অপরিচিত পর্বঃ ০৬

0
1027

অপরিচিত পর্বঃ ০৬
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা

সিনথিয়া আর মেহরাব এনগেজমেন্টের শপিং করতে ব্যস্ত। হাতে মাত্র একটা দিনই আছে বাকি তাই সবাই খুব ব্যস্ত। জোয়ার্ড জোহান্সনের নাতির এনগেজমেন্ট বলে কথা। সারা শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মেহরাব এনগেজমেন্ট রিং দেখতে ব্যস্ত। সিনথিয়াকে সিলেক্ট করতে বলেছে সে একঘণ্টা দেখে একটাও পছন্দ করতে পারেনি তাই মেহরাব নিজেই দেখছে। আর সিনথিয়া মেহরাবের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ চোখে। ছেলেটা কতো খুশি নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পেতে চলেছে৷ সিনথিয়া মাঝে মাঝে নিজেকে খুব লাকী মনে করে মেহরাবের মতো একজনকে নিজের জীবনে পেয়ে।

মেহরাব সিনথিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, এভাবে তাকিয়ে কী দেখছো ? নিজে একটা সিলেক্ট করতে পারলে না আমার দিকে তাকিয়ে আছো এখন ?

সিনথিয়া মেহরাবের কথায় হেঁসে বললো, কী করবো আমার পছন্দ তো তোমার পছন্দ হচ্ছে না।

মেহরাব অসহায় মুখ করে বললো, এসব আমাকে দিয়ে হবে না। তুমি যেটা পছন্দ করবে সেটাই নিবো তবু তুমি পছন্দ করো প্লিজ।

সিনথিয়া মুচকি হেঁসে বললো, ওকে আমি দেখছি।

সিনথিয়া প্রথমে যেটা পছন্দ করেছিলো সেটাই আবার মেহরাবকে দেখালো। মেহরাব প্রথমে মানা করতে চাইলেও সিনথিয়ার কড়া দৃষ্টি দেখে আর কিছু বললো না।

এনগেজমেন্টর সব ডেকোরেশন সিনথিয়ার আর মেহরাবের প্রিয় কালো রঙে করা হয়েছে। মেহরাবকে দেখে আজ মেয়েদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা। ঘন কালো চুলগুলো স্পাইক করে রেখেছে, এক কানে ব্ল্যাক ডায়মন্ডের ছোট একটা টপস, ব্ল্যাক শার্টের সাথে ব্লেজার আর প্যান্ট, হাতে রিচ ওয়াচ আর পায়ে ব্ল্যাক শো। মেহরাবকে দেখে সব মেয়ের একটা হলেও হার্টবিট মিস গেছে। এদিকে সিনথিয়াও কম যায়না। ব্ল্যাক গ্রাউনের সাথে ব্ল্যাক ডায়মন্ডের জুয়েলারি, মুখে হালকা মেকআপ, কার্লি করা চুলে কয়েকটা ব্ল্যাক রোজ গুঁজে দেওয়া। সিনথিয়া আর মেহরাব দুজনেই অনেক ফর্সা তাই তাদের গায়ের ব্ল্যাক সাজ আরো বেশী ফোটে উঠেছে। এনগেজমেন্ট আসা গেস্টদের কাছে ওদের এমন সাজ আর এমন ডেকোরেশন কিছুটা অদ্ভুত লাগছে তাতে ওদের কিছু আসে যায়না। ধুমধামে এনগেজমেন্ট শেষ হলো। মেহরাব সিনথিয়ার আঙ্গুলে রিংটা পড়িয়ে দিয়ে একটা কিস করলো।

সিনথিয়ার সাথে এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে মেহরাব। দুজনের মনেই বিষন্নতার ছাপ। সিনথিয়া মেহরাবের দেওয়া শর্ত পূরণ করেছে। তাই মেহরাবও নিজের কথা রাখতে সিনথিয়াকে ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য প্লেনে তোলে দিতে এসেছে। দুজনের মনেই ঝড় বয়ে চলেছে কিন্তু কিছু করার নেই সিনথিয়াকে যেতেই হবে।

