আমি আপনিতে আসক্ত পর্ব ২

0
1412

#আমি_আপনিতে_আসক্ত (২)
#ফারহানা_জান্নাত

“ঠাস”

–হ্যা চড়টা আরুহির গালে পড়ছে, তবে চড়টা তার বাবা মারে নাই। আরুহি কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে তার মা তাকে টেনে তুলে চড়টা মারছে। আবার ও একটা চড় মারবে তার আগে আরুহির বাবা হাতটা টেনে ধরে।

“একটা পালিয়ে গিয়ে আমাদের অপমান করছে। এখন তুমি ও মানসম্মান ডুবনোর জন্য উঠে পড়ে লাগছো? তোমরা কি আমাকে শান্তি মতো বাঁচতে দিবে না?”

“মা”

“একদম আমাকে মা বলে ডাকবে না। বড় মেয়ে তো বিয়ে থেকে পালিয়ে গেছে এখন তুমি আবার সেই একই পথে হাটতিছো। হ্যা হবে না কেনো বড় বোনের মতোই তো হয়ছো তাই না।”

“তুমি চুপ করো। আরুহি পালিয়ে যায় নি তো, ও মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা আমার কাছে বলতে চাইছে। তাই আমাদের সবটা শোনা উচিত। দেখো মেয়েদের সিদ্ধান্ত শোনার দায়িত্ব আমাদের। একটার থেকে সিদ্ধান্ত না শুনে বিয়ে দিতে গেছিলাম। দেখো না ৫টা বছর হয়ে গেলো, একটা বার খোঁজ পাইছো মেয়ের?”

“আয়ুশ আপনি কিন্তু মেয়েটাকে মাথায় তুলছেন। আপনার বড় মেয়ের থেকে কিন্তু বিয়ের আগে শুনছি যে কোনো রিলেশন আছে কিনা। কিন্তু আপনার মেয়ে খুব সুন্দর করে বলছি না মা আমার কোনো রিলেশন নাই।”

“মিতু চুপ করো প্লিজ। আমি আর এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইনা। এখন আরুহুকে নিয়ে ভাবো। মেয়েটার দিকে একবার ও তাকিয়ে দেখছো? শরীরের এর অবস্থা কি হয়ছে। ওর বোন যখন পালিয়ে যায় তখন ও অনেকটা ছোট ছিলো তাই ওকে এই বিষয় এ বলাটা মানায় না। আম্মু তুমি বলো ছেলেটা কে। আমি নাহয় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।”

“বাবা”

–আরুহির হিচকি উঠে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। এখন কথা ও ঠিক মতো বলতে পারতিছে না। মায়ের উপর ঢলে পরে। এবার মিতু (আরুহির মা) কিছুটা বিচলিত হয়ে মেয়েকে ধরে বিছানায় শুয়ে দেয়। সেন্স লেস হয়ে গেছে। আরুহির বাবা-মা দু’জনেই ডাক্তার তাই আরুহির মা মেয়ের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করে।

“মিতু আমাদের মেয়েটার কি হলো হঠাৎ”

“চিন্তা করবেন না। আরুহি অতিরিক্ত টেনশনে ছিলো সে জন্য এমন হয়ছে। দেখেন ঘুমের ইনজেকশন আছে একটা। সেটা আরুহিকে পুশ করে দেন। একটু মেয়েটা ঘুমাক, ৩-৪ দিন থেকে মেয়েটা ঘুমাইনি ঠিক মতো।”

–আয়ুশ ইনজেকশন এনে আরুহির হাতে পুশ করে দেয়। তারপর মিতুর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। মিতু এবার মুখে কাপড় দিয়ে কেঁদে উঠে। বড় মেয়েটাকে উনি একটু বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু মেয়েটা কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেলো। সেই গেলো যে আর একটা বার যোগাযোগ করে নাই।

“কেঁদো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আরুহির খেয়াল রেখো ওকে কষ্ট দিও না প্লিজ। তুমি তো জানো আমাদের আরুহি একটু নরম প্রকৃতির। ও একটুতেই কষ্ট পায়, আবেগ বেশি মেয়েটার। কিছু করার আগে বুঝার চেষ্টা করে না যে, এরপর তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। ভেবে চিন্তে কাজ করে না।”

