তোমার আমার প্রণয় পর্ব-১২

0
4491

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_12

‘কারণ আমার বউ তো তুমি হবা’ এই কথাটার মানে দৃশ্যর ছোট মস্তিষ্ক সাথে সাথে ধরতে পারেনি। কয়েক মুহুর্ত সে মাহাদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। এই কথাটা মস্তিষ্ক অব্দি পৌছাতে না পারলেও দৃশ্যর অন্তরাত্মা ঠিক কেঁপে উঠেছিলো। মানুষটা কেমন অদ্ভুত সব কথা বলে। আর অদ্ভুত কথাগুলো দৃশ্যর পুরো শরীর কাঁপিয়ে তোলে।অবাক হয়ে দৃশ্য বললো

-“আমি কেনো আপনার বউ হতে যাবো?”

মাহাদ ঠোঁটে কুটিল হাসি এনে বললো
-“কেনো তুমি বউ হলে সমস্যা কি?”

দৃশ্য কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।আর বললো
-“আমার বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?”

-“এখন তো করতে বলছি না।যখন বয়স হবে তখন করবো।”

এবার দৃশ্য কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।দৃশ্যকে চুপ থাকতে দেখে মাহাদ বললো

-“ও বুঝেছি,তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না। ওকে নো প্রবলেম আমি তাহলে রামিসাকে বিয়ে করবো?”

দৃশ্য চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো।আবার এই রামিসা?আর উনি ওই ডাইনি কে বিয়ে করবে? এমনিতেই এই মেয়েকে নিয়ে দৃশ্য কয়েক দিনে ভালো ডিস্টার্ব ছিলো।তার অভিমানটা যেনো আরো বেড়ে গেলো।সে দ্রুত বললো

-“আপনি ওই মেয়েকে বিয়ে করবেন?”

-“হে।তুমিতো রাজি হলে না।তাই তো তা..

মাহাদ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে দৃশ্য বাহিরে যাওয়া শুরু করলো।দৃশ্যর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।এই ছেলে নিজেকে কি মনে করে?যাকে খুশি তাকে বিয়ে করুক,তাতে তার কি?ফালতু ছেলে।দৃশ্যর মন চাইছে ফাহিম ভাইয়াকে দিয়ে এই ছেলের ঠেং ভেঙে দিতে।

দৃশ্যত যাওয়া দেখে মাহাদ বোকা বনে গেলো।বাবা! এই পিচ্চির এতো রাগ? মাহাদ দৌড়ে গেলো আর দৃশ্যর হাত ধরে নিজের দিকে ফেরালো।এতক্ষণে দৃশ্যর দুই চোখ অশ্রুতে টলমল করছে। ভীষণ রেগে বললো

-“আমার হাত ছাড়ুন।”

-“ছাড়বোনা”

-“কেনো ছাড়বেন না? জান রামিসা আপুর হাত ধরুন।আমার হাত কেনো ধরেছেন?”

-“তুমি জেলাস কেনো?”

দৃশ্য এবার হিচকী তুলে বললো
-“আমি মোটেও জেলাস না।”

মাহাদ আঙ্গুল দিয়ে দৃশ্যর চোখ থেকে গড়ানো অশ্রু তুলে দৃশ্যর সামনে আনলো,আর বললো

-“তাহলে চোখ দিয়ে বন্যা বইছে কেনো?দৃশ্য পাখি তুমি তো ফেঁসে গেছো।”

দৃশ্য কিছুই বলতে পারলো না। মাহাদ দৃশ্যর আরো কাছে এসে বললো

-“এইযে রামিসার সাথে আমাকে দেখে তোমার খারাপ লাগছে,চোখ ভিজে আসছে, এটা কেনো হচ্ছে জানো?”

এবার দৃশ্য চোখ তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো
মাহাদ বুড়ো আঙুল দিয়ে দৃশ্যর চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো

-“কারণ তুমি আমার প্রেমে পরে গেছো পিচ্চি।তোমার এই ছোট্ট মন জুড়ে এই মাহাদের বিচরণ ঘটেছে।”

দৃশ্য অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।দৃশ্য যেনো নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেলো।বুকের বা পাশে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করছে।আসলেই কি সে মাহাদ ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে?কিন্তু প্রেম কি সেটাই তো সে জানে না।তাহলে এই অচেনা প্রেমে সে কি ভাবে পড়লো?

