উত্তরণ পর্ব_২০

0
664

#উত্তরণ
পর্ব_২০

উজানের স্নেহের উষ্ণ স্পর্শে হিয়ার মনের মধ্যে এতদিনের জমাট বেঁধে থাকা সব রাগ, দুঃশ্চিন্তা, ভয়, গলতে শুরু করে. হিয়ার কান্না উত্তরোত্তর বেড়ে চলে.

হিয়া উজানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে۔۔

হিয়া: কেন কেন? শুধু আমিই কেন? কারণ আমাকে ক্যাপ্টেন কাশ্যপ স্নেহ করতেন তাই? কিন্তু শুধু আমিই তো না, আরো অনেকেই তো ওনার স্নেহধন্য ছিলো, তাহলে আমাকেই কেন টার্গেট করছে ওরা? কেন মারতে চাইছে? আমি বাঁচতে চাই۔۔۔۔۔۔আমি কিছু জানিনা বিশ্বাস করুন, কিছু নেই আমার কাছে۔۔۔

হিয়ার গলায় আর্তনাদ ঝরে পড়ে. হিয়ার এই আর্তনাদে উজানের বুকে কষ্ট চিনচিন করে ওঠে. আরো অনেক কিছু অবোধ্য ভাষায় বলতে থাকে হিয়া যার সব টুকু উজান বুঝতেও পারেনা. হিয়া কথা বলতে বলতে উত্তেজনায় উজানের শার্ট টা দুই হাতে খামছে ধরে.

উজান যত্ন সহকারে হিয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে মুখের উপর পরে থাকা এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলে۔۔۔

উজান: ওরা আপনার ক্ষতি করতে চায়, কিন্তু আজ পর্যন্ত পেরেছে কি?

হিয়া ক্রুন্দনরত অবস্থায়: সে তো আপনি ছিলেন তাই۔۔

উজান: আমি তো এখনো আছি

হিয়া: কতদিন থাকবেন আপনি (চোখ রাখে উজানের চোখে)

উজান: যতদিন না আপনি বিপদ মুক্ত হচ্ছেন

হিয়ার মুখে শ্লেষের হাসি: এভাবে কি কাউকে বাঁচিয়ে রাখা যায় ? কতদিন বাঁচাবেন আমাকে? প্রত্যেক মুহূর্তে মৃত্যুভয়ে তিল তিল করে মরার থেকে একবারে মরে যাওয়া অনেক ভালো ক্যাপ্টেন.

উজান: সবাই তো বলে আপনি নাকি ভীষণ সাহসী, বুদ্ধিমতী. তাছাড়া শুনেছি আপনি নাকি সেলফ ডিফেন্সও জানেন۔۔۔۔তাহলে এভাবে কেন ভেঙে পড়ছেন?

হিয়া: আজকাল ওসব সবাই একটু আধটু শেখে. ওই শেখা টুকু দিয়ে পাড়ার গুন্ডা বদমাইসদের ঠেকিয়ে রাখা যায়, মাফিয়াদের সাথে পেরে ওঠা যায়না.

হিয়ার বলার ভঙ্গি দেখে উজান হেসে ফেলে۔۔
উজান: ওই টুকু করলেই হবে۔۔۔۔বাকিটা আমি সামলে নেবো۔۔

হিয়া: আপনি?

উজান: ভরসা করেন আমাকে?

হিয়া : কিন্তু কেন? আমি তো ইডিয়ট, তাই না? (হিয়ার গলায় অজান্তেই অভিমানের সুর বেজে ওঠে)

উজান আবার হেসে ফেলে হিয়ার শিশু সুলভ আচরণে.

হিয়া আজই প্রথম উজানকে হাসতে দেখলো. হিয়ার কথারা হারিয়ে যায় উজানের হাসিতে. ও অবাক হয়ে যায়. এই বদমেজাজী, খিটখিটে, কিছুটা খ্যাপাটে লোকটার হাসিটা ভীষণ রকমের ভালো, কেমন যেন মন কাড়া. কেন হাসে না মানুষটা?

