আসক্তির শেষ বেলায় তুমি পর্ব ৬

0
735

#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন দেখতে পেলো এই মেয়েটি আর কেউ না বরং অধরা। অধরাকে দেখতেই অয়নের মুখের উপর চিন্তার ছাপ চলে আসে। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে অধরার দিকে এগিয়ে যেতেই অধরা দৌড়ে এসে অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। অয়নকে জড়িয়ে ধরে অধরা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল

— প্লিজ অয়ন হেল্প মি। এই লোক গুলোর থেকে আমায় বাঁচাও প্লিজ!

— শান্ত হয়ে যাও আমি আছি এখানে।

অয়ন অধরাকে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলল। তবে অধরা অয়নের হাত ধরে আছে। অয়নকে ছাড়া সে যাবে না। অয়ন অধরাকে বার বার বলছে গাড়িতে গিয়ে বসতে আর অধরা অয়নের হাত ধরে বার বার টানছে তার সাথে চলে যাবার জন্য। হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে বলতে লাগলো

— কিরে কাকা মেয়েটা তোর কিছু হয় নাকি? জীবনের মায়া নেই? রাস্তায় ফেলে কোপাবো!

ছেলেটার কথাটা শুনে অয়ন বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— এই মেয়েটা আমার কে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে এটাই সে একজন নারী আর তার সম্মান রক্ষা করাটা আমার দায়িত্ব।

— আচ্ছা তাই নাকি? বুকের সাহস আছে তোর। দেখ এই মেয়েটা আমাদের কিছু না। চল মেয়েটাকে নিয়ে আয় এক সাথে মস্তি করি।

— উফফফ! আল্লাহ কি তোদের উপরের কম্পারমেন্ট ফাঁকা দিয়েছে নাকি? এক বার বললাম না নারীর সম্মান রাখা আমার দায়িত্ব। মস্তি যখন করতেই হবে আয় না আমার সাথে একটু মস্তি করে নে। আমার ও শরীরে মরিচা ধরে গেছে রে অনেক দিন ধরে মস্তি করা হয় না আমার। আয় একটু মজা নিয়ে নেই আজ।

— এই শা* পাগল আছিস নাকি? ছেলে হয়ে ছেলের সাথে কি করে মস্তি করবো?

— সেই আইডিয়া তো আমি তোদের দিবো। আয় তোদের এক একটা স্টেপে বোঝাই।

* অয়ন কথাটা বলা শেষ করতেই দুম করে ছেলেটার নাকের উপর সজোরে একটা ঘুষি মেরে দিলো। আচমকা নাকের উপর আঘাত পরার কারনে ছেলেটা নাক চেপে মাটিতে বসে পড়লো। একজনকে পড়ে থাকতে দেখে বাকি তিনটি ছেলে দৌড়ে অয়নের দিকে এগিয়ে এলো। অয়ন ওদের দিকে তাকিয়ে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে এটা কোনো ফ্লিম না যে একাই তিনটিকে শেষ করবে। এটা রিয়েল লাইফ যদিও জিম করে বডিকে ফিট রেখেছে অয়ন তবুও প্রটেকশন এর জন্য দৌড়ে রাস্তার পাশ থেকে একটা রড নিয়ে ছেলে গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো অয়ন। ছেলে তিনটা যে নেশায় ভুত হয়ে আছে এটা অয়ন তখন বুঝতে পারে যখন একটা ছেলের মাথায় আঘাত করে। আঘাত করার সাথে সাথে ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। অয়ন একে একে তিনটিকে মাটিতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ির সামনের সাইডে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— নেক্সটাইম কম নেশা করে আসবি ওকে। ভাবলাম একটু ফ্লিমি স্টাইলের হিরোদের মতো ফাইট করবো তা আর আমার কপালে হলো না। এই শরীর নিয়ে আসছে আমার সাথে ফাইট করতে! আজব পাবলিক।

অয়ন কথাটা বলতেই তাচলছিল্যকর হাসি দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। অধরা চুপ হয়ে অয়নের পাশে বসে আছে। চোখে মুখে তার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। অয়নকেও উদ্দেশ্য করে কিছু বলছে না সে। অয়ন গাড়ি নিয়ে বাড়ির সামনে চলে আসলো। বাড়ির সামনে এসে অধরাকে উদ্দেশ্য করে অয়ন বলল

— গাড়ি থেকে নেমে পড়ো আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।

— স্যার আমি আপনার সাথেই বাড়িতে যাই?

