তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_৯

0
2528

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৯

কিছুদিন পর …
সকালবেলার কাঠফাটা রোদ এসে আধুনিক্তার চেহারায় পড়লো। বিরক্ত হয়ে কম্বল দিয়ে চেহারা ঢেকে আবার শুয়ে রইল। হঠাৎ তার হাতে কারো স্পর্শ অনুভব করলো। তারাতাড়ি চোখ খুলে উঠে বসলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে কেও নেই। আধুনিক্তা তার ডান ধরলো। কার স্পর্শ অনুভব করলো সে বুঝতে পারছে না। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে আবার শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো কেও তার কম্বল ধীরে ধীরে সরাচ্ছে। আধুনিক্তা ভাবলো হয় তো আরমান দুষ্টুমি করছে৷ কম্বল একটু সরাতেই আধুনিক্তা খোপ করে তার হাত ধরে উঠে বসল। কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“মা..মাশ..মাশরাত তুমি?”
মাশরাত হাসি মাখা মুখে তাকিয়ে আছে আধুনিক্তার দিকে। আধুনিক্তার মনে ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে মাশরাতকে দেখে। মাশরাত আধুনিক্তার পাশে বসে আলতো করে আধুনিক্তার চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো। মাশরাতের ছোঁয়ায় আধুনিক্তা চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার হাত পা কাঁপছে। হঠাৎ ডান চোখে ঠোঁটের স্পর্শ পেল। আধুনিক্তা কম্বল খামছে ধরে রেখেছে। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকালো। আধুনিক্তা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। মাশরাতের চাহনি দেখে আধুনিক্তা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসতেই অবাক হয়ে মাশরাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি এইখানে আসলে কিভাবে? চলে যাও প্লিজ কেও দেখে ফেললে?”
“কেও দেখবে না।”
“মাশরাত তুমি বুঝতে পারছো না। যদি দাদাই বা আব্বু দেখে তোমাকে কাজ থেকে বের করে দিবে।”
“তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”
“তুমি..ধ্যাত তোমাকে বোঝানো আর কুড়ালে গিয়ে লাথি মারা এক ব্যাপার।”
মাশরাত হো হো করে হেসে উঠল। আধুনিক্তা বিরক্ত হয়ে বলল-
“তুমি একটু সিরিয়াস হও প্লিজ।”
“আমি একদম সিরিয়াস আছি। তুমি বলো কী বলবে।”
“আমার কিছু বলার নেই।”
“উঁহু তুমি কিছু তো বলতে চাও।”
“না তো”
মাশরাত আধুনিক্তার একটুখানি কাছে গিয়ে চোখে চোখ রাখলো। আধুনিক্তা ঢোক গিললো মাশরাতকে কাছে আসতে দেখে৷ মাশরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে সে যেন হারিয়ে গেল। মাশরাত বলল-
“এখনো কিছু বলার নেই তোমার?”
আধুনিক্তা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
“তাহলে বলো।”
আধুনিক্তা কিছুক্ষণ ভাবলো। এখন কি বলা ঠিক হবে? মাশরাত ভ্রু নাচালো। আধুনিক্তা হেসে বলল-
“বলবো?”
“বলো”
“যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি?”
“সারাজীবন পাশে আছি হারানোর প্রশ্নই আসে না।”
আধুনিক্তা লজ্জা পেল। মাশরাত অপেক্ষা করছে আধুনিক্তার কথা শোনার জন্য। আধুনিক্তা মাথা নিচু করে আঙুল নিয়ে খেলছে। মাশরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল-
“মাশরাত..মাশরাত আমি তোমাকে..”
“তুমি আমাকে?”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
আধুনিক্তার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে৷ মাশরাত হেসে আধুনিক্তার দু কাধে হাত রাখলো। আধুনিক্তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। হঠাৎ মাশরাত বলে উঠলো-
“ঘুম থেকে উঠো এইবার লেইট হচ্ছে।”
“আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে বলল-
“কী বললে?”
“আম্মু লেইট হচ্ছে উঠো এইবার।”
আধুনিক্তা অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“মাশরাত তোমার কন্ঠ আমার আম্মুর মতো লাগছে কেন?”
“আধুনিক্তা উঠবে নাকি পানি মারবো? উঠো বলছি নাহলে..উঠবে না তো দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
মাশরাত উঠে দাঁড়াল। আধুনিক্তা অবাক না হয়ে পারছে না। মাশরাত বালতি পানি নিয়ে আসলো। আধুনিক্তা ভীতু গলায় বলল-
“মাশরাত কী করতে চাচ্ছো তুমি?”
মাশরাত উত্তর দিলো না। এক বালতি পানি আধুনিক্তার উপর ঢেলে দিলো।

