আসক্তির শেষ বেলায় তুমি পর্ব ৫

0
847

#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন দরজার ওপারে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে অধরাকে দেখে অয়নের মনের মধ্যে প্রশ্নের উদয় হলো। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বলল

— স্যার আসতে পারি?

— হুম। কি জন্য অফিসে এসেছো? কোনো বিশেষ প্রয়োজন!

— না আসলে আমি কিছু বলতে এসেছি যদি আপনি অনুমতি দিন তো!

— আরে এতো নাটক করার কি আছে? টাকা চাই এটা মুখ ফুটে বলতে এতো সংকোচ কেনো? আমার সাথে তোমার এই সম্পর্ক ছাড়া আর কি আছে? কত চাই বলো আমি চেক সাইন করে দিচ্ছি।

অয়নের কথাটা শুনে অধরা মাথাটা নিচু করে ফেলল। অয়ন অধরাকে বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অধরার জায়গাটা‌। তবে অধরার এতে তেমন একটা কষ্ট হচ্ছে না। কারন অধরা এই সব কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন আর অধরার গায়ে লাগে না অয়নের কথা। অধরা নিজের ঠোঁটের কোনে মিছক হাসির রেখা টেনে বলতে লাগলো

— স্যার, আমি টাকার জন্য আসিনি। আমি আপনার সাথে একটু কথা বলার জন্য এসেছি।

— ওহহহ আচ্ছা। কিন্তু আমার তো তোমার সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছে ও নাই আর না আছে সময়। আসতে পারো এখন।

— অপমান বোধ, আত্নসম্মান বোধ, যাই বলুন না কেনো আজ আমার কোনোটাই নেই। কারন নিজের শরীরের উপর এখন রক্ষিতার উপাধি লেগে গেছে। স্যার বাড়িতে আমাকে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না‌। সারা দিন একটি রুমের মধ্যে বন্দি থাকি আমি। কারো সাথে কথা বলার ও উপায় নেই। তাই ভেবেছি আপনার সাথে অফিসে যদি কোনো কাজ করি তবে আমার মনের মধ্যে একটু শান্তি..!

— তুমি ভাবলে কি করে তুমি এখানে চাকরি করতে আসবে আর আমি তোমায় চাকরি দিবো? চাকরি করার জন্য একটা যোগ্যতার প্রয়োজন। তোমার সেটা আছে? ওহহ সরি তোমার তো যোগ্যতার কোনো‌ কমতি নেই। আমি তোমার কাছে অযোগ্য। এই অযোগ্য লোকের অফিসে কোনো যোগ্য লোকের ঠাঁই নেই।

— স্যার আমি জানি আপনি এই কথা গুলো কেনো বলছেন। স্যার আপনার ঋণ শোধ করার এটাই এক মাত্র উপায়। প্লিজ স্যার আমায় ফিরিয়ে দিবেন না প্লিজ!

অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো কান্না ভেজা কন্ঠে বলল। অয়ন অধরার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় অধরার চোখের কোনে নোনা জল এসে অপেক্ষা করছে। মুখে যতটাই কথা অয়ন বলতে পারুক না কেনো মন থেকে আজ ও অধরার চোখের জলে তার সেই পুরনো কষ্টটা বুকের মাঝে অনুভূত হয়। ভালোবাসা হয়তো এমনি হয়ে থাকে। প্রিয়জন যতটাই অপরাধ করুক না কেনো, দিন শেষে তাকে ক্ষমা করার কথা আলাদা ভাবে বলতে হয় না। মন থেকে ক্ষমা হয়ে যায়। তবে অধরার করা অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় কেবিনের মধ্যে হকচকিয়ে প্রবেশ করলো ঈশা। ঈশা কেবিনে এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে ন্যাকা কান্না করতে করতে বলল

— স্যার আমি শেষ। সরি আপনার থেকে অনুমতি নিতে পারলাম না। স্যার আমার অনেক সমস্যা হয়ে গেছে। এখন আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার পক্ষে…!

— এই ওয়েট আগে এটা বলুন আপনার কি মাথায় কোনো সমস্যা আছে? কি সমস্যা সেটা খুলে বললেই তো হয়! আর তা ছাড়া আমি একটা কাজে বিজি অনুমতি নেয়ার মতো একটা ম্যানার থাকা উচিত।

— সরি স্যার আসলে আজ আমি কাজ করতাম তবে আমার সমস্যা শুরু হয়ে গেছে। তাই আমার ছুটির প্রয়োজন। প্লিজ স্যার আপনি আমার ছুটি টা এপ্রুভ করে দিন। প্লিজ!

— ছুটি চাই? কি কারনে? কারন ছাড়া তো ছুটি দেয়া যায় না।

— স্যার এই সমস্যার কথা আপনাকে বলা যাবে না। আপনি বুঝতে পারবেন না‌। প্রতিমাসেই এই সমস্যা আমার হয়।

— ওহহ বুঝতে পেরেছি। কতদিনের জন্য ছুটি প্রয়োজন?

— স্যার আমার তো বেশি দিন না যাস্ট ১৮ দিনের জন্য ছুটি লাগবে।

— ওয়াট? এসব কি বলছেন! প্রতি মাসের সমস্যার জন্য আপনার এতো দিনের ছুটি কেনো লাগবে?

— এটাই তো আপনি বুঝবেন না। প্লিজ দিয়ে দিন না ছুটি আমার প্রতি মাসেই এমন হয়। অনেক জ্বালায় আছি আমি। আপনি তো পুরুষ মানুষ আপনি এই সব বুঝতে পারবেন না।

— দেখুন এতো দিনের ছুটি তো দেয়া যাবে না। আর আপনি ছুটিতে থাকলে আপনার কাজ কে করবে?

