ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১২

0
1313

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-১২

শাফিনের ব্যপারে তার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে শাফিন সম্পর্কে শুধু নুহাস জানে। আর কেই জানেনা।নুহাস শাফিনের হয়ে কাজ করে। শাফিন নিজের কাজ কম্পিলিট করে। ল্যাপটপটা ডেক্সে রেখে। চলে আসলো স্টোর রুমে, সেখান থেকে চলে গেলো নিজের গোপন রুমে। মিহি সাথী বেগমের সাথে কথা শেষ করে রুমে আসার সময় শাফিনকে স্টোর রুমে যেতে দেখে। মিহিও সেদিকে গেলো। কিন্তু স্টোর রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। রুমে এসে এক্সট্রা চাবি নিয়ে চলে আসলো।দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই শাফিনের সাথে ধাক্কা লেগে পরে যাওয়ার আগেই শাফিন নিজের বাহুতে মিহিকে আবদ্ধ করে নিলো। মিহি শাফিনের চেহারা দিকে তাকিয়ে আছে। দ্বিতীয় বার ভার্সিটিতে যখন তাদের দেখা হয়েছিলো সেই কথা মনে পরে গেলো।

ফ্লাশব্যাক……..

মিহি, আর বর্ষা ভার্সিটিতে এসে ক্লাস শেষ করে বেড় হতেই,বর্ষা বললো,কিরে আগামীকালের ওই ব্লাক ড্রাকুলাকে দেখছিনা যে?

– ড্রাকুলা তো তাই হয়তো র*ক্ত খাওয়ার শিকারে বের হয়েছে। পেছন থেকে একজন বলে উঠলো, এই ড্রকাুলা যার তার র*ক্ত পান করেনা। তার জন্য অবশ্য ব্লাক কুইনের রক্ত প্রয়োজন। আর সেটা শুধু তোমার কাছেই আছে মিস আকাশী পরি।

মিহি পিছনে ঘুরে বিড়বিড় করে বললো, শয়তানকা নাম লিয়া নেহি শয়তান হাজির।

– আরেহহহ, এতো দেখছি সত্যি সত্যি পরি। নিশ্চয়ই তোমার পরি সম্রাজের কারো সাথে কথা বলছো।

– দেখুন ভার্সিটিতে পড়া লেখা করতে এসেছেন, সেটাই করুণ ফ্লাটিং করতে হবে না।

– এক সুন্দরী মাইয়া আমার মন নিলো কারিয়া। পারো যদি তোমরা তারে দাও গো আনিয়া।

মিহি কিছু বলতে যেয়ে থেমে গেলো। বর্ষাকে বললো, তুই যাবি আমার সাথে নাকি থেকে যাবি।

মিহি ঘুরে চলে যেতে নিলে মিহির খোলা চুলগুলো যেয়ে শাফিনের চেহারা স্পর্শ করলো।

শাফিন বললো,ও সুন্দরী। তুমি চলে গেলে যাও তোমার চুল কেটে আমাকে দিয়ে যাও। এতো মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

মিহি সামনের দিকে ঘুরে বলে,বাসায় যাওয়ার সময় একটা ডাভ শ্যাম্পু, ডাভ কন্ডিশনার, আর একটা ভালো ব্রান্ডের হেয়ার সিরাম নিয়ে যান। আপনার যে চুল তাতে নিজের চুলের ঘ্রাণে দ্রুত পাগল হবেন।

– মুখ থেকে কথা নয় যেন খই ফুটচ্ছে। তা ঠিক করেই এসেছো পটবে না। নাকি কেউ আছে?

