তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৪.

0
2297

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৪.
#WriterঃMousumi_Akter

চুড়ি গুলা ভেঙে যেনো মনে মহা তৃপ্তি পেলাম। আহা শান্তি।

বিহান ভাই এবার মুখ খুললেন,,

“চুড়ি গুলা সব ভেঙ্গে ফেললি একটু পরেই তো বাঁচ্চাদের মতো আবার কাঁদবি আমার চুড়ি চাই।আমি কিন্তু আর তোকে চুড়ি কিনে দিবো না।এমনি তে বাপের হোটেলে খাচ্ছি।তুই রোজ চুড়ি ভাংবি আর আমি কিনে দিবো।আমাকে কি তোর প্রেমিক চুড়িওয়ালা পেয়েছিস”

“কে চাইছে আপনার চুড়ি।”
কি অদ্ভুত উনি কি ভুলে গেছেন আমাকে মেরেছিলো উনি।

“জানিস যখন চুড়ি কিনছিলাম তখন এক হালি মেয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো আর মনে মনে বলছিলো ইস এই হ্যান্ডস্যাম ছেলেটার প্রেমিকা আছে।আমাদের ভাগ্য টাই খারাপ।না জানি সেই ভাগ্যবান মেয়েটা কে যার ভাগ্য সৃষ্টিকর্তা এমন সুদর্শন যুবক কে রেখেছে।মেয়েগুলার সে কি হাই হুতোস। দিয়া ওরা আমাকে একবার দেখেই ক্রাশ খেয়ে আহত।ভাজ্ঞিস আমার গফ আছে ভেবেছিলো নইলে তো নিহত হয়ে যেতো।দিয়া তোর ভাগ্য টা আসলেই খুব ভালো রে দিয়া।”

অদ্ভুত উনি কি ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমাকেই উনার প্রেমিকা বানাচ্ছেন।চুড়ি ভাঙলাম তাও রাগলেন না যে।সেদিনের অপমান আমি ভুলে যায় নি।অপমানের থেকে কষ্ট টাই আমার বেশী হচ্ছিলো।মাথা নিচু করে আমি উনার কাছ থেকে সরে আসছিলাম। ঠিক তখন ই উনি আমার হাত ধরে বলে নিচু হ।আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলি নিচু হবো মানে।মানে আমার পায়ের কাছে বস। শোন আমাকে সালাম কর তাতে কিছু পূণ্য হবে।আগের দিন যে অন্যায় করেছিস আমি মাফ না করলে কোনদিন জান্নাত পাবি না।জামাই এর গায়ে যারা হাত তোলে তাদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।

উনার এসব অদ্ভুত কথার কোনো মানেই বুঝি না।বুঝতে গেলে বকুনি খেতে হবে।উনার এই অত্যাচার সহ্য করার জন্য কি সৃষ্টিকর্তা আমাকেই পাঠিয়েছেন।

আমি নিচু হয়ে উনার পায়ের কাছে বসলাম।সালাম করতে যাবো তখন ই উনি বলে সালাম করা লাগবে না তোর।বাম পায়ের প্যান্ট ভাজ করে একটু উপরে তোল।আমি ভেবেচ্যাকা খেয়ে গেলাম বিহান ভাই কিছু খেয়েছেন নাকি। উনার তো এমন অভ্যাস নেই।আমি উনার পায়ের কাছে হাত নিয়ে বললাম ক্যানো?

“তোর কি আমার পেয়ে হাত দিতে ঘেন্না লাগছে।নাকি আমার প্যান্ট এ কোনো ময়লা আছে।দিয়ে এটা উন্নত ব্রান্ড এর প্যান্ট আর আমার পায়ে দূর্বীন দিয়ে খুজলেও কোনো ময়লার চিহ্ন পাবি না।আমি তোর আলিপ ভাই এর মতো জঘণ্য পিচাশ না।ছ্যা আলিপ এর গায়ে যা দূর্গন্ধ”

“আমি কখন সে কথা বলেছি বিহান ভাই।”
উনি যে ইচ্ছা করেই আলিপ ভাই কে পঁচাচ্ছেন সেটা বুঝতে আমার বাকি নেই।

“না তোর চোখ মুখে সংকোচ দেখছি। ”

বিহান ভাই এর পায়ে হাত দিতে কেমন হাত কাঁপছে আমার।সেই ছোট্ট বেলা থেকে উনাকে ভালবাসি আমি।কোনদিন বলতে পারি নি।একটা ছেলের পা এতটা নিঁখুত সুন্দর হয় কিভাবে খুব অবাক লাগছে।বিহান ভাই এর প্যান্ট একটু ভাজ করে উপরের দিকে তুলে দিলাম।উনার ফর্সা পায়ে পশমে আবদ্ধ এত টা মুগ্ধ করছিলো আমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।

প্যান্ট উঁচু করেই আমি অবাক হয়ে যায়।ইস এভাবে কালো দাগ হয়ে আছে ক্যানো?

