#অভিমান
#পর্বসংখ্যা_০৫
#মৌরিন_আহমেদ
বিয়ে পড়ানো ব্যাপারটা নিয়ে মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে প্রাপ্তি। সাথে লজ্জাও। কারণ একটু আগে যখন আবিরকে কবুল বলতে বলা হলো তখন সে একটুও দেরি করলো না। বরং এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো,
– কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল!
প্রাপ্তি অবাক হয়ে গণে দেখেছে একবারে মোট ৯বার আবির কবুল শব্দটা উচ্চারণ করেছে। বিয়েতে কবুল বলতে হয় তিনবার। অথচ আবির বলেছে ৩×৩=৯ বার। তারমানে বাকি ছয়টা কবুল বোনাস?
ভাবতে ভাবতেই আবিরের এক বন্ধু জিহান বললো,
– কী রে আবির, তোর দেখি তরই সয় না!.. একবারে কতগুলা কবুল বললি?..
– আজই খেলা হব্বে নাকি, মামা?
বলেই চোখ টিপে দেয় রাজিব। ওদের কথা শুনে তো প্রাপ্তি লজ্জায় শেষ! মাথা নুইয়ে রাখে সারাটা সময়। কিন্তু একটুও লজ্জা পায় না আবির। বরং বন্ধুদের কথায় তাল মিলিয়ে বলে,
– খেলা কেন হবে বন্ধু? বাসর ঘরে কী খেলা হয়?.. ওখানে তো… বিড়াল..
– ভাইয়া, এখানে কিন্তু আমিও আছি। আমার সামনে এগুলা কি কথা বলছিস?.. লজ্জা-শরম কী ধুয়ে খেলি না কী?
আবিরের কথা শেষ করার আগেই মুখ খোলে আদ্রিতা। ভাইয়ের মুখে লাগাম দেয়ার জন্য ঈশারা করে। ব্যাপারটা বুঝে আসতেই কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে আবির। কথা সত্য! ছোট বোনের সামনে এসব কথা বলতে নেই! তাতে নিজের ইজ্জতেরই ফালুদা-কাবাব-কোফতা-পোলাও আরও কতো কী যে হয়!
তাই চুপ করে রাজীবের খুব কাছে চেপে আসে। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে কী কী যেন বলতে থাকে। কী বলছে সেটা শোনার জন্য কান বাড়িয়ে দেয় জিহান আর তন্ময়ও। চার বন্ধুতে মিলে কী কী বলে আর হাসে! মাঝে মাঝে খানিকটা লজ্জা পেতে দেখা যায় আবিরকে। লজ্জা পেয়ে ঘাড় চুলকায়। তা দেখে আরও হাসে জিহান আর রাজিব।
কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে ওরা যায় একটা রেস্টুরেন্টে। বিয়ের খাওয়া হিসেবে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে ওখানে গেছে ওরা। সেখানে সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করে খাওয়া দাওয়া সেরে চলে যায় আবিরদের বাড়িতে।
কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন আবির-আদ্রিতার মা মিসেস. আসিয়া বেগম। দরজা খোলার আগেই উনি মোটামুটি ভাবে একটা প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছিলেন ছেলে- মেয়ে বাড়িতে ফিরলে ঠিক কী করবেন। তাদের সমাদরের জন্য একটা ঝাড়ুরও ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন কাছে পিঠে। আজকে ওই বদ দুটোকে ইচ্ছে মত শায়েস্তা করে ছাড়বেন উনি! দিনে দিনে মানুষ ভালো হয়, আর এ দুটো? দিন যতই যাচ্ছে ততই এদের অবনতি হচ্ছে! আগে তাও সন্ধ্যের আগে আগে নয় সন্ধ্যে নামার পর পরই বাড়ি ফিরত দুজনে। কিন্তু এখন? ঘড়িতে বাজে রাত ১০: ৪৫ মিনিট। অথচ দু ভাইবোনের একটারও পাত্তা নেই! আজ, আসুক না আসুক। জন্মের মতো শিক্ষা দিয়ে দেবেন!
