আমি আপনিতে আসক্ত পর্ব ১

0
1909

“আমাদের আরুহি শেষে কিনা একটা বিবাহিত ছেলেকে ভালোবাসে? শুধু এতেই থেমে নাই তার জন্য সুইসাইড ও করার চেষ্টা করছে। বাহ আরুহি বাহ!?”

–ভার্সিটি কেম্পাসে এখন প্রায় অনেকের মুখে একটা কথা শুনা যায়। আরুহি নামের একটা মেয়ে বিবাহিত পুরুষের জন্য পাগল। হ্যা আরুহিকে ৪ দিন থেকে এই কথাটা হজম করতে হচ্ছে। বলে না? ঘরের শত্রু বিবিশন। ঠিক তেমনি ফেন্ড সার্কেল এর মাঝে গল্প হচ্ছিলো তখন বাহিরের একটা মেয়ে শুনতে পেয়ে অনেক এর কাছেই বলে বেড়াচ্ছে যে,

“২য় বর্ষের একটা মেয়ে, নাম আরুহি বিবাহিত পুরুষের জন্য পাগল”।

–তবে সবাই তো আর বাকি কাহিনি জানে’না। যতটুকু জানে সেটা নিয়ে কেম্পাস মাতামাতি। আরুহি বসে আশার কাঁধে মাথা রাখে। তখন উপরোক্ত কথা টা জুথি বলে উঠে। তারপর আবার বলতে লাগে।

“আরুহি তুই শেষে কিনা একটা বিবাহিত ছেলের প্রেমে পড়ছিস? না প্রেমে তো পরিস নাই, বরং এতোটাই ভালোবাসি যে ছেলেটা বিবাহিত শোনার পর দুইদিন খাওয়া দাওয়া অফ করে দিছিলিস। লাইক সিরিয়াসলি? আমরা সবাই এতোদিন ভাবছিলাম তুই যাস্ট ক্রাশ খাইছিস। কিন্তু না তুই তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।”

–জুথির কথায় আরুহি ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ভার্সিটির অপর পাশ ধরে একটা নদী বহমান। সেখানে আরুহির ফেন্ড সার্কেল বসে আছে। তাদের ফেন্ড সার্কেল এ ৭জন ছেলে মেয়ে। তবে আরুহির বেস্ট ফেন্ড আশা বাকিরা ভার্সিটির ফেন্ড। আশা আরুহিকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয়।

“দেখ জুথি এক কথা আর কয়বার বলবি হ্যা? মেয়েটা এমনি কষ্ট পাচ্ছে আর তুই সেই একই কথা বারবার বলতেছিস। সিরিয়াসলি বুইন, যেখানে আরুহিকে আমাদের সামলানোর দরকার, সেখানে তোরা ওকে খোঁটা দিচ্ছিস।”

“আশা জুথি খারাপ কিছু বলে নাই। আরুহি কোন দুঃখে একটা টিচার এর প্রেমে পড়লো বল। রাহুল স্যার কতোটা গম্ভীর মানুষ আমরা সবাই জানি। আর এই আরুহির বাচ্চা রাহুল স্যারের জন্য ১বছর থেকে অপেক্ষা করতিছে। হ্যা তো এক বছর পর কি পেলো? ও জানতে পেলো যে রাহুল স্যার বিবাহিত। দেখিস দুইদিন পর জানতে পারবি রাহুল স্যারের একটা বাচ্চা ও আছে।”

“স্টপ রনি”

–আরুহির ঝাড়ি খেয়ে সবাই চুপ হয়ে যায়। তার নিজের উপর রাগ হচ্ছে এখন। প্রেমে পড়ার আগে ছেলেটার বিষয় তার খোঁজ খবর নেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু না আ’বা’ল এর মতো কোনো খোঁজ না নিয়েই পাগলের মতো ভালোবেসে গেছে একটা ছেলেকে।

“আচ্ছা তোরা কি আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিবি না? ৪দিন থেকে সবার মুখে এই একটা কথা শুনে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। দেখিস সত্যি একদিন আমাকে পাবনা পাগলা গারতে রেখে আসতে হবে। আমার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিস কি তোরা একটা বার? নাহ সেটা না করে তোরা ও অন্যদের মতো আমাকে নিয়ে মজা করতে ব্যাস্হ হয়ে উঠছিস। সব দোষ তোদের, সবার সামনে বলার কি দরকার ছিলো, যে আমি বিবাহিত ছেলের প্রেমে পাগল? তোদের জন্য তো এটা পাবলিক হয়ছে তাইনা?”

