তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ১২.

0
2296

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
১২.
#WriterঃMousumi_Akter

অপেক্ষা বড্ড যন্ত্রণার সে অপেক্ষা যদি হয় প্রিয়জন কে দেখার অপেক্ষা।কেটে গেছে ১৪ টা দিন।এতদিনে বিহান ভাই এর একটা নিঃশ্বাস ও আমি শুনতে পাই নি।যে নাম্বার থেকে ফোন দেই সেটাই ব্লকে রাখেন উনি।পড়ন্ত বিকালে উনার দেওয়া খরগোশ টা কোলে নিয়ে উনার দেওয়া বিহান দিয়া পাখিদের সাথে গল্প করছি।বিহান নামক সবুজ পাখিটাকে বলছি এই বিহান তুমি কি আর আসবে না ফিরে।এর ই মাঝে আম্মু এসে বলে, দিয়া শিঘ্রি নিচে আয় আয় দ্রুত রেডি হয়ে নে।আমি বললাম আম্মু আমি তো রেডি ই আছি আর কি রেডি হবো।আম্মু, আব্বু আর ভাইয়া দ্রুত রেডি হয়ে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।ঠিক বুঝলাম না হঠাত কি হলো।কোথায় যাচ্ছি সেটাও কিছু বললো না।আমি আবির ভাইয়া কে বললাম ভাইয়া কোথায় যাচ্ছি আমরা।ভাইয়া বললো চিন্তা করিস না।তোর ভাইয়া তোর খারাপ চাইবে না কোনদিন দিয়া।।।

অদ্ভুত এখানে খারাপ চাওয়ার কি আছে!

যেতে যেতে সন্ধ্যা প্রায়।কাজি অফিসের সামনে গিয়ে গাড়িটা থামলো।গাড়ি থেকে নেমে দেখি বিভোর ভাই,রাফি, বিহান ভাই এর মা,বাবা দাঁড়িয়ে আছে।আমি ঠিক বুঝলাম না কি হচ্ছে।আমাকে হাত ধরে টেনে কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো।এতক্ষণে বুঝতে আর আমার বাকি নেই এখানে আমাকে বলি দিতে আনা হয়েছে।আমার সামনে সাদা পাঞ্জাবী,পায়জামা পরে টুপি মাথায়,দাঁড়ি মুখে যে লোকটি উনিই কাজি সেটা বুঝতে আর আমার বাকি নেই।চারদিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু,আব্বু, ভাইয়া,মামা, মামি,বিভোর ভাই সবার মুখে অদ্ভুত এক স্বস্তির হাসি।ওদের দেখে খুব ই খুশি মনে হচ্ছে।অদ্ভুত ব্যাপার আমার বিয়ে কার সাথে দিচ্ছে এরা।এর ই মাঝে কাজি সাহেব বলেন কই সে ছেলে কই উনাকে দ্রুত আসতে বলুন।বিভোর ভাই বলেন এইতো চলে এসছে।আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম।আসলে কি হচ্ছে কি।ব্যাপার টা এমন ওঠ ছেড়ি তোর বিয়ে।বাই দ্যা ওয়ে আমার বিয়ে কার সাথে সেটাই তো বুঝছিলাম না।

এরই মাঝে আগমণ ঘটলো সেই বিশেষ মানুষটির যার সাথে বিয়ে দিবে বলে আমাকে এখানে তড়িঘড়ি করে আনা হয়েছে।দরজায় প্রথম পা রাখতেই চমকে গেলাম আমি।

এত সুন্দর ফিগার,এত সুন্দর সুপুরুষ বিহান ভাই ছাড়া আর কে হতে পারে।সবার কথাবার্তা শুনে যা মনে হলো উনি মাত্র ই ঢাকা থেকে এসছে আর সোজা এখানে চলে এসছে।কালো শার্টের উপর ডাক্তার দের সাদা এপ্রোণ পরা,পরণে কালো জিন্স পায়ে কালো বুটস জুতা।

যেনো কয়েক লক্ষ বছর পরে বিহান ভাই এর মুখ টা দেখলাম।আমার যে হুট করেই বিয়ে সে নিয়ে সব চিন্তা উড়ে গেলো কারণ আমার মাথায় একমাত্র চিন্তা বিহান ভাই।বিহান ভাই কে এভাবে দেখতে পাবো ভাবতেও পারিনি।মনের মাঝে চৈত্র মাসের কড়া রৌদ্দুর এর মতো ক্ষরণ হচ্ছিলো বিহান ভাই কে ছাড়া।মনের মাঝে জ্বলে পুড়ে যেনো দাউ দাউ আগুন জ্বলছিলো।আমার চারপাশের মানুষ গুলো ঠেলে ফেলে বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছা করছে আমি তোমাকে ভালবাসি বিহান।ভীষণ ভালবাসি।কিন্তু ভয়,লজ্জা,জড়তা আমাকে সেটা করতে দিলো না।।

আমার সব ভাবনা কাটিয়ে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন উনি।আমি অবাক করা নয়নে তাকিয়ে রইলাম।উনি একবার ও আমার দিকে তাকালেন না।কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলেন।আমাকে কয়েক বার কবুল বলতে বলা হলো কিছু না ভেবে চিন্তেই কবুল বলে দিলাম।

