ঘৃণার মেরিন সিজন ৪( পর্ব ১৬+১৭)

0
519

#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 16
writer : Mohona

.

নিহাল মেরিনকে খাইয়ে দিলো । খাওয়া দাওয়ার পর নীড় মেরিনকে রুমে নিয়ে গেলো।
নীড় : ধরো মেডিসিনগুলো খেয়ে নাও।
মেরিন চুপটি করে খেয়ে নিলো। নীড় অবাক হলো।
নীড় মনে মনে : একবারেই আমার কথা শুনলো। স্বপ্ন দেখছি না তো…. দিবাস্বপ্ন । এখন তো সন্ধ্যা। সন্ধ্যাস্বপ্ন হয়তো ।
মেরিন : নীড়… একটু এখানে আসুন না।
নীড় গেলো।
মেরিন : বসুন।
নীড় : 😒…
মেরিন নীড় হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো। এরপর নীড়ের কোলে মাথা রা়খলো ।
নীড় : ঘুম এলে ঠিক মতো ঘুমাও। আমার কোলে মাথা রাখার কি প্রয়োজন?
মেরিন কিছু বললনা। চুপ করে রইলো।
নীড় : মেরিন…
মেরিন : হামমম।
নীড় : তুমি কবির আংকেলকে খুব ভালোবাসো তাইনা…
কথাটা শুনে মেরিন উঠে বসলো ।
মেরিন : কি বললেন আপনি? রিপিট প্লিজ।
নীড় মেরিনের গালে হাত রাখলো।
নীড় : এতে লুকোচুরির কিছু নেই । পৃথিবীতে এমন কোনো সন্তান নেই যে বাবাকে ভালোবাসেনা। বিশেষ করে মেয়েরা তো নয়ই। তুমি তোমার বাবাকে খুব ভালোওবাসো । আর তার স্নেহ-ভালোবাসাকে মিসও করো ।
মেরিন হাহা করে হেসে উঠলো ।
মেরিন : নীড়… মিস হয়তো করতাম কবির ফয়সাল খানের স্নেহ-আদর-ভালোবাসাকে । কিন্তু… যেই স্নেহ-আদর-ভালোবাসা আমি কখনো পাইনি সেই স্নেহ-আদর-ভালোবাসা কে মিস করার কোনো কারন নেই । আর রইলো কথা মিস্টার খানকে ভালোবাসার কথা… আপনি আমাকে আর কতোটা ঘৃণা করেন… তারথেকে হাজারগুন বেশি আমি মিস্টার খানকে করি। শুধু ১টা অপেক্ষা। আর সেটা হলো আম্মুর সুস্থ হওয়ার। একপর মিস্টার এন্ড মিসেস খান , নিরা , নিলয় , নিলয়ের বাবা মনির …এদের সাথে কি হবে তা ভেবে রেখেছি…
বলেই মেরিন বেলকনিতে চলে গেলো।

.

৩দিনপর …
নীলিমা ঘুম থেকে উঠে দেখে মেরিন ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলেছে ।
মেরিন : গুড মর্নিং মামনি …
নীলিমা : তুই কিচেনে পা রেখেছিস কেন বলতো?
মেরিন : আর সম্ভবনা আমার পক্ষে ওভাবে রোগী হয়ে বসে থাকা। বসে থাকতে থাকতে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো । কাজ না করলে আমি অসুস্থ হয়ে পরি । তাই আজকে থেকে আমার কাজ শুরু ।
নীলিমা : কিন্তু …
মেরিন : কোনোকিন্তু না।
নীলিমা : তুই অসুস্থ হয়ে পরবি ।
মেরিন : একদম না । তুমি যাও গিয়ে বাবা-ছেলের ঘুম ভাঙাও।
নীলিমা : নিহাল তো মর্নিং ওয়াকে চলে গিয়েছে ।
মেরিন : ওহ । আজকে এতে দেরিতে …
নীলিমা : এমনিতেই।
মেরিন : তাহলে নীড়রে তুলে ফেলো।
নীলিমা : মাফ কর আমাকে। তোর বরকে আমি তুলতে পারবোনা। ওকে ঘুম থেকে তোলা আর … থাক বললামনা। তুই তোল ওকে।
মেরিন : হামমম।
মেরিন হাতের কাজ শেষ করে রুমে গেলো। দেখে নীড় ঘুমিয়ে আছে ।
মেরিন : মেয়েদের মতো বেশি ঘুমায় । দেখাচ্ছি ।
বলেই মেরিন নীড়ের কানে ইয়ারফোন ঢুকিয়ে দিয়ে গান প্লে করলো। নীড় ভয় পেয়ে উঠে বসলো। ঘুমের মধ্যে যে কারো সাথে এমন হলে ভয় পাবেই।
নীড় : ওহ মাই গুডনেস।
মেরিন : ভয় পেলেন বুঝি জান?
নীড় কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ছুরে ফেলল।
নীড় : ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া … যে ঘুমের মধ্যে এমন করলে ভয়ে অনেকের হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে?
মেরিন : নো। আই হ্যাভ নো আইডিয়া। কারন আমার হার্ট এতো দুর্বল নয়।
নীড় : স্টুপিড গার্ল।
বলেই নীড় রেগেরুগে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মেরিনও অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলো।

.

