তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_২৬

0
2079

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৬

“যাতে তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাও। আর হ্যাঁ তুমি ভাবতে পারো আমি তোমার আর আধুনিক্তার ভালোবাসা কিনে নিচ্ছি।”
মাশরাত মুখ শক্ত করে ফেলল। রাগে তার গা জ্বলছে। আধুনিক্তার বাবা বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। মাশরাত কোনো জবাব দিচ্ছে না। সামনে বসে থাকা মানুষটার প্রতি যতটুকুও সম্মান ছিল মনে তাও আজ শেষ হয়ে গেল। আধুনিক্তার বাবা ঘড়ি দেখে বলল-
“আমি তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। ভেবে বলো কি চাও।”
মাশরাত মাথা নিচু করে ফেলল। সে তার রাগ দমাতে পারছে না। আধুনিক্তার বাবা নোটের একটা বান্ডেল হাতে নিয়ে বলল-
“এত টাকা কামাতে তোমার ১০ বছর লেগে যাবে। আমি তোমাকে ১০ মিনিটে কোটিপতি করে দিতে পারি।”
মাশরাত মাথা তুলে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“আপনি নিজেকে কি ভাবেন?”
“আমি আমার রাজ্যের রাজা।”
“তো নিজের রাজ্য নিয়েই থাকুন। আমার দুনিয়া কেন বরবাদ করতে চাচ্ছেন? আমি কি কখনো আপনাকে বলিছি যে আমি আধুনিক্তাকে বিয়ে করতে চাই বা তাকে নিয়ে পালিয়ে যাব? আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আপনার মন জয় করার। আজ বুঝে গেলাম আমার পক্ষে এখন এটা সম্ভব না। আজ আমার ওয়াদা রইল আমি আর কখনো আধুনিক্তার সাথে কথা বলবো না। মিস্টার মজুমদার আপনি কি জানেন আপনি নিজের অপমান করছেন? কারণ আপনি ভালো মতো জানেন আমি লোভী না। আপনি আধুনিক্তার ভালোবাসা কিনতে চাচ্ছেন? নিজের মেয়ের সাথে এমনটা করতে পারে একজন বাবা?”
“শুনো, আমি সবসময় আমার মেয়ের ভালো চেয়েছি। কথায় আছে, ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’ তুমি কি শিওর এখন যে পরিস্থিতিতে তুমি আছো ২/৩ বছর পর সেখানেই থাকবে? যদি আগের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়ে যাও তখন কি করবে? ফুটপাতে আসার পর তো আমার মেয়েকেই কষ্ট করতে হবে৷”
“আপনার যদি মনে হয় আমি ভবিষ্যতে ফুটপাতে এসে পরবো তাহলে দরকার নেই আধুনিক্তাকে আমার। তাকে যার সাথে মন চায় আপনি তার সাথে বিয়ে দিন।”
“সেটা তো দিবোই, আমি আজই একটা ছেলেকে পছন্দ করলাম। বিয়ে তো তার সাথে হবে আধুনিক্তার।”
“ঠিক আছে, আজ আসি তাহলে। আর হ্যাঁ আপনার টাকা আপনাকেই মোবারক। এখন আমার উপর জেদ করে আমার বস এর ক্ষতি করবেন না প্লিজ। মানুষটা অনেক ভালো। অনেক টাকা লোন নিয়েছে এই প্রজেক্ট এর জন্য৷”
“ডোন্ট ওয়ারি আমি এতটাও খারাপ নই।”
মাশরাত ঘুরেই হাঁটা ধরলো। বাবা এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। ভাবছে মাশরাত ফিরে আসবে না-কি। কিন্তু না, মাশরাত আসে নি। সে দরজা খুলে হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বাবা হঠাৎ হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে নোটের বান্ডেলের মাঝ থেকে টেনে টাকা বের করলো৷ টাকা নই এইগুলো সাদা কাগজ।

মাশরাত দ্রুত হেটে ড্রইংরুমে গেল। আধুনিক্তা তার মা, মালিহা, মাশরাতের মা, দাদী-দাদাই বসে কথা বলছে। এই পরিবারের মানুষগুলো খুব ভালো। মাশরাতের বড্ড খারাপ লাগছে আজ। সবার সামনে কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছে না। মাশরাতকে দেখে আধুনিক্তা মাথা তুলে তাকাল। মাশরাতের চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে কোনো গন্ডগোল হয়েছে। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে বলল-
“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?”
