আমায় ডেকো একা বিকেলে পর্ব ৩

0
898

#আমায়_ডেকো_একা_বিকেলে?
#লামিয়া_সুলতানা_সিলভী ( লেখিনীতে)
#পর্বঃ_৩

সন্ধার দিকে কিছুক্ষন আগে আয়াশ আর রাইসা এসেছে আমাদের বাসায়, আমরা এখন সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছি! আয়াশ সায়ন ভাইয়া আর রাফি ভাইয়াদের পাশে বসেছে আর রাইসা আমার পাশে! রাইসা এসেই গল্পের ঝুড়ি শুরু করেছে, আমি ওদের বাড়িতে গেলে আমাকে কিভাবে রাখবে, কি করবে! মেয়েটা কত্ত প্রাণোচ্ছল, তোতা পাখির মতো কথা বলে একদম!

রাইসাঃ ভাবী তুমি এত্ত সুন্দর কেনো? ( আমাকে জরিয়ে ধরে)

লামিঃ ( রাইসা কে এক হাতে জরিয়ে) আমি সুন্দর কারন, তোমার চোখের দেখার ভাব সুন্দর! আর আমার চেয়েও তুমি বেশি সুন্দর,, একদম ছোট্ট পুতুল, আমার পুতুলটার মতো! ( সামিয়ার দিকে তাকিয়ে)

রাইসাও সামিয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো,,

রাইসাঃ তোমার বোনকে তুমি অনেক ভালোবাসো তাইনা? আমাদের বাসায় গেলে আমাকেও ভালোবাসলে এমন করে?

লামিঃ অবশ্যই!

রাইসাঃ দা’ভাই আম্মু যে ভাবীর জন্য দুইটা গহনা পাঠালো সেগুলো দাও!

রাইসার কথায় আয়াশ একটা নোসপিন আর হাতের বালা জোড়া বের করে আম্মুর হাতে দিলো,,,

আম্মু নিয়ে এসে আমাকে দিলো, আর এখনি পড়তে বললো,,,

লামিঃ আম্মু নোসপিন পড়ছি বাট বালা এখনি পড়তে হবে?

আমার নোসপিন টা খুলে ওর দেওয়া টা পড়ে নিলাম! এদিকে আমার আম্মাজান আমার কথায় চোখ গরম করে তাকালো, আর আমি অসহায় হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি!

আয়াশঃ মা থাক,,, ও যদি এখন পড়তে না চায় জোর করবেন না, পরে পড়ে নিবে! আম্মু দিয়েছে বাট এটা বলেই এখনি পড়তে হবে!

আম্মুঃ না পড়বে না কেনো? বেয়াইন দিয়েছে মানেই তো ওকে এটা খেলতে দেয়নি, পড়তেই তো দিয়েছে! এখনি পড়বে ও!

লামিঃ আম্মু প্লিজ, বিয়ের দিন পড়ে নিবো!

রাইসাঃ আন্টি থাকনা, বিয়ের পড়ে ভাবী তো পড়বেই আর এটা বিবাহিতরাই পড়ে! ওদের তো এখনো বিয়ে হয়নি!

যে কথাটা এইটুকু মেয়ের মাথায় গেলো আমার মা’কে কোন মতেই বোঝাতে পারছি না,, আমি তো এখন বিবাহিত না, তাইলে এখন কেনো পড়বো? চুরি হলে তাও হতো, তাই বলে এখন বালা পড়ে ঘুরবো?

নিলুফাঃ চাচী ছেড়ে দাও, বোন পড়ে নিবেনি পরে!

আম্মুঃ তোদের যা খুশী কর! ( বলেই কিচেনে গেলো)

আম্মুর কথায় আমি মন খারাপ করতেই আয়াশ আমাকে আশ্বাস দিলো! বাকী সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

আয়াশঃ তো সবাই বের হবে কখন?

