ঘৃণার মেরিন সিজন ৪( পর্ব ১৮+১৯)

0
536

#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 18
writer : Mohona

.

নীড় : মমমেরিন…
মেরিনের কোনো সারা নেই …
নীড় আর ১বার ডাক দিলো। তবুও মেরিনের কোনো সারা নেই। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে দুজন। নীড় মেরিনের কাধে হাত রেখে হালকা ঝাকি দিলো।
নীড় : মেরিন…
মেরিন নীড়ের বুকের ওপর ঢলে পরলো।
নীড় : মেরিন… ওহ নো …জ্ঞান হারিয়েছে ।

নীড় মেরিনকে কোলে তুলে গাড়িত বসিয়ে বাসায় নিয়ে গেলো। মেরিনকে দেখে নিহাল-নীলিমা চিন্তিত হয়ে গেলো।
নীলিমা : কি হয়েছে মেরিনের? কি হয়েছে?
নীড় : জ্ঞান হারিয়েছে।

নীড় মেরিনকে রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো ।
নীলিমা : হয়েছেটা কি? বলনা। জ্ঞান হারালো কেন?
মা কি বলেছে নীড়ের কানে কিছুই ঢোকেনি।
নীড় : এভাবে ভেজা কাপড়ে থাকলে যে ঠান্ডা লললেগে যাবে। মমমামনি… মামনি… ওর ড্রেসটা পাল্টে দাওনা …
নীলিমা : হামমম।
নীলিমা কাবার্ড থেকে ১টা জামা বের করলো। দেখলো নিহাল বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নীড় মেরিনের হাত ধরে বসেই আছে।
নীলিমা : বাহিরে যা…
নীড় : কেন?
নীলিমা : ওর চেঞ্জ করাবো…
নীড় : হামমম।
নীড় বেরিয়ে গেলো ।

.

একটুপর…
নীড় মেরিনের চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।
মেরিন চোখ পিটপিট করলো। মেরিন শক্ত করে বেডশীট আকরে ধরলো । চোখ খিচে বন্ধ করে আছে । আর কি যেন বিরবির করছে।
নীড় : মেরিন… মেরিন…
মেরিন কিছুই শুনতে পায়নি। মেরিন কি বিরবির করছে শুনতে নীড় কানটা মেরিনের মুখের কাছে নিলো।

শুনতে পেলো : ছেরে দাও আমার আম্মুকে … ছেরে দাও…. ছেরে দাও আমার আম্মুকে। ছেরে দাও। আম্মু … আম্মু…. ও আম্মু…

নীড় সোজা হয়ে বসলো।
নীড় : মেরিন … মেরিন … চোখ খোলো । মেরিন … মেরিন …
মেরিন ওর মতো বিরবির করেই যাচ্ছে।
নীড় : মেরিন … মেরিন চোখ খোলো। দেখো আমি বসে আছি । তোমার নীড় … চোখ খোলো ।
মেরিন : আম্মু … আমার আম্মু …
নীড় : ঠিক আছে আম্মু …
মেরিন : না আমার আম্মু ঠিক নেই। ওওও আমার আম্মুকে… ও আমার আম্মুকে …
নীড় : কি করবে তোমার আম্মুকে ? বলো … বলো …
মেরিন : আম্মু …
নীড় : বলো মেরিন … বলো…
মেরিন উঠে বসলো। ঘেমে একাকার। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সােজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ।
নীড় : মেরিন … এই মেরিন …
নীড় মেরিনকে ঝাকাচ্ছে। মেরিনের কোনো হেলদোল নেই। নীড়ের খুব খারাপ লাগছে। ভীষন কান্না পাচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে এমনটা না করলেই পারতো।
নীড় মেরিনকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। খুব। তবুও মেরিন সেই একভাবেই বসে আছে। একটু নরাচরাও করেনি । নীড় মেরিনের মাথায় চুমু দিলো।
নীড় : আম সরি আম রিয়েলি ভেরি ভেরি সরি। কেন যে তখন জেদ করে দারিয়ে রইলাম…
মেরিন :
নীড় : মেরিন … মেরিন… কথা বলো … মেরিন … বলো ভালোবাসো আমাকে বলো … কথা বলো …
মেরিন : …
মেরিন নিজেকে ছারিয়ে নিলো। বেড থেকে নামলো।
নীড় : মেরিন …

.

মেরিন গুটি গুটি পায়ে বারান্দায় গেলো । এরপর বারান্দা থেকে মিনি ট্যারেসটাতে গেলো । নীড় অবাক হলো। মেরিন বৃষ্টির কাছে গেলো । নীড়ও মেরিনের সাথে সাথে গেলো। ছাদটাতে গিয়ে মেরিন হাটু গেরে বসে পরলো। ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদতে। কিন্তু মেরিন পারছেনা। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ।।
নীড় গিয়ে মেরিনের পাশে বসলো।

নীড় : মেরিন …
মেরিন আর পারলোনা নিজেকে ধরে রাখতে নীড়কে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো । চিৎকার করে কাদতে লাগলো। নীড় বাধা দিলোনা। কখনো কখনো কান্না করা ভালো। কষ্ট কমে। নীড় চুপ রইলো। নিজেও মেরিনকে জরিয়ে ধরলো। আর চুপচাপ মেরিনের কান্না শুনতে লাগলো।

নিহাল-নীলিমা ছুটে এলো।
নীলিমা যেতে নিলে নিহাল বাধা দিলো ।
নিহাল : থাকতে দাও ওদেরকে ওদের মতো। নীড় ঠিক সামলে নিবে… মেরিনের এখন নীড় আছে।
নীলিমা চোখের কোনের পানিটা মুছে নিয়ে চলে গেলো।