মাহাদ আবার বলতে শুরু করলো
-“দৃশ্য পাখি যে অনুভূতির দহনে তুমি কয়দিন ধরে জ্বলছো,ঠিক সেই অনুভূতির দহনে আমিও আরো কয়েক মাস আগে থেকে জ্বলছি।আর এই অনুভূতির আগুন টা আমার মনে জ্বলেছে তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি,সেদিন থেকে।

তোমার সেই কাঁদো কাঁদো চাহুনির প্রেমে পড়ে গেছি।দিনে দিনে এই প্রেম গভীর ভালবাসার রূপ নিয়েছে।”

দৃশ্য এখনো অবাক হয়ে মাহাতকে দেখছে। মাহাদের এক একটা কথা দৃশ্য মনে শীতলতা বয়ে আনছে। এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার পুরো শরীর জুড়ে। তবে এটা ভেবে সে ভীষণ অবাক হচ্ছে মাহাদ তাকে ভালোবাসে।

ভালোবাসার অনুভূতি কি সেটা এখনো দৃশ্য বোঝেনা। তবে কয়েকটা দিনে সে যে পরিমাণ অস্থিরতা, অশান্তি ভোগ করেছে। মাহাদ ভাইয়া কি কয়েক মাস ধরে ঠিক সেভাবেই ভোগ করছে?

মাহাদ দৃশ্যর হাত ছেড়ে পেছনে একটা টেবিলের পাশে দাঁড়ালো। কিছু একটা হাতের পেছনে লুকিয়ে দৃশ্য সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো। দৃশ্যর চোখ যেন এবার বেরিয়ে আসার উপক্রম।মুহূর্তেই তার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো।

মাহাদ পেছন থেকে কয়েকটা লাল গোলাপ সামনে বাড়িয়ে ধরলো।আর বলতে শুরু করলো

-“দেখো পিচ্চি প্রপোজ কিভাবে করতে হয় আমার তা ঠিক জানা নেই। আর এভাবে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করার ব্যক্তিত্ব ও আমার মাঝে নেই। তবে তোমার এই পিচ্চি মাথায় নিশ্চয় কিছু ফ্যান্টাসি আছে। না হলে পরবর্তীতে বলবে আমি কেন হাঁটু গেড়ে বসে তোমাকে প্রপোজ করলাম না। তোমাদের বয়সে এমন ফান্টাসি করাটা স্বাভাবিক।”

দৃশ্যর এবার ভীষণ রাগ উঠছে। এতক্ষণ অব্দি সব ঠিক ছিল কিন্তু এখনকার কথা গুলোও দৃশ্য মেজাজ গরম করছে। প্রপোজ করবি সোজা করে ফেল এত নাটক করার কি আছে? তবে দৃশ্য কিছুই বলতে পারো না। কারণ এভাবে হাঁটু গেড়ে বসে সামনে ফুল ধরাতে মাহাদকে ভীষণ কিউট লাগছে।

মাহাদ বললো
-“দৃশ্য পাখি তোমার জীবনে মাহাদের এন্ট্রি হয়ে গেছে।আমার বাচ্চা-কাচ্চার মা তুমি হবা সেটা তো ফিক্স। তাই আর দেরি না করে দ্রুত ফুলগুলো গ্রহণ করো।”

শত অবাক হওয়ার মাঝেও মাহাদের এমন প্রপোজ করা দেখে দৃশ্য হেসে দিলো। সারা জীবন শুনে এসেছে ছেলেরা মেয়েদের মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রপোজ করে। কিন্তু এই ছেলেটা শুরু থেকেই হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর এখন প্রেম করা বিয়ে করা বাদ দিয়ে সোজা বাচ্চাকাচ্চা অব্দি চলে গেছে। এমন প্রপোজ এর কথাতো দৃশ্য কখনো শুনেনি?

হঠাৎই দৃশ্যর লজ্জা লাগতে শুরু করলো। ভীষণ লজ্জা। মাহাদের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। ধূসর চোখ জোড়ায় যেন মাদকতায় ভরপুর।মুচকি হেসে সে ফুলগুলি নিলো।দৃশ্য ফুল নেওয়ার সাথে সাথে উপর থেকে হাজারো ফুলের পাপড়ি ঝরতে লাগলো। দৃশ্য অবাক হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর মাহাদ আবার সেই টেবিলের পাশ থেকে একটা গিফট বক্স নিয়ে আসলো। মাঝারি আকারের গিফট বক্স টা দৃশ্যের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো

-“এটা বাসায় যেয়ে খোলবে।”

দৃশ্য বক্স টা হাতে নিয়ে মাহাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো তাহলে কি মাহাদ ভাইয়া সব কিছু আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলো?