২০মিনিট পর …
বাবা-ছেলে রেডি হয়ে নামলো। গিয়ে খেতে বসলো।
নীড় : একি আজকেও কি আবার ড্রামা করার ইচ্ছা আছে নাকি? আবারও অফিস যাবার ভুত উঠেছে নাকি ?
মেরিন : নীড় সিরিয়াসলি অফিসে অনেক কাজ পরে আছে।
নীড় : থাকুক। তুমি যাবেনা । নো মিনস নো।
মেরিন : নীড় আপনি আমাকে বাধা দিচ্ছেন?
নীড় : হ্যা দিচ্ছি ।
মেরিন : বাট আমি শুনবোনা ।
নীড় : তুমি আমার কথাও শুনবেনা ?
মেরিন কঠোরভাবে
বলল : না …
নীড় আর কিছু বললনা । নিহাল কিছু বলতে নিলে নীলিমা বাধা দিলো। ব্রেকফাস্ট করে মেরিন বেরিয়ে গেলো। আর কেবল কফি খেয়ে নীড়ও বেরিয়ে গেলো ।

নিহাল : তুমি আমাকে কিছু বলতে দিলেনা কেন ?
নীলিমা : নিহাল … ব্যাপারটা ওদের।
নিহাল : মেয়েটা তো বাড়ির বউ নাকি?
নীলিমা : তোমার ছেলে অধিকার নিয়ে আটকালো না কেন? কিসের এতো রাগ ? কিসের এতো ইগো? যেভাবেই হোক বিয়েটা তো হয়েছে। আর এটা তুমিও জানো আমিও জানি যে বিয়ে যখন হয়েছে তখন নীড় আর কখনো ২য় বিয়ে করবেনা। মুখে যাই বলুক । বিয়ের পর কি ভালোবাসা যায়না? তাও এমন ১টা মেয়েকে যে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে …

.

বিকালে…
মেরিন মিরপুর পৌছালো। আম্মুকে দেখে নীড়কে পিক করে বাসায় ফিরবে।

নার্স : হ্যালো ম্যাম।
মেরিন : হ্যালো। আম্মু কেমন আছে?
নার্স : ভালো আছে।
মেরিন : আম্মু আর নীড় কোথায় ?
নার্স : নীড় স্যার তো আজকে আসেনি ম্যাম।
মেরিন : কি ?
নার্স : জী ম্যাম।
মেরিন : আম্মু কোথায়?
নার্স : খাবার খাচ্ছে ডলির হাতে । ছাদে।
মেরিন ছাদে গেলো। তবে মায়ের সামনে গেলোনা। যদি রিঅ্যাক্ট করে । বেশ কিছুক্ষন মাকে দেখে মেরিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

নীড় : তুমি খুব সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলেছো। থ্যাংক ইউ ।
নার্স : স্যার… মেরিন ম্যামকে মিথ্যা বলেছি। অসময়ে আমার প্রানটা না যায়।
নীড় : আরে কিচ্ছু হবেনা। ও জানবেই না । আর তুমিও ভয় পেয়োনা। বুঝিয়াছো।
নার্স : স্যার তবুও।
নীড় : মেরিন যদি জানেও তবে আমি আছি তো। তোমার কিছু হবেনা। আই প্রমিস । নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন কখনো নিজের প্রমিস ব্রেক করেনা । ওকে নাউ বাই । ভালো আন্টির খেয়াল রেখো । কালকে আবার আসবো।
নীড় বেরিয়ে গেলো।

.

