ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৩

0
1270

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৩

হাতে থাকা ছবিটা ড্রয়ারে রেখে দিলো। ওয়াশরুমে যেয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে আসলো, তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ফাহিনকে কল করলো। ফাহিন রিসিভ করে বললো, কিরে কই তুই?

-এইতো আছি শাফিনের বাসায়।

– জানতাম সব কিছু মিটমাট হয়ে যাবে। এভাবেই ভালো থাক।

– আগে আমার কথাটা তো শুনবি-তো নাকি?

– হ্যা বল।

– ফাহিন আমি এখন যে কথাটা বলবো। তুই কোন প্রশ্ন করা ছাড়া আমার কাজটা করে দিবি।ওয়াদা কর।

– আরে এভাবে বলছিস কেন, তুই যা বলবি তা অবশ্যই করে দেবো। কথা দিচ্ছি।

– ফাহিন তুই ভালো কোন উকিলের সাথে কথা বলে, আমার আর শাফিনের ডিভোর্স পেপার রেডি করে পাঠাবি,কাল সকালের মধ্যেই। এখন কিন্তু না করতে পারবি না।

– তুই এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছিস। তুই পারবি শাফিনকে ছাড়া থাকতে? আর একটু ভেবে দেখ।

– আর কিছু ভাবার নেই। ভেবেই বলছি। তোকে যেটা বলছি তুই তোর কাজটা করে দে।

– তা না হয় দিলাম তবুও যদি আর একটু ভেবে দেখতি?

– আমি কেমন তোরা জানিস হুটহাট কোন কাজ আমি করিনা। আর চব্বিশ বছরের একজন এডাল্ট পার্সন ষোল বছরের বাচ্চাদের মতো আবেগে-তো আর এই সিদ্ধান্ত নেইনি। যথেষ্ট বুঝে শুনেই নিয়েছি। আচ্ছা কাজটা করে দিস এখন রাখি।

ফাহিন কিছু বলবে তার আগেই ফোন কেটে দিলো মিহি। ফাহিন সব ব্যবস্থা করে রাখলো।ফাহিন নিজের ফোন থেকে সুমু কে কল করলো। দু’বার রিং হয়ে কেটে গেলো, তৃতীয় বারের সময় রিসিভ হলো।
ফোন তুলেই সুমু বলে, আমাকে ডিস্টার্ব করার অভ্যাস ছেড়ে দে। আজ বাদে কাল আমার বিয়ে।

– তোকে ডিস্টার্ব করা তো সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছি। একটা প্রয়োজন কল করেছিলাম। কিন্তু আমি ভুলেই গিয়েছি। এখন এতোটুকু তেও তুই ডিস্টার্ব হবি সেটা জানা ছিলো না। আচ্ছা রাখি।

– একদম ফোন কাটবি না ফাহিন।ডিস্টার্ব যখন করেই ফেলেছিস এখন বলে ফেল কেন কল করেছিস?

– তুই তো এখন চট্রগ্রামে থাকিস?

– হুম। কিন্তু কেন?

– মিহিকে আমি তোর কাছে পাঠাচ্ছি কিছুদিন ওকে দেখে রাখিস। মেয়েটার পাশে এখন আমাদের থাকা উচিৎ।

– কিন্তু মিহি শাফিন ভাইকে ছেড়ে চট্রগ্রামে কেন আসবে? মাথা ঠিক আছে তোর।

ফাহিন সুমুকে সব সংক্ষিপ্ত আকারে সব বুঝিয়ে বলে দিলে।

সব শুনে সুমু বললো,দেখলি তো এতো গভীর ভালোবাসা, এতো কেয়ার বিয়ের পর সব শেষ।

– সব সম্পর্ক কিন্তু এক হবে না। সবাই কিন্তু সমান না।
– বুঝবো কি করে?

– এখন আর তোকে বুঝতে হবে না।

– বিয়ে করবি না তুই?