দৃশ্যকে ভাবতে দেখে মাহাদ হাতে তুরি বাজিয়ে বললো

-“তোমার এই ছোট্ট মাথায় এত চাপ নিও না দৃশ্যপাখি। আমি আগে থেকেই সব প্ল্যান করে রেখেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার প্লান ভেস্তে দেওয়ার পুরো ব্যবস্থা করেছিলে। ওই রাকিবের সাথে কথা বলে আমার মাথাটা গরম করে ফেলেছিলে।”

দৃশ্য এবার লজ্জা পেলো। মাহাদ বুঝতে পারছে দৃশ্য লজ্জা পাচ্ছে। তাই তার লজ্জা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে দৃশ্যর কানে কানে ফিসফিস করে বললো

-“কালো শাড়িতে আমার পরীটাকে মারাত্মক লাগছে।”

দৃশ্যর যেন আবার কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল। সে নির্ঘাত আজ মারা যাবে। এই মানুষটা তাকে কেমন পাগল করা অনুভূতিতে ভাসাচ্ছে। মাহাদের এক একটা কথা যেন দৃশ্যর লজ্জা আরোও বাড়িয়ে দিচ্ছে।তার এই ছোট জীবনে সে কোনদিন এত লজ্জা পায়নি। মাহাদ এবার দৃশ্যর পেছনে দাঁড়ালো আর চুলের সুভাষ নিয়ে বললো

-“বেলি ফুলের মালাটা তোমার চুলে ভীষণ মানিয়েছে। বিয়ের পর প্রতিদিন আমি তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসবো আর সেটা নিজের হাতে গুজে দেবো।”

দৃশ্য লজ্জায় কথাই বলতে পারছেনা। মাহাদের থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো। মনে হচ্ছে আজ দম আটকে মারাই যাবে সে। দৃশ্য বললো

-“আমি না.. নাবিলার কাছে যাবো।”

মাহাদ মুচকি হেসে নিজের সামনের চুল চুল গুলো তে হাত বুলিয়ে নিল একবার। আর বললো

-“কল করলে যেনো প্রথম বারেই রিসিভ হয়।”

নাবিলা, সায়মা আর মৌ দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আর দৃশ্য ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্ত হয়েই বললো

-“তোরা আমার দিকে এভাবে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে আছিস কেনো?”

মৌ হেঁসে বললো
-“আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা মাহাদ ভাইয়া তোকে প্রপোজ করেছে?”

নাবিলা মুচকি হেসে বললো
-“আমার আগেই মনে হয়েছে মাহাদ ভাইয়া দৃশ্যকে পছন্দ করে। প্রতিদিন কোচিংয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমাদের মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ট্রিট দিতো। তখনই বুঝেছি নিশ্চয়ই কোন কাহিনী আছে।”

সায়মা বললো
-“এবার মাহাদ ভাই এর থেকে আরো বড় ট্রিট নেবো।”

সায়মা কথা শুনে বাকি সবাইও হইহুল্লোর শুরু করলো।
অন্যদিকে মাহাদকে সব ফ্রেন্ডরা ঘিরে ধরে আছে। তানিম বললো

-“এই শালা মেয়েদের থেকে দূরে থাকতো আর সবার আগেই এই শালাই মেয়ে পটিয়ে ফেলছে।”

রাফসান বললো
-“মামা বিশাল বড়ো ট্রিট চাই।”

তার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগল। মাহাদ মুচকি হেসে বললো

-“ট্রিট কালকে পাবি আজকে না।”

সবাই বলল কোন সমস্যা নেই। তবে এত সবের মাঝে জয় কে একটু আনমনা মনে হচ্ছে। মৌ মেয়েটাকে সে অনেকবার দেখেছে। তবে আজ এই মেয়েটাকে দেখে তার অন্য রকম একটা অনুভূতি হয়েছে। কালো শাড়ী আর বেলি ফুলের মালায় মেয়েটা কে যেন হঠাৎ করেই বড় মনে হলো। এতদিন মাহাদকে নিয়ে ভীষণ মজা করেছে বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়াতে। তবে কি কোন ভাবে সে সেই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে?

