গোপনে পর্ব ১

0
2793

গোপনে

#রিমা_বিশ্বাস
বাথরুমের আয়নাটা যখন অরিত্র স্বন্তপর্ণে বাঁ হাতটা দিয়ে মুছল তখন কানে আসছিল মা’র টুকরো কথা।মা এখন তার বান্ধবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছে।আর অরিত্র বুঝতে পারছে কোন বিষয়ে।সাদা ফ্যানা ঘষে রেজারটা যখন নামছিল ভালই কিন্তু ঠোঁটের কাছে আসতে কুচ করে কেটে গেল।এখন রক্ত পড়ছে।রেজারটা জলে চুবিয়ে ধুতে ধুতে অরিত্র মাথা নাড়ল আপন মনে।হাতটা না কাঁপলে এভাবে কাটত না।আর হাতটা কাপল মা’র কথায়।মা শিপ্রা আন্টিকে বলছিল, তোর মেয়ে তো বেশ চালাক চতুর রে শিপ্রা কি সুন্দর নিজে দেখে শুনে যোগার করে নিয়েছে।আর এক আছে আমারটা!কলেজ জীবন কাটল চাকরিতে ঢুকল সেখানেও কাটল কত কাল।তবু একটা প্রেম করতে পারল না। এ কেমন হাবা আমার কপালে জুটল বল দেখি?”
ব্যস এইখানেই অ্যাক্সিডেন্টটা ঘটল।আঠাশ বছরের জীবনে এ ব্যর্থতা যে একেবারে খোঁচা মারে না তা তো নয়!
ঘরে ঢুকে একে একে ড্রয়ার গুলো টেনে চলেছে অরিত্র। সেভিং লোশন লাগিয়েও রক্তটা বন্ধ করা গেল না।এবার অন্টিসেপ্টিক লোশন চাই।বা কোনও ওষুধ…
ঘরে মায়ের গলা পেতে অরিত্র পিছন ফিরে তাকাল।
….”এ মা!এতটা কেটে গেছে?তুই যে কি করিস!দেখি সর তো!”উড চেস্টের তৃতীয় ড্রয়ারটা টেনে মা একটা হোমিওপ্যাথি মাদার টিনচার বের করল।
শিশিটা দেখে আঁতকে উঠল অরিত্র….”মা প্লিজ। প্লিজ না!ওটা বড় জ্বালা করে!”
কিন্তু এই আর্তনাদে বা প্রতিবাদে কোনও লাভ হল না।মা সোজাসুজি টিনচারটা ঢেলে দিল ঠোঁটের কোনে।প্রথমে অরিত্রর ঘায়ের জায়গাটার নাগাল পাচ্ছিল না কিন্তু চুলের মুঠি ধরে নামিয়ে ঠিক সুবিধা করে নিল।এবং ওষুধ ঢালতে ঢালতে বলল….”ওরে আমার মোমের পুতুল রে।অরি তুই কবে বড় হবি বল তো?এদিকে আমরা তোর বিয়ের তোড়জোড় করছি আর তুই এমন ছেলে মানুষ থাকবি?বউ এলে যে তোকে দিনে রাতে ঝাঁটাবে।সঙ্গে আমাদেরও!বলবে কি অপদার্থ তৈরি করেছেন?”
…”অপদার্থরা ডিভিশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার হয়!তাই তো?”
…”সে তো কাজের ক্ষেত্রে বাবা।অত ভালো জায়গা থেকে এমবিএ করেছিস।পরিশ্রম করেছিস তাই ভালো একটা চাকরিও পেয়ে গেছিস।কিন্তু হাবাপনা যে গেল না!একটা ওষুধ খুঁজে পাস না।এখনো নিজের কাজ করতে পারিস না।কথায় কথায় খালি মা আর মা…”
…”বেশ করি আরও করব…”বলে মায়ের কানের কাছে এসে অরিত্র এবার চেঁচাতে শুরু করল ….”মা.. ও..মা.. গো!”
মা ঘর থেকে বেরতে গেলে অরিত্র মা’র আঁচল ধরে বলল…”দুটি ভিক্ষা দেবে মা…”
আঁচল ছাড়িয়ে নিয়ে মা রাগতে গিয়েও হেসে ফেলল।মাথা নেড়ে বলল…”পরশু মেয়ে দেখতে যাব।এই সব ফচকেমি আর করিসনে অরি।বউএর সামনে মায়ের আঁচল ধরে ঢং করলে বউএর লাথি জুটবে তোর কপালে!”
