তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৩.

0
2328

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩.
#WriterঃMousumi_Akter

বড় মামি দাওয়াত দিয়েছে আম খাওয়ার জন্য।বড় মামির হাতের নাড়ু,আর মোয়া ভীষণ প্রিয় আমার।মামি আমার জন্য সব সময় নাড়ু,মোয়া বানিয়ে রাখে।মামা বাড়ি বাড়ির পাশে হওয়াতে মামিকে ভীষণ অত্যাচার সহ্য করতে হয় বিশেষ করে আমার ফ্যামিলির অত্যাচার টা বেশী সহ্য করতে হয়।মামারা তিন ভাই বোন।দুই মামা আর আমার আম্মু।বড় মামার একটাই ছেলে বিহান ভাইয়া।মামির জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অপারেশন করে জরায়ু কেটে ফেলা হয় যার ফলে আর সন্তান হয় নি তার।ছোট মামার দুইটা ছেলে বিভোর,আর রাফি।বিহান ভাই এর থেকে বিভোর ভাই এক বছরের ছোট।আর রাফি ভাইয়া বিভোর ভাইয়ার এক বছরের ছোট।মামাদের ফ্যামিলি তে একটাই মাত্র মেয়ে আমি।সে হিসাবে অনেক আদর আহল্লাদ আমার।

আব্বুদের ফ্যামিলিতে আমার আব্বু সহ দুই কাকা আছে।আব্বু বড় আবির ভাইয়া আর আমি দুই সন্তান।মেঝো কাকার দুই মেয়ে তোহা আর রুশা।ছোট কাকার এক মেয়ে এক ছেলে রিয়া আর আবিদ।আমাদের ফ্যামিলিতে কাজিন ছয়জন আছি তোহা আপুর কাজিন আলিপ কে ধরে সাত জান।ফুফিদের গুলা তো আছেই।

আমাদের যার যার সংসার আলাদা কিন্তু এক ই বাড়িতে আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটেই থাকি।সম্পূর্ণ একটা জয়েন্ট ফ্যামিলির মতোই আছি।বাড়ির ছেলে মেয়েরা সবার ঘরেই খায়।ফ্যামিলিতে ছেলে মেয়েদের আলাদা ভাবে গোনা হয় না।

রিয়া, আর আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।রিয়ার ভাই আবিদ ভাইয়া অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।তোহা আপু আর আলিপ ভাইয়া অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।রুশা আপু অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।

মোটামুটি আমরা সাতজনে রওনা দিলাম মামিদের বাড়ি।মামাদের দুইটা ডুপ্লেক্স বাড়ি পাশাপাশি। মামারা অনেক বড়লোক।ওদের তুলনায় আমরা কিছুই না।

রাস্তায় বেরিয়ে আবির ভাইয়া বলে তোহা শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিস একটু মাথায় ঘোমটা টোমটা দে।এভাবে গাল ভর্তি লিপিস্টিক পরে গেলে আমাদের ভাই জাতির মান সম্মান তো আর রাখবি নাহ।তোর ভেবে নেওয়া আমাদের হবু দুলাভাই শালা হিসাবে আমাদের ই দোষারোপ করবে যে বোন কে কোনো সুশিক্ষা দিচ্ছিনা।তোহা আপু বলে দেখো আবির ভাইয়া আমার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছো একটু ভদ্র ভাবে আর সম্মান এর সাথে কথা বলো আমার সাথে নইলে আমার শ্বশুর বাড়ি ঢুকতেই দিবো না।

রুশা আপু বলে গাছে কাঁঠাল গোফে তেল তাইনা তোহা।বিহান কে নিয়ে এই দিবাস্বপ্ন কমায়ে দে বুঝলি।বিহান যে বদমেজাজি বাবাহ রে বাবাহ কিভাবে যে মুখের উপোর গিয়ে বেবি বেবি করিস ভেবে পাই না।আবির ভাইয়া বলে হ ওর বেবি সেরিলাক্স খায় এখনো।

