অসময়ের বৃষ্টিফোটা পর্ব ৩

0
940

#অসময়ের_বৃষ্টিফোঁটা
#তৃতীয়_পর্ব
#মাহজাবীন_তোহা

আজ সকালে ঢাকায় মামার বাসায় ফিরে এসেছে তোহফা। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য পাঁচদিন সময় নষ্ট হয়েছে। এখন তোড়জোড় করে পড়াশুনা শুরু করতে হবে। এসব ভাবনা নিয়েই পড়তে বসলো সে।

হঠাৎ কারো ডাকে ভীষণ বিরক্ত হলো তোহফা। পড়ার সময় ডিস্টার্ব করা তার একদমই অপছন্দের। তার উপর ম্যাথ করার সময় মাথা খুব ঠাণ্ডা রেখে ম্যাথ করতে হয়। ইন্টিগ্রেশন এর ম্যাথ গুলো একেবারে যা তা লেভেলের ম্যাথ। ডিফারেনসিয়েশন এর মতো সহজ না। তার উপর ইকুয়েশন ভুল হলে এতো বড় ম্যাথ গুলো দ্বিতীয়বার করার ধৈর্য থাকে না। দুটো ম্যাথ সলভ করেছে। তিন নাম্বার ম্যাথ শুরু করতে যেতেই দরজার করাঘাতে বিরক্ত হলো। উঠে দরজা খুলে দেখে মামী দাড়িয়ে আছে। তোহফা খানিকটা বিরক্তি নিয়েই বলল,
– “মামী, পড়ার সময় ডিস্টার্ব করবে না কতবার বলেছি।”
শাহনাজ পারভীন (তোহফার মামী) দ্বিগুণ তেজ দেখিয়ে বললেন,
– “রাখ তোর পড়া। সেই তো সকালে এসে রুমে ঢুকেছিস, এখন নয়টা বাজে। নাস্তা করতে আয়। কোনো কথা আমি শুনবো না।”
বলেই চলে গেলেন তিনি। অগত্যা ম্যাথ রেখে খেতে বসল তোহফা।
তোহফার সাথে তার মামীও বসলো খেতে। মামা সকালেই বেরিয়ে গেছে অফিসে। সামি (তোহফার মামাতো ভাই) স্কুলে। দ্রুত খেয়ে প্লেট ধুতে গেলেই আবারও ধমক খেল তোহফা।
– “এতক্ষণ তো পড়ার জন্য খেতে চাচ্ছিলি না। এখন আবার কিসের প্লেট ধোয়া। চুপচাপ যেয়ে পড়তে বস। ভালো কোথাও চান্স না পেলে তোর মাকে বলে ধরে বিয়ে দিয়ে দেব।”
মামীর কথায় প্লেট বেসিনে রেখে রুমের দিকে হাঁটা দিল তোহফা। ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসির রেখা। মায়ের পরে এই নারীটিকে সে শ্রদ্ধা করে। একদম খাঁটি সম্মান আর শ্রদ্ধা তার এই মানুষটির প্রতি।

___________________________
গরমে জামা কাপড় ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। রোদের মধ্যে এভাবেই দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে ইরা। মেজাজটা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে তার। বাসের আশা ছেড়ে যে রিকশা নেবে সেই উপায়ও বোধহয় নেই। রাস্তায় একটা খালি রিকশা দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ একটা রিকশা চোখে পড়তেই বাসের আশা ছেড়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো কিন্তু হুট করেই কোত্থেকে যেনো একটা ছেলে এসে রিকশাতে উঠে পড়লো। এতক্ষণ ধরে নিয়ন্ত্রণে রাখা মেজাজ এবার ঝাড়ল রিকশার ছেলেটির উপর।
– “এইযে মিস্টার, রিকশা আমি ডেকেছি। আপনি উঠেছেন কেনো? ম্যানার্স বলতে কিছু নেই নাকি আপনার?”
রিকশায় বসা ছেলেটি অবাক হয়ে তাকালো ইরার দিকে। সে একবারও দেখেনি কাওকে রিকশা দাড় করাতে। মেয়েটিকে হেঁটে আসতে দেখেছিলো কিন্তু বুঝেনি রিকশার দিকেই আসবে। তাই উঠে পড়েছে। মেয়েটির দিকে ভালোমতো তাকাতেই ঝটকা খেলো। ইরাও একইভাবে ঝটকা খেলো। তারপর কোনোরকমে বলল,
– “যযযযান আপপপপনননননি”
বাঁকা হাসলো রিকশায় বসে থাকা সাহেল। বলল,
– “আমি সামনে নিউ মার্কেট যাবো। আপনাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেবো। উঠে আসুন।”
সেদিনের ঘটনার পর আর সাহেলের মুখোমুখি হয়নি ইরা। কোনরকম রিসিপশন অ্যাটেন্ড করেই বাসায় ফিরেছিলো মা বাবার সাথে। সাহেল বুঝতে পেরেছিল। তার ইচ্ছে ছিলো খোঁচানোর এই বিষয়টা নিয়ে কিন্তু সে আর কিছু করেনি। পাছে আবার কি না কি মনে করে বসে। ইরা সেই লজ্জায় এখনও যেতে চাইছে না কিন্তু এই মুহূর্তে বাস, রিকশা কোনোটাই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইরাকে উশখুশ করতে দেখে সাহেল শান্ত কণ্ঠে বলল,
– “এতো লজ্জা পেতে হবে না। উঠে আসুন।”
আর কিছু না বলে উঠে পড়ল ইরা। যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেছে। আর সরলেই সোজা রাস্তায় পড়বে। সাহেল হাসছে। মজা করে কত কথাই বলে অথচ মেয়েটা ভাবছে মেয়েটার কথা সাহেল সিরিয়াস ধরে বসে আছে।