আমি সত্যি নির্বাক হয়ে গেলাম।আমার মুখে আর কোনো কথা নেই।এটা কিভাবে পসিবল হলো।যে মানুষ টা এত দিনে এক টা কথাও আমার সাথে বলেন নি সে আমাকে কবুল বলে নিলেন।আম্মু বিহান ভাই কে বলে বিহান এখন থেকে দিয়ার সব দায়িত্ব তোর কিন্তু।বিহান ভাই আম্মুকে হেসে দিয়ে ব ম্লে ফুপ্পি তুমি একটুও চিন্তা করো না দিয়া কে আমি দেখেশুনে রাখবো।আমি আশ্চর্য হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।বাড়ির মানুষ ই বা হুট করে কিভাবে আমাদের দুজন কে বিয়ে করাতে রাজি হলো।আমি বুঝতে পারলাম এক্ষুণি আমি সব প্রশ্নের উত্তর পাবো না তাই আজ আর কাউকে কিছু প্রশ্ন ও করবো না।

আমাকে বিহান ভাই দের বাড়িতে নেওয়া হলো।একি বিহান ভাই দের বাড়িতে রিয়া,আবিদ,রুশা আপু সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।বাড়িতে পা রাখতেই বুঝলাম এরা আগে থেকেই সবাই সব টা জানতো শুধু জানতাম না আমি কিছু।গাড়ি থেকে নামার সাথেই কয়েকজন মেয়ে আমাকে তড়িঘড়ি করে নিয়ে সাজাতে শুরু করলো।বুঝতে বাকি নেই এরা পার্লার এর মানুষ। আমার মুখে টোটাল কোনো কথা নেই আসলেই আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছি আর কয়েক টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।

রিয়া আমাকে বলে দিয়া আমি তো ভাবতেই পারছি না বিহান ভাই এর সাথে তোর বিয়ে না দিলে উনি আর বাড়িতে আসবেন বা কোনদিন।দিয়া বিহান ভাই তোকে ভালবাসতেন এটা ভাবতেই পারছি না।আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলি মানে।
রিয়া বলে মানে আগামি সপ্তাহে বিহান ভাইয়ের সেমিষ্টার ফাইনাল এক্সাম।উনি বাড়িতে সোজা বলে দিয়েছেন আম্মু আমি কোনো এক্সাম দিতে পারবো না।আই লাভ দিয়া। আমি দিয়াকে ভালবাসি আর আজ বা কালের মাঝে আমার সাথে দিয়ার বিয়ে না দিলে আমি এক্সাম দিতে পারবো না।আর আমি কখনো বাড়িতেই আসবো না।বিহান ভাই তো এক কথার মানুষ। মামা মামি আবির ভাইয়া কে ঘটনা টা বলে। আবির ভাইয়ার জান পরাণ তো বিহান ভাই।আবির ভাইয়া সোজা কাকু কাকিমা কে বলে তোর বিয়ে করিয়ে দিলো।

আমার চিন্তা আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো।বিহান ভাই আমাকে দু’চোখে দেখতে পারে না।সে আমাকে বিয়ে হোয়াই?এরই মাঝে ঠাস করে আবার লক ডাউন ও দিয়ে দিছে।বিহান ভাই এর হাতে আমাকে খুন হওয়ার জন্য বোধ হয় এই লক ডাউন।

আমাকে বিহান ভাই এর রুমে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসলো সবাই।পুরা ঘর টা কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো।অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ চারদিকে।ফুলসজ্জা নাকি মরণ সজ্জা সেটাই বুঝছি না।আমার প্রিয় বর ভয়ানক রাগি বিহান ভাই রুমে প্রবেশ করেই ঠাস করে দরজা টা লাগিয়ে দিলেন।দরজা লাগানোর শব্দে বুক টা কেঁপে উঠলো আমার।

বিহান ভাই রুমে প্রবেশ করেই খাটের উপর গা এলিয়ে দিয়ে সুয়ে পড়লেন আর কপালে হাত চালাচ্ছিলেন।কিন্তু আমার সাথে কোনো কথাই বলছেন না।এনার রাগ যে বিন্দুমাত্র কমে নি সেই দিনের ঘটনার জন্য সেটা বুঝতে বাকি নেই আমার।আমি জানি আমি যদি কথা না বলি উনি নিজে থেকে ভুলেও কথা বলবে না।তবে উনাকে বেশ খানিক টা শান্ত লাগছে।রাগের মাত্রা হয়তো কিছুটা কম আছে।ভুক যেহেতু আমার ই ছিলো তাই বিহান ভাই এর রাগ আমাকেই ভাঙাতে হবে।আমি জানি উনি একবার বকে দিলেই পরের বার শান্ত হয়ে যাবে।

“ভয় আর সংকিত মন নিয়ে বললাম বিহান ভাই।”

“উনি কোনো উত্তর ই দিলেন না।”

“আবার ডাকলাম বিহান ভাই।”

“উনি কপাল থেকে হাত টা সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন।”

“কি প্রব্লেম টা কি আপনার বিহান ভাই।আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?তাহলে বিয়ে ও বা করেছেন কেনো?”

