আমায় ডেকো একা বিকেলে পর্ব ৬

0
713

#আমায়_ডেকো_একা_বিকেলে?
#লামিয়া_সুলতানা_সিলভী ( লেখিনীতে)
#পর্বঃ_৬

বিকেলের দিকে একটা লেকের পাড়ে আমি আর আয়াশ পাশাপাশি বসে আছি, অনেক কষ্টে আয়াশকে আমি দেখা করাতে রাজি করেছি! মানে আমার আম্মু আর সামিয়াই কথা বলে আয়াশকে ম্যানেজ করে, এই ছেলে তো বুঝতেই চায়নি আমি কেনো চুপ ছিলাম! আমার একটু চুপ থাকার জন্য যে এতো এতো শাস্তি দিবে জানলে কথার ঝুড়ি বসিয়ে দিতাম ওর কাছে! কালকে ও ফোন না ধরায় সারারাত কান্না করে চোখ-মুখ ফুলে গেছে,, আমার অবস্থা দেখে আম্মু আর থাকতে না পেরে আয়াশকে কল দেয় আমার সাথে দেখা করার জন্য! আয়াশ আবার আব্বু- আম্মু কে অনেক সম্মান করে যার কারণে আম্মু একবার বলাতেই রাজি হয়ে যায়, আর যেহেতু আমাকে অনেক ভালোবাসে! আমি কালকে কান্না করেছি জন্য সে আমার সাথে কোন কথা বলছে না,, সামনের দিকে তাকিয়ে লেকের পানিতে ঢিল ছুড়ছে একটার পর একটা,,,

লামিঃ আয়াশ সরি!

আয়াশঃ,,,,,,,

লামিঃ তুমি আমাকে বকো বাট এভাবে চুপ থেকো না, প্লিজ!

আয়াশঃ,,,,,,,

লামিঃ আমি কিন্তু এখন আবার কান্না করবো, এমন করলে!

আয়াশঃ করো, না করেছে কে? তুমি কি আমার অনুমতি নিয়ে কালকে কেঁদেছিলে? তাহলে আজকে এতো ফর্মালিটি দেখাচ্ছো কেনো? তুমি আর তোমার আব্বু তো আমাকে শেষ করতে ওঠে পড়ে লেগেছো!

কথাটা বলার সময় ওর ফর্সা নাকের ডগায় লাল রক্তিম আভা ফুটে ওঠেছে,, তাও সে আমার দিকে তাকাচ্ছে না! পানির দিকে তাকিয়েই আছে,,,

লামিঃ আমি কি কাঁদতে চেয়েছিলাম? তুমিই তো ফোন অফ করে আমাকে বাধ্য করেছিলে!

এই কথা বলাতেই আয়াশ আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো,,,,

আয়াশঃ তোমাকে আমি মেরে ফেলবো!

লামিঃ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আয়াশ! ( নিচের দিকে তাকিয়ে)

আয়াশঃ তোমার আব্বুকে ছাড়তে পারবে?

আমি ওর দিকে অসহায় ভঙিতে তাকিয়ে মন খারাপ করে বললাম,,,

লামিঃ না!

আয়াশঃ তোমার আব্বু তো তোমাকে আমার কাছে দিবে না, আমার বাবা খারাপ, আমার বংশ খারাপ, আমিও তো সেই বংশের ছেলে সো সেই পরিপেক্ষিতে আমিও খারাপ! তোমাকে রেখে অন্য কোথাও বিয়ে করবো!

লাস্টের কথাটা বলার সময় এবার আয়াশের চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছে, আমার এখন ওর দিকে তাকাতেই ভয় লাগছে!

আয়াশঃ তোমার আব্বু এই কথা টা বললো কিভাবে? আমি কিন্তু উনাকে বাবা ডেকেছিলাম, আপন করেছিলাম তোমাদের সবাইকে! মানলাম আমার কুলাঙ্গার বাবা ভালো ছিলো না, আমিও তাকে দেখতে পারিনা! তোমাকে সেদিন বললাম না? ছেড়ে যাবার কষ্ট আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি? হ্যা, আমার মায়ের ছেড়ে যাবার কষ্টের কথাই বলছিলাম! যেটা আমি কখনো সহ্য করতে পারিনি, ওই লোককে তো একদিন না একদিন আমার মায়ের পায়ের কাছে আসতেই হবে, সেদিন আমি ওই খারাপ লোককে বোঝাবো আমি কি জিনিস! আর তোমার আব্বু কি বললো?