আবিদ ভাইয়া বলে,, আমার প্রিয় ভাই বোন গুষ্টি কে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলতে চাই।না মানে আমার কিউরিয়াস মাইন্ড এটা জানতে চাইছে।যারা আমাদের মতো এত্ত বড় ইয়াং ছেলেদের বেবি ডাকে তাদের কিন্তু মা দিবসের শুভেচ্ছা দেওয়া উচিত।ওরা বেবি ডেকে ছেলেদের জাতগুষ্টির অপমান করে।

তোহা আপু বলে আর তোরা যে ছেলেরা, বেবি,বাবু, বেইবি কত কি বলিস তোদের ও তো বাবা দিবসের শুভেচ্ছা দেওয়া হয় না।সব সময় মেয়েদের পেছনে লাগা তাইতো।আবিদ তুই একবার প্রেম করে দেখ তোর প্রেমের আঠারো টা বাজাবো।

আবিদ ভাইয়া বলে তোহা আপু তোরা বড় ননদ হয়ে এগুলা কিভাবে করবি। আমি তো জানি আমার বোনেরা কত বেশী সুইট।

রিয়া বলে ওঠে, আমরা যে বিহান ভাই কে তোহা আপুর প্রেমিক হিসাবে ভাবি।আমার কিন্তু অন্য কিছু সন্দেহ হয়।বিহান ভাই এর নজর কিন্তু অন্য দিকে।
রিয়ার কথা শুনে আবিদ ভাই বলে রিয়া বিষয় টা আমিও বুঝি।

আমরা বিহান ভাই দের বাড়ির গেট এ দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি।

এরই মাঝে আলিপ ভাইয়া বলে ওঠে তোমরা এত ফাজিল তাও গফের অভাব হয় না।এইদিকে আমি যে এত ভদ্র একটা ছেলে তাও আশে পাশের কেউ তাকিয়ে দেখছে না।কথাটা যে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা সেটা বুঝতে কারোর ই বাকি নেই।

আবিদ ভাইয়া বলে ওঠে হ্যাঁ আলিপ ভাই ঘর জামাই হিসাবে আপনি কিন্তু পারফেক্ট।সবাই হই হুল্লোড় করে হেসে উঠলো।

বাড়ির ভেতরে হই রই করতে করতে প্রবেশ করলাম।তাকিয়ে দেখি দো’তলার বেলকুনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিহান ভাই।

মামি প্রচুর খাবার,দাবার এনে হাজির করলেন।সবাই খাওয়া আর আড্ডাতে বিজি আমরা।
আমি আস্তে আস্তে উপরে যায় গিয়ে দেখি বিহান ভাই কি করছে।

বিহান ভাই দের বাসায় প্রবেশ করার সময় বুক কেমন ধড়ফড় করছিলো।উনি তো সকালে এক মুডে থাকেন বিকালে আরেক মুডে থাকেন।

দো’তলায় বসে আছেন বিহান ভাই। চেয়ারে বসে টি টেবিলে পা দিয়ে বসে আছেন।পায়ের উপোর ল্যাপটপ। উনার নজর ল্যাপটপের দিকে।আমি দো’তলায় গিয়ে সিঁড়ির কোণায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখছি।কালো ট্রাউজার পরা,কালো কলার দেওয়া গেঞ্জি।পাশে ছোট একটা স্ট্যান্ড ফ্যান চলছে।উনার চুল গুলো বাতাসে উড়ে মাঝে মাঝে কপালে পড়ছে।বিহান ভাই এর ফর্সা শরীরে কালো গেঞ্জি তে বেমালুম সুন্দর লাগছে।আমি বারেবারে মুগ্ধ হই উনাকে দেখলে।বিহান ভাই এর পায়ের তালু লাল হয়ে আছে নখ গুলো এত সুন্দর। আসলে বিহান ভাই ভীষণ পরিপাটি একজন মানুষ। আজ উনি কালো কালারের ব্রেসলেট পড়েছে হাতে।এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছে ল্যাপটপ এ।

ল্যাপটপের দিকে নজর রেখে বললেন,আম্মু আমার জন্য কড়া করে একটা ব্লাক কফি পাঠাও তো।
আমি দ্রুত নিচে গেলাম।কফি টা আমি ই নিয়ে দিবো বলে।আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো বিহান ভাই এর সকালে বলা ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা গুলার মানে জানতে।

