তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ১৩.

0
2163

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১৩.
#WriterঃMousumi_Akter

?
প্রচন্ড অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিহান ভাই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার সাথে ঘুমোতে বাধ্য হলেন।উনার বিরক্তি মাখা মুখ টা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উনি আমার পাশে ঘুমোতে বিন্দুমাত্র রাজি নন।

“ঘুমোলেন তো ভালো কথা দুজনের মাঝে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের বাঁধ আমার সতীন তার প্রথম বউ তার ভালবাসার সঙ্গী কোলবালিশ কে রাখলেন।এই কোলবালিশ এর প্রতি যা হিংসা হচ্ছিলো সেটা বাংলা ভাষাতে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছিলো না।এই কোলবালিশ কে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে আমাদের দুজনের মাঝের সব থেকে বড় বাঁধা।একে কেটে এর তুলা গুলো বের করে মাটি চাপা দিয়ে বিহান এর রুম থেকে এর সমাধি দিতে ইচ্ছা হচ্ছে।আড় চোখে কোলবালিশের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে ঘুরে সুয়ে পড়লাম।আমি তো কত মানুষের মুখে শুনেছি ছেলে মানুষ যতই রাগি হোক বউ কাছে পেলে তাদের আর রাগ থাকে না। কিন্তু উনি তো উগান্ডার বাসিন্দা উনার দ্বারা সব ই সম্ভব।এমনি তে বিরক্তির শেষ নেই এরই মাঝে আরো বড় বিরক্তির সূচনা হয় আমার ফোন বেজে ওঠাতে।বিহান ভাই আমার দিকে ঘুরে জঘণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন টা আমার হাত থেকে নিয়ে কেটে দিলেন। বিরক্তির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন তোকে এত রাতে কে ফোন দিচ্ছে তোর বান্ধবী দের কি কমন সেন্স নেই। এত রাতে এতবার ফোন দেই কেউ।আমি বিহান ভাই কে বললাম আসলে ওরা জানে আজ আমার বিয়ে হয়েছে তাই বাসর ঘরের খোজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিচ্ছে।বিহান ভাই কপাল কুচকে বলে অদ্ভুত খোজ খবর নেওয়ার কি আছে।তুই কি বাঘের ডেরায় আছিস যে তোকে খেয়ে ফেলবো তার জন্য ফোন দিচ্ছে।উনার গা জ্বলানো কথা শুনে রাগে শরীর রি রি করছে।আমিও কিছুটা বিরক্তির সাথে বললাম ফোন বাজলে আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে।উনি বললেন হুম হচ্ছে তো! আর যদি ডিস্টার্ব করিস এইবার কিন্তু ভূতের কাছে দিয়ে আসবো তোকে। অনেক রাত হয়েছে চুপ চাপ ঘুমো।”

বন্ধু জাতি চুপ হওয়ার জিনিস না, তারা একবার না পারিলে শত বার চেষ্টা করে ফোন দিয়েই যাচ্ছে। বিহান ভাই ফোন টা রিসিভ করে লাউডে দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন।আর মহা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ফোনের ওপাশ থেকে বন্ধু জাতি এক সাথে বলে উঠেছে কিরে দিয়া ফুলসজ্জা কেমন হচ্ছে।তোর ফিলিংস টা কি এই মুহুর্তে। এমন ভয়ংকর কথা তোদের এখনি বলতে হলো মনে মনে দোয়া পড়ছি থাম, থাম,থাম।

ওদের কথা শুনে চোখ হালকা তুলে বিহান ভাই এর দিকে তাকালাম,, উনি যে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে উনি আমাকে এসব উল্টাপাল্টা প্রশ্নের জন্য কুচিকুচি করে কাটবেন।আমি ফোন টা কানে নিয়ে অসহায় এর মতো বললাম,, কাল ফোন দেই।বন্ধু জাতি আবার প্রশ্ন তুলে ধরলো ক্যানো দিয়া বিহান ভাই বুঝি খুব আদর করছেন।দিয়া কিস কত গুলা করেছেন ওদের প্রশ্ন শুনেই বেশম খেলাম।কাশি আর থামছেই না।আমি বললাম ফোন টা বিহান ভাই এর কাছে দিচ্ছি উনার মুখেই শোন।