“তেমন কিছু না, আম্মু বস এর কল এসেছিল৷ আমার আর্জেন্ট অফিস যেতে হবে। চলো বেরিয়ে পরি। তোমাদের বাসায় দিয়ে আমি অফিস চলে যাব।”
মা আর মালিহা কিছু বলল না। মায়ের মনে হচ্ছে মিথ্যে বলছে সে শুধু এখন চলে যেতে চায়। আধুনিক্তা মন খারাপ করে বলল-
“এখনই কল আসা দরকার ছিল! কিছুক্ষণ পর গেলে হয় না?”
“না আমাদের যেতে হবে।”
মা আর মালিহা দাঁড়িয়ে গেল। দাদী বললেন-
“দাদুভাই এত কাজ করলে হবে? তোমার বস-কে বলো ১/২ ঘন্টা পর আসছো।”
“না দাদী, আসলে বস এর স্ত্রী সন্তান তো হসপিটালে এখন। আমারই অফিস এর কাজ সামলাতে হচ্ছে।”
তখনই আধুনিক্তার বাবা আসলো। মাশরাতের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলল-
“কিছুক্ষণ পর যাও কিছু কথা আছে।”
“আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না। আমি এখনই যাব।”
“ঠিক আছে তুমি যাও। তোমার মা আর বোন থাকুক।”
“না আমার মা আর বোন থাকবে না।”
মাশরাতের কন্ঠে রাগী ভাবটা খুঁজে পেল সবাই। আধুনিক্তা মাশরাতের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“কি হয়েছে মাশরাত? তুমি কিছু তো লুকাচ্ছো।”
“আমি কিছু লুকাচ্ছি না। আম্মু, মালিহা চলো আমাদের যেতে হবে।”
“মাশরাত বলো কি হয়েছে?”
“বললাম তো কিছু হয় নি। একবার বললে শুনো না?”
মাশরাত বেশ রাগান্বিত কন্ঠে বলল কথাটা। আধুনিক্তা সাথে সাথে মাশরাতের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে ফেলল। মাশরাতের ব্যবহারে ড্রইংরুমে থাকা প্রতিটা মানুষ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আধুনিক্তার গলা ধরে আসছে। হঠাৎ ঝাড়ি শুনে সে ভয় পেয়ে গিয়েছে। মাশরাতের হাত ধরে আধুনিক্তার বাবা নিজের দিকে ঘুরিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“এখনই তুমি আমার সামনে আমার মেয়ের সাথে এইভাবে কথা বলছো। বিয়ের পর কি করবে শুনি?”
মাশরাতের সাথে সাথে সবাই চমকে উঠলো আধুনিক্তার বাবার কথা শুনে। মাশরাত তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তার বাবা আবার বলল-
“তোমার জান বের করে ফেলল আমার মেয়ের সাথে আবার কোনোদিন এমন ব্যবহার করলে। আমি তো ভাবলাম তোমার মায়ের সাথে আজ কথা বলে তোমাদের বিয়ের ডেট একেবারে ফিক্স করে ফেলি। কিন্তু এখন তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার মেয়ের চয়েজে গন্ডগোল আছে।”
মাশরাত দুবার চোখের পলক ফেলল। আধুনিক্তার দ্রুত হেটে এসে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“আব্বু কি বললে তুমি? আজ তুমি আন্টির সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলতে?”
