ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ পর্ব ১১ +১২

0
648

#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ১১+১২

১১.
বাগানে হাঁটতে হাঁটতে নানা ধরনের কথা বলছে রাহা। এক পর্যায়ে সে আরিয়ানকে বলে ওঠল,

রাহা – ব্রো তোমার কাউকে ভাললাগে না?

আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

আরিয়ান – What do you mean?

রাহা – I mean, তোমার কোনো মেয়েকে ভাললাগে? কিংবা কাউকে লাভ কর?

আরিয়ান এবার বুঝতে পেরে মাধূর্যের দিকে একপলক তাকিয়ে রাহার উদ্দেশ্যে বলল,

আরিয়ান – থেমন খাউখে পাইনি।

রাহা আর মাধূর্য অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকাল। রাহা বলল,

রাহা – Wait wait bro…, তোমার তো এখন একত্রিশ বছর বয়স চলছে শুনলাম। এই একত্রিশ বছরে এমন একটা মেয়েও পাওনি যাকে তোমার পছন্দ হয়?

আরিয়ান আবারও কেন জানি মাধূর্যের দিকে এক পলক তাকিয়ে রাহার উদ্দেশ্যে বলল,

আরিয়ান – I don’t know.

রাহা – আচ্ছা বাদ দাও। এখন এটা বলো যে তুমি কেমন মেয়ে বিয়ে করতে চাও? বিয়ে করবে তো না কি?

আরিয়ান মুচকি হেসে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল আর বলতে লাগল,

আরিয়ান – বিয়ের খরব খিনা জানি না because এইঠা totally luck এর উপর depend খরছে। but আমি বিয়ে খরলে খুব sweet একঠা মেয়েকে বিয়ে খরতে ছাই।

মাধূর্য’র আবার হাসি পেল আরিয়ানের বাংলা উচ্চারণগুলো শুনে তবে সে নিজেকে সামলে নিল কারণ শত হলেও এতে তো বেচারার কোনো দোষ নেই। সে বিদেশে বড় হয়েছে যার কারণে বাংলা তেমন একটা শিখতে পারেনি সে তবুও, সে যে বাংলায় কথা বলার এতটা চেষ্টা করছে সেটাই অনেক। যাই হোক, রাহা আবার বলল,

রাহা – Wow bro…, তাহলে তো তোমার জন্য মিষ্টি দেখে একটা বউ খুঁজতে হয়। কি বলো?

আরিয়ান কিছু না বলে শুধু মিষ্টি হাসল। রাহা এবার মাধূর্য’র উদ্দেশ্যে বলল,

রাহা – কি রে মাধূর্য, তুই আবার এত চুপ হয়ে আছিস কেন? তুই কি আবার আরিয়ান ব্রো’কে লজ্জাটজ্জা পেতে শুরু করলি নাকি?

রাহার কথায় আরিয়ান পিছন ফিরে মাধূর্যের দিকে তাকালো। আরিয়ানকে তাকাতে দেখে মাধূর্য এবার সত্যিই কিছুটা লজ্জাবোধ করতে লাগলো। তবুও সে সেটা আড়াল করার জন্য রাহার উদ্দেশ্যে বলল,

মাধূর্য – আব আমি কেন লজ্জা পেতে যাবো উনাকে অযথা? উল্টোপাল্টা কথা বলিস না তো? আমি তো just তোদের কথা শুনছিলাম তাই চুপ করে ছিলাম।

আরিয়ান মুচকি হেসে আবার সামনের দিকে ঘুরে হাঁটতে লাগল। এদিকে রাহা ঠিকই মাধূর্য’র মুখে লজ্জার আভা দেখতে পেয়েছে তবুও সে আর আরিয়ানের সামনে এই নিয়ে কোনো কথা বলল না। রাহা প্রসঙ্গ পাল্টে করে আরিয়ান আর মাধূর্য’কে একে অপরের মধ্যে জড়তা কাটিয়ে তোলার জন্য বলল,

রাহা – ব্রো শোনো!

আরিয়ান পিছনে ফিরে বলল,

আরিয়ান – Yes! বলো।

রাহা – তুমি আর মাধূর্য এখানেই থাকো হ্যাঁ? আমি গিয়ে তিনজনের জন্য কফি নিয়ে আসি।

আরিয়ান – Oh, sure.

