তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ১৪.

0
2004

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১৪.
#WriterঃMousumi_Akter

?কাক ডাকা ভোরে সবাই ঘুমোচ্ছে আর এদিকে আমি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে পড়ার টেবিলে।পড়ার টেবিলে বসে দেখি এত্ত গুলা সায়েন্স এর সিট পড়ে আছে।সিট গুলা বিহান ভাই ঢাকা থেকে এনে রেখেছেন।প্রতিটি সিট এ ডেট টাইম ফিক্সড করা মানে আমার পড়ার রুটিন এগুলা।বিহান ভাই আগে থেকেই এসব রুটিন করেছেন।

হাইরে বিয়ের পরের দিন সকাল।সব লাভ স্টোরি তে দেখি বিয়ের পরের দিন সকালে বউ বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে চায় আর বর আঁচল টেনে ধরে বউ কে ঘুম ঘুম চোখে কাছে টেনে বলে আর একটু ঘুমোও।এইদিকে আমার বর এলার্ম দিয়ে আমাকে ডেকে তুলে চোখ রাঙিয়ে বিছানায় থেকে তুলে দিয়েছেন।

টেবিলের উপোর মাথা রেখে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।কখন যে বিভোর ভাই রুমে প্রবেশ করেছেন জানিনা।বিভোর ভাই আমাকে ডেকে বলেন,,কিরে দিয়া তুই বিছানা ছেড়ে টেবিলে ঘুমোচ্ছিস যেবিহান ভাই এর ডাকে হুড়মুড় করে জেগে গেলাম।আমি অসহায় ভাবে বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে বলি বিহান ভাই পড়তে বলেছেন।বিহান ভাই বিছানা ছেড়ে মাত্র উঠেছেন বিভোর ভাই এর ডাকাডাকি তে বিহান ভাই ও বিছানা ছেড়ে উঠেছেন। আলমারি থেকে গেঞ্জি বের করে গায়ে দিতে দিতে বলেন পড়তে বলেছি খুব পড়ছিস যে।পড়ে পড়ে তো ঘুমোচ্ছিস তুই।আমি বললাম বিভোর ভাই তোমার ভাই কে নিষেধ করো কিন্তু এমনি সারারাত আমাকে সে ঘুমোতে দেই নি প্রচুর ডিস্টার্ব করেছে আর এখন আমি ঘুমোবো না।ঘুমে চোখ জ্বলছে আমার।বিহান ভাই স্টাচু অফ লিবার্টি হয়ে গেলো আমার কথা শুনে।বিহান ভাই হঠাত থমকে গেলেন কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।উনি বিভোর ভাই এর দিকে একবার তাকাচ্ছেন তো আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন।বিভোর ভাই কেশে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো নিচে মামিরা ওয়েট করছে দ্রুত আয় তোরা।

বিভোর ভাই চলে গেলে বিহান ভাই ট্রাউজারের দুই পকেটে হাজ গুজে অগ্নিচক্ষু দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।কি অদ্ভুত ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো উনি।কি ব্যাপার এমন উদ্ভট ভাবে উনি তাকিয়ে আছেন ক্যানো?২ মিনিট মতো তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে।।

“রাগের জগতে বিচরন করতে করতে আমাকে বললেন বিহান ভাই,বিভোর কে এমন ফালতু কথা বললি ক্যানো?”

“কি বলেছি আমি বিভোর ভাই কে।”

“তোকে আমি সারারাত ঘুমোতে দেই নি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন।”

“ঠিক ই তো।।”

“কি ঠিক ড্যামেড”

“আপনি শুধু আমার কথার ভুল ধরে বকেন কেনো?”

