আসক্তির শেষ বেলায় তুমি পর্ব ৪

0
848

#আসক্তির_শেষ_বেলায়_তুমি
#পর্বঃ০৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন অধরাকে নিজের বুক থেকে এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে সজোরে অধরার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়টা বেশ জোরে হবার কারনে অধরা অয়নের থেকে খানেকটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো। অধরা গালের উপর হাত রেখে মাথা নিচু করে আছে। অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারন করে আছে। এখনি হয়তো অয়নের চোখ থেকে রক্ত বেরিয়ে যাবে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে ভারী কন্ঠে বলতে লাগলো

— আমি নিজের জেদ পূর্ণ করার জন্য তোমায় এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি। তোমার সাথে কোনো প্রকার সম্পর্কে জড়ানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।

— তাই না! তবে কি কারনে আমায় এখানে নিজের কাছে রেখেছেন? আমি বাধ্য হয়ে আপনার এখানে আছি। আপনার আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক না থাকার পরেও আমি রক্ষিতার উপাধি নিয়ে বেঁচে আছি। নিজের স্বামী পর্যন্ত আমায় আপনার রক্ষিতা বলে জানে।

— তো! তুমি যা সবাই তো ঠিক তাই জানবে! আর আমি তো এটাই চেয়েছি। তোমার স্বামী ও তোমায় একটা রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করুক। আর তুমি তিলে তিলে কষ্ট পেতে পেতে আমার সামনে মারা যাও।

— তাই। একে বারে মেরে ফেলুন না। বিশ্বাস করুন এই জীবনটা নিয়ে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। আমি আর পারছি না এই সব সহ্য করতে। মরে যেতে ইচ্ছা করে বার বার

— তোমাকে এতোটা সহজ মৃত্যু তো আমি হতে দিবো না অধরা। তোমাকে ঠিক ততটাই কষ্ট ভোগ করতেন হবে যতটা কষ্ট আমি দিনের পর দিন সহ্য করেছি। তোমার ঠিক ততটাই চোখের জল ফেলতে হবে যতটা আমি কান্না করেছি। এতোটা সহজে তোমার মুক্তি নেই।

— আমি কি করতাম বলতে পারো? এক দিকে আমার বাবা মা। আর অন্য দিকে তুমি। আমি কি করে নিজের বাবা মা কে ছাড়বো? যারা আমায় এই পৃথিবীতে এনেছে তাদেরকে আমি ধোঁকা দিবো কেমন করে? বলে দাও তুমি

— বাবা, মা! কোন বাবা মা এর কথা বলছো তুমি? যারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না! ঐ বাবা মা এর কথা বলছো যারা নিজের মেয়ের খারাপ সময়ে তোমার দিক থেকে কে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তোমাকে অন্যের বাড়িতে রক্ষিতা বানিয়েছে! তাদের জন্য তুমি আমায়…! আসলে কি বলো তো ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটাই আমার জন্য তোমার ছিলো না। তাই তো ঐ দিন কুকুরের মতো ফিরিয়ে দিয়েছিলে আমায়। আর আজ নিয়তি তোমায় এখানে টেনে নিয়ে এসেছে। আমি চাইলে তোমার সাথে এর থেকেও খারাপ কিছু করতে পারি তবে ইচ্ছে নাই।

— তোমার আছে তোমার পরিবার যতটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক আমার কাছেও আমার পরিবার ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা হয় বলতে পারো তবে আমার পরিবারকে নিয়ে নয়।

— হাহাহাহা ফানি গার্ল তুমি। পরিবার তখনি গুরুত্ব পায় যখন আমাদের জন্য তারা ত্যাগ করতে পারে। পরিবার তখনি মূল্য পায় যখন ভালো বিজনেস আর টাকা ওয়ালা অমানুষের সাথে নয়, একটা সাধারণ লোকের সাথে সুখী দেখতে চায়। আসছে পরিবারের ঢোল পিটাতে।

অয়ন কথাটা বলতেই অধরাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের সামনে থেকে সরিয়ে দিলো। আমাদের সমাজে এমন অনেক গল্প শোনা যায় যে পিতা মাতা উচ্চ ডিগ্রীধারি সরকারি চাকরিজীবী অমানুষের সাথে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ে দেয়ার পর সেই অমানুষটার হাতে তাদের মেয়ের জীবনের সমস্ত সুখ খুন হবার মাধ্যমে পেয়ে যায়। আজ কাল কারন বাবা মা ও বটে। সন্তানের প্রকৃত সুখ টাকায় নয় প্রকৃত মানুষের মাঝে থাকে। এই ছোট্ট কথাটা সচরাচর বুঝতে পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। অয়ন ব্যল্কনির প্রান্তরে এসে একটা সিগারেট ধরালো। চোখ থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে অনেক দিন পর নোনা জলের ছাপ উঁকি দিয়েছে তার। অয়ন আজ আর এই নোনা জলটুকুকে কোনো বাধা দিচ্ছে না। ঝড়ে যাক হৃদয়ের থাকা কিছু অব্যক্ত ভালোবাসার কষ্ট। নিজেকে হালকা করে আবার রিচার্জ করতে হবে কারন এই সমাজে মানুষের থেকে অমানুষের দাম সর্বোচ্চ!

