উত্তরণ পর্ব_২২

0
683

#উত্তরণ
পর্ব_২২

তখন ভোর তিনটে, উজানের জাগুয়ার ওর আবাসন থেকে বেড়িয়ে পড়ে. মিনিট পনেরো কুড়ির মধ্যেই ওরা এয়ারপোর্ট পৌঁছে যায়. ডিউটি জয়েন করে হিয়া প্রি-ফ্লাইট ইন্সপেকশনে চলে যায় এভিয়েশন মেইনটেনেন্স টেকনিসিয়ানের সাথে.
ইন্সপেকশন শেষে হিয়া চেক লিস্ট সাবমিট করে উজানকে. উজান তখন ল্যাপটপ এ ব্যস্ত, চেক লিস্টের দিকে না তাকিয়েই , হিয়াকে প্রশ্ন করে যায়.

উজান: Airflame, blades ?
হিয়া: Checked
উজান: Engine and fuel system?
হিয়া: Checked
উজান: Sensors, probes, other instruments?
হিয়া: Checked
উজান: Interior portion?
হিয়া: Checked
উজান: Weather radar,warning lights, and other systems?
হিয়া: Checked

উজানের ততক্ষনে ল্যাপটপের কাজ হয়ে যায়. ও উঠে পড়ে রি চেকিং এর জন্য. হিয়া ওকে অনুসরণ করে.

অনেক পাইলটই কো-পাইলটের উপরই ছেড়ে দেন এই প্রি-ফ্লাইট ইন্সপেকশনের ব্যাপার টা. কিন্তু উজান আবার উল্টো. সে খুব খুঁটিয়ে ইন্সপেকশন করে আর কোনো ভুল যদি ধরা পড়ে তাহলে কো-পাইলট কে তার যথেষ্ট মাসুল দিতে হয়. উজানের মতে, এতো গুলো মানুষের জীবন তার হাতে তাই গাফিলতির কোনো প্রশ্নই নেই. আজ যে ফার্স্ট অফিসার কাল সে ক্যাপ্টেন হবে, তাই তারও দায়িত্বও এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠেনা.

উজান নিজের গতিতে কাজ সম্পন্ন করে ATC কে পাইলট রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়.

এদিকে প্যাসেঞ্জের চেকইন শুরু হয়ে যায়. উজান, হিয়া ক্যাফেটেরিয়াতে অন্য পাইলট এবং কেবিন ক্রু মেম্বারস দের সাথে ছোটো ছোটো গ্রুপে ভাগ হয়ে কথোপকথনে ব্যস্ত হয়ে পরে. এমন সময় একজন সুদর্শন পুরুষ ক্যাফেটেরিয়াতে ঢোকে. এদিক ওদিক তাকাতেই সে হিয়াকে দেখতে পায়.

উদ্দীপ্ত: হাই হিয়া
হিয়া : আরে উদ্দীপ্ত? কেমন আছো? তোমার পা কেমন আছে?
উদ্দীপ্ত: এখনো কষ্ট হয় একটু বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে, আদারওয়াইজ ইটস ফাইন. লিগামেন্ট ছিড়ে গিয়েছিলো.
সোনাল: বহত দিন ছুট্টি লে লিয়া ইয়ার.
উদ্দীপ্ত হাসে: হুম۔۔ অনেকদিন. কালকেই জয়েন করেছি.
সারা: আমরা কিন্তু আপনাকে মিস করেছি খুব۔۔
উদ্দীপ্ত: আমরা মানে?
সারা: আমি এবং আরো অনেকে, তবে আপনি কি নির্দিষ্ট কাওকে খুঁজছেন? (বলে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়)
উদ্দীপ্ত হিয়ার দিকে তাকায় কিন্তু হিয়া তখন কফিতে চুমুক দিতে ব্যস্ত. ওদের কথাবার্তা চলতে থাকে.

উজানের চোখ সব কিছুই দেখে. উদ্দীপ্তর হিয়ার প্রতি ব্যবহার, ভালোবাসার দৃষ্টিতে হিয়াকে দেখা۔۔۔۔ এসব কিছু উজানের কেমন অসহ্য লাগে, ওর চোয়াল দৃঢ় হয়ে আসে. অকারণেই উদ্দীপ্তর প্রতি উজানের মন বিরূপ হয়ে ওঠে. হাতে থাকা জলের বোতলটা দুমড়ে যেতে থাকে.

সোনাল হঠাৎই হিয়ার হাত ধরে একটু অন্যদিকে টেনে নিয়ে যায়.

হিয়া: কি হলো?
সোনাল: লাগতা হ্যায় উদ্দীপ্ত কি স্যামত আনে বালী হ্যায়۔
হিয়া: কেয়া বোল রেহি হ্যায় তু?
সোনাল: উজান স্যার যেভাবে উদ্দীপ্ত কে দেখছেন, উদ্দীপ্তর কপালে দুঃখ আছে হিয়া.
হিয়া: উজান স্যার উদ্দীপ্ত কে কেন কিছু করতে যাবেন?
সোনাল একটু কৌতুকপূর্ণ হেসে: মনে হচ্ছে ওনার পছন্দের কোনো কিছুর উপর উদ্দীপ্ত নজর দিয়ে ফেলেছে۔۔۔۔বেচারা (বলে ফিক্ করে হেসে ফেলে)
হিয়া: তেরা দিমাগ খারাব হো গয়া হ্যায়. তেরি ফ্লাই হ্যায় আজ হায়দ্রাবাদ, তু উসি মে কন্সেন্ট্রেট কর.