“আমার ভয় হচ্ছে আয়ুশ, আমরা আরুহিকে আবার হারিয়ে না ফেলি।”

“কিছু হবে না কেঁদো না। আরুহি ঘুম থেকে উঠুক, সবটা শুনি তার থেকে আগে। মনে হয় কোনো ঝামালা হয়ছে নয়তো এমন হতো না।”

“হ্যা”

“আম্মু খেতে দেও”

“এই যে আপনার ছেলে আসছে, আপনি থাকেন আমি মাহির কে খাবার দিয়ে আসি।”

“যাও”

———————–

–আরুহি খান, পরিবারে বাবা-মা আর ছোট ভাই আছে বর্তমান। বড় বোন ছিলো ৫ বছর আগে পালিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। কিন্তু তার আর কখন ও খোঁজ পায়নি। মাহির এবার ক্লাস ৭ এ পড়ে। বাবা-মা, মামা-মামি, চাচা-চাচাতো ভাই সবাই ডাক্তার। তাই অনেকে ডাক্তার বাড়ি বললে বুঝতে পায় আয়ুশ খান এর বাড়ির কথা বলে। নিজেদের একটা নিজস্ব ক্লিনিক আছে তাদের। আর সেই সুবাদে আরুহির মামা-মামি, চাচা-চাচির ফেমেলি সবাই মিলে একটা বিল্ডিং এ থাকে। আরুহিরা ৪র্থ ফ্লোরে, চাচারা ৩য় ফ্লোরে আর মামারা ৫ম ফ্লোরে। বিল্ডিং টা ৬ষ্ট ফ্লোর, বড় বাবারা ২য় ফ্লোর এ থাকে আর বাকি ২টা ফ্লোর ভাড়া দেওয়া আছে।

–মিতু গিয়ে ছেলেকে খাবার দেয়। খাবার খাওয়ার সময় মাহির বলে,

“আম্মু তোমার চোখমুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো? আব্বু কি তোমাকে বকা দিসে?”

“পাগল ছেলে তোর বাবা আমাকে বকবে কোন সাহসে শুনি।”

“তাহলে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কান্না করছো।”

“না বাবা কিছু হয়নি। তোর স্কুলের কি খবর? এক্সাম কবে?”

“ডিসেম্বর মাসে, আরো দুইমাস সময় আছে। আম্মু শিতের জামা কিনতে হবে।”

“কয়দিন পর যাস, আরুহি কে সাথে নিয়ে যাস ও তো এখন ও কিনে নাই।”

“ওহ হা আপু কোথায়?”

“ঘুমাইছে এখন ওকে বিরক্ত না করে তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর যা। তারপর উঠে আপুর কাছে পড়তে বসিস।”

“আচ্ছা”

—————

[রাত ৮টা]

–অক্টোবরের ২ তারিখ। মাহির ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। আজকে এতো সময় ধরে সে ঘুমাইছে! আপু তাকে ডাকে নাই তার মানে। কারণ আপুর একটা ধমকে তার ঘুম আকাশ ভেঙে পাতাল এ যায়। আরুহির ঘুম ভাঙ্গছে প্রায় ১০ মিনিট আগে। সামনে মা-বাবাকে দেখে খাটে হেলান দেয়। মিতু মেয়ের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলে,

“মা ঘুম ভাঙ্গছে?”

“হা মা”

“তোমার বাবা যা শুনতে চায় সব বলো। আর তখন কার জন্য সরি, আসলে একটু রাগ উঠছিলো।”

“আমি কিছু মনে করি নাই মা। তুমি শাসন করবা এটাই তো হবে।”

“আম্মু এখন ফটাফট বলো দেখি, আমার আম্মুটার এই ছোট মনটা কে চুরি করছে।”

“কে আবার একটা চোরে।”

–আরুহি মজার ছলে কথাটা বলে। আয়ুশ আর মিতু ফিক করে হেঁসে দেয়। মেয়েটা কষ্টের মাঝে কিভাবে ফান করতিছে।

“আচ্ছা তা চোরটার বিষয় এ একটু বলো শুনি।”

“বাবা বাদ দেও”

“কেনো আম্মু!”