দরজা খোলার আগে মুখে অমায়িক হাসি জড়াতে ভুললেন না। বাম হাতে ঝাড়ুটা লুকিয়ে রেখে সোজা সামনে তাকালেন। মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে তার গুণধর পুত্র! আবির ইশতিয়াক! তার ঠিক পাশেই দাড়িয়ে আছেন তার অতি আদরের অতি ভালো মেয়ে, বাপের একমাত্র রাজকন্যা আদ্রিতা। আদরের আদ্রিতা। দুজনকে দেখেই আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেন উনি। ঠোঁটের ওপরে উপচে পড়লো তার অমায়িক হাসি! কী সুন্দর ভালোমানুষি গলায় বললেন,
– ওমা, কে এসেছে গো! আমার সাত রাজার ধন, আমার হিরে মানিক, আবির এসেছে গো!.. ওমা, সাথে এটা কে? আমার একমাত্র রাজকন্যা, চুনি-পান্না আদ্রি এসেছে!.. ওই তোরা কে কোথায় আছিস বরণ ডালা নিয়ে আয়!
মায়ের কণ্ঠ শুনেই মোটামুটি ভাবে তার মনোভাব আন্দাজ করে ফেললো আদ্রিতা। মা যে মনে মনে অন্য ফন্দি আঁটছেন তা হারে হারেই টের পাচ্ছে ও। কিন্তু এই সময় যদি মা চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয় তো সেটা মোটেও ভালো দেখাবে না। নতুন বউয়ের সামনে মাথা হেঁট হয়ে যাবে ওদের। কী করবে বুঝতে না পেরে বড় ভাইয়ের দিকে তাকালো। আবির ভাবলেশহীন হয়ে দাড়িয়ে আছে। যেন সে ধরেই নিয়েছে তার মা সত্যি সত্যিই তাদের বরণ করে নেবেন।
আদ্রিতা বুঝলো অবস্থা বেগতিক। তাই কিছুটা ইতস্তত করে আসিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ইয়ে মানে মা.. বরণ করবে সে তো ভালো কথা.. কিন্তু.. কিন্তু আগে বাসায় ঢুকতে দাও.. পরে তোমার সাথে কথা বলি?
– বাসায় ঢুকবি? কেন রে? সারাদিন বাইরে থাকার পর এখন আবার বাসায় আসার কী দরকার? যা না, বাইরে যা!
– মা.. মা শোনো।..
বলেই এগিয়ে যায় আদ্রিতা। আসিয়া বেগমের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে কি যেন বলে। উনি প্রথমে কিছুতেই শুনতে চাইলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওর জোরাজুরিতে শুনতে বাধ্য হলেন। সবটা শুনে হঠাৎই চিৎকার করে উঠলেন উনি। দরজা ছেড়ে দৌড়ে চলে গেলেন ড্রইং রুমের দিকে।
তারপরই শোনা গেল তার চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ। তার একমাত্র ছেলে বিয়ে করে ফেলেছে? কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজে নিজেই এমন একটা কান্ড করে বাসায় এসেছে রাত এগারোটায়? হায় হায়! এই দিন দেখার জন্যই কী তিনি ওদের কোলে পিঠে করে এতো বড় করেছেন? ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি তুমুল হৈ চৈ শুরু করলেন বাড়ির ভেতর। আওয়াজ শুনে ছুটে এলো কাজের মেয়ে হাসুমতি। সবটা শুনে সেও থম মেরে গেল। আর সমানটালে চিৎকার করতেই লাগলেন আসিয়া। মেয়ের মুখ দেখার প্রয়োজনও মনে করলেন না, নিজের মতো করে ক্ষোভ দুঃখ বেদনা প্রকাশ করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সুযোগ বুঝে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেল আদ্রিতা। সারাদিন বহুত ধকল গেছে এখন তাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে। তাছাড়াও আজ তার ভাই বিয়ে করেছে, বাড়িতে নতুন বউয়ের আগমন ঘটেছে। বাসর ঘর সাজানো থেকে শুরু করে বিয়ের কতো শত কাজ আছে না? সবই তো তাকে করতে হবে। তাই কোনোকিছু না ভেবেই ছুটে গেল ঘরে। আগে নিজে একটু ধাতস্ত হয়ে তার পরেই ভাইয়ের ঘর সাজাবে।
ততক্ষণে নিশ্চয় আসিয়া বেগমেরও মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আর ও খুব ভালো করেই জানে, আসিয়া বেগম এখন যতই রাগুক না কেন প্রাপ্তির মুখ দেখার পর সেসব ভুলে যাবেন। কারণ প্রাপ্তির মিষ্টি মুখটা দেখলে ওর ওপর রাগ করে থাকা অসম্ভব!
