গোপনে ৪

0
1809

গোপনে

#রিমা_বিশ্বাস
অপরিচিত কারও বাড়িতে এসে জল চাওয়াই যায়।এ এমন কিছু নয়।তখন বাধ বাধও ঠেকে না।কিন্তু এখানে কেমন যেন সংকোচ হচ্ছে।জল চাইলে এরা কি ভাববে ছেলে ঘাবড়ে গেছে?মেয়ে দেখতে এসে ঘাবড়ে যাওয়া কি কাজের কথা?তখন কি ইমপ্রেসন ঢিলে হয়ে যাবে না?মানে পাত্রী দেখতে এসে জল চাইতে গিয়ে শেষে হাসির খোরাক হয়ে…ভাবনা গুলো এক এক সময় অহেতুক জটিল হয়ে যায়।অরিত্রকে আর বেশিক্ষণ জলের কল্পনা করে বুকে তেষ্টার উপদ্রব সইতে হল না।এক অল্পবয়সী মেয়ে হাতে ট্রে নিয়ে আসছেন।রোগা রোগা চেহারা।গায়ের রঙ বেশ ফরসা।মেরুন রঙের শাড়ি। মুখে হাসি।অরিত্রদের সামনে এসে মিষ্টি করে হেসে বললেন….”মাসিমা কেমন আছেন?”
অরিত্রর মা হেসে বলল…”ভালো আছি বৃষ্টি। তুমি কেমন আছ?”
…”ভালো।মেসোমশাই ভালো তো?”
অরিত্রর মা হেসে মাথা নাড়িয়ে অরিত্রর বাবার কুশল বোঝালেন।
অরিত্রর দিকে ট্রে বাড়িয়ে ধরে বৃষ্টি নামের হাসি মুখ মেয়েটি বলল…”নাও ভাই।“
অরিত্র বিনা দ্বিধায় গ্লাসটা তুলে বেশ খানিকটা খেয়ে নিল।
বৃষ্টি বলল…”আহা খুব তেষ্টা পেয়েছিল বুঝি?”
যেটা বোঝাতে চাইছিল না অরিত্র সেটাই যে বুঝে ফেলল এরা।অরিত্র ভেজা গলায় আরেকবার ঢোঁক গিলে হাসল।
ওরা যে সোফায় বসেছিল তার উল্টো দিকের একটা লম্বা চৌকিতে একে একে জরো হচ্ছে অনেকে। মোটাসোটা এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা এসে বসলেন।তার পর বিভিন্ন বয়েসের মহিলারা। ঘরে লোকের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে।সবার চোখ অরিত্রর দিকে স্থির। অরিত্রর মনে হচ্ছিল ও বুঝি দর্শনীয় কোন বস্তু।বা একটা বিরল প্রজাতির প্রাণী। বৃষ্টি নামের মেয়েটার সঙ্গে অরিত্রর মায়ের যে ভালো আলাপ আছে তা বোঝা যাচ্ছে কারণ অরিত্র একবার ট্যারিয়ে দেখে নিয়েছে।বৃষ্টি একটা টুল নিয়ে অরিত্রর মায়ের কাছে বসে নিচু স্বরে কথা বলে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ এ ভাবেই চলতে থাকার পর চেয়ারে বসা দুই ভদ্রলোকের মধ্যে টাক মাথা ভদ্রলোক হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করলেন…. “তা কি করা হয় অরিত্র? “
…”আমি… “
অরিত্র কিছু বলার আগে ওনার পাশে বসা কাঁচাপাকা চুলের ভদ্রলোক বললেন….”জানা কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?তুই ওর বায়োডেটা দেখিসনি?”
টাক মাথা যেন খেপে উঠল…”দেখব না কেন?দেখলে কি জিজ্ঞেস করা যায় না?”
কাঁচাপাকা চুল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল…”মগজ থাকলে কি আর জানা কথা কেউ জিজ্ঞেস করে রে?”
…”তোর তো খুব বুদ্ধি?”
