আমি আপনিতে আসক্ত পর্ব ১৪

0
1111

#আমি_আপনিতে_আসক্ত (১৪)
#ফারহানা_জান্নাত

“আপনি!?”

“রেডি হন বাসায় যাবো।”

“কেনো কোডে যাবেন নাকি!”

“জাস্ট সেট-আপ উল্টা পাল্টা বলবা না। চুপচাপ গিয়ে রেডি হও। বাসায় গিয়ে খেয়ে নিও আমার সময় নাই।”

“ভাইয়া ভাবি বাসায় সকালে খায় নি। আমাদের তো বললো ভাবি নাকি রোজা আছে।”

“আম্মু তুমি রোজা আছো?”

–আয়ুশ অবাক হয়ে মেয়েকে কথাটা বলে। আরুহি মুখটা কাচুমাচু করে বলে,

“বাবা আমি তো নিজ হাতে উঠিয়ে খাই না তেমন, তাছাড়া হাত কেটে গেছে। সে জন্য সকালে বলছিলাম যে রোজা আছি। আমার খুধা লাগছে একটু খাইয়ে দেন তো।”

–আরুহির কথায় মিতু মাথায় হাত দেয়। তার মেয়ে নিজ হাত খায় না সে জানে। কিন্তু তাই বলে শশুর বাড়ি গিয়ে না খেয়ে থাকবে? রাহুল হা হয়ে দেখে আরুহি কে।

“তো তোমাকে কে খাওয়াবে? তুমি বরং এখন থেকে মাহি’ কে খাওয়াই দিবে। কিন্তু এখন দেখি তার উল্টো। তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হও আমার কাজ আছে।”

“বাবা তাড়াতাড়ি খাওয়াই দেন তো।”

“আসো”

–আয়ুশ মেয়েকে খাওয়াই দেয়। আরুহি খাওয়া দাওয়া করে উঠে রেডি হয়ে আবার সবার সামনে আসে। বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে আসছি বলে বেড়িয়ে পড়ে।

“মামুনি তুমি কোলে নেও।”

“আমার কোলে থাকতে তোমার কি সমস্যা?”

“মামুনি যাবো”

–মাহি’ জেদ ধরে সে জন্য রাহুল রেগে আরুহির কোলে মাহি’কে দিয়ে দেয়। আরুহি হালকা হেসে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় মাহি’কে। এভাবে কেটে যায় ৬ মাস। রাহুলের মাঝে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, এই না যে আরুহি’কে অপমান করছে। কিছুই দেখা যায় না তার মাঝে। আরুহি কেম্পাসে সবে সবে চোখের জল ফেলছে। তাকে কি রাহুল কখনো মেনে নিবে না? না নিলে দূরে সরিয়ে দেক। সেটা ও করছে না।

“আরু সোনা কান্না করছিস কেনো?”

“আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না আশু? রাহুল আমাকে কেনো এতো অবহেলা করে? আমার কষ্ট হয় খুব।”

“আরু কাঁদিস না সোনা। কি করবি বল, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কাঁদিস না। এসব মনে করলে কষ্ট হবে। স্যার মাইশা আপুকে অনেক ভালোবাসে বুঝতেই পারছিস। এভাবে বিয়ে করা উচিত হয়নি। আঙ্কেল ভুল পদ্ধতি এপ্লাই করছে। জোর করে ভালোবাসা হয় না।”

“এখন কি আমার কম কষ্ট হচ্ছে? এই শিতে আমি মেঝেতে শুয়ে ছিলাম। মাহি’ ঘুমানোর পর বিছানায় থাকার অধিকার আমার নেই। যেখানে আমি কখন ও মেঝে কি জিনিস শুয়ে দেখি নাই। রাহুল উনি তো আমার সাথে খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।”

“মানে! তুই মেঝেতে ঘুমাস?”

“হুম”

–আশা কি বললে বুঝতে পায় না। রাহুল স্যার এতোটা বিরক্ত আরুহির প্রতি। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাহুলের ক্লাস নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই আশা আর সব বাকি ফেন্ডরা উঠে ক্লাসে যায়।

“স্যার আপনি নাকি আবার বিয়ে করছেন?”