বিহান ভাই আপনার পায়ে এভাবে এত খানিক পুড়েছে কিভাবে।

“এইজন্য ই তো বলছিলাম দেখ।আগের দিন কফি ফেলে কিভাবে পুড়িয়েছিস।তোকে সেজন্য বকেছিলাম না।আমার এক্সাম ছিলো এসাইনমেন্ট গুলা নষ্ট হয়ে গেছিলো।তুই তো জানিস দিয়ে লেখাপড়া নিয়ে আমি কত টা সিরিয়াস।”

“তাই বলে আমাকে মারবেন আপনি।”

“এমন ভাব করছিস যেনো একটা চড় খেয়ে মরে গেছিস।ভাজ্ঞিস মরে যাস নি।মরা মেরে খুনের দায় আমার ঘাড়েই পড়তো।তোর চৌদ্দ গুষ্টি আমাকেই জেল খাটাতো।তাদের মেয়ের যে শরীরে কোনো পুষ্টি নেই সেটা তো বলবে না।আচ্ছা তোর বাপ টাকা জমিয়ে কি করবে।একটা মাত্র মেয়ে একটু খেয়াল ও তো দিতে পারে।দিনে দিনে শুকিয়ে কি অবস্থা হচ্ছে তোর।”

আবার শুরু হয়েছে উনার গা জ্বলা কথা।চোখ মুখ দিয়ে ঝাল বেরোচ্ছে আমার।

উনি মুহুর্তের মাঝেই সব কিছুর মুড চেঞ্জ করে দিতে পারেন।উনি ভাল ভাবেই জানে রেগে গেলে আমাকে কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয়।অথচ উনাকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আমার কেনো পৃথিবীর কারোর ই হয় নি।

আমাকে সুন্দর একটা সাদা ধবধবে খরগোশ ছানা দিয়ে বলে এই নে তোর খেলার সাথি।আর একটা পাখির খাঁচা দেই তাতে একটা সবুজ পাখি আর একটা হলুদ পাখি। বাজিগর পাখি দুইটা খুব ই সুন্দর। শুধু এটুকু না বিহান ভাই আমাকে কয়েক টা বেলি ফুলের চারা,আর কয়েক টা কাঠগোলাপের চারা দিলেন।আমি খুব ই সারপ্রাইজড হলাম।

“শোন দিয়া চুড়ির মতো এগুলা ফেলে দিলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।আমি আগেই এগুলা দেই নি তুই ছুড়াছুড়ি করবি তাই।চুড়ি ভেঙে রাগ মিটেছে এইবার যা বাসায় যা এগুলা নিয়ে।আমার রুম থেকে এক্ষুণি বেরো আমি চেঞ্জ করবো।আর শোন ফুফি কে বলিস আমি কাল দুপুরে তোদের বাড়ি যাবো।”

আর হ্যাঁ শোন ওই সবুজ টা আমি আর হলুদ টা তুই।

আমি অবাক হয়ে গেলাম বিহান ভাই এটা মনে রেখেছে।ক্লাস নাইনে থাকতে একদিন বলেছিলাম বাজিগর পাখি আর সাদা খরগোশ কোথায় পাওয়া যায়।আমার খুব ভালো লাগে।আমি কেঁদে ছিলাম পাখির জন্য।বিহান ভাই সেটা মনে রেখেছে।সাদা ফুল আমার ভাল লাগে বিহান ভাই সেটা জানে।ক্লাস এইটে থাকতে সবাই মিলে নার্সারী তে গিয়েছিলাম আর আমি এ ফুল গুলাই খুজেছিলাম।

আমি ঠিক বুঝি না বিহান ভাই এর মতিগতি।এত বছর আগের কথা উনি মনে রেখেছেন।উনার চিন্তাধারা সবার থেকে আলাদা।উনি এমন ভাবে সারপ্রাইজ দেন।সারপ্রাইজ টা মনে রাখার মতো হয়।উনার কাছে কিছু চাইলে তখন জঘন্য ভাবে অপমান করে পরে ঠিক ই দেন।

মামাদের বাড়ি থেকে আসার সময় বিহান ভাই কে বলে আসলাম বিহান ভাই মামি আসলে বলবেন চলে গেছি।।

ঠিক আছে যা!

