তোমার আমার প্রণয় পর্ব-১৩

0
4287

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_13

নির্ঘুম রাতগুলো বরাবরই দীর্ঘ হয়। সময় যেন কিছুতেই ফুরাতে চায় না।মন অপেক্ষা করতে থাকে একটা সুন্দর সকালের। গতকাল রাতটা দৃশ্যর ঠিক তেমনি কেটেছে। অবশ্য এমন নির্ঘুম রাতের অভ্যাস হয়ে গেছে। সম্ভবত ভোরের দিকে তার চোখ লেগে এসেছে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই লাফ দিয়ে উঠলো। সাড়ে নয়টা বাজে। আজ নির্ঘাত লুবনা তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। চটজলদি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো। এই মুহূর্তে বাসায় কেউ নেই। লতা আপু আর জিনিয়া হয়তো অনেক আগেই চলে গেছে। নিশ্চয়ই তাকেও বেশ কয়েকবার ডেকেছে তারা। দৃশ্য দ্রুত রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলো। নাস্তার জন্য বসে থাকলে আরো দেরি হবে। যদিও টেবিলে তার নাস্তা রেডি করা ছিল।

রাস্তার দীর্ঘ জেম কাটিয়ে অবশেষে দৃশ্য ফ্যাশন হাউসে পৌঁছালো। আগে দ্রুত গেল মিস লুবনার কেবিনে। মিস লুবনা আগে থেকেই কেবিনে উপস্থিত। দৃশ্য কে দেখে মিস লুবনা পানি ছাড়াই ধুয়ে দিলো। এতো গুলি ঝাড়ি শুনে মন খারাপ করে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো দৃশ্য।

ফিফট ফ্লোরে আসতেই চোখ পরলো কর্নারের কেবিন টার দিকে। পুরো অফিসের সবচেয়ে বড় কেবিন এটাই। দরজার সামনে খুব সুন্দর ভাবে একটা নেমপ্লেট ঝুলছে।সামিন ইয়াসার মাহাদ। এই কেবিনের ভেতরটা কেমন সেটা দৃশ্যর জানা নেই। কারণ সে কখনোই এ কেবিন টাতে ঢোকেনি। আসলে এই ফ্লোরে কখনও ওইভাবে আসাই হয়নি দৃশ্যর। তা না হলে এই এক মাসে অন্তত একবার হলেও এই নামটা তার চোখে পড়তো। মূলত এই ফ্লোরে ভিআইপি গেষ্টরা বসে। ভেতর থেকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। আর এগিয়ে গেল গেস্ট রুমের দিকে। হাতের ড্রেসগুলো সুন্দর করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে সাজালো। আজ কিছু ভিআইপি গেস্ট আসবেন তাদের জন্য বেস্ট কিছু ড্রেস কালেকশন এখানে সাজানো হচ্ছে।

আজকের সারাটা দিন বাসায় কাটাবে বলে ঠিক করলো মাহিম। বুড়িটা সারাক্ষণ হ্যাক হ্যাক করে তার বাইরে থাকার কারণে। তাই সে মনে মনে ফন্দি আটলো বুড়িকে আজ ভীষণ জ্বালাবে। যাতে বুড়ি নিজেই বলে তুই বাসায় থাকিস না বাইরে থাক। এমবিএ করছে মাহিম। বাসায় তার কখনোই মন টেকে না। ছোট থেকেই বন্ধুবান্ধব নিয়ে হৈ হুল্লোর করে দিন কেটেছে তার। এখনো ঠিক তেমনই কাটে। তাছাড়া এই বাসায় এখন আর তার তেমন ভাল লাগেনা। সবাই অনেকটা বদলে গেছে। শুধু বদলায়নি তার দাদী আর সে নিজে। নিজের রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে আসার আগে তার চোখ পরলো মাহাদের রুমে। মনে হলো মাহাদ রুমে আছে।বেশ কিছুদিন ধরে তার ভাইয়ের সাথে ঠিকমত কথা হয়না তার। মাহাদ প্রচন্ড ব্যস্ত থাকে। আর সে নিজেও বাসায় খুব একটা থাকে না।

