তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 13

0
1474

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১৩

গাড়িতে উঠতেই টপটপ করে পানি পরতে শুরু করলো চোখ দিয়ে আমার।নাকের বড় নোলকটা খসে পরে কানের কাছে ঝুলছে।চুলগুলোও মনে হচ্ছে একবিন্দু গোছানো নেই আর।কে জানে,শখ করে পরে আসা টিকলিটা আদৌও আছে কি না মাথায়,কপালে তো নেই।শুদ্ধ ভাইয়া একটুপরই গাড়ি থামিয়ে দিলেন।ঝুকে আমার সিটবেল্ট খুলে নিজের বুকে জরিয়ে‌ নিয়ে বললেন,

-কাদিস না সিয়া!প্লিজ কাদিস না!সহ্য হয় না আমার!

-ছাড়ুন আমাকে!

-কান্না না থামালে ছাড়বো না!

আমার চোখের পানিতে তার কালো পান্জাবি ভিজে যাচ্ছে।ছোপ ছোপ দাগ পরে যাচ্ছে।ঝাপসা চোখে দেখলাম রোডের পাশটায় সবুজের মেলা বসেছে যেনো।তার মাঝেমধ্যে হাজারটা সাদার তুলি।কাশফুল।নিজেদের সমস্ত সত্ত্বাকে ওই সীমাহীন সবুজের মাঝেও স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে ওরা।জানালা দিয়ে আসা পশ্চিম আকাশের ঢলে পরা সুর্যের তীর্যক রশ্মিটা শুদ্ধ ভাইয়ার মুখটার জন্য চোখে লাগছে না।শুভ্র মেঘের ভেলার আড়ালে থাকা একদম নীল আকাশটা কেমন যেনো বেশিই ঝলমল করছে আজ।কিন্তু কেনো?

-এবার কান্না না থামালে আদর করবো!সহ্য করতে পারবি তো?

আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম তার থেকে।চোখের পানি মুছে সোজা হয়ে বসলাম।শুদ্ধ ভাইয়া আবারো আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।সবটা মানতে কষ্ট হচ্ছে আমার।সবটাই!দু বছর আগে তো এই চিত্র উল্টোটাই ছিলো!

.
আমার সাথে আমার দাদুভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো।এমনটা অন্য কারো সাথেই দেখিনি কোনোদিন তার।আপাই আপাই আর আপনি সম্বোধনে বাসা তুলে রাখতো দাদুভাই।প্রচন্ড ভালোবাসতাম তাকে আমিও।সেই দাদুভাইয়েরই হার্ট এটাক হয়েছিলো সেদিন।চিকিৎসার জন্য ঢাকাতেই একটা বড় হসপিটালে এডমিট করা হয় তাকে।সবার মতো আমিও গিয়েছিলাম তাকে দেখতে।কয়েকবছর গায়েবপ্রায় মানুষটা,শুদ্ধ ভাইয়াও এসেছিলেন হসপিটালে।কয়েকদিন অবজার্ভেশনের পর দাদুভাইয়ের অবস্থা দেখে ডক্টর সবাইকে দেখা করে নিতে বলেন।বুঝেছিলাম,তার হাতে সময় কম।

একে একে সবার কথাবলা শেষে দাদুভাইয়ের সাথে কথা বলতে কেবিনে ঢুকলাম আমিও।দাদুভাই বেরিয়ে যেতে বললো সবাইকে।কেবিনে তখন শুধু সেজোকাকু,আব্বু,আমি আর এককোনে বুকে দুহাত গুজে মেঝের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে দাড়ানো শুদ্ধ ভাইয়া।এমন একটা পরিবেশ তৈরী হবে তা ভাবিনি কোনোদিন।তাই বিস্ময়ে তাকিয়েছিলাম কিছুক্ষন আব্বু,সেজোকাকুর মুখের দিকে।দাদুভাই হাত বারিয়ে কাছে ডাকলো আমাকে।ফুপাতে ফুপাতে এগিয়ে গিয়ে বেডের পাশে বসলাম তার।

-কেমন আছেন আপাই?

-তোমাকে ছাড়া কেমন থাকবো দাদুভাই?

