তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা 19.

0
1912

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
19.
#WriterঃMousumi_Akter

এই প্রথম বার বিহান ভাই এর বালিশে জায়গা হলো আমার।বিহান আমাকে উনার বালিশে সুইয়ে দিলেন।জানিনা এভাবে কি দেখছেন উনি।উনার চাহনি তে কোনো লালসা নেই আছে শুধু দেখার তৃষ্ণা।প্রতিটি মুহূর্ত যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে আমার।ভালবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার আনন্দ এই প্রথমবার অনুভব করতে পারলাম।

উনার গেঞ্জি খাঁমচে ধরে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।উনি আমার শরীরের উপোর ঝুঁকে মুখের কাছে মুখ এনে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন।ইস কি শুভ্রতা,কি মুগ্ধতা উনার মাঝে, ঠোঁটে হালকা হাসি।উনার এই হাসি টাই আমাকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট।উনি আমাকে সারাজীবনের জন্য বেঁধে ফেললেন অদ্ভুত এক মায়াতে।এ মায়া কাটিয়ে ওঠার সাধ্য আর আমার নেই।
সেই ভয়ানক রাগি মানুষ টার মুখের অদল ই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।এই বিহান ভাই আর সেই বিহান ভাই কে মেলাতে পারছি না।উনাকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছা করছে কয়েক জনম এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই।

বিহান ভাই এর মুখে কোনো কথা নেই।উনি শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমি সব জড়তা ভেঙে বললাম,

“বিহান ভাই এভাবে কি দেখছেন।”

“কেনো লজ্জা লাগছে পুচকি।তোকে দেখছি”

“লজ্জায় চোখ উনার দিক থেকে সরিয়ে নিয়ে বললাম সেই ছোট বেলা থেকেই তো দেখছেন।”

“বউ হলে তোকে এত বেশী লাজুক লাগবে আগে জানতাম না।জানলে আগের জন্মেই বিয়ে করে রাখতাম”

লজ্জায় আরো বেশী চুপ হয়ে গেলাম।উনার দিকে তাকাতেই পারছি না।আমার মাঝে এত বেশী লাজুকতা দেখে বলেন,,

“ইস এত লজ্জা!তুই লজ্জা পেলেও এত টা সুন্দর লাগে পাগলি।এই লজ্জার সৌন্দর্য আমাকে পাগল করে তুলেছে। আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতে দিবো না এই ভয়ানক সৌন্দর্য।এই সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার একমাত্র আমার ই আছে।আমি অনন্তকাল দেখেও ক্লান্ত হবো না।আমি শতভাগ নিশ্চিত যে দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে।তোকে নিয়ে গভীর স্বপ্নের শহরে হারাবে।আমি এটা মেনে নিতে পারবো না। বলেই নাক দিয়ে নাকে হালকা একটা ঘষা দিলেন”

লজ্জায় আরো বেশী জড় সড় হয়ে গেলাম।পুরা সময় টায় লজ্জাময় ছিলো।
বিহান ভাই গালে, মুখে আলতো আলতো চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছিলেন।আমি চোখ বন্ধ করে উনার দেওয়া ভালবাসার শিহরণ অনুভব করছিলাম।উনি এভাবে চুমুও দিতে পারেন। আগে ভাবতাম উনার সাথে বিয়ে হলে থাপ্পড় দিয়ে গুড নাইট বলবে আরেক থাপ্পড় দিয়ে গুড মর্নিং বলবেন।কয়েক শত চুমু দিয়েছেন তার হিসাব নেই।উনার চুমু তে অদ্ভুত এক পবিত্রতা।কোনো মাদকতার নেশা পাচ্ছিলাম না।আলতো ভাবে ঠোঁট স্পর্শ করছিলেন।

ইস কি লজ্জা!