বেশকিছুক্ষন পর মেরিন থামলো। নীড় ভাবলো মেরিন অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
নীড় : মেরিন …
মেরিন : ….
মেরিনের বোধ হলো যে ও কি অবস্থায় আছে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে আছে। সেই সাথে নীড়ের সাথে লেপ্টে আছে। বেশ ইতস্ততবোধ করলো।
নীড় : মে…
মেরিন নিজেকে ছারিয়ে নিয়ে উঠে দারালো। নীড়ও দারালো। মেরিন চলে যেতে নিলে মাথাটা চক্কর দিলো। পরে যেতে নিলে নীড় হাত ধরে ফেলল।
মেরিন : আম অলরাইট … আম অলরাইট …
মেরিন নিজের হাত কঠোর ভাবেই ছারিয়ে নিলো… এতে নীড় ক্ষেপে গেলো। হাত ধরে টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। যেটা আগে কখনো হয়নি সেটা আজকে মেরিনের সাথে হচ্ছে। ভীষন লজ্জা লাগছে। কেন তা নিজেও জানেনা।

নীড় : এই মেয়ে কাকে অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছো ? হ্যা কাকে? যখনই আমি টাচ করি তখন কেন ছোটাছুটি করো? আর যখন নিজের মন চায় তখন তো নিজে আমার সাথে জরিয়ে থাকো… উন্মাদের মতো কিস করো সারা মুখে। তখন ?
মেরিন : ছারুন …
নীড় : না ছারবোনা ।ছারুন… বললেই হলো।
মেরিন : ছারুন। আমি আম্মুর কাছে যাবো…
নীড় : বেশ যাবে। সকাল হোক। এমনিতেও ভোর হতে বেশি দেরি নেই।
মেরিন : আমি এখনই যাবো। ছারুন। আর ভেতরে চলুন ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।
নীড় : না ছারবোনা। আর এখন যেতেও দিবোনা।
মেরিন : যেতে না দিলে ভালোবাসতে হবে…
নীড় : এই মেয়ে তুমি…
মেরিন নিজেকে ছারিয়ে নিয়ে রুমে গেলো। ১টা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। নীড়ও ভেতরে গেলো।

নীড় : নাহ এখন ওকে একা বের হতে দেয়া যাবেনা…
নীড়ও পাশের রুমের ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলো।

.

নীড় এসে দেখে মেরিন বেরিয়ে গিয়েছে। সব কালো পরা। এমনিতেই মেরিন খুব ফর্সা। তারওপর এতোক্ষন বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডায় মনে হয় আরো সাদা হয়ে গিয়েছে। আবার পরেছে কালো । নীড়ের মনে হচ্ছে চোখ ঝলসে যাবে।
মেরিন নীড়ের চাহনিকে ইগনোর করে গাড়ির চাবি নিলো সেই সাথেও গানও নিলো ।
নীড় : আম্মুর কাছে যাবে গান নিচ্ছো কেন?
মেরিন : কাজ আছে । আপনি ঘুমান। আমার জন্য সারারাত জাগতে হয়েছে। এতোক্ষন ভেজায় ঠান্ডাও নিশ্চয়ই লাগছে। আমি আপনাকে কফি বা স্যুপ করে দিয়ে যাই …
নীড় কথাটা শুনে মেরিনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
নীড় : এই মেয়ে কি মনে করো তুমি নিজেকে? হ্যা কি মনে করো? ভালো কি তুমি একাই বাসতে পারো? আর কেউ পারেনা ? আমিও তো ভালোবেসেছি । তু…
মেরিন হুট করে নীড়ের ঠোটে কিস করে বসলো।
মেরিন : আই লাভ ইউ … আমর বৃষ্টির ভয়কে দূর করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ … এখন আমাকে যেতে দিন। এই মুহুর্তে আমার আম্মুর কাছে যাওয়া খুব প্রয়োজন।
নীড় মেরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেরিনের চোখ ২টা খুব বেশি বড়না। তবে বেশ সুন্দর । কাজল কালো। তবে চোখে চাঞ্চল্য নেই। স্থির। একটু লক্ষ্য করে দেখলে ওর কষ্ট গুলো অনুভব করা যায় । না নীড় আরকিছু না ভেবে মেরিনের হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে গেলো।
মেরিন : এভাবে টে…
নীড় : আম্মুর কাছে যাবে তো নাকি? বসো গাড়িতে।
মেরিন : আমিই যেতে পার…
নীড় মেরিনকে কোলে করে গাড়িতে বসালো। নিজে বসলো। এরপর ড্রাইভ করতে লাগলো।
নীড় ড্রাইভ করছে আর মেরিন নীড়কে দেখছে ।

নীড় : অন্যদিকে তাকাও। অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাবে ।
মেরিন বাকা হাসি দিয়ে
বলল : আপনি বড়ই অদ্ভুদ নীড় । আমি ড্রাইভ করলেও আপনার থেকে চোখ ফেরাতে বলেন আর আপনি ড্রাইভ করলেও। আপনি সত্যিই অদ্ভুদ।
নীড় : লুক হুজ টকিং…

.

ওরা মিরপুর পৌছালো…
মেরিন ছুটে মায়ের রুমে গেলো। কনিকা ঘুমিয়ে আছে। মেরিন গিয়ে কনিকার পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু একে দিলো। এরপর মায়ের বুকে মাথা রাখলো।
মেরিন : তুমি পৃথিবীর সবথেকে ভালো আম্মু। তুমি কবে সম্পুর্ন সুস্থ হবে বলো তো? তুমি যেদিন সুস্থ হবে সেদিন ওই মনিরের সময় শেষ হবে। ওর শরীর থেকে ১টা ১টা অংশ বিচ্ছিন্ন করে দিবো । সবার আগে কেটে নিবো ওর হাতটা। যেটা ও তোমার দিকে বারিয়ে ছিলো ।
মেরিন দেখলো কনিকা নরাচরা দিচ্ছে । তাই মেরিন বেরিয়ে এলো।
নীড় : এখন আবার কোথায় চললে?
মেরিন : মনটাকে শান্ত করতে ।
নীড় : আই থিংক ইউ নিড রেস্ট।
মেরিন : রেস্ট করার জন্য তো কবর পরে আছে। অনন্তকাল রেস্ট করবো। আসছি ।
নীড় : মেরিন…
মেরিন : হামম ।
নীড় : মনির কে?
মেরিন : …
নীড় : তুমি যখন আম্মুর সাথে কথা বলছিলে তখন আমি শুনে ফেলেছি … কে মনির ?
মেরিন : ১টা অমানুষ ।
বলেই মেরিন চলে গেলো ।