দৃশ্যরা অডিটোরিয়ামে বসে মজা করছিল। যদিও এত সবের মাঝে দৃশ্যের মনোযোগ কম। তার চোখ দুটো মাহাদকে খুঁজছে। কিছুক্ষণ পরেই মাহাদের দেখা পেলো স্টেজে। গিটার নিয়ে স্টেজ এর মাঝে এসে দাঁড়ালো। তারমানে এখন মাহাদের পারফরম্যান্স হবে। মুহূর্তেই দৃশ্য বিষয় এক্সাইটেড হয়ে গেল। দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। দৃশ্য লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। সেটা দেখে মাহাদ মুচকি হাসলো।আর টুংটাং করে গিটারের সুর তুলতে লাগলো।

চোখে রাখো চোখ,
কিছু কথা হোক,
বলবে শুনব আমি…
হাতে রাখো হাত,
সারা দিন রাত,
স্বপ্ন পথে নামি…
সুখেরই এ লগনে,
তুমি আমি দুজনে,
প্রেমেরই পৃথিবী সাজাই…
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই,
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই।

ঐ ঘুমঘুম দূর আকাশে,
সাদা সাদা মেঘ উড়ে যায়,
আজ এই মন শুধু তোমাকে,
আরো কাছে কাছে পেতে চায়,
দুজনে এইতো,
কোন বাঁধা নেইতো,
এসো তবে গল্পে হারাই…
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই,
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই।

গুনগুন সুর মনেরি ভিতর,
লাগে লাগে কি যে অনুভব,
যেখানে তাকাই সেখানে তুমি,
আশা ভালবাসা তুমি সব,
তোমারি থাকব,
এই কথা রাখব,
এসো তবে দু পা বাড়াই…
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই।

চোখে রাখো চোখ,
কিছু কথা হোক,
বলবে শুনব আমি…
হাতে রাখো হাত,
সারা দিন রাত,
স্বপ্ন পথে নামি…
সুখেরই এ লগনে,
তুমি আমি দুজনে,
প্রেমেরই পৃথিবী সাজাই…
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই,
ও প্রিয় আমি তোমার হতে চাই।

গান শেষ করে মাহাদ দৃশ্যের দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। গান গাওয়ার সময় সারাক্ষণ মাহাদের চোখ দৃশ্যর দিকে পড়েছে। হঠাৎ মাহাদ দৃশ্য দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। এটা দেখেই দৃশ্যর হঠাৎই কাশি উঠে গেল। মেয়েটা ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। মাহাদ ভাইয়া যে এতটা দুষ্ট সেটা তো সে ভাবতেই পারেনি।

সন্ধ্যার দিকে দৃশ্য খাটে বসে একদৃষ্টিতে গিফট বক্স এর দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সারাটা দিনই তার ভীষণ অস্থিরতায় কেটেছে। সারাক্ষণই মনে হচ্ছিল তার শরীর কাঁপছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি। আজও মাহাদ তাদের আইসক্রিম ট্রিট দিয়েছে।সেই সময়টা মনে করে দৃশ্যর আরো লজ্জা লাগছে।

মাহাদ তার বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে বলেছে

-“এই যে শালীকারা আজকের জন্য আইসক্রিম ট্রিট নাও। পড়ে বড় করে ট্রিট দিবো।”

দৃশ্যর সব বান্ধবীরা আজ বুঝতে পারলো কেন তাদের সবাই বাচ্চা বেয়াইন বলতো। মৌ আড় চোখে একবার জয়ের দিকে তাকালো। কারণ জয় কখন থেকেই মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই মৌয়ের কিছুটা অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।

আজ মনে হয় দৃশ্যর লজ্জা দিবস। তাইতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু লজ্জা পাচ্ছে। দৃশ্যর রুমটা গোলাপের সুভাসে ভরে উঠেছে। একটা ফ্লাওয়ার ভাসে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে গোলাপগুলোকে।দৃশ্য এবার বক্স টা খুলতে শুরু করলো। বক্স টা খুলতেই প্রথমেই একটা রঙিন কাগজের চিঠি পেল। দৃশ্য চিঠিটা খুললেই পড়তে শুরু করলো।

প্রিয় দৃশপাখি,
প্রথমেই আমার জীবনে হঠাৎ করে চলে আসার জন্য ধন্যবাদ। তোমার কারনে আমি ভালবাসার মত একটা সুন্দর অনুভূতি কে অনুভব করতে পেরেছি। মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হই তোমার মত একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে কিভাবে পরলাম আমি? পরক্ষনেই ভাবি ভালোবাসা তো আর পরিকল্পনা করে হয় না। তবে তোমাকে আমি কখনোই প্রেমিকা রূপে ভাবি নি। যখন থেকে আমি ভালোবাসা নামক অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি ঠিক তখন থেকেই তোমাকে আমার বউ হিসেবে ভেবে নিয়েছি। বাচ্চা দৃশ্য শাড়ি পড়ে আমার আঙিনাতে ঘুরে বেড়াবে। ইস ভাবতেই ভালো লাগছে। তবে দিন শেষে সেই শাড়িটা কিন্তু আমিই খুলবো।
এতোটুকু উপরে দৃশ্য হাত থেকে চিঠিটা পড়ে গেল। ভয়ঙ্কর কথাবার্তা। দৃশ্যর হাত কাঁপতে লাগলো। মাহাদ ভাইয়া তো ভীষণ অসভ্য। দৃশ্য আবার চিঠিটা পড়তে শুরু করলো
কি পিচ্ছি লজ্জা পেয়েছো? থাক আর লজ্জা পেয়ো না। মেয়েদের জিনিস সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা নেই। তবুও চেষ্টা করেছি তোমার জন্য ভালো কিছু চয়েস করার। আশা করি ভালো লাগবে।
ইতি
তোমার হবু বর