এদিকে বসার ঘরের অবস্থা এখনো তুলকালাম! সোফার এক কোণায় বসে আছে আবির। ফোন হাতে নিয়ে সমানতালে ফোন স্ক্রোল করে যাচ্ছে। এদিকে যে তার মা চিৎকার চেঁচামেচি করে তান্ডবলীলা বাঁধিয়ে ফেলছেন সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আর বেচারা প্রাপ্তি! খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছে রুমের আরেক প্রান্তে। ঘোমটার আড়ালে মুখটা ঢাকা পড়েছে। এর মধ্যে একবারও তার শাশুড়ি আম্মা তার কাছে আসেন নি। একবারও তার মুখ দেখতে কিংবা তার সম্পর্কে কিছুই জানতে চায় নি। সেসব কিচ্ছুটি না করে শুধু মাত্র চিৎকার করে বাড়ি মাথায় উঠাচ্ছেন! আর ওদিকে আবির? সেও কিচ্ছুটি না বলে চুপচাপ ফোন স্ক্রোল করে যাচ্ছে। আরে বাবা, তুই বিয়ে করে এসেছিস তোর দায়িত্ত্ব নেই? তোর মাকে তুই সামলাবি না তো কি প্রাপ্তি সামলাবে? আশ্চর্য!
প্রাপ্তি অসহায় চোখে আবিরের দিকে তাকালো। বহুক্ষণ হলো সে এভাবেই দাড়িয়ে আছে। একটুও নড়াচড়া করে নি। হাত পায়ে ঝিম ধরে গেছে। ওদিকে রাতও হচ্ছে অনেক। অথচ এ বাড়ির কোনো সমস্যাই সমাধান হচ্ছে না। কেউ ওকে নিয়ে কিছুই বলছে না। ও যে নিজে থেকে কিছু একটা বলবে বা করবে সেটাও সাহসে কুলাচ্ছে না। ওর অসহায় মুখের দিকে একবার ফিরেও তাকালো না আবির। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়েই থাকলো।
একসময় আসিয়া বেগম ক্লান্ত হয়ে সোফার এক কানিতে বসে পড়লেন। তিনি এখন কাঁদছেন। ছেলে তাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে সেই শোকে কাঁদছেন। প্রাপ্তি আবারও আবিরের দিকে চাইলো কিন্তু এবারও লাভ হলো না। ইতস্তত করে এদিক ওদিক তাকালো। দেয়ালে ঘুরতে ঘুরতে একসময় চোখ পড়লো কিচেনের দিকে। দরজায় দাড়িয়ে আছে হাসুমতি। সে হাত উঁচিয়ে ওকে ইশারায় ডাকছে। কী করতে হবে ভেবে না পেয়ে নিজের শ্বাশুড়ীর দিকে তাকালো ও। তিনি এখনো মাথা নিচু করে কাঁদছেন। দেখে বড্ডো মায়া লাগলো। ধীর পায়ে হেঁটে কিচেনের দরজায় এসে দাড়ালো। ও আসতেই হাসুমতি একটা কাঁচের গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিলো ওর। গ্লাস ভর্তি শরবত। সেটা দিয়েই ইশারায় আসিয়া বেগমের কাছে যেতে বললো। ও যেন ভয় না পায় সে জন্য চোখে চোখে আশ্বাসের বাণীও শোনালো।
প্রাপ্তি কুণ্ঠিত হয়ে এগিয়ে এলো আসিয়া বেগমের কাছে। হাতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে কম্পিত কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,
– মা.. এটা খেয়ে নিন। অনেকক্ষণ ধরে চিৎকার করছেন এতে আপনার শরীর খারাপ করবে। এটা খান, প্লিজ!.. আমি মানছি আমি অন্যায় করেছি, আপনাদের না জানিয়ে কাজটা করা একদমই ঠিক হয় নি।…. তার জন্য আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু এখন এটা খান, প্লিজ!..
প্রাপ্তির মায়ানাখা কণ্ঠ শুনে অবাক হলেন আসিয়া। স্তম্ভিত চাহনিতে ওর মুখের দিকে তাকালেন। কী সুন্দর মিষ্টি চেহারার মেয়ে! কণ্ঠটাও কী সুমিষ্ট আর তীক্ষ্ণ। মেয়েটার হাতে ওটা কি? জুসের গ্লাস? কার জন্যে এনেছে? অসিয়ার জন্যে?
তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু সাহস পেল প্রাপ্তি। মৃদু জোর দিয়ে বললো,
– নিন, মা। খান!
বলেই গ্লাসটা হাতের কাছে এগিয়ে দিলো। আসিয়া একপলক তাকালেন। তারপর হাতে নিলেন গ্লাসটা। জুসে চুমুক দিতে ভাবলেন, মেয়েটা তো ভীষন সুন্দর! চেহারা যেমন সুন্দর কণ্ঠটাও তেমন। আবার হাতে জুস ধরিয়ে দিলো, মানে ম্যানার্স ও ভালো। তার প্রতি যত্ন নিবে। এমন রূপে গুণে গুণান্বিত একটা মেয়েকে তার ছেলে বিয়ে করেছে? সত্যিই? শুধু এ জন্যই তিনি এতক্ষণ ধরে চিৎকার করে গলা ফাঁটালেন? আরে এটা তো কোনো অপারধই না! এতো মিষ্টি একটা মেয়েকে বিয়ে করা কী কখনো অপরাধ হতে পারে? কখনোই না!
ভাবতেই মুচকি হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। আবেগে আপ্লুত কন্ঠে বললেন,
– তোমার নাম কি, মা?
– প্রাপ্তি।
– প্রাপ্তি? বাহ্, খুব সুন্দর নাম তো!
উনি খুশি হয়ে আরো কিছু বলতে যাবেন তার আগেই রুমের ভেতর ঘটে গেল আরেকটা ঘটনা। যাতে আবিরসহ সবাই অবাক চোখে তাকালো!
নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে নাটক দেখছিলেন মোকসেদুল সাহেব। আজকাল ইউটিউবে তে খুব সুন্দর সুন্দর নাটক আপলোড করা হয়।বিভিন্ন থিমের অসাধারণ সব নাটক সেগুলো! আজ উনি দেখছিলেন আফরান নিশো আর মেহজাবিন চৌধুরী অভিনীত ‘লাফ’। অন্যরকম রকমের একটা গল্প। দেখতে খুব মজা পাচ্ছেন। তিনি যখন গভীর মনোযোগের সাথে নাটক দেখছেন তখন হঠাৎ করেই বাড়ির ভেতর শুরু হলো গ্যাঞ্জাম! যেন বাড়ির ভেতর বিয়ে লেগে গেছে!
ব্যাপারটা কী সেটা দেখার জন্য দৌড়ে করিডোরে এলেন। রেলিং ধরে ড্রইং রুমের দিকে ঝুঁকে দাড়ালেন। সোফার উপর বসে আছে আবির। সারা ঘরময় পায়চারি করছে আসিয়া। আর ঘরের আরেক কানিতে দাড়িয়ে আছে একটা অপরিচিত মেয়ে। কে ও? আবির আবার বিয়ে-টিয়ে করলো না কী?
কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝে গেলেন ঘটনা সত্য! আবির সত্যি সত্যিই বিয়ে করে এনেছে! এরমধ্যেই ঘটিয়ে ফেললেন আরেক ঘটনা। দ্রুত পায়ে হেঁটে উপস্থিত হলেন ড্রইং রুমে। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ‘ঠাস’ করে একটা থাপ্পর মেরে বসলেন ছেলের গালে।
জীবনে এই প্রথম ওর গায়ে হাত তুললেন। রেগে গিয়ে যে তুলেছেন তা নয়। ঝোঁকের বসে। অনেকটা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো। তার বিবাহিত জীবনের ৩০বছর ধরে তিনি কখনোই আসিয়া বেগমের কথার বাইরে যান নি। তিনি যা বলেছেন তাই মেনেছেন। এমনকি ছেলেদের শাসনের বেলায়ও তিনি ছিলেন নিরপেক্ষ! কখনও তো ওদের বকা দেনই নি বরং ওরা মা- ব্যাটা মিলে ওনার ওপরে হুকুম তামিল করতো। তাই ভাবলেন আজ যখন সুযোগ এসেছে তখন আর সেটা হাতছাড়া করেন কেন? সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই ফেললেন!
