তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ১৮.

0
1978

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১৮.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই এর মেসেজ টা পড়ে বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে।এটা কিছুতেই হতে পারে না বিহান ভাই আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।আমি রুমের প্রতিটি জিনিস ছুড়ে ছুড়ে ফেললাম।রুমের যত জিনিস আছে সব তছনছ করে ফেললাম কাঁদতে কাঁদতে।আমার মনে হচ্ছিলো এই পৃথিবীর সব অসহ্যকর, বিরক্তিকর।সব কিছু ধ্বংস করে ফেলবো।হন্য হয়ে গেলাম আমি ওই মুহুর্তে শুধু একটাই কথা জানতে ইচ্ছা হচ্ছিলো কি অপরাধ আমার।

আমি ফ্লোরে বসে পড়লাম।হাউ মাউ করে কাঁন্না শুরু করলাম। বুকের মাঝে চিন চিন করে ব্যাথা হচ্ছে,বুকের পাজর বড্ড ভারী হয়ে এসছে।

“কেনো বিহান ভাই কেনো? তুমি বারবার কেনো আমার সাথে এমন করো।কষ্ট দেওয়ার জন্য কি তুমি শুধু আমাকেই পেয়েছো।আজ তোমাকে বলতেই হবে কেনো আমার মন নিয়ে খেলা করছো।আমি কি এতটাই খারাপ।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বিহান ভাই তোমায় ছাড়া।প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।বিহান ভাই কোথায় তুমি।প্লিজ যাওয়ার আগে বলে যাও কেনো চলে গেলে।আমাকে ছেড়ে যাবার একটা কারণ দেখিয়ে যাও অন্তত সেই কারণ টা নিয়ে সারাজীবন নিজেকে শান্ত্বনা দিবো নিজেকে।বিহান ভাই তুমি যাওয়ার আগে প্লিজ আমার একটা দোষ দেখিয়ে যাও।আমি জানি তোমার রাগ বেশী তোমার রাগ কেও আমি ভালবাসি।কিন্ত যে রাগ প্রতি মুহুর্তে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দেই আমি ঘৃণা করি সেই রাগ কে।ভালবাসা কি কোনো অপরাধ।ভালবাসা যদি অপরাধ হয় তাহলে সেই অপরাধের শাস্তি তুমি বারবার ছেড়ে গিয়ে কেনো দাও।ছেড়ে যাওয়ার থেকে ভয়ানক রকমের শাস্তি এই পৃথিবীতে নেই।সবাই তো শুধহ ছেড়ে যাওয়ার জন্য ই আসে তুমি কেনো থেকে গিয়ে প্রমান করলে না সবাজ ছেড়ে যায় না কিছু মানুষ আগলে রাখতে ও আসে।আই লাভ ইউ বিহান ভাই প্লিজ ফিরে এসো।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।তুমি আমাকে এভাবে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিও না।আমি সহ্য করতে পারছি না।তুমি যদি আজ না আসো আজই হবে তোমার আর আমার শেষ দেখা।তোমার পুচকি কে আর তুমি চাইলেও শাস্তি দিতে পারবে না।”

নিজে নিজেই প্রচন্ড কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে কথা গুলো বলছিলাম।মনে হচ্ছিলো আমি এক্ষুণি পাগল হয়ে যাবো।আমার মাথায় কোনো কিছু কাজ করছিলো না।আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমার এই মুহুর্তে বিহান কে চাই।

ছেড়ে যাওয়া কতটা ভায়বহ তাপের,অসহ্য যন্ত্রণার,সহ্য সীমার বাইরে সেটা শুধু যার ভালবাসার মানুষ ছেড়ে গিয়েছে সেই উপলব্ধি করতে পারবে।