মেরিন ড্রাইভ করছে।
মেরিন : নীড় এখানে আসেনি? তবে গেলো কোথায়? নিরার কাছে? কিন্তু নিরার কাছে গেলে তো খবর পেতাম। না নীড় অনেক চালাক। হয়তো লুকিয়ে দেখা করতে পারে।
মেরিন খান বাড়িতে পৌছালো। দেখলো নিরা বসে বসে সালাদ খাচ্ছে।
নিরা : একি তুই এখানে?
মেরিন : আমার বাড়ি আমার ঘর… আমি যখন ইচ্ছা আসতে পারি। তোর বাপের কি? দাদুভাই… দাদুভাই…
মেরিন দাদুভাইয়ের রুমে গেলো।
দাদুভাই : দিদিভাই… তুমি?
মেরিন : হামম আমি।
দাদুভাই : তোমার না বেডরেস্টে থাকার কথা।
মেরিন : দাদুভাই… বাসায় শুয়ে বসে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পরেছি। আর তুমি এই শরীর নিয়ে এতোকিছু কি করে সামলাবে বলো তো… আমি থাকতে তুমি কেন কষ্ট করবে? কাজ করবে? হামমম?
দাদুভাই : গত ৪বছর ধরে তো আমার সব কাজ তুমি নিজের কাধে নিয়ে নিয়েছো। তুমি ছারা কিছুই পসিবল হতোনা।
কবির : হোতো কি হোতোনা সেটা কিভাবে বলতে পারো বাবা… এই মেয়েটা কে ছারা তো কখনো কারো হাতে কোনো দায়িত্ব দাওনি । নিজের ছেলেকেও দাওনি। যাই হোক সেটা তোমার ব্যাপার। তোমার প্রোপার্টি… তুমি যা খুশি করতে পারো। এই ধরো তোমার স্ন্যাকস ।
কবির চলে যেতে নিলো।
মেরিন : ওয়েট মিস্টার খান।
কবির দারালো।
মেরিন : দায়িত্ব তাকেই দেয়া হয় যে দায়িত্ব পালন করতে পারে। যে গুনটা সবার মধ্যে থাকেনা । আপনার মধ্যে তো ছিটা ফোটাও নেই।
কবির : হুয়াট ডু ইউ মিন বাই দ্যাট?
মেরিন : ভেরি সিম্পল । দায়িত্ব পালন আপনার দারা জাস্ট হয়না। সেটা প্রমানিত হয়েছে। ১বার নয় ২বার।
কবির চোখ গরম করে মেরিনের দিকে তাকালো। মেরিন খাবারের প্লেটটা কবিরের মুখ মূলত চোখের দিকে ছুরে মারলো।
কবির : আহ…
মেরিন : চোখ রাঙানো আমাকে দিতে আসবেননা। আর লজ্জা করেনা ঘুমের ঔষধ খাবারে মিলিয়ে আনতে?
দাদুভাই : ঘুমের ঔষধ ?
মেরিন : হ্যা দাদুভাই ঘুমের ঔষধ ।
দাদুভাই : ঘুমের ঔষধ কে মিশাবে আমার খাবারে?
মেরিন : যে এনেছে আর যার মুখের ওপর ছুরে মারলাম সেই।
কবির : একদম মিথ্যা কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। আমি এমন কেন করবো? খাবারে কোনো ঘুমের ঔষধ ছিলোনা।
মেরিন : রিয়েলি?
কবির : হামমম।
মেরিন ১টা বাকা হাসি দিয়ে নিচে থেকে কিছুটা খাবার তুলল।
দাদুভাই : পরে যাওয়া খাবার গুলো তুললে কেন?
মেরিন : প্রমান করতে।
বলেই মেরিন আবার গুলো নিয়ে নিচে নামলো।
মেরিন : মিসেস খান… মিসেস খান।
সেতু ছুটে এলো।
সেতু : এভাবে ডাকছিস কেন?
মেরিন : আমার দাদুভাইয়ের খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশাবে আর চুপ থাকবো?
সেতু : কি যা তা বলছিস…
মেরিন : এখনই বলছি।
বলেই মেরিন জোর করে খাবারগুলো সেতুর মুখে ঢুকিয়ে দিলো। জোর করে সবটা খাওয়ালো
মেরিন : ওয়াটার প্লিজ।
সেতুকে পানিও খাওয়ালো। এরপর চেয়ার টেনে সেতুর সামনে বসলো। সেতু চলে যেতে নিলে মেরিন পায়ের কাছে গুলি করলো।
মেরিন : ১চুলও নরলে একটু আগে মুখে যেভাবে খাবার গুজেছি ঠিক তেমনি গান গুজবো। দারিয়ে থাক।
কবির : বাবা তোমার নাতনি সবসময়ই …
দাদুভাই : ঠিক করে… চুপচাপ দারিয়ে থাকো। সেতু… সময় আছে । বলো সত্যিটা।

সেতু জানে না বললে নিস্তার নেই।

সেতু : হ্যা আমি ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছিলাম। বাট কবির জানতো না।
কবির : সেতু… কেন এমন করলে?
সেতু : যেন বাবার টিপসই নিতে পারি। আর সম্পত্তির কিছু অংশ নিরার নামে করতে পারি।।
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো। আর এলোমেলো ভাবে গুলি করতে লাগলো।
মেরিন : কেউ এতোটা বোকা কি করে হতে পারে?
মেরিন সেতুর সামনে গিয়ে দারালো। গানের মাথাটা দিয়ে সেতুর মাথায় হালকা হালকা করে বারি দিতে দিতে
বলল : ১টা কথা মাথায় রাখিস। দাদুভাই চাইলেও খান বাড়ির মাটিও তো মেয়ের নামে দিতে পারবেনা। কারন সবটাই আমার নামে।

সেতু ঔষধের প্রভাবে ধিরিম করে পরে গেলো। তাও মেরিনের কাধের ওপর। মেরিন ১ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
মেরিন : আসছি দাদুভাই।
বলেই মেরিন বেরিয়ে গেলো।

.