ছেলের বউয়ের সামনে ছেলের গায়ে হাত তুলতে দেখে মহা ক্ষেপে গেলেন আসিয়া বেগম। নতুন বউয়ের সামনে তার ছেলের প্রেস্টিজ পাংচার করা? দাড়াও হচ্ছে, তোমার! রাগে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালেন ওনার সামনে। রাগে গজগজ করতে করতে বললেন,
– তোমার এত্তবড় সাহস, তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তোল?
মোকসেদুল সাহেব অবাক চোখে তাকালেন। তিনি তো ভেবেছিলেন তার ছেলে মাকে না জানিয়ে বিয়ে করাতে তার বৌ মহা ক্ষেপে ক্ষেপেছে। এজন্যই এতোক্ষণ তুলকালাম কান্ড করলেন! কিন্তু উনি এসে মারাতে সুর বদলালো কেন?
– কী বলছো তুমি? এই বদমাশটা তোমায় না জানিয়ে বিয়ে করেছে আর আমি কিছু বলবো না?.. এরে তো চড়াইয়া দাঁত ফালায় দেয়া উচিৎ!..
– কেন? চড় মারবে কেন?.. বিয়ে করেছে এই জন্য? বলি, তুমি বিয়ে করো নি? তাহলে তোমার ছেলে বিয়ে করাতে রাগছো কেন, হ্যাঁ?
– আরে আমার বিয়ে আর ওর বিয়ে কি এক হলো নাকি?.. আমি তো সবাই কে জানিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করেছি। আর ও?
– তাই বলে তুমি ওকে মারবে?.. আরে সামান্য বিয়েই তো করেছে!.. চুরি ডাকাতি তো আর করেনি!..
বিস্ময়ে যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললেন মোকসেদুল সাহেব। তার ছেলের এতবড় অপরাধও মায়ের কাছে কিছুই না? অবাক হয়ে বললেন,
– তাহলে এতোক্ষণ যে তুমি চিৎকার করছিলে?
– আব্.. তাতে কি হয়েছে? আমি চিৎকার করলেই তোমাকে এসে মারতে হবে?… তুমি দেখেছো আমার হিরের টুকরো ছেলেটা কী সুন্দর পরী বিয়ে করে এনেছে?.. এতো সুন্দর মেয়ে তুমি জীবনে দেখেছো?
মোকসেদুল সাহেব এবারে দৃষ্টি ফিরিয়ে প্রাপ্তিকে দেখলেন। উনি তাকাতেই এগিয়ে এলো ও। পা ছুঁয়ে কদমবুসি করে নতমুখে দাড়ালো। মেয়ের ভদ্রতা আর নম্রতা দেখেই মন ভালো হয়ে গেলো তার। চেহারাটাও কি মিষ্টি! মাথায় হাত ছুঁইয়ে দোয়া করে দিলেন।
তারপর? তারপর আর কি! আধঘন্টার শোরগোলের পর খুব সুন্দর করেই প্রাপ্তি-আবিরের বিয়েটাকে মেনে নেয়া হলো। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো প্রাপ্তির মা বাবাকে জানিয়ে খুব ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করা হবে। অনেক ঝগড়া-ঝাটি ঝামেলা আর মান-অভিমানের পর আজ সার্থক হলো তাদের প্রেম, তাদের বিয়ে!
বিছানায় চুপ করে বসে আছে প্রাপ্তি। রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাসে ঘরটা ম ম করছে। ঘরের চার কোণায় চারটা ঘিয়ের প্রদীপ। একপাশের জানালা খোলা। বাইরে থেকে আসা মৃদু বাতাসে ঘর ঠাণ্ডা হয়ে আছে। আকাশে আজ শুক্লাদ্বাদশীর চাঁদ। চাঁদের আলো আর প্রদীপের মৃদু আলোয় ঘরের ভেতরটাকে এখন স্বর্গীয় পরিবেশ মনে হচ্ছে। প্রাপ্তি একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে তাকায়। ওর ঠিক পাশেই শুয়ে আছে আবির। ওর নিস্পাপ ঘুমন্ত মুখটার দিকে বেশ মায়াময় দৃষ্টিতে তাকায়। চোখের দু’ পাতায় চুমু খেয়ে আপনমনেই বললো,
– “আমি আমার সারাজীবনের বিনিময় শুধু তোমাকে চেয়েছি। আজ আমার সে সাধ পূর্ন হয়েছে, আমি তোমায় পেয়েছি। পৃথিবীর কাছে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই!”