নিখিল ভাইয়ার বউ তখনি হালকা কিছু খাবার নিয়ে আসে আয়াশ আর রাইসার জন্য! আর ভাবীর পুচকি টাও ভাবীর আঁচল ধরে পিছে পিছে আসছে,,

ভাবীঃ তোরা যা, রেডি হয়ে আয়! দেরী হয়ে যাবে তো! আয়াশ আর রাইসা ততোক্ষণে নাস্তা করে নিক!

আয়াশঃ কেনো ভাবী আপনে যাবেন না?

ভাবীঃ না গো ভাই, তোমরা যাও! বাসায় অনেক কাজ আছে!

আদিবাঃ ভাবী তোমাকে ছাড়া আমরা কে যাবো না,

লামিঃ হ্যা ভাবী তুমিও যাও রেডি হয়ে নাও!

ভাবীঃ আরে তোরা যা আ,,( থামিয়ে দিলাম)

লামিঃ আর কোন কথা না, তুমি যাবে ব্যাস! নিশীথ ভাইয়াকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার!

ভাবীঃ (হালকা হেসে) আচ্ছা ঠিক আছে যাবো!

আয়াশ ভাবীর পিচ্চিটা কে কাছে ডাকলো, কিন্তু সে যায় না! সারাক্ষণ মায়ের আচল ধরে ঘোরাই ওর অভ্যাস, আমাদের কারোর কাছেই আসবে না! ভাবীকে একদম জ্বালিয়ে মারে,,,

আয়াশঃ বাবু এদিকে এসো! ( হাত বাড়িয়ে)

ভাবীঃ ফুপা হয়, কাছে যাও!

পিচ্চিঃ নাহ,,

আয়াশঃ তাহলে এগুলো কে নিবে? ( অনেকগুলো চকলেট দেখিয়ে)

তাও গেলো না, তারপর আমি ওকে গিয়ে কোলে নিয়ে আয়াশের পাশে বসলাম! চকলেট গুলো আমিই নিয়ে ওকে দিতেই, সে কি খুশি!

আয়াশঃ তোমার নাম কি মামুনী? ( ওর হাত ধরে)

পিচ্চিঃ মুস্কান!

আয়াশঃ বাহ অনেক সুন্দর নাম তো!

ভাবীঃ জানিস লামি কি মনে হচ্ছে? এটা আমার না তোদেরই মেয়ে! তিনজনকে বেশ মানিয়েছে, বিয়ের খুব তাড়াতাড়িই মামী ডাক শুনতে চাই!

ভাবীর কথা শুনে সবগুলো হাসছে আর আমার চোখগুলো বের হয়ে আসার উপক্রম হলো, এরা কি পাগল নাকি? বিয়েই এখন পর্যন্ত হলো না আর এরা পড়েছে বেবী নিয়ে! আয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখি, সেও আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে! এর কি লজ্জা বলতে কোন বস্তু নেই? আমার দিকেই কেন তাকিয়ে হাসতে হবে, ব্যাটা নিচের দিকে তাকা!

রাফিঃ বোন তুই ঠিক আছিস? ( ভ্রু নাচিয়ে)

সায়নঃ হি হি, এই পিচ্চি এতো লজ্জা তোর, আগে তো জানতাম না? কাল থেকে শুধু লজ্জাই পেয়ে যাচ্ছিস! বেবী আর বিয়ের কথায় সবাই লজ্জা পায় বুঝি? আমিও একটু পেতে চাই, ও ভাবী তুমি একটু বড়দের বলে আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করো না, পাত্রী তো রেডিই আছে! ( আদিবার দিকে তাকিয়ে)

আদিবাঃ ঢং দেখে বাচি না, কাল দিপ্তী কে বউ বানালো আবার আসছে আমার কাছে! হুহ,, এদের মুখে আল্লাহ ঠাডাও ফালায় না!

