো রান্নার কাজে হাত লাগাবে।

কাদোকাদোভাবে রিফাত ভাইয়া বললো,

-ও দীদুন।একদিনই তো।মাফ করে দাও না!

-কোনো ছাড় নেই।

দীদুন এবার শুদ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকালো।শান্তভাবেই বললো,

-দাদুভাই?তোর কি খবর?শাস্তিটা শুনাই?

শুদ্ধ ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে খেতেই বললেন,

-ও কাম অন দীদুন!গ্রো আপ!শাস্তি কিসের আবার?

দীদুন লাঠিটা দিয়ে টেবিলের নিচ দিয়ে শুদ্ধ ভাইয়ার পায়ে বাড়ি লাগিয়ে বললো,

-নবাবী হালে কম চল।এতো দেরিতে কেউ ওঠে?

-তো তুমি এতো গর্জিয়াস!তোমার সামনে এটুকো নবাবী লুক না দিলে জাতি মেনে নেবে?তুমি মেনে নেবে?

-ওসবে আমি গলছি না।নিয়ম ইজ নিয়ম!

এবার ইমরোজ ভাইয়াও তাল মিলিয়ে বললো,

-হ্যাঁ হ্যাঁ।পরম্পরা!রেওয়াজ!শেহনাজ মন্জিলের শান!তাইনা দীদুন?

শুদ্ধ ভাইয়া ওর দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বললেন,

-তুই তো চুপই থাক!আসছে,অমিতাভ বাচ্চনের ডায়লগ ঝারতে!

দীদুন বললো,

-বালতি ভরতি জামাকাপড়গুলো ছাদে মেলে আয় শুদ্ধ!

মুখে থাকা ভাত গেলার সুযোগটুকো পাইনি।গলায় আটকে হিচকি উঠে গেলো আমার।এই পাকা‌চুলওয়ালা মাথায় এতো‌ বুদ্ধি আসে কোথা থেকে তাই‌ ভাবতেই পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।শুদ্ধ ভাইয়া ঠাস করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন আমাকে।দীদুনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-দীদুন?কি বলছো টা কি এসব?এই কাজ আমি করবো?

-কাজ তো দেইনি।শাস্তি দিয়েছি।যা!যা বলেছি,তাই কর!

-তা বলে….

-অন্য কিছু নিয়ে থ্রেট দেবো?

উনি চুপ রইলেন।আমি খাবার নাড়ছি আর বিস্ময়ে শুদ্ধ ভাইয়াকে দেখছি।সে ভদ্র ছেলের মতো খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো।একটা বালতি হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো ছাদে যাবে বলে।উপস্থিত সবাই হেসে দিলো তাকে দেখে।উনি দাড়িয়ে আড়চোখে একবার তাকালেন আমার দিকে।চোখেমুখে তীব্র অপমানবোধ,শ্লেষ।অনেক কষ্টে চেপে রাখা হাসিটা বেরিয়েই এলো।শব্দ করে হাসছি আমি।চাপ দাড়িওয়ালা ফুলানো গাল,তাহমিনার ভাষায় সো কলড্ হিরোইক লুকওয়ালা ব্যাক্তিটির হাতে বালতিভর্তি জামাকাপড়।যা লাগছে!উনি হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন বালতি হাতে নিয়েই।দীদুন বললো,

-হাসি থামা!তোর শাস্তিটার কথা ভুলে যাচ্ছিস কেনো?

হাসি থেমে গেলো।কোনোমতে খাবার শেষ করে চলে আসলাম বাগানে।আসার সময় তাপসী আপুর দাত ক্যালানি,ইরাম ভেঙচি,যীনাত আপুর বিরক্তিকর মুখটা চোখে পরলো শুধু।এতোটুকো দয়ামায়া না দেখিয়ে নিজেদের মতো আড্ডা দিতে লাগলো ওরা।

____________

শুদ্ধ ভাইয়া স্টেজের পাশের দিকে উপর থেকে গাদা ফুলের ঝোলনা খুলছেন আর আমি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে সেগুলো হাতে মোড়াচ্ছি।বাগানে আসার একটুপরেই দেখি সে হাজির।বাসার দিকে তাকাতেই দেখলাম দরজার কাছেই দীদুন লাঠি হাতে বসে।আমাকে তাকাতে দেখে লাঠি উচিয়ে ফুলগুলো দেখালো।শুদ্ধ ভাইয়া ব্যস্তভাবে বললেন,

-শোন,যা যা যেভাবে বলবো,সেভাবেই করবি।তোর জন্য যদি এতোটুকো লেইট হয়েছে আমার!তাড়া আছে,দীদুনটাও নাটক শুরু করেছে,নইলে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোর সাথে কাজ করার!

