আজল পর্ব-৩

0
1678

#আজল
#পর্ব-তিন

৭.

দুই দিন বাবার বাড়িতে থেকে আজ শশুড়বাড়ি ফিরলো সাঁচি। এই দুদিনের একদিন ফুয়াদ শশুড়বাড়িতে বাজার করার রীতি পূরন করলো আর একদিন ওরা দাওয়াত খেয়েই পার করলো। সাঁচির বাবার বাসা ওয়ারিতে। সাঁচির জন্ম বেড়ে ওঠা সবই এই ওয়ারিতে। এখানেই ওর বাবা চাচারা স্থায়ীভাবে থাকে বহুকাল। যদিও সবারই আলাদা আলাদা সংসার, তবুও যে কোন উপলক্ষে বাবা চাচারা সবাই একসাথে হয়ে যায়। উপলক্ষের দিনগুলোতে একসাথে খাওয়া দাওয়া, আড্ডা সব একসাথে। ওরা কাজিনরা মিলেই বিশাল এক গ্যাং। ওদের সাথে থাকলে সময় যেন ফুর ফুরিয়ে পাড় হয়ে যায়। সাঁচি আর ফুয়াদের দুটো দিনও কিভাবে যে পার হলো ওরা টেরই পেলো না। সবসময় লোকজনের ভীর থাকার কারনে ফুয়াদ আর সাঁচি নিজেদের জন্য কোন সময়ই বের করতে পারলো না। দুজনে চাইলেও একাকি সময় কাটানো পারলো না। হয় ওর কাজিনরা সব চলে আসতো আড্ডা দিতে। আর নয়তো ওদের দাওয়াত থাকতো কারো না কারো বাসায়। আর ফুয়াদ ও কেন কে জানে খুশি মনে আড্ডা দিতো। নতুন জামাই বলে মনেই হতো না ওকে। ওর ভাই বোনদের সাথে ফুয়াদ এমনভাবে মিশে গেছে যে, কেউ বিশ্বাসই করবে না ও এ বাড়ির নতুন জামাই। সারাদিন আড্ডা বাজি, তারপর খাওয়া দাওয়া, হৈ-হুল্লোড়ের করে রাতে দুজনেই এতো টায়ার্ড থাকতো যে নিজেদের মধ্যে আর কথা বলার সুযোগ হতো না। তাই আজ শশুড়বাড়ি ফিরে একটু সস্তির নিশ্বাস ফেললো সাঁচি। মনে হচ্ছে এবার একটু আরাম করে শ্বাস ফেলে গল্প করা যাবে ফুয়াদের সাথে। নিজেদের চেনাজানার সুযোগ পাওয়া যাবে এইবারে।

সাঁচিকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই ফুয়াদ অফিসে চলে গেছে। যদিও আরো দুদিন ছুটি আছে ফুয়াদের, বিয়ে উপলক্ষে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছিলো। কিন্তু অফিসে হঠাৎ করে কি যেন জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই যেতে হয়েছে।

ফুয়াদের ফ্লাটটা দক্ষিনমুখী আর চারিদিকে খোলামেলা হওয়ায় কারনে আলো বাতাসের কমতি নেই কোনো। বেশ ভালো লাগছে সাঁচির। গতদিন নতুন ছিলো তাই অত ভালোভাবে খেয়াল করেনি। আজ বেশ ফুরফুরে মনে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো আর গল্প করছিলো প্রিয়তার সাথে। প্রিয়তা ওদের সবার বিষয়ে জানাচ্ছিলো সাঁচিকে। ফুয়াদদের স্হায়ী ঠিকানা টাঙ্গাইল। পড়ালেখার উদ্দেশ্যে ফুয়াদ ঢাকায় এসেছিলো। তারপর পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করে ফুয়াদ নিজের টাকায় ঢাকায় শ্যামলীর আদাবরে ফ্লাট কিনেছে। বাবা মা মাঝে মাঝে ওর কাছে এসে থাকে তবে বেশিরভাগ সময় টাঙ্গাইলেই থাকে। ঢাকায় থাকলে নাকি দম বন্ধ লাগে উনাদের। আর প্রিয়তার বিয়েও হয়েছে ঢাকায়, মোহাম্মদপূর শশুড়বাড়ি ওর। দু ভাইবোন কাছাকাছি থাকার জন্যই নাকি ফুয়াদ এখানে ফ্লাট কিনেছে। এসব গল্পই করছিলো প্রিয়তা।