বকবক করতে করতে আদিবা রেডি হতে ওপরে চলে গেলো,,

সায়নঃ (আমার দিকে তাকিয়ে) তোর বোনকে বলে দিস, সে ছাড়া দুনিয়ায় বহুত মেয়ে আমার পিছে লাইন ধরে পড়ে আছে! হুহ,,,

সায়ান ভাইয়াও রেডি হতে গেলো, একে একে সবাই ওঠে গেলো! রাইসাও সামিয়ার সাথে গেলো, এখানে শুধু আছি আমি আর আয়াশ! এখন মূলত আমরা রেডি হতে যাচ্ছি বাহিরে ডিনার করতে যাবো বলে, কারণ আয়াশ আজকে সবাইকে ট্রিট দিবে! কাল যেহেতু সবাই চলে যাবে, তাই পার্টি ক্যাঞ্চেল করে ডিনার করতে যাবো! এটা অবশ্য আয়াশেরই প্লান ছিলো! যাই হোক,, আমি ওঠতে যাবো তখনই আয়াশ আমার হাত টেনে আবার বসায়! আমি তাকাতেই,, বালার বক্স আমার হাত থেকে নিয়ে বালা জোরা বের করলো! তারপর বালা দুটো খুব যত্ন সহকারে আমার দু’হাতে পড়িয়ে দিলো,, দুই হাত ধরে হাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষন, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,,,

আয়াশঃ এটা আমার মায়ের বালা, আমি যখন খুব ছোট তখন আমার বউয়ের জন্য মা রেখে দিয়েছিলো! এই বালা জোরা আমার দাদী নাকি প্রথম মায়ের মুখ দেখে দিয়েছিলো আর আমার মা ও তাই আমার বউয়ের জন্য রেখে দেয়, যদি পরবর্তীতে গহনা দেওয়ার সামর্থ না থাকে তাহলে এটা দিয়েই ছেলের বউকে ঘরে তুলবে! কিন্তু এখন যেহেতু সামর্থ হয়েছে, তাই চেয়েছিলো এটা ভেঙে নতুন ডিজাইনের বানিয়ে দিবে কিন্তু আমি নিষেধ করেছি! আমি কি কোন ভুল করেছি? ( আমার হাত ধরেই)

লামিঃ নাহ, বালা জোরা সত্যিই অনেক সুন্দর! আমার খুব পছন্দ হয়েছে,, আমি এটাই পড়বো কিন্তু এখন না বিয়ের পর! ( মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে)

আয়াশঃ হুম, তোমার জিনিস তুমি যখন খুশী পড়বে! এখন তোমাকে পড়তেও হবে না, বিয়ের পর পড়লেই হবে! কিন্তু কখনো আমার মা অথবা আমার মায়ের দেওয়া কোন জিনিসের অসম্মান করো না, কেমন?

লামিঃ হুম!

আয়াশঃ গুড গার্ল, (গাল টেনে) এখন রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নাও! আর এটা খুলে যত্নে রেখে দাও, বিয়ের দিনে পড়বে!

আমি আর কিছু না বলে ওঠে চলে গেলাম,, কিন্তু সে তো একা বসে আছে তাই আগে সায়ন ভাইয়ার রুমে গেলাম! সায়ন আর রাফি ভাইয়া এক সাথেই ছিলো,,, আমি দরজা নক করতেই সায়ন ভাইয়া খুলে দিলো!.

সায়নঃ কি হলো পিচ্চি, শান্তি তে রেডিও হতে দিবি না?

লামিঃ সায়ন ভাই তুমি একটু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যাও, ওনি একা বসে আছে! আমরা সবাই ওপরে আছি, ব্যাপারটা ভালো দেখায় না!

সায়নঃ আচ্ছা ঠিক আছে পিচ্চি, রেডি হয়েই যাচ্ছি! তুই যা তাড়াতাড়ি রেডি হো!

