আসক্তির শেষ বেলায় তুমি পর্ব ১০

0
832

#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* অয়ন বিছানার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় অধরা নেই। এতো ভোরে অধরা কোথায় গেলো? প্রশ্নটা অয়নের মাথায় চেপে বসেছে। অয়ন দ্রুত সোফা থেকে উঠে পড়ে ব্যাল্কনিতে ও ছাদে গিয়ে ভালো করে অধরাকে খুঁজলো। তবে অধরাকে কোথাও পেলো না। অধরাকে না দেখতে পেয়ে অয়নের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে প্রায়। কি করবে বা কেমন করে অধরাকে ফিরে পাবে? কিছুই বুঝতে পারছে না অয়ন। অয়ন নিজের রুমে ফিরে আসতেই দেখতে পায় টেবিলের উপর একটা চিরকুট পড়ে আছে। অয়ন চিরকুট হাতে নিতেই দেখতে পায় অধরার হাতে লেখা চিরকুট এটা। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে “অয়ন আমি তোমার জীবন থেকে অনেক আগেই হারিয়ে গেছি। আজ থেকে তোমার বাড়ি থেকেও বিদায় নিলাম। আমি চাই না আমার কারনে তোমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হোক। আমি তোমার সাথে প্রতারনা করিনি। পরিবারের কথা ভেবে আমি তোমার পবিত্র ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। তুমি নিজের জায়গা থেকে বিচার করছো বলে আমায় প্রতারক ভাবছো। একটি বার যদি আমার জায়গা থেকে ভেবে দেখতে তবে তোমার চিন্তার পরিবর্তন ঘটে যেতো। ঈশা মেয়েটা তোমার জন্য পাগল। ঈশাকে ভালোবাসা দিও। ওর সাথে নতুন করে নিজের জীবন শুরু করো। একটা কথা বলতে চাই আমি। জানি আমার কথার কোনো মূল্য হয়তো তোমার কাছে এখন নেই। আর তাছাড়া এই কথাটা বললেও কোনো লাভ নেই। তবুও বলছি, আজ ও তোমায় ঠিক ততটাই ভালোবাসি যতটা আগে বাসতাম। ক্ষমা করে দিও তোমার রক্ষিতাকে। যে তোমার ঋণ পরিশোধ ও করতে পারলো না। ভালো থেকো”।

অধারার চিঠিটা পড়ে অয়ন নিশ্চুপ হয়ে যায়। চিঠিটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে অয়ন সোফার উপর বসে পড়লো। সেই এক অনুভূতি আবার ও তার মনকে নাড়া দিচ্ছে প্রবল ভাবে। নিজের খুব কাছের কিছু একটা হারিয়ে গেছে হয়তো। মায়া হয়তো একেই বলে। প্রিয়জন দূরে চলে গেলে কলিজা মনে হয় সাথে করে ছিঁড়ে নিয়ে যায়‌। অয়ন নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না। ফ্রিজ থেকে ওয়াইন বের করে ঢগঢগ করে গিলে দিলো সে। মদ্যপান করেই প্রিয়জনকে ভুলে থাকা শিখেছে সে। আজ আবার ও সেই প্রিয়জন তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো। অয়ন সোফায় বসে একহাত ভাঁজ করে নিজের মুখের উপর দিয়ে হেল দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ করেই অয়ন অনুভব করলো কোনো এক মেয়েলি হাত তার হাতের উপর পড়েছে। এক মিনিটের জন্য অয়নের মনে হতে লাগলো এটা অনাদর হাত নয় তো! অয়ন হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়ে নিজের পাশে তাকাতেই দেখতে পায় ঈশাকে। ঈশাকে নিজের রুমে দেখে অয়নের মুখের উপর থেকে খুশির ঝলকটা উবে যায়। অয়ন ঈশাকে দেখে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলল

— আপনি আবার আমার বাড়িতে কেনো? আপনাকে বলেছিলাম না আমার সামনে ভূল করেও আর কখনও আসবেন না! কথা কি কানে যায় না আপনার?

— আমি জানি স্যার আপনি আমার উপর অনেকটা পরিমানে রেগে আছেন। আর রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। কারন আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আমি এখানে আপনার সাথে কোনো ধরনের সিনক্রিয়েট করতে আসিনি। আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।

— ক্ষমা! কি কারনে ক্ষমা চাইছেন? সেটা তো আগে বলুন।

— ঐ দিন অধরাকে আর আপনাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করার কারনে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন।

— হাহাহাহা আপনার নারীরা আসলেই পারেন না এমন কিছু নেই। দুম করে কাছে চলেও আসতে পারেন আবার কোনো কথা না ভেবেই দূরে চলে যেতে পারেন। যাকে নিয়ে আপনি ঐ মন্তব্য গুলো করেছেন। সেই মানুষটি আর এখানে নেই। চলে গেছে। ক্ষমা যদি চাওয়ার থাকে তবে তার থেকে চেয়ে নিন।

— মানে? অধরা হঠাৎ করে আবার কোথায় চলে গেলো? আপনি দেখেনি ও কোথায় গেছে? আর তাছাড়া যেতেই বা দিলেন কেনো?