হঠাৎ হিয়া ওর সম্বিৎ ফিরে পায়. নিজেকে ও আবিষ্কার করে উজানের বহুবন্ধনে. তখনও উজানের শার্ট ওর দুই হাতের মধ্যে মুঠো করে ধরা. উজানের এক হাত ওর গালে আর এক হাত ওকে জড়িয়ে ধরে আছে. উজান এতো কাছে থাকায় ওর গায়ের গন্ধ আলাদা করে পায় হিয়া. একটা আলাদা অনুভূতি হয় ওর যেটা বিগত পঁচিশ বছরে আর কখনো হয়নি. সরে আসতে গিয়েও পারেনা হিয়া. মস্তিষ্ক সেই রায় দিলেও মন সায় দেয় না. আতঙ্কের মাঝে এই অনুভূতিটুকু ওর কাছে মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো মনে হয়.

হিয়াকে চুপ করে যেতে দেখে উজান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়. হিয়ার অব্যক্ত কথাগুলো ওর চোখে পড়ার চেষ্টা করে. তারপরেই উজানও উপলব্ধি করে ওদের ঘনিষ্টতা. তড়িৎ গতিতে উজান হিয়াকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়. হিয়া তখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি,উজান ওকে ছেড়ে দেওয়ায় ভারসাম্য হারায় হিয়া. উজান আবারো হিয়াকে ধরে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়.

উজান: আমাদের যেতে হবে.

হিয়া ম্লান হাসে: চলুন

উজান: আপনি আজ আমার ওখানেই থাকবেন.

উজানের কথায় হিয়া এতটাই হতবাক হয় যে কিছুক্ষনের জন্য ও বাকশক্তিহীন হয়ে যায়. তারপর নিজেকে সামলে কোনোক্রমে বলে: কি? আ۔আপনার ওখানে? মা۔মানে আপনার ফ্ল্যাটে?

উজান: হুম

হিয়া: ইম্পসিবল

উজান: হোয়াই?

হিয়া: লোকে কি বলবে? কোনোভাবে অফিসে জানাজানি হলে?

উজান ভ্রু কুঁচকে: সবাইকে নিয়ে আপনার চিন্তা? নাকি কোনো বিশেষ একজনকে নিয়ে? (উজানের মনের কোনে হঠাৎ করেই আবার উদ্দীপ্ত নামক আষাঢ়ে মেঘ জমতে থাকে)

হিয়া: বিশেষ একজন۔۔۔۔۔۔মানে?

উজান এড়িয়ে যায় হিয়ার প্রশ্ন: শুনুন۔۔۔۔ প্রথমত, আপনি কোনো সেলেব্রেটি নন যে লোকে আপনাকে নিয়ে মাথা ঘামাবে, আমার কমপ্লেক্সে অন্তত এতো সময় কারোর নেই. দ্বিতীয়ত, অফিসে জানলেও আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করবেনা. আর আপনাকে জিজ্ঞাসা করলে আপনি কি উত্তর দেবেন সেটা এই দুদিনে ভাবার মতো অনেক সময় পাবেন.

হিয়া: নিজেকে কিভাবে বাঁচাবো সেটাই এখনো পর্যন্ত ভেবে বার করতে পারলামনা, আবার অন্য ভাবনা মাথায় নেবার মতো অবস্থায় নেই আমি.

উজান: কে কিভাবে জানবে যে আপনি আমার ফ্ল্যাটে আছেন যদি না আপনি মুখ ফস্কে কাওকে বলে দেন. অনেক হলো এবার চলুন, বাকি তর্কটা না হয় বাড়িতে গিয়ে করবেন.

হিয়া: বললেই হলো? আমার লাগেজ নিতে হবেনা?

উজান: চলুন۔۔۔ আগে আপনার বাড়িতে যাচ্ছি. যা যা প্রয়োজন গুছিয়ে নিয়ে আমার বাড়িতে যাবেন. এমনিও ভোর ভোর বেরোতে হবে বেশি সময় নেই হাতে.

হিয়া বোঝে কোনো লাভ নেই, উজান কোনো কথা শুনবেনা. অগত্যা উঠে বসে গাড়িতে. গাড়ি চলতে শুরু করে. দুজনের মনেই আজ অন্য অনুভূতি গুলো নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে. দুজনেই একে ওপরের কাছে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টায় মরিয়া۔۔۔

দেখা যাক দুজনের এই লুকোনো অনুভূতি গুলো কিভাবে নতুন পথের বাঁকে মোড় নেয়—-!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here