অরণ্যবহ্নি পর্ব-৭

0
614

#অরণ্যবহ্নি
||৭ম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
একটি অন্ধকারচ্ছন্ন কামরার মূল দেয়ালে ঝুলছে মাদার ম্যারি ও যিশুখ্রিস্টের মূর্তি এবং অপর দেয়ালে মাঝারি আকারের ক্রস। বেশ খাণেক মোমবাতি জ্বলছে রুমটিতে আলোর উৎস স্বরূপ, তবুও কেমন যেন অন্যরকম আঁধার।

একটি বারো-তেরো বছরের ছেলে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। ছেলেটা একা একাই অজানা এক ভাষায় বিড়বিড় করছে।

ফাদার মাইকেল ও তার কয়েকজন সঙ্গী কামরায় প্রবেশ করে। ছেলেটা হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয় তাদের উদ্দেশ্যে।

“It’s enough now! How much will you make the boy suffer? leave him! (এখন যথেষ্ট হয়েছে! আর কত কষ্ট দিবে ছেলেটাকে? তাকে যেতে দাও!)

ছেলেটা খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে উঠে। হাসির ঝংকার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চেয়ারটা ভূমি থেকে একটু একটু করে উঁচু হয়ে উঠছে।

দানবীয় এক আওয়াজ বের হয়ে আসে তার দেহ হতে,
“I will never leave his body. It’s mine now. You will die! All will die!” (আমি কখনও তার দেহ ছাড়বো না। এটা আমার এখন। তুই মরবি! সবাই মরবে!)

ফাদার মাইকেল তার সঙ্গীদের ইশারা করেন। শুরু হয় এক্সরসিজম প্রক্রিয়া। টানা তিন ঘণ্টা চারজন পাদ্রির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় অপশক্তি মুক্ত হয় ছেলেটি।

পাদ্রিরা একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ছেলেটির বাবা-মাও ততক্ষণে ঘরে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের চোখেও কৃতজ্ঞতার অশ্রু।

ঠিক ঐ মুহূর্ত ফাদার মাইকেলের ফোনটিতে কলিং রিংটোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে ভেসে উঠে ‘আবেগ’ নামটি।

“Hello Father?”

“Yes, dear. How are you? (হ্যাঁ, প্রিয়। তুমি কেমন আছো?)”

“I don’t know what should I say. Just wanna let you, I am not fine. I just want you to do the help quickly.(আমি জানি না আমার কি বলা উচিত। শুধু আপনাকে জানাতে চাই, আমি ভালো নেই। দয়া করে দ্রুত সাহায্য করুন।)

সহানুভূতি হয় ফাদার মাইকেলের যুবকটির উদ্দেশ্যে। নিজের চোখের সম্মুখে ছেলেটিকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন, এতো অল্প বয়সেই কী গভীর বিপদে ফেঁসে গেল।

“I will try my best dear bayazid. But now I have to go, I am in a middle of some work. (আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব প্রিয় বায়েজিদ। কিন্তু এখন আমাকে যেতে হবে, আমি কিছু কাজের মাঝে আছি।)

” Yeah, as you wish father. (জী, আপনার যা
ইচ্ছা ফাদার)”

কল ডিসকানেক্ট করে দেয় আবেগ। এদিকে মধ্যবয়স্ক পাদ্রি নিজের সদ্য চিকিৎসা করা ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার মা-বাবার হাতে তুলে দেন।

___

নিজের রুমের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত এলোমেলো পদচারণায় পায়চারি করছে। তার হৃদয় ছটফট করছে যখন হতে জানতে পেরেছে আবেগের জীবনাশঙ্কার বিষয়ে। তার উপর কী হচ্ছে এখানে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার।

ভাবছে,
– তার কী করা উচিত? সরাসরি আবেগ বা দিদাকে প্রশ্ন করা উচিত কী হচ্ছে এখানে? না কি আকার-ইঙ্গিতে বোঝানো উচিত সে জানতে চায়?

ঠক! ঠক!