…”তোর চাইতে বেশি! “
….”তাই নাকি?ঐ জন্য দরজায় তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে না নিয়ে গিয়ে জানলা দিয়ে ঘরে ছুঁড়ে দিয়েছিলি?”
বেঁকা হাসি হাসল টাক মাথা।অরিত্রর দিকে চেয়ে ওর পক্ষ পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল…”জানলে কি করেছিল?তালা লাগিয়ে উনি তাড়াতাড়ি বেরুতে গিয়ে শেষে চাবিটাই ছুঁড়ে ঘরের ভিতর ফেলে দিল।বলে কি না বুদ্ধি… “
কাঁচাপাকা চুল উত্তেজিত হয়ে বলল…”আর তুই কি তুই?ডিম এনে ঠোঙা সমেত রান্না ঘরে ছুঁড়ে ফেলছে যেন ফুটবল কিনে ফিরেছেন!”
…”কে বলল? কে বলল আমি ডিম কিনে ছুঁড়ে ফেলেছি?”
…”তোকে কে বলল আমি চাবি ছুঁড়েছি…”
অরিত্র কার দিকে তাকিয়ে কি প্রতিক্রিয়া দেবে বুঝতে পারছিল না। হাসতেও ভয় করছে।এদের যা চড়া মেজাজ যদি হুট করে অরিত্রর উপরই চড়াও হয়?ওপাশ থেকে মহিলা কন্ঠ ধমকে উঠল…. “বিশু যীশু…তোরা থামবি?ভাইঝির বিয়ের জন্য এসেছিস না দাঙ্গা করতে?তোদের এবার…”
…”আহা ঠিক আছে আম্মা..”বলল সেই লম্বাচওড়া ভদ্রলোক যাকে ঢুকতেই দেখেছিল অরিত্র।
তারপর অরিত্রর দিকে ফিরে বলল…”আসলে ভিতরে ওরা সব একটু খাওয়ার আয়োজন করছে তাই একটু দেরি হচ্ছে।আমি মেয়ের পিসেমশাই। তা তোমার ফিউচার প্ল্যানিং কি অরিত্র? নয় সেইটাই শোনা যাক…”
…”আমিও তো সেটাই জানতে চাইছিলাম।খামোখা যীশু আমায়…”
…”আমি?আমি কি হ্যাঁ?”
দু জনে নতুন করে রণে নামতে যাচ্ছিল।ভদ্রলোক এবার চোখ পাকালেন।অরিত্রর দিকে ফিরে বললেন… “বল।তুমি বল!”
অরিত্র একবার চারিপাশটা দেখে নিল।কেমন কেমন যেন লাগছে।প্রথমত এরা কে? আর কার সঙ্গে কার কি সম্পর্ক তাই ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারছে না।তারপর এমন সর্বসমক্ষে ডিম আর চাবি চাবি আর ডিম এই নিয়ে লড়াইবা কবে দেখেছে অরিত্র? এখনে মুখ খুলতেও যে বিপদজনক বলে ঠেকছে।কে জানি বাবা কে কখন কোথা থেকে ঝাঁপিয়েই না পরে..
তবু গলা পরিষ্কার করে নিয়ে অরিত্র বলল… “ওয়েল! ইমিডিয়েট কোনও প্ল্যান সে রকম নেই।আপাতত মার্কেটিং এর ফিল্ডেই থাকতে চাই..”
মেয়ের পিসেমশাই এবার জোরে জোরে হাত নেড়ে বললেন… “ও সব না! ও সব শুনে কি করব?মানে বলতে চাইছি বিয়ের পরের প্ল্যান কি?”