“বিভোর কি ভাবলো।”

“কি। ”

“তোর মাথা।দিলি তো ইজ্জতের ১২ টা বাজিয়ে।বিভোর ভেবেছে অন্য কিছু করেছি তোর সাথে আমি।।”

“অন্য কিছুই তো করেছেন।”

“হোয়াট”

“আপনি তো সারারাত চোখ রাঙানি দিয়ে আমাকে শান্তিতে ঘুমোতে দেন নি।”

“রাবিস বিভোর ভাই কি ভেবেছেন জানিস।”

“কি ভেবেছে ”

“ভেবেছে আমি তোর সাথে”

“আমার সাথে কি”

“ডিজগাস্টিং না জানি বিভোর এত সময় কাকে কাকে নিউজ টা প্রচার কি দিয়েছে।
ওহ গড বউ ছোট হলে যা হয় আরকি”

“শুনুন আমি মোটেও ছোট না।”

“তুই ছোট না এজন্য ঠিক ভাবে শাড়ি ও পরতে পারিস না।শাড়ি এভাবে সাপের মতো পেঁচিয়ে রেখেছিস কেনো?কোর্ট স্ট্যান্ডে একটা ব্যাগ ঝোলানো আছে দেখো।আমি মেয়েদের জিনিস ভালো আইডিয়া করতে পারি না।দেখ তোর পছন্দ হয় কিনা।পছন্দ না হলে আম্মুকে নিয়ে বিকালে শাপিং যাস।রফিক ভাই এর দোকান খুলে দিবে আমি বলে দিবো।বলেই আমার হাতে ২০,০০০ টাকা দিলেন।টাকা টা দিয়ে বললেন জানি এতে কিছুই হবে না।২০.০০০ টাকায় খুব বেশী জিনিস কেনা হবে না।লক ডাউনে ব্যাংকে যাওয়া সম্ভব হলো না তাই টাকা তুলতে পারি নি।”

অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।এত গুলা টাকা দিয়ে আমি কি করবো।

বিহান ভাই বলেন কি ভাবছিস টাকা কোথায় পেয়েছি?চুরি করি নি।ডাকাতিও করিনি।ওই যে আমার ল্যাপটপ দেখেছিস ও আমাকে টাকা দিয়েছে।

আমি বললাম ল্যাপটপ কিভাবে টাকা দিয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং করি রাত জেগে।পড়ার ফাঁকে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ও শিখেছি।এটা আমি কাউকে বলি না।তুউ তো ভাবতিস সারাদিন আমি ল্যাপটপ নিয়ে কি করি।ল্যাপটপে টাকা ইনকাম করি।টাকা ইনকাম না করলে এখন বউ কে কিভাবে টাকা দিলাম।শুধু তোকেই বললাম ফ্রিল্যান্সিং এর কথাটা।

যা ব্যাগ গুলা খুলে দেখ।

ব্যাগ গুলা খুলে দেখি,,৫ টা শাড়ি,৫ টা রেডিমেট থ্রি পিছ,কয়েট টা চুলের কাটা, রাবার,কয়েক টা লিপিস্টিক,নেলপালিশ একটা কসমেটিক্স বক্স এর মাঝে রাখা।দেখেই খুশিতে চোখ মুখ ঝল মল করে উঠলো।কি সুন্দর চয়েজ বিহান ভাই এর।উনি যেমন সুন্দর উনার চয়েজ ও তেমন ই সুন্দর। আমি বিহান ভাই কে বললাম আমার খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে।

বিহান ভাই আমার আনন্দ দেখে হালকা হেসে দিলেন।যাক স্বস্তি পেলাম উনার হাসি দেখে।

একটা ব্লাক কালারের থ্রি পিছ নিলাম পরার জন্য।বিহান ভাই কে বললাম বাইরে যান আমি ড্রেস পরবো।বিহান ভাই বলেন ওয়াশ রুমে যা।ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়ি ব্লাউজের সাথে সেপটিন এ এটে গেছে কোনো ভাবেই খুলতে পারছিলাম না।বাধ্য হয়ে বিহান ভাই কে ডাকলাম।বিহান ভাই প্লিজ আসুন না।বিহান ভাই ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে বলে তুই আসলেই একটা সমস্যা।একটা সেপটিন ও খুলতে পারিস না। ওয়াশ রুমেও তোকে হেল্প করা লাগছে।আর কখনো শাড়ি পড়ে ঘোমটা দেওয়ার দরকার নেই।জিন্স পরবি তাও সমস্যা নেই।