“ভূল করে ভালোবেসে ফেলছি, ভূল মানুষকে ভালোবেসে তোমার মেয়ে, ভূল ছেলেকে।”

“কেনো আম্মু ছেলেটা কি তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করছে?”

“না ছেলেটার দোষ নাই”

“তাহলে!”

–মিতু মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। কি বলতিছে মেয়েটা?

“আ-আ-আসলে হয়ছে কি মা আমি না ভূল করে একটা বিবাহিত ছেলেকে ভালোবেসে ফেলছি।”

“হোয়াট!!”

–আয়ুশ চোখ বড়বড় করে আরুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। আরুহি একটা কেবলা মার্কা হাসি দেয়। তার লজ্জা করতিছে বাবার সামনে এসব বলতে হচ্ছে ছি ছি। মিতু এবার হা হয়ে মেয়েকে দেখে, তারপর রাগী কন্ঠে বলে।

“তাহলে বললে যে ছেলেটার দোষ নাই? ছেলেটার তো দোষ রিলেশন এর আগে তোমাকে বলে নাই কেনো! যে ছেলেটা বিবাহিত, এখন রিলেশন এর মাঝখানে বলতিছে নাকি যে বিবাহিত হ্যা।”

“কে বললো আমার রিলেশন আছে!?”

“আজব তুমি না বললে একটা ছেলেকে ভালোবাসো।”

–আয়ুশ অবাক হয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করে। তাদের মাথায় কিছু ঢুকতিছে না।

“আসলে কি বাবা তোমার গাঁধা মেয়ে এক তরফা ভাবে একটা ছেলেকে এক বছর থেকে উড়াধুরা ভালোবেসে আসছে। হিহি কিন্তু চারদিন আগে যানতে পারছি ছেলেটা বিবাহিত। হুহ্ আর ছেলেটা তো জানে ও না আমি উনাকে ভালোবাসি।”

“হয়ছে থামো এবার, এসব পাগলামি কথা আর বলবা না আমার সামনে। এক তরফা ভালো কে বাসতে বলছে তোমাকে? পাগল হয়ছো নাকি হ্যা!? আর তুমি সেই ছেলের জন্য সুইসাইড এর চেষ্টা করছিলে!!”

“হুম”

–আরুহি মাথা নাড়ায়। আয়ুশ এর এবার নিজের উপর রাগ হয়। কেমন মেয়ে মানুষ করছে, একটু বুদ্ধি হয়নি মাথায়, কাউকে ভালেবাসতে গেলে আগে তাকে বুঝতে হয়, তার বিষয় এ খোঁজ নিতে হয়। কিন্তু না উনার গুনধর মেয়ে ছেলেটার বিষয়ে না জেনে না বুঝে ভালোবেসেছে।

“তো এখন কি চাই? বিবাহিত ছেলের সাথে সংসার করতে পারবা? যদি পারো তাহলে আমি কথা বলে দেখবো। তবে একটা কথা মাথায় রাখবে, ছেলেটার ওয়াইফ এতে কষ্ট পাবে।”

“না না বাবা এসব এর দরকার নাই। আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না, ছেলেটা সুখি থাকলেই আমার সুখ।”

“তাহলে পাগলামি গুলো করছো কেনো?”

“প্রথম ভালোবাসা বাবা”

–আরুহি কথাটা বলে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। গিয়ে দেখে তার পড়ার টেবিল এ মাহির গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আরুহি বিরক্ত হয়ে সোফায় ধরাম করে বসে। মাহির রাগী চোখে তাকিয়ে দেখে আপুকে। তারপর চিল্লিয়ে উঠে।

“এই মেয়ে জানো না আমার পড়া আছে অনেক গুলো। আমাকে ঘুম থেকে উঠাও নাই কেনো? কি সমস্যা তোমার বলো। বিয়ে করবা নাকি বলো! তোমাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্হা করতেছি আমি।”

–মাহিরের মুখে এমন কথা শুনে আরুহি সোফা থেকে লাফিয়ে উঠে। কি সব উল্টা পাল্টা বকতিছে!? আরুহি মাহির এর সামনে গিয়ে খাটে পায়ের উপর পা তুলে বসে। তারপর বলে,

“কি হয়ছে তোর! এসব কি বলতেছিস?”