মাহিম দেখলো মাহাদের রুমের দরজা হালকা খোলা। দরজাটা ভালোভাবে খুলতেই এক শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। বরফের মত ঠান্ডা হয়ে আছে এই রুমটা।রুমের আবছা আলোতে মাহিম সবার আগে এসির রিমোট খুঁজে বের করলো। এসি টা অফ করে বিছানার দিকে নজর দিলো। মাহাদ সেখানে নেই। রুমের লাইট অন করে একটু সামনে আগাতেই দেখতে পেলো মাহাদ ফ্লোরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। ঠান্ডায় কেমন নীল হয়ে আছে। চুল এলোমেলো। ভাইয়ের এই বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে মাহিম ভীষণ কষ্ট পায়। তার হাসিখুশি থাকা ভাই টা কেমন গোমরা মুখো হয়ে গেছে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা ভাইটা আজকাল খারাপ ব্যবহারের জন্য নিউজের শীর্ষে থাকে।চার মাস আগেও এক রিপোর্টারের সাথে ভীষণ খারাপ ব্যবহার করেছিল যার জন্য বেশ কয়েকদিন মাহাদের নামে বেশ অভিযোগ উঠেছিলো।
ভাইয়ের এই অবস্থার জন্য সে ঠিক কাকে দায়ী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পরিস্থিতিটা ভীষণ জটিল। তবে সে চায় তার ভাইটা ভালো থাকুক। তবে সে এটা জানে তার ভাইয়ের ভালো থাকার একমাত্র ঔষধের নাম দৃশ্য।

একটা বাচ্চা মেয়ে যে তার ভাইয়ের মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করে সেটা সে খুব ভাল করেই জানে। বাচ্চা কেনো বলছে? নিশ্চয়ই এতদিনে মেয়েটা বাচ্চা নেই। আচ্ছা সবকিছু কি আবার স্বাভাবিক হতে পারে না?

মাহিম মাহাদকে ডাকলো। বেশ কয়েকবার ডাকার পর মাহাদ চোখ খুললো। চোখ খুলতেই নিজের ছোট ভাইকে দেখে মাহাদ মিষ্টি হাসলো। আজ বেশ কয়দিন পর মাহিমকে দেখছে। মাহিম বললো

-“ভাইয়া তুমি নিচে কেনো ঘুমাচ্ছিলে? আর রূম এত ঠান্ডা করে কেন রেখেছো?”

মাহাদ আড়মোড়া ভেঙে সোজা হয়ে বসলো। আর বললো
-“গরম লাগছিলো তাই।এইসব বাত দে। তুই কেমন আছিস সেটা বল?”

-“আমিতো অলওয়েজ ভালো থাকি।”

-“গুড।তো কি নিয়ে এতো ব্যাস্ত থাকিস? একদমই তোর দেখা পাই না।”

-“এইতো ভাইয়া তুমি তো জানো আমি ফ্রেন্ডের সাথে মিলে সারাদেশেই ঘুরে বেড়াই। এবার গিয়েছিলাম পঞ্চগড়। আমাদের নেক্সট টার্গেট সিলেট।”

মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“ভালো। ঘুরে বেড়াচ্ছিস ঠিক আছে বাট মাঝে মাঝে তো একটু ফ্যাশন হাউসেও যেতে পারিস? আমার ব্যস্ততার জন্য সে দিকে খুব একটা সময় দিতে পারি না তুই মাঝে মাঝে একটু খোঁজখবর রাখতে পারিস তো?”

-“ভাইয়া তুমি তো জানো আমি একটা স্বাধীন পাখি। বদ্ধ জীবন আমার ভালো লাগেনা। আর তুমি আমাকে ফ্যাশন হাউজের সেই চার দেয়ালে আটকাতে চাচ্ছো?”