সিনথিয়া মেহরাবের দিকে তাকিয়ে বললো, আসছি।

মেহরাব দৃষ্টি সামনের দিকে সীমাবদ্ধ রেখে ছোট করে বললো, হুম।

সিনথিয়া মেহরাবের দুগালে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মেহরাবের ঠোঁটে হালকা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। দুজনের চোখ টলমল করছে। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার তবু কেনো জানি দুজনের মনেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এটাই তাদের শেষ দেখা। মেহরাব সিনথিয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে কিছুসময় দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর সিনথিয়া ঘুরে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো আর একটু একটু করে আরো দূরে যেতে লাগলো। একসময় মেহরাবের চোখের আড়ালে চলে গেলো।

জানুয়ারি মাস শুরু হয়েছে শীতের প্রকোপ এখনো বেশ আছে। আজ সাতদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহের জন্য সূর্যের দেখা নেই। রাত দুটো বাজে আরফা শীতের পোষাকের ওপর সাদা এপ্রোনটা গায়ে জড়িয়ে হসপিটালে করিডোরে হাঁটছে। দেখতে দেখতে আরফার জীবন থেকে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে একটা প্রাইভেট হসপিটালে ইন্টার্নি করছে আরফা। জীবনের কঠিন পথ পার করে স্বপ্ন পূরণ করেছে নিজের বাবার। ঢাকায় সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হসপিটাল হচ্ছে মেহরাব হেলথ কেয়ার হসপিটাল। উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে এই হসপিটালে। বেশ বড় এরিয়া জুড়ে এই হসপিটাল। পাশেই মেহরাব হেলথ কেয়ার মেডিকেল কলেজ যেখানে পড়াশোনা করা অনেকটা স্বপ্নের মতোই আরফার জন্য। কারণ এখানকার খরচ সামলানোর মতো সামর্থ্য তাদের নেই। এমবিবিএস পরীক্ষায় সারাদেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে আরফা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পন্ন এই হসপিটালে ইন্টার্নি করার সু্যোগ হাতছাড়া করেনি আরফা। মিমির বিয়ে হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার পর তার নিজেরই ফুপাতো ভাইয়ের সাথে। তিন বছরের ছোট একটা ছেলেও আছে মিমির। আরফার জীবনে মিমি যে অবদান রেখেছে তা কখনো ভুলতে পারবে না আরফা। তাই এখনো বন্ধুত্বটা অটুট আছে ওদের। আরফা হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে এসব চিন্তা করছিলো তখনই ফোনটা কেঁপে উঠলো। সাদা এপ্রোনের পকেট থেকে ফোন হাতে নিয়ে আরফার কপাল কুঁচকে গেলো। গাতের ঘড়ির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখছো রাত দুটো বেজে বিশ মিনিট। এতোরাতে মিমির কল দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়।

এতো চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে আরফা কল রিসিভ করলো, হ্যালো।

মিমি ঝটপট উত্তর দিলো, কী করছিস ?

আরফা কপাল কুঁচকে বললো, প্রশ্নটা তো আমি করবো। এতোরাতে না ঘুমিয়ে তুই কী করছিস ?

মিমি বললো, নাইট ডিউটি কী তুই একা করিস নাকি ? বিয়ে কর তারপর বুঝতে পারবি বউয়েদেরও কত নাইট ডিউটি থাকে।

আরফা বিরক্ত হয়ে বললো, এই বাজে বকবক করার জন্য এতো রাতে ফোন দিয়েছিস ? আর লজ্জা শরম বিক্রি করে কী ফুসকা খেয়েছিস ?

মিমি অবাক হয়ে বললো, আরে লজ্জা পাওয়ার মতো কী বললাম বল তো ?

আরফা বললো, বউয়েদের নাইট ডিউটি বলতে কী বুঝিয়েছিস ?