সাঁচি আসার পর থেকে প্রিয়তার মেয়ে প্রিতি ওর সাথে আঠার মতো লেগে আছে। দু বছর বয়স ওর, আধো আধো বোলে ওকে সাঁচি বলে ডাকছে, শুনতে খুব ভালো লাগছে সাঁচির। ও প্রিতিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করলো, ক্ষুনশুটি করলো খানিকক্ষণ।
“থাতি..এই.. .থাতি, তুমি আমার সাথে থেলবে?”
“হ্যা গো থেলবো তো! ”
“তলো খেলি, আমাল অনেকগুলো ডল আতে তলো ওদের নিয়ে তেলি।”
“ওলেএএএ,সোনা বাচ্চাটা…”
প্রিতিকে গাল ভরে চুমু দিলো সাঁচি। একেবারে একটা ডল। খালি আদর করতে ইচ্ছা করে শুধু!
প্রিয়তা কিছুক্ষণ ওদের দুজনার দিকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর হঠাৎই সাঁচিকে বললো-
” ভাবি, ভাইয়ার সাথে কতদূর এগোলো গো?”
” কি বলো এগুলো! কি এগুনোর কথা বলছো?” গাল আরক্ত হলো সাচির।
” এই, বলোনা! ভাবি,কিছুদূর আগালো কি? আমাকে তো বিয়ের পর তারেক খুব জ্বালাতো, জানো!? তখন অল্প বয়স আমার! এসবের কিছুই বুঝি না! তার উপর বিয়েটা একরকম জোর করে দেওয়া। আমার তো ভীষন ভয় হতো ওকে। আগে থেকে তো চিনি না, কেমন মানুষ, কি, কিছুই জানিনা। প্রথম দিকে খুব জোরাজোরি করলেও পরে বুঝতে পেরেছিল যে আমি ওকে ভয় পাই। তাই পরে আর ফোর্স করে নাই। উল্টো আমার ভয় ভাঙানোর চেস্টা করতো। শেষে একদিন নিজেই ধরা দিয়েছিলাম ওর জালে। সে হিসেবে আমার ভাই তো অনেক ভালো। ও মেয়েদের অনেক সম্মান করে। ওকে যতদুর জানি, জোর ও কখনো করবে না। বরং ভালোবাসার জন্য ওয়েট করবে!”
” হুম, তোমার ভাই একটু বেশীই ভালো। এত বেশী সম্মান করে যে কাছেই আসে না। শুধু দূরে দূরে পালিয়ে বেড়ায়।” বিরবির করে সাঁচি।
“কি গো কি বলছো বিরবির করে।”
” আরে না! কিছু না। চলো যাই দেখি মার রান্নার কাজে কোন হেল্প লাগবে কি না?”

৮.

দুপুরে একসাথে খেতে বসার আগে ফুয়াদকে ফোন দিয়েছিল সাঁচি যে, খেতে আসবে কিনা? ফুয়াদ জানালো সে একবারে রাতে আসবে। কাজে শেষ না করে আসতে পারবে না। অগত্যা ওরা খেতে বসলো ফুয়াদকে ছাড়াই। খাওয়ার টেবিলে প্রিয়তা বললো যে, ও আজ চলে যাবে। রাতে তারেক নাকি নিতে আসবে। শুনে মন খারাপ হলো সাঁচির। প্রিয়তা না থাকলে বাড়িটা একেবারে খালি খালি লাগবে। এর মধ্যে ওর শশুর জিজ্ঞেস করলো-
“বউমা, কোথাও বেড়াতে যাবে নাকি তোমরা?”
“জানিনা বাবা, আপনার ছেলে বলতে পারবে। আমার সাথে অবশ্য কোনো কথা হয়নি যাওয়ার ব্যাপারে।”
“ওহহ, আচ্ছা। আমি তাহলে কথা বলবো ফুয়াদের সাথে।”