-“আমিতো তোকে পুরোপুরি দায়িত্ব নিতে বলছি না মাঝে মাঝে একটু খোঁজ খবর রাখবি এই তো। এতে করে মাও কিছুটা খুশি হবে। আমি তো আর তাকে খুশি করতে পারি না অন্তত তুই যদি পারিস।”

মাহিম কিছুটা মন খারাপ করে বললো
-“এভাবে বলছো কেন ভাইয়া?”

মাহাদ মাথা নিচু করে বললো
-“আমিতো মায়ের আদর্শ ছেলে হতে পারিনি অন্তত তুই হ। আমি জানি মা আমাদের দুই ভাইয়ের উপর ভীষণ অসন্তুষ্ট। তোর সাথে তবুও দু’একটা কথা বলে কিন্তু আমার সাথে কোন কথাই বলেনা।”

-“ভাইয়া প্লিজ মন খারাপ করো না। মা অভিমান করে আছে দেখবে একদিন ঠিক আগের মত হয়ে যাবে।”

-“কিছুই আগের মত হবে না সেটা তুই ভাল করেই জানিস।”

-“বাদ দাওতো ওসব। তোমার সিডিউল ফাঁকা আছে কবে? ভাবছি দুই ভাই মিলে একদিন কোথাও হ্যাং আউট করবো।”

মাহাদ মুচকি হেসে মাহিমেনের চুলগুলো এলোমেলো করে বললো

-“নেক্সট উইকে ফ্রি আছি।”

-“ঠিক আছে তাহলে নেক্সট উইকে আমরা দুই ভাই মিলে বেশ মজা করব।”

মাহিমের কথায় মাহাদ মুচকি হেসে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। মাহিম একনজরে সেদিকে তাকিয়ে রইল। এত এলোমেলো অবস্থায় ও তার ভাইটাকে কত হ্যান্ডসাম লাগছে।তার বেশ কিছু মেয়ে বান্ধবীরা মাহাদের উপর ফিদা। মাহিমকে প্রায়ই বলে মাহাদের সাথে একটু দেখা করিয়ে দিতে। কিন্তু সে জানে তার ভাই এসব মোটেও পছন্দ করেনা। তাই তাদের কথায় খুব একটা পাত্তা দেয় না।

লাঞ্চ আওয়ার হতেই দৃশ্য দ্রুত ক্যান্টিনে ঢুকলো। সকাল থেকে কিছুই মুখে দেওয়া হয়নি। আজ কাজের প্রেসার একটু বেশি। লাঞ্চের পর ভিআইপি ক্লাইন্ট আসবে।তাই সে দ্রুত লাঞ্চ করতে চলে আসলো। খাবার নিয়ে টেবিলে বসতেই কিছুক্ষণ পর তার সাথে জয়েন করলো ঈশিতা আর মৃদুল।মৃদুল ও মিস লুবনার আন্ডারে কাজ করে। শান্ত একটা ছেলে। কাজেও বেশ মনোযোগী। টেবিলে বসেই মৃদুল বললো

-“কি ব্যাপার দৃশ্য আজ আমাদের ছাড়াই চলে আসলে?”

দৃশ্য মনে হয় কিছুটা লজ্জা পেল। তারপর বললো
-“আসলে ভাইয়া সকালে নাস্তা করিনি তো তাই ভীষণ খিদে পেয়েছে।”

কিছুটা চিন্তিত হয়ে মৃদুল বললো
-“আরে কি বলো? তুমি নাস্তা না করে এতক্ষন কাজ করছিলে? এমন করলে কিন্তু তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে?”