মা’র আঁচল ছেড়ে অরিত্র দু হাত কোমরে রেখে বলল… “তুমি কি আমাকে বিয়ের নামে ভয় দেখাচ্ছ মা?”
…”ভয় নয় ভয় নয়।সজাগ করছি।বিয়ের বয়স হয়ে গেল তবু যে ম্যাচুয়র হলি না!”
মা বেরিয়ে গেলে অরিত্র এবার অফিসে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করল। আলমারি খুলে ব্লু চেক শার্টটা বের করতে মনে পড়ল কাল অফিস কলিগ ইশিকাদির কথা।বলছিল ওর হাজবেণ্ডের জন্য একটা ব্লু শার্ট কিনেছে অনলাইন থেকে কিন্তু এখন দেখছে সেটা ছোট হচ্ছে এক সাইজ।ইশিকাদিও লাভ ম্যারেজ করেছে।ওদের প্রেম কলেজ লাইফের।কলেজ প্রেমের আবেগটাই আলাদা। এটা অরিত্র মনে করে।এ কথা ইশিকাদিকে বলায় ও তো চোখ মুখ উলটে বলল, বলিস না ভাই।না বুঝে অল্প বয়সে যা ভুল করেছি তার খেসারত বুঝি জীবনভর টানতে হবে!ইউ আর সো লাকি যে তোর কোনও কলেজ প্রেম ছিল না।”
বলেই পরক্ষণে নিজেকে শুধরে নিয়ে দু চোখ গোল করে বলেছে…”না কি ছিল?আসলে তোকে তো কারুর সঙ্গে ফোনে লেগে থাকতে দেখি না।আর কোনও সুন্দরী কখনো অফিসেও আসে না।তাই বলে ফেলেছিলাম মুখ ফসকে।কিছু মনে করিস না ভাই!ভুল বললে…”
অরিত্র বাধা দিয়ে বলেছে…”মনে করার কিছু নেই দি।কেউ ছিল না!”
ইশিকাদিকে অরিত্রর খুব পছন্দ। তার প্রথম কারণ মেয়েটার সঙ্গে সহজে সহজ হওয়া যায়।দ্বিতীয়ত চাকরিতে ঢোকার পর পর ও না না ভাবে সাহায্য করেছিল।অরিত্র একটা টপ ক্লাস ফাইবার মেকিং কোম্পানির ডিভিশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার।কম বাজেটে প্রোডাক্টের অ্যাড ক্যাম্পেইনিং করা চ্যানেল মার্কেটিংএ প্রোডাক্টের ডিমান্ড বাড়ানো এগুলো যতই ম্যানেজমেন্ট স্কুলে পড়ুক।হাতে কলমে ইশিকাদিই শিখিয়েছে।তবে এ তো গেল কাজের কথা।অরিত্র কিন্তু তা বলে মনের সংগোপনে লোকানো টুকরো অনুভূতিটা শেয়ার করতে পারেনি নিজের দিদির মতন এই মেয়েটার সঙ্গে। কেন যেন বেধেছে।প্রেম তো ছিল না।শুধু ছিল ভাল লাগা।চোখ বুজলে অরিত্র এখন দেখতে পায় ছিপছিপে গড়নের মেয়েটা হাওয়ায় ওড়না উড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।হলুদ সাদা ডোরাকাটা সালোয়ার। ঢেউ খেলানো চুল কাঁধের কাছে দুলছে।বাসন্তী রঙের ওড়নার প্রান্তটা এসে পড়ল অরিত্রর মুখের ওপর। অরিত্র ঐখানেই সিঁড়ির মুখটায় বসে।ওখানে বসত অনেকেই।সিঁড়ি মুখের উউল্টো দিকে লাইব্রেরি রুম।সে ঢুকে গেল লাইব্রেরিতে।একবার ফিরেও তাকাল না অরিত্রর দিকে। যাকে সে তার সুমিষ্ট “পারফিউমের” গন্ধে আর মিহি শিফনের ছোঁয়ায় মোহাচ্ছান্ন করে দিয়ে গেল।ওর ওড়নার ছোঁয়াটা অরিত্রর মনে হয়েছিল ঐ অপরিচিতা তরুণীর স্পর্শ। তবে ঐ প্রথম হলেও তা শেষ ওখানে হয়নি।অরিত্র ওকে দেখলেই বিহ্বল হয়ে যেত।একদিন কে যেন ডাকল ওকে….”মেঘা…”
সেদিন জেনেছিল ওর নাম।মেঘা।ডায়েরির পাতায় বার বার লিখেছিল আর মুছেছিল ও নাম।মেঘা মেঘা…মেঘা…”
…”মেঘা না মেঘালয় মাঘ মাস আপনি যে সব গুলিয়ে দিলেন ভটচায্যি মশাই!”