লামিঃ আসলে আব্বু,,, ( থামিয়ে)

আয়াশঃ হয়েছে, তোমার আব্বুর আর সাফাই গাইতে হবে না! আমি ওনাকে যা চেনার চিনেছি! তুমি এখন বলো তুমি কি চাও? যদি বলো আব্বুর কথায় আমাকে ছেড়ে দিবে,, বিশ্বাস করো লামি জীবনেও এই আয়াশে শিকদার তোমার মুখোমুখি হবে না, তুমি আমাকে এখনো চিনতে পারো নি! আর যদি বলো তুমি আমাকে চাও তাহলে তোমার আব্বু কেনো দুনিয়ার কারোর সাধ্য নেই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করবে! তবে, এ ক্ষেত্রে একটা কথা আছে তোমার বাবা না চাইলে তোমাকে এক কাপড়ে আমার সাথে বের হয়ে আসতে হবে, জীবনেও আর আব্বুর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না! বলো রাজি?

লামিঃ আমি আব্বুকে রাজি করিয়েই তোমার কাছে আসবো, আয়াশ!

আয়াশঃ তোমার আব্বু মানবে না!

লামিঃ আমি মানাবো যেভাবেই হোক! সন্ধায় আব্বু নাকি তোমাদের ডেকেছে, যাবে না?

আয়াশঃ কেনো ডেকেছে? আমার মা তোমাকে যে যে অলংকার দিয়েছে সেগুলো ফেরত নিতে? তোমার আব্বু কি আমাকে ভিখারি ভাবে?

লামিঃ আয়াশ তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছো, ভিখারি কেনো ভাববে? বিয়ে ভেঙে দিতে চাইলে সাধারণত এসব ফেরতই দেয়, নিজের কাছে রাখে না! কিন্তু আমি তো তোমাকে এসব দিবোই না, আব্বু হাজার বললেও না!

আয়াশঃ আচ্ছা যদি তোমার আব্বুকে রাজি করাতে না পারো, তাহলে আমার সাথে কি চলে আসতে পারবে চিরকালের জন্য?

আমি এখন কি উওর দিবো? এমন প্রশ্নের কি কোন উত্তর হয়? আব্বুকে কি তাই কখনো ছাড়া সম্ভব? হ্যা, হতে পারে আয়াশকে আমি ভালোবাসি তাই বলে আব্বুকে কি আমি ভালোবাসি না? আব্বু তো আমাকে ছোট থেকে দিনরাত এক করে দিয়ে মানুষ করেছে, এভাবে কি তাকে ছাড়া যাবে? আয়াশ এসব উদ্ভভ কথা কেনো বলে? আচ্ছা, আয়াশকে যদি কখনো কেও ওর মা’কে ছাড়তে বলে ও কি সেটা পারবে? তাহলে আমি কিভাবে আমার বাবা, আমার ফ্যামিলি ছাড়বো? তাই বলে আমি আয়াশকেও ছাড়তে পারবো না! কিন্তু এই কথাগুলো আমার মুখে বলার সাধ্য নেই তাই মনের কথাগুলো মনের মধ্যেই মাটি চাপা দিলাম! অন্যকেও বললে এতক্ষনে দু- চার কথা শুনিয়ে দিতাম, কিন্তু এই ব্যাক্তির সাথে উত্তর দেওয়া মানেই নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা!

আয়াশঃ (তুড়ি বাজিয়ে) এই মেয়ে, আবার সেই ভাবনার জগৎে? এতো ভেবে কি কিরো তুমি, কোন রাজকার্য উদ্ধার করো?

আয়াশ তুড়ি বাজিয়ে কথাটা বললো, আর আমার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি! আমি বুঝি না,,, এই পোলার কি কখনোই আমার ভাবনা সহ্য হয় না? আমি সব-সময় ভাবতেই ভালোবাসি, এর মতো শান্তি আর কিছুতেই নেই! না পাওয়া জিনিসের কথাও ভেবে সুখ আসে!

