তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ২০.

0
1913

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
২০.
#WriterঃMousumi_Akter

রাগি মানুষ মানেই হুট হাট কারণে অকারণে রেগে যাওয়া।তারা বোধ হয় বিভিন্ন ভাবে রাগের কারণ খুজে চলে। বিহান ভাই এর আমাকে এভাবে রুমে ডাকা টা মারাত্মক সন্দেহের ব্যাপার।বার বার মনের পরীক্ষা করছি কিছু ভুল করেছি কিনা।কই নাহ তো কিছুই করি নি। কি ভুল করলাম। আমার বাচ্চা সুলভ নিশপাপ মন ভয়ে চুপসে গিয়েছে।এই বিহান ভাই না টিহান ভাই খালি চোখা রাঙানি দেখায়।নতুন বউ কে কেউ এভাবে ডাকে।বলতে তো পারে ওগো একটু রুমে আসবে কিছু কথা ছিলো।তোমাকে একান্তে নিরালয়ে চাই।তা না আমাকে মেসেজ দিচ্ছেন রুমে আয় দ্রুত সাথে আবার রাগের ইমুজি।মানুষ বিয়ের রাতে বাচ্চা কাচ্চার নাম ঠিক করে রাখে অন্তত সেই ঠিক করা নামেও তো আমাকে ডাকতে পারে ওগো অমুক বা তমুক এর মম।এক্কেবারেই আনরোমান্টিক একটা মানুষ।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রিয়ার প্রবেশ হলো। রিয়া আমাকে দেখে বলে কিরে দিয়া কি ব্যাপার হুম হ্যাপি দ্বীতীয় ফুলসজ্জা।আমি সন্দিহান ভাবে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলি দ্বীতীয় ফুলসজ্জা টা কি রিয়া। রিয়া বলে আরে কেমন হলো ফুলসজ্জা সেটা বল আজ বিয়ের সেকেন্ড দিন তাই আজ তোর দ্বীতীয় ফুলসজ্জা।এমবস্হায় দেখি আবার বিহান ভাই এর উপস্হিতি।বিহান ভাই দিয়াকে দেখে মিষ্টি হেসে বলেন কিরে রিয়া এত সকাল সকাল ঘুম ভেঙেছে তোর।রিয়া খুব উল্লাস নিয়ে বলে উঠলো হ্যাঁ জিজু। বিহান ভাই এমন ভাবে ভ্রু আর কপাল কুচকালেন যেনো জিজু ডাক টা এই জীবনে প্রথম শুনলেন আর তাকে জিজু বলার কোনো কারণ ই তিনি খুজে পাচ্ছেন না।বিহান ভাই বলেন রিয়া কে তোর জিজু।রিয়া সোজা উত্তর দিয়ে দিলো দিয়ার বর ই রিয়ার জিজু।বিহান ভাই একটু চড়া গলায় বললেন খুব পেকেছিস তাইনা।এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিলি তুই?

বিহান ভাই কে উত্তর টা আমি দিয়ে দিলাম,,
রিয়া আমার কাছে নোটস নিতে এসছে।আপনি আমার জন্য যে গুলা নিয়ে এসছেন সেগুলাই নিতে এসছে।বিহান ভাই বলেন রিয়ার লেখাপড়ায় মনোযোগ আছে তোর মতো না বুঝেছিস।আজ থেকে তোর পড়াশুনার কড়া গাইড শুরু।রিয়া এখানে থাকলে মান অপমান আমাকে কন্টিনিউ করতে থাকবে তাই রিয়া কে দ্রুত নোটস গুলা দিয়ে বিদায় জানালাম।

রিয়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে বিহান ভাউ আগের রূপে ফিরে গেলেন।কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিলো তার রাগ একটু শীতল হয়েছে।