“কফি হাতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি।বিহান ভাই একটা কথা বলার ছিলো।”

“আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন কি বলবি বল”

“সকালে আপনার কথার মানে কিছুই বুঝলাম না।”

“কি বুঝতে চাস।সকালের কথা সকালেই শেষ।সেটা এখন জেনে কি করবি।”

“না মানে আপনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কি কি বললেন।”

“আমি এখন ভীষণ বিজি আছি। বিরক্ত করিস না গায়ে হাত উঠে যাবে দিয়া।আর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে যে ভাবে চিল্লায়ে বকবক করছিলি মানুষ ভাববে পাবনা হসপিটাল আমাদের বাড়িতেই শিফট করেছি।বিহান ভাই কথা গুলো বলছে এত বেশী রাগ নিয়ে বলছে যে এক্ষুণি উনি মেরে বসবে।”

“কথা না বাড়িয়ে কফি টা নিয়ে বিহান ভাই এর দিকে এগিয়ে দিতেই কফিটা বিহান ভাই এর ল্যাপটপ এর উপোর পড়লো সাথে সাথে টেবিলের উপর রাখা বেশ কিছু কাগজ সব ভিজে গেলো।বিহান ভাই ভয়ানক অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন।উনার চোখ যেনো রাগে ছুটে যাচ্ছে।”

বিহান ভাই ঠাসসস করে আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিলেন।

তোকে কফি আনতে কে বলেছে।একটা কাজ ও ঠিক ঠাক ভাবে করতে পারিস না।ড্যামেড তুই জানিস কত বড় ক্ষতি টা হলো আমার।কাল আমার সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম।সব এসাইনমেন্ট দিলি তো নষ্ট করে।সকালে আমার এক্সাম এখন পড়া রেডি করবো নাকি এসাইনমেন্ট রেডি করবো। বিহান ভাই এর ভয়ানক অবস্থা দেখে আমার হাত পাঁ কাঁপা শুরু হয়ে গেলো।এতই ভয়ানক ভাবে রেগে গেছেন উনি।উনার ট্রাউজার ও কফিতে ভিজে গিয়েছে।চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টি টেবিলে লাথি মেরে দিলেন টেবিল টা ছুটে গিয়ে অনেক দূরে পড়লো।ল্যাপটপ টা ও পড়ে গেলো।আমি খানিক টা কেঁপে উঠলাম।এমনিতে কেউ জোরে কথা বললে আমি নিজে থেকেই কেঁপে উঠি।বিহান ভাই ঘন ঘন কয়েক টা নিঃশ্বাস নিয়ে ভীষণ কপালে হাত চালাতে চালাতে বললেন এক টানা তিন রাত আমি ঘুমাই নি এক্সাম এর জন্য।ঘুমে চোখ মুখ জ্বলে যাচ্ছে।এক্সাম এর সময় আমার মাথায় কাজ করে।

চড় খেয়ে মাথা টা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

এমন সাউন্ড শুনে উপরে তোহা আপু ছুটে এলো।তোহা আপু বিহান এর কাছে গিয়ে বিহানের হাত ধরে বললো কি হয়েছে বেবি।বিহান ভাই অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললো কিছু হয়নি।তাহলে এই ল্যাপটপ টা পড়লো কিভাবে।তোহা আপু ওড়না নিয়ে বিহানের কপালের ঘাম মুছিয়ে দিতে দিতে বলে এভাবে রেগে আছো যে।বিহান ভাই বলে থ্যাংক্স তোহা।কখন এলে।আর খেয়েছো কিছু।নাস্তা দিয়েছে আম্মু।

বাহ!কি চমৎকার। আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করে তোহা আপুর সাথে কি সুন্দর হেসে কথা বলছে।মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি চলে এলো।চোখ টা ঝাপসা হয়ে এলো।