* ভোরের আলো ফুটতেই অয়ন সোফার উপর থেকে উঠে পড়লো। গতকাল রাতে এই ব্যাল্কনিতেই রাত্রি যাপন করেছে সে। খোলা বিশাল আকাশের মাঝে নিঃসঙ্গ চাঁদকে দেখতে দেখতে কখন যে চোখের পাতা এক হয়ে গেছে মনে নেই তার। ফ্রেশ হয়ে অয়ন অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিলো। রুমে ফিরে কোথাও অধরাকে দেখতে পেলো না সে। অয়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় অফিসে। অফিসে এসে নিজের কেবিনের দরজার সামনে পৌচ্ছাতেই হঠাৎ করে অয়নের কেবিনে থেকে কেউ একজন বেশ দ্রুত গতিতে ছুটে বেরিয়ে আসলো। মেয়েটা অসাবধানতার কারনে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে অয়নকেই একটা ধাক্কা মেরে দিলো। অয়নের সাথে মেয়েটির ধাক্কা লাগতেই অয়ন মেয়েটিকে ধরে ফেলল। হুট করে অয়নের সামনে চলে আসায় অয়ন মেয়েটিকে আগে থেকে দেখতে পায়নি। মেয়েটি অয়নের দিকে তাকাতেই ভয়ে চুপসে যায়। অয়নকে উদ্দেশ্য করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো

— সরি স্যার। আমি ইচ্ছে করে আপনার উপর এসে পরিনি। বিশ্বাস করুন আমি আপনার কেবিনের সামনেই ছিলাম। ভিতরে ও যাইনি।

— শার্ট আপ। আপনার থেকে এতো কিছু তো আমি জানতেই চাইনি। শুধু শুধু বকবক করছেন কেনো?

— সরি স্যার। আর করবো না বকবক। আমি আস্তে পারি কি তবে?

— তো আপনাকে ধরে রেখেছে কে?

— স্যার মানে আপনার হাত আমার কোমরের উপর তো কি করে যাই আমি! বুঝতেই তো পারছেন!

মেয়েটির কথা শুনে অয়ন চমকে উঠলো। অয়ন মেয়েটির কোমরে দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সত্যি অয়নের হাত তার কোমর ধরে আছে। অয়ন খানেকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে দ্রুত মেয়েটির কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। মেয়েটি অয়নের হাত থেকে ছাড়া পেতেই পা টিপে টিপে অয়নের সামনে দিয়ে চলে যেতে লাগলো। অয়ন পেছন থেকে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই মিস আপনার নামটা কি?

অয়নের কথা শুনে মেয়েটি থমকে যায় আর পিছন ফিরে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে

— আর স্যার আপনি ভুলে গেলেন! আমি ঈশা। ঐ যে নতুন জয়েন করলাম। ইন্টারভিউ রুমে যে আপনি আমার উপর রেগে গিয়ে ছিলেন বেশি কথা বলার জন্য! মনে পড়েছে কি? আরে আপনি আমার কথা কি করে ভুলতে পারেন? আমার কথা আজ উবদি কেউ কখনও ভুলতেই পারে না স্যার। কারন আমি তো আর সাধারণ কেউ না। আমি একজন….!

— হ্যাঁ মনে পড়েছে। আপনি এখন আসতে পারেন।

অয়ন কথাটা বলতেই দ্রুত নিজের কেবিনে চলে আসলো। এই মেয়েটা একটা বাচাল ধরনের মেয়ে। এতো কথা মানুষ কি করে বলতে পারে? অয়ন বুঝতে পারে না। ঈশা ইন্টারভিউ দিতে এসে ওকে তা প্রশ্ন করা হয় না কেনো সে তো সেই উত্তর দিবেই সেই সাথে আরো হাজারটা কথা বলবে। অয়ন তো ভিশন বিরক্ত হয়ে যায় ঈশার উপর। অয়ন ল্যাপটপ অন করতেই হঠাৎ করে ঈশার কথা তার মাথায় চলে আসলো। অয়ন ভাবছে “অয়নের অনুপস্থিতে এই ঈশা এখানে কি করছিলো”? অয়ন কিছু সময় ঈশার কথা ভেবে অতঃপর নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। কিছু সময় কাজ করার পর দরজার ওপার থেকে কেউ একজন শান্ত গলায় অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— স্যার আসতে পারি?

মেয়েলি কন্ঠস্বরটা অয়নের কানে আসতেই অয়ন খানেকটা চমকে যায়। অয়ন ল্যাপটপের দিকে থেকে মুখটা তুলে দরজার দিকে তাকাতেই অয়নের ভ্রূ কুঁচকে উঠে। অয়ন দরজার ওপারে তাকাতেই দেখতে পেলো………………………

#চলবে………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here