আয়াশঃ লামি আমি কিন্তু এখন ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিবো তোমাকে, স্টুপিড! চুপ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? আমাকে কি তোমার আর আব্বুর মানুষ বলে মনে হয় না? যখন যা ইচ্ছে তাই করো তোমরা?

লামিঃ সব-সময় তুমি আব্বুকে কেনো টানো?

আয়াশঃ তো কি করবো? তোমার আব্বুই তো,,,,

লামিঃ একদম চুপ, আব্বুকে নিয়ে আর একটা কথা বলবে না আয়াশ! (কিছুটা চিল্লিয়ে)

আমাকে রেগে যেতে দেখে আয়াশ কিটকিট করে হাসছে! ওর এই হাসি দেখে আমার আরো শরীর জ্বালা দিয়ে ওঠলো! আমি আছি আমার কষ্টে আর এই ছেলে আমার সাথে ফাইযলামি করে! ওর পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিতেই আমার হাত পেঁচিয়ে আমার পিঠে ধরলো!

আয়াশঃ বেশি সাহস? হাত কিন্তু ভেঙে দিব নেক্স টাইম এমন করলে, আমাকে কিন্তু সামিয়া পাওনি!

লামিঃ আয়াশ আমার হাত ছাড়ো, আমি ব্যাথা পাচ্ছি!

আয়াশঃ (হাত ছেড়ে দিয়ে) তোমার বাপ কে বলে দিও,,, তোমাকে বউ করে তো অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই নিয়ে আসবো, যতই বিশ্বযুদ্ধ লাগুগ না কেনো! তারপর আমার শ্বশুর মশাই বুঝবে মেয়ের জামাই কি জিনিস, আমার কাছে থেকে আমার বউ কে কেড়ে নিতে চেয়ে সে কত বড় অন্যায় করেছিলো!

লামিঃ হুহ!

আয়াশঃ এই মেয়ে হুহ কি? মেরে ফেলবো একদম উনিশ-বিশ বললে! বাবাকে বলবে,,, তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমাকে ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করবে না মনে যেনো থাকে!
________________________

সন্ধার পর শিকদার পরিবারের সবাই হাজির হয়েছে আমাদের বাসায়! রায়হান আংকেল মানে আমার বর্তমান শ্বশুরের সাথে আমার আব্বু কথা বলছে আর বাকি সবাইও হলরুমে চুপ করে বসে আছে! আমি, সামিয়া আর রাইসা আড়ালে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছি! রাইসা এসে আমাকে জরিয়ে ধরে অনেক্ষন মন খারাপ করে বসেছিলো, ও কোন কিছুতেই আমার জায়গা অন্য কাওকে দিবে না! আমাকে ভাবী বলেছে মানে আমাকেই ভাবী হতে হবে সে আর কিছু জানে না, সব আমাকেই ম্যানেজ করতে হবে! ভাই-বোন দুজনই ঠ্যাটা, তাইলে আমি কিভাবে ম্যানেজ করবো এটা এরা বুঝতে চাচ্ছে না! হঠাৎ করে হলরুমে রুমে আমার শ্বশুরের কন্ঠ শুনতে পেলাম,,,

রায়হানঃ ভাই, পুরোনো কথা তুলে আয়াশ আর ওর মা’কে কষ্ট দিবেন না! অতীত তো অতীতই, সবার জীবনেই অতীত থাকে! ওদের ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে, এতে তো আয়াশের কোন দোষ নেই! ও নিতান্তই মাসুম বাচ্চা ছিলো তখন, আর আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমার আয়াশ ওর বাবার মতো হয়নি! ওকে আমি নিজ হাতে মানুষ করেছি, যতই সৎ বাবা হই না কেনো আমি কখনো ওকে সৎ ছেলে হিসেবে দেখিনি আর না রেনুকা আমার মেয়েকে সৎ মেয়ে হিসেবে দেখেছে! আমি সব-সময় মনে করতাম আয়াশ আমার ছেলে, আমার এক ছেলে এক মেয়ে! ছেলে আমার বংশধর না হলেও কোন অংশে কম না, আমার আদর্শে ও বড় হয়েছে তাই ওর ওমন হওয়ার সম্ভবনা নেই!