-আপাই?দাদুভাই আপনাকে খুব ভালোবাসে।

কান্না করেছিলাম এমনিতেও।অতিকষ্টে কান্না থামিয়ে নাক টানছিলাম তখনও অবদি।তার ওমন কথায় আরো জোরে কাদতে লাগলাম।

-ওভাবে কাদবেন না আপাই।আপনার কান্না সহ্য হয় না আপনার দাদুভাইয়ের।

-দাদুভাই….

-দাদুভাইয়ের শেষ ইচ্ছে রাখবেন আপাই?

-ওভাবে বলো না দাদুভাই।কিচ্ছু হবে না তোমার।

-হুম।তাহলে ধরে নিন যতোদিন বাচবো,ততোদিন অবদি একমাত্র ইচ্ছা আমার।

-তুমি বলো না!যা বলবে আমি তাই করবো!

দাদুভাই কাপাকাপা হাতে হাত মুঠো করে ধরলো আমার।চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,

-আমি চাই আমার আপাই আর শুদ্ধ দাদা সারাজীবন একসাথে থাকুক।আপনাদের চারহাত এক দেখতে চাই আমি আপাই!

চারপাশ থমকে গেলো আমার।এই অবস্থায় এটা কি বলে দিলে তুমি দাদুভাই?কার সাথে কার জীবন জড়ানোর ইচ্ছা পোষন করেছো তুমি?এই মানুষটা তো আমার চাচাতো ভাই!তবুও অচেনা।ভয় পাই তাকে আমি!তার সাথে নিজেকে কি করে কল্পনা করবো?এছাড়া আমার পড়াশোনা?তার কি হবে?আমার স্বপ্ন?এখন এসব…এসবের জন্য তো একবিন্দুও প্রস্তুত নই আমি।তোমার অসুস্থ্যতা ছাড়া আর একটা কারন নেই তোমাকে হ্যাঁ বলে সন্তুষ্ট করার।কোনো কারনই নেই!

দাদুভাইয়ের থেকে হাত ছাড়িয়ে দু পা পিছিয়ে দাড়ালাম আমি।বুকে হাত ধরে রেখে দাদুভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কাদছি শুধু।দাদুভাইও কাদছে।আব্বু এগিয়ে এসে দুহাত ধরলেন আমার।আমি অসহায়ভাবে তাকালাম আব্বুর দিকে।তার চোখমুখ শক্ত।ভয় বাড়লো আমার।মাথা নেড়ে না বুঝাচ্ছি শুধু।কোনোদিক পাত্তা না দিয়ে আব্বু দাদুভাইয়ের হাতে আবারো হাত গুজে দিলেন আমার।শক্ত কন্ঠে বললেন,

-বাবা,আপনি যেমনটা চেয়েছেন,ঠিক তেমনটাই হবে।ইনসিয়া আর শুদ্ধর চারহাত এই মুহুর্তে এক করে দেবো আমি।

পাথরের মতো দাড়িয়ে সবটা শুনলাম আর দেখলাম।সেজোকাকু একটা আংটি এনে শুদ্ধ ভাইয়ার হাতে দিতেই বাধ্য ছেলের মতো উনি সেটা আমার হাতের আঙুলে পরিয়ে দিলেন।দুভাই মিলে সত্যিই তাদের শয্যাশায়ী বাবার কথামতো চারহাত এক করে দিলেন আমাদের।দাদুভাই শান্তিতে ঠোটে হাসি টেনে সেদিন সবাইকে ছেড়ে চলে যায়।আর রেখে যায় এক মুহুর্তের ঝড়ে বিদ্ধস্তপ্রায় হওয়া আমার জীবন।শুদ্ধ ভাইয়ার সাথে জড়ানো জীবন!

আংটিবদল একটা মেয়ের জীবনে ঠিক কি তা সেদিনও বুঝে উঠিনি আমি।কিন্তু হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসার পর আব্বু কড়া গলায় সেদিন বলে দিয়েছিলেন,

-এ বিষয়ে কেউ জানে না,জানবেও না।সবটা অজানাই থাক সবার কাছে।তুমিও সবটা ভুলে যাও ইনসু।আংটি খুলে ফেলো!