–রাহুল ক্লাস নিচ্ছিলো এমন সময় ক্লাস রুম থেকে একটা মেয়ে কথাটা বলে উঠে। রাহুল কি বলবে ভেবে পায় না। তার মনে হয় হ্যা বললে সবাই তাকে খারাপ বললে। বলবে যে একটা ছোট বাচ্চা থাকতে আবার বিয়ে কিসের?

“স্যার বললেন না যে।”

“হ্যা বিয়ে করছি।”

“স্যার আজ কালের মেয়েরা তো তেমন ভালো না। আপনার তো আবার মেয়ে আছে। আপনার মেয়ের অ’যত্ন হয়না তো আবার? লক্ষ্য রাখবেন স্যার। সৎ মা আবার আপনার আড়ালে অত্যাচার না করে।”

“সেই চিন্তা আপনাদের না করলে ও চলবে। আমি যাকে বিয়ে করছি, সে আপনাদের মতো না। আমার মেয়েকে সে নিজের মেয়ে মনে করেই আদর স্নেহ করে। আপনি বললেন না যে আজকালের মেয়েরা ভালো না? আপনি ও কিন্তু এই যুগের মেয়ে। তাই আমার বিষয় নিয়ে আপনাদের মাথা না ঘামালে ও চলবে। ক্লাসে মনোযোগ দেন, ক্লাস ভালো না লাগলে বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে।”

–কেও কিছু বলার সাহস পায় না আর। আরুহি মন খারাপের মাঝে ও কিছুটা খুশি হয়। যাক রাহুল তো তাকে বিশ্বাস করে অন্তত। ক্লাস শেষে আরুহি বাসায় এসে গোসল সেরে মাহি’র কাছে যায়। মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে, আরুহি ও মাহি’র পাশে শুয়ে পড়ে। তখন মাহি’ নড়েচড়ে উঠে কান্না করতে থাকে। আরুহি মাহি’কে জড়িয়ে নিয়ে কান্না থামায়। তারপর উঠে খাওয়া দাওয়া করে রুমে বসে থাকে।

“মামুমি আমি তোমাল মতো করে সাজবো।”

–মাহি’র কথায় আরুহি নিজের দিকে তাকায়। আজ সে শাড়ি পড়ছে, শাড়ি পড়ার কারণ তার শশুর বাড়ির দূর সম্পর্কের আত্মীয় আসছিলো।

“তুমি শাড়ি পড়বে মামুনি?”

“হুম”

“আচ্ছা তাহলে আজকে আমি আমার মামুনি কে বউ সাজিয়ে দিবো কেমন?”

“আত্তা”

–আরুহি ডয়ার থেকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি বের করে। সে আগেই দেখছিলো রাহুল মাহি’র জন্য ৩টা শাড়ি কিনে রাখছে। তার মধ্যে লাল শাড়িটা আরুহির পছন্দ হয়। মাহি’কে শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। চোখে কাজল, হাতে চুরি, মাথায় ফুলের মালা। ২ মাস থেকে মাহি’র চুল না কাটায় বড় হয়ছে অনেকটা। সব শেষে মাহি’র কপালে একটা টিপ দিয়ে দেয়।

“মাশাআল্লাহ আমার মামুনি টাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আল্লাহ যেনো সব রুপ আমার মামুনিকে ঢেলে দিছে। দেখি মামুনি আমার দিকে হও। তোমার কয়েকটা পিক তুলে দেই।”

–আরুহি কয়েকটা ছবি উঠায়। তারপর তার শশুর শাশুড়ী কে ডেকে দেখায়। সবাই মাহি’কে দেখে হা হয়ে যায়। মেয়েটাকে একদম পরির মতো লাগছে। আরুহি ভাবে যে, রাহুল কে ভিডিও কলে মাহি’র শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখাবে। সে জন্য ফোন বের করে যখন ফোন দিতে যাবে তখন রাহুল রুমে ঢোকে।

“বাহ ভালোই হলো। আমি আপনার কাছেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম।”

“কেনো বলো তো?”