-“আসলে ভাইয়া ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছিল তো তাই।”

-“বুঝলাম তবে নিজের শরীরের খেয়াল রাখবে।”

উত্তরে দৃশ্য শুধু মুচকি হাসলো। আসলে মৃদুলের সাথে দৃশ্যর খুব একটা মেশা হয় না। এই এক মাসে দৃশ্য ভালোমতোই বুঝতে পেরেছে মৃদুল তার প্রতি কিছুটা দুর্বল। তাই সে যথা সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলে। এখন তো আর সে বাচ্চা নেই যে একটা ছেলের চোখের ভাষা বুঝতে পারবে না। মাহাদের চোখের ভাষা ছিল আরও গভীর ও তীক্ষ্ণ। যেন ঠিক বুকে গিয়ে আঘাত করে। কিন্তু সেই সময় চোখের ভাষা সে বুঝতে পারত না। মাহাদ যেদিন নিজের মনের কথা তার সামনে তুলে ধরেছে সেদিনই সে বুঝতে পেরেছে। আসলেই ভীষণ বাচ্চা ছিল সে।

পরক্ষণই দৃশ্য চোখ পরল ঈশিতার দিকে। সে একমনে খাচ্ছে আর মৃদুলের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। দৃশ্য মুচকি হাসলো। সে ভাল করেই জানে ঈশিতা মৃদুল কে ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটা বলতে পারে না। দৃশ্যত মাত্র এক মাস ধরে এখানে আছে। কিন্তু ঈশিতা আর মৃদুল প্রায় বছর খানেক এর মত এখানে কাজ করছে।

দৃশ্য দ্রুত লাঞ্চ শেষ করে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেল। করিডরে আসতেই হঠাৎ চোখ পরলো রাস্তার দিকে। দুইটা গাড়ি ফ্যাশন হাউজের সামনে এসে দাড়ালো। প্রথম গাড়ি থেকে কয়েকজন লোক বের হলো। তাদের ড্রেস দেখে দৃশ্য বুঝতে পারলো এরা হচ্ছে বডিগার্ড। দ্বিতীয় গাড়ি থেকেও দুজন লোক বের হলো তার ঠিক পরমুহুর্তেই বের হল মাহাদ। মাহাদকে দেখামাত্রই দৃশ্যর বুকটা ধ্বক করে উঠলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি হৃদস্পন্দন থেমে গেল। হোয়াইট টি-শার্ট এর উপর ব্ল্যাক জ্যাকেট। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। বেয়ার্ড এর জন্য মুখের সৌন্দর্য তা যেন আরো বেড়ে গেছে। সে মানুষটা কে সব সময় ক্লিন শেভ করা দেখেছে।

জ্যাকেটের উপর থেকে মাহাদ এর ফোলা পেশী দেখে বুঝতে পারল মানুষটা রেগুলার জিম করে।তখনও মানুষটা হ্যান্ডসাম ছিল। আর এখনতো দমবন্ধ করা মারাত্মক হ্যান্ডসাম। এতগুলো বছর পর সে কি আবার এই মানুষটার উপর ক্রাশ খাচ্ছে? দ্রুত সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। সে মোটেও দুর্বল হতে চায় না।

প্রায় বিকেল চারটার দিকে মিস লুবনার কেবিনে ঢুকলো দৃশ্য। তাকে জানালো এখন ভিআইপি ক্লায়েন্টের সাথে তার মিটিং। লুবনা ও দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে মিটিং এ চলে গেলেন। দৃশ্যও তার পিছু পিছু সেখানে চলে গেল।

একজন বড় নেতার মেয়ের বিয়ে তাই তারা এখানে ওয়েডিং ড্রেস দেখতে এসেছে। মিস লুবনা তাদের বিভিন্ন ডিজাইন সাজেস্ট করছেন। আর দৃশ্য এবং ঈশিতা তাদের ড্রেসগুলো একের পর এক দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রায় 15 মিনিট পর হঠাৎ কেউ মিটিংয়ে ঢুকলো। দৃশ্য সে দিকে তাকাতেই তার হাত থেকে ড্রেসটা পড়ে গেল। দ্রুত সে নিজেকে ঠিক করে আবার ড্রেসটা হাতে তুলে নিল। মাহাদ আসতেই ক্লায়েন্টের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। নেতার মেয়েটা মাহাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আগের সময় হলে দৃশ্য এতক্ষণে মেয়েটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলত।মাহাদ আড়চোখে একবার দৃশ্য কে দেখে নিল। ব্লু এন্ড হোয়াইট এর কম্বিনেশনে একটা থ্রি পিস পরা,মাথার চুল গুলো পেছনে ঝুটি করা। তবে মুখের সামনে বেশ কিছু ছোট ছোট চুল পড়ে আছে। সম্ভবত এটাকের লেয়ার কাট বলে। দৃশ্য বারবার সে চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়েছে। কিন্তু বেহায়া চুল গুলো বারবার দৃশ্য মুখে এসে পড়ছে। বেশ কিছুক্ষণ মিটিং শেষ করে ক্লায়েন্টরা চলে গেল।মিস লুবনা মুচকি হেসে মাহাদ কে বললো