আধুনিক্তা ধরফরিয়ে উঠে বসলো।
“ডুবে যাব আমি ডুবে যাব থামো প্লিজ থামো।”
আধুনিক্তা কিছুক্ষণ চেচামেচি করে চোখ তুলে তাকালো। মা পাশে গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা অবাক হয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে আবার মায়ের দিকে তাকালো।
“ঘুম ভেঙেছে আম্মু?”
“তুমি আমার উপর পানি ফেললে?”
“হ্যাঁ, এতক্ষণ ধরে ডাকছি উঠছিলে না কেন?”
আধুনিক্তা মুখ লটকালো। তার মানে সে স্বপ্ন দেখছিল। মা বলল-
“এখন উঠে রেডি হও ভার্সিটির জন্য লেইট হচ্ছে।”
“তুমি আমাকে এক বালতি পানি দিয়ে ভেজালে কেন?”
“এক গ্লাস পানি ঢেলেছি। এক বালতি না। উঠো এখন।”
মা ধমকের স্বরে বলল কথাটা। আধুনিক্তা তারাতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে দৌড়ে বাথরুমে গেল। মা গ্লাস টেবিলের উপর রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল- “মেয়ে ঘুমের ঘোরে বার বার মাশরাতের নাম নিচ্ছিল কেন?”