“অনি আমার ফ্রেন্ড বলে ওঠে দিয়া খবর দার ভুলেও না উনাকে আমাদের খুব ভয় লাগে প্লিজ উনার কাছে দিস না।পাশ থেকে আরেক জন বলে উঠলো জানিস দিয়া সিনিয়র আপুরা বলাবলি করে বিহান ভাই যে কার বর হবে এত হ্যান্ডসাম ছেলে যে মারাত্মক হট লাগে বিহান ভাই কে।রাগি হলেও মারাত্মক রোমান্টিক হওয়ার কথা উনার।উনার মতো হ্যান্ডসাম হট ছেলে আদর করলে জীবনে আর কি লাগে।”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে রইলাম যে আমি নিরঅপরাধ আজকের মতো ক্ষমা করে দেন।

ফ্রেন্ডরা অতটুকু বলে থামলেই হতো এরই মাঝে আবার বলে ওঠে ওরা,, দিয়া আমরা কি প্লান করতাম মনে আছে বিহান ভাই যখন রুমের লাইট অফ করবে তুই যেনো কোন গান টা গাইবি।আমি এক অসহায় বালিকা স্বামির চোখ রাঙানির সামনে বসে ঠান্ডা গলায় বললাম কোন গান টা। ফ্রেন্ড জাতি গেয়ে উঠলো তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া আমি অন্ধকারে বন্ধ ঘরে যাবো মরিয়া বলেই ওরা মারাত্মক হাসি দিলো।
——————————————————
আর এই দিকে আমার মারাত্মক কাশি শুরু হলো আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি এক ভয়ানক মুহুর্তে অবস্থান করছি আমি। বিহান ভাই এক গ্লাস পানি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমার ফোন টা কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিলেন।পানি খাওয়ার পরে বিহান ভাই বলেন তোর অতটুক ফ্রেন্ড রা আমাকে হট বলে দিয়া।আমাকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করে তোর ফ্রেন্ড রা হাউ ডিজগাস্টিং দে আর।ছিঃকি জঘন্য রুচির গান তোদের চুজ।এইজন্য তোর লেখাপড়ার এত উন্নতি আই সি দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলে সুয়ে পড়লেন। উনি ইংলিশ গান ছাড়া শুনেন না সেখানে ফ্রেন্ড রা এই গান গেয়ে আমার প্রেজটিজ হুইল দিয়ে ধুয়ে দিলো।

মিনিটে দশেক পরে বিহান ভাই বলেন দিয়া এক মিনিট ওয়েট তোর জন্য একটা জিনিস আছে।আমি বললাম কি?বিহান ভাই হাতে সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং পরিয়ে দিলেন।বলেন বাসর ঘরে বউ কে দিতে হয়। বাইক কেনা টাকা দিয়ে তোর জন্য এটা কিনেছি।আব্বু লাস্ট জন্মদিনে টাকা দিয়েছিলো R15 কেনার জন্য যদিও আমি চেয়েছিলাম বাইক।আমার বাইক আছে বলে টাকা রেখে দিয়েছিলাম না কিনে।

আমি বিহান ভাই কে বললাম আমি তো আপনার জন্য কিছুই আনি নি গিফট তাহলে কি দিবো।

বিহান ভাই বলেন তুই কি আমাকে বিয়ে করেছিস আমার দায়িত্ব নিতে।বিয়ের পরে সব কিছুর দায়িত্ব ছেলেদের থাকে। একটা মেয়ে এমনিতেই সব কিছু ছেড়ে বাবার বাড়ি থেকে চলে আসে এটাই তো সব থেকে বড় ত্যাগ আর তাছাড়া তুই কি জব করিস যে আমাকে কিছু দিবি।আগে বড় হ জব কর আমার মতো ডাক্তারি তে চান্স পেতে হবে।