কানে মোবাইল চেপে মা ঘরে ঢুকে ভ্রূ কুঁচকে গলা নামিয়ে বলল….কি রে তৈরি হসনি কেন?অফিস যাবি তো? ভাত দিয়ে দিয়েছি কিন্তু! “আবার ফোনে মনোযোগী হয়ে বলা শুরু করল…”না না আপনাকে না।ছেলেকে বলছিলাম।তা কি বলছিলেন? মেয়ের বাবার মেঘালয়ে চাকরি? তা হোক না..কি?”
মার আওয়াজ ক্রমশ অস্পষ্ট হতে হতে মিলিয়ে গেল।অরিত্র কাবার্ড বন্ধ করে ব্লু শার্টটাই বের করল।পরশু অরিত্র মেয়ে দেখতে যাবে।অরিত্র জানে না এই মেয়েকে ওর পছন্দ হবে কি না বা মেয়েটা ওকে পছন্দ করবে কি না!তবে এ তো বুঝতে পারছে জীবনে একটা আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে অরিত্রর।
নাহ মা যেমনটা বলে অরিত্র তেমন ইমম্যাচুয়র নয়।কিন্তু লাজুক বটে।বা হয়তো বা ভীরু।নইলে কলেজের পর পর দু দুটো বছর পেরিয়েও অরিত্র শুধু নিজের নামটুকুই বলতে পেরেছিল।আর ওর নাম শুনে মেয়েটা যে খিলখিল হেসে “তাই বুঝি!” বলে চলে গিয়েছিল তার পর অরিত্রও যেন কেমন আড়ষ্ট হয়ে রইল।মেয়েটা যে তার পর অরিত্রর দিকে তাকাত না বা মুখ ফিরিয়ে না দেখার ভান করে যেত তা তো নয়।কিন্তু অরিত্র যে আর সাহস দেখাতে পারেনি।কে জানি কেন!কিন্তু পারেনি।অথচ মেয়টা কিন্তু তাড়া করে গেল পুরো কলেজ কাল।পরে এমবিএ করতে এসে। হয়তো এতদিনে তার বিয়েও হয়ে গেছে।বিয়ে হয়ে গেছে ভেবে মনটা মোচড় খেল।প্রেম হয়নি।কোনও সম্পর্ক হয়নি।তবু মেয়েটা অন্য কারও হয়ে গেছে ভেবে মনটা মোচড় খেল। এ তবে কি?শুধুই কি ভালোলাগার খাঁটি অনুভূতি? না এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে যাবতীয় ভালোবাসা চাওয়া পাওয়া! না এত গভীর ভাবে কিছু ভাবেনি অরিত্র। বলতে গেলে ভাববার সময়ই পায়নি।তবু মনে যে চলেই আসে মেয়েটা।আর চলে আসে মেঘলা দিনে ওকে শেষ দেখাটা..
অফিসে ঢুকতেই ইশিকাদির মুখোমুখি।হাত তুলে ইশিকা বলল…”হেই ব্রো!গুড মর্নিং!”
কাছে এসে চুপিচুপি বলল…”একটা খবর আছে।”
ভুরু নাচিয়ে অরিত্র বলল….”কি?তোমাকে তোমার বর পাগলা গারদে পাঠাচ্ছে?”
…”বটে?ডানা বেরিয়েছে মনে হচ্ছে!”
…”ডানা বেরনো ভাল! ল্যাজ না বেরলেই হল!”
…”আচ্ছা!তবে কি খবরটা চেপে যাব?”
…”দেখো চাপতে গিয়ে আবার চাপ না বাড়ে!”
…”তা মন্দ বলিসনি।বাড়তেও পাড়ে তবে সেটা তোর ক্ষেত্রে বাড়বে!”
এবার একটু চিন্তিত হয়ে অরিত্র বলল….”কি ব্যাপার বল তো?”
…”ব্যাপারটার সঙ্গে কিন্তু ডানার একটা যোগ আছে!”