বিহান ভাই উনার রুমে চলে গেলেন।টেনশন আর ভয় নিয়ে উনার রুমে প্রবেশ করলাম।রুমে প্রবেশ করে দেখি উনি আমার কাল রাতের এলে মেলো করা জিনিস গুলা গোছাচ্ছেন।মামির আদুরে ছেলেকে এই প্রথম বার দেখছি কাজ করতে।কাল রাতে ভাঙতে কিছুই বাদ রাখি নি আমি।বিহা৷ ভাই এর রুমের প্রতিটি জিনিস ই বিহান ভাই এর শখের জিনিস।উনার সব শখের জিনিস গুলা ভেঙে ফেলেছি উনি কি আমাকে এখন আস্ত রাখবেন।নাকি এই রুমের প্রতিটা জিনিসের মতো আমাকে আছাড় দিবে আর ভাঙবে।আমি রুমে প্রবেশ করাতেই উনি সটান হয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে ভয়ানক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন।ভয়ে আমার হৃদপিন্ড থর থর করছে।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আর উনি সোজাসুজি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।বিহান ভাই নরমালি রেগে থাকলে কাউকে কিছু বলার আগে কয়েক মিনিট চুপচাপ তার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে শুরু করেন।নিরবতা থেকে ভয়ঙ্কর এক অগ্নিরুপ ধারন করেন।

উনি একটু একটু করে আমার দিকে এগিয়ে আসেন।

আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কোনো সাড়াশব্দ করছি না।উনি আমার কাছে এসে বলেন,,

“সমস্যা কি তোর?”

চুপ আছি আমি।কি ভুল করেছি মনে করতে পারছি না।উনি ধমক দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,

“চুপ কেনো?”

“কি বলবো”

“ভয় লাগে?”

“ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।চোখে পানি নেই কিন্তু মুখে সাউন্ড।”

“তুই আম্মু আর বিভোর কে কি বলতেছিলি।”

“কিছু না কিছুই না বিহান ভাই”

“কিছুই না সিরিয়াসলি দিয়া”

“সত্যি কিছুই না”

“তুই যেভাবে লাফিয়ে উঠেছিলি কাল রাতের সব কথা আম্মুকে বলে দিচ্ছিলি।ভাজ্ঞিস আমি টাইমলি পৌছেছিলাম।তুই নির্ঘাত সব বলে ফেলতি।”

“মামি কে আমি সব ই বলি।এটা আমার অভ্যাস।”

“তাই বলে আমাদের সিক্রেট কথা ও বলে দিবি।”

“বললে কি হইছে।”

“উনি তোর শ্বাশুড়ি হন।উনার ছেলে তোর সাথে কিভাবে প্রেম করেছে সেগুলা বলে দিবি।”

“শ্বাশুড়ি হলেও সে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।”

“বেষ্ট ফ্রেন্ড দের মানুষ এগুলা বলে। স্বামি স্ত্রীর কথা বাইরের কাউকে বলতে নেই।এগুলা লজ্জার কথা।দুজনের একান্তে কাটানো সময়।তুই বড় না হলে ভুলেও তোকে আর টাচ করবো না।ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিবি দেখছি তুই।”

“কাছে আসবেন না মানে।”

“মানে আমার থেকে কয়েক ফুট দুরত্ত্বে থাকবি।”

“মামিইইইইইইইইইইইই”

“বিহান ভাই আমার মুখ চেপে ধরে বলেন এভাবে ভ্যা ভ্যা করে মামি কে ডাকছিস ক্যানো?”

“বলে দিবো সব।”

“অদ্ভুত কি বলবি।”

“এই যে কাল রাতে আমার সাথে কি কি করলেন।আমাকে যদি আর বকেন আমি আপনার ফুপ্পি,আম্মু,কাজিন গুষ্টি সবাই কে বলে দিবো।”

“ওহ গড মহারানী এই এম ভেরি সরি। রাগ আর জীবনেও দেখাবো না।এইবারের মতো ক্ষমা দেন প্লিজ।”

এমন সময় বিহান ভাই এর ফোন টুং টাং সাউন্ডে বেজে ওঠে।বিহান ভাই ফোন টা রিসিভ করেন লাউডে দিয়ে আবার রুম গোছাতে লেগে যান।বিহান ভাই এর বন্ধু ফোন দিছেন।বিহান ভাই আমাকে বলেন এখান থেকে যা দ্রুত গিয়ে খেয়ে আয়।আমি বললাম আপনি খাবেন না বিহান ভাই।বিহান ভাই বললেন না আমি সকালে কিছু খাই না।go now.