মেরিন : হ্যালো জন…
জন : হ্যা ম্যাম।
মেরিন : নীড়কে পাচ্ছিনা। নীড় কোথায় খুজে বের করো।
জন : জী ম্যাম।
মেরিন ফোন কেটে দিলো। ১০মিনিটপর জন ফোন করলো।
মেরিন : নীড় কোথায়?
জন : ম্যাম নীড় স্যার তো আরো ২ঘন্টা আগে বাসায় পৌছে গিয়েছে।
মেরিন : হুয়াট?
জন : জী ম্যাম।

মেরিন বাসায় পৌছালো। পৌছে দেখে নীড় রুমে বসে মনের সুখে পাস্তা খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।
মেরিন : আপনি সারাদিন কোথায় ছিলেন?
নীড় যেন শুনতেই পায়নি । মেরিন টিভি বন্ধ করে দিলো।
নীড় : এটা কি হলো?
মেরিন : সারাদিন কোথায় ছিলেন? মিরপুরও যাননি… নিরার কাছেও যাননি। আপনি ছিলেনটা কোথায়?
নীড় : তোমাকে বলবো কেন?
মেরিন : আমাকে বলবেন কেন মানে? আপনি জানেননা আমাকে বলবেন কেন?
নীড় : না।
মেরিন : আপনাকে এই কাজের জন্য আফ…
নীড় মেরিনের কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মেরিন যথেষ্ট অবাক হলো।

নীড় : তুমি সাইকো আমি সাইকো। আমরা সাইকো জুটি। ছোটোবেলায় আমার জীবনে আসতে ভালোবাসতাম ট্রাস্ট মি । কিন্তু তুমি আমার জীবনে আসার আগে অন্য কেউ চলে এসেছে। সেটা আমার না তোমার দোষ। যাই হোক মিসেস সাইকো… তুমি আমার কথার অবাধ্য হবে তার বিনিময়ে আমি তোমার আম্মুর ট্রিটমেন্ট অফ রাখবো। বিগ ডিল।
মেরিনের মন-মস্তিষ্ক কিছুই কাজ করছেনা ২টা কারনে।

প্রথম কারন নীড়ের বলা কথাগুলো। আর দ্বিতীয় কারন হলো নীড়ের এমন ব্যাবহার।

নীড় : এভাবে কি দেখছো?
মেরিন নিজেকে ছারিয়ে নিতে চাইলো। নীড় অবাক হলো।
মেরিন : ছারুন আমি ফ্রেশ হতে যাবো?
নীড় : হামমম নিশ্চয়ই যাবে । কিন্তু আমি কি বলেছি মাথায় ঢুকেছে?
মেরিন : ….
নীড় : কি হলো ? বলো…
মেরিন : জানিনা।
বলেই মেরিন নিজেকে ছারিয়ে নিলো।
মেরিন : আমাকে কনট্রোল করার চেষ্টা করবেননা নীড়। আর না ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করবেন। ফলাফল ভা…
নীড় : ভালো হবেনা। তাইতো? দেখো তুমি যদি আরও ১৫দিন বেডরেস্টে না থাকো বাসা থেকে বের হও তবে আমি তোমার আম্মুর ট্রিটমেন্ট অফ রাখবো।
মেরিন : নীড় আমার জন্য আমার আম্মুকে কেন জরাচ্ছেন…?
নীড় : আমার জন্য আমার মামনি-বাবা কেন জরায়? এখন বলো রাজি কি রাজিনা ? রেস্টে থাকবে কি থাকবেনা?
মেরিন : থাকবো।
নীড় : প্রমিস?
মেরিন : আপনাকে কিছু বলা কসমের থেকেও বেশি।
বলেই মেরিন ওয়াশরুমে চলে গেলো।

নীড় : আমার ইগো স্যাটিসফাইড। আই জাস্ট প্রাউড অফ মি…

.

সকালে…
কেন যেন নীড়ের ঘুম ভোরের দিকেই ভেঙে গেলো। চোখ মেলে দেখে মেরিন ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
নীড় : আচ্ছা তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে কি পাও?
মেরিন : সেটা বলা যাবেনা। আর বললেও আপনি বুঝবেননা।
বলেই মেরিন নীড়ের সারামুখে চুমু দিলো।
মেরিন : যেদিন আমাকে ভালোবাসবেন সেদিন বুঝবেন।
বলেই মেরিন নীড়ের গলায় ১টা লকেট পরিয়ে দিলো।
নীড় : এটা কি?
মেরিন : দেখতেই তো পেলেন। এন্ড প্লিজ এটা গলা থেকে খুলবেন না। এটা আমার অনুরোধ ।
নীড় : আর যদি খুলে ফেলি তাহলে?
মেরিন : বেশি কিছুনা। আপনার নিরার মাথা থেকে মাথাটা খুলে ফেলবো।

বলেই মেরিন উঠে গেলো।

.