বাসার সামনে পৌঁছুতে দেরি হলেও নেমে বাসার দিকে দৌঁড় দিতে দেরি হলো না ইরার। একটা ধন্যবাদ যে দিবে কিংবা তার রিকশা ভাড়া যে দিতে হবে সব যেনো মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো তার। তার দৌঁড় দেখে সাহেলের মনে হয়েছে মেয়েটার এই মুহূর্তে বাসায় যাওয়া প্রয়োজন নাহলে পৃথিবী এপাশ থেকে ওপাশে চলে যাবে। হেসে রিকশাওয়ালাকে সামনে রিকশা বাড়াতে বললো সাহেল।

রুমে ঢুকেই জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিলো ইরা। এতক্ষণ দম আটকে সাহেল এর পাশে বসে ছিলো। ইশ!! সেদিন ওমন কথা কেনো যে বলতে গিয়েছিলো আল্লাহই ভালো জানেন। হঠাৎ মনে পড়ল রিকশা ভাড়া দেওয়া হয়নি, একটা ধন্যবাদও দেওয়া হয়নি। আবারো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হলো ইরার। ছেলেটা তাকে কোন পর্যায়ের ছ্যাচড়া ভাবছে আল্লাহ মালুম!!

_________________________
একমনে কোডিং করে যাচ্ছে তানভীর। এই মুহূর্তে কোনোদিকে মনোযোগ নেই তার। কালকে লাস্ট পরীক্ষা। এই পরীক্ষা খারাপ হলে এতোদিন ভালো হওয়া সব পরীক্ষা মাটি যাবে। সব সিলেবাস আজকের মধ্যেই শেষ করতে হবে। রাত বারোটায় পড়তে বসেছিলো আর এখন সকাল সাড়ে আটটা বাজে। মাথা ধপধপ করছে তবুও কোডিং করে যাচ্ছে সে। এগুলো কমপ্লিট করে আবার পিসি নিয়ে বসতে হবে। তারপরে ব্রেকফাস্ট করে ঘুমোনো দরকার। তাই দ্রুত শেষ করার চেষ্টায় আছে সে। এরই মাঝে তার রুমমেট জাহিদ উঠে পড়লো। তাকে টেবিলে দেখে বললো,
– “কিরে? সারারাত পড়েছিস নাকি?”
তানভীর আনমনেই জবাব দিলো,
– “হু।”
– “তুই পারিসও বটে। এবার ঘুমিয়ে পড়। কয়েকঘন্টা ঘুমিয়ে আবার পড়িস।”
এবারও দায়সারা ভাবে হ্যাঁ সুচক জবাব দিলো তানভীর কিন্তু তার মধ্যে উঠার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। জাহিদ আর এ নিয়ে ঘাটাল না। ছেলেটা একরোখা স্বভাবের। যেটা ওর প্রয়োজন সেটা ওর চাই মানে চাই। যেকোনো মূল্যে সেটা নিজের করে নেবে। তার মধ্যে একটা হলো সিজিপিএ। গত সব সেমিস্টার ফোর আউট অফ ফোর পেয়ে কমপ্লিট করেছে তানভীর। দুনিয়া ভেসে যাক কিন্তু তানভীরের সিজিপিএ চার এর নিচে নামবে না। এটা অসম্ভব। জাহিদ উঠে যেতেই আবারও কোডিং এ মনোযোগ দিল সে। সবগুলো কমপ্লিট করে পিসি নিয়ে বসলো। প্রোগ্রামিং শেষ করে ঘুমোতে যাবে। আসলেও মাথা ধরে আছে। ঘুমোনো দরকার।
পিসি চালু করতেই টেবিলে শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখে জাহিদ চা এনেছে। মুচকি হেসে চা মুখে দিলো তানভীর। জাহিদ আবারও খাটে বসে বলল,
– “আমি দুইটা টপিক বুঝতে পারিনি কাল রাতে। তুই কি আমাকে তোর নোটস দিতে পারবি ওই দুটো টপিকের?”
– “টেবিলে রাখা আছে। নিয়ে নিস।”
– “এবারও ফার্স্ট হয়ে যাবি। আমাকে কি তুই একবারও প্রথম হওয়ার স্বাদ নিতে দিবি না? সবসময় কি সেকেন্ড হবো?”
জাহিদের এমন কথায় পিসি থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তানভীর। তারপর আবার পিসিতে মনোযোগ দিয়ে বলল,
– “তোর পড়াশুনা কি আমি আটকে রেখেছি? নোটস চাইলে সেটাও দিচ্ছি।”
– “তুই পড়াশুনাটা আরেকটু কম কর। তাহলেই হয়ে যাবে।”
জাহিদের কথায় হাসল তানভীর কিন্তু আর কথা বাড়ালো না। একমনে কাজ করতে লাগলো। জাহিদও ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। তারও বেশ খানিকটা সিলেবাস বাকি। ফার্স্ট পজিশন ইহজীবনে পাবে না তানভীরের জন্য। কিন্তু যেটা আছে সেটা হাতছাড়া না করারই আপ্রান চেষ্টা তার।

চলবে??

বি দ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here