বাড়িতে ঢুকতেই তোহা আর রুশা আপু বলে কিরে দিয়া এগুলা কোথায় পেলি সো কিউট দিয়া।মনে আছে তুই কতদিন ধরে খুজছিলি।আজ পেলি কোথায়?।

বিহান ভাই দিয়েছে।

সবার মুখে মাছি ঢোকার মতো অবস্থা। আবিদ ভাই আর রিয়া বলে বিহান ভাই সিরয়াসলি উনি দিছে।

তোহা আপু বলে বিহান আমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে এতদিন এ কিছুই দিলো না।সেদিন বললাম বিহান এই কাঁচের চুড়ি গুলা কিনে দাও আমাকে কিনা বলে টাকা নেই পকেটে।রুশা আপু বলে বিহানের পকেটে টাকা নেই এটা বিলিভ করলি।রিয়া বলে তোহা আপুর জন্য বিহান ভাই কি পাঠিয়েছে।আবিদ বলে বিহান ভাই এর বুক ভরা ভালবাসা পাঠিয়েছে।বলেই ওরা হাসিতে গড়িয়ে পড়ে।তোহা আপু বলে আজ বিহানের খবর আছে।সন্ধ্যায় যাবো বিহানের বাসায়।

আমি বললাম উনি ঘুমোবে কাল দুপুর পর্যন্ত।পনেরো দিন ঘুমোই নি উনি এক্সাম এর জন্য।

রিয়া বলে ইস কি টান।আহা বুঝি বুঝি অনেক কিছুই।বলি না তাই।

পরের দিন দুপুরে কালো প্লাজু আর লাল টি-শার্ট পরে ঘুমিয়ে আছি।আব্বু এসে ডেকে তুলে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন।আর আমি গেম খেলছি মোবাইল এ।এমন সময় বিহান ভাই এর আগমণ।আব্বু বিহান ভাই কে দেখেই বলে আরে বিহান এসো বসো।বিহান ভাই বলে ফুফা এই ধামড়ি কে এখনো খাইয়ে দিচ্ছেন।ওকে বিয়ে দিলে তো মহা সমস্যা।আব্বু হেসে বলে তোমরা ভাই রা আছো তো তোমাদের একটা মাত্র বোনের সমস্যা সমাধান এর জন্য।

বিহান ভাই এর ব্লু কালারের জিন্স আর সাদা কলার দেওয়া টি-শার্ট পরা।উনাকে প্রতিদিন অন্য রকম ভাবে ভাল লাগে।ঠোঁটের বাম সাইডের গালে একটা হাল্কা তিল।উনার চুলের ফ্যাশন সব সময় অন্য রকম থাকে।

বাবার মুখে আবার ভাই সম্মোধন শুনে উনি মারাত্মক ভাবে বিরক্ত হলেন।আমি ফিক করে হেসে দিলাম উনার মুখের রুড ভাব দেখে। উনি আমার হাসি দেখে আরো রেগে গেলেন।উনার ভয়ানক রাগি রূপ প্রকাশ পাচ্ছে।আমি হেসেই যাচ্ছি।উনি সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছেন আর চোখে মুখে রাগের অবয়ব আর মারাত্মক বিরক্তি।

বাবা রুম থেকে বেরোলে রিয়া আর তোহা আপু আর আবিদ ভাই রুমে প্রকাশ করলেন।তোহা আপুর ন্যাকামি জাস্ট অসহ্য লাগে আমার। গা রিরি করে জ্বলতে থাকে আমার।

বিহান ভাই এর পাশে বসেই বলে, বিহান বেবি তুমি দিয়া কে অত গুলা গিফট দিয়েছো কেনো? আমাকে তো জীবনেও কিছু দিলে না অনেক রাগ করেছি আমি।

বিহান ভাই ফোন পকেটে রেখে বলেন,,দিয়ার মা মানে আমাদের ফুফির আমাদের বাড়ি কম করেও ২ কোটি টাকার সম্পত্তি পড়ে আছে।তার পুচকে মেয়েকে যদি মাঝে মধ্য কিছু না দেই তাহলে দিয়া যে মারাত্মক সিরিয়াস মেয়ে।এক্ষুণি গিয়ে মামলা করবে আর সব ভাগ করে নিয়ে আসবে।দিয়া কে তো চিনো না।ভয়ানক ডাইনি মহিলা দিয়া।