এমন সময় দরজায় ছ’ফিটের একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পরণে কালো ট্রাউজার,সাদা গেঞ্জি,হাতে ঘড়ি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে চোখে পানি টলমল করছে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মানুষ টা বিহান ভাই।এটা কি সত্যি বিহান ভাই।উনি কি এসেছেন।নাকি আমার কল্পনা মাত্র।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম বিহান ভাই এর চোখে পানি দেখে।জানিনা কিভাবে ছুটে গেলাম উনার কাছে ওই মুহুর্তে আমার সামনে কোনো কিছু বাঁধা হলে আমি ভেঙে চুড়ে গুড়িয়ে দিতাম।নিজের সর্বোস্ব দিয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বিহান ভাই কে।বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরে উনার বুকে মাথা দিয়ে ভীষণ ভাবে কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম কাঁদতে কাঁদতে উনাকে বললাম,,

বিহান ভাই প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।আপনি চলে গেলে আমি মরে যাবো বিহান ভাই।আপনি আমাকে যা বলবেন আমি তাই শুনবো তবুও আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ।আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই বিহান ভাই।আপনার জীবনে অনেক ভালবাসার মানুষ আছে।কিন্তু আমার কেউ নেই। আপনি ছাড়া আমাকে ভালবাসার কেউ নেই বিহান ভাই।এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ আপনাকে চাই আপনার জীবনে ভালবাসার অভাব নেই কিন্তু আমার আপনি ছাড়া কেউ নেই।আমার জীবনে আপনার বড্ড অভাব।এমন সময় অদ্ভুত কিছুর স্পর্শ অনুভব হলো।আমার চোখের পানির সাথে বিহান ভাই এর চোখের পানি মিশে গিয়েছে।বিহান ভাই এর চোখ দিয়ে টুপ টাপ পানি পড়ছে।

বিহান ভাই এই প্রথম বার উনার দুই হাত দিয়ে আমাকে উনার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন।বিহান ভাই একটা কথা ও বলছেন না।ঘন ঘন চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।উনার এই ভারী ভারী নিঃশ্বাস দেখে বোঝা যাচ্ছে উনার বুকে পাহাড় সমান কষ্ট উনি সেটাই হালকা করছেন

বিহান ভাই কে চুপ থাকতে দেখে বললাম আপনি প্লিজ কিছু বলুন বিহান ভাই।এভাবে চুপ থাকবেন না।আপনি কেনো আমাকে ছেড়ে যেতে যান বিহান ভাই।ভালো খারাপ যা খুশি বলুন প্লিজ বলুন।

এত সময় পরে বিহান ভাই আমার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বলেন আই এম সরি দিয়া।আমি তোর ভালবাসার যোগ্য না দিয়া।আমি তোকে তোর মতো করে ভালবাসতে পারি নি দিয়া।এতদিন ভাবতাম আমার মতো করে কেনো তুই আমাকে ভালবাসিস না।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না দিয়া আমি নিজেই পারি নি তোর মতো করে ভালবাসতে।আমি কারণে অকারণে তোকে ভুল বুঝেছি।তুই এত টুক একটা মানুষ তোকে পাহাড় সমান যন্ত্রণা দিয়েছি।আমি কেনো তোকে বুঝতে পারলাম না দিয়া।

আমি বিহান ভাই কে বললাম কেনো ছেড়ে যেতে চান!

বিহান ভাই বললে ছেড়ে যেতে চাই না দিয়া।তোহার ফোন পাওয়ার পর থেকে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।কেনো তোকে আমি ভুল বুঝলাম।কেনো আমার একটা বার মনে হলো না যে দিয়া আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে না।দিয়া জানিস বুকের বাম পাশ টা খুব জ্বলছিলো।আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি এই কষ্টর যন্ত্রনাতে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি কাঁদিয়েছি এটা আমার মন মেনে নিতে পারছে না।

–আমি বিহান ভাই কে আবার বললাম আপনি এত সময় কোথায় ছিলেন বিহান ভাই।

–বিহান ভাই বলেন দিয়া আমার মন খারাপ হলে একাকি সময় কাটাতে ভালবাসি।কষ্ট গুলো বিশাল আকাশে বিলিয়ে দেই।