— স্যার আমার দিকটা একটু ভেবে দেখুন। আমি সত্যি বলছি আমি ডক্টর দেখিয়ে নিবো। প্লিজ!

— ওকে আপনি যান।

— সত্যি স্যার? আপনি মানুষ না মহা মানুষ আপনি। আপনার মতো বস আমি আমার লাইফে আর দুটো দেখিনি। আপনাকে কিছু বলার আগেই আপনি সব বুঝতে পেরে যায়। আপনি মহান স্যার মহান!

— হয়ে গেছে!

— কি হবে স্যার?

— আপনার ফালতু বকবক?

— না স্যার আমার কথা একটাও ফালতু নয় আপনি নিজেও জানেন না আপনি কথাটা….!

— শার্ট আপ। আর একটাও বেশি কথা যদি আপনি বলেন তো আপনাকে সারা জীবনের জন্য ছুটি দিয়ে দিবো। গেট আউট।

— কিন্তু স্যার আমি আপনাকে…!

— বললাম না যেতে। গো আউট।

— জ্বি স্যার।

অয়নের ঝাড়ি খেয়ে ঈশা মুখটা ফ্যাকাসে করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন মাথায় হাত দিয়ে আছে। পুরো অফিসের মধ্যে এই একটা বাচাল মেয়ে আছে। যে মাথা খারাপ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। অয়ন গ্লাস থেকে পানি পান করতেই অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— মেয়েটা সবার সাথে এমন করে কথা বলে নাকি আপনার সাথেই এমন করে কথা বলে?

— কি জানি অফিসের অন্য সকলের সাথে তো তেমন কোনো কথাই বলে না। কাজ তো ঠিক মতোই করে। কি জানি আমার সামনে আসলেই বকবক শুরু হয়ে যায়।

— মনে হয় আপনাকে পছন্দ করে ও। তাই তো আপনার সাথে কথা বলার বাহানা খুঁজে।

— করুক। তাকে আমার কি? দিন শেষে সব গুলোর কাছেই অর্থ ইমপ্রটেন্ট হয়ে যাবে। এটাই নিয়ম।

— হয়তো বা হ্যাঁ আর নয়তো না।

— আচ্ছা কাজের কথায় আসি ঈশার অবর্তমানে তুমি কাজ করতে পারো। এতে করে আমার টাকা ও পরিশোধ হবে। আর তুমিও রক্ষিতার দায় থেকে মুক্তি পাবে।

— জ্বি স্যার।

— ম্যানেজারের থেকে সব কাজ শিখে নাও। আমি ওনাকে কল করছি।

* অয়নের কথা শুনে অধারার মুখে হাসি ফুটলো। অধরা এটাই চাইতো কি করে নিজের কাঁধের উপর থাকা বোঝাটা হালকা করা যায়। আর অয়ন তো আজ তাকে সেই সুযোগটাই দিলো। এই সুযোগটা সে পাবে তা অধরা আশা করেনি। অয়ন কাজ শেষ করে লাঞ্চের সময় খাবার খেতে বসলো। কেবিন থেকে বাহিরে তাকাতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছে এখনো। “লাঞ্চের সময় ও কাজ করছে তবে কি অধরা খাবার নিয়ে আসেনি”? অয়ন কিছু একটা ভেবে অধরাকে ডাকলো। মিনিট খানেকের মধ্যেই অধরা কেবিনে চলে আসে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে শক্ত গলায় বলল

— এখন তো খাবার সময়। তুমি খাবার সময় কাজ করছো কেনো? আগে খাবার খেয়ে নাও। তারপর কাজ।

— না স্যার আজ আমি খাবার নিয়ে আসিনি। আর তাছাড়া আমার এই সবে অভ্যাস আছে। আপনি খাবার খেয়ে নিন।

— এই নাও নিচে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে খাবার খেয়ে নাও। আমার কথা বলো তা হলেই হবে। যাও

অধরা অয়নের কেবিনে প্রবেশ করার সময় তার মুখে একটা হাসির ঝলক ছিলো। অধরা ভেবেছে অয়ন তাকে সাথে নিয়ে খাবার খাবে। কিন্তু অয়ন তো তাকে ক্যান্টিন থেকে খেতে বলল। আজ অয়নের পাশে বসে খাবার খাওয়ার অধিকারটুকুও যেনো তার নেই। অধরা মুখটা ফ্যাকাসে করে অয়নের কেবিনে থেকে বেরিয়ে গেলো। অয়ন অধরার দিকে না তাকিয়ে আপন মনে খাবার খেতে লাগলো। খাবার শেষ করে আবার ও কাজ করতে লাগলো অয়ন। সন্ধ্যার দিকে কাজ শেষ করে অয়ন অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে অয়ন দেখতে পায় তার গাড়ির সামনে একটা মেয়ের সাথে কিছু ছেলে রাস্তার পাশে নোংরামি করছে। দূর থেকে অয়ন ছেলে গুলোর মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। তবে এই টুকু বোঝা যাচ্ছে মেয়েটির উপর জোর করা হচ্ছে। অয়ন দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে মেয়েটির কাছাকাছি আসতেই অয়ন চমকে যায়। অয়ন দেখতে পেলো এই মেয়েটি আর কেউ না বরং………………….

#চলবে………………………….

[ গতকাল গল্প দিতে পারিনি। আপনারা জানেন হয়তো আমি অসুস্থ। তবুও চেষ্টা করেছি গল্পটা ভালো করে লিখতে। জানি না কেমন হয়েছে। নেক্সট পার্টে চমক আছে। অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here