“হ্যাঁ, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও তোমার জন্য ঠিক না। দেখো না কেমন ব্যবহার করছে।”
“আব্বু না ভুল ভাবছো। ও কোনোদিন আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে না। হয় তো কোনো বিষয় নিয়ে টেনশন করছে তাই এমন করলো। আমি ওকে ভালো মতো চিনি।”
আধুনিক্তার বাবা চোখ তুলে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত এখনো শকড। বাবা মাশরাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“টাকা তো সবাই কামাতে পারে। এখন সেটা হালাল হোক বা হারাম। সবই নিজের মানসিকতার নির্ভর করে। আপনার পরিবারকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আপনার মনে আমার মেয়ের প্রতি এত স্নেহ মমতা দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো। আমার স্ত্রী একবার আমাকে বলেছিল, ‘তুমি যদি খারাপ হতে তবুও তোমার সংসার ছেড়ে আমি যেতাম না কারণ আমার শ্বাশুড়ি মা আর শ্বশুর আব্বু অনেক ভালোবাসে আমাকে’ সেদিনই আমি ভেবেছিলাম, আমার মেয়ের জন্য আমার বাবা মার মতোই শ্বাশুড়ি শ্বশুর খুঁজতে হবে। যাতে তার স্বামী কোনোদিন তার সাথে বাজে ব্যবহার করলেও তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি প্রতিবাদ করে।”
আধুনিক্তার বাবা আবার মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত এখনো শকড। বাবা হেসে মাশরাতের কিছুটা কাছে গিয়ে চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল-
“এখন ঘোর থেকে বের হয়ে আমার কথা শুনো। তোমার উপর আমার বিশ্বাস নেই। ভবিষ্যতে হবে কিনা জানি না। কিন্তু তোমার সততা আর মানসিকতা আমার পছন্দ হয়েছে। আমি রাজি হয়েছি তোমার মা আর বোনের জন্য। কারণ আমার এইটুকু বিশ্বাস আছে উনারা কখনো আমার মেয়েকে কষ্ট দিবে না।”
“কষ্ট তো আমিও দিব না। আপনিই আমাকে অবিশ্বাস করেন সবসময়।”
বাবা শব্দ করে হেসে উঠলো। আধুনিক্তা হঠাৎ বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। বাবা মুচকি হেসে আধুনিক্তার মাথায় হাত রাখলো। মাশরাত বলল-
“কিন্তু স্যার আমার বোনের বিয়ে না হওয়ার পর্যন্ত আমি বিয়ে করতে পারবো না।”
মালিহা কপালে হাত দিয়ে দিলো। আধুনিক্তা বাবাকে ছেড়ে মাশরাতের দিকে ঘুরে তাকাল। আধুনিক্তার চাহনি দেখে মাশরাত বলল-
“এভাবে দেখে লাভ নেই। আমার বোনের ভবিষ্যতের কথা আমার আগে চিন্তা করতে হবে।”
“মালিহা আমাকে বলেছে সে নিজস্ব একটা আর্ট স্কুল খুলতে চায়। সেটা না হওয়ার পর্যন্ত বিয়ে করবে না। তুমি কি চাও আমি আরো ২/৩ বছর অপেক্ষা করি? আর তুমি, তুমি তো আরো বুড়ো হয়ে যাবে।”
“তুমি আবার আমার বয়স নিয়ে ছিনিমিনি খেলছো।”
আধুনিক্তা কিছু বলার আগেই মালিহা বলল-
“ভাই দোহাই দিচ্ছি আর আমার বিয়ে নিয়ে ভাবিস না প্লিজ।”
“কিন্তু তুই..”