এবার অরিত্র থতমত খেয়ে পাশে বসা মায়ের দিকে তাকাল।
বৃষ্টি হাসি হাসি মুখ করে বলল…”উনি জানতে চাইছেন বিয়ের পর আলাদা থাকবে না মা বাবার সঙ্গে? “
…”মা বাবার সঙ্গে অফকোর্স! “অরিত্র একটু গর্ব করেই বলল।
..”অফকোর্স? “বলে উনি ঠোঁট ওলটালেন।বললেন…”আর আমাদের মেয়ের?ওর যে এত আত্মীয় এত লোক তাদের ছেড়ে শুধু তোমার সঙ্গে থাকবে?মানে তোমার আর তোমার ফ্যামিলির সঙ্গে ?তোমার কি মনে হয় এ নিয়ম ন্যায্য? তোমরা এই জেনারেশন এ নিয়ে কি কিছু ভাব?তোমরা তো সাম্যে বিশ্বাসী! “
অরিত্র এ কথার কোনও উত্তর দিতে পারল না।
তবে ওর হয়ে উত্তরটা দিল ঐ চৌকিতে বসা প্রৌঢ়া। যাকে এই ভদ্রলোক একটু আগে আম্মা বললেন।
…”কিন্তু তোদের বাড়িতে যদি জামাই এসে ওঠে তখন তোরা বলবি ঘর জামাই।ঘর জামাই তো আবার শুনতে ভালো লাগে না। কি বল অরিত্র?তেমন সম্মানেরও নয়..”
অরিত্র শুধু হাসল।
ওপাশ থেকে একজন বলল…”এই ভালো। ঘরে বউ এলে ছেলের মায়ের ঘুম উড়ে যায় এবার ভাব ঘরে জামাই এলে মেয়ের মায়ের কি হত?”
…”আমার কিন্তু মোটে ঘুম ওড়েনি… “এ পাশ থেকে বলল অরিত্রর মা।
যিনি কথাটা বলেছিলেন এবার জিব কেটে হাসছেন।
মাঝ বয়সী একজন মহিলা ও আরও দু জন হাতে কিছু প্লেট নিয়ে এল। সামনের টেবিলে নামানো হচ্ছে একে একে প্লেট। একটায় ফিশ ফ্রাই বড় আকারের চপ গোছের কিছু অরিত্র আন্দাজ করল নয় ডিমের ডেভিল নয় মাংসের চপ।আরেকটায় রসগোল্লা আর পান্তুয়া।আরেকটা প্লেটে বিস্কুট চানাচুর পাপড়!
অরিত্রর খেতে ইচ্ছে করছে ঠিকই কিন্তু এত গুলো অচেনা লোকের সামনে কুচুরমুচুর করে খেতে কেমন যেন লাগছে আর যেখানে এরা সবাই ওর দিকেই চেয়ে। যেন দেখতে চাইছে ছেলের খাওয়ার ধরন আর রকম কেমন?
অরিত্রর মা প্রথমে আপত্তি জানালেন।বললেন…”এ সব কেন করেছেন দিদি?আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি সেই ফাঁকে নয় নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ হল।বন্ধুত্ব হল।কিন্তু তা বলে এ সব কেন?”
…”সব নিজে হাতে করেছি দিদি খেয়ে দেখুন!”ভদ্রমহিলা বললেন।ওনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ খাটুনি হয়েছে।মাথা কপাল ঘামে ভেজা।মুখে পরিশ্রমের ছাপ।বোঝা যাচ্ছে এ সব তার নিজের হাতে করা।
…”কেন এত পরিশ্রম… তবে খাব কিন্তু একটা শর্তে।আপনাদেরকে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে!”একটা প্লেট তুলে নিয়ে অরিত্রর মা বলল।
…”আরে বিয়ে হয়ে গেলে যাওয়ার আসা তো লাগাই রইল”বললেন পিসে মশাই।
অরিত্র মনে মনে ভাবছিল আর যাই করুক এই ভজকট পরিবারে নয়।কে কখন কোথা থেকে এসে প্রকট হচ্ছে আর কিছু বোঝার আগেই একটা বোমা দেগে দিচ্ছে এ বূহ্যে কেউ ঢোকে?