-“কি অবস্থা মাহাদ? তোমাকে গতকাল কল করেছিলাম কিন্তু কোন রিপ্লাই করলে না?”

দৃশ্য এবার আড়চোখে মাহাদের দিকে তাকালো। মানুষটা গতকাল তাকে এখানে দেখে নিশ্চয়ই অনেক অবাক হয়েছে। মাহাদও আর চোখে দৃশ্যর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। দৃশ্য সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিল। মাহাদ মুচকি হেসে বললো

-“আসলে গতকাল আমি একটু ডিস্টার্ব ছিলাম। চোখের সামনে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত কিছু চলে এসেছিল তো তাই অনেকটা ডিস্টার্ব ছিলাম। সরি।”

দৃশ্য আবার মাহাদের দিকে তাকালো। তার উপস্থিতি মাহাদকে ডিস্টার্ব করে? পরক্ষনেই ভাবতো এমন হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
লুবনা হেসে বললো

-“আরে সরি বলতে হবে না। আমি আসলে তোমার নেক্সট মিউজিক ভিডিও ব্যাপারে কথা বলতাম। ওই ভিডিওতে ডিরেক্টর তোমার জন্য একটা ফর্মাল লুক চাচ্ছে। তাই তোমার সাথে কথা বলে আমি ড্রেস ডিজাইন করতে চাইছিলাম।”

-“আজ সময় হবেনা একটা রেকর্ডিং আছে। কাল কথা বলি।”
-“ঠিক আছে।”

মাহাদ আরো একবার দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আসলে সেখানে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে। মন চাইছে একবার এই বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু না সেটা মোটেও সম্ভব না। জড়িয়ে ধরা দূরে থাক মেয়েটার উপস্থিতিতে ও আনইজি ফিল হচ্ছে। অথচ একটা সময় সম্পর্কটা কতটা সহজ ছিল।
সেদিন দৃশ্য কে প্রপোজ করার পর ভেতর থেকে অস্থিরতা অনেকটা কমে গেছে। তারপর থেকে তারা চুটিয়ে প্রেম করেছে। দৃশ্যর বোকা বোকা কথায় মাহাদের ভীষণ হাসি পেত। সে মাঝে মাঝে অবাক হতো কিভাবে এই পিচ্চিটার প্রেমে পড়ে গেল। সারারাত চলতো তাদের ফোন আলাপ। একদিন যখন মাহাদ রাতে দৃশ্য কে কল করল দৃশ্য রিসিভ করে বললো

-“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।”

-“ওয়ালাইকুম আসসালাম পিচ্চি।”

-“আপনি এখনো আমায় পিচ্চি বলবেন। আমি মোটেও পিচ্চি না।”

-“তোমাকে তো আমি সারাজীবন পিচ্চি বলেই ডাকবো। হ্যাঁ ভবিষ্যতে বোঝা যাবে তুমি কতটা বড় হয়েছো।”

-“কিভাবে?”

দৃশ্যর কথায় মাহাদ মুচকি হাসলো। আর বললো
-“ওই যে বিয়ের পর?”

-“বিয়ের পর আমি বড় হয়েছি কিভাবে বোঝা যাবে?”