মেহরিন ভার্সিটির মাঠে হাটাহাটি করছে। মল্লিকা আজ ভার্সিটি আসবে না। আধুনিক্তাকে মেসেজ করে বলে দিয়েছে যে সে ভার্সিটি এসে পড়েছে বাসায় যাওয়া দরকার নেই পিক করার জন্য। মেহরিন ঘুরে দাড়াতেই দেখে কবির আর রিয়াজ ভার্সিটির ভেতরে ঢুকছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে ঝগড়া করছে দুজন। হেটে কাছে আসতেই তারা দেখলো মেহরিন তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কবির বিরক্ত ভাব নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। রিয়াজ এগিয়ে এসে মেহরিনের সামনে দাঁড়ালো।
“একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”
মেহরিন হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। রিয়াজ আমতা আমতা করে বলল-
“মল্লিকার কী বিয়ে ঠিক হচ্ছে?”
“হুম এমনটাই কিছু, কেন?”
“মল্লিকা কিছুদিন যাবত কবিরকে ইগনর করছে। আগের মতো কথা বলছে না। কবিরের ইগোতে লাগছে ব্যাপারটা।”
“তোমার বন্ধু কী চায় বলো তো? সব মেয়ে কী তাকে অ্যাটেনশন দিয়ে দিয়ে ঘুরবে?”
“না না সেটা না। আসলে জীবনে এমন অনেক বিষয় থাকে যেটা আমাদের অভ্যেস হয়ে যায়। যেমন তোমার সাথে আমি কথা বলতে আসলে তুমি সাপের মতো ফনা তুলো। তেমনই মল্লিকার সেই বিরক্ত করা কবিরের অভ্যেস যে দাঁড়িয়েছে।”
“আমি সাপের মতো ফনা তুলি?”
“তো কী? আজ হঠাৎ এত সুন্দর মতো কথা বলছো আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
মেহরিন চোখ ছোটো ছোটো করে রিয়াজের দিকে তাকালো। রিয়াজ হাসিমুখে বলল-
“এইতো তোমার আসল রূপ৷ কোথায় রেখেছিলে এতক্ষণ?”
“ভার্সিটি কত তলা?”
“কেন?”
“বলো না”
“ছাদ নিয়ে সাত তলা।”
মেহরিন ধমকের স্বরে বলল-
“সেই সাত তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”
রিয়াজ ধমক শুনে চুপসে গেল। মেহরিন আবার বলল-
“তুমি আর তোমার বন্ধু আমাদের থেকে ১০ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করো প্লিজ।”
“কবির তো দূরেই থাকে সবসময়। আমার দূরে থাকতে হবে?”
“তো আর কী?”
“আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে পারব না।”
“একটা ঘুষি বেকার যাবে না বলে দিলাম।”
“তোমার হাতে মরতেও রাজি।”
“আজ অতিরিক্ত বকবক করছো। ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট।”
“রিয়াজ মুচকি হাসল। মেহরিন থতমত খেয়ে গেল রিয়াজের হাসি দেখে। তখনই আধুনিক্তা আসলো। মেহরিন আর রিয়াজকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে মেহরিনকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলল-
“মল্লিকার বিয়ে সামনে আর তুই তোর সেটিং করছিস?”
“সেটিং? আমি? তাও এই হাঁদারামের সাথে? নো চান্স।”
রিয়াজ বলল-
“কেন আমার মধ্যে কী কমতি আছে শুনি।”
“তুই একটা হাঁদারাম। তুই একজন প্রতারক। তুই একজন বাজে পুরুষ। তোর নিয়তে ভেজাল আছে। আর কী শুনতে চাস বল।”
“এই এই তুমি রাগের মাথায় আমাকে যা তা বলো কেন? আমি প্রতারক, বাজে পুরুষ আর আমার নিয়তে ভেজাল আছে? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার?”
মেহরিন কিছু বলার আগেই আধুনিক্তা তার মুখ চেপে ধরে বলল-
“হয়েছে তো এইবার থাম। চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তো।”
আধুনিক্তা মেহরিনকে টানতে টানতে নিয়ে গেল। রিয়াজ ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইল। সে এখনো বুঝতে পারছে না মেহরিন ওকে এতকিছু কেন শোনালো।