–রাহুল ভ্রু কুঁচকে কথাটা বলে। আরুহি হালকা হেসে তার পিছন থেকে মাহি’কে সামনে এনে রাহুল এর সামনে দাড় করায়। রাহুল হাত থেকে ফোনটা রেখে মাহি’র সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে কপালে চুমু এঁকে দেয়।

“বাহ সোনা মা, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগতিছে। একদম তোমার মাম্মাম এর মতো। তোমাকে আর তোমার মাম্মাম কে এক সাথে শাড়ি পড়ে দেখার ভাগ্য আমার হলো না।”

–রাহুল কথাটা বলে মাহি’কে কোলে নিয়ে বাহিরে ড্রইং রুমে যায়। আরুহি মন খারাপ করে বসে পরে। রাহুল নিজের স্ত্রী হিসাবে তাকে মানে না। কিন্তু মাহি’র মাম্মাম হিসাবে ও মেনে নেয় না। রাহুল এর ডাক শুনে আরুহি বাহিরে বের হয়।

“এই কাগজে সাক্ষর করে তোমার যা আছে সব নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।”

“মানে!!”

“মানেটা খুব সেজা। আজ বিয়ের ৬ মাস ১ দিন হচ্ছে। সো তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য আমার সব রেডি ছিলো। সময় হয়ে গেছে এখন সাক্ষর করে বিদায় হও আমার বাড়ি থেকে। তাছাড়া তোমার সাথে এই ৬ মাসে যখন সম্পর্ক ঠিক করতে পারি নাই। তখন আর থেকেই কি করবস? তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে। সাজিয়ে নেও নিজের জীবন।”

“এসব কি বলছেন আপনি? এই ৬ মাসে তো খারাপ ব্যাবহার করেন নাই। তাহলে হঠাৎ ডিভোর্স কেনো?”

“আমার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে, সে জন্য ভালো ব্যাবহার করছি। আর আমার জন্য তোমার জীবন নষ্ট হোক এটা চাই না। তুমি ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিও।”

“আমি আপনাকে চাই রাহুল”

“বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।”

–রাহুলের মা রাহুলের সিদ্ধান্তে রেগে যায়। ৬ মাসে কখনো বুঝতে পারে নাই এমন কিছু হবে। হঠাৎ এটা আশা করে নাই তিনি। রাহুলকে ঝাড়ি দিয়ে বলে,

“রাহুল বাবা তুই কি বলতেছিস এসব? আরুহি চলে যাবে কেনো? তুই পাগলামি শুরু করিস না কিন্তু। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে, তোর মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো আগলিয়ে রাখছে। আর আরুহি চলে গেছে মাহি কিন্তু কান্না করবে।”

“মা তুমি চুপ করো প্লিজ। এসব সম্পর্কে আমি থাকতে চাই না। আমার শশুর তো বলেই দিসে তার মেয়েকে ডিভোর্স দিলে ও উনার কিছু যায় আসে না। বড়লোক বাড়ির মেয়ে সমস্যা নেই। আর আরুহির ও এই বাড়িতে থাকতে কষ্ট হয়। এসি বাড়ি রেখে ফেনের নিচে উনি থাকতে পারে না।”

“তুই বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু রাহুল। ৬টা মাস হয়ে গেলো তোদের বিয়ের। আর তোরা এখন ও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়তে পারলি না! বাহ। আরুহি কোথাও যাবে না। নিজের রুমে গিয়ে তুই মাথা ঠান্ডা কর। এখানে ফিহা আছে। মেয়েটার শরীর এমনি ভালো না ঝামালা করিস না।”

“মা আমি যা বলছি তাই হবে। আরুহি নিজ ইচ্ছায় সই করবা নাকি বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করবো কোনটা?”

–আরুহি কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে রাহুল এর দিকে তাকায়। রাহুল সেই দিকে পাত্তা না দিয়ে সই করতে বলে। আরুহি সই না করে রুমে গিয়ে কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে নেয়। তারপর বাহিরে এসে রাহুল এর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পিছন থেকে ছোট্ট মাহি চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে। সে তার মামুনির কাছে যাবে। কিন্তু রাহুল এটা সেটা বলে কান্না থামিয়ে দেয়।

“আপু তুমি?”