ঠিক কি কি অনুভুতি হয়েছিলো সেসময় আমার জানি না।কিচ্ছু বলি নি কাউকে।আংটিও খুলে ফেলেছিলাম।তবে কোথাও কোথাও এই ধারনাটা বসে গিয়েছিলো আমার।আংটিবদল হয়েছিলো দাদুভাইয়ের জন্য,সে নেই,আংটিবদলেরও কোনো অস্তিত্ব নেই।আমি মানুষটার অমতে আংটিটা হাতে উঠেছিলো আমার,আর আংটি খুলে ফেলা নিয়েও আমার মতকে কেউ প্রাধান্য দেয়নি।শুদ্ধ ভাইয়াও বাধ্য হয়েছিলেন তখন আমাকে আংটি পরাতে,ঠিক এ কারনেই পরবর্তিতে আংটি আছে কি না,আমি বেচে আছি কি না কোনো খোজই নেননি এ দু বছরে।শুধু একবার বাসার ল্যান্ডলাইনে ফোন করে বলেছিলেন,

-যা হয়েছে ভুলে যা সিয়া!তুই শুধু তোর পড়াশোনায় কনসেনট্রেট কর!অন্যকিছু নিয়ে ভাবতে হবে না তোকে।

ভাবার সুযোগ ছিলো না আমার কোনো।নিজেকে বুঝিয়েছি,ছেলেখেলাই ছিলো এটা একটা।যা কেউ মানে না।আমিও তো চাইনি।তবে কেনোই বা ওসব ভাববো।অভিমান ছিলো,দাদুভাই,আব্বু,সেজোকাকুর উপর।আর রাগটা ছিলো শুদ্ধ ভাইয়ার উপর।হয়তো অকারনে।তবুও ছিলো।

দু বছরে মানিয়ে নিয়েছিলাম সবটা।আমি,শেহনাজ মন্জিল,আর পড়াশোনা।কিন্তু সেটাও সহ্য হলো না শুদ্ধ ভাইয়ার।হুট করে আবারো তার আগমন,আমার উপর অধিকারবোধ খাটানো,তার স্পর্শ,তার কাউকে ভালোবাসার কথা,এসব শুনে আরো গাঢ় হয়েছে তার প্রতি সুপ্ত রাগটা।প্রতিবারই অপমানবোধ হয়েছে আমার।তবুও নিজেকে‌ সামলেছি।কিন্তু আজ উনি সবাইকে সবটা বলে দিলেন।সবটা।এরপর আবারো বলে যাবেন,ভুলে যা সবটা সিয়া,পাড়ি জমাবেন তার হাজারনামে ডাকা সেই ভালোবাসার মানুষটার কাছে।আর আমার জন্য বরাদ্দ রবে,অপমান,অবজ্ঞা।

.
গাড়ি থামলো।শুদ্ধ ভাইয়া নেমে ব্যাকসিট থেকে কিছু একটা নিলেন।তারপর আমার পাশের দরজা খুলে দিয়ে বললেন,

-নেমে আয়।

সোজা সামনে তাকিয়ে বললাম,

-কোথায় এসেছি?

-এখনো পৌছাইনি।হাটতে হবে।

-কেনো যাবো?

-আমি বলছি তাই।

-সবসময় আপনারা যা যা বলবেন,আমি কেনো তাই তাই করবো বলতে পারেন?

উনি আমাকে সোজা কোলে তুলে নিয়ে হাটা লাগালেন।তারদিক তাকাতেই চোখের কোনা বেয়ে জল গরাতে লাগলো।এটাই বাকি ছিলো।চারপা হেটেই নামিয়ে দিলেন উনি আমাকে।চোখের জল মুছে দিয়ে সামনে ইশারায় কিছু বোঝালেন।আমি সামনে তাকালাম।পদ্মার বাধানো পাড়।অশান্ত প্রবাহে প্রবল শব্দ করে ছুটে চলা স্রোতসীনী।সামনে শেষ অবদি চোখ গিয়ে আটকায় দুরে জল আর আকাশের মিলনস্থলে।যেখানে মিলনরেখা টেনে দিয়েছে সবুজ প্রান্তর।

সুর্য হেলে পরেছে পশ্চিমে।ঠিক সেই সবুজ প্রান্তর ঘেষে ডুব দিতে যাচ্ছে জলরাশির অতলে।পাশে তাকালাম।যে নদীপাড়ে সচারচর আমরা আসি,এটা সেই পাড় না।অন্য কোথাও এসেছি।মানুষের আনাগোনা নেই।পিছনের সরু রাস্তাটায় মাঝেমঝে গাড়ির ছুটে চলা,তার পরেই বিস্তৃর্ন মাঠ।সেখান থেকে রাস্তাটায় উঠে আসছে ঘরে ফেরার মানুষের দল।কৃষানের দল।চোখ ঘুরিয়ে আবারো পাশে তাকালাম।শুদ্ধ ভাইয়া বুকে হাত গুজে আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হাসছেন।চোখ সরিয়ে শক্তভাবে বললাম,

-এখানে কেনো ন্….