মাধূর্য বলল,

মাধূর্য – তাহলে আমিও যাই চল।

রাহা দ্রুত স্বজোরে বলে ওঠল,

রাহা – না!

আরিয়ান আর মাধূর্য দুজনেই অবাক হল রাহা এভাবে না বলে ওঠায়। রাহা তা বুঝতে পেরে কৃত্তিম হেসে বলল,

রাহা – না মানে তুই গিয়ে কি করবি? আমিই গিয়ে নিয়ে আসছি। এই যাব আর আসব। ততক্ষণ বরং তুই আর ব্রো একটু কথা বল। তাছাড়া তুই আর আমি দুজনেই যদি চলে যাই কফি আনতে তাহলে ব্রো এখানে একা আনইজি ফিল করবে। তাই না ব্রো?

আরিয়ান রাহার কথার জবাবে কিছু না বলে মাধূর্যের দিকে তাকালো। সে বুঝতে চাইছে মাধূর্য এখানে আরিয়ানের সাথে থাকতে চাইছে কি না। মাধূর্যও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল,

মাধূর্য – আচ্ছা যা, তবে তাড়াতাড়ি ফিরবি কিন্তু।

রাহা – হ্যাঁ অবশ্যই, আমি আসছি হ্যাঁ? ব্রো তুমি মাধূর্যের সাথে কথা বলো আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।

আরিয়ান মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। রাহা চলে গেল বাড়ির ভিতরে। এবার আরিয়ান আর মাধূর্য একে অপরের দিকে তাকালো। আরিয়ান মুচকি হেসে বলল,

আরিয়ান – ছলুন সামনে যাই।

মাধূর্য মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হাঁটা ধরল আরিয়ানের সাথে। কিছুক্ষণ দুজনে নিরবে হাঁটতে লাগল এরপর একপর্যায়ে নিরবতা ভেঙে আরিয়ান বলে ওঠল,

আরিয়ান – what’s your name?

মাধূর্য মুচকি হেসে বলল,

মাধূর্য – মাধূর্য মেহরিন।

আরিয়ান – wow! nice name.

মাধূর্য – Thank you.

আরিয়ান – You’re most welcome. By the way, আপনি খি খরেন? I mean, what do you do?

মাধূর্য – জ্বী আমি রাহার সাথেই এবার অনার্স ফাইলাল পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু এখনো result বের হয়নি।

আরিয়ান – ওহ আচ্চা। খুব বালো।

মাধূর্য হাসল। আরিয়ান কিছুটা বিব্রতবোধ হয়ে বলল,

আরিয়ান – ঠুমি হাসচ খেন? Are you laughing at me?

মাধূর্য কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

মাধূর্য – না না, আমি তো এমনিই হাসছিলাম।

১২.
আরিয়ান – I know, you are laughing at me. because, আমি বালো বাংলা বলথে পারি না। Actually, আমার birth থো লন্ডনে হয়েচিল আর আমি whole life সেখানেই চিলাম। that’s why I can’t speak Bangla very well. আমি যতঠুকু বাংলা বলতে জানি থা শুধুই আমার ড্যাডের থেকে শুনেই শিখেছি। But i know, আমার বাংলা সঠিক নয়। থবুও আমি ছেষ্ঠা খরি বাংলা বলার because, এথে আমার dad খুব happy হয়।

মাধূর্য এবার বুঝতে পারল যে আরিয়ানের উচ্চারণ বা কথা বলা নিয়ে তার তখন ঐরকম মজা করা একদমই ঠিক হয়নি। আরিয়ানের জায়গায় নিজে থাকলে হয়ত তার ক্ষেত্রেও এমনটাই হত। সেও হয়ত ভালোভাবে বাংলা বলতে পারত না। আর তারও হয়ত তখন খারাপ লাগত কেউ তার উচ্চারণ নিয়ে মজা করলে, হাসহাসি করলে। এখন আরিয়ানেরও নিশ্চয়ই খুব খারাপ লাগছে। তাই সে অনুতপ্ত দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