মাশরাত পুরো কথা শেষ করার আগেই আধুনিক্তার বাবা বলল-
“মাশরাত, মানুষের ভাগ্যে কি লিখা থাকে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেও জানে না। মালিহার ভাগ্যে যখন বিয়ে লিখা আছে তখনই হবে। আর তোমার আর আধুনিক্তার বিয়ে এখন না। আমাদের প্রজেক্ট কমপ্লিট হোক, তারপর।”
“জি স্যার সেটা বুঝলাম। আসলে আমার একটা মাত্র বোন। ওর ভবিষ্যত নিয়েই আমার টেনশন হয়।”
মালিহা বিরক্তি নিয়ে বলল-
“ভাবতে ভাবতে আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছিস। এইবার নিজের জীবন নিয়ে ভাব।”
মাশরাতের মা বলল-
“ভাই রাজি হয়েছে শুনে আজ আমি খুব খুশী। তুই এইবার এই খুশীতে জল ফেলিস না। মালিহার সাথে সাথে তার ভাগ্যও বড়ো হবে ইন শাহ আল্লাহ।”
তখনই আরমান এসে বলল-
“মাম্মামের বিয়ে হবে মাশরাতের সাথে?”
মালিহা হেসে বলল-
“হ্যাঁ, আচ্ছা আরমান বিয়ের পর তো তোমার মাম্মাম আমাদের বাসায় চলে যাবে তু্মি তখন কি করবে?”
আরমান মুখ লটকিয়ে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। আধুনিক্তার হঠাৎ খারাপ লাগছে। এই বাচ্চাটাকে না দেখলে তার দিন শুরু হয় না। আধুনিক্তা হাঁটু গেড়ে বসে আরমানের হাতে চুমু দিয়ে বলল-
“আমি তো এখন যাচ্ছি না ছোটু। অনেক দেরি আছে আমাকে যেতে।”
“বিয়ে করে অন্য বাসায় কেন চলে যেতে হয়?”
“কারণ এটাই নিয়ম।”
“মানে যে যাকে বিয়ে করবে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে এসে পরবে?”
আরমান হঠাৎ লজ্জামাখা কন্ঠে বলল-
“তাহলে কি আমি মালিহা আপুকে বিয়ে করতে পারবো?”
সবাই আরমানের কথা শুনে সবাই কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পরেই সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো। মালিহা দ্রুত এগিয়েে এসে আরমানের হাত ধরে বলল-
“তুমি আমাকে বিয়ে করবে আরমান?”
আরমান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। মালিহা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলল-
“যাক অবশেষে আমারো বিয়ে ঠিক হলো।”
আধুনিক্তা আরমানকে কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে বলল-
“ঠিক আছে মালিহা যৌতুক কি দিবে বলো।”
“আমার ভাইকেই তো দিচ্ছি আর কিছু দিব না।”
সবাই হেসে উঠলো। মাশরাত হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছে। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আধুনিক্তার বাবা রাজি হয়ে গিয়েছে। বাবা মাশরাতের সামনে এসে ফিসফিস করে বলল-
“যদি তুমি রাজি হয়ে যেতে অফারে তবুও টাকা পেতে না৷ কারণ আমার মাথা খারাপ না যো আমার কষ্ট করে কামাই করা টাকা তোমাকে দিয়ে দিব।”
“তাহলে এত টাকা নিয়ে অহংকার কেন করলেন?”
“অহংকার না টেস্ট”
বাবা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে মাশরাতের দিকে দিয়ে বলল-
“এই নাও টাকা। মাত্র সেই এক হাজারের বান্ডেল থেকে বের করে নিয়ে আসলাম।”
মাশরাত কাগজটা হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তার মানে আপনি বান্ডেলের ভেতর কাগজ লুকিয়ে রেখেছিলেন?”