নীড় : মনেহয় আমি কিছু আন্দাজ করতে পেরেছি। তবে কিছু জানলে হবেনা । সবটা জানতে হবে। মনেহয় মনির নামের লোকটা আম্মুর সম্মানে হাত দিতে চেয়েছিলো। আর মেরিন সেটা দেখেছিলো । সেটা বৃষ্টির রাত ছিলো। তাই হয়তো ২জন ভয় পায়। এমন তো নয় যে সেই রাতের পর থেকেই আম্মু এমন। কিন্তু নিরা যে বলেছিলো মেরিন আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। তাহলে কি সেই রাতের পর মাকে ভুল বুঝে মেরিন মাকে ধাক্কা দিয়েছিলো? ওহ গড। এই পাগলের সাথে থাকতে থাকতে আমিই পাগল হয়ে যাবো। নাহ… আরেকটা রিস্ক আমায় নিতেই হবে। নিরার সাথে আমায় দেখা করতেই হবে। কথা বলতেই হবে। কারন কেবল ওই আমায় সবটা বলতে পারবে …

.

মেরিন জিপে বসে আছে বিশাল এক শূন্য মাঠে। তখন জন মনিরকে নিয়ে এলো । কোনো সিংহ যখন কোনো হরিণকে নাগালে পায় তখন তার যে আনন্দ হয় ঠিক তেমনই আনন্দ হচ্ছে মেরিনের।

জন : ম্যাম … ওকে কি আজকেই শেষ করে দিবেন?
মেরিন : না। ওকে জিপের পিছে বেধে দাও। মানে ওর হাত বা পা বেধে দাও। আজকে ওরে ভ্রমন করাবো।
জন : জী ম্যাম। এই চল।
মনির : মের…
মেরিন : আমার নাম নিলে জিভটা কেটে ফেলে দিবো।
জন মনিরের পা জোরা দরি দিয়ে জিপের পেছনে বেধে দিলো। আর মেরিন স্টার্ট দিলো। ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। আর শুনতে পাচ্ছে মনিরের চিৎকার। মনিরের আর্তনাদ। যেগুলো মেরিনকে আনন্দ দিচ্ছে প্রচুর আনন্দ দিচ্ছে । ঘন্টা খানেক পর যন্ত্রনায় মনির অজ্ঞান হয়ে গেলো। মেরিন ওর জ্ঞান ফেরালো। আবার একই কাজ করলো। এরপর নিজের রাগ যখন একটু কমলো তখন মনিরকে ছেরে দিলো ।

.

রাতে …
মেরিন বাসায় পৌছালো।
নীলিমা : শরীর ভালোনা … এতো কাজ করার কি দরকার ছিলো। মুখটা কেমন জ্বরা জ্বরা লাগছে।
মেরিন : ও কিছুনা । আমার শরীর ভালো আর খারাপ। কখনো শুনেছো সাপদের জ্বর আসে। শরীর খারাপ হয়? আমি তো সাপ। মিস্টার খানের কাছে কালসাপ। আর দাদুভাই বলে কোবরা। কিং কোবরা। নীড় ফিরেছে?
নীলিমা : হ্যা। রুমে। ঘুমিয়ে আছে। কিছু খায়নি এসে।
মেরিন : হামমম।

মেরিন রুমে গেলো । গিয়ে দেখে নীড় উপুর হয়ে শুয়ে আছে। গায়ে শার্ট নেই। মেরিন নীড়ের ওপর শুয়ে নীড়ের সারা পিঠে চুমু দিলো। নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো। আর ঘুম ভাঙার কারন হলো মেরিনের শরীরের অত্যাধিক তাপমাত্রা। মেরিনের ধুম জ্বর ।

নীড় ঘুরে গেলো। মেরিন নীড়ের বুকের ওপর পরলো। নীড় মেরিনের কপালে , গালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।
নীড় : তোমার দেখি ধুম জ্বর ।
মেরিন : হামমম হয়তো।
বলেই মেরিন ওয়াশরুমে চলে গেলো।
নীড় উঠে নিচে গেলো।

নীড় : মামনি… মামনি…
নীলিমা : হ্যা বল…
নীড় : কিছু খাবার দাও তো।
নীলিমা : নিয়ে নে।
নীড় : উফফ মামনি… আমি…
নীলিমা : বিয়ে করেছিস। ২দিন পর বাবা হবি এখনো নিজের খাবার বেরে নিতে পারিস না। ছাগল।
নীলিমা খাবার বেরে দিলো। নীড় ওপরের দিকে গেলো।
নীলিমা : এই ওপরে যাচ্ছিস কেন? কিছু লাগলে তো চিল্লাবি। বারবার ওঠা নামা করতে পারবোনা আমি…
নীড় : এগুলো আমার না মেরিনের জন্য।

নীলিমা : যাক বাবা আমার ছেলের সুমতি হয়েছে তাহলে….

নীড় রুমে গিয়ে দেখে মেরিন সিরিঞ্জে মেডিসিন ইন করছো।

নীড় : কি করছো কি? কিসের ইনজেকশন এটা?
মেরিন : জ্বরের।
নীড় : জ্বরের? কিন্তু কেন?
মেরিন : রোগ হলে মানুষ কেন ঔষধ খায়? সারার জন্য তো নাকি? আমিও জ্বরটাকে ভাগানোর জন্যই নিচ্ছি।
নীড় : ইনজেকশন নিতে হবেনা। তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। আর এই যে মেডিসিন। খেয়ে এগুলো নিয়ে ঘুমিয়ে থাকো।
মেরিন : ওগুলো তে আমার পোষাবে না। কচ্ছপের মতো ধীর গতিত জ্বর যাবে। নিজের জন্য সময় নষ্ট করার মতো এতো সময় আমার নেই…
বলেই মেরিন ইনজেকশন পুশ করতে নিলো। তখন নীড় এসে ওটা নিয়ে নিলো।

নীড় : এতো ইনজেকশন নেয়া শরীরের জন্য ভালোনা।
মেরিন : তাতে কি? ইনজেকশন টা দিন।
নীড় : খাবার খেয়ে ট্যাবলেটস গুলো নাও।
মেরিন : নীড় শরীরটা আরো ছেরে দিবে। তার আগে ইনজেকশন টা নিতে দিন।
নীড় ইনজেকশন টা ছুরে ফেলে দিলো । এরপর মেরিনকে বসিয়ে দিলো। এরপর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো।