বিকালে…
মেরিন আর বাসা থেকে বের হয়নি। নীড় কনিকার কাছে গিয়েছে। চারদিক কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে । যা দেখে নীড়ের ভীষন আনন্দ হচ্ছে।
নীড় : ওহ ওয়াও বৃষ্টি পরবো। শুরুও হয়ে গেলো। এক কাজ করি ভালো আন্টিকে নিয়ে আসি। বৃষ্টি দেখলে হয়তো ভালো আন্টিরও ভালো লাগবে।

নীড় কনিকাকে নিয়ে এলো। বৃষ্টি দেখাতে।
নীড় : দেখো ভালো আন্টি কি দারুন ব….
বলতে বলতে নীড় থেমে গেলো কনিকার দিকে তাকিয়ে। কারন কনিকার চোখে মুখে থাকা আতঙ্ক আর ভয়।

নীড় : ভালো আন্টি। কি হয়েছে ? তোমাকে এমন লাগছে কেন? ভালো আন্টি …

কনিকা চিৎকার করে বলে
উঠলো : বন্ধ করো …. কেউ বৃষ্টি বন্ধ করো…
চিৎকার করতে করতে কনিকা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

নীড় অবাক হয়ে গেলো….

.

চলবে…

#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 17
writer : Mohona

.

নীড় অবাক হয়ে গেলো ।
নীড় : এটা কি হলো? ভালো আন্টি বৃষ্টি দেখে এভাবে রিঅ্যাক্ট করলো কেন? এতো আতঙ্কে পরে গেলো কেন? এতো ভয় পাচ্ছে কেন? মেরিনও তো এমন করে ভয় পায় …
নীড় ছুটে কনিকার রুমের বাহিরে গেলো।
নীড় : ভালো আন্টি .. ভালো আন্টি …
কনিকা দরজা খুললনা। নীড় চাবি দিয়ে লক খুলল। ভেতরে ঢুকলো । দেখে কনিকা হাটুতে মুখ গুজে বিরবির করে কি যেন বলছে। নীড় কিছুটা সামনে গেলো ।

শুনতে পেলো : আআআমার মেয়েকে ছেরে দাও… আমি তোমার কথা শুনবো। নিজেকে সপে দদদিবো … তবুও আমার মেয়েকে ছেরে দাও… ছেরে দাও। আমার মেয়েকে ছেরে দাও…
কথাগুলো শুনে নীড় বেশ অবাক হলো ।
নীড় : ভালো আন্টি …
নীড়ের কন্ঠ শুনে কনিকার ভয় আরো বেরে গেলো। অস্বাভাবিক আচরন করতে লাগলো। বাধ্য হয়ে নীড় ইনজেকশন দিলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই কনিকা ঘুমিয়ে পরলো । নীড় কনিকাকে শুইয়ে দিলো ।
নীড় : বৃষ্টিতে মা-মেয়ে ২জনেরই কেন ভয়? মেয়ে… মেরিন। ওহ নো ওদিকে তো মেরিনেরও তো মনে হয়.. আমার মোবাইলটা কোথায় গেলো ?

নীড় নিজের মোবাইলটা পাগলের মতো খুজতে লাগলো। অবশেষে পেলো। মেরিনকে ফোন করলো তবে মেরিন ধরলোনা । তখন নীড় আরো ভয় পেয়ে গেলো। নীলিমাকে ফোন করলো।
নীলিমা : হ্যা বল।
নীড় : মেরিন কোথায় ?।
নীলিমা : বাসায়ই । কিন্তু তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন?
নীড় : আমার কন্ঠ নিয়ে পরে গবেষনা কোরো । এখন রুমে যাও। দেখো মেরিন কি করছে? আর গিয়ে আমাকে ফোন করো। এখনই যাও।
নীলিমা : হামমম।

নীড় ফোন রেখে দিলো ।
নীলিমা : বাহ… বউর জন্য এতো চিন্তা…

নীড় : ডলি … ডলি…
ডলি : ইয়েস স্যার।
নীড় : আমি বের হচ্ছি। ভালো আন্টির জ্ঞান ফেরার পর যদি অস্বাভাবিক আচরন করে তবে আমাকে ফোন করবে কেমন?
ডলি : স্যার এমন ঝড়-তুফানের মধ্যে কি করে যাবেন। অনেক রিস্কি। বৃষ্টিটা একটু কমে নিক। তারপরে যাবেন।
নীড় : তোমার কাছে সাজেশন চেয়েছি ? স্টুপিড …
নীড় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

.

নীলিমা রুমে গেলো। গিয়ে দেখে মেরিন কেমন যেন আচরন করছে। ব্ল্যাংকেট দিয়ে নিজেকে কভার করে কি যেন বিরবির করে বলছে।
নীলিমা : মেরিন … এই মেরিন… কি হয়েছে তোর? মেরিন…
নীলিমা মেরিনের কাছে গেলো। মেরিনকে ধাক্কাতে লাগলো। না মেরিন কোনো জবাব দিচ্ছেনা। নীলিমা ভয় পেয়ে গেলো।

নীলিমা : কি হলো মেয়েটার? নীড়কে ফোন করি …

নীলিমা নীড়কে ফোন করলো। ১বার রিং হতেই নীড় রিসিভ করলো।
নীড় : মামনি মেরিন?
নীলিমা সবটা বলল।
নীড় : ড্যাম ইট। এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। আসছি মামনি… ১০মিনিটের মধ্যে আসছি।
নীলিমা : এই বৃষ্টির মধ্যে বের হোসনা। যেখানে আছিস সেখানেই থাক।
নীড় : আম অন দ্যা ওয়ে মামনি… বাই।
নীড় রেখে দিলো।
নীলিমা : হ্যালো নীড় … নীড় … আল্লাহ ছেলেটা যেন ভালোয় ভালোয় ফিরে …

.