সোনালকে থামিয়ে দিলেও ওর কথাগুলো হিয়ার মাথায় ঘুরতে থাকে.

ক্যাপ্টেন কাম্বলে: উদ্দীপ্ত হিয়াকে খুব পছন্দ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিয়া রাজি না হলে উদ্দীপ্ত নিজেকে সামলাতে পারলে হয়.

ক্যাপ্টেন আদেশ:”Guzar jayega ye daur bhi Galib, zara itminan to rakh, Jab khushi na thahri to, Gum ki kya aukat hai”

ক্যাপ্টেন কাম্বলে: বাহ্۔۔۔ আপকা শায়েরী তো কামাল কা হ্যায়.
ক্যাপ্টেন আদেশ: মেরে নেহি۔۔۔۔۔۔মির্জা গালিব কি কহিয়ে. (হাসে)

আরো অনেক কথা চলতে থাকে. উজান বিরক্ত হয়ে ওঠে, একটু সরে যায় ও. অপেক্ষা করতে থাকে ওদের ফ্লাইট এনাউন্সমেন্টের.

বেশ কিছুক্ষন পর এনাউন্সমেন্ট হয় ওদের ফ্লাইটের পাইলট, FO, চিফ ফ্লাইট আটেনডেন্ট আর বাকি কেবিন ক্রু দের যাবার জন্য. উজান এগিয়ে যায়, পেছন পেছন হিয়া আর সারা. বাকিরা ওদের অনুসরণ করে.

উদ্দীপ্তর উজানের সাথে পরিচয় ঘটেনি তাই সে উজানকে চেনেনা, যদিও এরই মধ্যে উজানের সম্পর্কে শুনেছে. এই প্রথম সে উজানকে চাক্ষুস করলো. উজানের সাথে হিয়া কে যেতে দেখে ওর মন কেমন করে ওঠে. কই আগে কখনো তো এরকম ফিলিংস হয়নি ওর, তাহলে তাকে কোনো হীনমন্যতা গ্রাস করলো কি? আজ পর্যন্ত হিয়া কোনো সাড়া দেয়নি ওর আকুলতায়. ঠিক করে হিয়া ফিরলেই হিয়াকে অফিসিয়ালি প্রপোজ করবে ও, তারপর যা থাকে কপালে. আর দেরি করা ঠিক হবেনা (চিন্তিত মুখে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে যায় উদ্দীপ্ত).

ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়েই উজানের মনটা আবার ভালো হয়ে যায়. ওই দূর আকাশ ওকে হাতছানি দেয়.

যাবতীয় নিয়মাবলীর মধ্যে দিয়ে ওরা এয়ারক্রাফটে এসে নিজের নিজের জায়গায় চলে যায়. উজান আর হিয়া ককপিটে আসে. ওরা নিজের সিটে বসে বাকি চেকিং গুলো সারতে থাকে.

উজান: Is Before-Takeoff Checklist ready?
হিয়া : Yes Captain.
উজান: Start

হিয়া:
• Auxiliary fuel pump — Off
• Flight controls — Free and correct
• Instruments and radios — Checked and set
• Fuel gauges — Checked
• Parking brake — Off
• Doors and windows — Locked
(*আরো অনেক কিছু থাকে, মাত্র কয়েকটা দিলাম)

বেশ কিছুক্ষন পর সারা এসে জানায় বোর্ডিং কমপ্লিট۔۔ সারা এই ফ্লাইটের চিফ ফ্লাইট আটেনডেন্ট۔۔

গমগমে গলায় পাইলট ইন কম্যান্ড এর এনাউন্সমেন্ট শোনা যায় ফ্লাইটের মধ্যে۔۔۔

উজান: Good morning ladies and gentlemen, this is your captain Ujan chatterjee speaking. We are currently in Kolkata and now ready for take off. Out side temperature is 12°C. The sky is clear and not expecting any sort of turbulence. There will be no delay hopefully. Till then relax and enjoy the journey. Our cabin crew members are always ready for any assistance. Thank you for choosing ****.

উজানের আউন্সমেন্ট শুনে হিয়া একবার আড়চোখে তাকায় উজানের দিকে. উজানের এই ভরাট গমগমে গলার আওয়াজ বড্ডো আকৃষ্ট করে হিয়াকে–

কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন রানওয়ে ধরে ছুটতে শুরু করে টেকঅফ জন্য.

দিল্লিতে কিছুক্ষন হল্ট করে আবার মুম্বাই এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওরা. মুম্বাই তে ফার্স্ট ওভারনাইট লেওভার. হোটেলের গাড়িতে ওরা এসে পৌঁছোয় মুম্বাই এর অন্যতম পাঁচতারা হোটেলে.

দেখা যাক এর পর কি এমন ঘটতে চলেছে—উজান-হিয়ার জীবনে–যে ঘটনা বদলে দেবে দুটো মানুষের জীবন…!!

(**এই পার্টে কিছু টেকনিকাল টার্মস আর প্রসেস লিখলাম কারণ গল্পের প্লট যখন এরোনউটিক্যাল তখন সেটা সন্পর্কিত কিছু তথ্য থাকা উচিৎ. ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ–আর একটা কথা সবাই কিন্তু মনে করে কমেন্ট করবেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here