#উত্তরণ
পর্ব_১১
হিয়া টেবিল থেকে নিউজ পেপার টা নিয়ে চোখ বোলাতে থাকে. আজ তাড়াহুড়োতে পড়াই হয়নি.
বেশ কিছুক্ষন কেটে যাবার পর হিয়া কিচেনে উঁকি মারে, দেখে উজান এক মনে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে. উজানের গতি দেখে হিয়া খুব অবাক হয়. ভাবে, লোকটা কী রে বাবা, প্লেন ওড়াতে ওড়াতে প্লেনের স্পিডেই কাজ করে. নিজের মনেই হেসে ফেলে হিয়া.
হিয়ার উপস্থিতি খুব সহজেই ধরা পরে উজানের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে. মুখ না ফিরিয়েই হিয়াকে জিজ্ঞাসা করে: কিছু দরকার?
হিয়া ইতস্তত করে “না” বলে.
উজান: তাহলে এখানে? নজর রাখছেন?
হিয়া: আমি কেন নজর রাখতে যাবো? ওটা তো আপনার কাজ.
উজান চমকে ওঠে হিয়ার উত্তরে. অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজেকে আড়াল করে হিয়ার দিকে ফিরে তাকায়.
উজান: আমি আপনার উপর নজর রাখি?
হিয়া: তাই তো মনে হয়
উজান: মানে?
হিয়া: নজর না রাখলে এতো অল্প সময়ে আমার ব্যাপারে এতো মূল্যবান মতামত তৈরী করলেন কী করে?
উজান: তার জন্য নজর রাখার দরকার পড়েনা. অবসেরভেশন এন্ড এনালিসিস, এই দুটো থাকলেই হয়.
হিয়া: আপনার ছাড়া এই বিদ্যে আর কারো নেই বলছেন? (হিয়া একটা ছুরি নিয়ে ধুয়ে রাখা ফল গুলো কাটতে শুরু করে)
উজান: আমি অন্যের ব্যাপারে কৌতূহলী নোই.
হিয়া: তাই? কিন্তু আমার কাছে তো অন্য খবর আছে (হিয়া ভাবলেশহীন মুখে কাজ করে যায়).
উজান সন্তর্পনে ঢোক গিলে: কী খবর?
হিয়া: আমার রেপুটেশন কিরকম ? ক্যাপ্টেনদের সাথে আমার সম্পর্ক কেমন? আমার পড়াশোনা কতদূর۔۔۔আমি কোনো রিলেশনশিপে আছি কিনা۔۔۔ক্যাপ্টেন কাশ্যপের সাথে আমার সম্পর্ক۔۔۔আরো অনেক কিছু, এখন সব মনে পড়ছেনা (হিয়া এবার ফ্রেশ ওয়াটারমেলন জুস বানানোর কাজে হাত দেয়).
উজান এতটাও ভাবতে পারেনি. কয়েক সেকেন্ডের জন্য থতমত খেয়ে যায়. নিজেকে সামলে বলে..
উজান: সেটা অন্যায় নাকি? নিজের কলিগদের সম্পর্কে খোঁজ রাখা কে প্রফেশনালিজম বলে.
হিয়া: ও
উজানের হিয়ার কথাগুলো কেমন ধাঁধাঁ এর মতো লাগে. এতো কিছু হিয়া কিভাবে জানলো? তাহলে কি যেভাবে উজান হিয়াকে নজরে রাখছে সেভাবেই হিয়াও উজানকে নজরে রাখছে? আর কি জানে ও? কিছু কি সন্দেহ করছে? খুব সন্তর্পনে হিয়ার মুখে ওর দৃষ্টি স্থির কােরে হিয়ার না বলা কথাগুলো পড়ার চেষ্টা করে.
হিয়া এতক্ষনে স্ক্র্যাম্বলড এগ আর টোস্ট টাও বানিয়ে ফেলে. উজান এতটাই হিয়াতে মগ্ন ছিল যে ও খেয়ালই করেনা কখন হিয়া একটু একটু করে পুরো ব্রেকফাস্টটা একাই বানিয়ে ফেলেছে. সমস্ত কিছু ট্রে তে সাজিয়ে উজানকে বলে۔۔
হিয়া: আমাকে দেখা শেষ হলে ব্রেকফাস্ট টা করে নিন, আমাকে বেরোতে হবে.
হিয়ার কথায় উজানের ঘোর কাটে. একটু অপ্রস্তুত হয়ে ও টেবিল সাজাতে চলে যায়, মনের মধ্যে একরাশ প্রশ্ন তোলপাড় করে. তারপর দুজনে ব্রেকফাস্ট করে নেয় স্ক্র্যাম্বলড এগ, ব্রেড টোস্ট, বয়েল্ড ভেজিস, কাট ফ্রুটস, ফ্রেশ জুস সহযোগে.
ব্রেকফাস্ট শেষ হলে হিয়া ওর পার্স আর ফোনটা নিয়ে উঠে পরে. যাওয়ার সময় হঠাৎই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে যায় হিয়া. পেছন ফিরে উজান কে উদ্দেশ্য করে শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলে…
হিয়া: ক্যাপ্টেন কাশ্যপ আমাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন. ওনার মৃত্যুর কারণ আমি জানিনা. শুধু জানি আমি ওনার মৃত্যুর সাথে কোনো ভাবেই যুক্ত নোই. তাই অহেতুক আমাকে সন্দেহ করা বন্ধ করুন ক্যাপ্টেন.
হিয়া স্তম্ভিত উজানকে পেছনে ফেলে বেরিয়ে যায়. যাবার সময় ওর চোখের জল সন্তর্পনে গোপন করলেও তা ধরা পরে যায় উজানের চোখে.
দেখা যাক উজান কেনই বা হিয়ার কথাই থতমত খেয়ে গেল–আর কেনই বা হিয়া নিজের চোখের জল গোপন করলো উজানের কাছে…!