বিহান ভাই এক গুচ্ছ কালো গোলাপ আমাকে দিয়ে বলেন, তোর পছন্দের কালো গোলাপ।কিন্ত আমি একটা লাল গোলাপ ও এনেছি। আমি আবার ও চমকে গেলাম মানুষ সব সময় মুড ভালো করার জন্য পারফেক্ট।এত রাতে কালো গোলাপ কোথা থেকে আনলেন।এত ঝামেলার মাঝে এটাও মনে রেখেছেন।উনি কি প্রতিটি মূহুর্তে আমাকে এভাবেই সারপ্রাইজ দিয়ে যাবেন।আমি বেড থেকে ওঠার চেষ্টা করলাম উনার দেওয়া গোলাপ নেওয়ার জন্য।উনি ঠোঁট মুখের ইশারাতে বুঝিয়ে দিলেন উঠতে হবে না।

“আমি বিহান ভাই কে বললাম কোথায় ফুল দিবেন না। ”

“হুম”

“কই দেন”

“উহু এভাবে না”

“কিভাবে?”

বিহান ভাই গোলাপ টা মুখে নিয়ে একটু একটু করে মুখের কাছে এগিয়ে এসে ঠোঁটের উপোর রাখলেন। উনার আমাকে এভাবে ফুল উপহার দেওয়াটা জাস্ট এমাজিং ছিলো।আমি ভাবতেই পারি নি এত টা রোমান্টিক ভাবে দিবেন।ফুল টা রেখে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,,

দিয়া তোর শরীরের গন্ধ টা ভারী মিষ্টি। যে কোনো সুগন্ধী কে হার মানায়।তোর চুল এর ঢেউ এ মন হারিয়েছে অসংখ্য বার। আমি যে কত বার তোর ভেজা চুল দেখে মুগ্ধ হয়েছি বলে বোঝানো যাবে না।পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ট সুন্দর নারী কে আমার জীবনে পেয়েছি।

আমি বিহান ভাই কে বললাম আমি তো কালো বিহান ভাই।আমাকে সুন্দর বলছেন যে।

আমার চোখ দিয়ে তোকে আল্লাহ দেখার সুযোগ করে দিন তাহলেই বুঝবি আমার চোখে কতটা সুন্দর তুই।কোনো ছেলেই চোখে ভাল না লাগলে কাউকে ভালবাসতে পারেনা।তোকে যদি আমার চোখে সুন্দর না লাগতো তাহলে আমিও ভালবাসতে পারতাম না।নিশ্চয় এখন ভাববি আমিও সুন্দরের পূজারী।হ্যাঁ আমিও সুন্দরের পূজারী তবে অন্য কারো না আমার এই পুচকি পাখি টার।দিয়া তুই পুচকি মানুষ তাই প্রেম আর ভালবাসা বুঝবি না।

কেনো বুঝবো না।প্রেম আর ভালবাসা তো এক ই জিনিস।

মোটেও না।প্রেম হলো কাউকে দেখেই চট করেই প্রেমে পড়া।মানুষ মানুষের প্রেমে পড়ে নির্দিষ্ট কোনো কারণে।হয় তার রুপ,গুন,হাসি,প্রাচুর্য কোন না কারণ দেখে।কাউকে যদি বলা হয় ভাল বাসার মানুষ টার কি দেখে প্রেমে পড়ে পড়েছিলে সে যদি নির্দিষ্ট একটা কারণ বলতে পারে তাহলে তার টা প্রেম ভালবাসা নয়।একটা মোহ মাত্র।মোহ একদিন না একদিন কেটে যাবেই।

আর ভালবাসা

ভালবাসা হলো মায়া।যেটা মায়া থেকে জন্ম হয়।যখন কাউকে ভাল লাগার নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুজে পাওয়া যায় না।যাকে অকারণেই ভালবাসা যায়।যাকে ভালবাসার জন্য কোনো কারণ লাগে না।কেউ কাউকে ভালবাসলে তাকে ভালবাসা বা ভাল লাগার জন্য একটা কারণ ও দেখাতে পারে না।ভালবাসা এমনি তেই হয়ে যায়।সত্যিকারের ভালবাসা একটা মানুষের সংস্পর্শে থাকতে থাকতে একটু একটু করে জমতে জমতে বিশাল আকার ধারণ করে।মন কে ভয়ানক ভাবে আক্রমণ করে।পৃথিবীর সব কন্ট্রোল করা গেলেও মন কে আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না।আমি তোকে অনুভূতি টা বলে এভাবে বোঝাতে পারবো না।

আমি অবাক হয়ে গেলাম।একটা মানুষ এতটা বুঝাতে পারে।উনার কথা গুলো ভাবতে ভাবতে, উনার বুকে মাথা রেখে সেদিন ঘুমিয়ে গেলাম।