– আমার মতো ছেলেকে কে বিয়ে করবে?

– যদি বলি আমি করবো।

ফাহিন সুমুর কথাটা শুনে মনে হয় এক মিনিটের জন্য জ্ঞান শুন্য হয়ে পরলো।
ফাহিনকে চুপ থাকতে দেখে সুমু বলে কিরে উত্তর দে। পরে কিন্তু এই সুযোগ আর পাবিনা।

কিছু না বলে ফাহিন কল কেটে দিলো। ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে বলে, যেদিন শুন্য পকেটে ছিলো। তখন তুইও পাশে ছিলিনা। আজ পূর্ণ পকেটে তুই ফিরতে চাইছিস? পৃথিবীতে সব মানুষ স্বার্থপর। সবাই টাকা চায়। কেউ স্বচ্ছ মন আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বোঝেনা। টাকার কাছে ভালোবাসা ফিকে পরে যায়। আমি যে আর সেই বোকা ফাহিন নেই। আমার মনটা যে এখন ইট,পাথরে বাঁধা। সেখানে কোন স্বার্থপর মানুষের জন্য ভালোবাসা নেই। আছে শুধু এক আকাশ সম অভিমান। যে পথ ছেড়ে এসেছি সে পথে আর পা বাড়াতে চাইনা।

সুমু ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবে, তুমি হয়তো অবাক হচ্ছ! আমি হঠাৎ বিয়ের কথা বলায়। বিয়ে তো আমি তোমাকেই করবো।
______________________________________________
রাত বারোটা, মিহির চোখে ঘুম নেই। দশটার গাড়িতে করে মিহির বাবান,মা চলে গেছে গ্রামে। তারা অমত করলেো মিহি তাদের টিকিট বুকে করে নিজ দ্বায়িত্বে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পুরো বাসায় একা। সকালের ছবিটা যেনো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনে মনে বলছে,সব মেনে নিয়ে থেকে যেতাম কিন্তু তোমার পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করে থাকতে পারবো না।আমি চেয়েছিলাম বেবির জন্য হলেও আমরা আবার এক হবো,।কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। শাফিন আর মিহির ভালোবাসা এখানেই সমাপ্ত।কিন্তু সমাপ্ত হয়েও তো হলো না। এই যে একটু একটু করে আমার গর্ভে তোমার ভালোবাসার চিহ্ন বেড়ে উঠছে? তুমি তো জানতেও পারবে না। তোমার আমার ভালোবাসার চিহ্ন এই পৃথিবীতে আসতে চলেছে।এমন সময় কলিং বেল বেজেই চলেছে বেজেই চলেছে। কেউ এক নাগাড়ে কলিং বেল চাপ দিয়েয় যাচ্ছে। মিহি ভয়ে, ভয়ে ছোট ছিদ্রটা দিয়ে উঁকি দিতেই। চার পাঁচজন কালো পোশাক পরা মানুষ দেখতে পেলো। দ্রুত সেখান থেকে সরে এসে প্রথমে উদয়কে কল করে। কিন্তু ফোন বন্ধ। তারপর শাফিনকে কল করে শাফিনের ফোন ও বন্ধ। উপায় না পেয়ে ফাহিনকে কল করে। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না। এক পর্যায়ে কলিং বেলের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল সাইলেন্ট করে মিহি ততক্ষণে স্টোর রুমে পুরোনো সোফার পিছনে লুকিয়ে পরে।ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার। কি করবে বুঝতে পারছে না। নিরব রাতে একা বাসায়। এখন শুধু কানে ভেসে আসছে কিছু পায়ের শব্দ। মিহি নিজের নিশ্বাস ধিরে ধিরে নিতে লাগলো। হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছে। ধীরে ধীরে, পায়ের আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগলো। ভয়ে মিহির হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