ওয়াশ রুম থেকে বেরোতেই দেখি বিহান ভাই অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।বিহান ভাই উনার ক্যামেরা হাতে নিয়ে কয়েক টা ছবি ও নিলেন।

হুড়মুড় করে রুমের মাঝে রিয়া,রাফি,মেহনুবা আপুর প্রবেশ।ওরা আমাকে বলে কিরে দিয়ে বিহান ভাই নাকি সারারাত।কথাটা শুনে বিহান বলে উঠলেন বিহান ভাই কি হ্যা।বিহান ভাই এর চোখ রাঙানি দেখে ওরা একদম ই চুপ হয়ে গেলো।রিয়া আপু বললেন দিয়া বিহান ভাই এর মামিরা নিচে ডাকছে।

নিচে গেলাম থ্রি পিছ পরা আমার।

বিহান ভাই এর মামি আমাকে দেখে বলে উঠলেন,,” শোনো মেয়ে এখন কিন্তু আর এটা তোমার মামা বাড়ি নয় শ্বশুর বাড়ি। মামা বাড়ির সেই আহলাদ ভুলে যাও।সকাল সাড়ে আট টা বাজে বাড়ির বউ হয়ে এত বেলা পর্যন্ত ঘুমোই কেউ।কিছুই কি শেখো নি।আমার চোখ ছলছল করছে বিহান ভাই এর মামির কথা শুনে। আশে পাশে কেউ নেই বিহান ভাই এর মামিরা ছাড়া।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।বিহান ভাই এর ছোট মামি বলে উঠলেন মেয়ে তো শর্ট আমাদের বিহানের সাথে কোনদিকেই যায় না।তাছাড়া গায়ের রং ও তো কাঁচা হলুদের মতো না।মেয়েতো শ্যামলা।বিহান এর মতো এত সুন্দর ছেলে কে এই মেয়ের সাথে বিয়ে বিয়ে দিয়ে আমার ননদ কি শান্তি পেলো বুঝলাম না।এই মেয়ে মাথায় ঘোমটা দাও।আর নতুন বউ এটা কি পরেছো।শাড়ি নেই।আসো এদিকে আসো।বলেই মামির রুমে নিয়ে একটা সুতি শাড়ি পরিয়ে দিলেন আমায়।শাড়ি পরে একটু ও হাঁটতে পারছি না।চোখ ঝাঁপসা হয়ে এসছে আমার।আমি আজ ই আম্মুর কাছে চলে যাবো।এত বাজে ব্যবহার কেউ কখনো করে নি আমার সাথে।মনে মনে অনেক কষ্ট পাচ্ছি চারদিকে কাউকে পাচ্ছি না আমাকে সাহায্য করার জন্য।”

বিহান ভাই এর ছোট মামি বলে উঠলেন আমার ভাতিজি কত সুন্দর। বিহানের সাথে মানাতো খুব।সানজিদা কি দেখে নিজের ননদের এমন শর্ট মেয়ে ছেলের সাথে বিয়ে দিলো বুঝলাম না।মেয়েতো বিহানের কোমর পর্যন্ত হবে না।বিহান ভাই এর মামাবাড়ি থেকে যারা এসছে যা পাচ্ছে কটু কথা শুনাচ্ছে।রিমি মেহনুবা আপুর বোন আমার সাথে সাথেই আছে।বিহান ভাই এর মামির সেই ভাতিজি ও এসছে। বাহ খুব ই সুন্দর দেখতে।

শাড়ি পরে কোনো ভাবেই হাঁটতে পারছি না।আমকে টেনে হিঁচড়ে রান্না ঘরে নেওয়া হলো রান্নার জন্য এদিকে কোনো রান্নায় আমি পারি না।

চলবে,,

(সবাই কমেন্ট করবা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here