নীড় : হা করো…
মেরিন অবাক হয়ে নীড়কে দেখছে ।
নীড় : আমাকে না দেখে হা করো…

তখনই মেরিনের ফোনটা বেজে উঠলো। মেরিন ধরলো।

জন : ম্যাম… কনিকা ম্যাম…
মেরিন : কি হয়েছে আম্মুর?
জন : ম্যাম… কনিকা ম্যামকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
মেরিন : হুয়াট? কখন থেকে ?
জন : ম্যাম ১ঘন্টা ধরে।
মেরিন : আর তুমি এখন আমাকে বলছো?
জন : সরি ম্যাম।
মেরিন : গো টু হেল উইথ ইউর সরি।

নীড় : কি হয়েছে মেরিন?
মেরিন : আম্মুকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
বলেই চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
নীড় : দারাও মেরিন তুমি একা যেওনা মে…

নীড় যেতে যেতে মেরিন বেরিয়েও গেলো। নীড়ও গাড়ি নিয়ে ছুটলো ।

.

সবাই কনিকাকে খুজছে। ৩-৪ঘন্টা হয়ে গেলো। মেরিনের খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও মাকে খুজে যাচ্ছে।

নীড় : কোথায় গেলো আম্মু? ১মিনিট… সেদিন তো আম্মু খেলার ছলে তার কলেজ লাইফের কথা বলছিলো। বলছিলো তার জীবনের সেরাদিন গুলো হলো তার কলেজ লাইফ। সেখানে যায়নি তো? কিন্তু আম্মু কোন কলেজে পরতো?

মেরিন : কোথায় যেতে পারে আম্মু… ওহ শীট… আম্মু তো এর আগে ১বার অ্যাসাইলাম থেকেও পালিয়েছিলো। সে যেই কলেজে পরতো সেখানে যাবার জন্য। আজকেও সেখানে যায়নি তো?

মেরিন গাড়ি ঘুরালো ।

নীড়-মেরিন একসাথে কনিকার কলেজের মেইন গেইটের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।

গাড়ি থেকে নামলো। ২জন ২জনকে দেখে অবাক হলো। পরে পাশ ফিরে দেখে কনিকা দারিয়ে আছে। ২জনই ছুটে কনিকার কাছে গেলো।

মেরিন কনিকাকে জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : আম… তুমি এখানে কি করছো?
কনিকা মেরিন থেকে সরে এলো। মেরিন আবার ছুতে গিয়েও ছুলো না ।

নীড় : ভালো আন্টি… তুমি এখানে কি করছো?
কনিকা : কবিরের জন্য ওয়েট।
নীড় : কবিরের জন্য ওয়েট?
কনিকা : হ্যা কবিরের জন্য ওয়েট। ও না এলে তো আমি ভেতরে ঢুকবোনা। আমরা প্রতিদিন একসাথে ভেতরে ঢুকি। কবির তো কখনো এতো দেরি করেনা। আজকে এতো দেরি কেন করছে বলো তো….
মেরিন : ….
নীড় : ভালো আন্টি … আজকে তো রাত হয়ে গিয়েছে। তাই আজকে আসবেনা। কালকে আসবে।
কনিকা : রাত ? এখন রাত?
নীড় : হামমম।
কনিকা : তবুও কবির আসবে । কারন আমি এসেছি। আমি এলে কবিরও আসবে।
মেরিন : কবির ফয়সাল খান আসবেনা আম… আসবেনা কবির ফয়সাল খান …
কনিকা : এই মেয়ে… তুমি কে বলো তো? আমি জানি কবির আসবে।
মেরিন : আজকে বাসায় চলো। কালকে এসো…
কনিকা : চুপ থাকো। কবির আসবে। আমি অপেক্ষা করবো।
মেরিন : বলছিনা কবির ফয়সাল খান আসবেনা। আসবেনা আসবেনা আসবেনা…
মেরিন বেশ কঠোর কন্ঠেই বলে দিলো।
কনিকা ভয় পেয়ে গেলো। কনিকা মেরিন থেকে সরে দারালো । নীড়ের পিছে গিয়ে দারালো…
কনিকা নীড়ের কানের সামনে ফিসফিস করে
বলল : এই মেয়েটা এতো রাগী কেন?
নীড় : এই মেয়েটার মাথা খারাপ… পাগল বুঝেছো? পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে।
কনিকা : কি বলছো কি ?
নীড় : হ্যা ।
কনিকা : এখন কি হবে?
নীড় : এখন এখান থেকে পালিয়ে গেলে ভালো হবে। চলো পালাই। কালকে আসা যাবে। আমার গাড়িতে বসো ।
কনিকা : হামমম। চলো চলো…
কনিকা গিয়ে নীড়ের গাড়িতে বসলো। মেরিন আকাশপানে তাকিয়ে আছে ।
নীড় মেরিনের পাশে গিয়ে দারালো।
নীড় : আর কষ্ট পেতে হবেনা। বাসায় যাও। আমি আম্মুকে পৌছে দিয়ে আসছি ।

বলেই নীড় চলে গেলো। মেরিনও ওদের পিছু পিছু গেলো । যখন নীড় কনিকাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো তখন মেরিন চলে গেলো।

.

১ঘন্টাপর…
অন্ধকার রাতে অন্ধকার পথে গাড়ির ওপরে উঠে বসে বসে মেরিন বিয়ার খাচ্ছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ভয়ংকর সেই রাত….