“হ্যাঁ, তুমি ব্রিফকেস নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর সারপ্রাইজ পেতে।”
“আপনার মতো হতে চেয়েছিলাম এক সময়৷ মানে বিজনেসের এর ব্যাপারে আর কি। এখন ভাবছি হবো কি হবো না।”
“আমার মতো হতে হলে তোমাকে আবার জন্ম নিতে হবে।”
“না থাক আমি আমার মতোই হতে চাই।”
বাবা শব্দ করে হেসে উঠলো। মাশরাত কিছুক্ষণ হাসিমুখে তাকিয়ে থেকে বলল-
“বিজনেসম্যান আপনার মতো না হলেও আপনার মতো বাবা হওয়ার চেষ্টা করবো। হতে পারে আপনার ভালো কিছু করার রাস্তা গুলো আঁকাবাকা কিন্তু আপনি বাবা হিসেবে খুব ভালো। সত্যি তো, সন্তানদের জন্য সব করা উত্তম। কারণ বাবা মা সন্তানের খারাপ চায় না।”
বাবা মুচকি হেসে মাশরাতের কাঁধে হাত রাখলো। আধুনিক্তা তাদের দুজনকে দেখে নিরবে চোখের পানি মুছলো। তার জীবনের এই দুটো মানুষই যে কোনো সীমা অতিক্রম করে ফেলতে পারে তার জন্য। আধুনিক্তার নিজেকে আজ বেশ ভাগ্যমতী মনে হচ্ছে।

পরেরদিন….
মাশরাতের মনে হচ্ছে তার কানের কাছে পাখি কিচির-মিচির শব্দ করছে। চোখ খুলে উঠে বসলো। জানালায় দু’টো চড়ুই পাখি বসে আছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা খুনসুটি ঝগড়া করছে। মাশরাত হাসলো, পাখিরা ঝগড়া করে? হয় তো করে। আমরা তাদের অনুভূতি বুঝতে পারবো না৷ মাশরাত আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নামলো। আজ তার কাছে সবকিছু নতুন নতুন লাগছে। আলমারি থেকে নতুন স্যুট বের করে বিছানায় রেখে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। আজ তার গান গাইতে ইচ্ছে করছে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে মনে যে গান মনে আসছে গাইছে৷ গান গেয়ে নাচতে নাচতে বাথরুম থেকে বের হলো। সিটি বাজাতে বাজাতে জামা পড়ে চুল মুছে আছড়িয়ে নিলো। এখন বাজে ৭ টা ১০, আধুনিক্তা হয় তো ভার্সিটির জন্য রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে। মাশরাত অফিস ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। ডাইনিং টেবিলে মালিহা চিন্তিত চেহারা বানিয়ে বসে আছে৷ মালিহা তার মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে চেয়ারে বসলো। মালিহা ছোটো ছোটো চোখ করে মালিহার দিকে তাকিয়ে বলল-
“কি সমস্যা তোর?”
“তোর ভাবনা নিয়ে সমস্যা। কি উল্টা পাল্টা ভাবছিস বল তো।”
“তোর কি! তোকে বলবো কেন? আর তুই আজ নায়ক সেজে কোথায় যাচ্ছিস?”
“লাগছে না সাউথ ইন্ডিয়ান হিরোদের মতো? আজ নায়িকাকে পটাতে যাচ্ছি।”
তোর নায়িকা অলরেডি পটে আছে আর ঢং করতে হবে না। আচ্ছা আজ কি বাসায় আসতে তোর দেরি হবে?”
“হ্যাঁ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি যাব বস আর আধুনিক্তার বাবার সাথে, কেন?”
“না আসলে আম্মুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব। আম্মুর না-কি কোমড়ের ব্যাথা বাড়ছে।”
“তাহলে আমি তারাতাড়ি আসবো নি। তুই তো আজ আর্ট মিউজিয়ামে যেতে চেয়েছিলি। আমি আম্মুকে নিয়ে যাব নি।”
“আরে আজ না, আগামীকাল যাব। আসলে আমার কাছে টাকা নেই। তাই তোকে বললাম।”
“পাগল, আমার কাছে চাওয়ার কি আছে। ড্রয়ারে টাকা আছে সেখান থেকে নিয়ে নিস।”
“আচ্ছা”
তখনই মা আসলো নাস্তা নিয়ে৷ মাশরাত তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে মায়ের কাছ থেকে নাস্তার ট্রে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে মাকে ধরে বসালো।
“তোমার কোমড় ব্যাথা তুমি কেন কাজ করছো?”