“বিয়ে মানুষ কেনো করে জানিস না দিয়া খানিক টা বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললেন।”

“মানুষের টা জানি এবার আপনার টা বলুন।”

“মানুষ যে জন্য করে আমিও সেজন্য করেছি।”

“মানুষ ফুলসজ্জা করার জন্য বিয়ে করে।বাসর ঘরে বউ রেখে কপালে হাত চালায় না।।”

“বিহান ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে তুই কি এখন ফুল সজ্জা করতে চাস দিয়া।”

“উনার এই কথাটা শুনে মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলাম।উনার মুখে কি কিছুই আটকায় না।আরে বলদ মেয়েরা যাকে ভালবাসে তার কাছে থেকে আদর ভালবাসা ই চাই।তুই তো খাটাস একটা।”

আমি লজ্জায় চুপ হয়ে গেলাম।

“বিহান ভাই বলেন দেখ দিয়া আমি মারাত্মক ক্লান্ত।এসব ফুলসজ্জা আজ করতে পারবো না।একটানা তিন দিন ঘুমোবো তারপরে ফুলসজ্জা করবো।সেই ঢাকা থেকে জার্নি করে এসছি মারাত্মক ক্লান্ত।আজকে ডিস্টার্ব করবিনা।”

“এই শুনুন বিহান ভাই এসব ক্লান্ত ফ্লান্ত সব বাহানা।আপনি আমাকে ইগনোর করতে চাইছেন সেটা বলুন।আর দীর্ঘ দিন ব্লকে রেখে এখন বিয়ে কেনো?কেনো বিয়ে করেছেন।”

“বেশী বকবক করলে রুমের বাইরে রেখে আসবো।আর চুপচাপ ঘুমিয়ে যা বলছি।আর ক্লিয়ার কথা শুনে রাখ দিয়া আমার কাছ থেকে এসব স্বামি স্ত্রীর প্রেম ভালবাসা ভুলেও আশা করিস না।।তুই আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস যতটা পুড়িয়েছিস বিহান তোকে কোনদিন ক্ষমা করবে না। আমাকে কেউ কষ্ট দিলে আমি তাকে আর কোনদিন ক্ষমা করি না।বলেই ড্রয়ার থেকে ট্রাউজার বের করে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলেন।”

কেনো জানিনা বার বার মনে হচ্ছিলো বিহান ভাই আমাকে স্পর্শ করুক,ভালবাসুক।কিছুক্ষণ আগেও মনে হয়েছিলো বিহান ভাই হয়তো সব মান অভিমান ভুলেই আমাকে বিয়ে করেছেন। আজ হয়তো আমাকে বুকে টেনে নিবেন।কোনো কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে সোফাতে সুয়ে পড়লাম।

হালকা শীত শীত লাগছিলো।বিহান ভাই ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখেন আমি শীতে কাঁপছি।উনি আমার মাথার কাছে বসলেন, উনার চুলের ফোঁটা ফোঁটা পানি টুপটুপ করে আমার কপালে পড়ছে।বিহান ভাই একটা আঙুল দিয়ে আমার কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলেন আই লাভ ইউ দিয়া।তুই কি বুঝিস না তোকে ভালবাসি বলেই বিয়ে করেছি।সেদিন তোকে আই লাভ ইউ মেসেজ পাঠিয়েছিলাম আর তুই কিনা উল্টা গালি দিয়ে দিলি দিয়া।জানিস কত আশা নিয়ে মেসেজের রিপ্লের অপেক্ষা করছিলাম।মন টা ভেঙে চুরে গুড়িয়ে গেছিলো আমার সেদিন।তবুও আমি তোকে চাই দিয়া।শুধুই তোকে।এগুলা বলতে বলতে বিহান ভাই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডের উপোর সুইয়ে দেন।তারপর গায়ে একটা কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে বলেন পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ট সুন্দর নারীকে আমার অর্ধাঙ্গীনী হিসাবে আমার জীবনে ওয়েলকাম।

বিহান ভাই তারপর সোফায় গিয়ে সুয়ে পড়েন।কিন্তু আমি চাইছিলাম উনি আমার পাশেই সুয়ে থাকুন।ইচ্ছা করেই গিয়ে বললাম বিহান ভাই আমার একা ঘুমোতে খুব ভয় লাগছে।বিহান ভাই বলেন তুই এত সময় জেগে ছিলি দিয়া।আমি বললাম না বিহান ভাই হঠাত ঘুম ভেঙ গিয়েছে।বিহান ভাই বলেন তোর পাশে ঘুমোতে পারবো না।এত দিন তো একাই ঘুমোতিস।

আমি বললাম আজ পারবো না আমার খুব ভয় লাগছে।বিরক্ত হলেও আমার পাশে এসেই ঘুমোতে বাধ্য হলেন।

চলবে,,

(আজকের পর্ব কেমন হলো গাইস কমেন্টে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here