“সরি দোস্ত আমরা কেও বুঝতে পারি নাই এই ভাবে কথাটা পাবলিক হবে। চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। কাঁদিস না বোন, কেঁদে আর কি লাভ হবে বল? তোকে আমরা বলছিলাম যার প্রেমে পরিস না কেনো টিচারের প্রেমে পরিস না। কিন্তু দেখ তুই সেই সবার কথা অমান্য করে রাহুল স্যারের প্রেমে পাগল হয়ে গেলি।”

“আমি সত্যি রাহুল স্যারকে অনেক অনেক ভালোবাসি রে জুথি।”

–জুথি ও আর কিছু বললো না। আরুহি এই চারদিনে পাগলের মতো হয়ে গেছে। জীবনের প্রথম প্রেম, তাও এক তরফা। আশা আরুহির মাথাটা বুক থেকে তুলে কপালে একটা চুমু দেয়। তারপর সবার উদ্দেশ্য বলে।

“চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। রাহুল স্যার যেমন গম্ভীর তেমন রাগি সেটা তো তোরা জানিস। আর ৫ মিনিট পর রাহুল স্যারের ক্লাস।”

“হুম চল সবাই।”

–সবাই একসাথে কথাটা বলে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এ যায়। তারা রুমে ঢোকার দুই মিনিট পর রাহুল স্যার ক্লাসে প্রবেশ করে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে বিরক্ত। সবাই আরুহির প্রেমে পড়ার বিষয়টা জানলে ও এটা জানে না যে, আরুহি তার কেমিস্ট্রি বিভাগের রাহুল স্যারের প্রেমেই পাগল। ক্লাস প্রায় শেষের দিকে তখন রাহুল আরুহির দিকে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর আরুহির দিকে তাকিয়ে হালকা আদেশ এর সুরে বলে।

“মিস আরুহি আপনি বাসায় যাওয়ার আগে একবার আমার কেবিন এ এসে দেখা করে যাবেন।”

–কথাটা বলেই রাহুল স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। আরুহি ভয়ে ঢোক গিলে, রাহুল স্যার আবার কোনো ভাবে বুঝতে পারে নাই তো! যে আরুহি উনার জন্যই পাগল। এসব ভাবতেই তার মাথায় ব্যাথা চারা দিয়ে উঠে। কখন ও তার মাথা ব্যাথা ছিলো না। কিন্তু এই চার দিন থেকে তার মাথা ব্যাথা কমে না। একটা পিরিয়ড পর রাহুল স্যার এর ক্লাস নেই। তাই আরুহি ভাবে তখন দেখা করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিছু কাজের জন্য ল্যাবে যায় সবাই মিলে। গিয়ে দেখে আরো ১০-১২ জন আছে। তাদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয় তারা। তখন অনেকে ফুসুরফুসুর শুরু করে।

“এই তোরা জানিস আরুহি নাকি একটা বিবাহিত ছেলের প্রেমে পরছে। শুধু তাই না তার জন্য নাকি পাগলামি ও করে।”

“আরে হ্যা শুনলাম। কি নির্লজ্জ মেয়ে বল, অন্য একটা মেয়ের সংসার নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগছে। ছি কি রুচি বল, মানতে হবে মেয়েটার রুচির সম্পর্কে। শেষে কিনা একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে লটরপটর করতে গেছে।”

“হ্যা রে, জানিস তো আরুহি নাকি ডাক্তার ফেমেলির মেয়ে। পরিবারের সবাই নাকি ডাক্তার, বড়লোক বুঝতেই তো পারছিস। জানিস না অতিরিক্ত বড়োলোক পরিবারের মেয়েরা ন’ষ্টা হয়।”