১০মিনিটপর …
নীড় পৌছালো। ছুটে রুমে গেলো মেরিনের কাছে । নীলিমা ওর কাছেই বসে আছে ।
নীলিমা : নীড় দে…
নীড় ছুটে মেরিনের কাছে গিয়ে বসে ওকে বুকে জরিয়ে নিলো।
নীলিমা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো ।
নীড় মেরিনের মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলাতে লাগলো ।
নীড় : কিচ্ছু হবেনা। আমি আছিতো … মেরিন … শান্ত হও। কিছু হবেনা । বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে । এখনই বন্ধ হয়ে যাবে। ভয় পায়না। আমি আছি তো … একদম চিন্তা কোরোনা … আম দেয়ার ফর ইউ …
ধীরে ধীরে মেরিন শান্ত হতে লাগলো। যতোক্ষন বৃষ্টি পরলো নীড় ততোক্ষন এভাবেই মেরিনকে বুকের মধ্যে জরিয়ে রাখলো। রাত হয়ে গেলো। মেরিনও চুপটি করে ঘাপটি মেরে রইলো ।

মেরিনের চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরলো। না আজকে কষ্ট পেয়ে কাদেনি মেরিন। আনন্দে কেদে দিয়েছে। তবে নীড় দেখার আগেই মুছে নিলো।

নীড় : ফিলিং বেটার ?
মেরিন মাথা নারিয়ে হ্যা বলল।
নীড় : পানি খেয়ে চুপটা করে শুয়ে থাকো …
মেরিন মাথা নারিয়ে না করলো ।
নীড় : একটু ঘুমালে ভালো লাগবো তোমার।
মেরিন : আমার এভাবেই ভালো লাগছে ।
নীড় : আমারও…
মেরিন : কিছু বললেন?
নীড় : না তো।
মনে মনে : আমার মাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি? কি সব ভুলভাল বলছি?

মেরিন : নীড় …
নীড় : বলো …
মেরিন : আপনি কি একটুখানি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন?
নীড় একদম চুপ হয়ে গেলো। কি বলবে? সরাসরি না বলবে? কিন্তু আজকে না বলাটা এতো কষ্টকর মনে হচ্ছে কেন নীড় সেটাই বুঝতে পারছেনা।
নীড় মনে মনে : কিভাবে না টা বলি? যেভাবে আগে বলেছি সেভাবেই বলে দেই…

নীড় : ১জবাব কতোবার শুনতে চাও?
মেরিন : এটা আমার প্রশ্নের উত্তরনা। বলুন না … ভালোবেসে ফেলেছেন আমাকে?
নীড় : …
মেরিন হাহা করে হেসে উঠলো।
মেরিন : জানি আমাকে ভালোবাসা যায়না । আসলে কি ১টা কুকুরও যদি কিছুদিন আমাদের সাথে থাকে তারপ্রতিও মায়া পরে যায়। আর আমি তো মানুষ। কবুল বলা বউ আপনার । জানেন আপনি না মিস্টার খানের থেকে অনেক ভালো স্বামী।
নীড় : ….
মেরিন : নীড়… আমাকে ১টা ছোট নীড় দিবেন? আমি তার নাম রাখবো নির্বন …
নীড় : …
মেরিন : আপনি আমাকে নির্বন দিন আমি আপনার জীবন থেকে চলে যাবো । যেদিনের নির্বনের অস্তিত্বের সন্ধান পাবো সেদিনই চলে যাবো। কথা দিলাম।
নীড় : …
মেরিন : ভালোবেসে সারাজীবন পাশে থাকার জন্য নাই বা কাছে টেনে নিলেন। কিন্তু ঘৃণা করে আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাকে কাছে টেনে নিন না … প্লিজ …

নীড় মেরিনকে ছেরে দিয়ে দারিয়ে গেলো ।

নীড় : আমি তোমাকে …. ঘৃণা করি।
বলেই নীড় ওয়াশরুমে চলে গেলো।

মেরিন : আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন নীড় … আমি জানি ….

.