যদিও অরিত্রর মাকে দেখে মনে হচ্ছে এদেরকে তার খুব পছন্দ।
অরিত্রকে একটা প্লেটে সব সাজিয়ে ভদ্রমহিলা তুলে দিয়ে বললেন…”আমি মেয়ের মা অরিত্র।আজকের সম্বন্ধটা বড় কথা নয়।আসলে বৃষ্টির বাবা মানুষকে আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন।তোমরা এসেছ সেই উপলক্ষে ওর যত আত্মীয় আছে ও সবাইকে ডেকেছে।বলল একটা গেট টুগেদার হোক।কিন্তু এটা যে বিয়ে পাকা করার ঘুষ এমনটা কিন্তু নয়…”বলে উনি হাসলেন।
অরিত্রর মা বলল…কিন্তু এবার যে আমার মনে হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে আত্মীয়তা পাকা করতে আমাকে না ঘুষের ব্যবস্থা করতে হয়..”
…”আচ্ছা দিদি ওরা যদি নাও মানে আমরা কিন্তু সই পাতাব!”
…”ঐ আগে যেমন হত?গঙ্গা জল নিয়ে সই ও আমার বকুল ফুল সে আমার করবী ফুল।তা তোমরা একে অপরকে কি নামে ডাকবে আগে ঠিক কর…”
…”বলবে ও আমার ট্যাব ও আমার মোবাইল! “বলতে বলতে ভিতরের ঘর থেকে এল এক অল্পবয়সী মেয়ে।
দেখতে বেশ সুন্দর। খোলা চুল পিঠের কাছে পাক খাচ্ছে।
অরিত্রর মাথাও পাক খেল।এ কি তবে মেয়ে?
ভুরু নাচিয়ে সে একটা পাশে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ স্থির রেখেছে অরিত্রর দিকে।অরিত্র ঢোঁক গিলল।ওর পাশে এসে দাঁড়াল লম্বা চুলের আরেকটা মেয়ে।কুর্তি আর টাইট জিন্স পরা।বুকের উপর দু হাত আড়া-আড়ি করে রেখে যেন অরিত্রকে মাপছে।
অরিত্র হাতে তোলা মাংসের চপে ছোট কামড় দিল।এই দুই কন্যা মনে হয় অরিত্রর জন্য নয়।দু তিনটে ক্ষুদে ছুটে বেড়াচ্ছে।তাদের হই হুল্লোড়ে কান পাতা দায়।ওদের মধ্যে সব চাইতে ছোটটাকে লক্ষ করছিল অরিত্র। ঝাকড়া চুল। হাঁটু ঝুল ফ্রক পরে ছুটে বেড়াচ্ছে ঘরময়।একটা কাপড়ের পুতুল বগল দাবা করে রয়েছে।মুখটা খুব চেনা লাগছিল।বিশেষ করে যখন ছোট ছোট হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসছে।কিছুক্ষণ পর আরেক জনের দেখা মিলল।সেও যথেষ্ট সুন্দরী এবং অল্পবয়সী। একটা জরির শাড়ি পরেছে।মাথা দুলিয়ে কথা বলছে আর আড় চোখে দেখে চলেছে অরিত্রকে।ওর মাথা দোলানোর সঙ্গে মেয়েটার কানের দুলের দুলুনি দেখছিল অরিত্র।একবার মনের হল এ হতে পারে।হয়তো কেউ এগিয়ে এসে এখুনি পরিচয় করিয়ে দেবে।অরিত্রর তাকাতে অস্বস্তি হল।মনে হল না।এও নয়।তবে মেয়ের মায়ের একটা কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টি মেয়ের দিদি।তাই ভদ্রমহিলা বললেন আমি মেয়ের মা আর বৃষ্টির বাবা মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসেন। যাক কিছু তো আন্দাজ করল অরিত্র। একটু হলেও।
কিন্তু প্রায় আধ ঘন্টা যে হতে চলল।কি তার বেশি।তবু যে কাজে এসেছিল তা সমাধা হয় না কেন? আরও কতক্ষণ?
পাশে বসা অরিত্রর মা দিব্যি এদের সঙ্গে মেতে গেছে। এখন প্ল্যান করছে এরা পুজোর সময় এক সঙ্গে ঘুরতে যাবে।এক দল বলছে যাবে রাজস্থান আরেক দল কাশ্মীর।কি আশ্চর্য এখনও অরিত্র পাত্রীই দেখল না।এই পাগলের দলে এসে অরিত্রর মাও কি শেষে পাগল হল?