যেনো আমি যুগযুগ ধরে ইন্টারেস্ট নিয়ে বসে আছি তার সাথে কাজ করার!মনে মনে অভিশাপ দিলাম।দৈনিক যেনো দেরিতে ঘুম ভাঙে তার আর এভাবেই দীদুনের শাস্তি জোটে কপালে।আর একটা কথাও না বলে শুদ্ধ ভাইয়ার সাথেই ফুল গোছাতে লাগলাম।অনেক বেশি হওয়ায় ওগুলো ভারীও অনেক।ব্যালেন্স রাখতেই কষ্ট হচ্ছে আমার।শুদ্ধ ভাইয়া উপর থেকে খেকিয়ে বললেন,

-একটা ফুলে যেনো একবিন্দু মাটি না লাগে!তোর জন্য যদি এতোটুকো অতিরিক্ত খাটুনি করতে হয় আমাকে,আস্ত রাখবো না তোকে সিয়া!এই বলে রাখলাম!

কাচুমাচু হয়ে ঠিকঠাক মতো সারা গায়ে‌ মুড়িয়ে নিলাম ফুলগুলো।এছাড়া উপায় নেই।অতোবড় সুতোয় গাথা,রাখবোই বা কোথায়?স্টেজের দিকটার ঘাস একগাদা লোকজনের পদচারনায় একদম নোংরা হয়ে আছে।তাই গলা থেকে শুরু করে ফুলগুলো শরীরেই প্যাচাতে লাগলাম।কিছুটা সময় পর ফুল আসছে না দেখে মাথা উচিয়ে দেখলাম শুদ্ধ ভাইয়া আটকে আমার দিকে তাকিয়ে।চেচিয়ে বললাম,

-হোয়াট?তাড়াতাড়ি ফুল ছাড়ুন।এগুলো গুছিয়ে রাখলে তবেই বাইরে যেতে দেবে দীদুন!না জানি কতো মজা করছে ওরা সবাই মিলে!

উনি কিছুটা হচকিয়ে গিয়ে আবারো নিজের কাজে মন দিলেন।আমিও চুপচাপ ফুল গোছাতে লাগলাম।হঠাৎই‌ গলার নিচটায় জ্বলতে শুরু করেছে।এতোটা বেশি জ্বলছে যে চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।হয়তো কোনো পোকা কামড়েছে।আহ্ শব্দ করে ফুলগুলো ছাড়াতে লাগলাম গা থেকে।শুদ্ধ ভাইয়া উপর থেকে বললেন,

-কি হয়েছে?

আমি জলভরা চোখে একবার উপরে তাকালাম।প্রচন্ড জ্বলছে গলায়।মাথা নামিয়ে ফুল ছাড়াতে ছাড়াতেই শব্দ করে কান্না করে দিলাম এবার।শুদ্ধ ভাইয়া লাফিয়ে নেমে গিয়ে চেচিয়ে বললেন,

-কি হয়েছে সিয়া?কোথায় লেগেছে?কষ্ট হচ্ছে তোর?কাদছিস কেনো?কোথায় কষ্ট হচ্ছে?বলনা?বলছিস না কেনো ইডিয়ট!না বললে বুঝবো কিভাবে?আর কাদিস না সিয়া!প্লিজ কাদিস না!হলো টা কি তোর?বল প্লিজ!বল ড্যামিট!

আমি তখনও কাদছি আর ফুল টানছি।উনি একটানে ফুল ছাড়িয়ে ফেললেন আমার গায়ের।শার্ট আর স্কার্ট পরেছিলাম।জ্বালাটা বেড়েছে,সাথে কান্নার বেগও।জামার উপর দিয়েই গলা ডলতে ডলতে সবে ছুট লাগিয়েছি বাসার দিকে,শুদ্ধ ভাইয়া হাত ধরে ফেললেন আমার।

আচমকাই হেচকা টান!কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্টেজের পিছনের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমার।চোখ তুলে তাকাতেই শুদ্ধ ভাইয়ার দিশেহারা চেহারা।উনি একহাতে আমার মুখ আটকে দিলেন।একদিকে গলার ব্যাথাটা!অন্যদিকে ওনার কাছে আসা।আরো জোরে কান্না পাচ্ছে।দুহাতে মুখ থেকে তার হাত সরানের চেষ্টা করছি শুধু।উনি আমার শার্টের কলারে আরেকহাত লাগালেন।বড়বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুঝাচ্ছি।হাত দিয়ে ধাক্কাচ্ছি তাকে।লাভ নেই।একচুলও সরেন নি উনি।

শুদ্ধ ভাইয়া আমার কলারের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিলেন।চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে কাদছিই শুধু আমি।ঠিক যেখানে জ্বলছিলো,ওখানেই আঙুল ছোয়ালেন উনি।শীতলতায় ছেয়ে গেলো সারা শরীর।চোখ বন্ধ করে দাতে দাত চেপে আবারো তাকে সরানোর চেষ্টা করলাম।পারিনি।ফুপিয়ে কাদছি শুধু।মুহুর্তেই মুখ আটকে দেওয়া শুদ্ধ ভাইয়ার হাত আলগা মনে হতেই ধাক্কা মেরে দিলাম তাকে।গলাটা চেপে ধরে তারদিক একপলক ঘৃনার দৃষ্টি ছুড়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here