…”প্লিজ দি আর কনফিউশান ক্রিয়েট কর না!”
মিটিমিটি হাসছে ইশিকা।চোখে খেলছে রহস্য।
অরিত্র বলল….”তুমি কি সকাল সকাল আমাকেই পেলে বল?”
…”আমি তো তোকে সোজাসাপটা বলতেই যাচ্ছিলাম। প্যাঁচটা কে মারল বল?তুই কেন আমাকে পাগলা গারদে পাঠাতে গেলি?”
দু হাত জরো করে মাথা হেঁট করে অরিত্র বলল…”ভুল করে ফেলেছি দেবী এবার এই অধমকে মাফ কর!”
…”তোমার আর্তিতে আমি প্রসন্ন হলাম বৎস!”
মাথা তুলে অরিত্র হাসছে।
ইশিকা বলল….”একজন তোর সঙ্গে দেখা করতে চায়!”
চোখ সরু করে চেয়ে অরিত্র বলল…”কে?যে গারদ থেকে পালিয়ে এখন তোমার ওখানে উঠেছে?”
মুখে হাসি টেনে রেখে ইশিকা বলল….”তুই কিন্তু নিজেই নিজের ফাঁদ তৈরি করছিস অরিত্র!এমন পাকামি করলে কিন্তু পরে আমাকে কিছু বলতে পারবি না!”
…”ওকে! ওকে!সরি।বলে ফেল কে সেই অভাগা যে আমার দর্শনের পিপাসু!”
…”গা নয় গী!”
..”এক্সপ্লেইন!”
…”আ চার্মিং প্রীটি লেডি!যে সম্পর্কে আমার তুতো বোন হয়!”
…”এবার আমার নার্ভাস লাগছে দি।কি ব্যাপার বল তো!”
অরিত্রর পিঠে হাত রেখে আলগা চাপড় মেড়ে ইশিকা বলল….”নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই।আমার বোন ওলি।ওদের বাড়ি দুর্গাপুরে। তোর কথা বলেছি।অ্যাণ্ড শি ইজ সিঙ্গেল!একটা মিটিং করে নে!দেখ যদি রিলেশন গ্রো করে দেন ওকে।নইলে চিল।টেনশন বিলকুল ভি নেহি লেনে কা!”
….”আর এদিকে যে মা পাত্রী দেখেতে যেতে বলছে।পরশু যাব যে….”
….”পারিসও মাইরি।যেন ওলির সঙ্গে ফার্স্ট ডেটেই তুই ওর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেলি যে আর কারু সঙ্গে দেখাটি করব না!তাই কি?ওকে বলবি প্রয়োজন মনে হলে,যে কাকিমা তোকে নিয়ে কি ভাবছে বা কি প্ল্যানিং করছে!”
…”আচ্ছা!”সামান্য সঙ্কোচে বলল অরিত্র।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল….”কবে?”
…”কাল।কাল সন্ধের দিকে।অফিস আওয়ারের পর।তুই আগে থেকে বেরিয়ে যাস।আমি ম্যানেজ করে নেব!”
…”ওকে!আ…”
…”কি?”
…”সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যাব কি?”
ইশিকা মুখ টিপে হাসল…”কেন তুই কি নেমন্তন্ন খেতে যাচ্ছিস?”
…”না মানে…”
…”তবে কি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে যাচ্ছিস যে সঙ্গে প্যান কার্ড আধার কার্ড নিয়ে যাবি?”
…”তবু ফার্স্ট টাইম।আর তোমার বোন…”
…”কিছু নিতে হবে অরিত্র।তুই সোজা চলে যাবি পারিজাত ক্লাবে।ও পিঙ্ক কুর্তি পরে যাবে।তোকে ওর ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করে দেব।নাম্বারও।হোপ কোনও প্রবলেম হবে না!”
…”ওকে ফাইন দি!”