করাঘাতের শব্দ শ্রবণগত হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে দোয়ারের দিকে তাকায় সে। আঁখিজল ওড়নাতে মুছে দরজা খুলে দেয় সে।

তবে কোথাও কেউ নেই। কিন্তু একঝাঁক উষ্ণ বায়ু যেন প্রবেশ করলো কামরাতে। হঠাৎই তার মনে হচ্ছে সে কারো গভীর দৃষ্টির পর্যবেক্ষণে আছে। কেউ যেন তার উপর নজর রাখছে। অশান্ত হয়ে উঠছে সে, অস্থির লাগছে।

“দিদিমণি! দিদিমণি! শুনছেন? খাবার দেওয়া হয়েছে টেবিলে। এসে খেয়ে যান।”

খাবার ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলেন শকুন্তলা দেবী। আকস্মাৎ চিৎকারে ভয় পায় সামায়া। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়।

“আমি একটু পরে আসছি মাসী।”

উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাড় হয়ে পড়ে দেহ। কারণ নিজের পিছন বরাবর কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছে সে।

“Complete the deal!(চুক্তিটি পূরণ করো!)

ফিসফিসিয়ে উচ্চারণ করে পরিচিত সেই দানবীয় কণ্ঠের। প্রচণ্ড রকমের ভয় নিয়ে ঘাড় ও নজর ঘুরায় সে। ভেসে উঠে এক বিভৎস নারী মুখশ্রী, নারীটির জিভ বাহিরে বের হয়ে আছে। চোখের কোটর দুটি শূন্য পড়ে আছে, যেন কেউ তুলে নিয়েছে দু’চোখ। ঘাড়টি বা’পাশের কাঁধে এলিয়ে আছে যেন মুচড়ে দেওয়া হয়েছে।

সামায়া সহ্য করতে পারে না। হৃদয়বিদারক এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায় সে সেখানেই।

আবেগ, মিহিরুন্নিসা বানু ও শকুন্তলা দেবী ছুটে আসেন। আবেগ সামায়াকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে তাৎক্ষণাৎ তাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।

অতঃপর অসহায় দৃষ্টিতে দিদার দিকে তাকায়। ইশারায় তাকে আশ্বাস দেন মিহিরুন্নিসা বানু।

“মাইয়াটা আশার পর থেকে একটা একটা বিপদ লাইগাই আছে। মেমসাহেব, আমি তো বলি ওঝা ডাকান, নিশ্চয়ই দিদিমণির পিছনে কোনো খারাপ ছায়া লাগসে।”

“আহা! কুন্তলা বৃথেই এসব অহেতুক কথা বলবে না তো! তুমি ঘুমাতে যাও। অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে তোমার নাক গলানো লাগবে না।”

কিছুটা রেগেই যান বৃদ্ধা। শকুন্তলা দেবীও আর কথা বলার সুযোগ পান না। শব্দহীন পায়ে বেরিয়ে যান।

“দিদা, এখন কী হবে? আমরা যা সন্দেহ করেছিলাম তা-ই হচ্ছে, আমার জীবনের কালো অভিশাপ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে মায়াবালিকার জীবনেও। আমার ভয় হচ্ছে দিদা, খুব ভয়। এতোটা ভয় নিজেও জন্যও পায়নি, আমার জন্য যদি আমার ছোট্ট মায়াবালিকার গায়ে মলিনতার রেশ টুকুও রয়ে যায় আমি আত্মাহীন লাশ হয়ে যাবো।”

“আবেগ দাদুভাই, তুমি চিন্তা কোরো না। আমি আপাতত একটা উপায় বের করেছি সামুকে এসব থেকে দূরে রাখার। আগামীকাল নেত্রকোনা থেকে একজন নামকরা রাক্বী আসছে এখানে।”

আবেগ খেয়াল করে তাদের কথা বলার মধ্যিখানেই সামায় শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে গিয়েছে, জ্ঞানশূন্য অবস্থাতেই যেন দিশেহারা হয়ে উঠছে রমণীটি। তবে কি তার মতোই জঘন্যতম ভয়ঙ্কর স্বপ্ন তাড়া করছে তার মায়াবালিকাকে?