সায়ন ভাইয়া আমাকে আগের থেকেই পিচ্চি বলে ডাকে, আমাদের কোন ভাই নেই জন্যই সায়ন ভাইয়াকে আমরা আপন ভাই ভাবি! আমার দাদু বাড়ির বংশে আমরা এই তিন ভাইবোন- সায়ন ভাইয়া আমি আর সামিয়া, নিলুফা আপু তো ফুপাতো না! ধরতে গেলে আমরা তিন ভাইবোনই, আমি যেহেতু আগে হয়েছি তাই আমাকে ভাইয়া অনেক ভালোবাসে আর সেই থেকেই পিচ্চি বলে ডাকে, তবে সামিয়াকেও অনেক ভালোবাসে!

যাই হোক,, আমি রুমে দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে এসে নিজেকে একবার ভালোভাবে দেখে নিলাম! হাতের বালা জোরায় হাত বুলিয়ে কোমল স্পর্শ করে, আংটি টাতে মুচকি হেসে ঠোঁটের ছোয়া দিলাম! নিজেকে দেখে এক অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে,
গহনা পড়নে আমাকে কেমন বউ বউ লাগছে! যদিওবা, গহনা আমার কোন কালেই পছন্দ ছিলো না তাই আম্মু হাজার চেষ্টা করেও আমাকে কিছু পড়াতে পারেনি, তবে জোর করে কানে ছোট ঝুমকা আর স্ব-ইচ্ছায় নোসপিন পরে থাকতাম অলওয়েজ! নোসপিনটা মেয়েদের মুখের সৌন্দর্য বাড়ায় আর এটা আমার কাছে এটা খুব ভালো লাগে! তাছাড়া আমরা কয়েকটা ফ্রেন্ড পিকনিকে যেয়ে সবাই সেইম নোসপিন কিনেছিলাম, সেই থেকে আমার নাকে সব-সময় একটা গোল্ডের ছোট পাথরের নোসপিন থাকতো আর এটা আজকেই প্রথম খুলে আয়াশের টা পড়লাম! হাতের বালা জোরা খুলে স্ব-যত্নে রেখে দিলাম আর কার্বাড থেকে কালো কালারের একটা ট্রি-পিজ বের করে নিলাম! কালোর সাথে সাদা ওড়না-পাজামা বেশ ভালো লাগছে! চুলগুল ছেড়ে দিলাম, আমার চুলগুলো এমনিতেই সিলকি আর সাথে হালকা খয়েরী কালারের লিপস্টিক দিলাম, এটা আমার সাথে খুব মানায়! চোখে গাঢ় করে কাজল ব্যাস আমার সাজ মোটামুটি কমপ্লিট!

এমন সময় পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি নিশা কল করেছে! রিসিভ করেই বললো,,

নিশাঃ শয়তান, বান্দর,, কখন থেকে আমি আর দিপ্তী অপেক্ষা করে আছি! তোমাদের লে পাত্তা, কখন বের হবি? আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না, জানিস না আমি অপেক্ষা করা পছন্দ করি না!

লামিঃ ওই ওই,, দম নে বাবা! এক নাগারে বলতেই আছিস! আসছি তো, আমি রেডি আর দশ মিনিটেই বের হয়ে যাবো!

নিশাঃ এখনও দশ মিনিট?

লামিঃ আচ্ছা রাখ, আসছি!

বলেই ফোন রেখে রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে বের হয়ে গেলাম! নিচে গিয়ে দেখি আমার সাহেবজাদা একা একা বসেই ফোন টিপছে, তারমানে কারোর এখনো হয়নি! আমি বুঝলাম না, মেয়েগুলো না হয় আটা ময়দা দিয়ে বিগিরদিস্তি অবস্থা করবে কিন্তু ছেলেগুলো? ওদেরও কি মেকয়াপ করতে হয়? এতো টাইম লাগে কেন ভাই?

লামিঃ এখনও কেও আসেনি?

আয়াশ আমার দিকে তাকিয়ে ফোন টা পাঞ্জাবীর পকেটে রাখলো! সামনে এগিয়ে এসে আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে,,

আয়াশঃ শাড়ি পড়লে হতোনা?

লামিঃ মানে? কেও তো পড়বে না, আমি কেনো তাইলে পড়বো?