মাধূর্য – আমি দুঃখিত মি. আরিয়ান। আমি সত্যিই এবার আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য বা আপনাকে বিদ্রুপ করে হাসিনি। কিন্তু এইটা ঠিক যে, প্রথমে এই বাড়িতে আসার পর আপনার কথা শুনে আমি হেসে ফেলেছিলাম। তার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আমার ঐরকমটা করা একদমই উচিত হয় নি। আমারও বুঝা উচিত ছিল যে সবারই একটা নির্দিষ্ট মাতৃভাষা আছে আর সে সেই ভাষাটাই হয়ত সবচেয়ে বেশি ভালো জানে। যেমন আমি বাংলাতে খুব সহজে কথা বলতে পারি ঠিক তেমনি আপনি ইংরেজিতেই সবচেয়ে ভালোভাবে কথা বলতে পারেন। কারণ যুক্তি দিয়ে ভাবতে গেলে আসলে ঐটাই আপনার মাতৃভাষা। তাই আমি আবারও ক্ষমা চাইছি। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ!

আরিয়ান মিষ্টি হেসে বলল,

আরিয়ান – No no, it’s okey. আমি রাঘ খরিনি এখদমই।

মাধূর্য – ধন্যবাদ। কিন্তু আমার একটা request আছে, রাখবেন?

আরিয়ান – Yeah, sure. খি খরতে হবে বলুন?

মাধূর্য – Request টা হচ্ছে এরপর থেকে আমাকে কখনো হাসতে দেখলে আবার এটা ভেবে বসবেন না যে, আমি আপনাকে নিয়ে বা আপনার কথা বলা নিয়ে নিয়ে হাসছি। আমি কিন্তু এমনিতেও হাসি।

আরিয়ান মুচকি হেসে বলল,

আরিয়ান – Yeah, i know. রাহা আমাখে বলেছিল।

মাধূর্য ভ্রু কুঁচকে বলল,

মাধূর্য – রাহা আবার কি বলেছিল?

আরিয়ান আনমনেই বলে ফেলল,

আরিয়ান – ঐ থো, আপনার মাথায় problem আছে। তাই আপনি শুদু শুদুই হাসেন।

মাধূর্য এখন রাগ করবে নাকি হাসবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। সে তো দেখেছেই আরিয়ানকে রাহা যে ইশারায় বলেছিল মাধূর্যের মাথায় সমস্যা আছে কিন্তু সেটা যে আরিয়ান এতটা স্বাভাবিকভাবে আবার মাধূর্যকেই ডিরেক্ট বলে দেবে সেটা ভাবতেও পারেনি মাধূর্য। এদিকে আরিয়ানও কথাটা বলার পর বোকা বনে গেছে। দুজন দুজনের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কারো মুখেই কোনো কথা নেই, পরিবেশ একদমই নিরব যেমনটা কোনো ঝড় আসার পূর্বে পরিবেশ একদম থম মেরে থাকে তেমনই এখন এখানকার পরিবেশটাও থমথমে। তবে এই নিরবতা আর থমথমে ব্যাপারের পর ঝড় নয় বরং হঠাৎ দুজনেই একসাথে হু হা করে হেসে ওঠল। এর মধ্যে রাহা কফি নিয়ে আসতে আসতে দেখতে পেল আরিয়ান আর মাধূর্য একে অপরের সাথে কি নিয়ে যেন প্রছন্ড হাসছে। রাহা ওদের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,

রাহা – আমাকে ছাড়াই কি নিয়ে এত হাসাহাসি হচ্ছে শুনি? কিছুক্ষণের মধ্যে কি এমন হাসির ঘটনা ঘটে গেল?

আরিয়ান আর মাধূর্য হাসি থামিয়ে রাহার দিকে তাকাল। মাধূর্য বলল,

মাধূর্য – হাসির কারণটা তুই-ই তৈরী করেছিস ফাজিল।

রাহা – আমি?

মাধূর্য – তা নয় তো কি? তুই-ই তো তোর ভাইকে আমার Mental certificate দিয়েছিলি তাই না? আর উনি সেই certificate গলায় ঝুলিয়ে ঘুরছেন। ফাজিল কোথাকার, তুই উনাকে বলেছিস আমি পাগল আর সেটা উনি serious ভেবে বসে আছে। এখন এইমুহুর্তে তুই তোর ঐ ভুয়া certificate ফেরত নে উনার থেকে। বল উনাকে আমার মাথায় কোনো সমস্যা নেই।