“দিদা দেখো, দেখো, আমার মায়াবালিকার কষ্ট হচ্ছে। আমার অভিশাপ তার স্বপ্নের জগৎও আঁধার করে দিচ্ছে। আমি জানি কতো কষ্ট হয় এসবে। আমি আর এক দণ্ড তাকে এসব সহ্য করতে দিব না।”

বলতে বলতেই নিজের গায়ে জড়ানো একটি বিশেষ ধরনের লকেট থাকা চেইনটি খুলতে শুরু করে সে। মিহিরুন্নেসা বানু ছুটে যেয়ে নাতির হাত ধরে আটকান।

“এ কী ধ্বংসলীলাকে দাওয়াত দিচ্ছিস দাদুভাই! এই চেইনটা খুলতে দেরি হবে ঐ অপশক্তির তোকে কাবু করতে নয়। তোকে হাতিয়ার বানিয়ে সবার ক্ষতি করবে ও। খুলিস না দাদুভাই। খুলিস না।”

আবেগ উন্মাদের ন্যায় সামায়ার পাশে মেঝেতে বসে পড়ে। দু’হাতে নিজের চুল টানতে টানতে প্রশ্ন করে,
“তো কী করবো আমি দিদা? আমার চোখের সামনে আমার জন্য মায়াবালিকাকে এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে দেখবো।”

“ধৈর্য্য ধর দাদুভাই। ধৈর্য্য ধর। আজ ঐ অমানুষটার জন্য এ দশা সবার। জানি না কোন দোষ করেছিলাম যার জন্য এমন পাপী আমার পেটে ধরেছিলাম। তবে তুই চিন্তা করিস না। তা না করে আমরা দু’জন মিলে তিন কূল ও কোরআন তিলাওয়াত করি সামায়ার সামনে বসে। আল্লাহর রহমতে ও শিফা পাবে।”

দিদার কথা শুনে এক ফালি আশার আলো দৃশ্যমান হয় যুবকের নিকট। দ্রুতে উঠে দাঁড়িয়ে গোসলখানার দিকে এগিয়ে যায় সে ওজু করতে।

“ঠিক বলেছো দিদা। আমি যাই। এখনই ওজু করে আসছি।”

আবেগ ও মিহিরুন্নিসা বানু সামায়ার পাশে বসে গোটা রাত্রি ইবাদতে কাটিয়ে দেয়। তাতে অনেকটাই মুক্তি লাভ করে সামায়া ভয়ঙ্ককর স্বপ্নগুলো হতে। শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকে।

___

চাপকলের শীতল পানিতে গোসল করে, ঠাণ্ডায় মৃদু কাঁপছে সামায়া। সেই কম্পিত দেহ নিয়েই মাতব্বর বাড়ির উঠানে বেতের মোড়ার উপর বসে আছে সে। সকালের মিষ্টি রোদ আরাম লাগছে তার।

“মায়াবালিকা? চা খাবি? দু’জনের চা নিয়ে আসলাম।”

গভীর চিন্তার মাঝেও আবেগকে উপহাস করে হেসে উঠে কন্যা। নীলচে সাদা আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে উঠে,
“বিদেশে থাকতে পাক্কা ইংরেজের পুত্র হয়ে গেছেন আবেগ ভাই। পানি কি খায় না কি? পানি পান করে।”

“শব্দে শব্দে ভুল ধরার অভ্যাস তোর গেল না পিচ্চু। তবুও তো ভুল করে বসলি। জীবনের সবচেয়ে বড়ো কাজেই ভুল করলি।”

“কোথায়? কোন ভুল করলাম আমি আবার? আপনার চোখে তো শুধু আমার ভুলই চোখে পড়ে আবেগ ভাই, তাই না?”