রায়হান শিকদার কথাগুলো একদমে বলে গেলেন! আয়াশ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর রেনুকা শিকদার মানে আয়াশের মা লামির মায়ের পাশে বসে আছে! লামি মা আফসানা খন্দকার তার স্বামীর দিকে অসহায় ভঙিতে তাকিয়ে আছে, স্বামীর মুখের বক্তব্য কি হবে সেটা জানতে! লামির বাবা রাশেদ খন্দকার গলা খেকড় দিয়ে বললো,,,

রাশেদঃ দেখেন ভাই সবই বুঝলাম, কিন্তু এমন কিছু হলে কি আপনার ক্ষতি হবে নাকি আমার হবে?

আয়াশঃ বাবা, আপনে এখন কি চাচ্ছেন? বিয়ে ভেঙে দিতে?

রায়হানঃ আয়াশ আমি কথা বলছি তো তুমি কেনো বলছো?

বাবার কথা শুনে আয়াশ চুপ করে গেলো,, রায়হান সাহেব আবার বললো,,,

রায়হানঃ ক্ষতি হবে না সেটা গ্যারান্টি দিচ্ছি আর বাই চান্স যদি কখনো এমন হয়ও আপনে আমাকে যা শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নিবো! তাও দুই ছেলে- মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করবেন না ভাই, আমার রিকুয়েস্ট এটা!

রাশেদঃ এতে জীবন নষ্ট হবার কি আছে? ওদের তো বিয়ে হয়নি জাস্ট এংগেজমেন্ট হয়েছে,আর এংগেজমেন্ট হলেই কারোর জীবন নষ্ট হয় না! আপনার ছেলেকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন আর আমার মেয়েকে আমি অন্য কোথাও!

আফসানা বেগম তার স্বামীর দিকে এতোক্ষন আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু স্বামীর এমন ব্যাবহারে সে সন্তুষ্ট নয়, তাই নিজেই ছেলে- মেয়ে দুটোর কথা ভেবে মুখ খুললো যদিও জানে তার একরোখা স্বামীর কোন ভাবমূর্তি পরিবর্তন হবে না! তবুও চেষ্টা করলেন,,,

আফসানাঃ ওগো তুমি একটু ভেবে কথা বলো, ওদের তুমি আলাদা করো না! ওরা দুজন দু’জনকে
সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে!

রাশেদঃ আফসানা তুমি চুপ করো, দু মাসে কিসের ভালোবাসা হয়? এগুলো কে কোন ভালোবাসা বলে না, এগুলো হলো মোহ! আজ আছে কালই দেখবে এর কোন মূল্য থাকবে না, মোহ কেটে গেলে আমার মেয়েটাকেও দেখবে দুদিনে ছেড়ে দিবে!

আয়াশ এতোক্ষন নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছিলো কিন্তু রাশেদ সাহেবের এমন বক্তিতায় আয়াশ আর নিজের রাগকে ধরে রাখতে পারলো না! ওর রাগ গুলো শিরা-উপশিরা ভেদ করে কপালের রগ দুটো ফুলে ওঠেছে! নিজেকে আর চুপ রাখতে পারলো না,,

আয়াশঃ আপনে এগুলো কোন কথার ভিত্তিতে বলছেন? আপনার প্রবলেম আমাকে নিয়ে নাকি আমার কুলাঙ্গার বাপ কে নিয়ে? বাপের দোষ থাকলেই যে সেটা ছেলেরও হবে এই হাদিস আপনাকে কে দিয়েছে? আপনাদের মতো মানুষ ভালোবাসার মূল্য বুঝবে না, তারা শুধু নিজেদের ইগো টাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়! আর আপনাকে কে বলেছে দুই মাসে ভালোবাসা হয় না? দু দিনও ভালোবাসা হয় মিস্টার রাশেদ খন্দকার! ভালোবাসতে জানতে হয়, অনুভূতিগুলো বুঝতে বুঝতে হয়! কতো দেখলাম সারাজীবন সংসার করেও নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসতে জানে না, এই আমার কুলাঙ্গার বাবাকেই দেখুন সেও তো আমার মায়ের সাথে দীর্ঘদিন সংসার করেছিলো সে কি পেরেছে আমার মা’কে ভালোবাসতে? তাহলে আপনে নিশ্চি কিভাবে দু’মাসে ভালোবাসা হয় না? আপনার মেয়েকে ডাকুন,,, সে যদি আমাকে না চায়, অন্য কারোর সাথে সুখী হয় তাহলে এই আয়াশ শিকদার মরে গেলেও কখনো আপনার বাড়ির চৌকাঠে পা দিবে না! ডাকুন আপনার মেয়েকে!

