কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 2

0
1373

কঠিন প্রেমের গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)
ফারাহ তুবা

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে নীতুকে সরাসরি বলবো আমি তাকে ভালোবাসি। সে যেন সারাজীবন আমার হয়ে থাকে। কাজটা বেশ সহজ আসলে। সে আমার স্ত্রী হয়। সারাদিন একসাথেই থাকি অতএব সময় সুযোগ মতো বলে দিলেই হবে।

একটা খুব ভালো পরিকল্পনা করেছি। প্রথমে একটা উপহার আনবো, এরপর একদিন নীতুকে সুন্দর বলবো। এরপর যখন নীতুর মন নরম হয়ে যাবে তখন আমি তাকে ভালোবাসি বলবো। সে নিশ্চয়ই ভেউ ভেউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। এরপর আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করবো।

বেশ বুদ্ধি করে আমি একরাতে একগাদা বকুল ফুলের মালা নিয়ে আসলাম। মেয়েরা সাধারণত এইসব বকুল বা বেলী ফুলে বেশি রোমান্টিক ভাব খুঁজে পায়। আসলে গোলাপ খুব সাধারণ ফুল হয়ে গিয়েছিলো। তাই গতবার সে টের পায়নি। এইবার সে মুগ্ধ হবেই। আমি ঘরে ঢুকে বেশ কায়দা করে নীতুর হাতে ফুল দিলাম। সে হাসিমুখে এগিয়ে এসে চকচকে চোখে ফুলগুলো হাতে নিয়ে বললো,

“ও! নিয়ে এসেছো।”

এরপর ছুটে আমার মায়ের ঘরে চলে গেলো। আমি ঠিক বুঝলাম না যে নীতু ঠিক কি বোঝালো। আমি বোঝার আগেই দেখি বাসায় বেশ হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। আমার দুই ছেলেকে ওদের দাদা ডাক দিলো। তারাও দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির। মায়ের ঘরে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ। গিয়ে দেখি নীতু বকুল ফুলের মালাগুলো কাটছে আর আমার দুই ছেলে মহাউৎসাহে তা বিছানার চারিদিক দিয়ে ছড়াচ্ছে। বিছানাটাকে গোল করে ঘিরে রাখাই মনে হয় উদ্দেশ্য। আমি আর দাড়ালাম না। ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না যে ঘটনা কি!

সেদিন রাতে আমি নিজেই ছেলেদের ঘরে গেলাম। ভাবলাম অনেকদিন ওদের সাথে কোন গল্প হয় না। ঘরে ঢুকে দেখলাম নীতু দুই ছেলেকে দুইদিকে নিয়ে সিনেমা দেখছে। ল্যাপটপে দেখায় শুধু মাঝখানের জন ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে। বাকিদুইজন তাদের মায়ের সাথে গুতাগুতি করে সময় পার করছে। বড়ছেলে ধ্রুব একবার স্ক্রিন এডজাস্ট করে আরেকবার রুদ্র করে। ওদের মা আবার চেষ্টা করছে দুই ভাইয়ের হাত বেঁধে রাখার। এটাতে আবার ধ্রুব রুদ্র হেসেই খুন। খুবই মধুর পারিবারিক দৃশ্য। এরমধ্যে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,

“মা, বাবার নেক্সট ট্যুর কবে?”

“সামনের সপ্তাহে। তখন আমরা আরাম করে টিভিতে সিনেমা দেখব।”

“মা, আমরা কি ব্লু টুথ স্পিকার লাগাতে পারি সেই সময়?”

“নো। এ বিগ নো। এত আওয়াজ ঠিক না।” বলে নীতু একটা গুতা দিলো রুদ্রর পেটে।

আমি খুব আস্তে করে ওদের পেছন থেকে চলে আসলাম। একটা খুবই ছোট ঘটনা মনে পড়লো। ধ্রুব রুদ্র পিঠাপিঠি ভাই। কথা বলা শেখার পর পর সারাদিন প্রশ্ন করতো। সব উত্তর ওদের মা আর দাদীর কাছে থাকতো। মাঝেমাঝে রাতে আমার সাথে টিভি দেখতে বসতো আর শুরু করতো প্রশ্ন। একইপ্রশ্ন একশোবার। একদিন আমি বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম। ঘরে গিয়ে বসে আছি এইসময় নীতু এসে বিরক্ত স্বরে বললো,

“বাচ্চাগুলো এত আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করছে। তুমি বিরক্ত হচ্ছো কেন?”

“চার/পাঁচ বছরের বাচ্চার এত প্রশ্ন কেন?” বলে আমি মোবাইল গুতাতে থাকলাম। ভাবলাম পরে কোন একদিন বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে নিবো। কিন্তু ওরা আর কোনদিন বিরক্ত করতে আসেনি। মাঝখানে ছয় বছর পার হয়ে গিয়েছে তা আমিও খেয়াল করিনি। মনের মধ্যে কেমন জানি করে উঠলো। আমি আবারও সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। নীতু এরমধ্যে এসে শুয়ে পড়লো। আমি একবার খুব আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম,

“মালাগুলো ওভাবে রাখলে কেন মায়ের ঘরে?”

এসময় আমি যথাসম্ভব একটা আদুরে গলা নিয়ে আসার চেষ্টা করলাম। নীতু খুব স্বাভাবিকভাবে ফ্লাস্ক থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,

“তোমাকে বলেছিলাম না মা সারাদিন ছারপোকার ভয়ে অস্থির। ফুলের গন্ধে নাকি ছারপোকা পালায়।” বলে সে গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। এগিয়ে দিয়ে বললো, “তোমার মনে হয় ঠান্ডা লেগেছে। গলাটা কেমন জানি শোনাচ্ছে।গরম পানি খেয়ে নাও।”

আমি সারারাত সেই গরম পানির গ্লাস নিয়ে বসে থাকলাম। একসময় পানি ঠান্ডা হয়ে গেলো। আমি আস্তে করে চুমুক দিয়ে পানিটা খেয়ে নিলাম। এই পানিতে গ্লাসে সবকিছুতে নীতুর স্পর্শ লেগে আছে। ভাবতেই ভালো লাগছে।

সকালে উঠে চিন্তা করে দেখলাম উপহারের বুদ্ধিটা তেমন কাজে আসলো না। তবে অন্য একটা পরিকল্পনা মাথায় এসেছে। এবার নীতু মুগ্ধ হয়ে যাবে। হয়তো সে নিজেই আমাকে ভালোবাসি বলতে চলে আসবে। এই চিন্তা করে আমি পুরো সকাল হাসি হাসি মুখে বসে থাকলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here