পরদিন …
নীড় : বৃষ্টি … কি রহস্য আছে এই বৃষ্টিতে? যে মা-মেয়ে ২জনই ভয় পায়? আমাকে জানতেই হবে…

ভাবতে ভাবতে ড্রাইভ করছে নীড়। মিরপুর পৌছালো। বাসার ভেতরে ঢুকে অবাক। কারন ঢুকে দেখে ডলি উল্টা ঝুলে আছে।

নীড় : ডলি… তোমার এই অবস্থা কে করলো?
মেরিন : আমি।
নীড় : তুমি?
মেরিন : হামমম আমি।
নীড় : কিন্তু কেন?
মেরিন : কারন ও সেদিন আমাকে মিথ্যা কথা বলেছিলো যে আপনি এখানে আসেননি ।
নীড় : আরে আমিই ওকে বলেছিলাম যেন ও তোমাকে এই মিথ্য কথাটা বলে।
মেরিন : বলবে কেন…
নীড় : ওকে নিচে নামাও। আমি ওকে প্রমিষ করেছিলাম যে ওর কিছু হবেনা। আমি ওকে বাচিয়ে নিবো।
মেরিন : আপনি প্রমিস করেছিলেন। আমি তো না।
নীড় : মেরিন ওকে নামাও প্লিজ।
মেরিন : না।
নীড় : হাত জোর করে বলছি।
মেরিন : …
নীড় : এখন কি তোমার পাও ধরতে হবে?
মেরিন : …
নীড় মেরিনের পা ধরতে গেলো । মেরিন সরে গেলো।
নীড় : এখন সরে গেলে কেন?
মেরিন : আপনি আমার পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার আগে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। তবে হ্যা আমাকে আর কখনো কোনো কিছুতে কনট্রোল করার চেষ্টা করবেননা।
নীড় : ভুল হয়ে গিয়েছে আমার। তোমার ভালোর কথা ভেবে। ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমার ওপর কারো কোনো অধিকার নেই। এমন কি আমারও নেই।
মেরিন : হামম। নেই ।
নীড় : থ্যাংক ইউ । আমাকে আমার জায়গাটা দেখানোর জন্য । আর ধারনাা ভুল প্রমান করার জন্য। আমি মনে করেছিলাম যে তুমি হয়তো সত্যিই আমাকে ভালোবাসো … বাট … আই ওয়াস রং । আসলে আমি তোমার জেদ। কেবল জেদ। তাছারা আর কিছুইনা ।
বলেই নীড় ওপরে চলে গেলো।
মেরিন বাকা হাসি দিয়ে ডলি নামালো ।

মেরিন : যাও রেস্ট করো।
ডলি নিজেয় রুমে গেলো ।

মেরিন : আপনাকে এমনই মানায় নীড়। অন্যভাবে না। আমার নীড়ের মুখে আমার জন্য ঘৃনাটাই মানায়। আমার প্রতি আপনার ঘৃণা আপনার সৌন্দর্য আরো বারিয়ে দেয়। আমাকে আনন্দ দেয় । বাট আপনার চেহারায় আমার জন্য কেবল কর্তব্য , দায়িত্ববোধ , কৃতজ্ঞতাবোধ , করুনা … এগুলো আমার দেখতে ভালো লাগেনা । আপনার ঘৃণাকেই আমি ভালোবাসি ।

.

এভাবেই দিন চলতে লাগলো। মেরিনের পাগলামো ভালোবাসায় নীড় প্রায় অতীষ্ট । তবে কনিকার ট্রিটমেন্ট ও ঠিকই ভালোভাবে করছে । কনিকার অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো ।

বৃষ্টির আভাস পেলে নীড় কনিকাকে ভেতরের রুমটাতে রাখে । সেখান থেকে বৃষ্টির শব্দ তেমন পাওয়া যায়না ।

আর রাতে যদি বৃষ্টি পরে তখন মেরিন নীড়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকে। খুব শক্ত কর আকরে ধরে।
কিন্তু নীড় কোনো প্রতিক্রিয়া করেনা। সেদিনের জন্য একরাশ অভিমান জমে আছে । কখনো কখনো মেরিনের করুন অবস্থা দেখে নীড়ের খুব করে ইচ্ছা হয় মেরিনকে আগলে নিতে। যেমনটা সেদিন নিয়েছিলো। কেন যেন খুব কষ্ট হয় মেরিনের এই অবস্থা দেখলে। কিন্তু নিজের অসম্ভব রাগের জন্য ঘুমের ভান ধরে থাকে। মাঝে মাঝে নিজের রাগের ওপরই রাগ ওঠে নিজের।

.

