তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ১৫.

0
2691

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১৫.
#WriterঃMousumi_Akter

রান্নাঘরে বিয়ের পরে প্রথম প্রবেশ আমার।রান্নাবান্নার কিছুই জানা নেই আমার।আমাকে রান্না করতে বলা হলো।কেনো জানিনা মনে হচ্ছে বিহান ভাই এর মামিদের আমাকে দেখে মোটেও পছন্দ নয়।এমনি তে তারা আগে থেকেই আমাকে অনেক টা হিংসা করতেন। তার একমাত্র কারণ মামা বাড়িতে আমার আদরের পরিমান একটু বেশী।তবে এর আগে কখনো তেমন একটা খারাপ ব্যবহার করে নি।এইদিকে বিহান ভাই এর মামির ভাতিজি সহ বিহান ভাই এর মামাতো বোন রাও এসছে।বিহান ভাই এর বড় মামির ইচ্ছা ছিলো তার ভাতিজি কে বিহান ভাই এর সাথে বিয়ে দেওয়ার কিন্তু বিহান ভাই এর এমন হুট করে বিয়ে করাতে তারা প্রচন্ড বিরক্ত আমার প্রতি।

বিহান ভাই এর মামি আমাকে বললেন মাছ ভাজি করতে।বিহান ভাই এর বড় মামি বাজখাই গলায় বলে উঠলেন আমরা তো আর রোজ আসবো না নতুন বউ কেমন রান্না করে তার হাতের রান্না খেয়েই যাবো।বিহান ভাই এর ছোট মামি বলে উঠলেন কেনো আসবো না আমরা রোজ ই আসবো বিহান বিয়ে করেছে বলে কি আমাদের আসা বন্ধ নাকি।

আমাকে মাছ ভাজি করতে বললেন মামি।এর আগে পরে আমার কখনো রান্না করা হয় নি।উনারা কেউ আমাকে বলেও দিচ্ছেন না কিভাবে কি করবো।গরম ফ্রাই পেন এ গরম তেল এ মাছ দিতেই তেল ছিটে ডান হাত ভীষণ ভাবে পুড়ে গেলো।সাথে সাথে খুব জোরে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি।মানুষ কতটা নিষ্টুর হতে পারে তা হয়তো শ্বশুর বাড়িতে না গেলে বোঝা যায় না।

বিহান ভাই এর মামি বলে উঠলেন, কি হলো ঠিক ভাবে একটু তেল ও দিতে পারো না।হাত না পুড়িয়ে রান্না করলে পাক্কা রাঁধুনি কখনোই হতে পারবে না।অমন নতুন কালে কত যে হাত পুড়েছে তার ঠিক নেই।তুমি মাছ দাও তেল এ।গরম তেল এ হাতের মাংশ পুরা সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।আমি আম্মু বলে জোরে কেঁদে দিলাম।

এমন সময় তাকিয়ে দেখি রিমির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিহান ভাই।উনার চোখে মুখে ভীষণ রাগ।আমি যন্ত্রনায় কেঁদেই যাচ্ছি আর হাত ঝাড়ছি।বিহান ভাই এর দিকে একবার তাকিয়ে আর খেয়াল দিলাম না কারণ হাতের ব্যাথা সহ্য সীমার বাইরে চলে গিয়েছে আমার।

বিহান ভাই দ্রুত ছুটে এসে আমার হাতে একটা ডিম ভেঙে দিলেন।হাতে ফোসকা পড়ে গিয়েছে সাথে সাথে।বিহান ভাই এর পিছনে মামি , রিয়া আর মেহনুবা আর বিভোর ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।বিহান ভাই বিভোর ভাই কে দ্রুত কিছু একটা মলম বা ওষুধ এর নাম বললেন সেটা আনতে পাঠালেন।

বিহান ভাই এর চোখে মুখে ভয়ানক রাগ উনি হয়তো এখনি কিচেনের সব ভেঙে ফেলবেন।মামি দ্রুত এসে আমার হাত ধরতে গেলেন।বিহান ভাই মামির থেকে আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে বললেন থাক আম্মু।

“মাত্র একটা রাতে কি দিয়া এ বাড়ির মেয়ে থেকে বউ হয়ে গিয়েছে।অন্য শ্বাশুড়ি রা যেমন তুমিও সেইম বিহ্যাভ শুরু করেছো।মানে দিয়া আগে তোমার মেয়ে ছিলো আর আজ সে তোমার ছেলের বউ এটাই প্রুভ করতে চাইছো।আমি কি আমার আম্মুকে ভুল চিনেছি তাহলে।আমার আম্মু ও ওইসব মহিলাদের মতো যারা ঘরের বউ আর মেয়েকে আলাদা করে দেখে।”