আয়াশঃ কেও তো তার মিস্টার নিয়ে যাচ্ছে না, তুমি যাচ্ছো! আমি যেহেতু নীল পাঞ্জাবী পড়েছি তোমার উচিত ছিলো নীল শাড়ি পড়া!

লামিঃ আসলে আমি শাড়িতে অভ্যাস্ত নই! আর শুধু আমিই শাড়ি পড়বো কেমন দেখায় না?

আয়াশঃ কেমন দেখাবে? সুন্দর দেখাবে,, আর ফাস্টলি তোমার নেগেটিভ পয়েন্টগুলো পজেটিভে আনার দায়িত্ব আমার আর সেকেন্ডলি কে কি ভাবলো, কেমন দেখায় এগুলো ভেবে তো আমাদের কাজ নেই! তোমাকে কেমন দেখাবে সেটা শুধু আমি পর্যবেক্ষন করবো আর কেও না!

এরই মাঝে নিলুফা আপু চলে এসেছে,,, আয়াশ আপুর সাথে কথা বলতে থাকে! আর আমি ভাবছি ওর কথা.. কেমন ছেলেরে বাবা,, সবার বয়ফ্রেন্ড, হাসবেন্ডরা শুনেছি প্রশংসা করে আর এই ব্যাক্তি? প্রশংসা তো দূরে থাক চড়া কথা শুনিয়ে দিলো, ধুর মুডটাই খারাপ করে ফেললো!

একে একে সবাই চলে এসেছে, উনি আবার পড়লো রাইসা কে নিয়ে! রাইসা নাকি মেকয়াপ করে জংলী ভূত সেজেছে! সামিয়া আর আদিবা এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ওরা বুঝেছে আয়াশ তো ওদের কিছু বলতে পারছে না তাই রাইসা কেই সব রাগ দেখালো! রাইসার মনটাও খারাপ, এই লোকের প্রবলেম কি আমি বুঝিনা,, এতোটা তিক্ত মেজাজের কেনো! হ্যা আমিও রাগী ভাই, কিন্তু সব-সময় না এই সাইকো তো দেখছি অটোমেটিকলি হাইপার হয়ে যায়!
______________________

আজ আকাশে পরিপূর্ণ চন্দ্রের আলোকছটার আভাষ দেখা যাচ্ছে, যাকে বলে পূর্ণ তিথী মিলন! কিছুক্ষন আগে আমরা ডিনার শেষে বের হয়েছি! ঘড়ির কাটা বোধহয় এখন রাত এখন ৯ টা তে সীমাবদ্ধ, চারপাশে পিনপিন নিরাবতা,, মাঝে মাঝে দু-একটা কুকুরও ডেকে ওঠছে! মাথার উপরে রয়েছে এক পূর্ণতিথী চন্দ্র যার আলোয় ভরে যাচ্ছে ধরণীর বুক,, তাতে কোন বৈদ্যুতিক আলোর প্রয়োজন নেই! তারা ভরা আকাশের নিচে হেটে চলছে একদল কিশোর-কিশোরী! সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে হাটতে বের হয়েছে, হেটে হেটেই আজ বাড়ি যাবে! কালকে যেহেতু সবাই চলেই যাবে তাই আজ কিছুটা সময় সব একসাথে কাটাবে! বাড়িতে বসে একঘেয়ামি পরিবেশ আর ভালো লাগে না কারোর তাই রাফি বলতেই, নিশীথের বউ হ্যা সম্মতি জানালো আর ওর সাথে নিলুফা বাকিরা সবাই! সবাই জোরা জোরা হয়ে হাটছে, যেমন প্রথমে নিলুফা আর ভাবী হাটছে আর গল্প করছে,, তারপর কিছুদূর পর সামিয়া,রাইসা! আর তারপর ওরা পাঁচজন একসাথে আদিবা, দিপ্তী, নিশা, সায়ন, রাফি! আর সবার শেষে লামি,আয়াশ ওরা অনেক টা দূরেই ধরতে গেলে!

