কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 3

0
1113

কঠিন প্রেমের গল্প (তৃতীয় পর্ব)
ফারাহ তুবা

আজকে আমি আর নীতু বাইরে খেতে যাবো। সব পরিকল্পনা করা আছে। নীতুকে বলেছি সব বন্ধুদের ফ্যামিলিসহ দাওয়াত। মাসুদ দাওয়াত দিয়েছে। বাচ্চারা এলাউড না। নিজেরা একটু গল্প করা আর কি! এগুলো বলে আমি বেশ অনেকক্ষণ হাসলাম। নীতু খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সম্ভবত হাসিটা সুন্দর হয়নি। আমি দ্বিতীয় বার ভালো করে হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু আওয়াজটা কেমন যেন শোনালো। তৃতীয়বারে মনে হয় ভালো হলো কারণ নীতু স্বাভাবিক ভাবে ঘর থেকে চলে গেলো। একটু পর দেখি সে এক গ্লাস গরম পানি নিয়ে হাজির।

“গরম পানিটা খাও দেখি। তোমার গলায় মনে হয় কোন সমস্যা হয়েছে। কেমন জানি অদ্ভুত আওয়াজ বের হচ্ছে।”

কি ঝামেলায় পড়া গেলো। কথায় কথায় সে আমার হাতে এক গ্লাস পানি ধরিয়ে দিচ্ছে। তবে আজকে রাতে নীতু অবাক হয়ে যাবে। আমরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসবো। হঠাৎ মাসুদ ফোন দিয়ে বলবে সে আসতে পারছে না। অন্যরাও ফোন দিয়ে বলবে যে তারা এখনো বের হয়নি তাই আসবে না আর কেউ। এরপর আমি শুরু করবো কথার ফুলঝুরি। নীতু কত ভালো, সে কত সুন্দর এসব শুনতে শুনতে নীতু একেবারে গলে যাবে।

আদতে তেমন কিছুই হলো না। আমরা গাড়িতে থাকতেই নীতু আমার দুইজন বন্ধুর বউয়ের সাথে কথা বলে জেনে গেলো যে এরকম কোন পরিকল্পনা নেই। আমি মাসুদকে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ফোন করাতে সে কিছুটা গুলিয়ে ফেললো। আরেকদিকে অন্য বন্ধু যাদের বলার কথা যে তারা বাসায় আছে তারা ফোন দিয়ে অন্য কথা বলে রেখে দিলো। সবমিলিয়ে খুব ভটজট লেগে গেলো। নীতু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। বললো,

“আজকে সম্ভবত দাওয়াত দেয়নি মাসুদ ভাই। তুমি ভুল বুঝেছো। চলো বাসায় চলে যাই।”

কিন্তু আমি আজকে বদ্ধ পরিকর। আজকে কিছু একটা করতেই হবে। আমি নীতুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

“তোমাকে আজকে খুবই সুন্দর লাগছে। এই শাড়িতে তোমাকে এত মানিয়েছে। আজকে আসো একসাথে চলে যাই।”

বলে আমি জিহবা কাটলাম। বলতে চেয়েছিলাম খেতে যাই কিন্তু মুখ দিয়ে বের হলো চলে যাই। এটুকু বলতেই আমি ঘেমে গিয়েছি। আর কাঁপা-কাঁপা গলা তো আছেই।

নীতু আবারও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। তবে বাকি সময়টা ভালোই কাটলো। কাবাব খেতে গিয়েছিলাম আমরা। আমি প্রায় চৌদ্দ বছর পর লক্ষ্য করলাম নীতু খুব মজা করে গল্প করে। আমি তাকে মুগ্ধ করবো কি উল্টো সে আমাকে আরও মুগ্ধ করে দিলো। আমি বের হবার সময় খুব স্পষ্ট স্বরে বললাম,

“কিছুদিন হলো তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে সারাদিন তোমাকে দেখি।”

নীতু বেশ স্বাভাবিক স্বরে বললো, “আমি জানি। এই মাস থেকে হাফসার দেওয়া জামাগুলো পরা শুরু করেছি। ভাবলাম তুলে রেখে আর কি হবে।”

বলে স্বাভাবিকভাবে এগুতে লাগলো। আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকলাম। হাফসা আমার সেই বান্ধবী যার সাথে আমার পরকীয়া ছিলো। সেই সময় প্রেমটা খুব শুদ্ধ মনে হলেও সেটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ প্রেম ছিলো। হাফসা আমার কলিগ ছিলো। মাঝে মাঝে বাসায় আসতো। নীতুকে প্রায় ডজনখানেক উপহার দিয়েছিলো। শাড়ি, জামা আরও কত কি! নীতুকে কখনো পরতে দেখিনি। প্রায় সাত/আট বছর সে জামাগুলো তুলে রেখেছে! এই প্রথম আমার অপরাধবোধ হলো। প্রচন্ড অপরাধবোধ হলো। নীতু আমার কয়েক হাত সামনেই হাটছে। আমরা এখনই একই গাড়িতে উঠবো। তবুও মনে হচ্ছে নীতু কত দূরে আমার থেকে। সে কোন কিছু বুঝে যায়নি তো! এত বছর পর ধরা পরার ভয় আমাকে গ্রাস করলো!!!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here