দাদুভাই তার পাখিগুলোকে খাবার দিচ্ছে।
তখন নীড় এসে পিছে দারালো।
নীড় : দাদুভাই…
দাদুভাই পিছে ঘুরলো।
দাদুভাই : আরে নীড় দাদুভাই যে… তুমি? দিদিভাই ঠিক আছে তো?
নীড় : হামমম।
দাদুভাই : নিরা তো আজকে বাসায় নেই ৩দিন ধরে ।
নীড় : জানি। আর একারনেই এসেছি।
দাদুভাই : নিরা নেই বলেই এসেছো?
নীড় : হামমম।
দাদুভাই : অবাক হলাম। এই কে আছো নীড় দাদুভাইয়ের জন্য চা-নাস্তার ব্যাবস্থা করো ।
নীড় : না নান দাদুভাই লাগবেনা।
দাদুভাই : আরে লাগবেনা কেন? তুমি এ বাড়ির জামাই বলে কথা …
নীড় : আচ্ছা বসো তুমি এখানে।
দাদুভাই বসলো।
দাদুভাই : নীড় দাদুভাই… কিছু কি বলবে?
নীড় : হামমম।
দাদুভাই : বলো।
নীড় : দাদুভাই … মেরিন আমার বউ…
দাদুভাই : সেটা কি তুমি মানো?
নীড় : মানি বলেই বলছি। দাদুভাই ভালো আন্টি… মানে মেরিনের আম্মু…
দাদুভাই : সে তোমাক শ্বাশুড়িমা হয়। মা , আম্মা , আম্মু বলাটাই ভালো।
নীড় : ওকে আম্মু।
দাদুভাই : কি হয়েছে কনা মায়ের ?
নীড় : না কিছু হয়নি। বরং আগের থেকে অবস্থা ভালো ।
দাদুভাই : হামমম।
নীড় : দাদুভাই… আম্মু আর মেরিনের সাথে বৃষ্টিকে কেন ভয় পায় ? কে কারনে ওরা বৃষ্টিকে ভয় পায়? বলোনা প্লিজ…
দাদুভাই : …
নীড় : দাদুভাই তুমি চুপ করে থেকোনা। বলো ।
দাদুভাই : তুমি মেরিনকে ভালোবাসো?
নীড় : ….
দাদুভাই : কি হলো? বলো…. তুমি মেরিন বন্যাকে ভালোবাসো?
নীড় : ….
দাদুভাই : যেদিন নির্দ্বিধায় এর জবাব হ্যা বলতে পারবে সেদিন তোমার প্রশ্নের জবাব আমি দিবো। দিদিভাই না দিলেও আমি তোমাকে জবাব দিবো। তার আগেনা….
নীড় : আসছি দাদুভাই…
দাদুভাই : খেয়ে যাও…
নীড় : আমিও এ বাড়িতে সেদিনই খাবো যেদিন আমার উত্তর পাবো।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো।

.

রাত ১২টা…
নীড় এখনও বাসায় ফিরেনি। এদিকে বৃষ্টিও সেজেছে। ঝড়ো হাওয়া বইছে। মেরিন বের হতেও সাহস পাচ্ছেনা। মেরিন জনকে পাঠিয়েছিলো। বাট নীড় জনকে ফিরিয়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে।
মেরিন বেশ বুঝতে পারছে যে ওকেই যেতে হবে। কিন্তু ভয়ও হচ্ছে প্রচুর। বৃষ্টির জন্য । কি করবে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
মেরিন : আমার থেকে নীড় দামী। বৃষ্টিতে নীড়ের কোনো বিপদ হলে?
মেরিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।

নীড় নদীর পারে দারিয়ে সিগারেট খাচ্ছে । আর নদীর পানি দেখছে। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
নীড় ভাবছে আজকেও মেরিন অমন অস্বাভাবিক আচরন করবে।
তখনই ওর ঠিক পেছনে ১টা গাড়ি থামলো। গাড়িটা মেরিনের। মেরিন গাড়ি থেকে নামলো। নীড় মনে করলো জন।

নীড় : জন… প্লিজ চলে যাও। প্লিজ।
মেরিন : জন না। আমি…
নীড় অবাক হলো। এমন আবহাওয়ার মধ্যে মেরিন বেরিয়েছে ? নীড় মেরিনের দিকে ঘুরলো।
নীড় : তুমি?
মেরিন : বাসায় চলুন। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে। চলুন…
নীড় : যদি না যাই ?
মেরিন : নীড়… আমি যখন এসেছি… তখন আপনাকে নিয়েই যাবো। চলুন।
নীড় : যাবো। তার আগে বলো তুমি আর আম্মু বৃষ্টি দেখে কেন ভয় পাও।
মেরিন : নীড় বৃষ্টি শুরু হবে… এর আগে আমি দিশেহারা হয়ে যাই প্লিজ চলুন।
নীড় : প্লিজ বলোনা মেরিন। চলো। তুমি জানোনা আমার মনের ভেতর কেমন লাগছে। আমি জানিনা কেন এমন লাগছে? বলোনা।
মেরিন : নীড় দদদেখুন বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আপনি জানেন আমি বৃষ্টি সহ্য করতে পারিনা। প্লিজ …
নীড় আর কিছু বললনা।
মেরিন বেশ বুঝতে পারলো যে নীড় যাবেনা। তাই ও ইনজেকশন নিয়েই এসেছে। মেরিন কিছু না ভেবে ইনজেকশন বের করে নীড়ের ঘাড়ে দিতে নিলো তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

মেরিনের হাত থেকে সিরিঞ্জটা পরে গেলো। নীড় তৎক্ষাৎ মেরিনের দিকে ঘুরলো।

মেরিনের চোখের সামনে সেই ভয়ানক রাতটা ভেসে উঠলো। এই ১৫বছরে প্রথমবার বৃষ্টির সংস্পর্শে এলো মেরিন…
স্থির হয়ে দারিয়ে রইলো।
মেরিনকে এভাবে দেখে নীড়ের ভয়টা ২গুন হয়ে গেলো।
নীড় : মমমেরিন….

.

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here