রাহা – ও আচ্ছা, এই ব্যাপার? আমি তো ভাবলাম কি না কি? আসলে ব্রো, আমি তখন মজা করেই বলেছিলাম যে মাধূর্যের মাথায় সমস্যা আছে। তাছাড়া তখন তো তুমি খুব রেগে ছিলে তাই যদি মাধূর্যের হাসির জন্য আরও রেগে গিয়ে লন্ডন চলে যাও? সেই ভেবেই ঐটা বলেছিলাম, sorry। এই নাও কফি খাও।

আরিয়ান মিষ্টি হেসে ট্রে থেকে একটা কফির মগ নিয়ে বলল,

আরিয়ান – It’s okey, আমি বুঝথে পেরেছি sis… এবং আমি ডুঃখিথ মিস মাঢুয।

আরিয়ানের মুখে মাধূর্য’র নাম শুনে রাহা হু হা করে হেসে ওঠল। মাধূর্য রাহার থেকে কফি নিয়ে কফি মুখে দিয়েছিল মাত্র। আরিয়ানের মুখে নিজের নামের ঐরকম জঘন্য বিকৃতি শুনে নাকে মুখে গিয়ে কফি ওঠল তার। আরিয়ান দ্রুত মাধূর্য’র কাছে এগিয়ে এসে বলল,

আরিয়ান – খি হয়েছে মাঢুয? Are you okey?

মাধূর্য কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

মাধূর্য – I’m okey Mr. Ariyan. কিন্তু আমার নাম মাধূর্য। মাঢুয না।

আরিয়ান – Oh sorry, you mean Maduras ( মাঢুরজ)?

এবার রাহা আরও শব্দ করে হেসে ওঠল। সে মাধূর্য কে বলল,

রাহা – ওরে মাধূর্য আগে যেটা বলেছিল সেটাই ভালো ছিল কিন্তু এখনকার টা তো আরও জঘন্য।
বলেই সে আবার কফির মগ সামলে হাসতে লাগল।

মাধূর্য এবার রেগে গিয়ে রাহাকে একটা চাপড় মেরে বলল,

রাহা – একদম চুপ ফাজিল। দুদিন পড় তার বিয়ে আর সে এখন বত্রিশ পাটি বের করে হাসছে। লজ্জা করে না তোর? আর এই যে Mr. Ariyan, আমি এই ব্যাপারে কোনো compromise করতে রাজি নই। আপনি বাংলা ভালো পারেন না মানছি কিন্তু আমার এত সুন্দর একটা নামের হাড়গুড় ভেঙে হসপিটালে পাঠাবেন তা আমি মেনে নেব না। আমার নাম আপনার মুখ দিয়ে আমি সঠিক উচ্চারণ করিয়েই ছারব। This is my challenge.

আরিয়ান – আমি খিছুই বুজথে পারছি না। খি বলছেন আপনি এত্তসব? খিসের challenge?

মাধূর্য – আপনাকে এতকিছু বুঝতে হবে না, আপনি শুধু আমার নামটা ঠিকঠাক ভাবে বলতে শিখে নিন। okey? বলুন মাধূর্য।

আরিয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,

আরিয়ান – মাঢুরজ।

প্রায় পাঁচ-ছয় বার মাধূর্য বলাতে গিয়েও আরিয়ানকে দিয়ে সে তার নামের সঠিক উচ্চারণ করাতে ব্যর্থ হয়। মাধূর্যের এখন ধৈর্যের বাঁধই ভেঙে যাচ্ছে। এমন সময় রাহা কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,

রাহা – হয়েছে, আর তোদের কাউকেই নাম দিয়ে যুদ্ধ করতে হবে না। ব্রো, তুমি যখন মাধূর্যের পুরো নামটা বলতে পারছ না তখন আমি তোমার জন্য ওর নামটা একটু cut করে সহজ করে দিই। তুমি বরং মাধূর্য কে just মাধু বলো। কি পারবে তো?

আরিয়ান মিষ্টি হেসে মাধূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,

আরিয়ান – Of Course, মাডু।

মাধূর্য এবার রেগেমেগে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনই পিছন থেকে রায়হান আর আমান এসে ওঠল। রায়হান রাহাদের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত কন্ঠে বলে ওঠল,

রায়হান – কে আবার হা ডু ডু খেলছে রে? এই তোরা হা ডু ডু খেলছিস নাকি? তাহলে কিন্তু আমরাও খেলব। কত বছর হা ডু ডু খেলিনা। কি বলিস আমান?

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here