________________________________
২বছর পর…
ওটি রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে আবির। প্রাপ্তি কে ভেতরে ঢুকানো হয়েছে। ওর সাতমাস চলছিল। নিয়মিত চেকআপ, যত্ন সব ঠিকই চলছিল। প্রচণ্ড ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখেছিল ওকে। রোজ রোজ অফিসে যাওয়ার আগে ওকে যত্ন করে খাওয়ানো, বারবার ফোন করে খোঁজ নেয়া আর রাতে অফিস থেকে ফিরে ওর সব আবদার মেটানো, সবই করেছে আবির। এমনকি মাঝে মাঝে যখন ওর মুড সুইং হতো, তাতে রাত কতো হয় হোক, ওকে নিয়ে বাইরে যেত ও। যত সমস্যাই হোক, ও যা আবদার ধরতো তাই পূরণ করতো। বেশ সুখ আর হাসি আনন্দেই কাটছিল তাদের জীবন।
আজও যথারীতি তাদের পূর্বের নিয়মেই সব হচ্ছিল। সকাল বেলা প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায় ও। দুপুরেও কল দিয়ে খোঁজ নেয়। তখনো সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকেই হঠাৎ করে কল দেন আসিয়া বেগম। ও রিসিভ করতেই হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরতে বলেন। প্রাপ্তির না কি লেবার পেইন শুরু হয়েছে। সময় এখনো হয় নি। অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবর পেয়ে ছুটে আসে আবির।
ততক্ষণে ওকে হসপিটালে অ্যাডমিট করা হয়ে গেছে। এখানে এসেই আসল ঘটনা জানতে পারে আবির।
সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পরে গিয়ে প্রাপ্তি জ্ঞান হারায়। তারপর শুরু হয় ব্লেডিং। অবস্থা বেগতিক দেখে তাড়াতাড়ি করে ওকে কল দিয়ে জানান আসিয়া বেগম। মোকসেদুল সাহেব সহ চলে আসেন হসপিটালে। তখন বাড়িতে আদ্রিতা কিংবা আবির কেউই ছিল না। আদ্রিতা ছিল ভার্সিটিতে। আর আবির তো অফিসে।
হঠাৎ ঘাড়ের উপর কে যেন হাত রাখে ওর। অবাক হয়ে পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখে আদ্রিতা দাড়িয়ে। মেয়েটার মুখটা মলিন। গাল দুটো ভেজা ভেজা, গড়িয়ে পড়া পানির ছাপ স্পষ্ট! ও কেমন ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো,
– টেনসন করিস না, ভাইয়া। সব ঠিক হয়ে যাবে!
আবির কিছু একটা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো ভাষা খুঁজে পায় না। বোবার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে মনে মনে একটা হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আদ্রিতা। ভাবে, কতো কপাল করে এমন একটা হাসবেন্ড পেয়েছিল প্রাপ্তি, আর আবিরও! এতো সুখ কী ওদের সইবে? একটু আগে একজন ডাক্তার এসে বলে গেছেন পেশেন্টের বাঁচার চান্স খুবই কম। প্রচুর ব্লেডিং হওয়ায় এখনও কিছুই বলা যাচ্ছে না।
প্রায় আধঘন্টা পরে ওটি রুমের লাইট অফ হয়ে গেল। কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন একজন ডক্টর। উনি বেরতেই ওনাকে ঝেঁকে ধরলো সবাই। আবির, তন্ময়, রাজিব, জিহান সবাই মিলে একের পর এক প্রশ্ন করতেই শুরু করলো। সবচেয়ে উত্তেজিত লাগছিল আবিরকে। একেবারে উদভ্রান্তের মতো! এলোমেলো চুল, কুঁচকে যাওয়া শার্ট আর নষ্ট হয়ে যাওয়া ইন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল প্রাপ্তি নামক মেয়েটার জন্য কতোটা ডেসপারেট ও! কতো চিন্তা, ভালোবাসা জমে আছে ওর বুকের ভেতর!
ডক্টরের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এলো সাদা পোশাকধারী একজন নার্স। কোলে তার তোয়ালে জড়ানো একটা সদ্য প্রসূত শিশু। সে বাচ্চাটাকে নিয়ে এসে আসিয়া বেগমের কোলে তুলে দিল। বাচ্চাটাকে দেখে ভীড় উপচে পড়লো তার উপর। সবাই হামলে পড়লো বাচ্চাটাকে কোলে নেয়ার জন্য, আদর করে দেয়ার জন্য। কিন্তু আসিয়া বেগম তাদের কারও হাতেই ওকে দিলেন না। নিজেই নিয়ে থাকলেন তার নাতিকে, বংশের প্রদীপকে!