“গতকাল রাতে ওয়াটার ব্যাগ দিয়েছি কোমড়ে। এখন আমি একদম ঠিক আছি তুই চিন্তা করিস না।”
“বিশ্রাম না করে সারাদিন কাজ করো চর আমাদের বলো চিন্তা করতে না।”
“আরে বাবা থাম এইবার৷ আধুনিক্তা তো আসছেই, তখন না হয় আরাম করবো।”
“ইশশ ও তো নবাবজাদী। আমার ২/৩ জন কাজের মানুষ খুঁজতে হবে এইবার।”
মা হাসলো, তিনজন মিলে নাস্তা করে নিলো৷ মাশরাত অফিস এর ফাইলগুলো চেক করে বাসা থেকে বের হলো। আধুনিক্তাকে কল দিচ্ছে কিন্তু আধুনিক্তা ধরছে না। মাশরাত ভাবলো হয় তো আধুনিক্তা ক্লাস করছে। কিছু রাস্তা হেটে রিকশা নিয়ে অফিস চলে গেল। সবাই মাশরাতকে দেখে কানাকানি করছে। শায়লা এসে মাশরাতকে কংগ্রেস জানালো। নাশরাত অবাক সবাই জানলো কিভাবে তার আর আধুনিক্তার ব্যাপারে।
“শায়লা তোমার কি করে জানলে এইসব?”
“বস বলেছেন, আর হ্যাঁ তুমি আমাকে বলো নি এর জন্য আমি রাগ। ইনভেস্টর স্যারের মেয়ে তোমার প্রেমিকা আমাকে বলো নি কেন?”
“ওকে ম্যাম আই এম সরি, এবার বলো সবাই কানাকানি করছে কেন?”
“কারণ সবাই জ্বলে পুড়ে ছাই তুমি এত তীর কেন মারছো। প্রথম এমডির প্রমোশন আর এখন ইনভেস্টরের মেয়ের সাথে বিয়ে।”
“আমার ভাগ্যে এসব থাকলে আমি কি করতে পারি?”
“বাদ দাও, মানুষের কাজই অন্যের ভালো সহ্য করতে না পারা।”
“ইউ নো হোয়াট, তোমার মতো একজন বন্ধু পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি।”
“থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ”
“ঠিক আছে আমি আসছি বস এর সাথে দেখা করে।”
শায়লা মাথা নাড়াল। মাশরাত বস এর কেবিনে দিকে গেল। বস বসে ল্যাপটপ দেখছে। মাশরাত পারমিশন নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে টেবিলের উপর রাখতেই বস বলল ইনভেস্টর স্যারের কেবিনে রেখে আসতে। মাশরাত ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেল। আধুনিক্তার বাবা এখনো আসে নি। মাশরাত ভেতরে ঢুকে টেবিলের উপর ফাইল রেখে ঘুরতেই তার মনে হলো কেও চেয়ারে বসে আছে। মাশরাত আবার ঘুরলো। চেয়ার ঘুরিয়ে কেও তো বসে আছে।
“কে বসে আছে?”
মাশরাত প্রশ্নের জবাব পেল না৷ দ্রুত হেটে গিয়ে চেয়ারের সামনে দাঁড়াতেই তার চোখ কপালে উঠে গেল।

চলবে…..

[বেচারা বাবা গতকাল কতকিছু শুনেছিল? এমনটাই কিছু আমার মাথায় এসেছিল তাই লিখেছিলাম। যারা যারা তাবাসসুমের অপেক্ষায় আছেন তাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করার অনুরোধ রইল। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here