“মামি বলে কি হয়েছে বাবা।আর দিয়ার হাত টা কিভাবে পুড়লো।”

“প্লিজ আম্মু কিচ্ছু বলো না আর”

বিহান ভাই এর মামি বলে কিরে বিহান এক দিনেই বউ এর হয়ে গেলি।

” বিহান ভাই তীব্র মেজাজ নিয়ে বললেন,,স্টপ ইট মামি।আপনারা কি মানুষ নাকি অন্য কিছু।দিয়াকে এত নোংরা কথা কিভাবে বলতে পারলেন।আপনাদের মুখের এত অরুচিশীল ভাষা আমার জানা ছিলো না।আজ দিয়ার জায়গা আপনার মেয়ে থাকলে সেইম কথা বলতেন।দিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন।এই বাড়িটা কিন্তু দিয়ার।ছোট বেলা থেকে দিয়া এ বাড়িতেই মানুষ। আজ শুধু মাত্র আপনারা ওকে বুঝিয়ে দিয়েছেন এ বাড়িটা ওর না।আপনারা ওকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছেন ওর এ বাড়িতে বিয়ে হয়েছে মানে এটা ওর শ্বশুর বাড়ি নিজের বাড়ি না।এ বাড়িতে দিয়াকে কেউ কোনদিন আলাদা চোখে দেখে নি।বিভোর,রাফি,আমি আর দিয়া সব কিছুতে চার জনের সমান অধিকার।”

বিভোর ভাই এরই মাঝে চলে আসেন আর বলেন বিহান কি হয়েছে।

বিহান ভাই মামিদের দিকে তাকিয়ে বলেন,, আপনারা দিয়াকে কি বলেছেন ও শর্ট ও কালো।হুম দিয়া কালো তো? এটা কি কোনো প্রব্লেম।মানুষ কি কালো হতে পারে না।কালো হওয়া কি মারাত্মক কোনো অপরাধ।কালো মানুষ দের কি কোনো সৌন্দর্য থাকে না।আপনি কালো কে অসুন্দর বলে পৃথিবীর প্রতিটি কালো মানুষ কে বুঝিয়ে দিলেন তাদের সুন্দর কিছু মানায় না।তারা কালো তাই তাদের পাশে কালো মানুষ ই ডিজার্ভ করে তারা।

একটা কথা মাথায় রাখবেন কেউ নিজে থেকে কালো বা শর্ট হয় না বিধাতা প্রতিটি মানুষ কে একজন মাত্র মানুষের জন্য পারফেক্ট করে পাঠিয়েছেন।যে যার জন্য পারফেক্ট সে তাকেই তার জীবন সঙ্গী হিসাবে পাবে।

আর রইলো আপনার দিয়ার কথা।ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখুন দিয়া কালো নয়।তবে হ্যাঁ আপনার ভাতিজির মতো সাদা মূলা ও নয়।দিয়ার গায়ের রং একটু চাপা তবে দিয়া হিউজ সুন্দর দেখতে অন্য মেয়েদের থেকে।দিয়াকে শর্ট বলেছেন দিয়ার হাইট ৫ ফিট ২ একটা মেয়ে হিসাবে যথেষ্ট। দিয়া তো হাইট দিয়ে আকাশ ছুঁয়ে দেখবে না।দিয়া ওর যোগ্যতায় এ পৃথিবীর শীর্ষে যাবে।

দেখুন মামি দিয়া মাত্র এস এস সি পাশ করেছে।কত টুক পিচ্চি একটা মানুষ। আপনি ওকে কিভাবে টেনে টুনে রান্না ঘরে এনে রান্নার কাজে দিলেন।এ বাড়িতে কি কাজের লোকের অভাব মামি।এত টুক বাচ্চা একটা মেয়ে তার সাথে এত জঘন্য ব্যাবহার করতে বিবেকে বাঁধলো না।

বিহান ভাই আরো বলেন,,মামি দিয়ার দুই দুইটা ভাই বিভোর আর রাফি দাঁড়িয়ে আছে।আজ পর্যন্ত ওদের সামনে দিয়াকে কিছু বলে কেউ পার পাই নি।আজ শুধু আমার মামি বলে ওরা আপনাকে কিছুই বলে নি।

