অপরিচিত পর্বঃ ১৭

0
947

অপরিচিত পর্বঃ ১৭
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা

মেহেকের সামনে বসে হাত কচলাচ্ছে আরফা এতটা নার্ভাস এর আগে কখনো লাগেনি তার। আর মেহেক পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আরফা মেহেককে দেখে প্রথমে অবাকই হয়েছিলো। তাকে দেখে মনে হয়নি মেহরাবের মতো এতবড় একটা ছেলে আছে তার। মনে হয় মেহরাবের বড় বোন হবে। মেহরাব এতো সুন্দর হওয়ার কারণ মেহেককে দেখে বুঝতে পেরেছে আরফা।

আরফা এসব ভাবনায় ব্যস্ত তখনই মেহেক বললো, তোমার পুরো নাম কী ?

আরফা ভেঙে ভেঙে বললো, আরফা ইসলাম।

তুমি আমার ছেলে সম্পর্কে সব কিছু জানো ?

জি জানি।

কী জানো তুমি মেহরাব সম্পর্কে ?

উনি অনেক ভালো একজন মানুষ।

এটুকু জেনে তো সারাজীবন কাটাতে পারবে না।

এর উত্তরে আরফা আর কিছু বললো না। মেহেক একটু নড়েচড়ে বসে বললো, মেহরাব একটা মেয়েকে ভালোবাসতো নাম সিনথিয়া সেও মেহরাবকে ভালোবাসতো। তার সাথে মেহরাবের এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছিলো মেহরাব মেডিকেলে পড়া কালীন সময়ে।

এটা শুনে আরফা একটু চমকেই তাকালো মেহেকের দিকে। তার দেখে মেহেক মুচকি হেঁসে বললো, ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। তার সাথে মেহরাবের বিয়ে হয়নি। মেয়েটা ছিলো ইন্ডিয়ান এনগেজমেন্টের পরদিন ইন্ডিয়াতে এসেছিলো ওর বাবা অসুস্থ বলে কিন্তু সে আর ফেরত যায়নি।

আরফা কৌতুহল নিয়ে বললো, কেনো ?

মেহেক বললো, কারণ তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো।

আরফা কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে দেখে মেহেক বললো, সিনথিয়া আমাদের কাছে মিথ্যা খবর পাঠিয়েছিলো সে মারা গেছে। মেহরাব এখনো সেটাই জানে কিন্তু আমি পরবর্তীতে জানতে পারি সে মারা যায়নি তার বিয়ে হয়ে গেছে। মেহরাব ততদিনে নিজেকে একটু সামলাতে শুরু করেছে সিনথিয়াকে হারানোর শোক থেকে। তাই নতুন করে কষ্ট পাক সেটা চায়নি বলে আর জানানো হয়নি। আমার ছেলেটা খুব ভালো জানো তো। কিন্তু কখনো ভালোবাসা পায়নি ও। ওর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ওর বয়স তখন সাত বছর বাবাকে খুব ভালোবাসতো ছেলেটা। দাদাজানকে ভালোবাসতো তার থেকেও আলাদা হতে হয়েছে পরিস্থিতির চাপে আর আমিও কখনো ওকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করিনি। ছোটবেলা থেকে একা একাই বড় হয়েছে। সিনথিয়া মেয়েটাকে অনেক ভালোবেসেছিলো সেও ওকে ধোঁকা দিয়েছে। জানি না মেয়েটা কেনো অন্যকাউকে বিয়ে করে নিয়েছে কিন্তু আমার ছেলে পারেনি নতুন কাউকে জায়গা দিতে।

আরফার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। শুধু সে একা নয় আরো কেউ আছে ভালোবেসে ধোঁকা খেয়েছে। তার পাশে তার মা ছিলো কিন্তু মেহরাব তো মাকে পেয়েও পায়নি এটা ভেবে মেহরাবের জন্য খারাপ লাগছে তাঁর।

হঠাৎ মেহেক আরফার হাত ধরে বললো, আমি জানি এই বিয়েটা পরিস্থিতির চাপে পরে হচ্ছে তবুও বলবো আমার ছেলেটাকে ভালো রাখার চেষ্টা করো প্লিজ। ওকে ভালোবেসে দেখো তুমি কখনো ঠকবে না।

মম তোমার কথা শেষ হয়েছে ?