আমার মনের মাঝে অন্য রকম একটা ভাল লাগার সৃষ্টি হলো।মানুষ টা কত ভালো।আমি জানি বিহান ভাই আমাকে গিফট করবে বলেই বাইক কিনেন নি।আমার জন্য নিজের শখ বিসর্জন দিয়েছেন মানুষ টা।নিশ্চয় রাগ একটু কমেছে।

এইদিকে কোনদিন শাড়ি পরি নি।শাড়ি পড়ে কি যে অস্বস্তি তে পড়েছি সেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।শাড়ি বার বার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কখন ঘুমের জগতে পাড়ি দিয়েছি বুঝতে ও পারিনি।ঘুমের মাঝে আমার অন্তরচক্ষু জাগ্রত ছিলো।হটাত কারো গরম নিঃশ্বাস চোখে মুখে আচড়ে পড়ছিলো। অদ্ভুত এক ভাল লাগা ঘুমের মাঝেই অনুভব হচ্ছিলো।চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই আমার মুখের উপোর ঝুঁকে আছেন। উনার নাক হালকা আমার নাকে স্পর্শ করেছে।উনার নিঃশ্বাস ই আমার চোখে মুখে পড়ছে।বাহ!এই মানুষ টা কে নিয়ে সারাক্ষণ দুঃচিন্তায় থাকতাম সে আমায় ভালবাসে কিনা।আর আজ সেই মানুষ টাই আমার বর।

খেয়াল করে দেখি শাড়ি পেটিকোট হাঁটু অবধি উঠে আছে পেট নাভি সব দেখা যাচ্ছে।তার উপর বিহান ভাই আমার দিকে এমন ভাবে ঝুৃকে আছেন।উনি কি আমার এই বিশ্রি অবস্থা খেয়াল করেছেন।আমি যদি এখন চোখ মেলে তাকায় বিহান ভাই আমার ঘুমের মাঝেও আর আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না উনাকে আমি চিনি লজ্জা পেলে আরো রেগে যাবেন। উনি নিজের উপর ও রাগ দেখান।কি যে লজ্জা লাগছে ইস এভাবে উনার সামনে সুয়ে আছি আমি।

বিহান ভাই আমার কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলেন দিয়া তুই সত্যি এতটা সুন্দর। ঘুমোলে কত টা বাচ্চা বাচ্চা লাগে তোকে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে ঘুমন্ত পরী নেমে এসেছে আমার রুমে।শাড়ি পরতে পারিস না আমাকে বললে কি অসুবিধা হতো।এভাবে এলোমেলো ভাবে পাগলি দের মতো সুয়ে থাকলে কি আমি নিজেকে সামলাতে পারি।তোকে ভীষণ ছুয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু না দিয়া আমি তোকে স্পর্শ করলে তোর মনে হবে আমি এসব কারণেই তোকে বিয়ে করেছি কিন্তু আমি সেটা চাই না।আর আমি কোন ভাবেই তোকে কষ্ট দিতে চাইনা।আমি তোকে সম্মান করি দিয়া। কিন্তু আমার ভেতরের দিয়া পাগল বিহান যে বাঁধা মানতে চাইছে না।বউ এর এমন পাগলি অবস্থা দেখলে কোনো পাগল প্রেমিক কি নিজেকে সামলে নিতে পারে।তুই কি চাস আমার হাতে বড় রকমের অনর্থ হয়ে যাক।বলেই বিহান ভাই আমার পেটে শাড়ি টা টেনে পেট ঠিক করে দেন।সমস্ত শরীরের শাড়ি ঠিক করে কপালে আরেক বার ও আলতো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে সুয়ে পড়েন।