[
১৫বছর আগে…
বাহিরে ভীষন ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে । কনিকা মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি মানে মাহমুদ বাড়িতে একা। খান বাড়ি থেকে সে বেরিয়ে এসেছে। প্রতিজ্ঞা করে এসেছে যে খান বাড়িতে সেদিনই ঢুকবে যেদিন কবির নিজে এসে নিয়ে যাবে। কনিকা জানেনা কবির আসবে কি আসবেনা? বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে ফিরিয়ে নিতে আসবে নাকি অভিমানের কারনে দূরেই রয়ে যাবে ।
এসব ভেবেই ১টা লম্বা নিঃশ্বাস ছারলো কনিকা।

মেরিন : আম্মু আম্মু…
কনিকা : হ্যা বনপাখি বলো…
মেরিন : এতোবড় বাসাটাতে আমরা একা কেন? দাদুভাই , বাবা , বড়আম্মু , নিরাপু … ওরা সবাই তো এলে এ বাসাটায় আর একা একা লাগবেনা।
কনিকা : বনপাখি… তুমি কি সবাইকে খুব মিস করছো?
মেরিন : হামমম। খুব করে।
কনিকা : দাদুভাইয়ের সাথে কথা বলবে চলো …
মেরিন : কি মজা কি মজা …
কনিকা শমসেরকে ফোন করে দিলো। দাদু-নাতি কথা বলছে। তখন ডোরবেল বেজে উঠলো।
কনিকা গিয়ে দরজা খুলল। দেখলো সেতুর দুলাভাই মনির। আর মনিরের এক বন্ধু দারিয়ে আছে।
কনিকা : আপনারা???

.

চলবে…

#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 19
writer : Mohona

.

কনিকা : আপনারা ?
মনির : হ্যা আমরা। ভেতরে ঢুকতে বলবেনা?
কনিকা : না। এখন রাত। দরকার হলে কালকে আসবেন। এখন চলে যান। প্লিজ।
মনির : এমন ঝড়-বৃষ্টির রাতে চলে যেতে বলছো?
কনিকা : হ্যা বলছি ।
মনির : কিন্তু কি করে যাই বলো তো সুন্দরী? এমন রোমান্টিক ১টা ওয়েদার। তোমাকে ছেরে যাই কি করে?
কনিকা : যত্তোসব…
বলেই কনিকা দরজা লাগিয়ে দিতে নিলো । প্রায় লাগিয়েই দিয়েছিলো। কিন্তু মনির আর মনির বন্ধু ২জন মিলে বাধা দিলো। আর ২জন ছেলের সাথে একা মেরিনের পেরে ওঠা সম্ভবনা ।

২জন ভেতরে ঢুকলো।
কনিকা : দেখুন যদি আপনারা এখনই বের না হন তবে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।

কনিকার কথা শুনে মনির হাহা করে হেসে উঠলো ।

দাদুভাই ফোনের ওপাশ থেকে ওদের হাসির শব্দ পেলো।
দাদুভাই : দিদিভাই… কে হাসে?
মেরিন : ওইযে নিরাপুর আংকেল আছেনা সে এসেছে। সাথে আরো ১টা আংকেল।
দাদুভাই : কি?
মেরিন : হ্যা। দেখোনা… আম্মু ওদের চলে যেতে বলছে অথচ ওরা যাচ্ছেইনা… কি পচা ওরা…
দাদুভাই : আম্মুকে একটু দাও তো।
মেরিন : হামমম। আম্মু তোমাকে চাইছে দাদুভাই।
কনিকা কথা বলতে গেলে মনিরের বন্ধু টেলিফোন লাইনের তার কেটে দিলো। আর পৈশাচিক হাসি দিলো।

দাদুভাই : হ্যালো… হ্যালো… দিদিভাই… হঠাৎ লাইনটা কেটে গেলো?
দাদুভাই আবার ফোন করলো । কিন্তু ঢুকলোনা ।

দাদুভাই : নিশ্চয়ই গন্ডগোল আছে। কবির… কবির… এই কবির…
কবির ছুটে এলো।
কবির : হ্যা বাবা।
দাদুভাই : শোনো আমার মনে হচ্ছে কনা মায়ের…
কবির : বাবা… ওই মেয়েটার নাম আমার সামনে নিবেনা । প্লিজ।
দাদুভাই : মেয়েটার বি…
কবির : বললাম তো মেয়েটার নাম নিবেনা। প্লিজ।
বলেই কবির বেরিয়ে গেলো।
দাদুভাই : কবির দারাও কবির…
কবির বেরিয়ে গেলো।
দাদুভাই : না কিছু ১টা বিপদ হয়ে গেলে…
দাদুভাই নিজের বন্দুক নিয়ে বের হলো।

.

ওদিকে …
মনির আর ওর বন্ধু পৈশাচিক হাসি দিচ্ছে। মনির কনিকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
কনিকা : ভালো হচ্ছেনা কিন্তু … তোমাদের সাথে কি হবে তোমরা ভাবতেও পারছোনা। যদি কবির জানতে পারে তবে কিন্তু তোমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে ।

মনির হাহা করে হেসে উঠলো।
মনির : এখনো? এখনো নিজের স্বামীর ওপর এতো বিশ্বাস ? এতো? যে স্বামী তোমাকে সহ্যই করতে পারেনা ?
কনিকা : বিশ্বাস আমার স্বামী কবির ফয়সাল খানের ওপর না। বিশ্বাস আছে আমার বেস্টফ্রেন্ড কবিরের ওপর। সে স্বামী হিসেবে না আসলেও বন্ধু হিসেবে আসবে।
মনির : সে এলে না হয় মিলে ঝিলে তোমাকে ভোগ করবো।
বলেই মনির আবার হাসতে লাগলো। মনিরের এমন হাসিতে ছোট মেরিন ভয় পেয়ে গেলো। গিয়ে লুকালো মায়ের পিছে।
মনির কনিকার কাছে গেলে কনিকা মনিরের নাক বরাবর মারলো ১টা ঘুষি।
কনিকা মনির আর মনিরের বন্ধুকে একাই জবাব দিচ্ছে। আসলে কনিকার বাবা তপন মাহমুদ মেয়েকে সব দিক দিয়েই পারদর্শী করেছিলেন। নিজের স্ত্রী আর ছেলেকে হারিয়ে তপন মাহমুদ মেয়েকে নিয়েই বেচে ছিলেন। তাই মেয়েকে সবই শিখিয়েছিলেন। আত্মরক্ষাও।