“আর বলিস না, গিয়ে দেখ আর কতো ছেলের সাথে যে শু”য়”ছে। দেখিস না রুপ আছে সে জন্য তো সবাই পাগল হয়ে যায়।”

–আরুহি সব মুখে বুজে শুনে যায়। কিন্তু আশার এসব আর সহ্য হয়না। জোরে একটা ধমক দেয় সবার উদ্দেশ্য।

“লজ্জা করে না একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়ের সম্পর্কে এসব বলতে? তোমরা কেমন পরিবারের সেটা তো বুঝায় যাচ্ছে। ভালোবাসা পাপ না ওকে। আর তোমরা সবটা জানো না সে জন্য আরুহিকে নিয়ে আর একটা কথা ও বলবা না। নয়তো আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না।”

–আশার কথা শুনে মেয়েগুলো চুপ হয়ে যায়। তারপর আবার ওখান থেকে একটা মেয়ে বলতে থাকে।

“কয়জনের মুখ বন্ধ করবে আশা? কেম্পাসে অনেকের মুখে মুখে এখন আরুহিকে নিয়ে ছি ছি রটে গেছে। মানলাম ভালোবাসা পাপ না কিন্তু তাই বলে একটা বিবাহিত ছেলের প্রেমে পরবে বলো? আরুহি সুন্দর এখন ছেলেটা তাকে এক্সেপ্ট করলে ছেলেটা ওয়াইফ কতোটা কষ্ট পাবে একবার ভেবে দেখছো?”

“আশা তিয়াসা ভূল কিছু বলে নাই, আমার কাজ হয়ে গেছে আমি যাচ্ছি। তোরা আর এসব নিয়ে বারাবাড়ি না করে বাসায় চলে যা। আমি রাহুল স্যার কি বলে সেটা শুনে বাসায় যাবো।”

–আরুহি কারো কথা শুনার জন্য আর অপেক্ষা করে না। গটগট পা ফেলে রাহুল স্যারের কেবিন এ গিয়ে দরজার নক করে।

“স্যার আসবো”

“হুম আসুন”

–রাহুল স্যার গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে। আরুহি ধির পায়ে কেবিনে গিয়ে রাহুল এর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাহুল বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে পানির গ্লাস আরুহির দিকে এগিয়ে দেয়।

“বসেন মিস আরুহি, আর পানিটা খেয়ে নেন। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

“আমি এভাবেই ঠিক আছি স্যার, আপনি কি বলবেন বলেন।”

“আচ্ছা বসুন আগে”

“জ্বী বলেন”

“আপনার নামে কেম্পাসে এসব কি শুনতেছি? আপনি নাকি কোনো বিবাহিত ছেলেকে ভালোবাসেন। আচ্ছা ছেলেটা ও কি আপনাকে ভালোবাসে?”

“না স্যার”

“বেড। তাহলে এসব কি পাগলামি করছেন শুনি! শুনলাম আপনি নাকি ঘুমের মেডিসিন নিছিলেন। যাই হোক আপনাকে সহজ ভাষায় কিছু কথা বুঝিয়ে দেই। ‘আপনি যাকে ভালোবাসেন সে যদি আপনাকে ভালোবাসতো তাহলে সেটা ঠিক ছিলো। তার উপর আপনি যাকে ভালোবাসেন সে একটা বিবাহিত ছেলে। আপনি বুঝতে পারছেন? আপনার প্রভাব তার পরিবারের উপর পড়লে কতোটা কষ্ট পাবে তার পরিবারের মানুষ গুলো।’ আপনি একটু ভেবে দেখুন। আর রইলো বাকি শুনুন এক তরফা ভালেবাসা চেপে রাখতে হয়। প্রকাশ করলে বেশি কষ্ট পেতে হয়। আপনার বেলায় কি হলো? কেম্পাসের অনেকে জানে আপনার বিষয় এ। আর কেও কেও তো বলতিছে-”

“আরুহি মেয়েটা পাগল, নাহলে বিবাহিত ছেলের প্রেমে পড়বে কেনো? আচ্ছা মেয়েটার কি মাথায় সমস্যা আছে?”