-“যাও এত দূরের টা বাদ দাও। বাসর রাতের পর আমি বুঝে যাব তুমি কতটা বড় হয়েছো।”

দৃশ্য এবার ভীষণ লজ্জা পেল। আর বললো
-“আপনি ভীষণ অসভ্য মাহাদ ভাইয়া।”

ইসস! এই ভাইয়া ডাকই যথেষ্ট ছিল মাহাদের মেজাজ খারাপ করার জন্য। সে ভীষণ বিরক্ত নিয়ে বললো

-“এই পিচ্চি আমি তোমার কোন জনমের ভাই? খবরদার যদি আরেকবার ভাইয়া বলেছো তো।”

দৃশ্য কিছুটা কনফিউজড হয়ে বললো
-“তাহলে কি বলবো?”

মাহাদ এবার মুচকি হেসে বললো
-“আমার নাম ধরে বলবে। কিংবা জান, বাবু সোনা, বেবি, হানি এসব ও বলতে পারো।”

-“ছি!! আমি এসব বলতে পারবো না।”

-“তাহলে নাম ধরে ডাকবে।”

-“আপনি তো আমার চাইতে বড় তাহলে নাম ধরে কিভাবে বলবো?”

-“আমি এত কথা শুনতে চাইনা দৃশ্য পাখি তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে ঠিক আছে? আর আপনি আপনি বলবে না তুমি করে বলবে।”

-“আমি পারবো না।আমার কেমন যেনো লাগে।”

-“আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”

-“ওকে ট্রাই করবো।”

-“শোনো কাল আমি কলেজে আসছি না।”

দৃশ্য অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করল
-“কেনো?”

-“আরে এত অস্থির হচ্ছ কেন? কাল আমার গানের প্র্যাকটিস আছে আর একটা প্রোগ্রাম আছে।”

-“প্রোগ্রাম, আমিও যাব।”

-“আরে বোকা আমার প্রোগ্রাম রাতে, তোমাকে কি রাতে বাসা থেকে বের হতে দেবে?”

মুহূর্তেই দৃশ্যের মুখটা মলিন হয়ে গেল। তার পরিবার কখনোই তাঁকে রাতে বাইরে বের হতে দেবে না। তাই সে আফসোস সুরে বললো

-“আমি যখন একটু বড় হব তখন আমি আপনার প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম এ যাব।”
মাহাদ খিলখিল করে হেসে বললো
-“পিচ্চি সেটা আর বলতে হবে না। যখন তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো তখন আমার সব প্রোগ্রামে তোমাকে সাথে রাখবো।”

দৃশ্য এক্সাইটেড হয়ে বোকার মত বললো
-“তাহলে আমাকে এখনই আপনার কাছে নিয়ে যান।”

দৃশ্যর কথায় মাহাদ আবার হাসলো। আর বললো
-” পিচ্চি পাখি আগে বড় হও তখন নিয়ে আসবো।”

দৃশ্য মুখটা গোমড়া করে বললো
-“আমারতো এখনি বড় হতে ইচ্ছে করছে।”

-“আমারও ইচ্ছে করছে তোমাকে টেনে বড় করে ফেলি।”

দৃশ্য এবার হেসে বললো
-“টেনে আবার বড় করা যায় নাকি?”

-“যায়না বলেই তো আফসোস।”

এভাবেই চলতে থাকে তাদের ফোন আলাপ। পরের দিন স্কুলে এসে দৃশ্য মোটেও ভালো লাগছে না। চারদিকে কেমন শূন্যতা ফিল হচ্ছে। অথচ মানুষটা তাকে আগেই বলে দিয়েছে সে আজ ইস্কুলে আসবেনা। তবুও তার অবুঝ মন বারবার করে চাইছে একবার মাহাদকে দেখতে। মাহাদ নামক পোকাটা তার মাথায় একদম জেঁকে বসেছে। সে বুঝতে পারছে এই মানুষটার প্রতি সে দুর্বল।ভীষণ দুর্বল। সেদিন ক্লাসে সে মনোযোগ দিতে পারল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here