কনিকা একাই দিব্যি ২জনের সাথে লরে যাচ্ছে। নিজেও আঘাত পাচ্ছে। তবে হার মানছেনা । কনিকা বেশ বুঝতে পারছে যে যদি ১বার ও নিজের ভয় আর দুর্বলতাটা প্রকাশ করে তবে আজকে ওর সবশেষ । ওর গায়ে ধর্ষিতার ট্যাগ লেগে যাবে। ওর মেয়ে ধর্ষিতার মেয়ে বলে পরিচিত হবে । নিজের জীবন দিয়ে দেয়া হয়তো সহজ হবে কিন্তু ওর মেয়ের জীবন চিরতরে শেষ হয়ে যাবে । হয়তো শিয়াল-কুকুরে চিরে খাবে । কে বলতে পারে,,, হয়তো ওর মেয়ের গায়েও ধর্ষিতার ট্যাগ লেগে যাবে। তাই নিজের কাছেই নিজে হার মানছেনা।

১টা সময় মনির ওর বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

কনিকা হাটু গেরে বসে মেয়েকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো।

ঠিক তখন মনির পেছন থেকে এসে কনিকার মাথায় মারলো বারি । এতে কনিকা অনেকটাই কাবু হয়ে গেলো ।

মনির টেনে কনিকাকে নিয়ে যেতে লাগলো। বহু কষ্ট কনিকা মনিরের পায় আঘাত করলো ।মনির পরে গেলো। নিজের হাত ছারিয়ে ছুটে মেয়ের কাছে যেতে নিলো । তখন মনিরের বন্ধু মেরিনের গলায় ছুরি ধরলো ।

মনিরের বন্ধু : যদি আর ১পাও আগে বারো তবে তোমার মেয়ের গলাটা কেটে ফেলে দিবো।
কনিকা : নাহ। আমার মেয়েটাকে ছেরে দাও প্লিজ।

মনির উঠে দারালো। হাত তালি দিলো।
মনির : ধন্যবাদ আমার বন্ধু। ধন্যবাদ ।
কনিকা : আমার মেয়েকে ছেরে দিতে বলুননা । আমি হাত জোর করে বলছি…
মনির : ছেরে দিবো সুন্দরি… তোমার মেয়েকে ছেরে দিবো। তুমি নিজেকে আমার হাতে ছেরে দাও…
কনিকা : ….
মনিরের বন্ধু মেরিনের গলায় হালকা আচর দিলো। মেরিনের গলা থেকে কিছুটা রক্ত গরিয়ে পরলো।
মেরিন : আহ… আম্মু ব্যাথা।
কনিকা : পাখি… বনপাখি…
মনির : এই মেয়ের গলাটা নামিয়ে দে।
কনিকা : নাহ… আমার মেয়েকে ছেরে দাও । ওকে কিছু কোরোনা।
মনির : নিজেকে ়আমার কাছে সপে দাও…
কনিকা : আমার মেয়েকে ছেরে দাও। আমি নিজেকে সপে দিবো।
মনির : গুড গার্ল ….

বলেই মনির কনিকাকে রুমে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো । ছোট মেরিনের মাথায় ঢুকলো যে মনির ওর মাকে মারবে টারবে।

মেরিন : আম্মু… আম্মু… আম্মু…. আমার আম্মুকে ছেরে দাও…. আম্মু ….

মনির কনিকা কে রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

মেরিন মনিরের বন্ধুর হাতে কামড় দিয়ে ছুটে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
কনিকা মেয়ের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছে ।

.

মনিরের বন্ধু মেরিনকে টেনে নিয়ে এলো । ঠিক তখনই মেরিন গুলির শব্দ পেলো। মনিরের বন্ধু পরে গেলো। মেরিন ঘুরে দেখে দাদুভাই বন্দুক হাতে দারিয়ে আছে।।
মেরিন দাদুভাই বলে ছুটে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো।
দাদুভাই : দিদিভাই… তু্মি ঠিক আছো?
মেরিন : কিন্তু আম্মুকে ওই রুমে নিয়ে মারছে।
দাদুভাই : ওই রুমে ?
মেরিন : হামমম।

দাদুভাই দরজার লক বরাবর গুলি করলো। এরপর লাথি মেরে দরজা খুলল।
শব্দ পেয়ে মনির তারাতারি উঠে দারালো । দাদুভাই দেখলো কনিকার শাড়িটা নিচে পরে আছে।

কনিকা চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিলো। শশুড়ের সামনে এমন অবস্থায় থাকার থেকে হয়তো মরে যাওয়া ভালো ।
মনির বুঝতে পারলো যে ওর মৃত্যু ওর সামনে দারিয়ে।
দাদুভাই গুলি করতে নিলো । কিন্তু গুলি বের হলোনা। বন্দুকের গুলি শেষ। গুলি ভরতে ভরতে মনির পালিয়ে গেলো।

কনিকা মেয়েকে জরিয়ে ধরে কাদতে কাদতে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন থেকে অস্বাভাবিক আচরন করলো।

আসলে অত্যন্ত কষ্ট , মানসিক কষ্ট , মনিরের দেয়া মাথায় আঘাত , মেয়ের আর্তনাদ , নিজের সম্মান হারানোর ভয় , শশুড়ের সামনে এমন অবস্থায় দারানো …. এই সবকিছু মিলিয়ে কনিকার মস্তিষ্কে প্রচুর চাপ পরায় ও নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে…

নিরা সেদিন নীড়কে মিথ্যা বলেছিলো যে মেরিন কনিকাকে ধাক্কা দিয়েছে।
]

.

বর্তমান…
পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে মেরিন রাতটা পার করে দিলো। ওদিকে নীড়-নীলিমা-নিহাল চিন্তায় শেষ ।
নীড় নিজে মেরিনকে খুজে হয়রান হয়ে জনকে বলেছে। জন পায়নি। নীড় পুলিশের কাছে যেতে চাইলে জন বাধা দেয়।
জন বলে যে ম্যামের মন ভালো হলে ম্যাম ঠিকই ফিরে আসবে। তাছারা ম্যাম কোথায় আছে কিভাবে আছে জানা সম্ভব না।

নীড় : কেন এমন তুমি? তুমি আমার সবটা জানো। আর আমি তোমার কিছুই জানিনা।

মেরিন : আপনি ধীরে ধীরে আমার ভালোবাসা থেকে দুর্বলতা হয়ে যাচ্ছেন নীড়। যেটা আমি চাইনা। আপনার প্রতি দুর্বলতা আমাকে দুর্বল করে দিবে। কিন্তু কিছু কাজ সম্পুর্ন না করে আমি দুর্বল হতে পারবোনা। আই হ্যাভ টু বি স্ট্রং …

.