বিহান ভাই এর মামি কে বিহান ভাই এর আম্মু বলে ছিঃ তোমরা আমার দিয়ার সাথে এত নিকৃষ্ট ব্যাবহার করতে পারলে।তোমাদের কি আমি বলেছি দিয়াকে দিয়ে কাজ করাও।তোমরা আজ দিয়ার কাছে আমাকে এত টা ছোট না করলেও পারতে।আমি বিহান আর দিয়া কে কোনদিন আলাদা চোখে দেখি নি।দিয়া আমার ছেলের বৌ না আমার মেয়ে ছিলো আর থাকবে।

বিহান ভাই এর মামি বলেন বিহান তোর বউ এক দিনেই নালিশ দেওয়া শুরু করেছে।বাহ দেখতে ছোট কিভাবে বর কে রাগিয়ে দেওয়া যায় সেই ব্রেইন ভালোই আছে।

বিহান ভাই বলেন দিয়া ওই ধরনের মেয়েই না।আমাকে রিমি বলেছে সব কিছু।

বিহান ভাই এর মামি বলেন অত টুক বাচ্চা কি বলতে কি বলেছে তুই সেটা বিশ্বাস করেছিস।

বিহান ভাই বলেন কে কি বলতে পারে আমি জানি মামি।শুনুন দিয়া আমার স্ত্রী ও ভুল করলে আমি শাষন করবো আর ও আপনাদের ফ্যামিলির কেউ না দয়া করে ওকে কেউ শাষন করতে আসবেন না।যেগুলা দিয়া কে শিখাচ্ছেন ওগুলা নিজের মেয়ে আর ভিতিজি কে শেখান। কারণ আপনার মতো শ্বাশুড়ি ওদের কপালে জুটলে কষ্ট আছে।

বিহান ভাই এর মামি বলেন আসলে আমরা একটু কাজ কাম শিখাচ্ছিলাম।

বিহান ভাই বলেন কেনো মামি।ওর এখন কি শিখতে হবে।ও সময় হলে সব শিখে যাবে।দিয়ার লেখাপড়া শেষ না হলে ওর সংসারের কোনো কাজ করা লাগবে না।ফুপ্পিকে আমি কথা দিয়েছি।

বিভোর ভাই এর চোখ ছল ছল করছে।বিভোর ভাই আমার কাঁন্না সহ্য করতে পারছেন না।আমাকে অনেক বেশী ভালবাসেন।বিভোর ভাই দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম।একদম ফর্সা সব সময় মজা করে সবার সাথে।সেই মানুষ টার মুখ চুপসে গিয়েছে।আমাকে বলে বোন তুই একা না।আমরা আছি তো।নেক্সট তোকে কেউ কিছু বললে কার সাথে কার কি রিলেশন তোর ভাইয়েরা ভুলে যাবে।

হাতের যন্ত্রণার চেয়ে মনের যন্ত্রনায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করছি।তবে বিহান ভাই বলা কথা গুলো শুনে নিমিষেই সব কষ্ট দূর হয়ে গেলো।

বিহান ভাই আমার হাত ধরে টেনে উনার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন।রাগে উনি যেনো ঘেমে গিয়েছেন।মুখ লাল টমেটোর মতো হয়ে গিয়েছি।

কাঁদতে কাঁদতে আমার হেচকি উঠে গিয়েছে।বিহান ভাই আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন, এই ছোট্ট হাতটায় এত যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না আমি জানি।যন্ত্রণা গুলো সব আমার হয়ে যাক।তবুও এই পুচকি কে কাঁদাস না প্লিজ।এই পুচকির চোখের পানি অনেক মূল্যবান।এ কাঁদলে কারো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যায়।

আমি বিহান ভাই এর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।

বিহান আমার দুই গালে হাত দিয়ে আদর মাখা কন্ঠে বলেন খুব ব্যাথা পেয়েছিস তাইনা।অনেক কষ্ট হচ্ছে তোর।

আমি বললাম আমক আম্মুর কাছে যাবো।এ বাড়িতে আর একটুও থাকবো না।এখানে কেউ আমাকে ভালবাসে না।সবাই আমার পর।সবাই শুধু খারাপ ব্যবহার করে বলেই আবার জোরে কেঁদে দিলাম।

আমি যে বিহান ভাই কে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলেছি উনি সেটা খুব ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছেন।

চলবে,,,

(স্টোরি টা সারারাত লিখতে পারলে ভাল লাগতো।কিন্তু হাত ব্যাথা লাগে।আমার শহরে কিন্তু আজ প্রচুর বৃষ্টি তাই বর্ষনের অপেক্ষা টা এই মুহুর্তে বড্ড বেমানান)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here