এখন সব চাইতে জোরে যার গলা পাওয়া যাচ্ছে সে হল অরিত্রর মায়ের।হেসে হেসে বলছে….”আর বল না গো তোমরা। আমার এমন জমজমাট ফ্যামিলি পেলে আর কিছু লাগে না।আরে শশুড় কুল আমার একেবারে শ্মশান। কেউ বেঁচে নেই।আমার দিকটা আছে কিন্তু আর বল না এক একটা বাতে আর পেটের রোগে কাবু।আমি আবার হই হুল্লোড়ে। আমার এসব খুব ভালো লাগে… কি কি বললে থিয়েটার?ও বাবা আমার একটা সময় যা নেশা ছিল..অরিত্রর বাবাটা যে একেবারে যা তা..”
…”আন্টি তবে কনফার্ম আমরা নেক্সট সান্ডে থিয়েটারে যাচ্ছি!হাসির। পিকলু মিত্র থাকছে”
…”পিকলু মিত্র? “হাসিতে গড়াচ্ছে মা…”ওরে বাবা আমার তো ওকে দেখলেই হাসি পায়..”
অরিত্রর রাগ হচ্ছিল।মনে মনে বলল তুমি বাড়ি চল মা তোমার এত ফুর্তির কারণটা আমি তখন জানব!
ও পাশ থেকে ধ্যান সরাতে অরিত্র দেখে সেই পুচকে মেয়েটা অরিত্রর হাতে ধরা প্লেট থেকে চপের টুকরো তুলে মুখে পুড়ে দিল।
অরিত্র খপ করে ধরল ওর হাত… “এই এই মুখে দেয় না।আমি ভালো একটা দি..”
সে হাত ছাড়িয়ে ছুটল।ভিতরের ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পর্দার আড়াল থেকে দেখছে অরিত্রকে।অরিত্র ভাবল এর সঙ্গে ভাব জমানো যাক।এই বোরিং বাতাবরণ থেকে কিছুটা তো রেহাই মিলবে।কারণ অরিত্রর মা এখন ঢাকাই আর কাঞ্জিভরমের মাঝের সূক্ষ্ম বিভেদ নিয়ে ব্যস্ত ..
খুব শিগগির এবার ওদের টপিক ঘুরে যাবে পরশুর সিরিয়ালের এপিসোডে।এরপর হয়তো রান্নার রেসিপি। তারপর অরিত্র মেয়ে না দেখেই ফিরে যাবে।এই মুহূর্তে মেয়ে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আর অবশিষ্ট নেই অরিত্রর শরীরে।
অরিত্র হাত নেড়ে ডাকল। সে মাথা নাড়ছে।মুখটা যে কি চেনা..
অরিত্র কিছুতে বুঝতে পারছে না। কারও সঙ্গে মিল আছে…কিন্তু কার?
বাচ্চাটা এবার টুক করে ভিতরে ঢুকে গেল। অরিত্র একটা শ্বাস ফেলল। বাড়ির পুরো জটলাটা চৌকির কাছে জরো হয়েছে।সেখানে একেবারে মধ্যমণি হয়ে বসে অরিত্রর মাতাশ্রী।বিশু যীশু আর পিসে মশাই কেউ নেই। ময়দান ফাঁকা। মেয়ের বাবা মানুষটা ভালো। প্রথমে ছিলেন না।খুব সম্ভব মিষ্টি আনতে বেরিয়েছিলেন।পরে এলেন। সামান্য কিছু কথা বলে উনিও বেপাত্তা হলেন।
অরিত্র ভাবছে ওলি এখন কি করছে?ও তো জানেও না অরিত্র কেমন ফ্যাসাদে পড়েছে।আর শ্রুতি?ওকি ফেসবুকে খোঁজেনি অরিত্রকে?খুঁজে থাকলে একটা ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট কি আসত না ওদিক থেকে?নাকি ও ভাবছে বন্ধু হওয়ার অনুরোধটা অরিত্রর তরফ থেকে যাবে?