সকাল ৭টা…
মেরিন বাসায় ঢুকলো। দেখলো ৩জনই বসে আছে। মেরিন ওদেরকে ইগনোর করে ওপরে উঠতে নিলো।
নীড় : দারাও।
মেরিন দারিয়ে গেলো। নীড় মেরিনের সামনে গেলো।
নীড় : তুমি কি আমাদের মানুষ বলে মনে করো নাকি করোনা? যদি মানুষ মনে করতে তবে এমন করতে পারতেনা। জানো সারারাত আমরা ৩জন চোখের পাতা এক করতে পারিনি। রাতটা যে কি গিয়েছে তা আমরা জানি। একটু বলে গেলে কি হতো।
মেরিন : প্রয়োজনবোধ করিনি।
নীড় : কোথায় ছিলে?
মেরিন : …
নীড় : বলো কোথায় ছিলে?
মেরিন : হয়তো কোনো হোটেলে কোনো ছেলের সাথে।
কথাটা শুনে নীড়ের রাগ উঠলো। নীড় জানে মেরিন কখনো এমন কিছু করতে পারেনা।
নীড় দাঁতে দাঁত চেপে
বলল : টেল মি দ্যা ট্রুথ।
মেরিন : আমি সত্যিই বলেছি।
নীড় ঠাস করে ১টা থাপ্পর মারলো মেরিনকে।
নিহাল : নীড়…
নীড় : বাবা… আজকে না। আজকে আমাদের মধ্যে কথা বলবেনা। প্লিজ…
নীড় : বলো কোথায় ছিলে?
মেরিন : যা বলার বলে দিয়েছি…
নীড়ের ইচ্ছা করছে মেরিনকে পিটাতে। নীড় মেরিনের মাথার পেছনের দিকে হাত দিয়ে চুলের গুছি ধরে মেরিনকে কিছুটা সামনে আনলো।

নীড় : তুমি এমন কেন? কেন কেন কেন?
নীড় বুঝতে পারলো মেরিন ড্রিংকস করেছে।
নীড় : ইউ আর ড্রাংক…
মেরিন : …
নীড় : এটাই বাকি ছিলো দেখার?
মেরিন : আরো অনেক কিছুই বাকি আছে দেখার। কিছুই দেখেননি… কিছুই জাননেনা…
নীড় : তোমার সম্পর্কে আর কিছু জানতে চাইও না… ইউ হার্ট মি টুডে ভেরি ব্যাডলি। তোমাকে ভালোবাসা যায়না।
বলেই নীড় মেরিনকে ছেরে দিলো। মেরিনের হাত থেকেই গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মেরিনও রুমে চলে গেলো।

.

৩ঘন্টাপর…
মেরিনের ফোনটা বাজছে । মেরিন দেখলো জন।
মেরিন : হ্যা জন…
জন : ম্যাম…
মেরিন : তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেন?
জন : ম্যাম… নীড় স্যার…
মেরিন : কি হয়েছে?
জন : ম্যাম স্যার অ্যাক্সিডেন্ট করেছে… গাড়ি ব্রেকফেইল ছিলো।
মেরিনের হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেলো। পাগলের মতো বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
হসপিটালে পৌছালো। নিহাল-নীলিমাও পৌছালো। ওদিক থেকে দাদুভাইও এলো । জন নীড়কে হসপিটালে অ্যাডমিট করিয়ে ট্রিটমেন্ট স্টার্ট করিয়ে মেরিনকে জানিয়েছে। কারন জন ভালোমতোই জানে যে নীড়কে অমন রক্তাত্ব অবস্থায় মেরিন সহ্য করতে পারবেনা।

মেরিন : ডক্টর… নীড়…
ডক্টর : এ যাত্রায় বেচে গিয়েছে… তবে পিঠে আর পায়ে ব্যাথা পেয়েছে যথেষ্ট। হতে পারে পায়ের ক্ষতটার জন্য তার পা টা অকেজো হয়ে যেতে পারে।
মেরিন : আমি ১বার দেখা করতে পারি?
ডক্টর : কিছুক্ষন প…
নীলিমা : না তুমি ওর সাথে দেখা করবেনা ।
মেরিন অবাক হয়ে নীলিমার দিকে তাকালো ।
মেরিন : কি যা তা বলছো?
নীলিমা : ঠিকই বলছি। তুমি ওর সাথে দেখা করবেনা ।
মেরিন : মামনি …
নীলিমা : একদম আমাকে মামনি বলে ডাকবেনা ।
মেরিন : …
নিহাল : কি যা তা বলছো?
নীলিমা : ঠিকই বলেছি। ওকে আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম যে আমার ছেলে আমার দুর্বলতা । আমার ছেলে আমার সব … আর ও আমার ছেলেকে অত্যন্ত ভালোবাসে বলেই ওকে এতো বিশ্বাস করেছি । কিন্তু আজকে ওরজন্য আমার ছেলের এই অবস্থা। ও যদি রাত ভর বাহিরে না থাকতো … আমার ছেলেকে না রাগাতো তবে ও গাড়ি নি়য়ে তখন বেরও হতোনা। আর অ্যাক্সিডেন্টও হতোনা।
নিহাল : কেউ গাড়ির ব্রেকফেইল করে রেখেছিলো বলেই না এমনটা হলো। জাস্ট দুর্ঘটনা…
নীলিমা : জাস্ট দুর্ঘটনা ? নিহাল ও মেরিনের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলো।আর কেউ মেরিনের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। আর যেহেতু নীড় গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে তাই ওর সাথে এমনটা হয়েছে। যার মানে ২দিক দিয়ে ওর দোষ।
নিহাল : আর যখন তোমার ছেলেকে মরতে বসেছে তারবেলা?
নীলিমা : তখন কিন্তু আমি নিজের ছেলেকেও ছারিনি নিহাল। কিন্তু আমি আমার ছেলেকে এভাবে দেখতে পারছিনী নিহাল। মেরিন কেন এমনটা করলো। কেন কেন কেন? ছেলেটার সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। ছেলেটা হয়তো আর হাটতে পারবেনা।