আমি দরজার বাইরে অপেক্ষা করছি উনাদের কথা শোনার জন্য।

বিহান ভাই এর বন্ধুর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে,,

“কিরে বন্ধু কি করিস।”

“রুমে ঝড় হয়েছিলো সেগুলা গোছাচ্ছি।”

“ফুলসজ্জায় এমন ঝড় হয় বিহান। ”

“হুপ শালা।”

“কিরে ভাই ভাবি কেমন আদর যত্ন করলো।”

“তোর ভাবি এগুলা বোঝে না।”

“কি বলিস ভাই আমার গার্লফ্রেন্ড বিয়ের আগে যা আদর করে।”

“আমার বউ তোর প্রেমিকার মতো লুচ্চা না। ও ছোট মানুষ এসব বোঝে না। মাত্র সতেরো তে পা রেখেছে।বউ এর এখন ফুলসজ্জার বয়স হয় নি।”

“তা রুমে কিসের ঝড় হলো”

“তোর ভাবি রাগ করে রুমের একটা জিনিস ও আস্ত রাখে নি।উনি হলেন রাগিনী।”

“ভাবির কিছু পিকচার পাঠাই দে বিহান। ”

“ভুলেও না।আমার সুন্দরী বউ এর পিকচার তোর কাছে দেই আর তুই রাত জেগে তারা গুনিস তাইতো।এমনি তে বাল্যবিবাহ কেইস খাওয়ার চান্স আছে। ”

“ভাই আই লাভ ইউ বিহান ভাই ভয়েজ টা মারাত্মক মিষ্টি।তুই যেভাবে ফাহিম কে মাইর দিয়েছিলি ভাবির ভয়েজ শুনে ক্রাশ খাওয়ার অপরাধে।”

“শুধু ক্রাশ খেয়ে অপরাধ করে নি।ভয়েজ টা ওর ফোনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো।সেই অপরাধে মাত্র চার টা থাপ্পড় দিয়েছিলাম।”

উনাদের কথা শুনে অবাক আমি।আমার ভয়েজ নিয়ে এত কাহিনী।কে সেই ফাহিম।আমার জন্য মানুষ ও মারেন।

খাবার খেয়ে মামির সাথে গল্প করে আবার রুমে প্রবেশ করলাম।এক টানা ২-৩ ঘন্টা গল্প চালাইলাম।

বিহান ভাই আমাকে বলেন তোর কি গল্প শেষ হলো ঘড়িতে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে।তাকিয়ে দেখি সাড়ে বারোটা বাজে।আমি ঘাড় কাত করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে অপেক্ষা করছিলাম বকা খাওয়ার জন্য। আশ্চর্য হলাম উনি আমাকে বকা না দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করেন।আমার গাল ধরে বলেন বুঝেছি এভাবে হবে না।তোকে ভাল ভাবে গাইড করতে হবে।তোকে বকে হবে না।

শাওয়ার টা ছেড়ে দিয়ে মুখ পানে তাকিয়ে বলেন,,

সেদিন সন্ধ্যে নামুক।
সেদিন বৃষ্টি পড়ুক অঝোরে।
সেদিন কদমের কলি ফুটে উঠুক,
বুনো সুবাস ছড়ায়ে।

সেদিন হিজলের জলে ঢেকে যাক
পানা – পুকুরের জল।
সেদিন কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙা হোক গোধূলি।
সেদিন জারুলের রঙে নেমে আসুক আঁধার।

সেদিন এ শহর ব্যস্ত থাকুক
নিয়মের বেড়াজালে।
সেদিন জীবন হারিয়ে যাক চুপিসারে,
জীবনের গভীরে।

সেদিন যেদিনই হোক ,
সেদিন অজানা থাকুক।
সেদিন নিখোঁজ থাকুক।
সেদিন অলক্ষে থাকুক তার।

আই লাভ ইউ দিয়া পাখি।

উনার বলা কথা গুলা শুনে উনার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

চলবে,,

(জ্বর একটুও কমে নি।মাথায় পেইনে মাথায় কিছুই আসছে না।কি লিখবো বুঝতেছিনা।গুছিয়ে লেখা হয় নি।সুস্থ হলে ভাল ভাবে গুছিয়ে গল্প দিবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here