“আমার কতো পড়া আছে জানো? তুমি আমাকে ডাকো নাই কেনো আজকে, পড়া বুঝিয়ে দেও।”

“মাহির আজ আম্মুর কাছে পড়তে বস যা তো। আমাকে বিরক্ত করিস না।”

“আপু আম্মু শুধু মারে, আর আব্বু তো ক্লিনিক এ যাবে এখন প্লিজ একটু পড়া বুঝিয়ে দেও।”

“টেবিল থেকে নাম, চেয়ারে বস।”

–মাহির টেবিল থেকে নেমে আপুর সামনে বই নিয়ে বসে। মাহিরকে বুঝানোর ফাঁকে ফাঁকে নিজে ও বইয়ের পাতায় মুখ গুজিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে মিতু ডাক দেয়,

“পড়া হলে উঠ দু’জনেই। তোদের বাবা আসছে, ১১টা বাজে এতো পড়তে হবে না।”

“আম্মু তুমি এমন কেনো? অন্য আম্মুরা পড়তে বলে আর তুমি বারন করো কেনো?”

“কারণ তোদের পড়ার কথা বলতে হয়না। আরুহি উঠো খেতে আসো।”

“আমি খাবো না, মাহির এখন যা এখান থেকে, আমি ঘুমাবো।”

“আরুহি কথা কানে যায় নি? খেতে আসো।”

“বললাম তো খাবো না, মহির বের হ আমার রুম থেকে।”

–মাহির মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিতু দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ডাকছিলো আরুহি সেই সুযোগ এ দরজা আটকিয়ে দেয়। মিতু কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে খাবার খেতে যায়। আরুহি উপুর হয়ে শুয়ে ফেন্ড গ্রুপে কথা বলতে থাকে। তখন একটা নোটিফিকেশন আসে ফোনে। গিয়ে দেখে রাহুল স্যার ফেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করছে। আরুহি কয়েকবার নিজের চোখ কঁচলায় ১ বছর আগে রিকুয়েষ্ট দিছিলো আর এখন এক্সেপ্ট হলো! বাহ।

“এই শোন আমার ফেন্ড রিকুয়েষ্ট রাহুল স্যার এক্সেপ্ট করছে।”

“আমার ও”

“আরে ভাই আমার ও”

–আরুহির ফেন্ড সার্কেল মেসেঞ্জার গ্রুপে একের পর এক মেসেজ করে। আরুহি বুঝতে পারলো সাত জনের রিকুয়েষ্টই এক্সেপ্ট করছে। তবে আরুহি কিছু বলে না। আশা দেখে আরুহি সিন করছে কিন্তু রিপ্লে করে না। দেখে আরুহির আইডিতে মেসেজ করে। (আশা আরুহির বড়বাবার মেয়ে, তার বাবা আর ভাইয়া ডাক্তার)।

“তোর রিকুয়েষ্ট কি এক্সেপ্ট করছে?”

“এখন করে কি লাভ বুইন? সবাই আনফেন্ড করে দে।”

“স্যার হঠাৎ এক্সেপ্ট করলো কেনো!? তাও সবার রিকুয়েষ্ট এক সাথে।”

“আমি কি জানি বাল?”

–আরুহি আর কিছু না বলে রাহুল এর আইডিতে গিয়ে সব পোস্ট ফটো দেখতে থাকে। মরার মতো একটা আইডি, তেমন কোনো পোস্ট বা ছবি আপলোড করা নেই। তবে আইডি ঘুরতে ঘুরতে ৮বছর আগের একটা পোস্ট তার সামনে আসে। আরুহি ভালোভাবে ছবিটা যুম করে দেখে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে।

চলবে…………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here