মিমি হেঁসে বললো, আরে গাধী আমার একটা তেদর ছেলে আছে না ? একটু আগে ঘুম থেকে উঠে আমাকে ডাকছে আর বলছে মাম্মি ওয়াশরুম যাবো। তো আমি তোর ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে বললাম ছেলেকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে যাও। কিন্তু মহারাজ কী আর উঠবে ? অন্যপাশ ফিরে শুয়ে বলে তুমি নিয়ে যাও প্লিজ আমার ঘুম পাচ্ছে। কী আর করার উঠে ছেলেকে ওয়াশরুম নিয়ে গেলাম। ছেলে তো ওয়াশরুম থেকে এসে ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। তখন মনে পড়লো আজ তোর নাইট সিফট আছে। তাই তোকে কল দিলাম।

আরফা বিজ্ঞের মতো বললো, হুম বুঝলাম।

মিমি হঠাৎ বলে উঠলো, হ্যাঁ রে আরফা তুই বিয়ে কবে করবি। ডাক্তার তো হয়েই গিয়েছিস।

আরফা খানিকটা রেগে বললো, এই রাতদুপুরে আবার বাজে বকা শুরু তোর। তুই না আগেই ম্যাচিউরড ছিলি এখন কেমন দিনদিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস।

মিমি একটু রেগে বললো, আমি বাচ্চা হচ্ছি আর তুই বুড়ি হচ্ছিস। এখন বিয়ে না করলে দুদিন পর আমার ছেলের শশুরকে বিয়ে করিস।

আরফা বিরক্ত হয়ে বললো, এখন রাখতো তুই। সবসময় এক বকবক ভালো লাগে না।

আরফা রেগে ফোন কেটে দিলো আর মিমি মুখ ভেংচি দিয়ে মিহিরের পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। মিমি নিজেকে লাকী মনে করে। কারণ একটা ভালোবাসার সম্পর্ক আরফার জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে আর তার ভালোবাসার সম্পর্ক তাকে স্বর্গ সুখ এনে দিয়েছে। ভালো করেছে বিয়ের আগে কোনো সম্পর্কে না জড়িয়ে। তবে আরফার জন্য খুব কষ্ট হয় মিমির। এতোগুলা বছর চলে গেলো কিন্তু রুমানের দেওয়া ক্ষত আরফার মন থেকে মুছেনি। আরফা ফোন কেটে দিয়ে আবার করিডোর দিয়ে হাঁটতে লাগলো। আরফা মাঝে মাঝে নিজেকে দেখে অবাক হয়। গ্রামের স্কুলে পড়া রুমানের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া সেই আরফার সাথে সাদা এপ্রোনের নিচে থাকা আরফার আকাশ পাতাল পার্থক্য। এক কেবিনের সামনে গিয়ে আরফার পা থেমে গেলো। কেবিনটা এই হসপিটালের মালিক মুজাহিদ খানের। আজ একমাস হলো নিজের হসপিটালে নিজেই পরে আছে। আরফা ভেবে পায় না মানুষ কেনো এতো টাকার পেছনে ছুটে বেড়ায়। এই মুজাহিদ খান দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি এতোবড় একটা মেডিকেল কলেজ আর হসপিটালের মালিক। কিন্তু লাভটা কী এতো কিছু থেকে ? জীবনের শেষ সময়ে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ নেই তার। একটু অসুস্থ বাসায় একটু খেয়াল রাখলেই হতো কিন্তু সেটা করার আপন কেউ নেই তাই হসপিটালে পরে আছে। আজ মারা গেলে কাল সমস্ত প্রোপার্টি লোকে লুটেপুটে খাবে।

কেউ আছো ? একটু পানি দাও গলাটা শুকিয়ে গেছে।

পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে সারা হসপিটাল জুড়ে। তাই মুজাহিদ খানের খীণ গলায় বলা কথাটুকু শুনতে অসুবিধা হলো না আরফার। লোকটার কথা চিন্তা করে কখন কেবিনের ভেতরে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি। এদিকে সবার আসার অনুমতি নেই। মাত্র কয়েকজন ডক্টর আর নার্স এদিকে আসতে পারে। আরফারও অনুমতি নেই এখানে আসার। পানি চাওয়ায় আরফার হুশ ফিরলো। আশেপাশে তাকিয়ে নার্সকে খোঁজতে লাগলো আরফা। সবসময় একজন নার্স এই কেবিনে থাকে। কাউকে না পেয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে মুজাহিদ খানের সামনে বসলো আরফা। চামচ দিয়ে একটু একটু করে পানি মুজাহিদ খানকে খাইয়ে দিলো।