পরের দিন খুব ভোরে উঠার ট্রাই করলাম।বিহান ভাই শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন। আমি বললাম, ছাড়ুন আমি বললাম রুটিন আছে।

বিহান ভাই ঘুম ঘুম চোখে বলেন,আজকের জন্য কোনো রুটিন নেই।

আমি কিন্তু রোজ ফাঁকি দিবো।

হুম দিও! এখন কোনো কথা নয় ঘুমোও।

উনি আমাকে তুমি বললেন। ঘুমের ঘোরেই তুমি বলে ফেললেন।কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো ঘুমোচ্ছেন।উনার এই তুমি ডাক টা অন্য রকম লাগছে।

কোনভাবে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে গুন গুন গান গাইতে গাইতে রান্নাঘরে গেলাম।

রাঁন্নাঘরে মামি নাস্তা বানাচ্ছেন।আমি মামির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মামি বলে কিরে দিয়া আজ তোকে বেশ অন্য রকম লাগছে।এত স্নিগ্ধ লাগছে যে।মন খুব ভাল দেখাচ্ছে আজ কি গান গাইছিলি। বিভোর ভাই ও হাজির বাজারের ব্যাগ নিতে এসছে।মামা আর বিহান ভাই বাড়িতে থাকে না তাই বিহান ভাই দের বাজার বিভোর ভাই ই করে থাকেন।আমি মামি কে বললাম ওই গান গাইছিলাম কি যেনো মামি ভুলেই গেছি।

বিভোর ভাই আমাকে বলে দিয়া তোর বর কোথায়?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম কি বললেন।

বললাম তোর সেই বর টি কোথায় বোন।

আপনি বোন কে এসব বলছেন।আপনার লজ্জা করছে না।

বিহান যে ফুফাতো বোন বিয়ে করলো বিনা নোটিশে বিয়ে করলো।বিয়ের জন্য তুলকালাম কান্ড করলো তার যদি লজ্জা না করে আমার কিসের লজ্জা।
বিহান যে আমার বোন বিয়ে করেছে তার জন্য আমাকে খোরপোশ দিতে হবে।

আপনার বোন কে কি বাচ্চা সহ ডিভোর্স দিছে যে খোরপোশ চাইছেন।

বিয়ে করেছে তার যৌতুক হিসাবে বিহানের শালি কে চাই বলেই নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ পিট পিট করে তাকালেন।

এইদিকে মামি বলে ওঠেন দিয়া বিহানের সাথে কি রাগারাগি ঠিক হয়েছে।আমি বললাম হ্যাঁ মামি।বিভোর ভাই বলেন বোন কিভাবে রাগারাগি ঠিক হয়েছে রে।বল একটু শুনি।

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,, জানো মামি কাল রাতে কি হয়েছে।

মামি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে বলেন কি।

কাল রাতে তোমার ছেলে।

এমন সময় বিহান ভাই রান্নাঘরের দরজায় প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে কেশে উঠলেন।

বিভোর ভাই বিহানের মুড দেখে বুঝে যান বিহান ভাই এর কাশির কারণ আমাকে থামানো।

বিভোর ভাই বিহান এর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক মুখভঙ্গী হাসি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আমি ব্যাপার টা বুঝে গেছি।

সাদা ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে বাজারের ব্যাগ হাতে বিভোর ভাই বেরিয়েছেন।ফর্সার কমতি নেই উনার মাঝে সব সময় একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করে।গেটের বাইরে যেতেই রিয়ার সাথে ধাক্কা খেলেন বিভোর ভাই।রিয়া ও ভেতরে আসছিলো বিভোর ভাই ও বাইরে যাচ্ছিলেন এমন সময় দুজনের সংঘর্ষ হয়ে গেলো।কি সাংঘাতিক ভাবে ধাক্কা খেলো দুজনে।শাহরূখ আর প্রিতি জিনতার সিনেমাটিক সিন।রিয়া নিজেকে সামলাইতে গিয়ে বিভোর ভাই এর গেঞ্জি খামচে ধরলো। বিভোর ভাই একটু দুষ্টু টাইপের।