ঘড়ি দেখল অরিত্র। প্রায় চল্লিশ মিনিট। তবে কি মেয়ে নেই ঘরে?তাই এরা যা খুশি একটা কিছু করে সময় কাটাচ্ছে?ভিতরের ঘর থেকে মেয়ের বাবার গলা শোনা গেল…”তোমরা আর কত সময় নেবে এবার তো দেখার পর্বটা মিটে গেলেই হয়..”
…”হ্যাঁ যাই…”বলে ঘরের দিকে এগোল মেয়ের মা।
ওপাশ থেকে এক মহিলা বললেন…”পিন্টুর একটু বেশি বাড়াবাড়ি।আর কনক শাস্ত্রী যে টাইম বলবে সেই টাইমের আগে পরে সে কোনও কাজ করবে না!”
…”ওদের ফাঁদে পা দিতে আছে?তবে তো জীবন স্লো-মোশনে চলবে?জ্যোতিষী গুলোর তো ব্যাবসাই মানুষকে টুপি পরান..”বলল কেউ একজন।
…”না না কনক বাবা মহা পণ্ডিত লোক।শাস্ত্র জ্ঞান আছে..”উত্তর দিল কেউ।
এই মিশ্র আচরণে সংস্কারে অরিত্র হাঁফিয়ে উঠছিল। মনে হচ্ছিল কত তফাত ওদেরর সঙ্গে এদের।এরা সবাই খুব কথা বলে।প্রায় একনাগারে।বেশ জোরে জোরে।গল্পের বিষয় শুধুই বিনোদন। এর বাইরে জগৎ সম্পর্কে এরা ভাবে না।জ্যোতিষীর মতে এরা ওঠা বসা করে। মানে জ্যোতিষী শাস্ত্রে বিশ্বাসী। মেয়েও নিশ্চয়ই তাই।এত সব অমিলকে কি মেলান যায়?অরিত্র যে চল্লিশ মিনিট অযথা নষ্ট করল।শুধু কোন জ্যোতিষী কি বলেছে তার জন্য।এদের কাছে সময়েরও কোনও মূল্য নেই?ওদের কাজের সময় কখন হবে তা আবার অন্য কেউ ঠিক করবে?
এখন বেশ বিরক্ত লাগছে অরিত্রর।
তবে মনটা সরল সেই বাচ্চাটাকে দেখে।হাঁটুর কাছে ছোট ছোট দুটো হাত রেখে পুচকে মেয়েটা দাঁড়িয়ে। অরিত্র ওর গাল টিপে দিল।ফোলা ফোলা গাল।কুচকুচে কালো চোখের মণি।রেশম রেশম চুল।হাতে রূপোর দুধ বালা।
…”আঙ্কেল!”বলে সে বড় বড় চোখে চাইল অরিত্রর দিকে।
অরিত্র মাথা ঝুঁকিয়ে বলল…”কি গো?”
…”টোমাল নাম কি গো?”
অরিত্র হেসে ফেলল।বলল…”হাই!আম অরিত্র।অ্যান্ড হোয়াট ইজ…”
অরিত্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই সে মুখে হাত দিয়ে হেসে বলল…
“তাই বুঝি?”
তারপর ছুটে পালাল ভিতরের ঘরে।
অরিত্রর বুকটা ধক করে উঠল।যেন হুড়মুড় করে পড়ল অরিত্র। বহু দূর থেকে যেন শুনতে পাচ্ছে কারও হাসি…
সেই ওড়না উড়িয়ে যাওয়া…
পারফিউমের গন্ধ….
অরিত্র তো শুধু নামটাই বলেছিল…
আর আজ এখনো যে তাই….
পাশের থেকে ওরা কোনও একটা কথায় হো হো করে হেসে উঠল।অরিত্রর বুকে যে ড্রাম বাজছে।
চলবে…
©রিমা বিশ্বাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here