কী সুন্দর একটা ছেলে, প্রাপ্তির মতো গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা। পাতলা ঠোঁট দু’খানা একেবারেই গোলাপি রঙের। যেন গোলাপের সদ্য পরিস্ফুটিত পাপড়ি! গাল দুটোতে গোলাপি আভা ছড়ানো। মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল। বাচ্চার চোখ এখনো ফোটে নি, কিন্তু তারপরও কী মিষ্টি দেখতে! আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাতির কপালে চুমু একে দিলেন উনি।
সবাই ছুটে এসে বাবুকে দেখলো। আসিয়া বেগম কে ভুলিয়ে ভালিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাকে কোলে নেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু এরমধ্যে একবারের জন্যও কাছে এলো না আবির। সে ডক্টরের পেছন পেছন ছুটছে। তার চিন্তা শুধুই তার প্রাপ্তির জন্য!
– ডক্টর, ডক্টর.. প্লিজ, বলুন আমার ওয়াইফের অবস্থা কেমন? প্লিজ বলুন!
– দেখুন.. আমি তো আপনাকে বললামই এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমরা তাকে অবজারভেশনে রেখেছি। সময় হলেই সব জানিয়ে দেয়া হবে!
– কিন্তু আপনি এটা কেন বলছেন না, যে ওর অবস্থাটা আসলে কেমন? ও কী বাঁচবে ডক্টর?
আবিরের করুণ প্রশ্ন শুনে কী করবে ভেবে পায় না ডক্টর। সত্যি টা উনি কিছুতেই বলতে চান না। কারণ তাতে পেশেন্টের রিলেটিভসরা অনেক বেশি ভেঙে পড়েন। তারপরও আবীরের এমন উৎকণ্ঠা দেখে বলতে বাধ্য হলেন,
– আসলে.. সত্যি কথা বলতে কি.. মিসেস. ইশতিয়াক এর অবস্থা খুবই আশঙ্কা জনক। সাতমাসের ডেলিভারিতে প্রিম্যাচিউর বেবি হয়েছে। তাতেও খুব একটা সমস্যা ছিল না কিন্তু.. ওনার তো এক্সিডেন্টালি এমনটা হয়েছে.. আগের সামান্য কম্প্লিকেশন ছিল, তারমধ্যে প্রচুর ব্লেডিং হয়েছে..
– ও কী তারমানে বাঁচবে না?
স্তম্ভিত চাহনিতে প্রশ্ন করে আবির। ওর প্রশ্নে মাথা নিচু করে ফেলেন ডক্টর। নিচু গলায় বলেন,
– আপনাকে মিথ্যে আশা দেব না। কিন্তু.. একেবারেই চান্স নেই সে কথাও বলছি না। সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন। তিনি চাইলে নিশ্চয় সব ঠিক হয়ে যাবে…
বলেই হাত নেড়ে ক্রুশ আঁকলেন ডক্টর। মানে উনি খ্রিস্টান। “গড উইল সেভ হার” এই প্রার্থনা করে ধীরে ধীরে চলে গেলেন। আর অবাক চোখে তাকিয়েই থাকলো আবির।
তখন আসরের নামাজের পর। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বেরিয়ে এসেছে আবির। পরনে সাদা রঙের পাঞ্জাবি। মাথায় সাদা টুপি। ও খুব ধীরে ধীরে প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকলো। শুভ্র বিছানার ওপরে চুপটি করে শুয়ে আছে প্রাপ্তি। পরনে হসপিটালের সবুজ ফিতাওয়ালা জামা। গায়ের উপর কাঁথার আবরণ। আবির ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। ওর মাথার কাছে গিয়ে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে ওর ডান হাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয়। খুব ক্ষীণ কিন্তু মায়াময় কন্ঠে ওকে ডাকে,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি,প্রাপ্তি। অনেক সাধনার পর আমি তোমাকে পেয়েছি। সেই তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারো না, আমি তোমাকে সেটা করতে দেব না। তুমি যেও না, প্লিজ! আমার দিকে একটু তাকাও। এই!
___________________
আমিই পারি নি
আবার আমার করে রাখতে
তুমি বুঝনি আমি বলি নি
তুমি স্বপ্নতে কেন আসনি?