কুঞ্চিত ভ্রু সমেত অভিমানী প্রশ্ন। ফোঁস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে আবেগ। আনমনা হয়ে উত্তর দেয়,

“ভুল মানুষকে ভালো বাসলি। যাকে ভালোবাসা অর্থই আঁধার অরণ্যে পা রাখা।”

মোড়া থেকে উঠে প্রিয় পুরুষটির নিকট যেয়ে অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দ্বিধাহীন প্রস্তাব তার,
“আমি অরণ্যবহ্নি হবো আবেগ ভাই, অন্ধকার পুড়িয়ে ছারখার করে দিব। শুধু একদফা সুযোগ তো দেন।”

“এটা কি মাতব্বর বাড়ি? মিহিরুন্নিসা বানুর বাড়ি?”

মিহি গলায় কথাগুলো শুনে উভয়ে সন্দিহান চাহনি নিক্ষেপ করে বিশালাকার কেচিগেটটির দিকে। তিন জন হুজুর বেশে লোক দারোয়ানকে এই প্রশ্ন করছেন।

সামায়া তাঁদের দেখে মাথায় আরও ভালো ভাবে ওড়না প্যাঁচিয়ে নেয়। আবেগ তাকে ভিতরে যেতে ইশারা করে নিজে এগিয়ে যায় মানুষগুলোর দিকে।

“জী, এটাই মাতব্বর বাড়ি। তবে আপনাদের পরিচয় যদি একটু বলতেন।”

একজন চল্লিশ-পয়তাল্লিশ বয়সী হুজুর আড়চোখে দারোয়ানের দিকে তাকান। বিনীত গলায় বলেন,
“বাবা তোমার যদি অসুবিধা না হয় তবে ভিতরে যেয়ে কথা বলি। এভাবে খোলামেলা…”

কথাবার্তার ধরনেই আবেগ বুঝে যায় তাঁরা মিহিরুন্নিসা বানুর ডাকানো রাক্বীরা।। মুচকি হেসে তাঁদের স্বাগতম জানায় সে।

“আসেন আঙ্কেল। আপনাদের আর পরিচয় দেওয়া লাগবে না। আমি বুঝতে পেরেছি। ঘরে চলুন।”

___

আবেগ ও মিহিরুন্নিসা বানু বিরসভাব নিয়ে বসে আছেন সোফায়। তিন জন রাক্বী হতভম্ব হয়ে বসে আছেন সম্মুখেই। এতো মানুষের চিকিৎসা করেছেন, তবে এরূপ ভয়ঙ্কর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা আগে শুনেননি।

“আমাদের তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, এমন কেইস আজ অবধি পাইনি। আপনারা নিশ্চিত তো যা বলছেন তা সম্পর্কে? মনে হচ্ছে মিথ্যে ভূতের গল্প।”

গোপণে নিঃশ্বাস ফেলেন মিহিরুন্নিসা বানু। নির্লিপ্ত ভাবে শুধান,
“শতভাগ সত্য বলছি বাবা। কোনো মিথ্যের সংমিশ্রণ এতে নেই। আপনারা যদি সাহায্যদান করতেন, বড়োই উপকার হতো।”

“জী, আমার আলাপ-আলোচনা করে দেখছি। আপাতত আপনার নাতবৌ ও নাতিকে রক্ষা করার জন্য কিছু নিয়ম-নীতি ও উপায় বলে যাচ্ছি। দেখেন, কাজ হয় কি না… এখন আমরা উঠি তাহলে।”

“না, বাবারা। দুপুরের খাবারটা খেয়েই যাবেন। এতো কষ্ট করে আসলেন আমার ডাকে। যদি না খেয়ে যান এই বুড়ির মনে একটা কষ্ট থেকে যাবে।”

“ঠিক আছে, আমরা খেয়েই যাবো আম্মা। যদি একটু হাত-পা ধুয়ে ফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন।”

“অবশ্যই। কুন্তলা! কুন্তলা!”

মনিবের ডাক পেয়ে মুখ আঁচলে ঢেকে দ্রুতো পায়ে কামরায় প্রবেশ করেন শকুন্তলা দেবী।

“জ্বে মেমসাহেব। ডাকসিলেন?”