রাশেদঃ এই ছেলে তোমার সাহস তো কম না, তুমি আমার বাড়ি এসে আমাকেই হুমকি-দামকি দিচ্ছো?

আয়াশঃ এই দুই মাস যথেষ্ট পরিমাণের সম্মান করেছি, বাবা বলেও ডেকেছি কিন্তু আপনার ব্যাবহারে আজ আমি বাধ্য হচ্ছি!

রাশেদঃ আমার মেয়েকে আমি যা বলবো, ও তাই শুনবে! দিবো না বিয়ে তোমার সাথে, এতে যা করার করতে পারো!

রেনুকাঃ আয়াশ তুই বাহিরে যা, তোকে তোর বাবা চুপ করে থাকতে বলছে না? তাও কেনো কথা বলছিস? আমরা এখানে আছি তো, বড়দের মাঝে তোর থেকে কাজ নেই! তুই বাহিরে গিয়ে দাড়া আর নয়তো ছাদে যা!

আয়াশঃ নিজেকে কোন হিসেবে মেয়ের বাবা বলে দাবি করেন? যে বাবা নিজের মেয়ের ভালোবাসা বোঝে না, অনুভূতি বোঝে না, কষ্ট বোঝে না সে আবার কিসের বাবা? সরি ফর দ্যাট!

আয়াশ কথাটা বলেই হলরুম থেকে চলে যেতে নেয়, ওপরে তাকিয়ে দেখে এক যুবতীর চোখ তার চোখেতেই সীমাবদ্ধ! কিন্তু আজ যেনো লামির চোখের মুগ্ধতা দেখেও রক্তচোখে তাকিয়ে বাহিরে বের হয়ে গেলো! আর পেছনে ফেলে গেলো যুবকটির করুণ চাহনী, যা একসময় বালকটি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো! হয়তো এটাই তাদের শেষ সাক্ষাত, আর কখনো নাও দেখা হতে পারে! কারণ আয়াশ তো সবার সামনে বলে গেলো আজকের হিসাব-নিকাশ শেষ হলে যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না আসে তাইলে আর জীবনেও খন্দকার বাড়ির চৌকাঠ পেরোবে না আর না লামির সামনে কখনো আসবে!

আয়াশ বাহিরে এসে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে সিগারেট ধরালো! তার মন আজ বিষাক্ত, তাই আজ বিষাক্ত কিছু যেনো তার চাই ই চাই! তাইতো দুই ঠোঁটের মাঝে সিগারেটের শেষাক্ত অংশটুকু চেপে ধরে টান দিলো আর এর বিষাক্ত ধোয়াগুলো কুণ্ডলী পাকিয়ে হাওয়ার তালে তালে বিলীন করলো! “আচ্ছা, লামি যদি সত্যি ওর ভাগ্যে না থাকে তাইলে তো হজার চেষ্টা করেও ভাগ্য পরিবর্তন করার সামর্থ ওর নেই! আজকে লামির বাবার ডিসিশনের ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তীতে সে আর লামির দেখা পাবে কি না!” আজকে যে লামির বাবার সাথে খারাপ আচারণ করে আসলো এতে তো সে বেশি ক্রুদ্ধ হলো যদি রেগে গিয়ে আয়াশের কথার ভিত্তিতেই বিয়ে না দেয়? এটা নিয়ে অবশ্য আয়াশ অনুশচনা করছে না, কারণ ও জানে ও কখনো অনুচিত কথা বলে না!

#চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here