নীলিমা ছেলের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারেনি।
মেরিন একটুও কষ্ট পায়নি। আর কোনো রিঅ্যাক্টও করলোনা। ওর কাছে এসব বিষয়ে রিঅ্যাক্ট করা নিছক বাচ্চামো। কেবল ১টা বাকা হাসি দিলো। আসলেই মানুষ বড় স্বার্থপর।

দাদুভাই কিছু বলতে নিলে মেরিন ইশারায় না করে দিলো।
মেরিন : জন…
জন : হামমন।

মেরিন : কাম হেয়ার।
জন এগিয়ে গেলো।
মেরিন : নীড়ের জ্ঞান ফেরার আগে আমি তার কাটা হাত ২টা দেখতে চাই যে কাজটা করেছে। আর এই কাজটা শেষ করে সিঙ্গাপুর থেকে ডক্টর আনার ব্যাবস্থা করো নীড়ের ট্রিটমেন্টের জন্য।

বলেই মেরিন নীড়কে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে ঢুকতে নিলো।
নীলিমা : বলেছিনা আমার ছেলের কাছে যাবেনা।
মেরিন নীলিমার দিকে ঘাড় ঘুরালো।

মেরিন : গেলে কি করবেন মিসেস চৌধুরী?
নীলিমা : মিসেস চৌধুরী?
মেরিন : অফকোর্স। মিসেস চৌধুরী… যেহেতু মামনি না সেহেতু ইটস পারফেক্ট। আর সবথেকে বড় ফ্যাক্ট মেরিন বন্যার মামনি হওয়া আপনি ডিজার্ভ ও করেননা।
বলেই মেরিন ভেতরে ঢুকলো।

নীলিমা : দেখলে তুমি মেয়েটা কি বলল? আমি মামনি হওয়া ডিজার্ভ করিনা ওর… এ কথা বলতে পারলো ? আমি কি ওকে একটুও ভালোবাসিনি?
নিহাল : তুমিও বা কেন মেয়েটাকে বকতে গেলে? ওগুলো বলতে গেলে? মামনি ডাকতে না করলে…
নীলিমা : আরে মায়েরা তো কতো কি রাগ করে বলে… না হয় বলেছি। আর ভুল করেছে বলেই তো বলেছি নাকি। তাই বলে মিসেস চৌধুরী ডাকবে।
দাদুভাই : নীড় দাদুভাই সুস্থ হবে ইনশাল্লাহ । নীলিমা চৌধুরী তুমি খামোখা নিজেকে ব্যাডলিস্টে নিয়ে নিলে।

বলেই দাদুভাই চলে গেলো।

.

মেরিন চুপচাপ বসে আছে নীড়ের পাশে। তাকিয়ে আছে নীড়ের দিকে।
মেরিন : আমি ব্যার্থ হয়েছি নীড়… আপনাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারিনি। উল্টা আমার বিপদ আপনার ঘাড়ে পরলো। জীবনে এই প্রথমবার নিজের সব পাওয়ারকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। আচ্ছা সৃষ্টিকর্তা আমার সাথেই কেন এমন করে বলতে পারবেন? সবার সাথে লড়াই করতে পারি। নিজের ভাগ্যের সাথে পারিনা । আর আল্লাহর সাথে তো যুদ্ধ করার কি… করতে চাওয়ারও কোনো ভিত্তি নেই। কারন আল্লাহ তো আল্লাহই । তাঁর তুলনা শুধুই সেঁ । আই অ্যাম সরি নীড়। আমার জন্যই আপনার সাথে এসব হয়েছে। আপনি ঠিকই বলতেন যে আমার দ্বারা কিছুই শুভ হতে পারেনা । কি নামে যেন ডাকেন আমাকে? অতৃপ্ত আত্মা। আমি আসলেই ১টা আত্মা।

.

পরদিন…
নীড়ের জ্ঞান ফিরলো। দেখলো সবাই দারিয়ে আছে । তবে অবাক হলো মেরিনকে দেখে। ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছু হয়ইনি।
নীলিমা নীড়ের কাছে গেলো।
নীলিমা : বাবা… রাগ একটু কমালে কি হয় ? তুমি ছারা কে আছে আমাদের ? তুমি ছারা কে আছে আমার বলো তো ? তুমি যে আমার কলিজার টুকরা । তোমার কিছু হলে বাচবো কি নিয়ে আমি?
বলেই নীড়ের কপালে চুমু একে দিলো । নীড় ফিরে ফিরে মেরিনের দিকে তাকাচ্ছে । নিহাল বিষয়টা খেয়াল করলো ।
নিহাল : আই থিংক নীড়ের এখন রেস্ট প্রয়োজন। নীলিমা চলো বাহিরে চলো।
নীলিমা : না আমি এখন আমার ছেলের কাছে থাকবো।
নিহাল : বলছিনা চলো।
বলেই নিহাল নীলিমাকে টেনে নিয়ে গেলো । নিহালের ভাবনা অনুযায়ী মেরিন রয়ে গেলো ।

ওরা বের হতেই মেরিন নীড়ের মাথার পাশে বসলো।

নীড় মনে মনে : তুফান আজকে এতো ঠান্ডা কেন? আমি তো ভেবেছিলাম মামনি বাবা বের হলে আমার বুকের ওপর হামলা করবে । কিন্তু এতো দেখি নির্বাক চলচিত্র ।
মেরিন : আপনি জানেন ডক্টর কি বলেছে? বলেছে আপনার ডান পা টা অকেজো হয়ে যেতে পারে। মানে হয়তো আপনি আর হাটতে পারবেননা । দ্যাটস মিন আপনি চিইলেও আমার থেকে পালাতে পারবেননা।

নীড় বিস্ফোরিত চোখে মেরিনের দিকে তাকালো … বলে কি মেয়েটা?
মেরিন : জানেন এই ব্যান্ডেজগুলোতে না আপনাকে ভীষন কিউট লাগছে।
নীড় : 😱।

.

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here