— ওকে ঠিক আছে।

অধরা এখন ও ভয় পাচ্ছে। অয়ন অধরাকে নিয়েই গাড়ি পার্ক করে অধরাকে সাথে করে বাড়ির মধ্যে ঢুকলো। অধরার ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। আজ কাল পুরুষ নামে নর পশুর দেখা মিলে অহরহ। যারা একটা নারীকে একা পেলেই মনে করে তাদের সামনে রয়েছে কোনো লোভনীয় খাদ্য। লোভ সামলাতে না পেরে ঝাপিয়ে পড়ে সেই নিরিহ নারীর উপর। একটাবার ও ভেবে দেখে না এই পশুরা যে এই ঘটনাটার পর মেয়েটির জীবন কেমন হবে? কি নিয়ে বাঁচবে সে? দিন শেষে এই পশু গুলোই নিজেদেরকে পুরুষ দাবি করে কোর্টের সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে চলে। একটা কথা আমাদের সকলের মাথায় রাখা উচিত আজ এই দুনিয়াতে আমরা একটা নারীর গর্ভ থেকেই এসেছি। একটা নারীর গর্ভ থেকে এসে অন্য একটা নারীকে অসম্মান করাটা সেই গর্ভটাকে অসম্মান করার সামিল। মাইন্ড ইট। যাই হোক গল্পে আসি, অয়ন রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে ফিরতেই অয়ন দেখতে পায় অধরা ঠাঁই বসে আছে। অয়ন অধরার পাশে দাঁড়িয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এমন ভাবে বসে আছো কেনো? যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। খাবার খাবে না নাকি!

অয়ন কথাটা বলতেই অধরা আবার ও অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অয়ন একটু অবাক হয়ে যায় অধরার এমন আচরনে। অধরা কান্না করে দিয়ে অয়নকে বলতে লাগলো

— আজ যদি আপনি সময় মতো না আসতেন তবে আমার যে কি অবস্থা হতো তা আর…!

— আরে কুল এখন তো আর কোনো বিপদ নেই। নিজেকে শান্ত রাখো আর এটাকে ভুলে যাও।

— কি করে ভুলে যাবো আমি? ছেলে গুলো আমায় যে ভাবে আটকে রেখেছিলো আমি এক মুহুর্তের জন্য এটাই ভেবেছি আজকেই আমার শেষ দিন।

— আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ কারন আমি সঠিক সময় পৌচ্ছাতেই পেরেছি। আগামীকাল থেকে আমার সাথে অফিস যাবে আর আমার সাথেই ফিরবে ওকে।

অয়নের কথা মতো অধরা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অতঃপর অয়ন আর অধরা এক সাথে ডিনার শেষ করে ঘুমাতে চলে যায়। ভোরের আলো ফুটতেই অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা বিছানা থেকে উঠে পড়তেই দেখতে পায় অয়ন সোফার উপর শুয়ে আছে। অধরা বিছানা থেকে নেমে অয়নের কাছে চলে আসে। অয়নের হাতের কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। রক্ত এসে জমেও গেছে ক্ষত স্থানে। গতকাল রাতেই হয়তো এক আঘাতটা তার হাতে লেগেছে। অধরা অয়নের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে অয়নের হাতে চুমু দিলো। এই মানুষটাকে হারিয়ে অধরা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে আসলে সে কি হারিয়েছে। এমন মানুষ সবাই পায় না। আর যারা পায় তারা আগলে রাখতে যানে না। অধরা আফসোস হচ্ছে অয়নের জন্য। আর এই আফসোসটা হয়তো তার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে। অয়ন চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা তার হাত ধরে বসে আছে। অয়ন হকচকিয়ে উঠে পড়ে অধরার হাতের মাঝে থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। অধরাকে নিজের কাছে দেখে অয়ন প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলল

— কি হয়েছে? তুমি হঠাৎ করে আমার হাত ধরে বসে আছো কেনো?

— তোমার হাতে যখম হয়ে আছে। সেটা দেখেই হাতটা ধরলাম। সরি

— হুম ইটস ওকে। ফ্রেশ হয়ে নাও অফিস যেতে হবে।

* অয়ন সোফা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন খাবার খেতে বসলো। যদিও অয়ন খাবার খাচ্ছে তবে মনের মধ্যে অধরার কথা চলছে। অধরা তার পাশে বার বার চলে আসে কেনো? “এতো অবহেলা করি তাও কেনো আমার কাছে থাকতে চায়? আবার কি কোনো মায়ায় ফেলতে চাইছে ও? নাকি আমি নিজেই ভুল ভাবছি”! কথাটা আপন মনে বলল অয়ন‌। খাবার শেষ করতেই অয়ন অধরাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এমন সময় দুম করে অয়নের সামনে চলে আসে কেউ একজন। অয়নের সাথে ধাক্কা লাগতেই মেয়েটি পড়ে যেতে নেয়। অয়ন মেয়েটিকে সেফ করতে মেয়েটির কোমর ধরে ফেলে। মেয়েটির মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরে যেতেই অয়ন চমকে উঠলো। অয়ন বুঝে উঠতে পারলো না এই মেয়ে হঠাৎ করে তার বাড়িতে কি করছে? অয়ন নিজের সামনে দেখতে পায়………………..

#চলবে……………………….

[বেশি বেশি লাইক করুন, আর কমেন্ট করুন। Nc, Nice, Next এই সব কমেন্ট ভালো লাগে না। গঠনমূলক মন্তব্য করুন। যেটা পড়ে আমার ও ভালো লাগবে। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here