খাওয়া দাওয়ার পর সব গুছিয়ে নিতে শাশুড়ী কে হেল্প করলো সাঁচি। তারপর দুপুর এ একটু ভাত ঘুম দেওয়ার জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সাঁচি। মোবাইলে নিজের বিয়ের ছবিগুলো দেখছিলো আর মনে মনে হাসছিল। সবাই বলছে, ওদের জুটিটা নাকি একেবারে ‘মেড ফর ইচ আদার’ টাইপ। সত্যি কি তাই? ছবির ফুয়াদের সাথে কথা বলছিল সাচি-
” এই, লাজুক পাখি! বউয়ের সাথে এতো কেন লজ্জা তোমার? এতো পালিয়ে বেড়াও কেন বলোতো? বউয়ের সাথে একটু কথা বললে, একটু হাতটা ধরলে কি হবে? গল্প করতে করতে আমার মুখে একটু আঙুল ছুয়ে দিলো কি ক্ষতি তোমার? দুষ্ট লাজুক বানর কোথাকার!! আজকে তোমায় ছাড়ছি না কিন্তু? আজ তোমার কথা বলতেই হবে আমার সাথে! এ কি কথা! বিয়ে হয়েছে চারদিন হয়ে গেলো তবুও বউয়ের সাথে বসে দুদন্ড কথা বলার সময় নেই? ”
লাজুক হাসল সাঁচি। ফুয়াদের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমে তলিয়ে গেল।

সাঁচির যখন ঘুম ভাংলো তখন পুরো রুম অন্ধকার। জানালার পর্দাগুলো টেনে দেওয়ার কারনে সাঁচি বুঝতে পারছিলো না রাতের শুরু নাকি শেষ! শেষে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দেখলো সন্ধা সাতটা বাজে প্রায়। এতোক্ষন ঘুমিয়েছে! কেউ ডাকেনি কেন ওকে! প্রিয়তা কি চলে গেল নাকি! হুর মুর করে উঠতে যেয়ে বাধা পেল, শাড়ির আঁচলে টান পরলো। বাধ্য হয়ে আবার শুয়ে পরলো সাঁচি। মোবাইলটা ওদিকে ধরতেই দেখতে পেল ফুয়াদ গালে হাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। আর ওর কাঁধের নিচে সাচির শাড়ির আঁচল।

ওমা! এই লোক কখন এলো! এসেছে তো এসেছে ওকে ডাকেওনি! নিজের কাপড়টাও চেঞ্জ করেনি! ওভাবেই শুয়ে গেছে ওর পাশে। মোবাইলের আলোটা ফুয়াদের মুখ থেকে একটু দুরে রেখে সাঁচি অপলক তাকিয়ে রইলো ফুয়াদের দিকে। মোবাইলের নীলচে আলোয় ফুয়াদকে অপরুপ লাগছে। আচ্ছা! ছেলে মানুমানুষ কেন এতো সুন্দর হবে? একটু কম সুন্দর হলে কি হতো? ঠোঁট দুটো কেমন ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছে দেখো! সাঁচির প্রচন্ড ইচ্ছে হলো টুপ করে ফুয়াদের ঠোঁটে নিজের ঠোটটা একটু ছুইয়ে দিতে। অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করলো সাঁচি। সে বরং আবার ফুয়াদকে দেখায় মন দিলো।

গত তিনদিন ধরেই সাঁচি এই কাজ করছে। ফুয়াদ ঘুমিয়ে গেলে ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই লোকটাকে অসম্ভব ভালো লেগে গেছে। কি যে আছে ওর মধ্যে যা সাঁচিকে চুম্বকের মতো টানছে!? আচ্ছা! এই লোকটাকে ওর এতো ভালো লাগছে কেন? লোকটা ওকে ইগনোর করছে সেজন্যই কি? নাকি ওর জেন্টেলম্যান স্বভাবের কারনে? নাকি ও দেখতে সুন্দর বলে! নাকি ওর স্বামী বলে? ও শুনেছে বিয়ে হয়ে গেলেই নাকি বাঙালি নারীর স্বামীর প্রতি আলাদা টান হয়? আগে বিশ্বাস হতো না কথাটা। কিন্তু এখন নিজের ক্ষেত্রে এসে সত্যি মনে হচ্ছে কথাটা।