-তোর সব কেনোর উত্তর দেবো আজ আমি।তাই এখানে এনেছি।

আমি বিস্ময়ে তাকালাম।কেনোর উত্তর!তবে আজ সেই প্রতিটা কেনো আমি আপনাকে ছুড়ে‌ দেবো শুদ্ধ ভাইয়া যা দুবছর আগে আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছিলো,যা আপনার আবারো আমার জীবনে আসায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কষ্ট দিচ্ছে আমাকে।বললাম,

-কেনো এসেছেন আপনি শেহনাজ মন্জিল?

উনি শান্তভাবে বললেন,

-এটা তো প্রথমদিনই বলেছি।কাউকে আমার অস্তিত্বের জানান দিতে।কাউকে বোঝাতে,সে শুধুই আমার।

লেহেঙ্গা খামচে ধরলাম।বললাম,

-অন্তিমের সাথে এতো বাজে ব্যবহার কেনো করলেন?

-ওকে দেখেই বুঝেছিলাম ও আমার জিনিসকে নিজের করতে এসেছিলো।পরখ করতে একটু বেশিই বলে ফেলেছি জানি।কিন্তু আমার ধারনাটাই সত্যি হওয়ায় রাগটা কন্ট্রোল করতে পারি নি আর।বলতে পারিস দুবছরের রাগটা ওর উপর দিয়ে গেছে।

-কেনো বারবার কাছে এসেছেন আমার?কেনো স্পর্শ করেছেন আমাকে?

-অধিকার আছে আমার তাই।

-হঠাৎ অধিকারবোধ কেনো?

-হঠাৎ নয় তো!এটা তো দু বছর আগে‌ থেকেই‌ স্থির হয়ে আছে,আর আজীবন থাকবে।

-দুবছর আগের ঘটনাই যখন সবখানে জরাচ্ছেন,তবে দু বছর আগে তা ভুলে যেতে বলেছিলেন কেনো?

উনি ঠোট টিপে হেসে আমার হাত ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নিলেন।কান্না পাচ্ছে আমার।তবুও চোখের জল আটকে রেখেছি কোনোমতে।শুদ্ধ ভাইয়া কপালের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে কানে গুজে দিলেন আমার।তারপর সরে যাওয়া টিকলিটাও ঠিকমতো কপালে বসিয়ে দিয়ে দুগাল ধরে বললেন,

-অভিমানীনি,তুই জানিস,তোর এই অভিমানের অনল দু‌সেকেন্ডে আমাকে শেষ করে‌ দিতে সক্ষম।সেখানে দু বছর লাগিয়েছিস তুই।অবশ্য তুই না,সময়টা।সময়টা আলাদা করে রেখেছিলো আমাদের।আর তার সাথে আমাদের দুজনের সবচেয়ে ভালোবাসার দুজনও হাত মিলিয়েছিলো।

আমি হতবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে।উনি ঠোটে হাসি ঝুলিয়েই বললেন,

-আংটিবদলের সময় অপ্রস্তুত আমিও ছিলাম।এভাবে হুট করে দাদুভাই ওই পরিস্থিতিতে,ওই কথাটা বলে বসবে,ভাবতে পারিনি।তার থেকে বেশি শকিং ছিলো হসপিটাল থেকে বেরোনোর পরমুহুর্তে আব্বু এই কথাটা বলা,সবটা আপাতত ভুলে যাও শুদ্ধ।বালির বাধের মতো গুড়িয়ে গিয়েছিলো আমার সবেমাত্র সাজানো স্বপ্নগুলো।যখন নিজেকে গুটিয়ে নিতে লাগলাম,আব্বু নিজে এসে বললো,এই সবটা সাময়িকের জন্য।তোর বয়সটা আঠারো হলেই বিয়ে হবে আমাদের।এসব মাথায় থাকলে নাকি তোর পড়া নষ্ট হবে,আমিও ক্যারিয়ার এগোতে পারবো না আরো অনেক কথা।তাই‌ তার কথামতো সেদিন ফোন করে ওসব বলেছিলাম তোকে।আমার মতে,দোষটা কারোরই নেই সিয়া!ছিলোও না।বড়রা আমাদের ভালোর জন্যই ওসব বলেছিলো।ভালোই চান ওনারা আমাদের।