বিহান ভাই কি সাংঘাতিক ভাবে কথা ঘুরিয়ে দিলেন।

বিহান ভাই আমাকে বলেন দিয়া দুপুরে নামাজ পড়েছিস।

“হুম পড়েছি।”

“রিয়া দিয়া কি আজ নামাজ পড়েছে।”

“না বিহান ভাই আমি বলেছিলাম ও বললো আজ পড়বে না।”

“বিহান ভাই রেগে আমাকে বলে দিয়া সেদিনের থাপ্পড় ভুলে ভুলে গেছিস।নাস্তিক কোথাকার। কোনদিন ঠিক ভাবে নামাজ ও পড়িস না।তোর সমস্যা কি।নামাজ নিয়েও মিথ্যা বলিস”

বিহান ভাই কে আপনাকে বলেছে আমি নামাজ পড়ি না।রিয়ার উপরে রাগ যা হচ্ছে।

দুপুরে পড়িস নি কেনো তার কৈফিয়ত দে।

রাগে যে কি অসহ্য লাগছে।উনার বোঝা উচিত মেয়ে মানুষ শারিরীক সমস্যা হতেই পারে।
আমি ধৈর্যর বাঁধ ভেঙে বলি বিহান ভাই আমাকে নাস্তিক বলছেন কেনো? আমি একটা মেয়ে।আমার শারিরিক সমস্যা থাকতেই পারে।একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে এতটুকু বোঝা উচিত আপনার।

“তুই মানেই তো সমস্যা দিয়া।মহা সমস্যার নাম দিয়া।দুনিয়ায় যত গুলা সমস্যা আছে তার মাঝে তুই একটা ইমপরটেন্ট সমস্যা।আসলেই মেয়ে মানুষ মানেই সমস্যা।এত সমস্যা কোথায় পাইস।”

আমি মানেই সমস্যা মানে। আমি আপনার কি করেছি বিহান ভাই।

বড়দের সাথে এত তর্ক করিস ক্যানো?আম্মু ফোন দিছে আমি যায় এখন।

তোহা আপু,আর রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।

উফফ এই বিরক্তিকর মানুষ বিহান ভাই কি দিয়ে তৈরি বুঝলাম না।

সেদিন রাতে সুয়ে আছি।ঠাস করে একটা ভারি কিছু বেডে এসো পড়লো।ওএমজি আবার চিরকুট।

অভাব
__ রুদ্র গোস্বামী।

তুমি কাছে না থাকলে, বুকের ভিতরে
হুল্লোড় করে ঢুকে পড়ে একটা ভিখিরি স্বভাব।
মনে হয় এই ঘর আমার নেই,
এই আকাশ আমার নেই,
রাস্তা, মাঠঘাট, কোথাও যাবার তাড়া,
এ সবকিছু অন্য মানুষের।

তুমি কাছে না থাকলে,
সাত জন্মের অন্ধকার নিয়ে লাফিয়ে আসে রাত।
দিনগুলোকে শূন্য মনে হয়।
মনে হয় এই ব্যস্ত জনপদ, এই হকারের মতো চাঁদ,
ট্রেন ছেড়ে যাওয়া প্ল্যাটফর্ম,
মানুষের জিজ্ঞাসার শব্দ, এরা সব এক একটা খুনে।

তুমি কাছে না থাকলে
পা দুটো দাঁড়িয়ে থাকে অনড়,
ঠোঁট দুটো বন্ধ তালার মতো থাকে চুপ।
বলতো, এতগুলো অভাব নিয়ে
একটা মানুষ সত্যি করে কি ভিখিরি হবে না?

কাব্যগ্রন্থ “অভিযোগ নেই”

ইতি তোমার ভূত

চিরকুট টা পড়ে আমি আবার দুঃচিন্তায় পড়লাম।

চলবে,,

(আজ ভালো হয় নি খুব একটা। বৃষ্টিতে ঘুমিয়েছি।খুব তাড়াহুড়ো নিয়ে লিখেছি।সবাই লাইক কমেন্ট করবেন প্লিজ।।আর পেজ এ যদি লাইক কমেন্ট এত কম থাকে স্টোরি লেখার মন মানসিকতা থাকে না।আগের পেজ টা মিস করছি খুব। স্টোরি দিলেই প্রচুর লাইক কমেন্ট হতো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here