পানি খাওয়া শেষে মুজাহিদ বললো, আমাকে একটু বসিয়ে দেবে ? পিঠটা ব্যাথা করছে শুয়ে থেকে।

আরফা খুব সাবধানে মুজাহিদ সাহেবকে বসিয়ে দিলো পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে। মুজাহিদ সাহেবের অন্ধকার পছন্দ নয় তাই ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বলে এই কেবিনে। জীবনের আশি বছর পার করে এসে মুজাহিদ খান এখন আফসোস করে নিজের করা কাজের জন্য। বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়েছে চোখে ভালো দেখতে পায় না। আগের মতো দাপটটা আর নেই তার।

আমার চশমাটা একটু দাও দেখি।

আরফা টেবিলের ওপর থেকে চশমারটা নিয়ে মুহাজির খানকে পড়িয়ে দিলো। চশমা চোখে তাকিয়ে নিজের সামনে খুব সুন্দর আর মিষ্টি একটা মেয়ে দেখতে পেলো মুহাজির খান।

প্রশ্ন করলো, কে তুমি ?

আরফা নম্রতার সাথে বললো, আমি এই হসপিটালের নতুন ডক্টর আরফা ইসলাম।

আরফা,,,, মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর নাম ঠিক তোমার মতোই।

আরফা কিছু না বলে মুচকি হাঁসলো তারপর বললো, স্যার আপনি শুয়ে পড়ুন আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন।

মুজাহিদ খান বিরক্তি স্বরে বললো, দিনরাত শুয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি আমি। মন খোলে কারো সাথে দুটো কথাও বলতে পারি না। বুড়ো মানুষের বকবক শুনতেও চায় না কেউ।

মুজাহিদ খানের কথায় মুচকি হাঁসলো আরফা। কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে এতোবড় মানুষ হয়েও কোনো অহংকার নেই তার।

আরফার ভাবনার মাঝেই মুজাহিদ খান বললো, তোমার সাথে একটু কথা বলা যাবে ?

আরফা ব্যস্ত হয়ে বললো, জী স্যার বলুন না কী বলবেন ?

মুজাহিদ বললো, কিছু মনে না করলে একটু দাদাজান বলে ডাকবে ?

আরফা একটু অবাক হলো মুজাহিদ খানের কথায় পরে মুচকি হেঁসে বললো, জী কেনো বলবো না ? বলুন দাদাজান কী বলবেন ?

এতো বছর পর দাদাজান ডাক শুনে চোখে পানি চলে এলো মুজাহিদ খানের।

হঠাৎ বলে উঠলো, অনেক বছর পর কাউকে আপন মনে হলো আজ। তাই তোমাকে কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করছে। জানো আমার একটা নাতি আছে যে আমাকে দাদাজান বলে ডাকতো।

আরফা এবার অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। বেশ অনেকদিন হলো সে এই হসপিটালে আছে আর হসপিটালে আসার আগে থেকেই মুজাহিদ খান সম্পর্কে জানে। তবে আরফার জানামতে কেউ নেই মুজাহিদ খানের তবে নাতি এলো কোথা থেকে ?

আরফার ভাবনার মাঝেই মুজাহিদ খান আবার বললো, এই হসপিটাল আমার ছেলের জন্য বানিয়েছিলাম আর আমার ছেলে তার নিজের ছেলের নামে এর নাম দিয়েছে মেহরাব হেলথ কেয়ার হসপিটাল। আমার ছেলে আর ছেলের বউ দুজনেই ডক্টর ছিলো আর তাদের ছিলো ছোট একটা রাজপুত্র মেহরাব আমার নাতি। আমার এতো বড় প্রোপার্টির একমাত্র উত্তরাধিকারী মেহরাব খান।

আরফা বিষ্ময় নিয়ে বললো, তাহলে তারা সবাই কোথায় এখন ?