“হ্যাঁ, যা তো। উনাদের নিচতলায় উত্তরের বড়ো কামরাটিতে নিয়ে যাও। ঐটা তো পরিস্কার করে রেখেছোই।”

“জ্বে। ভাইজান আসেন আপনারা।”

শকুন্তলা দেবীর পিছন পিছন বেরিয়ে যান তিন জন রাক্বীই। থেকে যান শুধু মিহিরুন্নিসা বানু ও আবেগ।

“উনারা পারবেন তো দিদা?”

“আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখো দাদুভাই। তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী। কোনো না কোনো মাধ্যমে আমাদের বিপদ হতে রক্ষা করবেনই তিনি। ইনশাআল্লাহ!”

“হুম, ইনশাআল্লাহ!”

এদিকে সামায়া বারান্দায় বসে বসে আবেগের সঙ্গে নিজের শেষ সাক্ষাতের কথা ভাবছে। দিনটি ছিল সোমবার।

(এখান থেকেই প্রথম ট্রেইলারটির সূচনা। লিংক –
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=337681251693301&id=100063542867943)
___

সামায়া ঠিক করেছে আর আড়াল না করে সরাসরি কথা বলবে মিহিরুন্নিসা বানু ও আবেগের সাথে। এ উদ্দেশ্যেই অপেক্ষা উভয়ের জন্য বসার ঘরে করছে সে। আজ বিকেল নাগাদই কোথায় যেন তারা বের হয়েছে।

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাড়ির মূল দোয়ার দিয়ে প্রবেশ করেন মিহিরুন্নিসা বানু। তাঁর পিছনে পিছন আবেগও ঢুকে।

“আরে সামু, তুই এখানে চুপচাপ বসে কী করছিস? তোর জন্য না আজ আবেগ দাদুভাই চার চারটা বই নিয়ে আসলো রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের।”

ম্লান হাসে সামায়া। দুই গ্লাস পানি এনে, দু’জনের হাতে দেয়। মিহি কণ্ঠে শুধায়,
“কী করবো দিদা? মনের কষ্ট, রহস্য ভাব যে বইয়ের নেশাকেও আজকাল হার মানাচ্ছে।”

“মানে? কী বলতে চাচ্ছিস রে বোন এতো রহস্য করে? এই বুড়ি তো কিছুই বুঝতে পারছে না।”

“খুব সরল একজন প্রশ্ন দিদা। আর তোমাদেরকে উত্তর দিতে হবে। আমাকে কেন এভাবে বিয়ে দেওয়া হলো আবেগে ভাইয়েরর সাথে? আবেগের জীবন শঙ্কাযুক্ত কেন রয়েছে? তোমরা কতো হাসি-খুশি ছিলে, হুটহাট এমন মলিনতা ক্যানো নেমে এসেছে এই মাতব্বর বাড়ি? কী এমন অভিশাপ বিনা দোষে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আবেগ ভাইকে যা নিয়ে তোমরা প্রত্যেক ক্ষণ আফসোস করো, ভয় পাও? তোমার কাছে তোমার নাতনি হয়ে নয়, একজন স্ত্রী হয়ে জানতে চাচ্ছি আমার স্বামী এই দশার কারণ কী? আশা করি আমাকে ফিরাবে না।”

ছলছল নয়নে ভাঙা ভাঙা গলায় অকপটচিত্তে নিজের হৃদয়ের প্রতিটি প্রশ্ন তুলে ধরে রমণী। বিনা কোনো বাক্য ব্যয়ে এমন প্রশ্নবাণে হচকচিয়ে যান বৃদ্ধা। নির্নিমেষ চাহনি তাঁর। মনে মনে ভেবে নেন আর কিছু লুকাবেন। প্রকৃতপক্ষেই আজ নারীটি আবেগের স্ত্রী হয়ে দাবী তুলছে।

গলা খাঁকারি দিয়ে পানি পান করেন তিনি। মাথা নত কর…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here