“এখন আপনি বলুন আপনি কি ছেলেটাকে একা ভালোবেসে ঠিক করতিছেন?”

“স্যার আর কিছু বলবেন?”

“আমি আপনাকে এতোক্ষণ কি বললাম? আর আপনি কি বলছেন!”

“আর কিছু বলার থাকলে বলেন। আপনি যা বলছেন তা ৪দিন থেকে সবার মুখ থেকেই শুনে আসতেছি। আসলে আমি যাকে ভালোবাসি তার বিষয় এ জানতাম না। এখানে উনার দোষ নেই উনি এই বিষয় এ কিছু জানে না। আমি ভূল করতে পারি শুধরাতে পারি না। অতিরিক্ত আবেগী আর নরম মেয়ে আমি। জীবনের প্রথম প্রেম তো সে জন্য একটু কষ্ট পাচ্ছি।”

“নিজের খেয়াল নিবেন আরুহি। আপনার পাগলামির জন্য আপনার পরিবার না কষ্ট পায় দেখেন।”

“ভালো থকবেন স্যার আসি।”

“আপনি ও ভালো থাকবেন”

–আরুহি রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই রাহুল টেবিল এ মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে। তারপর সব ঠিকঠাক করে বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে যায়। এখন আর কোনো ক্লাস নেই তার। আরুহি বাহিরে এসে দেখে আশা দাড়িয়ে আছে।

“বাসায় যাস নি?”

“না তোকে রেখে গেলে ছোট আম্মু আমাকে মাইর দিবে। রাহুল স্যার কি বললো?”

“কি আর শুনছে আমি নাকি পাগল কোনো বিবাহিত ছেলের প্রেমে পড়ছি। সেটাই বলছিলো এসব থেকে দূরে থাকতে।”

“ওহ আচ্ছা বাসায় চল”

“হুম”

——————

“মাহি মামুনি কই, এই যে বাবাই তোমার জন্য চকলেট আনছে।”

“বাবাই বাবাই থুমি চকলেত আনচো য়ামাল জন্য!”

“হ্যা মামুনি, দুপুরে কিছু খাইছো?”

“না বাবাই তোমাল সাতে খাবো।”

“আচ্ছা মামুনি তুমি দিদুন কে বলো খাবার দিতে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।”

“আত্তা”

–রাহুল মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দেয়। তারপর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাহির মাম্মাম এর সাথে কিছু কথা বলে খাওয়ার জন্য বাহিরে আসে। তারপর মেয়ের সাথে খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে মাহিকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে নিজে ও মেয়ের পাশে শুয়ে পরে।

——————

“আরুহি খাওয়া দাওয়া করে আমার রুমে আসো।”

“আচ্ছা বাবা”

–আরুহি কোনো রকম হাল্কা কিছু খেয়ে বাবার রুমে যায়।

“জ্বী বাবা বলো।”

“তোমার সমস্যা কি আমাকে খুলে বলো। তুমি সেদিন সুইসাইড করার চেষ্টা করছিলে। এখন খাওয়া দাওয়া একদম অফ করে দিছো। কাহিনি কি আমাকে বলো তো, আমি, তোমার মা, তোমার সাথে সব সময় ফেন্ডলি আচরন করে আসছি। আর তুমি সামান্য কোনো বিষয় নিয়ে এতোটা চিন্তিত। আর কোন বিষয় সেটা আমাদের একটা বার খুলে ও বলতিছো না।”

”বাবা”

–আরুহি বাবার কোলে মাথা রেখে কেঁদে উঠে। তার কষ্ট হচ্ছে খুব, এটা যে তার প্রথম ভালোবাসা। প্রথম ভালোবাসা তাও ভূল মানুষকে বেসেছে।

“আম্মু কি হয়ছে বলো”

“বাবা”

“কাঁদে না আম্মু টা কি হয়ছে আমাকে বলো, বাবাকে কি বলা যাবে না?”

“বাবা আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি।”

চলবে?…………

#আমি_আপনিতে_আসক্ত (১)
#ফারহানা_জান্নাত

Arian Chowdhury Kabbo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here