রিয়া কে বলে কি রিয়া সত্যি করে বলো তো এখানে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলে।রিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম মানে।এখন তো মানে বুঝবা না।তুমি অপেক্ষায় ছিলে কখন আমি বাইরে বেরোবো আর তুমি সুযোগ বুঝে ধাক্কা খাবে।আসলে সিনেমাতে এভাবেই প্রেম হয় কিন্তু।

“বিভোর ভাই এমনিতে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিছেন।আরেক টু হলে আমার কোমর টা যেতো।এখন উল্টাপাল্টা বলছেন আমার নামে।”

“আহা রিয়া বুঝি তো।”

“কি বুঝেন শুনি।কোমর ভেঙে গেলে কি কেউ বিয়ে করতো আমায়।আমার মতো একটা বাচ্চা মেয়ের ভবিষ্যতে অন্ধকার করে দিচ্ছিলেন।”

“কি ভবিষ্যত”

“দিয়ার বিয়ে হয়েছে আমি আর দিয়া সেইম বয়সী নিশ্চয়ই আমার উনি ও মেয়ে খুজছেন বিয়ের জন্য।”

“তোমার উনি তো তোমার জুনিয়র ও হতে পারে।”

“মোটেও না আমি সিনিয়র পারসন বিয়ে করবো।দেখেন না দিয়া আর বিহান ভাই কত সিনিয়র জুনিয়র। বিহান ভাই কি মারাত্মক ভালো বাসে দিয়াকে।”

“বিহানের ভাই এর গুষ্টি ও কিন্তু বউ এমন ই ভালবাসবে বলেই চোখ টিপে দিলেন বিভোর ভাই।”

“আমার কোমর ভাঙলে কি হতো আগে তাই বলেন।”

“যার জন্য ভাঙবে তার ঘাড়েই উঠবে।এটাও শিখিয়ে দেওয়া লাগে।”

“আপনার মতো এমন ফ্ল্যার্টিং আমি বাপের জন্মে কাউকে করতে দেখি নি।”

“রিয়া রিতীমত আমাকে প্লে বয় প্রমান করার চেষ্টা করছো।”

“যার মনে যা সেটাই তো ফাল মারে।আপনি এই নিয়ে কয়টা প্রেম করেছেন বলুন তো।”

“বেশী হ্যান্ডসাম ছেলেরা আজিবন সিঙ্গেল থেকে যায়।আর তোমার মতো সুন্দরী রা ভাবে গপ্পেন আছে।”

“ইস বিভোর ভাই ভাই সো স্যাড।”

“বিভোর ভাই রিয়া ডাকছে শিশু ও শিশু।”

“এক্সকিউজ মি বিভোর ভাই কাকে শিশু ডাকছেন”

“আশে পাশে তুমি ছাড়া আর কেউ তো নেই তাই তোমাকেই ডাকছি।”

“অদ্ভুত শিশু বলে ডাকছেন যে”

“না আমি একটু এই শিশু ডাকের আপডেট করেছি।মানুষ বেবি ডাকে আমি শিশু ডাকছি।”

রিয়া প্রচন্ড জোরে হেসে দিয়ে বলে বিভোর ভাই আপনিও না পারেন বটে।

বিভোর ভাই আর রিয়ার কথোপকথন শুনে আমি হাসির বাঁধ মানাইতে পারছি না।

আমার সব হাসি এক নিমিষেই বিলীন বিহা৷ ভাই হোয়াটস এ কয়েক টা এংরি রিয়াক্ট দিয়ে মেসেজ দিচ্ছেন আমি রুমে যাচ্ছি এক মিনিটের মাঝে রুমে আয়।

কি অদ্ভুত উনি সাঝ সকালে রেগে গেলেন কেনো।মুখের ভাব তো আগের বিহান রুপ।।।

চলবে,,,

(আজকের পর্ব টা খুব ভাল না লাগতে পারে।দুই দিন ধরে দুই এক লাইন করে এত টুকু লিখেছি।জ্বর,গলা ব্যাথা,হাত পা প্রচন্ড ব্যাথা,মাথায় পেইন তো আছেই।সবাই আমাকে মেসেজ দিয়েছেন আমি রিপ্পলে দিতে পারি নি।তাই স্টোরির নিচে অসুস্হতার কথা জানিয়ে দিলাম।সাথে বমি সব মিলায়ে খুব খারাপ অবস্থায় আছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here