আচ্ছা!ফুয়াদ যদি ওকে জোর করে কাছে টানতো তাহলে কি এতো ভালো লাগতো ওর! কি জানি!? সব জায়গায় দেখা যায় বিয়ের পর ছেলেরা বউয়ের পিছন পিছন ঘুরে, ওর ক্ষেত্রে উল্টোটা। সাঁচি বেশ বুঝতে পারে, ফুয়াদ ওকে খুব সন্তর্পনে এভোয়েড করছে। ও যে সাঁচিকে এভোয়েড করছে এটা ওকে বুঝতে দিতে চাইছে না। আচ্ছা পাগল লোক তো! ওর যদি কোন প্রবলেম থাকে তাহলে সাঁচিকে মুখে বললেই তো হয়! এতো কি ভয়? ফুয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘোর লেগে যাচ্ছে সাঁচির। প্রচন্ড আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে বসে থাকতে!? মনেহচ্ছে ফুয়াদ একটু আদর করুক ওকে। এতো জোরে জাপটে ধরুক ওকে যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় ওর! ভাবতেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো সাঁচির। গা হাত পা শিরশির করে উঠলো, কান, মুখ গরম হয়ে গেলো। ইশ! ইচ্ছে গুলো এতো বেহায়া ক্যান!!??? দিবে নাকি ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে। অচেনা অনুভূতি কাবু করে ফেলছে সাঁচিকে। এই আলো আঁধারের মাঝে মোহগ্রস্থের মতো ফুয়াদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সাঁচি। ফুয়াদের নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে এখন। এই সময় দড়জায় নক হলো-
” ভাবি, এই ভাবি, তোমরা কি উঠবে! আমি চলে যাবো তো!”
হঠাৎ ডাকে সাঁচি ব্যালান্স রাখতে না পেরে ফুয়াদের গায়ের উপর পরলো, সাঁচির ঠোঁট ফুয়াদের ঠোঁটে বাড়ি খেলো। ভয় আর লজ্জায় সাঁচি চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আর ওদিকে ফুয়াদ এমন আতর্কিত আক্রমনে লাফ দিয়ে বিছানায় বসে পরলো। কি হচ্ছে না হচ্ছে, অন্ধকারে কিছু বুঝতে পরছিলো না। সাঁচিকে এতো কাছাকাছি অনুভব করে একটু বোকা বনে গেছে ও। তারাতারি উঠে ঘরের বাতি দিলো। সাঁচিও ততক্ষণে শাড়ির আচল জড়িয়ে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। ফুয়াদ হয়তো বুঝেনি কি হয়েছে। ওকে আর বুঝতে দিতে চায় না সাঁচি। ফুয়াদ ঘুরে দেখলো সাঁচি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ও এগিয়ে এলো-
” কি হয়েছে সাঁচি! ভয় পেয়েছো নাকি?”
“ননন না নাতো। আসলে প্রিয়তা আপু ডাকছে অনেকক্ষণ যাবত। ঘুমের মধ্যে উঠতে গিয়ে আপনার গায়ের উপর পড়ে গেছি। আপনি যে পাশে শুয়েছেন তাতো জানতাম না??”
“সরি, আসলে অফিস থেকে এসে এতো টায়ার্ড লাগছিল যে ওভাবেই শুয়ে গেছিলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।”
” ইটস ওকে। এখন দরজাটা খুলুন। আপু অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে আপনাকে।”
ফুয়াদ আর কিছু না বলে দরজা খুলে বাইরে গেলো।

৯.