আয়াশঃ বললে না তো কাল সময় দিতে পারবে কি না?

লামিঃ কখন?

আয়াশঃ এনি টাইম,, বাট না করো না!

লামিঃ কেনো, কোথায় যাবেন সেটা কি জানতে পারি?

আয়াশঃ তোমাকে নিয়ে কি হারিয়ে যাবো? গেলেও কিন্তু খুব একটা প্রবলেম হবে না! যেতেই পারি বউয়ের সাথে, তাইনা?

লামিঃ ফালতু কথা বাদ দেন, আমি কোথায় যাবো সেটা বলেন!

আয়াশঃ আজকে যেখানে নামিয়ে দিলাম, মানে তোমার বাসায় একটু আগে আমি নিতে আসবো!

লামিঃ বাসায় কি বলবো?

আয়াশঃ বাসায় আমার কথা বলা যাবে না?

লামিঃ নাহ, আব্বু-আম্মু জানলে বকবে!

আয়াশঃ তাইলে আর কি, সামিয়া কে চুপ করে বলে বের হবে আর মা-বাবাকে বলবে দীপ্তি, নিশা অথবা অন্য কোন ফ্রেন্ডসের সাথে বের হচ্ছো!

লামিঃ আচ্ছা, সকালে তো সবাই চলে যাবে! ওদের বিদায় দিয়ে বিকেলের দিকে বের হবো যদি ম্যানেজ করতে পারি!

আয়াশঃ যদি না, অবশ্যই আসবে! আমি না কথা শুনতে চাই না!

লামিঃ আপনে কি কি পছন্দ করেন আর কি কি পছন্দ করেন না তার একটা সিডিউল দিয়ে দিয়েন আমাকে, ঠিক আছে?

আয়াশঃ তুমি কি আমার ওপর বিরক্ত?

লামিঃ (বিড়বিড় করে) আমার ঘাড়ে কতটা মাথা আছে, যে আপনার ওপর বিরক্ত হবো?

আয়াশঃ কিছু বললে?

লামিঃ নাহ!

আয়াশঃ এই স্টপ, এক মিনিট দাড়াও!

আয়াশ হঠাৎ নিচে বসে আমার এক পা তুলে নিলেন তার পায়ের ওপর, তারপর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা সুন্দর পায়েল বের করে আমার পায়ে পড়িয়ে দিতে দিতে বললেন,,,

আয়াশঃ তুমি আমার ওপর বিরক্ত হও আর না হোও, আই ডোন্ট কেয়ার! বাট তোমাকে সব-সময় আমার কথা মতোই চলতে হবে, আমি যা বলবো সব শুনতে হবে! আমি অযথাই না, কেনো, সরি, প্লিজ এসব পছন্দ করিনা! আর আমার অপছন্দের কাজগুলো যারা করে তাদেরও পছন্দ করি না, আমার কাছে আসলে আমার সম্পর্কে আরো ভালো-ভাবে জানতে পারবে!

পায়েল পড়িয়েও দেওয়া শেষ, ওনার বয়ান দেওয়াও শেষ! এবার ওঠে দাঁড়িয়ে,,

আয়াশঃ হাটো ফাস্ট!

আমি তাকিয়ে দেখলাম আমরা দুজন ছাড়া সবাই মোড় ঘুরেছে, আমি তো এতোক্ষন খেয়ালই করিনি! এরা আবার আমাকে রেখেই বাসায় গেলো না তো হাটতে হাটতেই, তাইলে সবগুলার খবর খারাপ করে ছাড়বো! আয়াশের হাতের তুড়িতে আমি ভাবনা জগৎ থেকে ছিটকে পড়লাম!

আয়াশঃ কি সমস্যা তোমার? মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও? বলছি না ফাস্ট হাটো, আর তুমি সেইম জায়গায় দাঁড়িয়ে আছো?

#চলবে…

[ রি-চেক করা হয়নি, ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন,, হ্যাপি রিডিং❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here