আকাশ থেকে পরলাম আমি।তারমানে এই দুটো বছর শুধুমাত্র আমার পড়াশোনার কথা ভেবে আব্বু আমাকে ওসব ভুলতে বলেছিলেন।কোনো ছেলেখেলা ছিলো না ওইদিন আমাকে আংটি পরানো!আমাদের বিয়ে নিয়েও ভেবেছেন বড়রা।কিন্তু আমার তো আঠারো হয়ে গেছে।এখন কি তবে শুধু পরীক্ষার জন্যই..

উনি আমার হাত মুঠো করে ধরে বললেন,

-যেটাই হয়ে থাকুক,তুই আর অভিমান করে থাকিস না সিয়া!আর কষ্ট দিস না আমাকে।প্লিজ!সহ্য করা দুরুহ হয়ে গেছে আমার জন্য।

কিসের কষ্ট?কোনো কষ্ট তো হওয়ার কথা না।অন্য কাউকে ভালোবাসেন আপনি।নিজে স্বীকার করেছেন তা।হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কড়া গলাতেই বললাম,

-সেদিন তো আপনি দাদুভাইয়ের কথা ভেবে,বড়দের কথা শুনেই আংটি পরিয়েছিলেন আমাকে।এটাকে এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কি দরকার?কোনো কারন দেখছি না আমি এসবের!আবার এসব কথা তোলার কি মানে?তার উপর আপনার তো ভালোবাসার কেউ আছে!

উনি একটু শব্দ করে হেসে আবারো দুগাল ধরলেন আমার।কপালের টিকলিটা উল্টিয়ে মাথায় দিয়ে আলতো চুমো দিয়ে বললেন,

-শ্যামাপাখি!

কপালে তার স্পর্শে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম।এই ডাক শুনে আবারো চোখ মেললাম আমি।উনি হেসে আবারো একইকাজ করলেন।কেপে চোখ বন্ধ করে নিলাম আবারো।উনি ফিসফিসিয়ে বললেন,

-রোদ্রময়ী!

চোখ মেললাম আমি।উনি পরপর আরো দু দুবার কপালে ঠোট ছুইয়ে বললেন,

-আমার হাফ ওয়াইফ,উরফ হাইফ,উরফ এইচ ডব্লিউ!

প্রতিবারই একই রিয়্যাক্ট ছিলো আমার।এবার উনি আমার গাল ছেড়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,

-এন্ড ফাইনালি,মাই মিস ডট ডট ডট।এবার আপনি আপনার জানামতে মিসেস ডট ডট ডট হতে প্রস্তত?

বড়বড় চোখ করে তাকালাম তার দিকে।শুদ্ধ ভাইয়া আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমাকে।দুহাত দিয়ে বুক ঠেলে রয়েছি তার,তবুও মনে হচ্ছে একবিন্দু দুরুত্ব নেই দুজনের মধ্যে।উনি বললেন,

-জানতে চাস না সিয়া?পাঁচবছর আগে কি হয়েছিলো,যার জন্য আমি শেহনাজ মন্জিল আসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম?শুনতে চাস না,আমার জ্বলন্ত হৃদয়ের সেই অতৃপ্ত মুহুর্তগুলোর কাহিনী?

আমার হাত তার বুকে ছিলো।অজান্তেই মুঠো করে‌ নিয়েছি তার পান্জাবিটা।সে একপলক আমার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।মুদ্ধ চোখে সবটা ভুলে তাকিয়ে রইলাম সেই হাসিটার দিকে।আমাকে কেনো বললেন উনি এসব কথা?বাকিগুলোই বা আমাকেই কেনো বলবেন?আর যদি পুড়তে থাকা হৃদয়ের কোনো কষ্টের কথাই হয়ে থাকে,কোনো অতৃপ্ত মুহুর্তগুলোর কথাই হয়ে থাকে,এতো তৃপ্তির হাসি কি করে আজ তার চেহারায়?কি করে?

#চলবে…

[আগেই দিলাম আজ।বড়ও।ব্যস্ত।তবুও আপনাদের রেসপন্স,রিভিউ‌ দেখে রাতে সারপ্রাইজ পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।সারপ্রাইজ!!!
হ্যাপি রিডিং]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here