“হ্যা, মা-বাবা কোথায়? বাসায় নাই নাকি?”

“না ক্লিনিক এ গেছে। ভাইয়া কোথায়! আর মাহি’ কই।”

“কেও আসে নি, নিজের রুমে যা আমাকে বিরক্ত করিস না।”

“আপু তোমার কি হয়ছে?”

“কি সমস্যা আমার রুম থেকে যেতে পারতেছিস না?”

–মাহির’ কিছু না বলে মন খারাপ করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আরুহি শাড়ি চেঞ্জ না করে ঐ ভাবেই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। রাত ৮টার সময় ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশে মা-বাবা বসে আছে। এতোক্ষণ হয়তো তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।

“বাবা”

“আমাদের কিছু বলতে হবে না। তোমার শাশুড়ী আমাদের ফোন করে সব বলছে। আমাদের ভুল ছিলো মা, এই ভাবে ছেলেটাকে জোর করে বিয়ে করানো উচিত হয়নি। আমাদের মাফ করে দিও। আমি তোমার ভালো করতে গিয়ে খারাপ করবো ভাবতে ও পারি নাই।”

“বাবা নিজেকে অপরাধী ভাবছেন কেনো? আপনি আমার ভালো করতে চেয়েছিলেন। বাদ দেন আমার ভাগ্য যা তাই ঘটবে আমার সাথে। আমাকে একটা হেল্প করেন। আমার ভার্সিটিতে থেকে টান্সফার করার ব্যাবস্হা করে দেন। দরকার হলে নেশনাল এ পড়বো।”

“তোমার সামনে এক্সাম ২য় বর্ষের। অযথা এমন সিদ্ধান্ত নিও না। আর ১মাস পর এক্সাম পড়াশোনায় মন দেও তো। চলো খাওয়া দাওয়া করবা।”

–আরুহি কিছু না বলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর খাওয়া দাওয়া করে বই নিয়ে পড়তে বসে। কিন্তু পড়াতে মন বসে না, বসবে কিভাবে? এতোদিন রাহুলকে কাছে না থাকুক, কিন্তু একই বাড়িতে ছিলো এটা কি কম? রাত ১১টা।

“হাই”

–আরুহি অনেক কষ্টে পড়ায় একটু মন দেয়। তখন ফোনে টুংটাং শব্দে মেসেজ আসতে থাকে। তার মধ্যে একটা নাম্বার এ আসছে দেখে কিছুটা অবাক হয়। নাম্বার এ কে মেসেজ করবে?

“এই মিস ছিচকাঁদুনে কথা বলো না কেনো?”

“আচ্ছা তুমি এতো চুপচাপ থাকো কেনো ভার্সিটিতে এসে? আমার তো মনে হয় তুমি বড্ড আবেগী মেয়ে।”

“কথা বলবে না? জানো তোমার নাম্বার আমি কতো কষ্ট করে জোগাড় করছি! আর তুমি যদি রিপ্লে না দেও তাহলে আমার জীবন বৃথা।”

“দেখো “মায়াবিনী” যদি কথা না বলো তাহলে সুইসাইড করবো।”

–পরপর এতো মেসেজ দেখে আরুহি বিরক্ত হয়। কিন্তু শেষ মেসেজ টা তাকে চমকে দেয়। কে এই ছেলে? সুইসাইড করার হুমকি দেয়। কিন্তু তাতে ও পাত্তা না দিয়ে বই রেখে মেঝের দিকে তাকায়। ও ৬টা মাস মেঝেতে শুয়ে কেটে দিসে। আরুহি ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে খেতে থাকে তখন আবার ও একটা টুং শব্দ হয়। এবার আরুহি দেখে একটা পিক দিসে। পিকটা দেখে আরুহি একটা ঢোক গিয়ে। হাত কেটে হাতের উপর ব্লেড রাখা আছে। আরুহি এই বার নাম্বার’টাতে ফোন দেয়।

“কে বলতিছেন? এসব কিসের পাগলামি!”

চলবে?……………..

(আর এক পর্বে শেষ হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here