ইশিকাদি চলে গেল। আর ছেড়ে গেল একটা বশ না মানা উত্তেজনা।ভাবতে কিন্তু ভালোই লাগছে ব্যাপারটা। ডেট!না এর আগে ডেটে যায়নি অরিত্র।স্কুলে কলেজে ছেলে মেয়েরা ডেটে যেত।বন্ধুরা ডেট থেকে এসে রসিয়ে গল্প করত।তার মধ্যে কতকটা গাজা কতকটা হাওয়া থাকত তা বুঝতে পারলেও বলার জো ছিল না।কারণ ও পথ কোনও দিনও মাড়ায়নি অরিত্র।তাই সবাই বলত ও ব্যাটা নিরামিষে।ও কি বুঝবে এসব রস রোমাঞ্চএর কথা।নিরামিষ আমিষ এ নিয়ে ভাবেনি অরিত্র ভেবেছে প্রেম নিয়ে। সচারাচর যা হয় সবাই যা করে তা তে রুচি ছিল না কখনো।কেউ কেউ ঐ দলে নিজের নাম তোলার জন্য অহেতুক ছটফটিয়ে মড়ে।ঠকে বা কপালে অবহেলা জুটিয়ে নিজেকে প্রতারিত ভেবেও প্রেমের স্বাদ চেখেছে মনে করে গর্বিত বা দুঃখিত হয়।কিন্তু এদের কারও ঠোঁটের উপরই যে প্রেমের একটা বিন্দুও এসে পড়েনি তা ওরা না বুঝলেও অরিত্র বুঝত বইকি।অরিত্রর কখনই সস্তা আবেগে বইতে রাজি হয়নি।তবে কলেজ জীবনে পা রাখার পর।লম্বা নির্মেদ চেহারার ছেলেটা।গালে দাড়ি আর মাথার ঘাপসা চুল নিয়ে। ব্লু ফ্রেমের চশমায়। বুকে অনেক সাহস কুড়িয়ে যখন মেয়েটাকে বলেছিল….”হাই! আমি কমার্সের স্টুডেন্ট। ফার্স্ট ইয়ার!আমার নাম।আমার নাম অরিত্র বক্সী!”
সে কথায় অনেক কিছু ছিল।শুধু জিজ্ঞাসা বা কৌতুহল তো নয়।ছিল সদ্য গড়ে ওঠা তলতলে অনুভূতিটাকে ছোঁয়ার একটা প্রয়াস।ঐ কথা কটার মধ্যে ছিল কত আবেগ। কত অনুভূতি।ছিল একটা তোলপাড় করা উত্তেজনা। হার্ট বিট ব্রিদিং রেট বেড়ে গিয়েছিল চুপিচুপি। সব আবেগ গোপন রেখে অরিত্র তাকিয়েছিল ওর দিকে।
কিন্তু সে কিন্তু ছিটেফোঁটাও আবেগাপ্লুত মোহাচ্ছন্ন বা উত্তেজিত ছিল না।ওড়নায় মুখ চেপে খিলখিল হেসে শুধু বলেছিল….”তাই বুঝি?”
এটা অপমান না মৃদু আঘাত না প্রেমের সূচনা সেই মুহুর্তে এর কিছুই বোঝেনি অরিত্র। শুধু তাকিয়েছিল ফ্যালফ্যালিয়ে।
সে সিঁড়ি ধরে চলে গিয়েছিল ওড়না উড়িয়ে।
তবু ভালো লাগা।স্বপ্নে তন্দ্রায় ফিরে ফিরে ওই চঞ্চল তরুণীকে দেখা!
কিন্তু ঐটুকুই।তা বলে কি আর ডেটে গেছে অরিত্র?
কলেজের সেই তন্বী তো দূরের স্বপ্ন কারণ সে ছিল কাঙ্ক্ষিত। অন্য কারও সঙ্গেও তো বেরয়নি কোনও কালে।বলতে গেলে সে সুযোগই হয়নি।সেখানে আজ ভাগ্যদেবী সহায় হয়ে স্বয়ং এমন বার্তা বয়ে আনবেন এ কথা তো কল্পনার আঙিনায় বা স্বপ্নের আকাশে এক খন্ড মেঘ হয়েও তো ছায়া ফেলেনি এর আগে।এ যে একেবারে আচমকা চমক।
তবে চমক হলেও এর একটা অভিজ্ঞতার জন্য মন ছটফট করছে।
হ্যাঁ এও ঠিক মনের ঘুলঘুলি দিয়ে বার বার যাওয়া আসা শুরু করে দিয়েছে মেঘা!
কিন্তু কি বা করা?সেই অতীতের ভালোলাগার জেরটাকে ধরে রেখে বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তো জলাঞ্জলি দেওয়া যায় না!
তাই উত্তেজনা নতুন করে ঠেলা মারছে হৃদ কপাটে।খোল খোল দ্বার…আমি যে নীরবে বসে আছি তোমারই পথ চেয়ে…
©রিমা বিশ্বাস
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here