হঠাৎ রুমে মেহরাব ঢুকে কথাটা বলে উঠলো। আরফা আর মেহেক দু’জনেই তাকালো সেদিকে একদম রেডি হয়ে এসেছে মেহরাব। গতরাতে রুমানের ফোন রেখে দেওয়ার পর মেহরাবের কল দেখতে পেয়ে ব্যাক করে আরফা। মেহরাব সকালেই চলে আসতে বসে তাদের বাসায়। আরফা কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে দরকার আছে। এখানে এসে আরফা জানতে পারে মেহরাবের মমের কথা। মেহরাব এক্সারসাইজ করছিলো আর আরফা মেহেকের সাথে কথা বলছিলো।

মেহেক বললো, হ্যাঁ আমার কথা শেষ তোমরা এখন শপিংয়ে যাও আমার কাজ আছে। তার আগে ব্রেকফাস্ট করে নাও।

সবাই একসাথে বসলো কিন্তু আরফা খাবার মুখে দিতে পারছে না। প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে সবার সামনে খেতে। সবাই ব্যাপারটা খেয়াল করলেও কিছু বললো না। আরফার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য মেহেক আর মুজাহিদ খান এখন আরফাদের বাসায় যাবে। মেহরাব আর আরফা যাবে শপিং করতে। খাওয়া শেষে বের হয়ে গেলো সবাই।

আরফা আমতা আমতা করে বললো, স্যার এসব ঠিক হচ্ছে না।

মেহরাব উত্তরে বললো, তোমার জীবনে কেউ আছে ?

মেহরাবের এমন প্রশ্নে চমকে উঠলো আরফা৷ মেহরাব এমন একটা প্রশ্ন করে বসবে সে বুঝতেও পারেনি। কিন্তু কী উত্তর দিবে এখন ?

মেহরাব বললো, থাকলে বলো আমি তার কাছেই তোমাকে পৌঁছে দিবো। এদিকটা বরং অন্যভাবে সামলে নিবো ।

আরফা বললো, ছিলো তবে এখন নেই।

মেহরাব বুঝতে না পেরে বললো, মানে ?

আরফা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সবটা খোলে বললো মেহরাবকে। গতকাল যে রুমান কল দিয়েছিলো সেটাও বললো। মেহরাব কিছু বললো না শুধু চুপচাপ শুনলো সবটা।

আরফার বলা শেষে মেহরাব বললো, তুমি কী ফিরে যেতে চাও তার কাছে ?

আরফা বললো, যাওয়ার হলে তো আগেই চলে যেতাম।

মেহরাব বললো, তাহলে ভুলে যাও সব।

আরফা বিড়বিড় করে বললো, আপনি পারবেন ভুলতে ?

মেহরাব শুনতে না পেয়ে বললো, কিছু বললে ?

আরফা বললো, না।

১৫

লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে আরফা। কিছু সময় আগেই বিয়ে হয়েছে আরফা আর মেহরাবের। ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে সারা দেশের মানুষকে জানিয়ে। এতোটা সময় নিজেকে শান্ত রাখলেও এখন তোলপাড় হচ্ছে বুকের ভিতরে। কী হবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ? দুজনের মনেই বসবাস অন্যকারো, কতদিন বয়ে চলতে পারবে এই সম্পর্ক। ছাঁদের এক কোণে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেহরাব। স্মোক করে না তবে আজ খুব ইচ্ছে করছে স্মোক করতে। সবাই বলে স্মোক করলে নাকি কষ্ট কম হয়। আজ সিনথিয়াকে খুব বেশি মিস করছে মেহরাব খুব বেশি। পারবে তো আরফাকে তার নিজের অধিকার দিতে কিংবা আরফাই কী পারবে এই সম্পর্কটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে ? এদিকে আরফা এই ভাড়ী সাজ আর মেকআপ সয্য করতে পারছে না। জীবনে এই প্রথম মেকআপ করেছে আরফা তাই আরো বেশী অস্বস্তি হচ্ছে।