চিঠিটা পড়ে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো। মানুষটা তার মনের অনুভূতি সরাসরি বলতে না পারলেও চিঠির মাধ্যমে ঠিকই তাকে বুঝিয়েছে। দৃশ্য দেখলো বক্সে বেশ কিছু চকলেট। চকলেট গুলো দেখেই দৃশ্যর মনটা ভীষণ খুশি হয়ে গেল। পাশে আরেকটা ছোট বক্স। বক্স টা খুলে সেখানে দেখতে পেল খুব সুন্দর একটা লেডিস ওয়াচ। একটা পারফিউমের বোতল। তবে শেষের গিফট টা দেখে দৃশ্য কিছুটা অবাক হল। কারণ সেখানে ডায়মন্ডের ছোট একজোড়া কানের দুল। এটা দেখে তো দৃশ্যর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। নিঃসন্দেহে দুল জোড়া অসম্ভব সুন্দর। ডায়মন্ডের পাথরগুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ দামি। মাহাদ ভাইয়া এত দামী গিফট কেন করতে গেল? সে মনে মনে ভেবে নিয়েছে কাল এটা সে ব্যাক করে দিবে। বাকি গিফট রাখা যায় কিন্তু এটা অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ। দৃশ্যর ভবনার মাঝে মাহাদের কল আসলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মাহাদ বললো

-“কি করে আমার পরী টা?”

এই কথাটুকুতে দৃশ্য ঠিক কতটা অনুভূতির জোয়ারে ভাসলো তা সে নিজেও জানে না। না এই ছেলেটা তাকে লজ্জা দিতে দিতেই মেরে ফেলবে। দৃশ্য কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো

-“এমনভাবে বলবেন না প্লিজ আমার কেমন কেমন যেন লাগে।”

দৃশ্যর কথায় মাহাদ হো হো করে হেসে দিলো। সে আসলেই একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়েছে। দুষ্টুমি করে বললো

-“কেমন কেমন মানে?”

-“জানিনা।”

-“আচ্ছা আগে বলো গিফট পছন্দ হয়েছে?”

-“হুম। তবে ওই দুল জোড়া আমি রাখতে পারব না।”

মাহাদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়লো। তাহলে কি দৃশ্য এটা পছন্দ হয়নি? তাই সে বললো

-“কেনো তোমার পছন্দ হয়নি?”

দৃশ্য অস্বস্তিতে পড়ে গেল। তবুও বললো

-“না তেমন না, দুল জোড়া অনেক সুন্দর। কিন্তু এত দামী গিফট আমি নিতে পারবো না। তাছাড়াও আপনি নিজেও স্টুডেন্ট।আপনার বাবা নিশ্চয়ই বকা দিবে?”

দৃশ্যর কথায় মাহাদের ভীষণ হাসি পেল। সে বললো

-“বাহ! তোমার মধ্যে তো এখনি একটা বৌ বৌ ভাব চলে আসছে।”

মাহাদের কথায় দৃশ্য আবারো লজ্জা পেলো।মাহাদ আবার বললো

-“চিন্তা করো না পিচ্ছি। এটা তোমার হবু বরের টাকায় কেনা। তোমার হবু বর এতদিনে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করে ভালোই টাকা কামিয়েছে।এটা আমার বাবার টাকা না।”

-“তবুও এত দামী গিফট দেওয়ার কি দরকার ছিল?”

-“আমার স্পেশাল মানুষের জন্য স্পেশাল গিফট হবে না তা কি করে হয়?”

দৃশ্যর অদ্ভুদ অনুভুতি হচ্ছে। আজকের দিনটা তার জন্য আসলেই অনেক স্পেশাল। আজকের এই দিনে এই মানুষটা তাকে বারবার হাজারো অনুভূতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার এই কিশোরী মনে অদ্ভুত ভালোলাগার জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। যাতে সে গা ভাসিয়ে দিতে চায়। ভিজতে চায় অনুভূতির বৃষ্টিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here