ভার্সিটি শেষে আধুনিক্তা বেরিয়ে গেল ক্লাস থেকে। মাশরাতের সাথে দেখা করে বাসায় চলে যাবে। মল্লিকা নেই সে একা বসে থেকে কী করবে। সবার প্র্যাকটিস দেখলে তার মন খারাপ হয়ে যায়। বাস্কেটবল ক্লাবে গিয়ে দেখে মাশরাত সবাইকে খেলা বুঝিয়ে দিচ্ছে। আধুনিক্তা মুচকি হেসে এগিয়ে গেল। সবাই দৌড়ে চলে গেল খেলতে। মাশরাতের মনে হলো তাকে ছুঁয়ে ঠান্ডা বাতাস গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আধুনিক্তা এগিয়ে আসছে। মাশরাত মুচকি হাসলো।
“আসসালামুআলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কী ব্যাপার আজ এত খুশী কেন তুমি?”
আধুনিক্তা মনে মনে বলল- “প্রেমে পড়েছি তাই।” কিন্তু মাশরাতকে বলল-
“আমি তো সময়ই খুশী থাকি।”
“হাসিখুশী থাকা অনেক ভালো। মল্লিকা আজ আসে নি?”
“না ওকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তাই আসে নি।”
“যাক ভালো, ওকে বলে দিও আমাকে অবশ্যই দাওয়াত দিতে।”
“নিশ্চয়ই দিবে, আমরা সবাই ওর বিয়েতে অনেক এনজয় করবো।”
মাশরাত জবাবে হাসলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলে আধুনিক্তা মেহরিন আর মাশরাতকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। মাঠে দাঁড়িয়ে গাড়ি আসার অপেক্ষা করছে হঠাৎ তার মনে হলো কেও তাকে পেছন থেকে ডাকল। আধুনিক্তা ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে কবির নামের ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।
“কিছু বলবেন?”
“জ্বী, আপনি মল্লিকার বান্ধবী তাই না?”
“হ্যাঁ”
“ওর কী সত্যি বিয়ে ঠিক হচ্ছে?”
কবিরের কথায় কষ্ট মিশ্রিত পেল আধুনিক্তা। হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। কবির ঢোক গিলে মাথা চুলকালো। কী বলবে তার মাথা কাজ করছে না। আধুনিক্তা বলল-
“মল্লিকা আমাকে বলেছিল সে আর ভার্সিটি আসতে চায় না। কিন্তু ওর মামা চায় যত পর্যন্ত তার বিয়ে না হবে সে পড়াশোনা কন্টিনিউ করে যাক। সে আপনাকে অনেক ডিস্টার্ব করতো তাই না?”
মল্লিকা আহত দৃষ্টিতে আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা আবার বলল-
“সত্যি বলতে সে আপনাকে অনেক পছন্দ করতো। কিন্তু মেয়েটা বুঝে নি তার কান্ডগুলো আপনার বিরক্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
“সে কী বিয়ের জন্য রাজি?”
“হ্যাঁ, কিছুদিন আগে তাকে দেখতে এসেছিল একটা পরিবার৷ অনেক পছন্দ করে মল্লিকাকে। আজ ছেলেও আসবে। যদি পছন্দ হয়ে যায় ২ মাসের মধ্যে বিয়ে কনফার্ম।”
কবির মাথা নিচু করে ফেলল। কষ্ট হচ্ছে তার ভীষণ। আধুনিক্তা আবার বলল-
“এখন প্লিজ এইটা বলবেন না যে মল্লিকাকে আপনি পছন্দ করেন।”
কবির মাথা তুলে অবাক দৃষ্টিতে আধুনিক্তার দিকে তাকালো। কবিরের চাহনি দেখে আধুনিক্তা বললো-
“যখন আপনার পেছনে ঘুরতো আপনি বিরক্ত হতেন আর এখন যেহেতু আপনাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়েছে আর তার বিয়ে ঠিক হচ্ছে হঠাৎ আপনি তাকে মিস করা শুরু করেছেন। আপনি আপনাকে ঠিক মতো চিনি না কিন্তু আমার বান্ধবীকে চিনি। তার দিকটা ভেবেই আপনাকে বললাম কথাগুলো। এখন আসি।”
আধুনিক্তার গাড়ি এসে পড়েছে। সে দ্রুত হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। কবিরকে তার বিরক্ত লাগছে ভীষণ। কবির ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা কথাগুলো ভুল বলে নি। কবির লম্বা নিশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরলো।