–আমি বললাম তাহলে এমন মেসেজ কেনো দিয়েছিলেন। জানেন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি।

–বিহান ভাই বলেন আমার মনে হচ্ছিলো তোকে সুখি করার ক্ষমতা আমার নেই।আমার বোধ হয় এটাই ভাল হবে তোর থেকে দূরে সরে যাওয়া।

—“তাহলে ফিরে এলেন কেনো? ”

“হঠাত মাঝ রাস্তায় দেখি একটা ছেলে খুব পাগলামো করছে।বউ এর সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসছিলো তাই বউ সুইসাইড করে মারা গিয়েছে।তখন বুকের মাঝে ভীষণ জোরে একটা ধাক্কা লাগলো।যদি তোর কিছু হয়।আমি সাথে সাথে চলে এসেছি।”

আমি তখন আরো জোরে কেঁদে দিয়েছি।

“আমার কাঁন্না দেখে বিহান ভাই বলেন দিয়া আমাকে ভালবাসিস তুই।”

“আপনি বোঝেন না”

“তোর মুখে শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে”

“হ্যাঁ ভালবাসি অনেক ভালবাসি আপনাকে”

“তুই কি চাস আমি কষ্ট পায়।”

“কখনোই চাই না বিহান ভাই”

“কিন্তু তুই ভীষণ কষ্ট দিচ্ছিস আমায় দিয়া”

“কিভাবে?”

“এই যে কাঁদছিস।এটা আমার বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।আমার সামনে এই অমূল্য চোখের পানি ফেলিস না দিয়া।আমি এটা সহ্য করতে পারি না।”

আমি আবার ও শব্দ করে কেঁদে দিলাম।

বিহান ভাই উঠে দাঁড়িয়ে বলেন তোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে কি আমাকে খারাপ ভাববি দিয়া।মনের মাঝে খুব তোলপাড় হচ্ছে।একমাত্র তুই আমার বুকে আসলে এই ঝড় থেমে যাবে।

বিহান ভাই এর বলা এই করূণ কথা বুকের মাঝে সুঁচের মতো বিঁধছে।
বিহান ভাই কে আরেক বার জড়িয়ে ধরে বললাম এইখান থেকে আর কোথাও যাবো না আমি।তাহলে আপনি আবার ও হারিয়ে যাবেন।

বিহান ভাই বলেন না পুচকি আমি আর কোনদিন হারাবো না।আমি তোর মাঝেই ছিলাম খুজে পাস নি তুই।
আর কাঁন্না নয় আমি চলে এসেছি তো।এই যে কান ধরে উঠবস করছি মিসেস বিহান আপনার স্বামির ভুল হয়ে গিয়েছে তার একমাত্র বউ কে এভাবে কষ্ট দেওয়া উচিত হয় নি।বিহান আজ সারারাত কান ধরে উঠবস করবে।যতক্ষণ না তার এত টুকু পুচকি বউ পাখি টা তাকে ক্ষমা করছে।

যে মানুষ টা মিনিটে মিনিটে আমার কান ধরাতো সে আজ আমাকে অবাক করে দিয়ে নিজেই কান ধরে উঠবস করছে।একটা মানুষ সত্যিকারে ভালবাসলে বুঝি এভাবেই বদলে যায়।

আমি বিহান ভাই কে বললাম বলুন আই লাভ ইউ দিয়া ১০০ বার।বিহান ভাই ১০০ বার বললেন আই লাভ ইউ বউ দিহান দিয়া।

বিহান ভাই ছোট বেলা উনার নামের সাথে ম্যাচ করেই আমার নাম দিহান দিয়া রেখেছিলো।

উনাকে কান ধরে উঠবস করতে দেখেই আমি হেসে দিলাম।আমার হাসি দেখে উনিও মুগ্ধ হয়ে হেসে দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলেন।

চলবে,,,

(ভাল লাগার অংশ টুকু কমেন্টে জানাবেন সবাই।এই বর্ষায় বর্ষন দিলাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here