মিহি শুনেও না শোনার অভিনয় করে চলে যেতে নিলে। কিছু চুল শাফিনের শার্টের বাটনে আটকে পড়ে যেতে নিলে শাফিন নিজের বাহুতে আগলে নেয়। মিহি না বুঝেই ঠাসসসসস করে শাফিনের গালে চড় বসিয়ে দেয়।

মিহিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাফিন বলে, ফের যদি উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথায় এনেছো তবে এবার হাত আর আস্ত রাখবো না। মিহিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে শাফিন।

– তোমার এখনো মনে আছে সেদিনের থাপ্পড়ের কথা।

– জীবনে প্রথম কোন মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়েছিলাম সেটা ভুলে যাই কি করে?

– তুমি কি আমাকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিয়ে করেছো।

– মিহিকে দেয়ালের সাথে হাত চেপে দিয়ে বলে, তোমার এটা মনে হলো এতো বছর পর।

– ছাড়ুন আমাকে পুরুষ হয়েছেন বলে জোড় খাটাবেন। ভুলে যাবেন না আমাকে টাচ করার কোন অধিকার আপনার নেই।

শাফিন মিহিকে নিজের আরো,কাছে এনে বলে, তুমি শতবার জন্মালেও সেই অধিকার শুধু আমার থাকবে।

– না থাকবে না। তোমার মতো মানুষের সাথে আমি থাকবো না।

– ওহহহ রিয়েলি!যদি এতোই আমাকে ছাড়ার শখ ছিলো তবে ডিভোর্স না দিয়ে সো কল্ড মিউচুয়াল ব্রেকআপের আইডিয়া কেন দিলে? নাকি তখন হ্যাসবেন্ডের দরকার ছিলো। এখন আর নেই। এখন ফাহিন কে দেখে লোভ সামলাতে পারছো না।

– একদম বাজে কথা বলবেন না।ভাবতেও ঘৃণা হয় কোন সময়ে তোমার মতো নোংরা মনের মানুষকে ভালোবেসেছিলাম।

– এখন তো নোংরা লাগবেই কারণ মনে যে ফাহিনের রং লেগেছে। বলেই মিহিকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।

মিহি সেখানেই বসে পরলো। চোখ বেয়ে বেহায়া অশ্রু গুলো ঝরতে লাগলো। বেশ কিছু সময় বসে থেকে উঠে আসবে এমন সময় পায়ের কাছে একটা ছবি দেখতে পেলো।

______________________________________________
অন্ধকার রুমে ইজি চেয়ারে বসে একজন বলছে,তুই শিউর ওর বউয়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই?

একটা মেয়ে বলছে জ্বি স্যার আমি কনফার্ম। প্রেম করে বিয়ে করলে কি হবে। আমি ওই বাড়িতে যতদিন কাজ করেছি।কখনো ওদের মধ্যে মিল দেখিনি।ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি লেগেই থাকতো। এমনকি সাহেব তো ম্যাডামের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতেন।

-তাহলে এখন ওরা আবার এক বাসায় কি করে?

– আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। ম্যাডামের বাবা, মা এসেছে। তাই আমার মনে হয় তারা-যে আলাদা হয়েছে। সেই কথাটা গোপন করতেই আবার এক সাথে থাকছে।

চেয়ারে বসে থাকা লোকটি,নিজের পকেট থেকে টাকার বান্ডিল ছুড়ে মারলো সালমার দিকে। তারপর কর্কশ কন্ঠে বলল,তোর কাজ শেষ। যা চলে যা।

লোকটি চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে, আমাকে ধরা এতো সহজ না এসিপি শাফিন মাহমুদ।তুমি কি ভেবেছিলে ছদ্মবেশে থাকলে তোমাকে আমি খুঁজে পাবোনা। এবার দেখো তোমার আমি কি অবস্থা করি। আমার ব্যবসায় বাধা দেওয়ার ফল-তো তোমাকে ভোগ করতেই হবে। বলেই অট্টহাসিতে কেঁপে উঠলো রুমটা।

______________________________________________
শাফিন নুহাসের সাথে কথা বলে সব ডিটেইলস জেনে নিলো। আজ রাতে বড় একটা চালান চোরাই পথে ঢাকা প্রবেশ করবে।শাফিন বললো,যারা আমার বাসায় গিয়েছিল ওদের আটকে রেখেছিস তো?