প্রিয়দের স্পর্শ বুঝি এত টাই ভাল লাগে।যে ভাল লাগা আজ আমি বিহান ভাই এর স্পর্শ তে পেয়েছি সেই ভাল লাগার অনূভুতি পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা সম্ভব না।যেনো ভাল লাগার এক অন্য জগত।

পরের দিন সকালে এলার্ম এর ঘ্যান ঘ্যান শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আমার।ঘুম ভাঙলেও আমি কিছুতেই চোখ খুলছি না।চোখ এটে আরো বেশী ঘুম পাচ্ছে আমার।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি মাত্র ৫ টা বাজে।বিহান ভাই আমার পেট সহ কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন খুব শক্ত পক্ত করে।বিহান ভাই কখন উনার টি-শার্ট খুলে রেখেছিলেন।খালি গায়ে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে উনি সুয়ে আছেন।ইস কি সুন্দর লাগছে উনাকে।প্রেমে পড়ার জন্য উনার এমন রুপ ই যথেষ্ট।উনি হয়তো ঘুমের মাঝে খেয়াল ই করেন নি উনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছেন।এর ই মাঝে বিহান ভাই এর ও ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ভাঙতেই বিহান ভাই দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলেন ওহ গড।আমি দিয়াকে ওহ নো।১০০ ভোল্টেজ এর কারেন্ট শকড এর মতো নিজেকে সরিয়ে নিলেন।

যা কিছু হয়ে যাক আমি কিছুতেই চোখ মেলে তাকাচ্ছি না।বিহান ভাই এলার্ম টা আমার কানের কাছে এনে রাখলেন।কত সময় বা কানের মাঝে এই ঝালাপালা নিয়ে থাকা যায়।বাধ্য হয়ে উঠে চিৎকার দিলাম কি সমস্যা কি আপনার এভাবে কানের কাছে এই ঘ্যান ঘ্যান মেশিন কেনো রেখেছেন শুনি।এত ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠি না আপনি জানেন না।

উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে একটা কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।
কাগজ টা খুলে আমার চক্ষু কপালে,,

“৫ টায় ঘুম থেকে উঠবি ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে ৫ঃ৩০ এ পড়তে বসবি সকালে খুব জোরে পড়া যাবে না।আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে।আমি যতক্ষন ঘুমিয়ে থাকবো রুমে কোনো সাউন্ড করা যাবে না এবং আমাকে ডাকা ও যাবে না।মানে উনি ঘুমোবে আর আমাকে জাগিয়ে দিবে বাহ রে বিবাহিত জীবন বাহ।৮ঃ৩০ এ খাবার খেয়ে দেন রেস্ট নিয়ে নিজের রোজ কার মহা রুটিন আড্ডা যেটা না দিলে তোর পেটের ভাত হজম হয় না সেটা করবি।১০ঃ৩০ এ আবার পড়তে বসবি ১২ঃ৩০ এ গোসল করে ঘুম দিয়ে ২ টার আগে উঠে খেয়ে নিবি।তারপর ২ ঘন্টা নিজের স্বামির সেবাযত্ন করবি মানে আমি যা বলবো তাই শুনবি।৪ টার পর তোর টুক টাক যা কাজ আছে সেগুলা করবি চাইলে টিভি দেখতে পারিস তবে কোনো সিরিয়াল দেখতে পারবি না।তাহলে রিমুট এর অস্তিত্ব থাকবে না।৬ টার দিকে আবার পড়তে বসবি রাত ৯ টায় পড়া শেষ করে ডিনার করে ১০ টার আগে ঘুমিয়ে পড়বি রুটিনের যদি এলোমেলো হয় আমার খারাপ রূপ দেখবি”

চলবে,,,

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা ভালবাসা নিও সবাই।আজকের পর্ব কেমন হলো কমেন্টে জানিও)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here