আধুনিক্তা বাসায় পৌঁছে তারাতাড়ি তার ঘরে চলে গেল। আজ খুব রোদ বাহিরে। পরিবেশ প্রচন্ড গরম। গোসল করে বের হলো। এখন তার ভালো লাগছে। হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠল। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখে মাশরাত কল করেছে৷ মুচকি হেসে খাটে বসলো। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হয়ে রিসিভ করে কানে ধরল-
“হ্যালো”
“কল দিচ্ছিলাম তুমি ধরছো না কেন?”
“আমি বাথরুমে ছিলাম। কী হয়েছে?”
“ম্যাম আপনি বই ফেলে গিয়েছেন ক্লাসে।”
“ওও এই কথা তাহলে।”
“তুমি এত রিলাক্স কিভাবে থাকো? বই হারিয়ে গেলে কী করতে?”
“বই তে আমার নাম লিখা আছে। কেও ধরবে না আমার বই।”
“চেয়ারম্যানের নাতনি বলে সুযোগে সৎ ব্যবহার।”
“অফকোর্স স্যার অফকোর্স।”
মাশরাত হাসলো। আধুনিক্তাও হেসে বলল-
“বইটা যত্নে তোমার কাছে রেখে দাও। কাল আমাকে দিয়ে দিও।”
“তাহলে কী এখন বাসায় চলে যাবো?”
“তুমি এখনো ভার্সিটিতে? বন্ধ করে দিবে তো চলে যাও।”
“না আমি এখন মজুমদার ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আচ্ছা চলে যাই তাহলে।”
“এই এই দাঁড়াও, তুমি বাসার সামনে এসেছো?”
“হ্যাঁ ভাবলাম বই দিয়ে যাই। যেহেতু তুমি কাল নিবে তাই কালই দিব।”
“প্লিজ প্লিজ দাঁড়াও আমি আসছি।”
“কাল নিও বই”
“না আমার পড়তে হবে রাতে।”
মাশরাত বই দেখে হাসলো। এটা তো আধুনিক্তার প্রিয় গল্পের বই। মেয়েটা পাগল, জিজ্ঞেসও করল না কোন বই। মাশরাত আধুনিক্তাকে বলল নিচে আসতে। আধুনিক্তা মোবাইল রেখেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হলো। ভালো যে বাবা আর দাদাই বাসায় নেই নাহলে ১০১ টা প্রশ্ন করতো। মা আর দাদী হয় তো যার যার ঘরে আধুনিক্তা চুপি চুপি বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। মেইন দরজা খুলে মাশরাতকে দেখে তার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল। রোদের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক্তা। রোদের আলোয় তার বাদামী রং এর চোখ আরো ঝলমল করছে। তার চুলগুলোও চিকচিক করছে। মাশরাতের হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেল। আধুনিক্তাকে দেখলে আজকাল সে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। আধুনিক্তা ধীরে ধীরে হেটে এসে মাশরাতের বরাবর দাঁড়াল। মাশরাতের চোখ গেল আধুনিক্তার পায়ের দিকে। জুতা না পড়েই মেয়েটা এসে পড়েছে৷ মাশরাত ভ্রু কুঁচকে বলল-
“জুতা কোথায় তোমার?”
আধুনিক্তা নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। রোদের কারণে মাটি আগুনের মতো গরম হয়ে আছে। আধুনিক্তা মাশরাতকে দেখে হারিয়ে গিয়েছিল একদম। আধুনিক্তা হঠাৎ লাফিয়ে উঠল-
“আউচ মাটি অনেক গরম।”
“আরে তুমি লাফাচ্ছো কেন?”
“আমার পা পুড়ে যাচ্ছে।”
“এট লিস্ট জুতা পড়ে বের হতে৷ যাও জুতা পড়ে আসো।”
“আবার যাবো?”
“হ্যাঁ নাহলে দাঁড়াতে পারবে না ঠিক মতো।”
আধুনিক্তা লাফিয়ে লাফিয়ে কথা বলছে। মাশরাত না হেসে পারলো না। নিজের খুলে বলল-
“আচ্ছা আমার জুতার উপর দাঁড়াও।”
“তোমার কষ্ট হবে তো।”
“হবে না তুমি দাঁড়াও।”
আধুনিক্তা না বোধক মাথা নাড়ালো। মাশরাত চোখ ছোটো ছোটো করে আধুনিক্তার কাঁধ ধরে তার জুতার উপর দাঁড় করালো। আধুনিক্তা মাশরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে গেল। তার কপালে ছোটো ছোটো চুলগুলো এসে আশ্রয় নিয়েছে। মাশরাত মুচকি হেসে আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আধুনিক্তা ঢোক গিলল। তার হৃদয়ে বিস্ফোরণ হওয়ার মতো অবস্থা। হঠাৎ মাশরাত তার কারো স্পর্শ পেলো। আধুনিক্তা মাশরাতের পেছনে থাকা মানুষটাকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলল।

চলবে…….

[আজ পর্ব একটু ছোটো করে দিলাম আগামীকাল পর্ব বড়ো করে দেওয়ার চেষ্টা করব। ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন প্লিজ❤️❤️]

আগের পর্বের লিংক ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here