– হ্যা আমাদের গোপন আস্তানায় বন্দী করে রেখেছি ওদের।

– ঠিক আছে ওদের তো আমি পরে দেখে নেবো। তুই ফোর্স রেডি কর আজ রাতের মিশনের জন্য।

– আচ্ছা সেসব না হয় করলাম। কিন্তু তুই আর কতদিন মিহির কাছ থেকে সত্যটা লুকাবি?

– যতদিন না মিস্টার এম,কে, কে ধরতে না পারছি ততদিন। জানিস তো আমার ছোট একটা ভুল মিহির জীবনের রেড সিগনাল।

– কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সম্পর্কটা তো সত্যি শেষ হয়ে যাবে।

– কিছু হবেনা। দুই বছরের যেহেতু শেষ হয়নি সামনেও হবে না। আর মিহিকে কষ্ট দিতে বুঝি আমার ভালো লাগে?কিন্তু এছাড়া কোন উপায় নেই। আজ যা ব্যবহার করেছি এরপর আর হয়তো আমার থেকে কোন আশা রাখবে না। সকালে বেঁচে ফিরলে হয়তো বাসায় যেয়ে মিহির চেহারাটা দেখা হবে না।

– আচ্ছা আমি ফোর্স রেডি করছি। তুই নিজেকে তৈরি কর। আজকে বাঁচা ম*রা*র লড়াই।

শাফিন নুহাসকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তুই মিহিকে দেখে রাখতে পারবি না নুহাস?

– এসব কি বলছিস তোর কিছু হবে না। আর দেখবি খুব শীগ্রই এম, কে গ্রেফতার হবে।

নুহাস কে ছেড়ে দিয়ে বলে,ঠিক আছে তুই যা। নুহাস চলে যেতেই শাফিন একটা সি*গা*রে*ট ধরিয়ে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো। এটাই যেন এখন একমাত্র সঙ্গী শাফিনের। মোবাইল বের করে, গ্যালারীতে মিহির হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,আমি চাই তুমি সব সময় এভাবে হাসিমুখে থাকো। আমি যে আটকে গেছি। না পারছি ছাড়তে না পারছি ধরতে। দ্বায়িত্বের বেড়া জালে আটকে আছি। আমাকে ক্ষাম করবে তো প্রেয়সী?নিজের মনে মনে কথা গুলো বলছে আর সি*গা*রে*টে*র ধোঁয়ায় দুঃখগুলো উড়িয়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।ভালোবাসা বড় অদ্ভুত, না দেয় ভালো থাকতে না দেয় ভুলে থাকতে। শুধু তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়।এই যে মিহিকে দেখলে কিছু সময় জড়িয়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু না পারার কষ্ট কতখানি ক্ষত সৃষ্টি করে সে খবর কি মিহি রাখে? নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে। হাতের আধ খাওয়া সি*গা*রে*ট*টা পা’দিযে পিশে নিয়ে বলে, তোকে শুধু একবার পাই, এম,কে সব কষ্টের হিসেব নেবো গুনেগুনে।

______________________________________________
মিহি এক ধ্যানে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। চোখের নোনা জল গুলো গড়িয়ে কয়েক ফোটা পরলো ছবিটার উপরে। এতোদিনের এতো অত্যাচার, এতো অশান্তি মিহির হৃদয়ে এতোটা আঘাত করেনি। হাতে থাকা ছবিটা যত আঘাত করছে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের পেটে হাত রেখে বলে,তুই বড় অবেলায় এলি। জানিনা তোর ভাগ্যে কি আছে?

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। ইদানীং পড়া লেখা নিয়ে ভিষণ চাপে আছি। তাই চাইলেও নিয়মিত দেয়া হচ্ছে না। একটু ফ্রী হই। ইনশাআল্লাহ আবার নিয়মিত হবো।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here