উনি তো আমাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করার জন্য বিয়ে করেননি। তাহলে আমি উনার জন্য এমন জোকার সাজে বসে আছি কেনো। আমার পক্ষে আর সম্ভব নয় এই সাজ সয্য করা।

এসব ভেবে আরফা চলে গেলো ওয়াশরুমে, একটা বাসন্তী রঙের সুতির শাড়ি নিয়ে। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো। শাওয়ার শেষ করে শাড়ীটা পড়ে নিলো কোনরকম। এ নিয়ে চতুর্থবার শাড়ী পড়লো আরফা। মিমির হলুদ আর আরফার এক কাকার হলুদে পড়েছিলো আর একবার রুমানের জন্য পড়েছিলো। প্রত্যেকবারই পড়িয়ে দিয়েছে আরফার মা আর আজ বেনারসি পার্লারের মেয়েরা পড়িয়েছে। শাড়ী পড়তে পারে না তাই অনেকটা সময় নিয়ে কোনোরকমে পেঁচিয়ে পরেছে। অন্যকিছু পড়বে সে উপায় নেই কারণ বিয়েতে শাড়ী ছাড়া কিছুই কেনা হয়নি। পুরোনো কোন ড্রেস আরফাকে দেয়নি তার মা। বিয়ের পর নাকি শাড়িই পরতে হবে। এদিকে ছাঁদে অনেকটা সময় পার করে রুমে এলো মেহরাব। সে শুনেছিলো বাসর ঘরে বউ বসে অপেক্ষা করে কিন্তু মেহরাব রুমের কোথায়ও আরফাকে দেখলো না। ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা ভেতর থেকে আটকানো তাই বুঝতে পারলো আরফা ওয়াশরুমে আছে। মেহরাব গায়ের শেরওয়ানি খোলে রেখে দিলো। আরফা দরজা খোলে বের হয়ে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে লাগলো। দরজা খোলার শব্দ মেহরাব সেদিকে তাকালো। বাসন্তী রঙের শাড়ীটা ফর্সা গায়ে অসম্ভব সুন্দর মানিয়েছে মুগ্ধ হয়ে তাকালো মেহরাব। মেকআপ তোলার পর অন্যরকম এক সৌন্দর্য ফোটে উঠেছে, ভেজা ছোট চুলগুলো কপাল, গাল আর গলায় লেপ্টে আছে। বিন্দু বিন্দু পানির কণা লাইটের আলোতে ডায়মন্ডের মতো চিকচিক করছে। আরফাকে আজ কেমন অন্যরকম লাগছে। পার্থক্যটা মেহরাব ধরতে পারছে না শুধু বুঝতে পারছে অন্যরকম লাগছে। আরফার চোখ মেহরাবের দিকে পরতেই সে থমকে গেলো৷ কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহরাব। এই দৃষ্টি অন্যদিনের দৃষ্টির সাথে কোনো মিল পাচ্ছে না আরফা। কিছু সময় থম মেরে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের সামনে থেকে সরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ালো। মেহরাব নিজেকে সামলে আলমারী থেকে একটা টিশার্ট আর থ্রী-কোয়াটার প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো আর আরফা ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলটাতে বসে চুল মুছতে লাগলো। মেহরাব অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো। বের হয়ে দেখে আরফা চুল আঁচড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পার্লারে কীভাবে চুল বেধে ছিলো সব জটলা পাকিয়ে গেছে।

মেহরাব বললো, তুমি এখনো বসে আছো যে ?

মেহরাবের গলা শুনে সেদিকে তাকালো আরফা। টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো মুছছে, ছোট চুলগুলো থেকে টপটপ পানি পড়ছে, গায়ে কালো টিশার্ট, পায়ের দিকে চোখ যেতেই আরফার গা শিউরে উঠলো। কালো রঙের একটা থ্রী-কোয়াটার প্যান্ট, ফর্সা পায়ে কালো লোম গুলো লেপ্টে আছে সাথে এক জোড়া কালো স্লিপার পরে আছে। এককথায় হট লাগছে মেহরাবকে।

কী হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ? মনে হচ্ছে আমি কোনো এলিয়েন।

আরফা তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো, না মানে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরেছেন ?