পৃথিবীতে সবাই আমাকে ভালবাসলেও আমি যাকে ভালবাসি সে আমাকে ভালবাসে না।আমার সামান্য একটা ভুলে আমাকে যাতা ভাবে অপমান করে।কি ভেবেছেন টা কি উনি।হাত কেঁপে না হয় কফিটা পড়েই গিয়েছে।তাই বলে ওইভাবে বলবেন।আর জীবনেও উনার সাথে কথা বলবো না।ড্রয়িং রুমে বসে নাস্তা করছে সবাই মিলে।আমি কাউকে কিছু না বলে সোজা বেরিয়ে গেলাম মামাদের বাসা থেকে।ছোট মামার ছেলে রাফি আমাকে বলে এই আমাদের পুচকে কই যাইস। আমি কাউকে কিছু না বলে সোজা সাপটা বাড়িতে চলে এলাম।বাড়ি এসে নিজের রুমে সুয়ে রইলাম।

পনেরো দিন হয়ে গেছে মামাবাড়ি আমি যায় নি।বিহান ভাই এর সাথেও দেখা হয় নি।বিহান ভাই ঢাকা চলে গেছেন হয়তো।নড়াইলের ছোট্ট শহরে আমাদের বাসা।আমার আর বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই উনার সাথে দেখা করার।

হঠাত আম্মু আমাকে বলে,দিয়া তোর মামাদের বাড়ি একটু যাবি। তোর মামি একটু ডাক্তারের কাছে যাবে তাই তোকে বাসায় রেখে যাবে।মামিদের কারো মেয়ে নেই।তাই মেয়ের কাজ গুলা ওরা আমাকে দিয়েই করাই।আর মামা মামিরা কিছু বললে আমি না করতে পারি না।বিহান ভাই বাড়ি নেই বলেই মামিদের বাড়ি গেলাম।

মামি আমাকে রেখে ডাক্তারের কাছে গেলেন।

রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে তরকারি কাটাকাটি করছি। যাতে মামি এসে দ্রুত রান্না টা করতে পারে।

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়। রান্নাঘরের দরজায় ব্যাগ ঘাড়ে কালো জিন্স, কালো গেঞ্জির উপরে সাদা এপ্রোণ পরে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।ইস বিহান ভাই কে ডাক্তার দের এপ্রণ এ অনেক স্মার্ট লাগছে।মুখ টা লাল হয়ে আছে ঘেমে।উনার দিকে না তাকিয়ে আমি কাজে মনোযোগী হলাম।

“কিরে সমস্যা কি দিয়া।এতদিন পরে দেখা হলো কোনো কথা বলছিস না যে।মুখের এমন গোমড়া অবস্থা কেনো?”

“কোনো উত্তর দিলাম না।”

“দেখ দিয়া ভীষণ ক্লান্ত আমি। গত পনেরো দিনে এক্সামের জন্য ঘুমাই নি।এক টানা ১০ ঘন্টা জার্নি করে এসছি।এসে যদি তোর এমন গোমড়া মুখ দেখি আমার তো এভাবে পাগলের মতো ছুটে আসাটাই বৃথা।”

“আপনার এক্সাম কেমন হলো।”

“রেজাল্টের পর জানা যাবে এদিকে আয়।রান্নাঘরে কি তোর। কালো হয়ে যাবি না।আম্মু আমাকেই বকবে তার একমাত্র বৌমা কালো হওয়ার কারণে।”

“আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।”

“উনি বুঝতে পেরেছেন আমি কিছুই বুঝি নি উনার কথার।”

“আমার হাত ধরে টানতে টানতে উনার রুমে নিয়ে গেলেন।উনি বুঝতে পেরেছেন আমি সেদিনের চড় টা ভুলি নি।”

“আমার হাতে একবক্স কাঁচের চুড়ি দিয়ে বললেন তোর না ভীষণ পছন্দ কাঁচের চুড়ি।”

“চুড়ির বক্স ধরে ফ্লোরে আছাড় মারলাম।সব গুলা চুড়ি ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।”

“উনি আমার হাতে আরেক বক্স চুড়ি দিলেন।এবার ও খুব জোরে আছাড় মারলাম।”

“উনি ভ্র কুচকে তাকিয়ে রইলেন। কি জানি আবার রেগে গেলেন কিনা।”

চলবে,,

(গল্প কেমন হচ্ছে। লেখা আপনাদের জন্য ই।ভাল লাগলে জানাবেন কমেন্টে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here