ভেজা গলায় মুজাহিদ খান বললো, ভাগ্যের দোষে নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি আর নিজের দোষে হারিয়েছি সোনার টুকরো ছেলের বউ আর একমাত্র বংশের প্রদীপ নাতিকে।

আরফা মুজাহিদ খানের অনেক কথাই বুঝতে পারছে না। তবে এটুকু বুঝতে পারছে মুজাহিদ খানের পরিবার আছে। ছেলে, ছেলের বউ, নাতি সবাই আছে। কিন্তু তারা কোথায় আছে এখন ?

মুজাহিদ খান বলে উঠলো, আমার নাতিকে একটু খোঁজে দিবে ? ওকে আমার খুব প্রয়োজন। ও না আসলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে আমার সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নিবে। খোঁজে দিবে একটু আমার নাতিকে ?

আরফা আমতা আমতা করে বললো, কোথায় খুঁজবো আমি তাকে ?

মুজাহিদ খান বললো, আমার নাতি আমার মেহরাব কানাডায় আছে। ওর মায়ের কাছে আছে খুঁজে এনে দিবে একটু ?

আরফা তুমি এখানে কী করছো ?

কারো কথায় চমকে পেছনে ফিরে তাকালো আরফা। মুজাহিদ সাহেবের চিকিৎসা করা এক ডক্টর আরফাকে দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়। যদি মুজাহিদ খান কিছু বলে দেয় ওকে।

আরফা ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো আর আমতা আমতা করে বললো, আসলে স্যার আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম উনি পানি চাইছিলেন আর ভেতরে কেউ ছিলো না তাই আমি পানি দিতে এসেছিলাম।

ডক্টর ইশতিয়াক হোসেন ভ্রু কুঁচকে একটু রাগী গলায় বললো, তুমি কেবিনের বাইরে থেকে কীভাবে শুনতে পেলে স্যার পানি চেয়েছে ?

আরফা আমতা আমতা করে বললো, স্যার মানে।

হঠাৎ মুজাহিদ খান বলে উঠলো, ডক্টর ইশতিয়াক তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে একটা মেয়ের সাথে কথা বলার সাহস হলো কীভাবে তোমার ?

ইশতিয়াক নিচু গলায় বললো, সরি স্যার আসলে আপনার নিরাপত্তার জন্যই এখানে সবার আসার অনুমতি নেই।

মুজাহিদ খান ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, আমি অনুমতি দিলাম আরফাকে এখানে আসার। ওর যখন ইচ্ছে তখন আমার সাথে দেখা করতে আসতে পারে। বুঝতে পেরেছো তুমি ?

ইশতিয়াক বললো, জী স্যার। কিন্তু স্যার আপনার এখন ঘুমের প্রয়োজন তাই ঘুমিয়ে পড়ুন।

মুজাহিদ খান আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আরফাও বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। আরফার মাথায় মুজাহিদ খানের বলা সব কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে এখানে। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে আরফার হাত মুচড়ে ধরলো। পেছনে তাকিয়ে দেখে ডক্টর ইশতিয়াক দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে।

আরফা ভয় পেয়ে থেমে থেমে বললো, কী হয়েছে স্যার আপনি এমন কেনো করছেন ?

ইশতিয়াক দাঁতে দাঁত চেপে বললো, মুজাহিদ খানের থেকে দূরে থাকবে। আর কখনো যদি মুজাহিদ খানের আশেপাশে তোমাকে দেখেছি তোমার ডাক্তারি কেরিয়ার ধ্বংস করে দিবো আমি। তোমার ব্রাইট ফিউচার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালো করে।

আরফা ইশতিয়াকের কথায় ভয়ে কেঁপে উঠলো। ইশতিয়াক আরফাকে শাসিয়ে চলে যায়। আরফা ভয় পেলেও তার বুঝতে বাকি নেই গভীর এক রহস্যের জালে আটকে আছে মুজাহিদ খান। আর সেই রহস্যের উদঘাটন আরফাই করবে। মুজাহিদ খানকে তার নাতিও ফিরিয়ে দিবে। আরফা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here