— দেখুন মিস আপনার ফালতু প্রশ্নএর উত্তর দেয়ার মতো মুডে আমি নাই। দয়া করে আসতে পারেন।

অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে ধমক এর সুরে কথাটা বলল। অয়নের ধমক খেয়ে ঈশা নিশ্চুপ হয়ে যায়। অয়নের মুড এখন ভালো নেই। অয়নকে কিছু বলার থেকে না বলাটাই উত্তম। ঈশা অয়নের রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। অয়ন নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে ওয়াইন পান করছে আর অধরার কথা ভাবছে। যে যেতে চায় তাকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারোর থাকে না। অয়ন হয়তো চেষ্টা করতে পারতো অধরার খোঁজার তবে সেই চেষ্টা করার থেকে না করাটাই উত্তম। অধরা তার থেকে পালিয়ে গেছে। ওকে খোঁজার চেষ্টা করাটা নিছক বোকামি মাত্র।

* দেখতে দেখতে কেটে যায় একটি মাস। একটি মাস ধরে অয়নের সাথে অধরার কোনো যোগাযোগ হয়নি। সময়ের সাথে সাথে বললো গেছে অনেক কিছু। আগামীকাল অয়ন আর ঈশার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। এই একটি মাস অয়নের উপর দিয়ে অনেক ঝড় গিয়েছে। পরিবারকে সন্তুষ্ট করতেই অয়ন বাধ্য হয় ঈশাকে বিয়ে করতে। অয়ন ঈশাকেও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে যে এই বিয়েটা হতে পারে না। তবে ঈশা তো অয়নের কোনো কথাটাই বোঝার চেষ্টা করছে না। যাই হয়ে যায় অয়নকে তার চাই। গায়ে হলুদ পর্ব শেষ হয়ে গেছে। অয়ন নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নিজের বিছানায় বসতেই অয়নের ফোনে কল চলে এলো। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ঈশা কল করেছে। অয়ন প্রথমবার কলটা পিক করলো না। ঈশা আবার ও কল দিলো। অয়ন মুখটা গম্ভীর করে কলটা পিক করতেই ওপার থেকে ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কি করছেন এখন?

— এই তো ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। কেনো?

— না আপনার সাথে আমার একটা কথা বলার ছিলো।

— হুম বলো কি বলবে?

— আসলে আমি আপনাকে আপনি থেকে তুমি করে বলতে পারি কি?

অয়ন ঈশার কথাটায় খানেকটা নিশ্চুপ থেকে বলল

— হুম বলো। সমস্যা নেই।

— আই লাভ ইউ। আমার চাওয়া পাওয়া বলতে শুধু মাত্র তোমার ভালোবাসাটাই চাই। প্লিজ একটু ভালোবাসা আমায় দাও না!

— দেখো ঈশা সবটা জানার পরেও যদি এমন বাহানা করো তবে আমার আর কিছু বলার থাকে না। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমার হৃদয়ের সবটা জুড়ে কার বিচরণ। তবুও অযথা কথা বাড়িয়ে যাচ্ছো কেনো?

— সত্যি অয়ন অধরার মতো ভাগ্যবতী নারী হবার লোভ আমি সামলাতে পারি না। বড্ড হিংসে হয় ওকে নিয়ে। কি এমন করেছে তোমায়! যার কারনে এখনও তোমার মাঝে জায়গা করে আছে?

— এটাই ভালোবাসা। যা কোনো যুক্তি দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না।

— হুম।

* রাতে আরো অনেক সময় ধরে কথা বলার পর অয়ন কলটা কেটে দিলো। অয়নের পরিবার জানে অয়ন আর ঈশার বিয়ে হচ্ছে। তবে তারা এটা জানে না যে তাদের সন্তানের মনের মধ্যে এখনও অন্য কেউ বসে আছে। অয়ন বিছানায় শুয়ে পড়ে মাথার উপর ঘুরতে থাকা পাখার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। আজ কেনো জানি অধরাকে দেখতে ভিশন ইচ্ছে করছে তার। বুকের মাঝে সৃষ্টি হয়ে আছে এক গভীর ক্ষত। এই ক্ষতটা যেনো অয়নকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিচ্ছে। একটিবার অধরাকে দেখতে পাওয়ার নেশায় অয়ন পাগল প্রায় হয়ে আছে। সারা রাত অয়ন দুটি চোখের পাতা এক করতে পারলো না। আগামীকাল অয়ন অন্য কারোর হয়ে যাবে। চারদিনের জন্য নতুন এক সম্পর্কে মায়ায় বাধা পরবে সে। হয়তো একটু একটু করে অধরার জায়গাটা অন্য কেউ দখল করে নিবে। তবে সত্যি কি ভালোবাসার মানুষটির জায়গা কখনও কেউ দখল করতে পারে?

* ভোর হতেই অয়ন বিছানা থেকে উঠে পড়লো। আজ তার অনেক কাজ। ফ্রেশ হতে হবে। রেডি হয়ে ঈশার বাড়ি যেতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান ঈশার বাড়িতেই আয়োজন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে অয়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নতুন বর এর সাজে অয়নকে দেখতে অসাধারণ লাগছে। আশেপাশে থাকা সবাই প্রচন্ড খুশি আজ। অবশেষে অয়নের বিয়ে হতে চলেছে। অয়ন বরের আসনে বসার সাথে সাথেই হঠাৎ করে……………

#চলবে………………………..

[নেক্সট পর্বে গল্প শেষ করে দিবো। আশা করি সবাই সাথে থাকবেন। অন্তিম পর্ব আপনাদের রিস্পন্স এর উপর নির্ভর করবে কত তারাতাড়ি দেয়া যায়। তাই বেশি বেশি লাইক কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here