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে
সব গেয়েছি~
তুমি বুঝনি আমি বলি নি
তুমি স্বপ্নতে কেন আসনি?
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে
সব গেয়েছি~
গানে গানে সুরে সুরে কত কথা
বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝনি, বুঝনি!!
কখনো যদি আনমনে চেয়ে
আকাশপানে আমাকে খুঁজো
কখনো যদি, হঠাৎ এসে
জড়িয়ে ধরে বলো ভালোবাসো
আমি প্রতিরাত, হ্যাঁ প্রতিক্ষণ
খুব অজানায় কতো অভিনয়
করে বসি তোমায় ভেবে~
আমার অযথা সব লেখা গান
সবশুনে মন করে উচাটন
তুমি বোঝনি কেন আমাকে?
তুমি বুঝনি আমি বলি নি
তুমি স্বপ্নতে কেন আসনি?
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে
সব গেয়েছি
গানে গানে সুরে সুরে কত কথা
বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝনি, বুঝনি!!
[অভিমান: তানভীর ইভান ]
ধীরে ধীরে কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসছে ওর। এখন আর গাইছে না। চুপ হয়ে গেছে। গিটারের তারের সাথে লেগে কখন যে হাত কেটে গেছে ও বুঝতেই পারে নি। কাঁটা আঙুল থেকে এখন রক্ত ঝড়ছে। সেদিকে খেয়াল নেই, হাতের ব্যাথা সম্পর্কে সে সম্পুর্ণ উদাসীন!
আস্তে আস্তে কোলের ওপর থেকে গিটারটা সরিয়ে রাখলো। ধীর পায়ে ডিভান থেকে উঠে গিয়ে ব্যালকনির রেলিং ধরে দাড়ালো। চুপচাপ দৃষ্টি রাখলো আকাশের দিকে। ওই দূর আকাশে এখন অনেক তারা, তারায় তারায় মেলা বসেছে যেন। এরমধ্যে কোন তারাটা তার প্রাপ্তি? তার অভিমানী প্রাপ্তি?
আচ্ছা, ওই যে উজ্জ্বল তারাটা জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে ঐটা বুঝি প্রাপ্তি? ও বুঝি এখন ওর দিকে তাকিয়ে আছে? আর মিটমিট করে হাসছে? বলছে, “কি মি. পলিটিশিয়ান কী করছেন? আমায় ছাড়া থাকতে বুঝি কষ্ট হচ্ছে আপনার?” আবির খেয়াল করে তারাটা হাসছে। আশ্চর্য! তারাটার জায়গায় এখন ফুটে উঠেছে প্রাপ্তির হাস্যোজ্জ্বল মুখের প্রতিচ্ছবি! আবির অভিমান করে বলে,
– “তুমি হাসছো? তোমার বুঝি খুব খুশি খুশি লাগছে? তুমি সবসময় আমার ওপর অভিমান করতে প্রাপ্তি, আমি তোমার সেই মান ভাঙাতাম। কিন্তু কখনো আমি তোমার ওপরে অভিমান করি নি। করতে পারি নি। আজ আমি অভিমান করছি, খুব করে করছি! তুমি খুব খারাপ অভিমানী কন্যা! ভীষন খারাপ! তাই আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারলে! তোমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারছি না। আমার অভিমান হচ্ছে, কিন্তু আপসোস আমার এ অভিমান কেউ ভাঙাতে পারবে না! তুমিও না! একটা কথা আছে, ‘যে সবার অভিমান ভাঙায়, তার অভিমান কেউ ভাঙাতে আসে না।’ কথাটা আমার জীবনে হারে হারে সত্যি!”
—————- সমাপ্ত ——————-
[ শেষ করে দিলাম গল্পটা। শেষটা হয় তো অনেকেরই পছন্দ হয় নি সেটা আমি জানি। কিন্তু একটু হিসেব করে দেখলেই বুঝবেন গল্পের নামের সাথে মিল রেখেই এর পুরোটা থিম সাজানো। আসলে এটা লেখার আগেই এর শেষটা ভেবে রেখেছিলাম। অণুগল্প হিসেবে লিখতে গিয়েও আর হয়ে ওঠেনি। যাই হোক, গল্প শেষ করেছি। পাঠক হিসেবে মতামত জানাবেন। হ্যাপি রিডিং…?]