রাতে খাওয়ার টেবিলে সাঁচির শাশুরি জানালো দুদিন বাদে তারাও টাঙ্গাইল চলে যাবে। বিয়ে উপলক্ষে গত একমাস ধরে ঢাকায় থেকে তারাও অস্থির হয়ে গেছে। তাই কিছুদিন খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে চান। ফুয়াদের বাবা ফুয়াদকে জিজ্ঞেস বললো, সাঁচিকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে। ফুয়াদ জানালো ওর হাতে এই মুহুর্তে বড়সড় একটা প্রজেক্টের দ্বায়িত্ব আছে। এটা শেষ না হলে কোথাও যাওয়া সম্ভব না। উনি আর কিছু বললেন না। খাওয়া শেষে সাঁচির শাশুড়ি ওকে ডেকে নিয়ে গেল নিজের রুমে।
” সাঁচি মা, তোমায় কিছু বলতে চাই?”
“জ্বী মা, বলুন না।”
” আমরা চলে গেলে তুমিতো একা হয়ে যাবে। ফুয়াদ ও ওর কাজে ব্যাস্ত থাকবে। খারাপ লাগবে হয়তো তোমার।”
” না মা সমস্যা নেই। আমারও নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবে।”
” তাহলে তো ভালোই।” বলে মহিলা সাঁচির হাত দুটো নিজের হাতে মধ্যে নিলো
” মা, আমার ফুয়াদ বড্ড চাপা। ওর মনের ভেতর কি চলছে ও কাউকে বুঝতে দেবে না। ভিতরে ভিতর কস্ট পাবে, নিজে শেষ হবে তবুও কাউকে জ্বালাবে না। তাই আমি তোমাকে অনুরোধ করছি মা ওর দিকে খেয়াল রাখবে। ও হয়তো কখনোই কোন কিছুর জন্য তোমায় কিছু বলবে না, তোমার উপর কখনো অধিকার ফলাবে না। ও এরকমই। নিজের চাওয়া পাওয়াগুলো নিজের মাঝেই রাখে আর কস্ট পায়। তুমি প্লিজ ওকে একটু বুঝে চলিয়ো মা। নিজের অধিকার আদায়ে তোমাকেই হয়তো এগিয়ে যেতে হবে? তাই বলে এটাকে নিজের অবমাননা ভেবে ভুল করো না! পৃথিবীতে সব মানুষ তো সমান হয় না, তাই না? আমার বাচ্চাটা এরকম বলেই তো তোমার মতো হীরা খুজে এনেছি। ওর ভালো মন্দের দ্বায়িত্ব আজ থেকে তোমার, মা। ”
মায়ের টলোমলো চোখে আকুতি ফুটে উঠছে।
” মা, এভাবে বলছেন ক্যানো! এটাতো আমার দ্বায়িত্ব। আমি নিশ্চয় ওনার খেয়াল রাখবো।”
” আমি নিশ্চিত হলাম মা। আমার আর কোনো চিন্তা রইলো না। তবে তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি একা নও। যখনই তোমার প্রয়োজন হবে আমাকে ডাকলেই তুমি আমাকে তোমার পাশে পাবে।”
” থ্যাংকু মা।”
ফুয়াদের মা সাঁচিকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিলেন-
” যাও, শুয়ে পরো। অনেক রাত হয়েছে। ”
“জ্বী, মা।”

মনে মনে খুশি হলো সাঁচি। যাক বাবা লোকটা সম্পর্কে কিছু তো জানা গেল! এখন ওর সাথে ডিল করা যাবে! এই ছুপা রুস্তম কে এখন জনসম্মুখে আনার কিছু একট উপায় করা যাবে। কিন্তু কি উপায় টা কি হবে? ভাবতে ভাবতে আরক্ত হয় সাঁচি। এমন লাগে কেন? এ কেমন অনুভুতি? ফুয়াদকে নিয়ে ভাবলেই এমনটা হচ্ছে। এটা কি শুধুই শারীরিক আকর্ষন? বিয়ের পরে সবাই কি এই অনুভুতির মধ্যে দিয়ে যায়? সাঁচির মনে প্রশ্নগুলো ঘুর পাক খায়। হঠাৎ মনে পড়ে যায় তখনকার অনাকাঙ্ক্ষিত কিস এর কথা। ইশ! তখন কিস টা হলো কিন্তু কিছুই টের পেল না ফুয়াদ! সাঁচি নিজেও তো ফিলিংসটা পেলো না পুরোপুরি! প্রথম স্পর্শের অনুভুতি উপলব্ধির তীব্র আকাঙ্খায় সাঁচির গায়ে শিহরন উঠলো। কেঁপে উঠে দু হাতে মুখ ঢাকলো সাঁচি!!!

চলবে—-
©‌‌‌‌Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here