______________________________________________
এদিকে দুই দলের তুমুল লড়াই চলছে।শাফিনের সহকারী আয়রা বললো, স্যার আজ হয়তো আমরা জীবিত ফিরবো নয়তো মৃত তবুও এই বিষাক্ত ড্রা*গ*স সাপ্লাইয়ার কে ধরেই ছাড়বো।

– তবে আমরা মনে হচ্ছে ওরা আগে থেকেই এলার্ট ছিলো নয়তো লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকতো না। আর যদি দেখো বিপদ বেশি বেড়ে যাচ্ছে। তবে তুমি আর নুহাস চলে যাবে।

– না,স্যার এটা হয়না। এই দু’বছর আপনার সাথে কাজ করছি। আমি আপনাকে একা কিছুতেই ছাড়বো না।তোমাদের আমাকে একা ছাড়তেই হবে।আমি মা*রা গেলেও যাতে তোমরা এম,কে, কে খুঁজে বেড় করে শাস্তি দিতে পারো সেই ব্যবস্থা করবে। সবাই এক সাথে মা*রা পরলে চলবে না। ইট’স মাই অর্ডার। আমি এখন যাচ্ছি। অলরেডি আমাদের দু’জন কর্মকর্তা নি*হ*ত আর আটজন আ*হ*ত হয়েছে। নুহাস তুই আরো ফোর্স আনার ব্যবস্থা কর।

নুহাস বললো,চল আমরা আজ কেটে পরি। অন্যকোন দিন এদের ব্যবস্থা করবো।

– লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে কাপুরুষেরা পালিয়ে যায়। যখন ট্রেনিং নিয়েছি তখন কিন্তু বড় মুখ করে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। প্রয়োজন দেশের জন্য জীবন দেবো। আজ যখন সুযোগ এসেছে তখন পিছপা হবো না।

নুহাস আর আয়রা আর কিছু বললো না জানে বলে লাভ নেই।

তিন ঘন্টা ধরে লাড়াই চলছে। উভয় পক্ষে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। এক পর্যায়ে বাকিরা পিছু হটে। সেই সুযোগে শত্রু পক্ষের পরপর তিনটা গু*লি লাগে শাফিনের শরীরের তিন জায়গায়।

আয়রা দৌড়ে যেতে চাইলে নুহাস থাকে আটকে রাখে।
ফিসফিসেয়ে বলে, স্যার বেঁচে থাকুক আর না থাকুক তার অসম্পূর্ণ কাজ আমাদেরকে করতে হবে। তাই ভুলেও এখন শত্রু পক্ষের কাছে ধরা পরলে চলবে না।

– কিন্তু তাই বলে চোখের সামনে স্যারকে এভাবে শেষ হতে দেখবো।
– এই মূহুর্তে ধৈর্য ধরে দেখা ছাড়া কিছু করার নেই।

পরিবেশ এখন কিছুটা শান্ত, বেশ কিছু অফিসার, আ*হ*ত হয়েছে। আর চারজন নি*হ*ত হয়েছে। সবাই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে আছে। এখন প্রায় রাত চারটা বাজে।

______________________________________________
ক্রমশ পায়ের শব্দগুলো কাছে আসতে লাগলো। মিহি সোজা হয়ে শুয়ে পরলো সোফার নিচে।নিজেকে শেষ রক্ষা করার একটা প্রচেষ্টা। তবে ইঁদুর গুলোর যেনো অসুবিধা হলো। তার শব্দ করতে লাগলো। হেটে, হেঁটে মিহির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করতে লাগলো। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে মুখে কোন শব্দ করছে না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ মিহির আন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এরচেয়ে বড় পর্ব চাহিয়া লজ্জা দিবেন না।আর রইলো বোনাস পর্ব দেওয়ার কথা। প্রতিদিন এক পর্ব লিখার সময় হয়ে উঠছেনা। সেখানে বোনাস পর্ব লিখতে চাওয়া বিলাসিতা মাত্র😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here