মেহরাব টাওয়েলটা সোফায় রেখে বললো, আমি রাতে থ্রী-কোয়াটার প্যান্টই পড়ি সবসময়।

আরফা ছোট করে বললো, ওহ্।

মেহরাব সোফায় বসে বললো, তোমাকে যে প্রশ্ন করলাম এখনো বসে আছো কেনো ? অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।

আরফা বললো, আসলে পার্লারের ঐ মেয়েরা চুল বেঁধে দিয়েছিলো এখন জটলা পাকিয়ে গেছে, খুলতে পারছি না।

মেহরাব বললো, তুমি তো এমনই সুন্দরী পার্লারের মেয়েদের কাছে কেনো সেজেছিলে ?

মেহরাবের কথায় আরফা একটু চমকে তাকালো মেহরাবের দিকে। সে সুন্দরী এটা মেহরাব বললো ? আরফা ধীর কণ্ঠে বললো, বিউটিশিয়ান তো আপনি পাঠিয়েছেন।

মেহরাব বললো, ওহ্ আমি পাঠিয়েছিলাম নাকি। আসলে না সাজলে লোকে বলবে মেহরাব খান কিপ্টামি করে বউকে সাজায়নি।

বউ শব্দটা আরফার কানে বারবার বাজতে লাগলো। সত্যি সে আজ কারো বউ হয়ে গেছে। এই ছোট একটা শব্দ কিন্তু তার জোর কতটা কেউ হয়তো কখনো ভেবেও দেখেনি। এই শব্দটা কারো সাথে জোরে লেগে তার সম্পূর্ণ জীবনটাই পাল্টে যায়। আরফাও আজ কারো স্ত্রী ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে তার। মিমির কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো। আজ বিয়েতে এসেছিলো মিমি।

কবুল বলার পর আরফার কাছে এসে বসে বলে, আরফা তুই কিন্তু আর আগের আরফা নেই। কারো স্ত্রী, কারো পুত্র বধূ আর কারো নাতবউ হয়ে গিয়েছিস। সাথে তোর কাঁধে জমা হয়েছে অনেকগুলো দ্বায়িত্ব। আশা করবো অতীত ধরে বর্তমান নষ্ট করবি না আর নিজের দ্বায়িত্ব থেকে পালাবি না কখনো।

চুলে টান লাগতেই আরফার ঘোর কাটলো। সামনে তাকিয়ে আয়নায় দেখলো মেহরাব তার চুলের জটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

আরফা বললো, এ কী আপনি কী করছেন ?

মেহরাব চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললো, এটা যেহেতু আমার জন্যই হয়েছে তাই এই প্রবলেম সলভ করার দ্বায়িত্ব আমারই।

আরফা আমতা আমতা করে বললো, আমি পারবো।

মেহরাব কড়া গলায় বললো, আমার কাজে ইন্টারফেয়ার করা আমি পছন্দ করি না।

আরফা আর কিছু বললো না চুপচাপ বসে রইলো। প্রায় একঘণ্টা নিয়ে একটু একটু করে মেহরাব চুলের জটা ছাড়ালো আর আরফা আয়নায় মেহরাবকে দেখলো। আরফার চুল ঘন হওয়ায় সময় একটু বেশী লাগলো।

ভালো করে চুল আঁচড়ে বললো, হয়ে গেছে।

আরফা ছোট করে বললো, ধন্যবাদ।

তোমার ক্ষুধা পেয়েছে ?

আরফা কী বলবে বুঝতে পারছে না। ক্ষুধা ভালোই পেয়েছে তবে বলতে লজ্জাও লাগছে। আরফাকে আমতা আমতা করতে দেখে মেহরাব কিছু না বলে চলে গেলো রুম থেকে। একটু পর এক প্লেট ভাত আর মুরগির মাংস নিয়ে রুমে এলো।

খাবার সাইড টেবিলে রেখে বললো, সার্ভেন্টকে বললে এটাই দিলো এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

আরফা বললো, আপনি খাবেন না ?

মেহরাব বললো, আমার পেট ভরা। তুমি হয়তো সবার সামনে খেতে একটু আনইজি ফিল করো দু’দিনে যেটা বুঝতে পেরেছি।

আরফা মাথা নিচু করে বললো, আসলে,,,

থাক কিছু বলতে হবে না। তুমি খাবারটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

কথাটা বলে মেহরাব বেলকনির দিকে যেতে গেলে আরফা বললো, আপনি ঘুমাবেন না ?

আরফার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেহরাব বললো, আজ ঘুম আসবে না মনে হচ্ছে।

আরফার উত্তরের অপেক্ষা না করে মেহরাব চলে গেলো। আরফা সেদিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে প্লেটটা কী করবে বুঝতে পারছে না। অনেক ভেবে প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই এক সার্ভেন্ট দেখতে পেয়ে প্লেট নিয়ে গেলো। আরফা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে পা বাড়ালো। ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে মেহরাব। আরফা দরজা থেকেই ফিরে আসতে গেলে মেহেরাব ডাক দিলো।

চোখ বন্ধ করেই বললো, কিছু বলবে ?

না মানে আপনি এখানে কতক্ষণ বসে থাকবেন। আপনি বরং বেডে শুয়ে পড়ুন আমি ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়ছি।

আরফার কথা শুনে মেহরাব তার দিকে তাকালো আর বললো, তুমি ফ্লোরে কেনো শুবে ? আমি বলেছি তোমাকে ফ্লোরে ঘুমাতে ?

আরফা মাথা নিচু করে বললো, না মানে,,,

দেখো আরফা বিয়েটা যেভাবে হয়েছে হয়তো সময় লাগবে আমাদের মানিয়ে নিতে। কিন্তু বিয়ে তো আর ছেলেখেলা না, হয়ে যেহেতু গেছে মানিয়েও নিতে হবে হয়তো সময় একটু বেশী লাগবে এটুকুই। কিন্তু নাটক সিনেমার মতো আলাদা থাকতে হবে এমন তো নয়। তুমি শুইয়ে পড়ো আমি একটু পর আসছি।

আরফা একটু না অনেকটাই অবাক হলো মেহরাবের আচরণে। আরফা ভেবেছিলো মেহরাব হয়তো বলবে আমি তোমাকে কখনো স্ত্রী হিসাবে মানতে পারবো না, আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি, ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। আরফা কিছু না বলে রুমে গিয়ে বেডে একপাশে শুয়ে পড়লো মাথায় অনেক প্রশ্ন নিয়ে।

মেহরাব আবার চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, তুমি যদি স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে পারো তাহলে আমি কেনো কষ্ট পাবো তোমার জন্য আর মেয়েটারই বা কী দোষ ? তার জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। খুব তাড়াতাড়ি তাকে তার সব অধিকার দিয়ে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করে নিবো আমি।

মেহরাব চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলো সিনথিয়ার সাথে আবার দেখা হওয়ার সেই সময়টা। কোলে একটা ছোট পরী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সিনথিয়া আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো তার স্বামী। দূর থেকে মেহরাব দেখেছিলো একটা হ্যাপি ফ্যামিলি।

চোখ খুলে মেহরাব বললো, আমি কী তোমার সুখের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতাম ? মিথ্যে কেনো জানালে আমাকে ? ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর খবর কতটা যন্ত্রণাদায়ক হয় তুমি হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না কখনো।

মেহরাবের চোখ থেকে টপ করে একটা পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো। মুহূর্তে মুছে ফেললো তা আর পা বাড়ালো রুমের দিকে। আরফা শুয়ে পড়েছে, উল্টো দিক ফিরে থাকায় মেহরাব বুঝতে পারলো না ঘুমিয়ে গিয়েছে কি না। রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে মেহরাবও শুয়ে পড়লো এদিকে ফিরে।

★সকালে★

ঘুমটা একটু ভাঙতেই হাতের নিচে নরম কিছু অনুভব করলো মেহরাব। ঘুমের ঘোরে ভালো করে হাতরে বালিশ মনে হলো না। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলে মেহরাব চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here